শিশুতোষ গল্প- 'পাখি তাড়ানো'

পাখি তাড়ানো


মো. রহমত উল্লাহ্


পাখি তাড়ায় পনির। কয়েকদিন ধরে এটি তার কাজ। সকাল, দুপুর, বিকেল। পাখি আসে ঝাঁকে ঝাঁকে। ছোট ছোট পাখি। খেয়ে যায় ধান। পাকাধান যেন সোনার দানা। জমির আইলে পনির। হাততালি দেয় জোরে। উড়ে যায় কাছের পাখিরা। গিয়ে বসে আরেক পাশে। শুরু করে ধান খাওয়া। পনির যায় সেখানে। হাততালি দেয় আবার। উড়ে যায় সেখানের পাখি। বসে গিয়ে আরেক পাশে। শুরু করে ধান খাওয়া। পনির যায় সেই পাশে। হাততালি দেয়। হিস... করে। পাখিরা যায় আগের পাশে। এভাবেই চলে তার কাজ। খুব রাগ ধরে। ইস, ভালো লাগে না। কবে যে কাটা হবে ধান। আর কত ছোটাছুটি। আর কত হাততালি।



পরদিন। আইলে দাঁড়ায় পনির। বাঁশি বাজায়। পুর, পুর, পুর...। উড়ে যায় পাশের পাখিরা। বসে গিয়ে আরেক পাশে। সেই পাশে যায় পনির। বাঁশি বাজায় আবার। আগের পাশে যায় পাখি। এভাবেই চলে। পনিরের পাখি তাড়ানো। আর পাখিদের ধান খাওয়া। কী করবে, ভাবে পনির। ভাবে আর পাখি তাড়ায়। লেগে যায় পানি পিপাসা। পনিরের বয়স আট বছর। গায়ের রং ফরসা। সুঠাম দেহ। কালো চুল। ডাগর চোখ। বড় কান। সবল হাত। উঁচু বুক। মজবুত পা। 



পরদিন। গুলতি নিয়ে আসে পনির। চুপচাপ বসে থাকে আইলে। উড়ে আসে পাখির দল। খাওয়া শুরু করে ধান। পনির তাক করে গুলতি। ছোট ছোট অনেক পাখি। লাগবে কোনোটার গায়ে। জোরে টানে রাবার। ছুড়ে মারবেল গুলি। উড়ে যায় পাখির দল।  খেতের ভিতর যায় পনির। দেখে ছটফট করছে চড়ুই। পনির হাতে নেয় সেটি। অনুতাপ লাগে। চড়ুই তার খুব প্রিয়। বাসা বাঁধে ঘরের চালায়। তাদের ঘরেও আছে বাসা। জানালায় বসে। উঠানে নামে। খাবার খায়। খেলা করে দুটি চড়ুই। মাতিয়ে রাখে বাড়ি। খুব ভাল লাগে পনিরের। আহত চড়ুই নিয়ে যায় বাড়িতে। খুব মায়া লাগে তার। তাকিয়ে থাকে। সেবা করে। পানি দেয় মুখে। খাবার দেয়। সময় নেয়। আবার পানি দেয়। খাবার দেয়। সারিয়ে তুলে। ভালো লাগে। উড়িয়ে দেয় আকাশে। ভাবে, পাখিদের আঘাত করবে না আর।



পরদিন। পনির আসে পাখি তাড়াতে। তাকে দেখেই ভয় পায় পাখি। উড়ে যায় দূরে। যেন পাখিদের মনে পড়ে গতদিন। আবাক হয় সে। বিপদের কথা ভুলে না পাখিরা। তাইতো। হুম। একটা কাজ করা যাক তাহলে। নতুন কৌশল আসে মাথায়। শুরু করে কাজ। যেই ভাবনা সেই কাজ। দু’টি লাঠি আনে। একটি দড়ি আনে। একটি লাঠি গাড়ে ধানখেতে। গাড়ে খাড়া করে। সেটিতে বাঁধে আরেকটি লাঠি। ভূমির সমান করে। লাঠিতে পরায় নিজের জামা। ঝুলিয়ে দেয় গুলতিটা। হয়ে যায় কাকতাড়োয়া। যেন দাঁড়িয়ে আছে পনির। দু’হাত ছড়িয়ে। খেতের মাঝ খানে। পনিরের মতো কাকতাড়োয়া।



পনির ফিরে আসে আইলে। বসে থাকে ঘাপটি মেরে। সে এখন খলি গায়ে। পাখিরা আসে। দেখতে পায় না তাকে। দেখে কাকতাড়োয়া। খেতের মাঝ খানে। দেখে পনিরের জামা। ভাবে এটিই পনির। ভয় পায়। গুলতির গুলির ভয়। চলে যায় তাড়াতাড়ি। আরো পাখি আসে। দেখে কাকতাড়োয়া। ভাবে এটিই পনির। ভয় পায়। উড়ে যায় দূরে। নামে না ধানখেতে। ভয়ে চলে যায় সব পাখি। খায় না পাকা ধান। সফল হয়েছে পনিরের কৌশল। সহজ হয়েছে পাখি তাড়ানো। নিজেকে বিজয়ী ভাবে পনির। বাড়িতে ফিরে যায় ভাবনাহীন।<


[সংশোধিত- নভেম্বর ২০১৭]


(শিশুদের জন্য লেখা এও গল্পটির কোন শব্দে যুক্তবর্ণ নেই এবং কোন বাক্যে ৪ টির বেশি শব্দ নেই।]

Previous Post
Next Post

0 মন্তব্য(গুলি):