শিশুতোষ গল্প- মেলার ঘুড়ি
মেলার ঘুড়ি
মো. রহমত উল্লাহ্
বকুলদের বাড়ির কাছেই ফাঁকা মাঠ। মাঠের বটতলায় বসে বৈশাখী মেলা। পাশের নদীতে হয় নৌকা বাইচ। মেলায় আসেন অনেক মানুষ। ছোট, বড়, ছেলে, মেয়ে সবাই। খুব আনন্দ হয় এখানে।
আজ পহেলা বৈশাখ। মেলায় এসেছে বকুল। সাথে আছেন বাবা ও ভাইয়া। বকুল অনেককিছু কিনবে আজ। যা চাইবে তাই কিনে দিবেন বাবা। কেননা, শ্রেণিতে প্রথম হয়েছে সে। এমনই কথা ছিলো বাবার সাথে।
প্রথমেই নাগরদোলায় চড়ে বসলো তিনজন। কেঁও কেঁও শব্দ করে ঘুরতে লাগলো নাগরদোলা। ভয়ে কাঁপছে বকুল। সবার উপরে উঠে গেলো তারা। বাঃ, কী সুন্দর মেলার দৃশ্য!
নিমিষেই কেটে গেলো বকুলের ভয়।
এর পর এলো নদীর তীরে। নদীতে চলছে নৌকা বাইচ। ছুটে আসছে দীর্ঘ-চিকন নৌকা। হেইও হেইও করছে মাঝির দল। ছফাত ছফাত করে পানিতে পড়ছে বৈঠা। জোরছে বাজছে ঢোল-বাঁশি, পড়ছে হাততালি। নেচে গেয়ে ফুরতি করছে সবাই! ছুটছে অনেক নৌকা। দেখাযাক, কার আগে কে যায়।
মাথায় ময়ূর বানানো নৌকাটি হয়েছে প্রথম। বাবা বললেন, এটির নাম ‘ময়ূরপংখি’ নৌকা।গ
তার পর সারকাস দেখতে এলো বকুল। নিমিষেই দেখা হয়ে গেলো অনেক জায়গা। সুন্দরবন, সোনার গাঁ, পাহাড়পুর, ময়নামতি...। আরো দেখলো- লালবাগ কেল্লা, যাদুঘর, চিড়িয়াখানা...।
বকুল বললো- ‘খুব সুন্দর, তুমিও দেখো ভাইয়া’। বড়দের মতো ভাব দেখালো ভাইয়া। বললো- ‘আমি এসব দেখেছি অনেক’।
বাঁশির দোকানে এলো এর পর। একটা বাঁশি হাতে নিলো ভাইয়া। পোঁ করলো বকুলের কানের কাছে। ভাইয়ার পেটে ঘুষি দিলো বকুল। নিজের ও ভাইয়ার জন্য কিনলো অনেক কিছু। বাঁশের বাঁশি, পাতার বাঁশি, বেলুন বাঁশি, শামুক বাঁশি।
এবার মাটির জিনিসের দোকানে এলো বকুল। কিনলো নানান রকম পুতুল। হা করা বাঘ, পাল তোলা নৌকা, পাখা মেলা দোয়েল...।
ভাগাভাগি করে নিলো ভাইয়ার সাথে।
পাশেই কাঠের জিনিসের দোকান। কত রকম খেলনা যে আছে এই দোকানে! পশু, পাখি, ঢেঁকি, পিঁড়ি, পালকি, লাটিম, বেলনা... । অনেক খেলনা কিনলো ভাইয়া।
বকুলকে দিলো গরুগাড়ি। বাবাকে দিলো শহিদমিনার।
তার পর কিনতে এলো বাঁশ-বেতের জিনিস। মায়ের জন্য কিনলো অনেক জিনিস। ঝুড়ি, পুড়া, ডালা, কুলা, খাড়ি, পাখা, চালনি...।
মাটির ও কাঠের খেলনা গুলো ঝুড়িতে রাখলো বকুল।
এর পর এলো শুকনা খাবারের দোকানে। কিনলো অনেক শুকনা খাবার। চিড়া, মুড়ি, মুড়কি, মোয়া, মনডা, খাজা, গজা, মুড়ালি...।
বাবা বললেন: ‘খুব ভালো খাবার এসব। নিজেরাও খাওয়া যাবে, মেহমানকেও দেওয়া যাবে’।
একটা মনডার অর্ধেক বকুলের মুখে পুরে দিলো ভাইয়া।
ঘুড়ির দোকানে এলো সব শেষে। আকাশে উড়ছে নানা রকম ঘুড়ি। মাছ-ঘুড়ি, পাখি-ঘুড়ি, প্রজাপতি-ঘুড়ি...। সুতাভর্তি লাটাই আর প্রজাপতি-ঘুড়ি কিনলো ভাইয়া।
ফেরিওয়ালার নিকট থেকে চারটি বেলুন কিনলো বকুল।
এবার বাড়িতে ফিরছে তারা। ফিরার পথে ফসলের ফাঁকা মাঠ। ঘুড়ি উড়াতে চাইলো ভাইয়া। অনুমতি দিলেন বাবা।
ঘুড়ি উড়াতে লাগলো ভাইয়া। সূতা ছাড়ছে তো ছাড়ছে। আকাসে অনেক দখিনা বাতাস। অনেক উপরে ভাইয়ার ঘুড়ি। অনেক হাসি ভাইয়ার মুখে।
হঠাৎ ছিড়ে গেলো সুতা!
ঘুড়ির পিছনে ছুটছে ভাইয়া। সাথে ছুটছেন বাবা। ভাইয়া..., বাবা... বলে চিৎকার করছে বকুল। খুব জোরছে ছুটছে ভাইয়া। পড়ছে, উঠছে আবার ছুটছে!
অবশেষে নিচে নেমে এলো ঘুড়ি। মাটিতে পড়ার আগেই লাফিয়ে ধরলো ভাইয়া। ফিরে এলো জয়ের খুশিতে নেচে নেচে। হাতে করে নিয়ে এলো ঘুড়ি। হাঁপাতে হাঁপাতে এলেন বাবা। বললেন, ‘বসো, এবার জিরিয়ে নিই’। তাকালেন ভাইয়ার দিকে। দেখলেন, ছুলে গেছে ভাইয়ার হাঁটু আর কনুই! রাগ করলেন ভাইয়ার সাথে। এখন ভাইয়া অনূভব করলো সেই আঘাতের ব্যথা! চোখ মুছলো বার বার।
বকুল বললো, ‘কী দরকার ছিলো এতো ছুটার? আরেকটি ঘুড়ি কিনলেই হতো।’
ভাইয়া বললো, ‘সেটি কি আর এটি হতো?’
বাড়িতে এসে, মাকে সবকিছু খুলে বললো বকুল। মা জড়িয়ে ধরে আদর করলেন ভাইয়াকে। আবার হাসি ফুটে উঠলো ভাইয়ার মুখে। ঘুড়ি ফিরে পাওয়ার সেই হাসি! //
[সংশোধিত- নভেম্বর ২০১৭]
(শিশুদের জন্য লেখা এই গল্পটির কোন শব্দে যুক্তবর্ণ নেই এবং কোন বাক্যে ৭ টির বেশি শব্দ নেই।)
0 মন্তব্য(গুলি):