উপ-সম্পাদকীয়- মানসম্মত শিক্ষার জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষক -সাক্ষরতা বুলেটিন- নভেম্বর ২০১৭

উপ-সম্পাদকীয়- মানসম্মত শিক্ষার জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষক -সাক্ষরতা বুলেটিন- নভেম্বর ২০১৭

মানসম্মত শিক্ষার জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষক

মো. রহমত উল্লাহ্

>সুশিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সবার আগে চাই সুযোগ্য শিক্ষক। কেননা অন্যান্য উপাদান ও উপকরণ সঠিক থাকলেও ভালো শিক্ষক না থাকলে ভালো শিক্ষা অসম্ভব। একজন মেধাবী শিক্ষার্থীকে প্রয়োজনীয় বই, খাতা, কলম, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, মাল্টিমিডিয়াসহ অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ, সুসজ্জিত শ্রেণিকক্ষ, অনলাইন পাঠাগার, ডিজিটাল বিজ্ঞানাগার, ইত্যাদি অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেও শুধু ভালো শিক্ষক দেয়া না হলে তার পক্ষে সঠিক শিক্ষা গ্রহণ সম্ভব নয়। একজন শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও মেধার সঠিক সমন্বয় ঘটিয়ে সুপ্ত প্রতিভাকে সযত্নে জাগিয়ে লালন-পালনের মাধ্যমে তাকে অধিক কর্মক্ষম করে তোলা শিক্ষকের প্রধান কাজ। এ কাজ অত্যন্ত জটিল। শিক্ষার্থীভেদে বিচিত্র মনমানসিকতা অনুধাবন করে একেকজনকে একেক কৌশলে আয়ত্ত করাতে হয় শিক্ষার বিষয়। শিক্ষা হচ্ছে 'শিক্ষার্থীর আচরণের স্থায়ী অনুকূল পরিবর্তন'। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর মনোযোগ আকর্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষকের বিভিন্নমুখী যোগ্যতা ও দক্ষতা যত বেশি হবে শিক্ষার্থীরা তার প্রতি তত বেশি শ্রদ্ধাশীল হবে, আকৃষ্ট হবে, মনোযোগী হবে। সফল হবে শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়া। অধিক লাভবান হবে শিক্ষার্থী।

অথচ আমাদের দেশে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকের আর্থিক-অনার্থিক সুযোগ-সুবিধা কম ও নিয়োগে দুর্নীতির কারণে প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সত্যিকার মানসম্পন্ন শিক্ষকের খুবই অভাব। ফলে পরীক্ষার ফল ভালো হলেও শিক্ষার মান তুলনামূলক কম। প্রকৃত শিক্ষক হওয়ার মতো ভালো রেজাল্ট, জ্ঞান, মেধা, পাঠাভ্যাস, সততা, ধৈর্য্য, নীতি-আদর্শ, দেশপ্রেম, জাতীয় চেতনা, আচার-আচরণ, চলন-বলন নেই এমন অনেকেই আজ আমাদের শিক্ষক। তারা শিক্ষক হয়েও স্বভাবে বা অভাবে যুক্ত শিক্ষাবহির্ভূত কর্মে। ক্লাস ফাঁকি দিতে, অধিক নাম্বার দিতে, প্রশ্ন ফাঁস করে দিতে, বিভিন্ন অজুহাতে শিক্ষার্থীর কাছ থেকে টাকা নিতে, ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থে শিক্ষার্থীদের অপব্যবহার করতে তাদের অনেকেরই বিবেকে বাধে না। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এদের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক বেশি। দীর্ঘদিন ধরে বাঙালি জাতির মূল চেতনা ও আশা-আকাঙ্ক্ষা অনুসারে দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার মতো সৎ, যোগ্য, দক্ষ, ন্যায়নীতিপরায়ণ সুনাগরিক তৈরির উপযোগী সর্বজনীন কোনো শিক্ষানীতি না থাকা এবং বিভিন্ন সময়ে জারিকৃত বিভিন্ন রকম সরকারি পরিপত্র এর জন্য বহুলাংশে দায়ী। যেমন ১৯৯৫ সালের আগে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হওয়ার জন্য নূ্যনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে সুদূরপ্রসারী কল্যাণকর কোনো সুষ্ঠু নীতিমালই ছিল না। ২৪ অক্টোবর, ১৯৯৫ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত (নাম্বার-শি.ম./শা. ১১/বিবিধ-৫/৯৪/অংশ-৬/৩৯৪) পরিপত্রে শিক্ষক হওয়ার নূ্যনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছিল_ 'সকল পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগ/শ্রেণি'। কিন্তু ১৬ জানুয়ারি, ১৯৯৬ সালে অন্য একটি পরিপত্রের দ্বারা (নাম্বার-শি.ম./শা. ১১/বিবিধ-৫/৯৪/১২) সিদ্ধান্তটির স্থগিতাদেশ জারি করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শুভবুদ্ধির পুনরুদয় হলে ৩১ আগস্ট, ২০০০ সালে (নাম্বার-শি.ম./শা.১১/৫/৯৪/৭৩১/১৯ নাম্বার পরিপত্রের দ্বারা) ওই স্থগিতাদেশটি প্রত্যাহার করে নেয়। ২০০৩ সালের ২ এপ্রিল আবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় (নাম্বার-শি.ম./শ.১১/৬/২০০২/৩৪৭/১৩ নাম্বার পরিপত্রের মাধ্যমে) ঘোষণা করে যে, 'বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে একজন প্রার্থীর সমগ্র শিক্ষাজীবনে অনধিক একটি তৃতীয় বিভাগ/শ্রেণি গ্রহণযোগ্য হবে'। অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সালে জারিকৃত (নাম্বার-শি.ম./শা.১৩/এম.পি.ও.-১২/২০০৯/৭৫ নাম্বার) পরিপত্রেও তা বহাল রাখা হয়েছে। ফলে বিশেষভাবে লক্ষণীয়, শুধু ২৪ অক্টোবর, ১৯৯৫ থেকে ১৫ জানুয়ারি, ১৯৯৬ এবং ৩১ আগস্ট, ২০০০ থেকে ১ এপ্রিল, ২০০৩ এ কদিন কমিটি/গভর্নিং বডি ইচ্ছা করলেও থার্ড-ক্লাস শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারেনি। তা ছাড়া সর্বদাই সুযোগ ছিল এবং এখনো সুযোগ রয়েছে তৃতীয় বিভাগ/শ্রেণিপ্রাপ্ত 'আদু ভাই'দের শিক্ষক হওয়ার। অথচ অন্যান্য কম গুরুত্বপূর্ণ এমনকি ছোট-বড় প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরির ক্ষেত্রেও এখন আর এ সুযোগ নেই। তৃতীয় বিভাগ/শ্রেণিপ্রাপ্ত 'আদু ভাই'দের শিক্ষক হওয়ার সুযোগ সরকার না দিলে নিয়োগের দুর্নীতিটাও থার্ড-ক্লাস পর্যায়ে নামতে পারত না।
একজন অযোগ্য শিক্ষক সারা জীবন তৈরি করে অসংখ্য অযোগ্য নাগরিক, যা দেশ ও জাতির জন্য সীমাহীন অকল্যাণ। আমাদের দেশে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করে বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায়। যোগ্য নাগরিক-কর্মী তৈরির প্রয়োজনেই বিশেষ নজর দেয়া উচিত সেখানে। বিশেষ করে গ্রামে অবস্থিত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দিকে। শহরের তুলনায় গ্রামে অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থার্ড-ক্লাস ও অযোগ্য শিক্ষকের সংখ্যা বেশি। সুশিক্ষার অধিকার থেকে অধিক বঞ্চিত গ্রামবাংলার শিক্ষার্থীরা।
দেশ-জাতির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার যুক্তিতেই বিভিন্ন চাকরি ক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে কোটা। শিক্ষক নিয়োগে এর হার সর্বাধিক। এমনকি এ কোটা পূরণের জন্য শিথিল করা হচ্ছে মেয়েদের শিক্ষাগত যোগ্যতা! অথচ গভীরভাবে ভেবে দেখা হচ্ছে না এর ফল। অন্যান্য চাকরি ক্ষেত্রে যা-ই হোক, জাতি গঠনের কারিগর 'শিক্ষক' নিয়োগের ক্ষেত্রে গভীরভাবে ভেবে নেয়া দরকার এ কোটা সংরক্ষণের সুফল-কুফল। সরকার একদিকে বলছে নতুন শিক্ষানীতি অনুসারে প্রাথমিক শিক্ষার স্তর হবে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত, অন্যদিকে সেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদানের জন্য নিয়োগ দিচ্ছে মাত্র এসএসসি পাস শিক্ষক! কোনো পর্যায়েই এখন আর যোগ্যতার প্রশ্নে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে।
এ ছাড়াও সুদূরপ্রসারী কোনোরূপ সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও অধিক কল্যাণকর নীতিমালা ছাড়াই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সাময়িক স্বার্থে রেজিস্ট্রিকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি করার কারণে এবং যত্রতত্র যেনতেনভাবে গড়ে ওঠা স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত করার কারণে এবং এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান সরকারি করার কারণে দেশের জনগণের টাকায় সরকারি সুবিধাপ্রাপ্ত শিক্ষকসমাজের মূল স্রোতে যুক্ত হয়ে পড়েছে অনেক অযোগ্য শিক্ষক। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, একটি উন্নত শিক্ষানীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরুর পরেও থেমে নেই এসব অশুভ/অকল্যাণকর পদক্ষেপ। ভালো ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রেজিস্ট্রি করা, এমপিওভুক্ত করা, সরকারি করা হোক তা আমিও চাই। কিন্তু তার আগে দেখে নেয়া হোক সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অবস্থা ও অবস্থান। সেখানে বিদ্যমান জমির পরিমাণ কতটুকু। তাতে নিশ্চিত করা যাবে কিনা খেলার মাঠ, সবুজ বনায়ন, প্রাকৃতিক আলো-বাতাস এবং নির্মাণ করা যাবে কিনা আধুনিক শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজনীয় ভবন। আছে কিনা সহজ যাতায়াতের প্রয়োজনীয় রাস্তা ও প্রয়োজনে নতুন করে অধিগ্রহণ করার মতো সংলগ্ন খালি জায়গা। বজায় থাকছে কিনা নিকটবর্তী সমজাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এর প্রমাণ দূরত্ব। বিদ্যমান সব শিক্ষকের আদৌ আছে কিনা বিশ্বমানের নাগরিক-কর্মী তৈরির উপযোগী হয়ে ওঠার সব যোগ্যতা। তা না হলে, দেশ ও জাতির অধিকতর স্বার্থে সন্তোষজনক গোল্ডেন হ্যান্ডশেক ও অন্যান্য সুবিধা দিয়ে অগ্রিম অবসরে পাঠিয়ে দিতে হবে অযোগ্যদের। কেননা, সরকার কর্তৃক রেজিস্ট্রিকৃত, সরকারি এমপিওভুক্ত বা সম্পূর্ণ সরকারিকৃত কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের লোকবল ও শিক্ষার পরিবেশ তো আর যেনতেন হলে চলে না, চলবে না।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে অনেকটা ভিন্ন রকমের। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা, ক্লাব-সমিতি ইত্যাদি পণ্য বা সেবা উৎপাদনকরী প্রতিষ্ঠানের মতো স্বল্প মেয়াদে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সফলতা বা ব্যর্থতা মূল্যায়ন করা চলে না। কারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোনো পণ্যের একক উৎপাদন করে না। বরং মানসম্পন্ন পণ্য বা সেবা উৎপাদনের জন্য মানসম্পন্ন মানবসম্পদ উৎপাদনের গুরুদায়িত্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথা প্রতিষ্ঠান-প্রধান ও শিক্ষকের ওপর ন্যস্ত। শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। অন্যান্য কারিগরের চেয়ে তারা ভিন্ন। শিক্ষার মূল লক্ষ্য 'আচরণের স্থায়ী অনুকূল পরিবর্তন' একটি দীর্ঘমেয়াদি মননশীল কর্ম বা ব্রত; যা শিক্ষকের মনের গভীরে লালিত। শুভচিন্তা, জাতীয় চেতনা, সুশিক্ষা, ইত্যাদি সদ্গুণ স্বেচ্ছায় সুকৌশলে শিক্ষার্থীর মনে রোপণ ও লালন-পালন করতে হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-প্রধানকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত এ প্রক্রিয়া। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-প্রধান একাধারে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, অভিভাবকসহ আরো অনেকেরই শিক্ষক। তাই তার হওয়া চাই সবচেয়ে বড় শিক্ষক। শিক্ষাদানের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান ব্যাপক আর্থিক ও অনার্থিক বিষয়। শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা অন্য যে কোনো প্রশাসন বা ব্যবস্থাপনা থেকে পৃথক ও জটিল। প্রতিষ্ঠান-প্রধানকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয় পুরো শিক্ষা কার্যক্রম এবং আর্থিক-অনার্থিক ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসন। প্রতিষ্ঠানের ভিন্নতা বা বিশেষত্বের কারণেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-প্রধানের দায়িত্ব ও কর্তব্যের পরিধি এত বেশি যার সব কটি চিহ্নিত/উল্লেখ/দৃশ্যমান করা প্রায় অসম্ভব। এ বিশাল গুরুদায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করার জন্যই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-প্রধানের থাকা চাই দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান অনেক ধরনের যোগতা ও দক্ষতা। শুধু বয়সের মাপকাঠিতে যার মূল্যায়ন সঠিক হয় না।
যোগ্য নাগরিক-কর্মী তৈরির কারখানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষকরা এ কারখানর কারিগর। তাই যোগ্য মন্ত্রী, আমলা, নেতা, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী, বিচারক, আইনবিদ, সাংবাদিক, লেখক, শ্রমিক-কর্মচারী সবই তৈরির পূর্বশর্ত সুযোগ্য শিক্ষক।
শুধু বেসরকারি নয়, সব শিক্ষক, প্রশিক্ষক ও হুজুরেরই যথাযথ শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি অত্যন্ত ভালোভাবে জানা থাকতে হবে শিক্ষার সংজ্ঞা, শিক্ষার উদ্দেশ্য, শিশু-কিশোর মনোবিজ্ঞান ও শিক্ষা প্রদানের আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি। অবশ্যই থাকতে হবে বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ এবং প্রতিনিয়ত প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান আহরণ ও বিতরণের ঐকান্তিক ইচ্ছা। তদুপরি একজন শিক্ষককে প্রকৃত শিক্ষক হয়ে ওঠার জন্য তার থাকা চাই অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব।
যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদের বাদ দেয়া কঠিন। কিন্তু নতুন করে কেন আবার নিয়োগ দিতে হবে থার্ড-ক্লাস শিক্ষক? এখন তো আর প্রথম/দ্বিতীয় বিভাগ/শ্রেণিপ্রাপ্ত প্রার্থীর অভাব নেই। শিক্ষকদের আর্থিক ও অনার্থিক সুযোগ-সুবিধা আরো বৃদ্ধি করে সর্বাধিক ভালো ছাত্রদের শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করতে পারলে তারা অবশ্যই ভালো শিক্ষক হবেন। তাই দেশ ও জাতির সুদূরপ্রসারী কল্যাণার্থে এখন আমাদের সস্নোগান হোক_ 'আর নয় থার্ড-ক্লাস শিক্ষক'। দুর্নীতিমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, জঙ্গিবাদমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার উপযোগী ফার্স্ট-ক্লাস মানুষ তৈরির জন্য চাই ফার্স্ট-ক্লাস শিক্ষক। যার জন্য এখনই প্রয়োজন সঠিক সরকারি সিদ্ধান্ত ও কার্যকর পদক্ষেপ।

