শিশুতোষ গল্প- শহিদমিনার
শহিদমিনার
মো. রহমত উল্লাহ্
ফুল জোগাড় করছে তিনজনে। বাড়ির পাশেই শিমুল গাছ। গাছের নিচে অনেক ফুল। তবে এগুলো তাজা নয়। তাজা ফুল চাই। শহিদমিনারে যাবে কাল। খুব ভোরে। ফুল দিবে। কী করা যায়। অনেক বড় শিমুলগাছ। সব ফুল আগডালে। গাছেই উঠা যায়না। আগডালে যাওয়াতো দূরের কথা। কী করা যায়? এগিয়ে যায় বাঁশবাগানের দিকে।
বিশাল বাঁশবাগান।পাখিদের কলরব। এখানে কয়েকটা পলাশগাছ। বেশি বড় হয়নি এখনো। তবে ফুল দিয়েছে অনেক। লাল টকটকে ফুল। আগুনের মতো ঝলঝল করে। মন ভরে উঠে। তবে হাতের নাগালে নয়। সামান্য উপরে। একটা চিকন ডাল। এতে অনেক ফুল। নাগাল পাওয়া যায় না। কী করা যায়?
নাসিফেরকাঁধে উঠে নায়িম। নাসিফ মোটা। নায়িম পাতলা। বয়সে প্রায় সমান। সাত কি আট। সে তুলনায় ছোট মুনা। তবে সে চালাক বেশি। খুব হাসিখুশি। সে-ই বলেছে, কাঁধে উঠো। নাসিফের কাঁধে নায়িম। নায়িমের নাগালে পলাশ ফুল। ছিড়ে আর ছিড়ে। দেয় মুনার হাতে। সবাই খুব খুশি। নেমে আসে নায়িম। অনেক ফুল। ভাগাভাগি করে তিনজনে। তবে আরো ফুল চাই। অন্য ফুল। কী করা যায়? কী করা যায়? মুনা বলে, বাড়ি চলো। এখনই রাত হবে।
বাড়ি ফিরছে তিনজন। পথের পাশে রানিদের বাড়ি। তাদের কলপাড়ে ফুলগাছ। জবাফুল। অনেক ফুটেছে। লাল হয়ে আছে গাছ। নুয়ে আছে মাটির কাছাকাছি। দৌড়ে যায় মুনা। ছিঁড়ে নেয় জবাফুল। অনেক গুলো নেয়। ভাগাভাগি করে। হাঁটা দেয় বাড়ির দিকে। কথা হয় আবার। দেখা হবে কাল ভোরে।
পরদিন সকাল। একশে ফেবরুয়ারি। শহিদদিবস। বটতলায় মিলে তিনজনে। হাতে হাতে ফুল। তাড়াতাড়ি হাঁটে। দেরি হয়ে গেছে। সবার আগে মুনা। আসে খালের পাড়ে। ওপারে কলেজ। কলেজের মাঠে শহিদমিনার। যেতে হবে সেখানে। এপারে নেই তেমন কিছু। মাত্র কয়েকটা বাড়ি। খালের উপরে বাঁশের সাঁকু। খুঁটির উপরে একটামাত্র বাঁশ। এতেই যাওয়া আসা। বড়রা একা একা পারে। ছোটরা একা একা পারেনা। যেতে হয় বড়দের সাথে। হাত ধরে ধরে।
পথের দিকে তাকায় তিনজনে। আসেন কিনা বড়রা কেউ। নাহ, কেউ আসে না। চলে গেছে সবাই। পার হওয়া যাবে না সাঁকু। যাওয়া যাবে না ওপারে। ফুল দেওয়া হবে না শহিদমিনারে। কী করা যায়? কী করা যায় এখন? মুখ খুলে মুনা। চলো আমাদের বাড়ি যাই। দেখি, কী করা যায়। হাঁটে মুনাদের বাড়ির দিকে।
মুনাদের বাড়ির উঠান। খুঁটি গাড়ে তিনজনে মিলে। তিনটি খুঁটি পাশাপাশি। মাঝে বড় একটি। দুইপাশে ছোট দুইটি। মায়ের ওড়না আনে মুনা। কালো ওড়না। ছড়িয়ে দেয় খুঁটির উপর। মনে হয় শহিদমিনার। এতেই ফুল দেয় তিনজনে। দাঁড়িয়ে থাকে চুপচাপ। মুখ খুলে নায়িম। এমন হবে না আগামী বছর। আগেই বানাবো শহিদমিনার। মাঠের বটতলায়। বানাবো আরো ভালো করে। ফুল দিবো সেখানেই। নাসিফ বলে, তাই হবে। সেখানেই ফুল দিবো প্রতিবার। মুনা বলে, তাই হবে। সবাইকে নিবো আমাদের সাথে।<
[সংশোধিত- নভেম্বর ২০১৭]
(শিশুদের জন্য লেখা এই গল্পের কোন বাক্যে ৪ টির বেশি শব্দ নেই এবং কোন শব্দে যুক্তবর্ণ নেই।)
0 মন্তব্য(গুলি):