http://www.bhorerkagoj.com/epaper/2017/12/27/index.php
পাখির ছানা : মো. রহমত উল্লাহ্
ভোরের কাগজ, বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭
>বাড়ির উঠানে বেগুন গাছ। বেগুন গাছে টুনির বাসা। শিমুল উঁকি দেয় বাসায়। দেখে দু’টি ডিম। খুব খুশি হয়। বলে, ওয়াও। কয়েকদিন পর। ডিম দেখতে যায় শিমুল। দেখে দু’টি ছানা। চিঁ চিঁ করে। বড় হয়নি পাখা। খুশি হয় আরো বেশি। বলে, ওয়াও, ওয়াও। বড় হোক। ক’দিন পর নিব।
কয়েকদিন পর। ছানা আনতে যায় শিমুল। দেখে বাসা খালি। ছানারা নেই। খুব মন খারাপ হয়। কেমন জানি ফাঁকা লাগে। পাখির ছানা তার চাই। শিমুল ছুটে যায় বনবাদাড়ে। বাড়ির পাশেই কাঁঠাল বাগান। তার ঢালেই বনবাদাড়। সেখানে অনেক পাখি। বাসা তো থাকবেই। খুঁজতে থাকে পাখির বাসা। এগিয়ে যায় লতাপাতা ঠেলে। পাখির বাসা পায়। আশা করে ছানা পাবে। উঁকি দেয় বাসায়। ডিম পায়। ছানা পায় না। খুঁজতে থাকে আবার। তাকায় এদিক-ওদিক। দাঁতই গাছ। মনকাঁটা গাছ। ডেফিলা কাঁটা গাছ। লাউগুঁড়ি গাছ। আরো কত রকম গাছ। লতাপাতায় জড়ানো। কাঁটা গাছই বেশি। চলাচল করা কঠিন। কাঁটার ঘা লাগবেই। অনেক লাগছে শিমুলের গায়ে। অথচ টেরই পায়নি সে। তার গায়ের রং ফরসা। বয়স ছয় কি সাত। সে তুলনায় বেশ বড়। হঠাৎ শুনে চিঁ চিঁ। পাখির ছানার ডাকাডাকি। মনে হয় কাছেই। এইতো, মনকাঁটা গাছে। হাত বাড়ায় কাঁটার ফাঁকে। খুব সাবধানে। ধরে ফেলে দু’টি ছানা। মুখে তার বীরের ছবি। রওনা দেয় বাড়ির দিকে। কিচিরমিচির করে মা পাখি। আসে শিমুলের পিছুপিছু।
খাঁচায় আটকানো পাখির ছানা। খাঁচার দরজা খোলে শিমুল। খাবার দেয় ছানাদের। উঠানের গাছতলায়। যেখানে আসে মা পাখি। এটি তাদের নিয়মিত কাজ। হঠাৎ ফুড়ৎ। ছুটে যায় একটা ছানা। উড়ে যায় মায়ের কাছে। আহ্হা করে শিমুল। খুব মন খারাপ হয় তার।
কয়েকদিন পর। উঠানে বসে আছে শিমুল। ছটফট করে খাঁচার পাখিটা। কামড় দেয় খাঁচার গায়ে। কিচকিচ করে। আসতে চায় বাইরে। বসতে চায় মায়ের পাশে। উড়তে চায় ভাইয়ের সাথে। খাঁচার বাইরে তার মা। খাঁচার উপরে তার ভাই। তারাও কামড়ায় খাঁচায়। কাটতে চায় খাঁচা। কামড় দেয় জোরছে। ছড়িয়ে দেয় পাখা। করে কিচকিচ, কিচকিচ। যেন বকাবকি দেয় শিমুলকে। খুব খেয়াল করে শিমুল। দেখে, বাইরের ছানাটা বড়। খাঁচার ছানাটা ছোট। বাইরের ছানাটা সবল। খাঁচার ছানাটা দুর্বল। বাইরের ছানাটা হাসিখুশি। খাঁচার ছানাটা মনমরা। বাইরের ছানাটা ঝলমলে। খাঁচার ছানাটা মলিন। ভালো নেই খাঁচার ছানাটা। মায়া হয় শিমুলের। অপরাধী লাগে নিজেকে। খাঁচার কাছে যায় শিমুল। সরে যায় বাইরের পাখিরা। ছটফট করে খাঁচার পাখিটা। শিমুল খুলে দেয় খাঁচা। পাখি উড়ে যায় ফুড়–ৎ। হাততালি দেয় শিমুল। ফেলে দেয় পাখির খাঁচা।
http://www.bhorerkagoj.net/print-edition/2017/12/27/171897.php#.WkO8lcjrDHg.facebook