উপ-সম্পাদকীয়- প্রাইভেট কোচিং বন্ধের উপায় কী? -সকালের খবর- ০৬ আগস্ট ২০১২


সকালের খবর
সোমবার, ৬ আগস্ট ২০১২, ২২ শ্রাবণ ১৪১৯, ১৭ রমজান ১৪৩৩
প্রাইভেট কোচিং বন্ধের উপায় কী?
রহমত উল্লাহ
আমাদের শিক্ষা ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তনের অপরিহার্যতা সবাই স্বীকার করলেও অতীতে এর জন্য বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বর্তমান সরকার তা নিয়েছে এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে বেশ কিছু অনুকূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। এটা পরিষ্কার যে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও ঐকান্তিক ইচ্ছার কারণেই তা সম্ভব হয়েছে ও হচ্ছে। এই যে সারা দেশে অনলাইনে সব ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন, ফরম পূরণ, একই দিনে বই বিতরণ, একই দিনে ক্লাস শুরু, একই রুটিনে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা গ্রহণ, পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষার সফল বাস্তবায়ন, অতি স্বল্পতম সময়ে কাগজবিহীন ফলাফল প্রকাশ, এসএমএসের মাধ্যমে ফলাফল জানা ও উত্তরপত্র পুনঃমূল্যায়ন, মোটের ওপর একটা উদ্যম-উদ্দীপনা সৃষ্টি-এ সবকিছু বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকায় রয়েছে শিক্ষক সমাজ ও শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ। সরকারের শুরু থেকেই শিক্ষামন্ত্রীর বিভিন্ন কথায় তারা অনুভব করতে পেরেছিলেন, তিনি শিক্ষক সমাজের প্রতি আন্তরিক ও শ্রদ্ধাশীল। শিক্ষকরা তাদের অভাব-অনটন থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় বুক বেঁধে কাজ করেছেন ও করছেন সরকারের গৃহীত অনুকূল পদক্ষেপ বাস্তবায়নে। অন্যথায় এই সফলতাটুকু অর্জন সম্ভব ছিল না মোটেও। আর এই শিক্ষকদের ৯৭ ভাগ হচ্ছেন বেসরকারি। তাদের প্রাপ্ত বেতন-ভাতায় সংসার চলে না-এটি এখন সবাই জানেন ও বোঝেন। শিক্ষামন্ত্রী নিজেও তা অনুভব করেন বলে সবার বিশ্বাস। শিক্ষকদের বাধ্য হয়েই বিকল্প উপার্জনের রাস্তা খুঁজতে হচ্ছে সংসারের ন্যূনতম ব্যয় মেটানোর জন্য। তাই তাদের যোগ্যতানুসারে বেছে নিয়েছেন ওভারটাইম আয়ের রাস্তা। কেউ প্রাইভেট পড়াচ্ছেন, কেউ নোট-গাইড লিখছেন, কেউ ঠিকাদারি, কেউ জমির ব্যবসা, কেউ রাজনীতি ব্যবসা, কেউ আবার দোকানদারি করছেন, কেউ বাবার/স্বামীর ধন খাচ্ছেন ইত্যাদি ইত্যাদি। সেসব খাতের আয়ের ওপর যেহেতু তাদের জীবনধারণ করতে হচ্ছে সেহেতু তারা এডিশনাল কাজকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। সে কাজেই বেশি সময়, শ্রম ও মেধা খাটাচ্ছেন। ফলে শিক্ষকতায় তাদের মনোযোগ না থাকা বা কম থাকাই স্বাভাবিক। শিক্ষার্থীরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়াই বাস্তব। এই বাস্তবতায় প্রাইভেট বা কোচিং না করে শিক্ষার্থীরা পারবে কীভাবে? তবে এ কথা স্বীকার করতে হবে, যারা শিক্ষকতার পাশাপাশি অন্যান্য কাজ করছেন বা করতে বাধ্য হচ্ছেন; তাদের চেয়ে যারা প্রাইভেট-কোচিং দিচ্ছেন তারা তো ব্যক্তিগতভাবে হলেও শিক্ষকতাই করছেন। নিজের পাঠদানের বিষয়টি নিয়মিত চর্চা করছেন কমবেশি। অন্যরা তো তা-ও করছেন না।  এই প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করতে পারেনি বলেই হয়তো শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাইভেট-কোচিং বন্ধের ব্যাপারে শেষ পর্যন্ত নমনীয় নীতি নির্ধারণ করতে বাধ্য হয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন। প্রাইভেট-কোচিং বন্ধের কথা বলে বলে শেষমেশ যে নীতিমালা জারি করেছেন তাকে পরোক্ষ অনুমোদনই বলছেন কেউ কেউ। [যেমন : শিক্ষকরা নিজের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না। অন্য প্রতিষ্ঠানের ১০ জনের বেশি পড়াতে পারবেন না। নিজের শিক্ষার্থীদেরকে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনায় প্রতি বিষয় শহরে ৩০০, উপশহরে ২০০, গ্রামে ১৫০ টাকা হারে; তবে সর্বমোট অনধিক ১২০০ টাকায় সব বিষয় পড়াতে পারবেন অভিভাবকদের সম্মতিসাপেক্ষে। এর ব্যত্যয় ঘটলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক শাস্তি পাবেন। একটি বিশেষ কমিটি তা মনিটরিং করবে।
এসব পদক্ষেপের ফলে যা দাঁড়াল তা হচ্ছে, আগে তো কেবল কঠিন বিষয়ে কোচিং হতো এখন হবে সব বিষয়ে। কারণ দুয়েক জন শিক্ষক কোচিং ফি পাবেন আর অন্যরা পাবেন না তা তো হবে না। তাই পরীক্ষায় ফেল করিয়ে কোচিংয়ে বাধ্য করাতে পারেন অতি সহজ বিষয়ের জটিল স্যাররাও। অপরদিকে নিজের বাসায় বসে বা শিক্ষার্থীর বাসায় গিয়ে কোন শিক্ষক কখন কতজন কোন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াচ্ছেন তা মনিটর করা আমাদের জন্য দুরূহ কাজ। আমরা তো এখনও আমাদের নিত্যদিনের ওপেন ও প্যাকেট খাবারগুলোই ভেজাল এবং ফরমালিনমুক্ত করতে পারছি না। প্রকাশ্যে সদর রাস্তায় চলা মিটারবিহীন অটোরিকশা ও ট্যাক্সিক্যাব বন্ধ করতে পারছি না। সরকারি ডাক্তারদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ করতে চেষ্টাও করছি না। অথচ কোথায় কোন গ্রামেগঞ্জে, শহরে কোন ঘরে বসে বা অন্যের ঘরে গিয়ে কবে কখন সকাল-বিকেল রাতে কোন প্রতিষ্ঠানের কতজন শিক্ষার্থীকে কোন প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষক প্রাইভেট-কোচিং দিচ্ছেন তা খুঁজে বের করে শাস্তি দেবেন আর প্রাইভেট-কোচিং বন্ধ হবে এমনটি অবাস্তব নয় কী? আসলে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা সঠিকভাবে পড়াচ্ছেন কি না, তদারকি করা প্রয়োজন সেটি। তা না করে কমিটি বাসাবাড়িতে যেয়ে তদারক করবে শিক্ষকরা সরকারি নিয়ম মেনে প্রাইভেট-কোচিং দিচ্ছেন কি না। এ যেন ‘চোখের অপারেশন পায়ে’। একটু গভীরভাবে তাকালে দেখা যাবে অনেক মন্ত্রী, এমপি, আমলা, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতির ছেলেমেয়ে বা নাতি-নাতনিকে প্রাইভেট পড়ানোর জন্য হয়তো বাসায়ই নিয়োগ দেওয়া আছে একাধিক টিচার। বিশেষ করে নামকরা টিচার ও কোচিং-সেন্টারের আশেপাশের রাস্তায় যেসব দামি দামি গাড়ির ভিড় লেগে থাকে সেগুলোর অধিকাংশই সমাজ ও রাষ্ট্রের বিশেষ ব্যক্তিদের ছেলেমেয়ে বা নাতি-নাতনিদের। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, যাদের দিয়ে এই প্রাইভেট-কোচিং বাণিজ্য বন্ধের তদারকি করানো হবে তাদের কারও সন্তানও যে প্রাইভেট পড়েনি, পড়ছে না এবং পড়বে না, তা নিশ্চিত করবে কে? বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষকরা প্রাইভেট-কোচিং করানো বন্ধ করতে বাধ্য হলেও শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট-কোচিং না করে পারবে না। কারণ শ্রেণীকক্ষে পর্যাপ্ত শিক্ষা থেকে তারা বঞ্চিত। ফলে অশিক্ষকের কাছ থেকে প্রাইভেট-কোচিং নিতে বাধ্য হবে শিক্ষার্থীরা। অশিক্ষকদের তো আর শাস্তি নেই। সে হবে আরও বেশি ক্ষতির কারণ। আবারও বলছি, দীর্ঘ অতীত ও বর্তমান বাস্তবতা হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়ের প্রয়োজনেই চলছে এই প্রাইভেট-কোচিং। এই প্রাইভেট-কোচিং বন্ধ করার জন্য গৃহীত এসব পদক্ষেপের ফলাফল সরকারের বিশেষ করে শিক্ষামন্ত্রীর জনপ্রিয়তা হ্রাস ছাড়া আর কিছুই হবে বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু এভাবে তো আর চলতে পারে না। শিক্ষার্থীরা নিজের প্রতিষ্ঠানে মোটা অঙ্কের টাকায় ভর্তি হবে, বেতন-ফি পরিশোধ করবে, আবার নিজের প্রতিষ্ঠানেই অতিরিক্ত টাকা দিয়ে কোচিং ক্লাস করে রিকভার করতে বাধ্য হবে নির্ধারিত ক্লাসের ঘাটতি পড়া! সব শিক্ষার্থীকে সব বিষয়ে পরিপূর্ণ পাঠদান করাই তো শিক্ষকদের চাকরি। কিন্তু শিক্ষকরা এ কাজ সঠিকভাবে সম্পাদন করছেন কি না তা তদারক করার জন্য কমিটি না করে, করা হল প্রাইভেট-কোচিং তদারকি কমিটি। একজন শিক্ষক দৈনিক কত ঘণ্টা প্রতিষ্ঠানে থাকবেন, কত ঘণ্টা থাকছেন তার কি কোনো হিসাব নেওয়া হয়? আমার জানা মতে, এমনও শিক্ষক আছেন যারা ঢাকা শহরে বাসাবাড়িতে থেকে চাকরি করছেন অন্য জেলার সরকারি-বেসরকারি কলেজে। সপ্তাহে যাচ্ছেন ৩-৪ দিন। চল্লিশ মিনিটের ক্লাস নিচ্ছেন দিনে দুয়েকটি মাত্র। তাদের মাসিক কর্মঘণ্টা  ৮/১০/১৬/২০ ঘণ্টার। শুধু উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণী আছে এমন কলেজের একজন শিক্ষক যদি প্রতিদিন চল্লিশ মিনিটের দুটি করে ক্লাস সপ্তাহে ছয় দিনই নেন তবুও তার মাসিক কর্মঘণ্টা হবে সর্বোচ্চ ৩২ ঘণ্টা। এর বাইরে হয়তো কিছু পরীক্ষা নেওয়া আর খাতা দেখা। দৌড়ে এসে ক্লাস আবার ক্লাস শেষ হলেই দৌড়। এক কাজ থেকে এসে আবার ছুটছেন অন্য কাজে। পত্রপত্রিকা পড়ার সময় এবং ধৈর্যও নেই অনেকেরই। গবেষণা তো দূরের কথা। শিক্ষকরা এমন হলে শিক্ষার্থীরা যাবে কোথায়? কমবেশি একাদশ শ্রেণীর ১২০ এবং দ্বাদশ শ্রেণীর ১২০ জনসহ মোট ২৪০ শিক্ষার্থীর জন্য একজনমাত্র ইংরেজি শিক্ষক যথেষ্ট কি না তা-ও ভেবে দেখা প্রয়োজন। দীর্ঘদিনের এই দুরবস্থা থেকে বের হতে হলে অবশ্যই বাড়াতে হবে শিক্ষকদের আর্থিক সুবিধা এবং সেই সঙ্গে বাড়াতে হবে কর্মঘণ্টা। শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠানে অবস্থান নিশ্চিত করে শিক্ষার্থীদের জন্য নিশ্চিত করতে হবে প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা। যেন আর না থাকে ক্লাসের বাইরে ক্লাসের বিষয় পড়ার কোনো প্রয়োজনীয়তা। তা না হলে বন্ধ করা সম্ভব হবে না এই প্রাইভেট-কোচিং।

লেখক : শিক্ষক
http://www.shokalerkhabor.com/2012/08/06/92496.html

উপ-সম্পাদকীয়- বেতন-ভাতা ও কর্মঘন্টা বৃদ্ধি ব্যতীত বন্ধ করা যাবে না প্রাইভেটকোচিং-সাক্ষরতা বুলেটিন- অক্টোবর ২০১৭

উপ-সম্পাদকীয়- বেতন-ভাতা ও কর্মঘন্টা বৃদ্ধি ব্যতীত বন্ধ করা যাবে না প্রাইভেটকোচিং-সাক্ষরতা বুলেটিন- অক্টোবর ২০১৭
P_20180528_110948_1বেতন-ভাতা ও কর্মঘন্টা বৃদ্ধি ব্যতীত বন্ধ করা যাবে না প্রাইভেট-কোচিং

