শিশুতোষ গল্প- 'টুনটুনির ছানা'

টুনটুনির ছানা


মো. রহমত উল্লাহ্‌


বাড়ির উঠানে বেগুন গাছ। উঠানে খেলা করে মুনা। খেয়াল করে টুনটুনির আনাগুনা। দু’টি টুনটুনি। ফুড়ুত ফুড়ুত আসে। বেগুন গাছে বসে। লুকায় পাতার নিচে। চুপচাপ থাকে। আবার ফুড়ুত ফুড়ুত যায়। গাছের কাছে যায় মুনা। দেখে, টুনটুনির বাসা। অনেক খুশি হয় সে।


কয়েকদিন পর। বাসা দেখতে আসে মুনা। ফুড়ুত ফুড়ুত। উড়ে যায় টুনটুনি। মুনা উঁকি দেয় বাসায়। দেখে, সাদা দু’টি ডিম। ওয়াও! আরো খুশি হয় সে।


আরো কয়েকদিন পর। ডিম দেখতে আসে মুনা। ফুড়ুত ফুড়ুত। উড়ে যায় টুনটুনি। মুনা উঁকি দেয় বাসায়। দেখে, ফুটফুটে দু’টি ছানা। আলুর মতোগোল গোল। লালচে গায়ের রং।  দেখা যায় নাপা। ইঁদুরের মতো হা করে। চিঁউ চিঁউ করে।ওয়াও! আরো খুশি হয় সে। মনেমনে বলে, বড় হোক। তারপর নিবো।  খাঁচায় রাখবো।  খাবার দিবো। পানি দিবো। লালন করবো।


কিছুদিন পর। ছানাদের দেখতে আসে মুনা। ফুড়ুত ফুড়ুত। উড়ে যায় টুনটুনি। মুনা উঁকি দেয় বাসায়। দেখে, বড় হয়নি ছানারা। কিছুটা লুম হয়েছে গায়ে। তালের শুকনা বিচির মতো। কিছুটা বাদামি হয়েছে রং। নাড়ানাড়ি করে পাখা। হা করে বার বার। ডাকে চিঁউ চিঁউ করে। ওয়াও, ওয়াও! খুব ভালো লাগে মুনার। কথা বলেনিজে নিজে। আরো বড় হোক। তারপর নিবো।


আরো কিছু দিন পর। ছানাদের দেখতে আসে মুনা। ফুড়ুত ফুড়ুত। উড়ে যায় টুনটুনি। মুনা উঁকি দেয় বাসায়। দেখে, ছানাদের।  কিছুটা বড় হয়েছে ছানারা। বড় হয়েছে গায়ের লুম। খড়ের মতোহয়েছে রং। কিছুটা বড় হয়েছে পালক। ওয়াও, ওয়াও!  আরো ভালো লাগে মুনার। কথা বলেএকা একা। আর একটুবড় হোক। তারপরই নিয়ে নিবো। রাখবো ভাইয়ার খাঁচাটায়।  খালিইতো পড়ে আছে সেটি।  চমক লাগাবো ভাইয়াকে।


দু'একদিন পর। ছানাদেরনিতে আসে মুনা। উড়ে না টুনটুনি। করেনা ফুড়ুত ফুড়ুত। মুনা উঁকি দেয় বাসায়। না, ছানারা নেই।আফসোস করে।  ইস, চলে গেছে। সেদিন নিয়ে নিতাম যদি। মন খারাপ হয় মুনার। অনেক দিনের সখ। পাখি লালন করবে। রাখবে খঁচায়। খাবার দিবে। পানি দিবে। কাছে থেকে দেখবে। কীভাবে খায়। কীভাবে ডাকে। কীভাবে খেলা করে। তা আর হলো না। ভাবে, কী করা যায় এখন।জাগে অনেক রাত।


পরদিন সকাল। উঠানে বসে আছে মুনা। দূরে রেখেছে পাখির খাঁচাটা। খুলে রেখেছে খাঁচার দুয়ার। ভিতরে দিয়েছে পাখিদের খাবার। তাকিয়ে আছে খাঁচার দিকে। আসে কি না পাখি। ঢুকে কি না খাঁচায়। দেখে, একটি পাখি এসেছে। খুব খুশি হয় মুনা। খাঁচার পাশে বসে পাখিটা। তাকায় খাঁচার দিকে। খাবার দেখে। খাঁচায় ঢুকে না। উড়ে যায় দূরে। মন খারাপ হয় মুনার।


তার পরদিন সকাল। উঠানে বসে আছে মুনা। গত দিনের মতো। দূরে রেখেছে পাখির খাঁচা। খুলে রেখেছে খাঁচার দুয়ার। ভিতরে দিয়েছে পাখিদের খাবার। আসেপাশেও দিয়েছে কিছু। তাকিয়ে আছে খাঁচার দিকে। আসে কি না পাখি। ঢুকে কি না খাঁচায়। দেখে, দু’টি পাখি এসেছে। বসেছে খাঁচার পাশে। খেয়ে চলেছে খাবার। খুব খুশি হয় মুনা। পাখিরা ডাকাডাকি করে। আরো পাখি আসে। খাবার খায়। নাচানাচি করে। আরো খুশি হয় মুনা। খেলা করে পাখিরা। তবে খাঁচায় ঢুকে না। উড়ে যায় খাবার শেষে।


এভাবেই চলে কিছুদিন। আসে অনেক পাখি। খুশি হয় মুনা। ভাব হয় পাখিদের সাথে। সে কাছে যায় পাখিদের। উড়ে যায়না পাখিরা। ভয় পায়না তাকে। আপন হয় তারা। অনেক ভালো লাগে মুনার। ভালোলাগে পাখিদের উড়া উড়ি।


বেশ কয়েকদিন পর। টুনটুনি আসে বেগুন গাছে। খেয়াল করে মুনা। ভাবে অনেক কিছু। টুনটুনি আবার ডিম দিবে। আবার ছানা হবে। ছানারা বড় হবে। আকাশে উড়ে যাবে।  ছানাদের ধরবে নামুনা। আটক করবে না খাঁচায়।<


[সংশোধিত- ডিসেম্বর ২০১৭]


(শিশুদের জন্য লেখা যুক্তবর্ণ বিহীন এই গল্পটির কোন বাক্যে ৪টির অধিক শব্দ নেই।)

Previous Post
Next Post

0 মন্তব্য(গুলি):