মো. রহমত উল্লাহ্‌
আমাদের শিক্ষা ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তনের অপরিহার্যতা সবাই স্বীকার করলেও অতীতে এর জন্য বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বর্তমান সরকার তা নিয়েছে এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে বেশ কিছু অনুকূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। এটা পরিষ্কার যে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও ঐকান্তিক ইচ্ছার কারণেই তা সম্ভব হয়েছে ও হচ্ছে। এই যে সারা দেশে অনলাইনে সব ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন, ফরম পূরণ, একই দিনে বই বিতরণ, একই দিনে ক্লাস শুরু, একই রুটিনে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা গ্রহণ, পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষার সফল বাস্তবায়ন, অতি স্বল্পতম সময়ে কাগজবিহীন ফলাফল প্রকাশ, এসএমএসের মাধ্যমে ফলাফল জানা ও উত্তরপত্র পুনঃমূল্যায়ন, মোটের ওপর একটা উদ্যম-উদ্দীপনা সৃষ্টি-এ সবকিছু বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকায় রয়েছে শিক্ষক সমাজ ও শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ। সরকারের শুরু থেকেই শিক্ষামন্ত্রীর বিভিন্ন কথায় তারা অনুভব করতে পেরেছিলেন, তিনি শিক্ষক সমাজের প্রতি আন্তরিক ও শ্রদ্ধাশীল। শিক্ষকরা তাদের অভাব-অনটন থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় বুক বেঁধে কাজ করেছেন ও করছেন সরকারের গৃহীত অনুকূল পদক্ষেপ বাস্তবায়নে। অন্যথায় এই সফলতাটুকু অর্জন সম্ভব ছিল না মোটেও। আর এই শিক্ষকদের ৯৭ ভাগ হচ্ছেন বেসরকারি। তাদের প্রাপ্ত বেতন-ভাতায় সংসার চলে না-এটি এখন সবাই জানেন ও বোঝেন। শিক্ষামন্ত্রী নিজেও তা অনুভব করেন বলে সবার বিশ্বাস। শিক্ষকদের বাধ্য হয়েই বিকল্প উপার্জনের রাস্তা খুঁজতে হচ্ছে সংসারের ন্যূনতম ব্যয় মেটানোর জন্য। তাই তাদের যোগ্যতানুসারে বেছে নিয়েছেন ওভারটাইম আয়ের রাস্তা। কেউ প্রাইভেট পড়াচ্ছেন, কেউ নোট-গাইড লিখছেন, কেউ ঠিকাদারি, কেউ জমির ব্যবসা, কেউ রাজনীতি ব্যবসা, কেউ আবার দোকানদারি করছেন, কেউ বাবার/স্বামীর ধন খাচ্ছেন ইত্যাদি ইত্যাদি। সেসব খাতের আয়ের ওপর যেহেতু তাদের জীবনধারণ করতে হচ্ছে সেহেতু তারা এডিশনাল কাজকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। সে কাজেই বেশি সময়, শ্রম ও মেধা খাটাচ্ছেন। ফলে শিক্ষকতায় তাদের মনোযোগ না থাকা বা কম থাকাই স্বাভাবিক। শিক্ষার্থীরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়াই বাস্তব। এই বাস্তবতায় প্রাইভেট বা কোচিং না করে শিক্ষার্থীরা পারবে কীভাবে? তবে এ কথা স্বীকার করতে হবে, যারা শিক্ষকতার পাশাপাশি অন্যান্য কাজ করছেন বা করতে বাধ্য হচ্ছেন; তাদের চেয়ে যারা প্রাইভেট-কোচিং দিচ্ছেন তারা তো ব্যক্তিগতভাবে হলেও শিক্ষকতাই করছেন। নিজের পাঠদানের বিষয়টি নিয়মিত চর্চা করছেন কমবেশি। অন্যরা তো তা-ও করছেন না।  এই প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করতে পারেনি বলেই হয়তো শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাইভেট-কোচিং বন্ধের ব্যাপারে শেষ পর্যন্ত নমনীয় নীতি নির্ধারণ করতে বাধ্য হয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন। প্রাইভেট-কোচিং বন্ধের কথা বলে বলে শেষমেশ যে নীতিমালা জারি করেছেন তাকে পরোক্ষ অনুমোদনই বলছেন কেউ কেউ। [যেমন : শিক্ষকরা নিজের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না। অন্য প্রতিষ্ঠানের ১০ জনের বেশি পড়াতে পারবেন না। নিজের শিক্ষার্থীদেরকে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনায় প্রতি বিষয় শহরে ৩০০, উপশহরে ২০০, গ্রামে ১৫০ টাকা হারে; তবে সর্বমোট অনধিক ১২০০ টাকায় সব বিষয় পড়াতে পারবেন অভিভাবকদের সম্মতিসাপেক্ষে। এর ব্যত্যয় ঘটলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক শাস্তি পাবেন। একটি বিশেষ কমিটি তা মনিটরিং করবে।
এসব পদক্ষেপের ফলে যা দাঁড়াল তা হচ্ছে, আগে তো কেবল কঠিন বিষয়ে কোচিং হতো এখন হবে সব বিষয়ে। কারণ দুয়েক জন শিক্ষক কোচিং ফি পাবেন আর অন্যরা পাবেন না তা তো হবে না। তাই পরীক্ষায় ফেল করিয়ে কোচিংয়ে বাধ্য করাতে পারেন অতি সহজ বিষয়ের জটিল স্যাররাও। অপরদিকে নিজের বাসায় বসে বা শিক্ষার্থীর বাসায় গিয়ে কোন শিক্ষক কখন কতজন কোন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াচ্ছেন তা মনিটর করা আমাদের জন্য দুরূহ কাজ। আমরা তো এখনও আমাদের নিত্যদিনের ওপেন ও প্যাকেট খাবারগুলোই ভেজাল এবং ফরমালিনমুক্ত করতে পারছি না। প্রকাশ্যে সদর রাস্তায় চলা মিটারবিহীন অটোরিকশা ও ট্যাক্সিক্যাব বন্ধ করতে পারছি না। সরকারি ডাক্তারদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ করতে চেষ্টাও করছি না। অথচ কোথায় কোন গ্রামেগঞ্জে, শহরে কোন ঘরে বসে বা অন্যের ঘরে গিয়ে কবে কখন সকাল-বিকেল রাতে কোন প্রতিষ্ঠানের কতজন শিক্ষার্থীকে কোন প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষক প্রাইভেট-কোচিং দিচ্ছেন তা খুঁজে বের করে শাস্তি দেবেন আর প্রাইভেট-কোচিং বন্ধ হবে এমনটি অবাস্তব নয় কী? আসলে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা সঠিকভাবে পড়াচ্ছেন কি না, তদারকি করা প্রয়োজন সেটি। তা না করে কমিটি বাসাবাড়িতে যেয়ে তদারক করবে শিক্ষকরা সরকারি নিয়ম মেনে প্রাইভেট-কোচিং দিচ্ছেন কি না। এ যেন ‘চোখের অপারেশন পায়ে’। একটু গভীরভাবে তাকালে দেখা যাবে অনেক মন্ত্রী, এমপি, আমলা, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতির ছেলেমেয়ে বা নাতি-নাতনিকে প্রাইভেট পড়ানোর জন্য হয়তো বাসায়ই নিয়োগ দেওয়া আছে একাধিক টিচার। বিশেষ করে নামকরা টিচার ও কোচিং-সেন্টারের আশেপাশের রাস্তায় যেসব দামি দামি গাড়ির ভিড় লেগে থাকে সেগুলোর অধিকাংশই সমাজ ও রাষ্ট্রের বিশেষ ব্যক্তিদের ছেলেমেয়ে বা নাতি-নাতনিদের। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, যাদের দিয়ে এই প্রাইভেট-কোচিং বাণিজ্য বন্ধের তদারকি করানো হবে তাদের কারও সন্তানও যে প্রাইভেট পড়েনি, পড়ছে না এবং পড়বে না, তা নিশ্চিত করবে কে? বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষকরা প্রাইভেট-কোচিং করানো বন্ধ করতে বাধ্য হলেও শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট-কোচিং না করে পারবে না। কারণ শ্রেণীকক্ষে পর্যাপ্ত শিক্ষা থেকে তারা বঞ্চিত। ফলে অশিক্ষকের কাছ থেকে প্রাইভেট-কোচিং নিতে বাধ্য হবে শিক্ষার্থীরা। অশিক্ষকদের তো আর শাস্তি নেই। সে হবে আরও বেশি ক্ষতির কারণ। আবারও বলছি, দীর্ঘ অতীত ও বর্তমান বাস্তবতা হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়ের প্রয়োজনেই চলছে এই প্রাইভেট-কোচিং। এই প্রাইভেট-কোচিং বন্ধ করার জন্য গৃহীত এসব পদক্ষেপের ফলাফল সরকারের বিশেষ করে শিক্ষামন্ত্রীর জনপ্রিয়তা হ্রাস ছাড়া আর কিছুই হবে বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু এভাবে তো আর চলতে পারে না। শিক্ষার্থীরা নিজের প্রতিষ্ঠানে মোটা অঙ্কের টাকায় ভর্তি হবে, বেতন-ফি পরিশোধ করবে, আবার নিজের প্রতিষ্ঠানেই অতিরিক্ত টাকা দিয়ে কোচিং ক্লাস করে রিকভার করতে বাধ্য হবে নির্ধারিত ক্লাসের ঘাটতি পড়া! সব শিক্ষার্থীকে সব বিষয়ে পরিপূর্ণ পাঠদান করাই তো শিক্ষকদের চাকরি। কিন্তু শিক্ষকরা এ কাজ সঠিকভাবে সম্পাদন করছেন কি না তা তদারক করার জন্য কমিটি না করে, করা হল প্রাইভেট-কোচিং তদারকি কমিটি। একজন শিক্ষক দৈনিক কত ঘণ্টা প্রতিষ্ঠানে থাকবেন, কত ঘণ্টা থাকছেন তার কি কোনো হিসাব নেওয়া হয়? আমার জানা মতে, এমনও শিক্ষক আছেন যারা ঢাকা শহরে বাসাবাড়িতে থেকে চাকরি করছেন অন্য জেলার সরকারি-বেসরকারি কলেজে। সপ্তাহে যাচ্ছেন ৩-৪ দিন। চল্লিশ মিনিটের ক্লাস নিচ্ছেন দিনে দুয়েকটি মাত্র। তাদের মাসিক কর্মঘণ্টা  ৮/১০/১৬/২০ ঘণ্টার। শুধু উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণী আছে এমন কলেজের একজন শিক্ষক যদি প্রতিদিন চল্লিশ মিনিটের দুটি করে ক্লাস সপ্তাহে ছয় দিনই নেন তবুও তার মাসিক কর্মঘণ্টা হবে সর্বোচ্চ ৩২ ঘণ্টা। এর বাইরে হয়তো কিছু পরীক্ষা নেওয়া আর খাতা দেখা। দৌড়ে এসে ক্লাস আবার ক্লাস শেষ হলেই দৌড়। এক কাজ থেকে এসে আবার ছুটছেন অন্য কাজে। পত্রপত্রিকা পড়ার সময় এবং ধৈর্যও নেই অনেকেরই। গবেষণা তো দূরের কথা। শিক্ষকরা এমন হলে শিক্ষার্থীরা যাবে কোথায়? কমবেশি একাদশ শ্রেণীর ১২০ এবং দ্বাদশ শ্রেণীর ১২০ জনসহ মোট ২৪০ শিক্ষার্থীর জন্য একজনমাত্র ইংরেজি শিক্ষক যথেষ্ট কি না তা-ও ভেবে দেখা প্রয়োজন। দীর্ঘদিনের এই দুরবস্থা থেকে বের হতে হলে অবশ্যই বাড়াতে হবে শিক্ষকদের আর্থিক সুবিধা এবং সেই সঙ্গে বাড়াতে হবে কর্মঘণ্টা। শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠানে অবস্থান নিশ্চিত করে শিক্ষার্থীদের জন্য নিশ্চিত করতে হবে প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা। যেন আর না থাকে ক্লাসের বাইরে ক্লাসের বিষয় পড়ার কোনো প্রয়োজনীয়তা। তা না হলে বন্ধ করা সম্ভব হবে না এই প্রাইভেট-কোচিং।

লেখক : অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা।

উপ-সম্পাদকীয়- 'ধনীর দায় গরিবের হক জাকাত' -প্রিয়.কম- ২১ জুলাই ২০১৪

উপ-সম্পাদকীয়- 'ধনীর দায় গরিবের হক জাকাত' -প্রিয়.কম- ২১ জুলাই ২০১৪
ধনীর দায় গরিবের হক জাকাত

মো. রহমত উল্লাহ্‌
Submitted by priyo.islam on Mon, 21/07/2014 - 12:12pm

আল্লাহ তায়ালা যাকে সম্পদ দিয়েছেন, তার ওপর জাকাত ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি মালদার হওয়া সত্ত্বেও জাকাত পরিশোধ করে না, পরকালে তাকে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে। হাদিস অনুযায়ী- যার কাছে রুপা বা স্বর্ণ আছে, অথচ সে জাকাত দেয়নি, কিয়ামতের দিন ওই রুপা বা স্বর্ণকে তামার পাতে পরিণত করে দোজখের আগুনে দগ্ধ করে বুকে-পিঠে, পাঁজরে-কপালে ছ্যাঁকা দেওয়া হবে। অন্য হাদিসে আছে- যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা ধনসম্পদ দিয়েছেন কিন্তু সে জাকাত দেয়নি, কিয়ামতের দিন ওই ধনসম্পদ বিষাক্ত সাপ হয়ে তাকে গলায় পেঁচিয়ে ধরবে এবং দুই গালে দংশন করবে। ইসলাম ধর্মের এই বিধানটি সমাজের দরিদ্র শ্রেণীকে ধনীর সম্পদের অংশীদার করেছে। ধনী ও দরিদ্রের আর্থিক ব্যবধান কমাতে সহায়তা করে এই জাকাত ব্যবস্থা। আমরা অনেকেই জাকাতের মাসয়ালা সঠিকভাবে জানি না কিংবা জানতে চাই না। জাকাত না দেওয়ার বা কম দেওয়ার জন্য ফাঁকফোকর খুঁজতে গেলেই বিষয়টি জটিল। নিয়ত সহিহ থাকলে বুঝতে এবং মানতে কোনো জটিলতা নেই। বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে, মাসয়ালা-মাসায়েলের ফাঁকফোকর খুঁজে-বেছে জাকাত পরিশোধ করতে গিয়ে বিন্দুমাত্র কম পরিশোধিত হলে অসীম পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। তাই সহজ-সরল হিসাবে কিছু বেশি অর্থ পরিশোধ করাই সর্বোত্তম। এতে শতভাগ জাকাত প্রদান নিশ্চিত হবে এবং অতিরিক্ত অর্থ প্রদানের জন্য আল্লাহ তায়ালা অতিরিক্ত নেকি দান করবেন। অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা মানুষের অন্তর বোঝেন।
ইসলাম ধর্মের অনুসারী ধনী ব্যক্তির জন্য শতকরা আড়াই টাকা হারে জাকাত প্রদানের বিধান করা হয়েছে। অর্থাৎ মালদারের প্রতি ১০০ টাকার মধ্যে আড়াই টাকা গরিবের। এটি ধনীর দায় এবং গরিবের হক। প্রশ্ন হচ্ছে, কী পরিমাণ ধনসম্পদের অধিকারী হলে জাকাত ফরজ হবে? যে ব্যক্তি সাড়ে ৫২ তোলা রুপা বা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণের কিংবা তৎমূল্যের টাকা বা ধনসম্পদের মালিক হয় এবং তার কাছে ওই পরিমাণ টাকা বা ধনসম্পদ পূর্ণ এক বছরকাল স্থায়ী থাকে, সেই ব্যক্তির ওপর জাকাত ফরজ হয়। এর চেয়ে কম হলে জাকাত ফরজ হয় না। তবে বেশি হলে অবশ্যই ফরজ হবে। জাকাতযোগ্য এই ধনসম্পদের পরিমাণকে নিসাব বলা হয় এবং যে ব্যক্তি (প্রাপ্তবয়স্ক-অপ্রাপ্ত বয়স্ক, নারী-পুরুষ) জাকাতযোগ্য ধনসম্পদের মালিক হয়, তাকে মালিকে নিসাব বা সাহেবে নিসাব বলা হয়। আমাদের সমাজের অনেকেই মনে করেন, যেহেতু আমার কাছে সাড়ে ৫২ তোলা রুপা বা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ নেই, সেহেতু (অন্য ধনসম্পদ যতই থাকুক) আমাকে জাকাত দিতে হবে না। আসলে এটা সঠিক নয়। এ ক্ষেত্রে রুপা বা স্বর্ণ থাকা বা না থাকা কোনো বিষয় নয়। রুপা বা স্বর্ণের পরিবর্তে জাকাতযোগ্য অন্য ধনসম্পদ থাকলেও জাকাত প্রদান ফরজ হবে। রুপা বা স্বর্ণ হচ্ছে নিসাবের পরিমাণ নির্ধারণের একটি মাধ্যম মাত্র। এক বিন্দু রুপা বা স্বর্ণ না থাকলেও ওই ব্যক্তির জন্য জাকাত প্রদান ফরজ হবে, যার মালিকানায় নিসাব পরিমাণ কিংবা তার চেয়ে বেশি পরিমাণ জাকাতযোগ্য সম্পদ জাকাতবর্ষ-এর শুরুতে ও শেষে থাকে। এ ক্ষেত্রে সঠিকভাবে মালিকে নিসাব এবং জাকাত প্রদেয় সময় চিহ্নিত করার জন্য তিনটি প্রধান বিষয় বিশেষভাবে বিবেচ্য। প্রথমত, নিসাবের পরিমাণ নির্ধারণের মাধ্যম হিসেবে রুপার মূল্য ধরা হবে, নাকি স্বর্ণের মূল্য ধরা হবে? দ্বিতীয়ত, নিসাবের পরিমাণ হিসাব করার সময় কোন কোন সম্পত্তি যোগ-বিয়োগ করতে হবে? তৃতীয়ত, কিভাবে জাকাতবর্ষ গণনা করা হবে?
১. নিসাবের পরিমাণ নির্ধারণের মাধ্যম হিসেবে রুপার মূল্য ধরাই অধিক যুক্তিযুক্ত। কারণ সাড়ে ৫২ তোলা রুপার বর্তমান মূল্য সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণের চেয়ে অনেক বেশি। তাই মাধ্যম হিসেবে রুপার মূল্য ধরা হলে জাকাত প্রদানকারীর সংখ্যা ও জাকাতের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পায় এবং গরিব মানুষ অধিক লাভবান হয়। ফলে আল্লাহ পাক যে উদ্দেশ্যে জাকাত ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছেন, তা অধিক কার্যকর হয়। আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের ওপর অধিক খুশি হন। লক্ষণীয়, এই হাদিসে বারবারই আগে রুপা শব্দটি এবং পরে স্বর্ণ শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে। তথাপি কেউ যদি সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণের মূল্যকেই নিসাবের পরিমাপ নির্ধারণের মানদণ্ড ধরে জাকাত দেওয়া বা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে জোর আপত্তির সুযোগ নেই। যেকোনো একটিকে মানদণ্ড ধরে জাকাত প্রদান করা যাবে।
২. নিসাব পরিমাণ সম্পত্তি (জাকাতযোগ্য সম্পত্তি) হিসাব করার সময় যা কিছুর মূল্য যোগ এবং বিয়োগ হবে, তা হচ্ছে-
(ক) যোগ করতে হবে : নিজের মালিকানায় থাকা সব নগদ টাকা-পয়সা, লগি্নকৃত/বিনিয়োগকৃত টাকা-পয়সা এবং এর ওপর প্রাপ্ত লাভ, রুপা ও স্বর্ণের (ব্যবহৃত/অব্যবহৃত) বাজারমূল্য, ব্যবসায়িক পণ্য (অর্থাৎ বিক্রি করে লাভ করার নিয়তে ক্রয়কৃত সব ধরনের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি), ভাড়ায় খাটানো স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত ভাড়ার টাকা, আদায় হওয়ার সম্ভাবনা আছে এমন পাওনাদি ইত্যাদি।
(খ) যোগ করতে হবে না : নিজেদের ব্যবহৃত বা ব্যবহারের নিয়তে ক্রয়কৃত সব ধরনের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি (রুপা ও সোনা ব্যতীত), ভাড়ায় খাটানো সব ধরনের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি, বাবা-মা ও স্বামী-সন্তানের মালিকানায় থাকা সম্পত্তি (কারণ প্রত্যেকের হিসাব পৃথক হবে), আদায় হওয়ার সম্ভাবনা নেই এমন পাওনাদি ইত্যাদি।
(গ) বিয়োগ করতে হবে : সব ধরনের দায়দেনা।
৩. জাকাতবর্ষ হিসাব করার সময় বছরের শুরু এবং শেষ দেখতে হবে। ধরা যাক, কাদির মোল্লার মালিকানায় জানুয়ারি মাসের প্রথম দিন নিসাব পরিমাণ ধনসম্পদ ছিল এবং তিনি ওই ধনসম্পদের জাকাত দিয়েছিলেন। তারপর যেকোনো কারণেই হোক, কয়েক মাস তার ধনসম্পদ নিসাব পরিমাণের চেয়ে অনেক কমে গিয়েছিল। কিন্তু আল্লাহর রহমতে ডিসেম্বর মাসের শেষ দিনে আবার নিসাব পরিমাণ ধনসম্পদ তাঁর মালিকানায় এসেছে। এমতাবস্থায় ওই মালের ওপর শতকরা আড়াই টাকা হারে জাকাত পরিশোধ করতে হবে। ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর- এই ১২ মাসই হবে তাঁর জাকাতবর্ষ। জাকাত শুধু গরিব ব্যক্তির হক। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাওফিক দিন, আমরা যেন যথাযথভাবে জাকাত পরিশোধ করতে পারি, আমাদের নিয়ত যেন সহিহ্ থাকে, হৃদয় যেন গরিবদের পক্ষে থাকে।
মো. রহমত উল্লাহ
লেখক: অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ

শিশুপাঠ্য গল্প- 'মিলেমিশে থাকব সবাই' -ফুলকি- জানুয়ারি ২০১৭

শিশুপাঠ্য গল্প- 'মিলেমিশে থাকব সবাই' -ফুলকি- জানুয়ারি ২০১৭
_IMG_000000_000000

About Time Period and Front, Behind
মিলেমিশে থাকবো সবাই
মো. রহমত উল্লাহ্,
>কুমির, জিরাফ, ময়ূর। তিনজনে মিলে একসাথে। আসে শিয়ালের বাসায়। বার বার ডাকে শিয়ালকে। শিয়াল ভাই। শিয়াল ভাই। শিয়াল ভাই। বেরিয়ে আসে শিয়াল। ইয়া বড় লেজ। দাঁড়ায় সবার সামনে। বলে, কী ব্যাপার? তোমরা এসেছো কেনো?
তিনজনে কথা বলে একসাথে। তুমি ঘুমের সময় হু হুয়া করো। আমরা ঘুমাতে পারিনা। রাত ১০ টায় হু হুয়া করো। ১২ টায় হু হুয়া করো। ভোর ৫ টায় হু হুয়া করো। ঘুমের খুব অসুবিধা হয়। এসব ডাকাডাকি থামাও। নইলে সিংহ রাজাকে বলবো। শিয়াল ভাবে। তাদের অভিযোগ সঠিক। কী করা যায়।

শিয়াল এগিয়ে আসে তাদের কাছে। তাকায় জিরাফের দিকে। কথা বলে নরম করে। জানতে চায় কাছে গিয়ে। তুমি কখন ডাকো, জিরাফ ভাই? জিরাফ বলে, আমি ডাকি না। দিনেও ডাকি না। রাতেও ডাকি না। কখনো ডাকি না।

এবার কুমিরের দিকে তাকায় শিয়াল। বলে, তুমি কখন ডাকো, কুমির ভাই? কুমির বলে, আমি পানিতে থাকি। তোমাদের মতো ডাকাডাকি করিনা। কারো ঘুমের অসুবিধা করিনা।
এবার ময়ূরের দিকে তাকায় শিয়াল। বলে, তুমি কখন ডাক, ময়ূর ভাই? ময়ূর বলে, আমি ভোরে ডাকি। সকালে দুপুরে বিকালে ডাকি। ঘুমের সময় ডাকিনা। ঘুমের সময় ঘুমাই।

শিয়াল ভাবে। তাদের কথা সঠিক। কী করা যায় এখন। কী করা যায়। তাকায় সবার দিকে। বলে, সবাই আমার সাথে এসো। লাইন ধরে হাঁটে সবাই। শিয়াল সবার সামনে। সবাই শিয়ালের পিছনে।

শিয়াল আসে হাতির বাসায়। কাছে গিয়ে জানতে চায়। তুমি কখন ডাকো, হাতি ভাই? হাতি বলে, সঠিক সময় নেই। সকালে ডাকি। দুপুরে ডাকি। বিকালে ডাকি। রাতেও ডাকি মাঝে মাঝে। শিয়াল বলে, ঠিক আছে। তুমিও এসো আমাদের সাথে।

ডান দিকে হাঁটা দেয় শিয়াল। তাকায় সবার দিকে। বলে, সবাই আমার সাথে এসো। লাইন ধরে হাঁটে সবাই। শিয়াল সবার সামনে। সবাই শিয়ালের পিছনে।

এবার শিয়াল আসে ছাগলের বাসায়। কাছে গিয়ে জানতে চায়। তুমি কখন ডাকো, ছাগল ভাই? ছাগল বলে, আমার কোনো ঠিক নেই। সকাল, দুপুর, বিকাল, রাত বিরাত। যখন তখন ডাকি। শিয়াল বলে, ঠিক আছে। তুমিও এসো আমাদের সাথে।
বাম দিকে হাঁটা দেয় শিয়াল। তাকায় সবার দিকে। বলে, সবাই আমার সাথে এসো। লাইন ধরে হাঁটে সবাই। শিয়াল সবার সামনে। সবাই শিয়ালের পিছনে।

এবার শিয়াল আসে মহিসের বাসায়। কাছে গিয়ে জানতে চায়। তুমি কখন ডাকো, মহিস ভাই? মহিস বলে, আমার কোন ঠিক নেই। সকালে দুপুরে বিকালে। যখন মন চায় ডাকি। রাতে ঘুমাই। ঘুমের সময় ডাকিনা। শিয়াল বলে, ঠিক আছে। তুমিও এসো আমাদের সাথে।

আবার ডান দিকে হাঁটা দেয় শিয়াল। তাকায় সবার দিকে। বলে, সবাই আমার সাথে এসো। লাইন ধরে হাঁটে সবাই। শিয়াল সবার সামনে। সবাই শিয়ালের পিছনে।

এবার শিয়াল আসে কোকিলের বাসায়। কাছে গিয়ে জানতে চায়। তুমি কখন ডাকো, কোকিল ভাই? কোকিল বলে, আমি গানের পাখি। সব সময় গান গাই। সকাল, দুপুর, বিকাল, রাত বিরাত। রাত ১০ টায়, ১২ টায়। ভোর ৫ টায়। রাতেই বেশি গান গাই। শিয়াল বলে, ঠিক আছে। তুমিও এসো আমাদের সাথে।

নিজের বাসার দিকে হাঁটা দেয় শিয়াল। তাকায় সবার দিকে। বলে, সবাই আমার সাথে এসো। লাইন ধরে হাঁটে সবাই। শিয়াল সবার সামনে। সবাই শিয়ালের পিছনে। হাতির পিঠে ময়ূর, কোকিল।

শিয়াল ফিরে আসে বাসার কাছে। তাকায় সবার দিকে। বলে, এবার শুনলেতো। একেক জন একেক সময় ডাকে। আমি দিনে ঘুমাই, রাতে ডাকি। জিরাফ বলে, রাতে ঘুমাওনা কেনো? শিয়াল বলে, কী করবো বলো। রাতে খাবার খোঁজতে হয়। দিনে বাইরে আসতে পারিনা। মানুষেরা আমাদের মারে। তাই রাতে বেরোই। একেক জন যাই একেক দিকে। খাবার খোঁজি। খাবার পেলেই ডাকি। সবাইকে ডাকি। তারাও ডাকে। যা পাই, মিলেমিশে খাই।
সবাই ভাবে, শিয়ালেরা অনেক ভালো। সবার দিকে তাকায় ময়ূর। বলে, বিবাদ বাদ দাও ভাই। চলো, সবাই মিলেমিশে থাকি। সবাই বলে, তবে তাই হোক।<
[ছোটদের জন্য লেখা যুক্তবর্ণ বিহীন এই গল্পটির কোন বাক্যে ছয়টির বেশি শব্দ নেই।]
মো. রহমত উল্লাহ্‌ : অধ্যক্ষ- কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। ২৮ মার্চ ২০১৬

উপ-সম্পাদকীয়- বেসরকারি শিক্ষকদের কথাও ভাবুন -ইত্তেফাক এবং দৈনিক শিক্ষা- ১৩ অক্টোবর ২০১৫


বেসরকারি শিক্ষকদের কথাও ভাবুন

মো. রহমতউল্লাহ্ | 13-10-2015  দৈনিক শিক্ষা ডটকম এবং ইত্তেফাক- ১৩ অক্টোবর ২০১৫

বিশ্বের যেকোন উন্নত/উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় আমাদের শিক্ষকদের অসচ্ছলতা ও অমর্যাদার কারণে বার বার ম্লান হচ্ছে শিক্ষাক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্যগুলো। অধিক যোগ্যরা আসছেন না শিক্ষকতায়। তৈরি হচ্ছে না বিশ্বমানের যোগ্য নাগরিক-কর্মী। কাঙ্ক্ষিত গতি পাচ্ছে না আমাদের জাতীয় অগ্রগতির চাকা।





শিক্ষকরা মানব সন্তানকে মানবিক গুণাবলি দিয়ে সত্যিকার মানবে পরিণত করেন বলেই তাঁদেরকে বলা হয় দ্বিতীয় জন্মদাতা। কিন্তু মনে রাখতে হবে ক্ষুধার রাজ্যে তাঁদের পৃথিবীও গদ্যময় হয়। তখনই শিক্ষার্থী বঞ্চিত হয় সুশিক্ষা থেকে। বাজেট প্রণয়নের সময় কোন সরকারই মনে রাখে না আমাদের বেসরকারি শিক্ষকদের গদ্যময় জীবনের কথা। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, যে শিক্ষকরা উন্নত জাতি গঠনের কারিগর, সেই শিক্ষকদের ভাগ্যে তেমন কিছুই জুটলো না এখনো পর্যন্ত।



সারাজীবন নামমাত্র বেতনে খেয়ে না খেয়ে কাজ করে শেষে অবসর সুবিধার সামান্য ক’টি টাকার জন্য মাসের পর মাস ঘুরে বেড়াচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত বেসরকারি শিক্ষকরা। কারো চিকিত্সার টাকা নেই, কারো মেয়ের বিয়ের টাকা নেই, কারো সন্তানের লেখাপড়ার টাকা নেই, কারো ভাত-কাপড়ের টাকা নেই, কারো পুণ্যস্থান যাবার টাকা নেই, কারো পাওনাদার সামলানোর উপায় নেই। অথচ কথা ছিল বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা প্রদানের জন্য গঠন করা হবে এমন একটি তহবিল; যার আয় দিয়ে সময়মত ও নিয়মিত পরিশোধ করা যায় তাদের সকল ন্যায্য পাওনাদি। তাদের এই সামান্য ক’টি টাকা সময়মত প্রদানের জন্য এখনো করা গেল না একটি যুক্তিযুক্ত তহবিল।


দারিদ্র্য ও দুর্নীতিমুক্ত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ঘোষণা করে ক্ষমতায় আসা বর্তমান সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় তুলনামূলকভাবে অধিক সফল। শিক্ষাবর্ষের প্রথমদিন সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস শুরু করা, ক্লাস শুরুর পূর্বেই শিক্ষার্থীদের নিকট বিনামূলে নতুন বই পৌঁছে দেয়া, একই রুটিনে সারাদেশের সকল স্কুল-কলেজে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষাসমূহ গ্রহণ ও ফলাফল প্রকাশ, বোর্ডের সরবরাহকৃত প্রশ্নে নির্বাচনী পরীক্ষা গ্রহণ, অন-লাইন ভর্তি, অন-লাইন রেজিস্ট্রেশন, অন-লাইন ফরম ফিল-আপ, স্বল্পতম সময়ে কাগজ বিহীনভাবে পরীক্ষাসমূহের ফলাফল প্রকাশ, মোবাইল ফোনে এসএমএস-এর মাধ্যমে ফলাফল জানানো, শর্ট-মেসেজের মাধ্যমে উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়নের আবেদন গ্রহণ, সারা দেশে একইসাথে পিএসসি/ জেএসসি পরীক্ষা সফলভাবে চালু করা, সকল স্কুল-কলেজে ই-মেইল ও ওয়েব-সাইট চালু করা, অন-লাইনে সকল কলেজে ভর্তির মাধ্যমে তালিকা তৈরি করে ভর্তি সম্পন্ন করা ইত্যাদি সফলতার জন্য মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা সচিব, শিক্ষা বোর্ড এবং শিক্ষকদের অবদানই সবচেয়ে বেশি।


ডিজিটাল ব্যবস্থার সঙ্গে পরিচিত না হলেও; ডিজিটাল শব্দটির সাথে দেশের সকল মানুষ এখন পরিচিত। বিশেষ করে এসব ডিজিটাল ব্যবস্থা মাঠপর্যায়ে যতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে তার জন্য শিক্ষকদের সহায়ক  ভূমিকা অবশ্যই প্রশংসনীয়। আমাদের দেশের অনেক উদ্যমী শিক্ষার্থী এবং চাকরিজীবী এখন ডিজিটাল ব্যবস্থা ব্যবহার করে (ইন্টারনেট) আউট-সোর্সিং-এর মাধ্যমে অনেক অর্থ উপার্জন করে নিজের লেখাপড়ার খরচ এবং পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা বৃদ্ধি করতে পারছে। অনেকেই এখন জানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বাংলাদেশের ঘরে বসেই সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার মত উন্নত দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে উপার্জন করা যায় বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা। জিডিটাল ব্যবস্থার ছোঁয়া লাগা আজকের এই শিক্ষার্থীরা পূর্ণ যোগ্যতা নিয়ে কর্মক্ষেত্রে এলেই এর সুফল পাবে সমগ্র জাতি। এই ডিজিটাল শব্দটি নিয়ে শুরুতে যে সকল নিন্দুকর হাসি-তামাশা করেছে, তারাও এখন লুফে নিচ্ছে ডিজিটাল ব্যবস্থার সুফল। অনেক বাবা-মা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হলেও ছেলে-মেয়েরা এখন কিছুটা হলেও বুঝতে পারছে ডিজিটাল ব্যবস্থার সুফল, ডিজিটাল বাংলাদেশ মানেই আগামীদিনের উন্নত বাংলাদেশ। জাতিগতভাবে আমাদের সন্তানদের এই অনুকূল ধারণা ও বিশ্বাস সৃষ্টিতে মাঠপর্যায়ে যারা প্রত্যক্ষ অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছেন তারা হচ্ছেন আমাদের শিক্ষকমণ্ডলী।


অতীতেও বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের সকল আন্দোলন-সংগ্রামে যথাযথ ভূমিকা পালন করেছেন এই শিক্ষকসমাজ। এজন্যই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীনের পর পরই একদিনে সরকারি করেছিলেন সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়। তারই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। তাই মেনে নিতে কষ্ট হয় বেসরকারি শিক্ষকদের এই দৈন্যদশা! অতীতের মতো এখনো একচেটিয়া সরকারি শিক্ষকদেরকে ডেপুটেশনে আমলা বানিয়ে শাসন করা হয় বেসরকারি শিক্ষকদের। নিজে শিক্ষক হয়েও অধিকাংশ সরকারি শিক্ষক কোন মানুষই মনে করেন না বেসরকারি শিক্ষককে। এজন্যই সরকারি চাকুরেদের বেতন-ভাতা বাড়ে, বয়সসীমা বাড়ে, চুক্তিতে চাকরির সুযোগ বাড়ে, গাড়ি-বাড়ি বাড়ে অথচ বেসরকারি শিক্ষকদের কিছুই বাড়ে না। বরং বঞ্চিত করার কুকৌশল বাড়ে। এসকল সরকারি শিক্ষক এবং বর্তমান ও সাবেক আমলাদের কু-পরামর্শে ভুলে গেলে চলবে না যে, বেসরকারি শিক্ষকরা সংখায় পঁচিশ লাখেরও বেশি। তাঁরা পাঠদান করেন এদেশের মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৯৭ ভাগ। তাই সমাজে ও রাষ্ট্রে তাঁদের প্রত্যক্ষ প্রভাব অত্যন্ত ব্যাপক ও প্রখর। একটি গ্রামে যদি ৪/৫ জন সরকারি শিক্ষক/আমলা থাকেন তো ৯৬/৯৫ জন আছেন শিক্ষক। শিক্ষাদানের পাশাপাশি যাঁদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা নিয়ে প্রতিরোধ করতে হয় বাল্যবিবাহ, দূর করতে হয় নিরক্ষরতা, টিকা দিতে হয় শিশুদের, দূর করতে হয় সামাজিক কুসংস্কার, তৈরি করতে হয় গ্রামীণ আদালত, তৈরি করতে হয় ভোটার তালিকা, সম্পন্ন করতে হয় ভোট গ্রহণ, সফল করতে হয় আদমশুমারি, বাস্তবায়ন করতে হয় খাল খনন কর্মসূচি, হটাতে হয় স্বৈরাচার, জানান দিতে হয় সমুদ্র জয়ের মত অনেক সুখবর, প্রতিরোধ করতে হয় ইভটিজিং ও মাদকাশক্তি এবং এমন আরো অনেক সরকারি-বেসরকারি জনকল্যাণমূলক কাজ; তাঁদের বেতন-ভাতা দেবার বেলায় এত অনীহা কেন? এই শিক্ষক সমাজকে দিয়েই তো ভবিষ্যতে বাস্তবায়ন করতে হবে সরকারের গৃহীত শিক্ষানীতিসহ আরো অনেক কর্মসূচি। তৈরি করতে হবে যোগ্য নাগরিক-কর্মী। প্রতিষ্ঠা করতে হবে কাঙ্ক্ষিত ডিজিটাল সোনার বাংলা। সফল করতে হবে সকল ভিশন। তাই মনে রাখতে হবে এই বিপুল সংখ্যক বেসরকারি শিক্ষককে বঞ্চিত রেখে কোনদিনই সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় সরকারি কর্মসূচি এবং নিশ্চিত করা সম্ভব নয় জাতীয় অগ্রগতির কাঙ্ক্ষিত মাত্রা। বিচ্ছিন্নভাবে বেছে বেছে কিছু স্কুল-কলেজ সরকারি না করে জাতীয়করণ করা প্রয়োজন বেসরকারি শিক্ষকদের চাকরিসহ পুরো শিক্ষা কার্যক্রম। যাতে অধিক মেধাবীরা আগ্রহী হয় শিক্ষকতায়।


লেখক: মো.  রহমতউল্লাহ্

অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা

E-mail- rahamot21@gmail.com





উপ-সম্পাদকীয়- 'এনসিটিবি প্রবর্তিত বই নিয়ে কিছু কথা' -সাক্ষরতা বুলেটিন ও যায়যায়দিন - ১৭ জানুয়ারি ২০১৭

উপ-সম্পাদকীয়- 'এনসিটিবি প্রবর্তিত বই নিয়ে কিছু কথা' -সাক্ষরতা বুলেটিন ও
যায়যায়দিন - ১৭ জানুয়ারি ২০১৭
P_20180526_160231_1 P_20180526_161023_1 P_20180526_160423_1_IMG_000000_000000এনসিটিবি প্রবর্তিত 'আমার বাংলা বই' নিয়ে কিছু কথা
মো. রহমত উল্লাহ্‌
কিছু ব্যতিক্রম ব্যতীত বাংলাদেশের শিশু সাহিত্য শিশুদের জন্য আসলে কতটা উপযোগী তা নতুন করে বিচার বিশ্লেষণ করার প্রয়োজনীয়তার কথা চিন্তাশীল ব্যক্তি মাত্রই স্বীকার করেবেন। বিশেষ করে শিশু সাহিত্য হিসেবে চালিয়ে দেওয়া সাহিত্যে যে সকল অবোধগম্য শব্দ প্রয়োগ করা হচ্ছে, যে সকল কঠিন বানান ব্যবহার করা হচ্ছে, যে সকল দীর্ঘ-জটিল বাক্য ব্যবহার করা হচ্ছে এবং যে সকল চিত্র/এনিমেশন ব্যবহার করা হচ্ছে; তা সেই শিশুদের পাঠের, বোঝার ও অনুভব করার সাধ্য আছে কিনা তা ভালোভাবে বিচার বিশ্লষণ করা জরুরি।

বাংলাদেশের প্রচলিত শিশু সাহিত্য গুলো এদেশের প্রকৃতি ও সমাজ বাস্তবতার সাথে কতটা সংগতিপূর্ণ, কতটা বিজ্ঞান মনষ্ক, কতটা যুক্তিযুক্ত, কতটা আধুনিক, কতটা শিক্ষণীয়, কতটা জীবন দক্ষতা সহায়ক, কতটা ধর্ম নিরপেক্ষ, কতটা সৃজনশীল তা ব্যাপক গবেষণার দাবি রাখে। কেননা, দেশের প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরের পাঠ্য হিসেবেও এসকল প্রচলিত সাহিত্যই পড়ানো হচ্ছে; যার মাধ্যমে দেশ ও জাতি কাঙ্খিত সুনাগরিক তৈরির প্রচেষ্টায় দীর্ঘদিন যাবত ব্যাপক অর্থ, সময় ও মেধা বিনিয়োগ করে চলেছে আমাদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র যন্ত্র।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক প্রবর্তিত প্রথম শ্রেণির ‘আমার বাংলা বই’ এর কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি আজ।
"আতা গাছে তোতা পাখি
ডালিম গাছে মউ।
এত ডাকি তবু কথা
কও না কেন বউ।"
[পৃষ্ঠা-৫]

"বাগবাকুম পায়রা
মাথায় দিয়ে টায়রা
বউ সাজবে কাল কি
চড়বে সোনার পালকি।"
[পৃষ্ঠা-৩০]
ছোট বেলা থেকেই আমরা ও আমাদের সন্তানেরা এইরূপ অনেক ছড়া-কবিতা/গল্প-গাথা শুনে শুনে বা পড়ে পড়ে বড় হয়েছি এবং হচ্ছি। এ ছাড়াও চড়ই ভাতি খেলার নামে অনেক পারিবারিক গল্প-কবিতা আমরা ও আমাদের শিশুরা শুনে, পড়ে বড় হয়েছি এবং হচ্ছি। অথচ আমরা এটি চিন্তা করছি যে, ৪/৫ বৎসরের এতো ছোট শিশুটিকে তার সেই খেলা বেলার ও শিক্ষা শুরু বেলার কী প্রয়োজনে 'জামাই-বউ' সম্পর্কিত বিষয়কে পাঠ্য তালিকাভুক্ত করছি। আমরা এটিও বিবেচনা করছি না যে, এইরূপ শিক্ষা আমাদের বাংলাদেশের শিশুদেরকে বাল্যবিবাহে উদ্ভূদ্ধ করছে কি না কিংবা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধী হবার অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে কি না। আমাদের ছোট্ট শিশুকে আমরা কি বউ সেজে পালকি চড়ার স্বপ্ন দেখাবো, না পাইলট হয়ে বিমান চড়ার স্বপ্ন দেখাবো? মানুষতো তার স্বপ্নের সমান বড়। যে স্বপ্ন সে জেগে জেগে দেখে। যে স্বপ্ন বাস্তবায়ের জন্য সে প্রতিজ্ঞা করে, পরিকল্পনা করে, পরিশ্রম করে এবং বাস্তবায়ন করে সেই স্বপ্নের সমান বড় হয়।
একই বই থেকে নেওয়া আরো দু'একটি অসংগতির উদাহরণ দেখা যাক। যেমন:
(ক)
“ইতল বিতল গাছের পাতা
গাছের তলায় ব্যাঙের ছাতা।
বৃষ্টি পড়ে ভাঙে ছাতা
ডুবায় ডুবে ব্যাঙের মাথা।”
[পৃষ্ঠা- ১৮]
এই ছড়া-কবিতায় ব্যবহৃত "ইতল" শব্দটি কোনো অভিধানে নেই। এর কোনো অর্থ বা প্রতিশব্দ অথবা বিপরীত শব্দ অথবা কোন কিছুর ঝংকার হিসেবেও এই শব্দ শিক্ষকের জানা নেই। "বিতল" শব্দের আবিধানিক অর্থ হচ্ছে 'হিন্দু পুরাণোক্ত দ্বিতীয় পাতাল'; যা এই কবিতার সাথে সংগতি পূর্ণ নয় এবং ছোট শিশুদের তা জানার এখনও প্রয়োজন নেই। এদু’টি শব্দ কোন কিছুর ধ্বণি বা ঝংকার হিসেবেও আমাদের কাছে পরিচিত নয়। যা শিশুদের বলে বুঝানো সম্ভব।

(খ)
“অজ আসে। অলি হাসে।”
“ইট আনি। ইলিশ কিনি”
“উট চলে। উষা কালে।”
“ঋতু যায়। ঋতু আসে। ঋষি ঐ বসে আছে।”
“চশমা রাখি। ছবি দেখি।”
“বক গাছে। বালুক নাচে”
“ঝড় থামে। আষাঢ় নামে।”
“বীণা আনি। গীত শুনি।” ইত্যাদি।
[পৃষ্ঠা- ১১ থেকে ৪৬]
এই লাইন গুলো দ্বারা শিশুদের ছন্দে ছন্দে স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের ব্যবহার শেখানো এবং বিভিন্ন জিনিসের সাথে পরিচিত করানোর চেষ্টা করা হয়েছে। অথচ কোনো ছন্দেরই (স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত, অক্ষরবৃত্ত) সঠিক প্রয়োগ এখানে সফল হয়নি। অত্যন্ত দুর্বল হয়েছে অন্তমিল। যেমন: ‘রাখি’ এর সাথে ‘দেখি’, ‘গাছে’ এর সাথে ‘নাচে’ , 'আসে' এর সাথে 'আছে', ‘আনি’ এর সাথে ‘শুনি’ ইত্যাদি। ‘অজ’ শব্দটির অর্থ জানেন ক’জন শিক্ষক? কোন এলাকার পরিচিত শব্দ এটি? আবার লেখা হয়েছে- "ঝড় থামে <> আষাঢ় নামে"। 'আষাঢ়' তো একটি মাসের নাম। এটি নামে কীভাবে? বরং বলা যেতে পারতো 'আষাঢ় মাসে বৃষ্টি নামে'।

(গ)
পৃষ্ঠা ৬, ৭ ও ৮ এর কিছু বাক্যে সঠিক শব্দ ব্যবহার করে এবং ব্যবহৃত শব্দ গুলোর অবস্থান পরিবর্তন করে বাক্যগুলো আরো সঠিক করা যেতে পারতো। যেমন:
"সে এদিক ওদিক তাকাল পানির খোঁজে।" এই বাক্যটি হতে পারতো- সে পানির খোঁজে এদিক ওদিক তাকাল। "তখন একটা কলসি পড়ল তার চোখে।" এই বাক্যটি হতে পারতো- তখন সে একটা কলসি দেখতে পেল। / তখন একটা কলসি তার চোখে পড়ল। "এভাবে কাকটি অনেক নুড়ি কলসিতে ফেলল।" "তখন কাকটি প্রাণ ভরে পানি খেল।" এই বাক্য দু'টিতে এসে কাককে টি বলা হলো কেন? সে কি এখানে এসে বস্তু হয়ে গেল? এই বাক্য দু'টিতো এভাবে লেখা যেতো- এভাবে কাক অনেক নুড়ি কলসিতে ফেলল। তখন কাক প্রাণ ভরে পানি পান করল। ইত্যাদি।

এমন দুর্বলতা যে কেবল প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়েই আছে তা কিন্তু নয়। স্কুল ও মাদ্রাসার সকল শ্রেণির সকল বইয়েই রয়েছে এমন ছোট বড় সমস্যা। দেখা গেছে একই শব্দের বানান বাংলা বইয়ে একরকম আর তারই অংক বইয়ে আরেক রকম। একই ক্লাসের বাংলা, অংক, ইংরেজি, সমাজ ইত্যাদি বইয়ের স্টেন্ডার্ড একই রকম নেই। একই শ্রেণির বাংলা বইয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভাষা শিক্ষার যে স্তর লাভ করেছে, তারচেয়ে অনেক কঠিন শব্দে ও জটিল বাক্যে লেখা তারই অন্যান্য বই। ফলে একজন শিক্ষার্থী তার শিক্ষার মাধ্যম বাংলা (ইংলিশ ভার্সনের ক্ষেত্রে ইংরেজি) ভালভাবে না জানার কারণেই অর্থ উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে ভালভাবে পারছেনা গণিত, সমাজ ও নৈতিক শিক্ষা। আর আমরা অন্ধের মতই বলছি, এই শ্রেণির এই শিক্ষার্থী এই বিষয়ে দুর্বল!
এভাবে অযত্নে অবহেলায় শিখানোতো ভুল শিখানোরই সামিল। শিশুকালের এই ভুল শিক্ষাই দখল করে রাখে আমাদের মস্তিষ্কের একটা বিরাট অংশ। যা থেকে বেড়িয়ে এসে পরবর্তী জীবনে সঠিক চিন্তা ও কাজ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে অনেকের পক্ষেই। বিশেষ করে যারা পরবর্তীতে বিভিন্ন ভাবে বঞ্চিত হয় সঠিক ও আধুনিক শিক্ষা থেকে। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এখনই আমাদের শিশুদেরকে এইরূপ "আগডুম বাগডুম ঘোড়াডুম" জাতীয় ভুল শিক্ষার মায়া জাল থেকে বেড় করে নিয়ে আসা জরুরি।

আমাদের পাঠ্যবইসমূহে যেসব গল্প, কবিতা, ছড়া, প্রবন্ধ, নিবন্ধ দেওয়া হচ্ছে সেগুলো সবই যে মন্দ তা কিন্তু নয়। তবে এরচেয়েও ভালো দু'চারটি লেখা যে আমাদের নবীন-প্রবীণ লেখকদের নেই তা বলা যাবেনা। আমার জানামতে শিশু সাহিত্য নিয়ে প্রতিনিয়ত গবেষণা করে গল্প, কবিতা, ছড়া, প্রবন্ধ, নিবন্ধ লিখছেন দেশের বেশকিছু লেখক। তাই বিভিন্ন ক্লাসের বইয়ের জন্য পৃথক বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে লেখা আহ্বান করে দেখা উচিৎ এরচেয়ে ভাল লেখা পাওয়া যায় কি না। তবে লেখক নয়, বাছাই করতে হবে লেখা। একজন নামীদামী লেখকের লেখা সকল শ্রেণিতে পাঠ্য করার উপযোগী নাও থাকতে পারে। অমুক লেখকের একটা লেখা অমুক শ্রেণিতে দিতেই হবে এমন রিজিট থাকা অনুচিত। আর সেই লেখা যাচাই বাছাই করার জন্য গঠিত টিমে বিশেষজ্ঞদেরসাথে অবশ্যই যুক্ত রাখা উচিৎ কিছু নবীন-প্রবীণ শিশু সাহিত্যিক এবং সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বিভিন্ন সময়ের শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের। বই করার এই টিমে যারা যুক্ত থাকবেন তাদের লেখা গল্প-কবিতা বইগুলোতে না রাখাই কৌশলগত দিক থেকে সঠিক। বইয়ের পান্ডুলিপি চূড়ান্ত করার আগে বাছাইকৃত বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিকট পাঠিয়ে দিয়ে করে নেওয়া উচিৎ বিজ্ঞান ভিত্তিক ফিল্ড টেস্ট। অনলাইনে দিয়ে নিয়ে নিয়ে নেওয়া যেতে পারে সকলের মতামত। যাতে সবাই জানতে পারে আগামীতে কেমন বই যাচ্ছে আমাদের স্কুল ও মাদ্রাসায় পড়োয়া সন্তানদের হাতে হাতে। আর এই সবকিছুর জন্যই থাকা চাই সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক সদিচ্ছা। <
[মো. রহমত উল্লাহ: শিশু সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ এবং অধ্যক্ষ - কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। Website: creativeclan.net.bd ]

উপ-সম্পাদকীয়- 'সকল শিক্ষার্থীর জন্যই নিশ্চিত করতে হবে নির্যাতনমুক্ত পরিবেশ' -সাক্ষরতা বুলেটিন- জুন ২০১৭

উপ-সম্পাদকীয়- 'সকল শিক্ষার্থীর জন্যই নিশ্চিত করতে হবে নির্যাতনমুক্ত পরিবেশ'
-সাক্ষরতা বুলেটিন- জুন ২০১৭
P_20180526_151107_1 P_20180526_151133_1 P_20180526_151200_1

সকল শিক্ষার্থীর জন্যই নিশ্চিত করতে হবে নির্যাতন মুক্ত পরিবেশ
মো. রহমত উল্লাহ্

“শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্যাতন কেন মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী নয়”- মর্মে গত ১৮ জুলাই ২০১০ তারিখ রবিরার একটি যুগান্তকারি রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। গত ২০ জুলাই ২০১০ তারিখে প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার রিপোর্ট অনুসারে দেখা যায় এই রুলে বলা হয়েছে -‘প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যাযের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শারিরীক ও মানসিক শাস্তি দেওয়ার নামে নির্যাতনকে কেন অবৈধ ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সাম্প্রপ্রতিক সময়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শাস্তি দেওয়ার নামে যে নির্যাতন চালানো হয়েছে সেগুলোর সম্পর্কে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সে সম্পর্কে আগামী দুই মাসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ... এছাড়া যে শিক্ষাকরা শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবেনা তা জানতে চেয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি রুল জারি করেছে আদালত। তাছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান এসব শাস্তি রোধ করার দায়িত্বে নিয়োজিত তাদের নিষ্কৃয়তাকেও কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদেরকে শারীরিক ও মানসিক শাস্তি থেকে বাঁচাতে একটি নির্দেশণা প্রনয়নের ব্যর্থতাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তাও আদালতকে জানাতে হবে। শিক্ষার্থীদের প্রতি এই অমানবিক আচরণকে কেন সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারের হরণ বলে ঘোষণা করা হবে না তাও জানতে চেয়েছে আদালত।’

এই রোল জারি হওয়ার পর কিছুটা টনক নড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিসিদ্ধ করে একটি নীতিমালা জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। 'শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি রহিত করা সংক্রান্ত নীতিমালা-২০১১' শিরোনামে জারিকৃত এই আদেশের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে- শারীরিক শাস্তি বলতে বুঝাবে যে কোন ধরনের দৈহিক আঘাত করা। যেমন: শিক্ষার্থীকে হাত পা বা কোন কিছু দিয়ে আঘাত বা বেত্রাঘাত, চক বা ডাস্টার জাতীয় বস্তু ছুঁড়ে মারা, আছাড় দেয়া ও চিমটি কাটা, কামর দেয়া, চুল টানা বা চুল কেটে দেয়া, হাতের অঅঙ্গুলের ফাঁকে পেন্সিল চাপা দিয়ে মোচড় দেয়া, ঘাড় ধাক্কা দেয়া, কান টানা বা ওঠা-বসা করানো, চেয়ার টেবিল বা কোনকিছুর নিচে মাথা দিয়ে দাঁড় করানো বা হাঁটু গেড়ে দাঁড় করে রাখা, রোদে দাঁড় করিয়ে বা শুইয়ে রাখা, কিংবা সূর্যের দিকে মুখ করে দাঁড় করানো এবং ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে এমন কোন কাজ করানো। আর মানসিক শাস্তি বলতে বুঝাবে- শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে এমন কোন মন্তব্য করা যেমন: মা-বাবা, বংশ পরিচয়, গোত্র বর্ণ ও ধর্ম সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করা, অশোভন অঙ্গভঙ্গি করা যা শিক্ষার্থীদের মনে বিরোপ প্রতিক্রিয়া সৃস্টি করতে পারে। এ নীতিমালা সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক, নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ, উচ্চমাধ্যমিক কলেজ, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসাসহ (আলিম পর্যন্ত) অন্য সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য হবে। নীতিমালায় বলা হয়, কোন শিক্ষক-শিক্ষিক্ষা কিংবা শিক্ষা পেশায় নিয়োজিত কোন ব্যক্তি অথবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারি পাঠদান কালে কিংবা অন্য কোন সময় ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে উল্লিখিত শাস্তিযোগ্য আচরণ না করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এসব অপরাধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে, তা ১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারি আচরণ বিধিমালার পরিপন্থি হবে এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। এসব অভিযোগের জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরোদ্ধে সরকারি র্কচারি (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ১৯৮৫ এর আওতায় অসদাচরণের অভিযোগে শাস্তিমূলক ব্যবস্তা গ্রহণ করা যাবে।

এই আদেশ পড়ে কোন কোন শিক্ষক মন্তব্য করছেন- এতে কঠিন হয়ে পড়বে দুষ্ট শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ এবং অমনোযোগীদের পাঠদান। তাদের প্রশ্ন হচ্ছে, শাসন না থাকলে নিয়ন্ত্রণ থাকবে কী ভাবে? শাস্তি ব্যতীত শাসন করার উপায় কী? শিশু মনোবিজ্ঞান সম্পর্কিত জ্ঞানের প্রচন্ড অভাব থেকেই উৎপত্তি এ ধরনের প্রশ্ন ও মনোভাব। বিভিন্ন কারণে আমাদের দেশে এমন শিক্ষক/ শিক্ষিকা/ প্রশিক্ষক/ হুজুরের সংখ্যা অনেক বেশি।

এত কিছুর পরও বাস্তবে কিন্তু থেমে নেই শিক্ষার্থী নির্যাতন। তদুপরি যৌন হরানি/ নির্যাতনের খবরও অনেক বেশি প্রকাশিত হচ্ছে ইদানিং। আমাদের দেশে শিক্ষার্থী নির্যাতিত হবার কয়েকটি লক্ষনীয় কারণ হচ্ছে- ১. শিক্ষা গ্রহণে বা উপদেশ পালনে বাধ্য করার জন্য শাসন করার নামে শারীরিক ও মানসিক শাস্তি প্রদান থেকে শিক্ষার্থীদেরকে সুরক্ষার উপযোগী সুনির্দিষ্ট নির্দেশণা অতীতে ছিলোনা এবং বর্তমানে থাকলেও তার বাস্তবায়ন নেই অনেক ক্ষেত্রেই। ২. বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদেরকে অমানবিক শাস্তি প্রদানের করণে মারাত্মক আহত/ আত্মহত্যা/ নিহত হবার খবর পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু নিষ্পাপ শিশু শিক্ষার্থীদেরকে এরূপ কঠিন শাস্তি প্রদানকারী শিক্ষক/ শিক্ষিকা/ প্রশিক্ষক/ ওস্তাদ/ হুজুরদেরকে কোন দৃষ্টান্তমূলক সাজা প্রদান করা হয়নি বা সাজা প্রদানের খবর সেভাবে পত্র-পত্রিকা-টেলিভিনে প্রচার করা হয়নি। ৩. যে সকল প্রতিষ্ঠান বা বিভাগ এসব শাস্তি রোধ করার দায়িত্বে নিয়োজিত, তারা সক্রিয় ভাবে দায়িত্ব পালন করছেনা বা করতে পারছেনা। কারণ, বিচারের দাবিতে বাদিরা আদালতে আসেনা বা আসতে পারেনা। তদুপরি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত সেচ্ছায় এগিয়ে আসার মতো পর্যাপ্ত ক্ষমতা/ যোগ্যতা/ নিরপেক্ষতা নেই আমাদের আইন প্রয়োগকারি সংস্থার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা বিধিতেও এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোন নির্দেশনা আগে ছিলোনা এবং বর্তমানে কোন কোন প্রতিষ্ঠানে থেকে থাকলেও বাস্তবে তা কার্যকর নেই। ৪. শিক্ষার্থীদের প্রতি অমানবিক আচরনকে সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকার হরণ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে প্রকাশ্যে কোন সরকারি ঘোষণা আগে ছিলোনা এবং বর্তমানে থাকলেও তার বাস্তবায়ন লক্ষণীয় নয়। এবং এই অপরাধ দমনে গণ সচেতনতা সৃষ্টির জন্যও সরকারিভাবে জোড়ালো তৎপরতা নেই।

এসববের পাশাপাশি আরো একটি বড় কারণ হচ্ছে ‘শিশু মনোবিজ্ঞান’ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি গণের, বিশেষ করে শিক্ষক, প্রশিক্ষক ও অভিভাবক গণের তেমন কোন শিক্ষা/ ধারনা/ প্রশিক্ষণ নেই। তাই তারা মনে করেন শাস্তি প্রদানই শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণের ও নিয়ন্ত্রনের হাতিয়ার। তারা এটিও মনে করেন যে, শিক্ষা প্রদানের দায়িত্ব পাওয়া মানেই শাস্তি প্রদানের অধিকার পাওয়া। এই ভ্রান্ত ধারনার কারণেই শিক্ষার্থীদের উপর নেমে আসে অধিকাংশ অমানবিক ও নিষ্ঠুর নির্যাতন। যার মাত্র দু’চারটি ব্যতীত সবই থেকে যায় আমাদের জানার/ দেখার বাইরে।

প্রতিদিন হাজারো শিশু শিক্ষার্থী নিজ গৃহেও নির্যাতিত হয় তাদের পিতা, মাতা ও গৃহশিক্ষকদের দ্বারা। প্রিক্যাডেট স্কুল, ক্যাডেট কলেজ ও কওমি মাদ্রাসাসহ যেসকল আবাসিক/ অনাবাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধর্মীয় ও সামরিক ভাবধারায় পরিচালিত সেখানে নির্যাতনের মাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি এবং ধরন বিচিত্র। শিক্ষর্থীরা শ্রেণী কক্ষে, শিক্ষক কক্ষে, প্রশিক্ষণ মাঠে, প্রশিক্ষক কক্ষে, আবাস কক্ষে; এক কথায় সর্বত্রই প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হয় শিক্ষক/ শিক্ষিকা/ প্রশিক্ষক/ হুজুর/ সিনিয়রদের দ্বারা। শুধু লেখাপড়ার জন্যই নয়; চলতে-ফিরতে, উঠতে-বসতে, নাইতে-খাইতে, জাগতে-ঘুমাতে এমনকি হাসতে-কাঁদতেও নিয়মের সামান্য ব্যতয় ঘটলে পেতে হতে পারে কঠোর শাস্তি। শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের আদেশে যা কিছু নিষেধ করা হয়েছে তা তো করা হয়ই; তারচেয়েও বেশি কিছু করা হয় কখনো কখনো কোন কোন প্রতিষ্ঠানে এমন কথাও শুনা যায়। এসব নির্যাতনের প্রতিবাদ তো দূরের কথা; জানাজানি হওয়ার মতো জোরে কন্নাকাটি করলেও বেড়ে যায় নির্যাতনের মাত্রা! তাই সামান্য সুযোগ/ছাড়া পেলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নামক এসব জেলখানা থেকে পালিয়ে যেতে চায় বা পালিয়ে যায় অনেক শিক্ষার্থী। বাড়িতে গিয়েও উল্টো ধমক খেতে হয় মাবাবাসহ সবার। পড়া না পারলে, দুষ্টামি করলে, কথা না শুনলে তো মারবেই। ফিরে যেতে বাধ্য হয় আবার সেই ভয়ার্ত আস্তানায়। যারা এতিম, তাদের তো আর পালাবার জায়গাও নেই, কষ্ট শুনার মানুষও নেই!

বিশেষ করে শিক্ষা জীবনে যারা মার খেয়েছেন, তারা শিক্ষক হলে, সেই মার পুনঃ পুনঃ ফিরিয়ে দেন শিক্ষার্থীদের দেহে ও মনে । বলেন, এরচেয়ে অনেক বেশি মারখেয়ে মানুষ(?) হয়েছি আমরা। আমাদের দেশে প্রচলিত প্রশ্নোত্তর পদ্ধতির পরিক্ষায় বেশি নম্বর এবং কর্ম জীবনে বেশি অর্থ সুবিধা হাত করা মানেই যে আসল মানুষ হওয়া নয়; তা আমরা অনেকেই বুঝিনা, বুঝতে চাইনা বলেই নিষ্ঠুরভাবে চালাই 'মানব সন্তান'দের পিটিয়ে মানুষ(?) করার প্রতিযোগিতা। ফলে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য মানবিক গুণাবলি জাগ্রত করার পরিবর্তে আমরা প্রতিনিয়ত শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করে করে চিরতরে হটিয়ে দিই তাদের ভিতরের অধিকাংশ জন্মগত মানবিক গুণাবলী। ফলে লেখাপড়া শিখেও তারা হয়ে উঠে আরো বেশি লোভি, নিষ্ঠুর ও আত্মকেন্দ্রিক। স্বপ্রনোদিত হয়ে এগিয়ে আসেনা অপরের কল্যাণে। পরিবার, রাষ্ট্র ও সমাজে বৃদ্ধি পায় অনাচার এবং অস্থিতিশীলতা।

এ মতাবস্থায় শিক্ষার্থীদেরকে শারীরিক ও মানসিক শাস্তি থেকে সুরক্ষার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট সরকারি নির্দেশণার যথাযথ বাস্তবায়ন। আর এই নির্দেশণা প্রনয়ন, পরিমার্জন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন; ঘরে, বাইরে, ক্লাসে, ক্যাম্পাসে, মাঠে, ছাত্রাবাসে সর্বত্রই নিরাপদ ও ভয়মুক্ত থাকে সব ধরণের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষার্থী। বিশেষায়ীতের দোহাই দিয়ে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই থাকতে পারেনা দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইনের বাইরে/উর্ধে। মনে রাখতে হবে, এইসব বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নকারীরাও ছাত্র। তারা চাকরিজীবি নয় যে বেতনের টাকায় লাগব করার চেষ্টা করবে নির্যাতনের কষ্ট। আমরা অনেকেই জানিনা/ জানতে পারিনা আমাদের ছানাদের কত কঠিন আদর যত্ন করা হয় সেইসব বিশেষায়ীত আবাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে! মানবিক কারণেই তাদেরকেও আনতে হবে আইনের আওতায়। যেনো নিষ্ঠুরতম শরীরিক ও মানসিক শাস্তিতে মারাত্মক আহত হয়ে (মা-বাবাকেও জানানো যায় না) পড়ে থাকার ভয়ে ঘুমে-জাগরনে তটস্ত থাকতে না হয় তাদের শিক্ষার্থীদেরকে।

শিক্ষার্থীদেরকে শাস্তি দিয়ে বা ভয় দেখিয়ে নয়; বরং অনুকরণীয় অনুসরণীয় আদর্শ ব্যক্তিত্ব দিয়ে, সত্যিকারের আদর দিয়ে, উৎসাহ-উদ্দীপনা দিয়ে, বিবেক জাগ্রত করে, মানব ও দেশ প্রেমে উদ্ভূদ্ধ করে, বাস্তবতাপূর্ণ উচ্চাশা দিয়ে, সোনালি ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনতে দিয়ে, আর সবার মত সেও পারে এমন সৎসাহস দিয়ে, ভয়ভীতি হীন আনন্দঘন পরিবেশ দিয়েই সুনিশ্চিত করা যায় প্রতিটি শিশুর মেধানুযায়ী সুশিক্ষা। যার জন্য আমূল অনুকুল পরিবর্তন আনতে হবে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায়। সরকারের সাথে শিক্ষক, অভিভাবক, প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ, সমাজপতি, ইমাম, নেতা-নেত্রীসহ সমাজের সবাই মিলে সকল প্রতিষ্ঠানে ও আবাসস্থলে শিক্ষার্থীদের জন্য নিশ্চিত করতে হবে নির্যাতন মুক্ত পরিবেশ। #

[লেখক- অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা।] ফোন- ০১৭১ ১১ ১৪ ৭৫ ৭০

কবিতা সমগ্র


কবিতা সমগ্র


সূচি


[১] আলোকিত অন্ধকার


[২] ঈদ


[৩] একান্ত ব্যক্তিগত


[৪] কোন নামে ডাকবো তোমায়


[৫] কবিতা আমার


[৬] জাগ্রত হোক


[৭] তোমার বিরহে


[৮] তুলনা চলে না


[৯] ধর্ষিত


[১০] পাথর সময়


[১১] প্রাণময় প্রাণ


[১২] প্রথম দেখা


[১৩] বাংলা মায়ের ক্রন্দন


[১৪] বর্ণমালায় আমার ‘ব’ দেশ


[১৫] ভোরের প্রত্যাশায়


[১৬] মানুষ এবং পশু


[১৭] সংসার বৃত্ত


[১৮] সংসার


[১৯] স্বাধীনতা তুমি


[২০] সহজ




 



[১]


আলোকিত অন্ধকার


মো. রহমত উল্লাহ্



ঊদিত সূর্যে আলোকিত হয় না সবার পৃথিবী


যেমন কাটে না রাত স্বাধীনতা-হীনতায়।



রাতের আঁধারে অন্ধকার হয় না সবার জগত


যেমন থাকে না থেমে কবিতার পথ চলা।



চোখের আলোতেই যায় না দেখা সবকিছু


যেমন যায় না দেখা তোমার ভালোবাসা।



অনেক কিছুই দেখা যেতে পারে অন্ধ চোখে


যেমন অবিকল দেখা যায় মায়ের মুখ।



জন্মভূমিতে আর থাকে না অন্ধকার


যখন আলোকিত হয় সন্তানের মন।#


-----------------



[২]


ঈদ


মো. রহমত উল্লাহ্



ঈদের চাঁদের মত বাঁকা


বিবেকের ঘুর্ণিপাকে বন্দি


আধা মধ্যবিত্ত মানুষের


স্বপ্নভঙ্গুর ললাটে আঁকা!#


-------------



[৩]


একান্ত ব্যক্তিগত


মো. রহমত উল্লাহ্ (রানা ইশতিয়াক)


কিছু কিছু ব্যক্তিগত কথা-


থাকা ভালো ব্যক্তিগত কিছু কাজ;


কিছু কিছু মতামত ভালো-


একান্ত প্রিয় কিছু ব্যক্তিত্ব।



গল্প কবিতা ও পরিবেশ


গুনগুনিয়ে গাওয়ার গান


নিজস্ব কিছু স্টাইল ভালো-


আলাদা রকমের পছন্দ;


মনে মনে কিছু অহঙ্কার


পৃথক ভঙ্গির অভিমান


একটু অন্য রকমের বাঁচা-


আরো ভালো অমর মরন!#



[ছন্দ- অক্ষর বৃত্ত, পর্ব- ১০ মাত্রা।]


[২০০৩, পলাশ, নরসিংদী]


-------------



[৪]


কোন নামে ডাকবো তোমায়


মো. রহমত উল্লাহ্ (রানা ইশতিয়াক)



টইটম্বুর নদীর মতই


পরিপূর্ণ যৌবন তোমার


বৃষ্টিস্নাত যুগল গোলাপ


ফুটে আছে রেশম ছাপিয়ে।



অদূরে দাঁড়ালে মনে হয়


শাপলা ফুটা সকালের দীঘি


উষ্ণতা পেলেই মনোমেঘ


ঝরে পড়ে অঝর ধারায়।



টেলিফোনে কোকিলের গান


রাঙা ঠোঁটে হাসে কৃষ্ণচূড়া


এলোচুলে হার মানে মেঘ।



কোন নামে ডাকবো তোমায়


ঋতুরাণী, বর্ষা, না কি


ঋতুরাজ বসন্তই?#



[২২ সেপ্টেম্বর ২০০৩, পলাশ, নরসিংদী]



-------------



[৫]


কবিতা আমার


মো. রহমত উল্লাহ্ (রানা ইশতিয়াক)



কবিতা আমার


প্রিয়ার কপোলে গাঢ় কালো তিল,


এলোচুলে দোলা, লাল ঠোঁটে হাসি!


কবিতা আমার


ঊর্বর ভূমি, লাঙলের ফলা,


সোনালি ফসল, বাংলার চাষি।


কবিতা আমার


ছেলেহারা মা’র শান্তনা বাণী;


শুকনো মাটিতে বৃষ্টি যেমন!


কবিতা আমার


দুরন্ত শিশু, উড়ন্ত পাখি,


কাঙ্ক্ষিত ভোর, মুক্ত কানন!


কবিতা আমার


ভয়হীন রাত, পূর্ণিমা চাঁদ,


গভীর ঘুমের ছোঁয়া দেয়া পরি!


কবিতা আমার


নৌকার পাল, বিমানের পাখা,


স্বপ্ন দেখার লাল রঙ ঘুড়ি!


কবিতা আমার


দীঘির পানিতে শাপলার হাসি,


সবুজের ভীড়ে দোয়েলের গান!


কবিতা আমার


স্বর্ণের খনি, মুক্তার ঝিনুক,


প্রাণের অধিক প্রাণময় প্রাণ!


কতিা আমার


স্পন্দিত বুকে জয়ের চেতনা,


শত্রু হননের বুলেট-বারুদ!


কবিতা আমার


শেকল ভাঙার শক্ত হাতুড়ি,


আঁধার তাড়ানো সকালের রোদ!


কবিতা আমার


স্বাধীন হবার মুক্তি মন্ত্র,


পতাকা তোলার সবল ঐক্য!


কবিতা আমার


প্রগতির পথ- চির অম্লান,


সত্য- সুন্দর- অমর বাক্য!#



[প্রথম লেখার তারিখ ও স্থান: ১৭ জুন ২০০৩, পলাশ, নরসিংদী।]


পরিমার্জিত- ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৩।


------------



[৬]


জাগ্রত হোক


মো. রহমত উল্লাহ্ (রানা ইশতিয়াক)


জাগ্রত হোক- সেই জনতা,


একাত্তরের মূল একতা,


সত্যিকারের মানবতা।


পূর্ণতা পাক- স্বাধীনতা,


জয়বাংলা’র ব্যাপকতা,


লক্ষ প্রাণের স্বার্থকতা।#



[২৬ মার্চ ২০০৯, মিরপুর, ঢাকা]


--------------



[৭]


তোমার বিরহে


মো. রহমত উল্লাহ্‌ (রানা ইশতিয়াক)



তোমার বিরহে


বিলুপ্ত যেনো সূর্যের হাসি


ভার হয়ে আছে আকাসের বুক


অবিরাম কাঁদে আকাশের মেঘ।



তোমার বিরহে


নাচেনা ফড়িং ঘাসের ডগায়


চুমেনা প্রেমিক প্রজাপতি ফুলে


প্রাণ খুলে গান করেনা পাখিরা।



তোমার বিরহে আসে এ বর্ষা


সবখানে কাঁদে আমার হৃদয়!



[২২ জুন ২০০৩, পলাশ, নরসিংদী]



--------------



[৮]


তুলনা চলে না


মো. রহমত উল্লাহ্‌ (রানা ইশতিয়াক)



মানুষেরা লুটে মানুষের ধন


পশুরা লুটে না।


স্বজাতিরে খুন মানুষেরা করে


পশুরা করে না।


প্রিয়জন ভাঙে আশা ভরা বুক


পশুরা ভাঙে না।


মানুষে মানুষ করে ধর্ষণ


পশুরা করে না।  


একে অপরের স্বাধীনতা কাড়ে


পশুরা কাড়ে না।


মানুষেরা মনে বিদ্ধেষ পুষে


পশুরা পুষে না।...


এসব মানুষ এমন মানুষ


পশুর সাথেও তুলনা চলে না!#


[০৭ জুলাই ২০০৩, পলাশ, নরসিংদী।]


-----------------



[৯]


ধর্ষিত


মো. রহমত উল্লাহ্‌ (রানা ইশতিয়াক)


নিত্য ধর্ষিত মা


বোন বধু প্রিয়তমা...


ধর্ষিত মানবতা!


নিস্পাপ শিশু যেনো


রক্তাক্ত পোলাপ!



‘না’ আর্ত চিৎকার


ধ্বনিত বিশ্বময়!



ধর্ষক উল্লাসে


কী বিষাক্ত বাতাস,


উলঙ্গের নৃত্যে


প্রকম্পিত পৃথিবী,


ধর্ষণ সংবাদে


বিক্ষত মা'র ভাষা!


[১৩ মার্চ ২০০২, পলাশ, নরসিংদী]


-------------



[১০]


পাথর সময়


মো. রহমত উল্লাহ্‌ (রানা ইশতিয়াক)


জীবন সম্পদ সময় সম্ভ্রম


গোখরোর ফনায়!


হার মানে পশু এ বর্বরতায়!



করাত কলের পিচ্ছিল টেবিলে


কাঁদে মানবতা!


কোথায় মানব, কোথায় মানবতা?


[০৭ মে ২০০২, পলাশ, নরসিংদী]


--------------



[১১]


প্রাণময় প্রাণ


মো. রহমত উল্লাহ্‌ (রানা ইশতিয়াক)



গভীর রাতে থেমে গেলে ধরা


আর কোনদিন হবেনা সকাল



প্রাণের প্রগতি ফুরালে হবেনা


বিকশিত এই সূর্যের আলো



সাঙ্গ হবেই মাছেদের খেলা


বরফ কঠিন হয়ে গেলে পানি।



শান্তি শান্তি মুখে মুখে বলে


শান্তি ধ্বংসে ব্যস্ত সবাই!



মারণাস্ত্র ধারী পশুদের বুকে


নিশ্চই নেই প্রাণময় প্রাণ!



প্রাণের পরশে-


মরুভূমে জমে সবুজের মেলা


দৃষ্টি- কবিতা, পাথর- পুষ্প,


কথা হয় গান।



মানুষের চাই মানবতা ভরা


প্রাণময় প্রাণ।


[০৭ জুন ২০০৩, পলাশ, নরসিংদী]


-----------------



[১২]


প্রথম দেখা


মো. রহমত উল্লাহ্‌ (রানা ইশতিয়াক)


বিনা মেঘে বিজলি ছোঁয়া


দু'জনারই চোখে চোখে


কাউকেই না বলা কথা


হয়ে গেলো এক পলকে!



প্রখর দুপুরে হলো


শুভ্র সকালের সূচণা


নিরবে পাল্টে গেলো


গদ্য জীবনের রচনা।



খুললেই যদি মনের দুয়ার


দিবেনা মন্ত্র পা বাড়াবার?


[২৫ মে ২০০৩, পলাশ, নরসিংদী]


---------------



[১৩]


বাংলা মায়ের ক্রন্দন


মো. রহমত উল্লাহ্



তোমাদের সীমা হীন লোভের আগুনে আর কতদিন দগ্ধ হবে


আমার সুদক্ষ সন্তানের রক্তে ঘামা শরীর?


তোমাদের সীমা হীন লোভের পাথরে আর কতদিন চ্যাপ্টা হবে


আমার সুণিপুন সন্তানের স্বপ্ন আর দেহ-মন?


তোমাদের সীমা হীন লোভের খাঁচায় আর কতদিন বন্দি রবে


আমার কর্মঠ সন্তানের সুখ আর সচ্ছলতা?


তোমাদের সীমা হীন নীতি-হীনতায় আর কতদিন ঘুরনি খাবে


আমার নির্দোষ সন্তানের জীবনের ন্যায্য দাবি?



জবাব দাও-


তোমাদের সীমা হীন বর্বরতায়:


আর কতটুকু শূন্য হবে আমার বুক,


আর কতটুকু মলিন হবে আমার মুখ?



বলো-


কে হতে চায়


তোমাদের মতো কলঙ্কিত সন্তানের মাতা।


-----------------



[১৪]


বর্ণমালায় আমার ‘ব’ দেশ


মো. রহমত উল্লাহ্‌ (রানা ইশতিয়াক)



এই রূপসী বাংলায় নিত্য ছুঁয়ে যায়


শতকিয়া-বর্ণমালায় আমার হৃদয়:


১  দিয়ে ধান কাটে কর্মঠ কৃষক


স্বপ্ন ধরে রাখে শিশু  ৫  এর ভিতর


৭  এ ভর দিয়ে দিয়ে হাঁটে বৃদ্ধ বাবা


উঁচিয়ে  ৯  এর লেজ কাঠবিড়ালি ছুটে।


উপরে উঠার বাঁশে অনেক   া


হয়েছে  ি   কলাপাতা নুয়ে


ী  বধুর ঘুমটার কাপড়,


এ  হয়ে মাধুরে বসে তসবি জপে দাদি


বিদেশে রপ্তানি হয় মুন্ডুহীন  ঔ ।


খোকির কালো সুতায় জুলে আছে  ঙ


গ্লাসে ঢেলে  জ  ’র জল পিপাসা মিটাই


ঠ  দিয়ে কাটে কামরাঙা পাতারং টিয়ে,


মাঝি ধরে ভাটিয়ালি উড়িয়ে লাল  প


ম তে মধু করে সঞ্চয় মৌমাছিরা মিলে


ঈদের আনন্দ করি    ঁ  দেখে


চোখের  ঃ  ফোঁটা ঝরে দুঃখদিনে


ং  ঢং ঢং  বিদায় বেলায়-


ছেড়ে যেতে চায় না মন  ‘ব’  দেশ আমার!



[০৭ ফেব্রুয়ারি ২০০২, পলাশ, নরসিংদী।]  


-------------




[১৫]


ভোরের প্রত্যাশায়


মো. রহমত উল্লাহ্‌ (রানা ইশতিয়াক)



আঁধার রাত যেনো আকাশের সীমানা;


অতিক্রমের আশায় প্রতিবন্ধক দৌঁড়...



কাংখিত ভোরের প্রত্যাশায়-


জীবন দিলেন আমাদের পূর্ব পুরুষ!


তাঁদের রক্ত লালে কাটলো না আঁধার


এখনো এলো না পাখি ডাকা ভোর।



পুবের আকাশে ঝুলে আছে


হায়েনার হাতের ছায়া!


কীভাবে আসবে সোনালি সকাল?#



[১৩ এপ্রিল ২০১৩, মোহাম্মদপুর, ঢাকা]



--------------




[১৬]


মানুষ এবং পশু


মো. রহমত উল্লাহ্‌ (রানা ইশতিয়াক)



মানুষেরা লুটে মানুষের ধন


পশুরা কি লুটে?


স্বজাতিরে খুন মানুষেরা করে


পশুরা কি করে?


প্রিয়জন ভাঙে আশা ভরা বুক


পশুরা কি ভাঙে?


মানুষে মানুষ করে ধর্ষণ


পশুরা কি করে?


একে অপরের স্বাধীনতা কাড়ে


পশুরা কি কাড়ে?


মানুষেরা মনে বিদ্ধেষ পুষে


পশুরা কি পুষে?


এসব মানুষ এমন মানুষ


পশুরাও হরে! #


[২৩ ডিসেম্বর ২০১২, মোহাম্মদদপুর, ঢাকা।]


----------




[১৭]


সংসার বৃত্ত


মো. রহমত উল্লাহ্‌ (রানা ইশতিয়াক)


প্রতিদিন ঘুরে ঘুরে


একই ছাদের নিচে


আজীবন ঝুলে আছে


ইলেক্ট্রিক্যাল ফ্যান।



আমিও ঘুরে ফিরে


সেই একই বৃত্তে-


শৈশব কৈশোর


যৌবন দেহ-মন...!


মিথ্যে মায়ার জালে


জেনে শুনে ঘুরপাক;


মাকড়সার যেমন


স্বরচিত জালেতেই


হয় জীবন মরণ!#


১২ জুন ২০০৩, পলাশ, নরসিংদী।


-----------



[১৮]


সংসার


মো. রহমত উল্লাহ্‌ (রানা ইশতিয়াক)


বজ্রপাত, শিলাপাত, বৃষ্টিপাত;


শেষে কেটে গেলে দৈনন্দিন মেঘ


সংসার আকাশে উঁকি মারে চাঁদ!



বৈরাগী জানে না কী যে তার স্বাধ।#



[২০০৪, পলাশ, নরসিংদী।]


-------------



[১৯]


স্বাধীনতা তুমি


মো. রহমত উল্লাহ্


স্বাধীনতা তুমি


মায়ের ভাষায় কবিতা লেখার স্বাধীনতা।


স্বাধীনতা তুমি


নিজের উঠানে অমল বায়ুর স্বাধীনতা।


স্বাধীনতা তুমি


শুদ্ধ পানিতে চুমুক দেবার স্বাধীনতা।


স্বাধীনতা তুমি


আপনার পায়ে উপরে উঠার স্বাধীনতা।


স্বাধীনতা তুমি


অভাব প্রভাব মুক্ত থাকার স্বাধীনতা।


স্বাধীনতা তুমি


দেশের ভালো আগলে রাখার স্বাধীনতা।


স্বাধীনতা তুমি


মিথ্যা মাড়িয়ে সত্য জয়ের স্বাধীনতা।#



[ছন্দ- মাত্রবৃত্ত, পর্ব- ৬ ও ৪ মাত্রা।]


[১৩ মার্চ ২০০৭, মিরপুর, ঢাকা।]


------------



[২০]


সহজ


মো. রহমত উল্লাহ্‌ (রানা ইশতিয়াক)



নদীর বুকেতে সাগর


সাগরের বুকেতে নদী



বাতাসের ভিতরে প্রাণী


প্রাণীর ভিতরে বাতাস



কবির হৃদয়ে কবিতা


কবিতার হৃদয়ে কবি...



এমন যখন দু'জন


সহজ তখন সবই।



[১৯ মে ২০০৩, পলাশ, নরসিংদী]


----------


 


কবিতা- 'জাগ্রত হোক'

কবিতা- 'জাগ্রত হোক'

জাগ্রত হোক


মো. রহমত উল্লাহ্ (রানা ইশতিয়াক)


জাগ্রত হোক- সেই জনতা,


একাত্তরের মূল একতা,


সত্যিকারের মানবতা।


পূর্ণতা পাক- স্বাধীনতা,


জয়বাংলা’র ব্যাপকতা,


লক্ষ প্রাণের স্বার্থকতা।#



[২৬ মার্চ ২০০৯, মিরপুর, ঢাকা]

কবিতা- 'সংসার'

কবিতা- 'সংসার'

সংসার


মো. রহমত উল্লাহ্‌ (রানা ইশতিয়াক)


বজ্রপাত, শিলাপাত, বৃষ্টিপাত;


শেষে কেটে গেলে দৈনন্দিন মেঘ


সংসার আকাশে উঁকি মারে চাঁদ!



বৈরাগী জানে না কী যে তার স্বাধ।#



[২০০৪, পলাশ, নরসিংদী।]

কবিতা- 'স্বাধীনতা তুমি'

কবিতা- 'স্বাধীনতা তুমি'

স্বাধীনতা তুমি


মো. রহমত উল্লাহ্


স্বাধীনতা তুমি


মায়ের ভাষায় কবিতা লেখার স্বাধীনতা।


স্বাধীনতা তুমি


নিজের উঠানে অমল বায়ুর স্বাধীনতা।


স্বাধীনতা তুমি


শুদ্ধ পানিতে চুমুক দেবার স্বাধীনতা।


স্বাধীনতা তুমি


আপনার পায়ে উপরে উঠার স্বাধীনতা।


স্বাধীনতা তুমি


অভাব প্রভাব মুক্ত থাকার স্বাধীনতা।


স্বাধীনতা তুমি


দেশের ভালো আগলে রাখার স্বাধীনতা।


স্বাধীনতা তুমি


মিথ্যা মাড়িয়ে সত্য জয়ের স্বাধীনতা।#


 

[ছন্দ- মাত্রবৃত্ত, পর্ব- ৬ ও ৪ মাত্রা।]


[১৩ মার্চ ২০০৭, মিরপুর, ঢাকা।]

কবিতা- 'ভোরের প্রত্যাশায়'

কবিতা- 'ভোরের প্রত্যাশায়'

ভোরের প্রত্যাশায়


মো. রহমত উল্লাহ্‌ (রানা ইশতিয়াক)


 


আঁধার রাত যেনো আকাশের সীমানা;


অতিক্রমের আশায় প্রতিবন্ধক দৌঁড়...


 


কাংখিত ভোরের প্রত্যাশায়-


জীবন দিলেন আমাদের পূর্ব পুরুষ!


তাঁদের রক্ত লালে কাটলো না আঁধার


এখনো এলো না পাখি ডাকা ভোর।


 


পুবের আকাশে ঝুলে আছে


হায়েনার হাতের ছায়া!


কীভাবে আসবে সোনালি সকাল?#


 


[১৩ এপ্রিল ২০১৩, মোহাম্মদপুর, ঢাকা]


 

কবিতা- 'ধর্ষিত'

কবিতা- 'ধর্ষিত'
ধর্ষিত

মো. রহমত উল্লাহ্‌ (রানা ইশতিয়াক)

নিত্য ধর্ষিত মা

বোন বধু প্রিয়তমা...

ধর্ষিত মানবতা!

নিস্পাপ শিশু যেনো

রক্তাক্ত পোলাপ!

 

‘না’ আর্ত চিৎকার

ধ্বনিত বিশ্বময়!

 

ধর্ষক উল্লাসে

কী বিষাক্ত বাতাস,

উলঙ্গের নৃত্যে

প্রকম্পিত পৃথিবী,

ধর্ষণ সংবাদে

বিক্ষত মা'র ভাষা!

[১৩ মার্চ ২০০২, পলাশ, নরসিংদী]

কবিতা- 'তোমার বিরহে'

কবিতা- 'তোমার বিরহে'
তোমার বিরহে

মো. রহমত উল্লাহ্‌ (রানা ইশতিয়াক)

 

তোমার বিরহে

বিলুপ্ত যেনো সূর্যের হাসি

ভার হয়ে আছে আকাসের বুক

অবিরাম কাঁদে আকাশের মেঘ।

 

তোমার বিরহে

নাচেনা ফড়িং ঘাসের ডগায়

চুমেনা প্রেমিক প্রজাপতি ফুলে

প্রাণ খুলে গান করেনা পাখিরা।

 

তোমার বিরহে আসে এ বর্ষা

সবখানে কাঁদে আমার হৃদয়!

[২২ জুন ২০০৩, পলাশ, নরসিংদী]

প্রবন্ধ/নিবন্ধ- ছন্দের প্রয়োগ



ছন্দের প্রয়োগ

মো. রহমত উল্লাহ্ (রানা ইশতিয়াক)

স্বরবৃত্ত ছন্দ

১.১. এই ছন্দে মুক্তাক্ষর/মুক্তস্বর এবং বদ্ধাক্ষর/বদ্ধস্বর উভয়কেই ১ মাত্রা ধরা হয়। যেমন: কু, খো, ধা, পা, নি, সা, সে ইত্যাদি মুক্তাক্ষর/মুক্তস্বর ১ মাত্রা এবং  আজ, কাল, মন, ক্ষণ, ঋণ ইত্যাদি বদ্ধাক্ষর /বদ্ধস্বরও ১ মাত্রা । [ লক্ষণীয়- যে সকল অক্ষরের স্বর উন্মুক্ত, সে সকল অক্ষরকেই মুক্তাক্ষর বলা হয় এবং যে সকল অক্ষর/শব্দের ধ্বণি উন্মুক্ত নয়, সে সকল অক্ষর/শব্দকেই বদ্ধাক্ষর বলা হয়।] অর্থাৎ, স্বরবৃত্ত ছন্দে মুক্তস্বর ও বদ্ধস্বর উয়ভকেই এক মাত্রা ধরা হয়।

২. পূর্ণ বা মূল পর্ব সাধারনত ৪ মাত্রার হয়। তবে ২/৩/৫ মাত্রারও হতে পারে। অপূর্ণ পর্ব ১/২/৩ মাত্রার হয়।

৩. প্রতি পর্বের আদি অক্ষরে প্রবল শ্বাসাঘাত পড়ে।

৪. লয় দ্রুত।

৫. অতি পর্বের ব্যবহার হতে পারে।

৬. গানে ও ছড়ায় এই ছন্দের ব্যবহার উত্তম হয়।

৭. চলতি বা কথ্য ভাষা এই ছন্দের জন্য অধিক উপযোগী।

৮. চরণ সাধারণত মিত্রাক্ষর যুক্ত বা অন্তমিল হয়ে থাকে।

৯. একই গানের / ছড়ার / কবিতার বিভিন্ন চরণে পর্ব সংখ্যা কম/বেশি হতে পারে। তবে একই স্তবকের চরণসমূহের পর্বে মাত্রা সমান হবে।

 

মাত্রাবৃত্ত ছন্দ

১. মুক্তাক্ষর/মুক্তস্বর ১ মাত্রা ধরা হয় এবং বদ্ধাক্ষর/বদ্ধস্বর ২ মাত্রা ধরা হয়।

২. পূর্ণ পর্ব সাধারণত ৪/৫/৬/৭ মাত্রার হয়ে থাকে। তবে ৮ এর বেশি হয় না।

৩. লয় মধ্যম।

৪. পর্বসমূহে মাত্রা সংখ্যার সমতা থাকে।

 

অক্ষরবৃত্ত ছন্দ

১. মুক্তাক্ষর ১ মাত্রা ধরা হয়। তবে বদ্ধাক্ষর শব্দের প্রথমে ও মধ্যে থাকলে ১ মাত্রা এবং শেষে থাকলে ২ মাত্রা ধরা হয়। একটি শব্দে যদি ১ টি মাত্র বদ্ধাক্ষর/বদ্ধস্বর থাকে তবে তাকে দুই মাত্রা ধরা হয়। [ যেমন: ফুল, এক, হাত, দুই, ক্ষণ ইত্যাদি।]

২. লয় ধীর।

৩. পূর্ণ পর্ব সাধারনত ৮/১০ মাত্রার হয়। অপূর্ণ পর্ব ৬ মাত্রার হয়। কমও হতে পারে।

৪. গুরু গম্ভির বক্তব্য/ভাব প্রকাশে এই ছন্দের ব্যবহার সফল হয়।

৫. অধুনিক কবিতায় প্রত্যেক পংতিতে/লাইনে পর্ব সংখ্যা সমান নাও হতে পারে। // (সংক্ষেপিত)

কবিতা- 'কবিতা আমার'

কবিতা- 'কবিতা আমার'

কবিতা আমার


মো. রহমত উল্লাহ্



কবিতা আমার


প্রিয়ার কপোলে গাঢ় কালো তিল,


এলোচুলে দোলা, লাল ঠোঁটে হাসি!


কবিতা আমার


ঊর্বর ভূমি, লাঙলের ফলা,


সোনালি ফসল, বাংলার চাষি।


কবিতা আমার


ছেলেহারা মা’র শান্তনা বাণী;


শুকনো মাটিতে বৃষ্টি যেমন!


কবিতা আমার


দুরন্ত শিশু, উড়ন্ত পাখি,


কাঙ্ক্ষিত ভোর, মুক্ত কানন!


কবিতা আমার


ভয়হীন রাত, পূর্ণিমা চাঁদ,


গভীর ঘুমের ছোঁয়া দেয়া পরি!


কবিতা আমার


নৌকার পাল, বিমানের পাখা,


স্বপ্ন দেখার লাল রঙ ঘুড়ি!


কবিতা আমার


দীঘির পানিতে শাপলার হাসি,


সবুজের ভীড়ে দোয়েলের গান!


কবিতা আমার


স্বর্ণের খনি, মুক্তার ঝিনুক,


প্রাণের অধিক প্রাণময় প্রাণ!


কতিা আমার


স্পন্দিত বুকে জয়ের চেতনা,


শত্রু হননের বুলেট-বারুদ!


কবিতা আমার


শেকল ভাঙার শক্ত হাতুড়ি,


আঁধার তাড়ানো সকালের রোদ!


কবিতা আমার


স্বাধীন হবার মুক্তি মন্ত্র,


পতাকা তোলার সবল ঐক্য!


কবিতা আমার


প্রগতির পথ- চির অম্লান,


সত্য- সুন্দর- অমর বাক্য!#


[প্রথম লেখার তারিখ ও স্থান: ১৭ জুন ২০০৩, পলাশ, নরসিংদী।


পরিমার্জিত- ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৩।]

কবিতা- 'আলোকিত অন্ধকার'

কবিতা- 'আলোকিত অন্ধকার'
আলোকিত অন্ধকার

মো. রহমত উল্লাহ্

 

ঊদিত সূর্যে আলোকিত হয় না সবার পৃথিবী

যেমন কাটে না রাত স্বাধীনতা-হীনতায়।

 

রাতের আঁধারে অন্ধকার হয় না সবার জগত

যেমন থাকে না থেমে কবিতার পথ চলা।

 

চোখের আলোতেই যায় না দেখা সবকিছু

যেমন যায় না দেখা তোমার ভালোবাসা।

 

অনেক কিছুই দেখা যেতে পারে অন্ধ চোখে

যেমন অবিকল দেখা যায় মায়ের মুখ।

 

জন্মভ‚মিতে আর থাকে না অন্ধকার

যখন আলোকিত হয় সন্তানের মন।#

উপ-সম্পাদকীয়- 'পরীক্ষার প্রশ্নে উত্তরের ব্যাপ্তী নির্দিষ্ট থাকা প্রয়োজন' -নরসিংদীর কথা- ১৮ জানুয়ারি ২০০২

উপ-সম্পাদকীয়- 'পরীক্ষার প্রশ্নে উত্তরের ব্যাপ্তী নির্দিষ্ট থাকা প্রয়োজন'
-নরসিংদীর কথা- ১৮ জানুয়ারি ২০০২
P_20180510_080424_1

উপ-সম্পাদকীয়- 'পৈত্রিক সম্পত্তিতে নারীর অধিকার' -নরসিংদীর কথা- ০৪ মার্চ ২০০৩

উপ-সম্পাদকীয়- 'পৈত্রিক সম্পত্তিতে নারীর অধিকার' -নরসিংদীর কথা- ০৪ মার্চ ২০০৩
P_20180510_080704_1

নারীদিবসের ভাবনা: পৈত্রিক সম্পত্তিতে নারীর অধিকার
মো. রহমত উল্লাহ্
>পৈত্রিক সম্পত্তিতে নারীর অধিকার অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনর্জিতই থেকে যায় আমাদের দেশে। এর নানাবিধ কারণের মধ্যে সচেতনতার অভাবই প্রধান। নারীর এই অধিকার সরাসরি অস্বীকার করা হয়নি কোন ধর্মেই। বিশেষ করে ইসলাম ধর্মেতো পিতা-মাতার অবর্তমানে তাঁদের স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পত্তিতে মেয়ের অধিকার হিসাব করেই দেয়া আছে; যদিও এটি ভাইয়ের প্রাপ্যাংশের তুলনায় অর্ধেক। অবশ্য পিতা/ মাতা ইচ্ছে করলে তাঁদের সম্পত্তি ছেলে মেয়েকে সমান হারেও ভাগ করে দিতে পারেন। এতে ইসলাম ধর্মে কোন নিষেধ নেই। কোন আইনেরও প্রয়োজন নেই। পরিমাণ যাই হোক মূল প্রশ্ন হচ্ছে, এই অধিকারটুকু আমাদের নারীরা অর্জন ও ভোগ করতে পারছে কিনা? যদি কেউ পেরে থাকে তো মোটের তুলনায় এটি খুবই নগণ্য। আমাদের সমাজে এমন একটি ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত যে, বাপের বাড়ির সম্পত্তির অংশ মেয়েরা নিয়ে নিলে স্বমীর সংসারে অনটন নেমে আসে এবং ভাইদের সাথে বোনদের সম্পর্কের কোন সেতু বন্ধন থাকে না। বোনরা ভাইদের বাড়িতে এবং ছেলেমেয়েরা মামার বাড়িতে যাবার বা আপ্যায়ন পাবার যোগ্যতা হারায়। উচিত কথা হচ্ছে, মেয়েদেরকে স্থায়ীভাবে ঠকানোর এটি একটি চতুর কৌশল ছাড়া আর কিছুই না। ভাইয়েরা পৈত্রিক সম্পত্তি ভাগাভাগি (বোনদের অংশসহ) করে ভোগ-দখল করলে যদি অভিশপ্ত না হয়, সম্পর্ক অবনতি না হয়, পরষ্পরের বংশধরদের আপ্যায়ন পাবার অধিকার থাকে, পরষ্পরের সুখে-দুঃখে এগিয়ে যাবার মানসিকতা থাকে, তো বোনদের অপরাধ কোথায়? বোনের প্রাপ্য সম্পত্তি ভাই ভোগ-দখল করবে সারাজীবন, ফুফুর সম্পত্তি ভাইপোরা ভোগ করবে জোর করে; তাতে অপরাধ হবে না, অভিশপ্ত হবে না, অথচ পিতা-মাতার সম্পত্তির বৈধ প্রাপ্যাংশ কণ্যা ভোগ-দখল করলেই অভিশপ্ত হবে, ধবংস হয়ে যাবে এ কেমন কথা, কোন ধর্মের কথা? নারীতো ভাইয়ের সম্পত্তি পায় না, পিতা-মাতার সম্পত্তি পায়। এতে ভাইয়ের রাগ করার, অভিশাপ দেয়ার বৈধতা ও যুক্তিকতা কোথায়? ভাইকে প্রাপ্যাংশ দিতে কষ্ট না থাকলে, বোনকে দিতে এত কষ্ট কেন? এ কষ্টে কি পাপ নেই?
অবাক ব্যাপার, যে বাবা মেয়েকে বেশি আদর দেখায়, পুত্র-পুত্রবধূ রেখেও মেয়ের সেবাযতœ প্রত্যাশ্যা করে মৃত্যু শয্যায়; সে বাবাই তার সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি কূট-কৌশলে ছেলের দখলে দিয়ে মরে যায় বেহেশতে যাবার দোয়া করতে করতে! হজ্জও করেন কেউ কেউ! বিশেষ করে শহরের বাড়ির অংশতো কোনভাবেই দিতে চায় না মেয়েদেরকে। মেয়েদেরকে বঞ্চিত করে ছেলেদের নামে মূল্যবান বাড়ি দলিল করে দিয়ে যান, এমন নীতি-আদর্শহীন বাবার সংখ্যাও আমাদের সমাজে কম নয়। যে ভাইয়ের জন্য সবার আগে নির্দ্বিধায় প্রাণ দিতে পারে বোন; সেই ভাই-ই বোনের প্রাপ্যাংশ না দেয়ার জন্যে আঁটে নানা অবৈধ কৌশল। কোনো অধিকার সচেতন বোন তার প্রাপ্যাংশের দাবিতে আদালতের আশ্রয় নিলে, ভাই ধর্মীয় পোশাক পরে ভালো মানুষ সেজে হাজির হয় বিচারকের সামনে। কোন অসতর্ক, অসুস্থতা বা বিপদের সময় বাবার/ মার/ বোনের টিপসহি নিয়ে বোনকে অধিকার বঞ্চিত করে বা করার চেষ্টা করে এমন ভাইয়ের সংখ্যাও কম নয়।
সাধারণত ধনীর মেয়ের রূপ-গুণ-যোগ্যতা যতই কম থাকুক, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধনীর সঙ্গেই তার বিয়ের হয় আমাদের সমাজে। বিয়ের দেনমহরানা ধার্য হয় তুলনামূলক বেশি। অথচ ধনী পিতার সম্পত্তির প্রাপ্যাংশ যদি ঐ মেয়ে ও তার সন্তানেরা না পায়, তো তাকে অধিক মূল্যায়নের ভিত্তি কোথায়? শিক্ষিত অশিক্ষিত বেকার চাকুরে যা-ই হোক, যে মেয়ের নামে সম্পত্তি থাকে তার বিয়েতে যৌতুকের প্রশ্ন উঠে না।
বা¯—বে আমাদের নারীরা বিভিন্ন যৌক্তিক, অযৌক্তিক ও ভ্রাš— ধারণার কারণে পৈতিক সম্পত্তি গ্রহণ ও ভোগদখল না করে উদারতা দেখালেও, নিঃশর্তে দলিল করে ভাইকে দিয়ে দেয় এমন নারীর সংখ্যা নেই বললেই চলে। অর্থাৎ নারীরা তার পৈতিক সম্পত্তির দাবি সত্যিকারার্থে মন থেকে ত্যাগ করে না কোন দিন। দাবি অব্যাহত রেখেই মৃত্যুবরণ করে। এই দাবির দাবিদার হয় তার সন্তানেরা। দাবি আদায় করতে গেলেই হয় বিবাদ। নারীর এই জন্মগত বৈধ দাবি না চাইতেই পূরণের দায়িত্ব ছিল যে বাবার/ ভাইয়ের অথচ পূরণ করেনি, সেই বাবা/ ভাই ইহ ও পরকালে শান্তি পাবে কোন যুক্তিতে?
কোনো নারী যদি মনে করে তার পিতা-মাতার নিকট থেকে প্রাপ্যাংশ ভাই কে বা ভাইয়ের সন্তানদেরকে দিয়ে দিবেন, তো এটি মনে রাখা উচিৎ যে, তার এই প্রাপ্য সম্পত্তির উপর নিজের সন্তানের অধিকার ও দাবিই অগ্রগণ্য। নিজের সন্তানকে বঞ্চিত করে ভাই/ ভাইয়ের সন্তানদেরকে সম্পত্তি দেয়া অনুচিৎ। ভাইয়ের অভাবের কারণে দিতে হলেও নিজের স্বামী-সন্তানের মতামত নেয়া প্রয়োজন।

বোনের প্রাপ্যাংশ বুঝিয়ে দেয়ার পরও যে ভাই বোনকে, বোনের স্বামী-সন্তানকে সাধ্যমত আদর-আপ্যায়ন করার আন্তরিক চেষ্টা করে সে ভাই-ই প্রকৃত অর্থে ভাই। সম্পত্তির দেনা-পাওনার নিস্পত্তির পর যে সম্পর্ক ও আন্তরিকতা থাকে তা-ই আসল। আমি খুব কাছে থেকে দেখেছি- নরসিংদী জেলার সবুজ পাহাড় এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তি আলহাজ্ব মোহাম্মদ আলী মাষ্টার নিজেই তাঁর ফুফু, বোন ও কন্যাদের প্রাপ্য সম্পত্তি দলিল করে দখল বুঝিয়ে দিয়েছেন। অথচ তাদের সাথে তাঁর ও তাঁর ছেলেদের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক অবনতি হয়নি। বরং অন্যদের তুলনায় তাঁদের সম্পর্ক পরষ্পরের সুখে-দুখে-আনন্দ অনুষ্ঠানে আদর-আপ্যায়নে সক্রিয়তার কোন ঘাটতি নেই। নারী বলে পৈত্রিক সম্পত্তি ভোগদখল করে গরিব হয়ে যায় নি তারা কেউ। অবশ্য এক্ষেত্রে সম্পর্ক ভাল রাখার দায়িত্ব অনেকাংশে ভাই ও ভাইপোদের উপর নির্ভর করে।
পৈত্রিক সম্পত্তিতে নারীর অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হলে যাদের অবৈধ স্বার্থ পুরন হবে, তাদের গা জ্বালা হওয়া স্বাভাবিক। এর বিপরীতে তারা যতই যুক্তি খোঁজুক, ফন্দি আঁটুক, পৈতিক সম্পত্তির (স্থাবর-অস্থাবর) উপর নারীর এই জন্মগত অধিকার অর্জন ও ভোগ করার জন্য মনের জোর নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে নারীকেই। নিজের ও নিজের কন্যা সন্তানদের বৈধ পাওনা বুঝে নিতে ও দিতে হবে যে কোন মূল্যে। //
[লেখক- শিক্ষাবিদ এবং অধ্যক্ষ - কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা। Email- rahamot21@gmail.com]

(পরিমার্জিত- ২০১০)