উপ-সম্পাদকীয়- মানসম্মত শিক্ষার জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষক -সাক্ষরতা বুলেটিন- নভেম্বর ২০১৭

মানসম্মত শিক্ষার জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষক

মো. রহমত উল্লাহ্

>সুশিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সবার আগে চাই সুযোগ্য শিক্ষক। কেননা অন্যান্য উপাদান ও উপকরণ সঠিক থাকলেও ভালো শিক্ষক না থাকলে ভালো শিক্ষা অসম্ভব। একজন মেধাবী শিক্ষার্থীকে প্রয়োজনীয় বই, খাতা, কলম, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, মাল্টিমিডিয়াসহ অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ, সুসজ্জিত শ্রেণিকক্ষ, অনলাইন পাঠাগার, ডিজিটাল বিজ্ঞানাগার, ইত্যাদি অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেও শুধু ভালো শিক্ষক দেয়া না হলে তার পক্ষে সঠিক শিক্ষা গ্রহণ সম্ভব নয়। একজন শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও মেধার সঠিক সমন্বয় ঘটিয়ে সুপ্ত প্রতিভাকে সযত্নে জাগিয়ে লালন-পালনের মাধ্যমে তাকে অধিক কর্মক্ষম করে তোলা শিক্ষকের প্রধান কাজ। এ কাজ অত্যন্ত জটিল। শিক্ষার্থীভেদে বিচিত্র মনমানসিকতা অনুধাবন করে একেকজনকে একেক কৌশলে আয়ত্ত করাতে হয় শিক্ষার বিষয়। শিক্ষা হচ্ছে 'শিক্ষার্থীর আচরণের স্থায়ী অনুকূল পরিবর্তন'। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর মনোযোগ আকর্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষকের বিভিন্নমুখী যোগ্যতা ও দক্ষতা যত বেশি হবে শিক্ষার্থীরা তার প্রতি তত বেশি শ্রদ্ধাশীল হবে, আকৃষ্ট হবে, মনোযোগী হবে। সফল হবে শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়া। অধিক লাভবান হবে শিক্ষার্থী।

অথচ আমাদের দেশে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকের আর্থিক-অনার্থিক সুযোগ-সুবিধা কম ও নিয়োগে দুর্নীতির কারণে প্রাথমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সত্যিকার মানসম্পন্ন শিক্ষকের খুবই অভাব। ফলে পরীক্ষার ফল ভালো হলেও শিক্ষার মান তুলনামূলক কম। প্রকৃত শিক্ষক হওয়ার মতো ভালো রেজাল্ট, জ্ঞান, মেধা, পাঠাভ্যাস, সততা, ধৈর্য্য, নীতি-আদর্শ, দেশপ্রেম, জাতীয় চেতনা, আচার-আচরণ, চলন-বলন নেই এমন অনেকেই আজ আমাদের শিক্ষক। তারা শিক্ষক হয়েও স্বভাবে বা অভাবে যুক্ত শিক্ষাবহির্ভূত কর্মে। ক্লাস ফাঁকি দিতে, অধিক নাম্বার দিতে, প্রশ্ন ফাঁস করে দিতে, বিভিন্ন অজুহাতে শিক্ষার্থীর কাছ থেকে টাকা নিতে, ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থে শিক্ষার্থীদের অপব্যবহার করতে তাদের অনেকেরই বিবেকে বাধে না। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এদের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক বেশি। দীর্ঘদিন ধরে বাঙালি জাতির মূল চেতনা ও আশা-আকাঙ্ক্ষা অনুসারে দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার মতো সৎ, যোগ্য, দক্ষ, ন্যায়নীতিপরায়ণ সুনাগরিক তৈরির উপযোগী সর্বজনীন কোনো শিক্ষানীতি না থাকা এবং বিভিন্ন সময়ে জারিকৃত বিভিন্ন রকম সরকারি পরিপত্র এর জন্য বহুলাংশে দায়ী। যেমন ১৯৯৫ সালের আগে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হওয়ার জন্য নূ্যনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে সুদূরপ্রসারী কল্যাণকর কোনো সুষ্ঠু নীতিমালই ছিল না। ২৪ অক্টোবর, ১৯৯৫ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত (নাম্বার-শি.ম./শা. ১১/বিবিধ-৫/৯৪/অংশ-৬/৩৯৪) পরিপত্রে শিক্ষক হওয়ার নূ্যনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছিল_ 'সকল পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগ/শ্রেণি'। কিন্তু ১৬ জানুয়ারি, ১৯৯৬ সালে অন্য একটি পরিপত্রের দ্বারা (নাম্বার-শি.ম./শা. ১১/বিবিধ-৫/৯৪/১২) সিদ্ধান্তটির স্থগিতাদেশ জারি করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শুভবুদ্ধির পুনরুদয় হলে ৩১ আগস্ট, ২০০০ সালে (নাম্বার-শি.ম./শা.১১/৫/৯৪/৭৩১/১৯ নাম্বার পরিপত্রের দ্বারা) ওই স্থগিতাদেশটি প্রত্যাহার করে নেয়। ২০০৩ সালের ২ এপ্রিল আবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় (নাম্বার-শি.ম./শ.১১/৬/২০০২/৩৪৭/১৩ নাম্বার পরিপত্রের মাধ্যমে) ঘোষণা করে যে, 'বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে একজন প্রার্থীর সমগ্র শিক্ষাজীবনে অনধিক একটি তৃতীয় বিভাগ/শ্রেণি গ্রহণযোগ্য হবে'। অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সালে জারিকৃত (নাম্বার-শি.ম./শা.১৩/এম.পি.ও.-১২/২০০৯/৭৫ নাম্বার) পরিপত্রেও তা বহাল রাখা হয়েছে। ফলে বিশেষভাবে লক্ষণীয়, শুধু ২৪ অক্টোবর, ১৯৯৫ থেকে ১৫ জানুয়ারি, ১৯৯৬ এবং ৩১ আগস্ট, ২০০০ থেকে ১ এপ্রিল, ২০০৩ এ কদিন কমিটি/গভর্নিং বডি ইচ্ছা করলেও থার্ড-ক্লাস শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারেনি। তা ছাড়া সর্বদাই সুযোগ ছিল এবং এখনো সুযোগ রয়েছে তৃতীয় বিভাগ/শ্রেণিপ্রাপ্ত 'আদু ভাই'দের শিক্ষক হওয়ার। অথচ অন্যান্য কম গুরুত্বপূর্ণ এমনকি ছোট-বড় প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরির ক্ষেত্রেও এখন আর এ সুযোগ নেই। তৃতীয় বিভাগ/শ্রেণিপ্রাপ্ত 'আদু ভাই'দের শিক্ষক হওয়ার সুযোগ সরকার না দিলে নিয়োগের দুর্নীতিটাও থার্ড-ক্লাস পর্যায়ে নামতে পারত না।
একজন অযোগ্য শিক্ষক সারা জীবন তৈরি করে অসংখ্য অযোগ্য নাগরিক, যা দেশ ও জাতির জন্য সীমাহীন অকল্যাণ। আমাদের দেশে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করে বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায়। যোগ্য নাগরিক-কর্মী তৈরির প্রয়োজনেই বিশেষ নজর দেয়া উচিত সেখানে। বিশেষ করে গ্রামে অবস্থিত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দিকে। শহরের তুলনায় গ্রামে অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থার্ড-ক্লাস ও অযোগ্য শিক্ষকের সংখ্যা বেশি। সুশিক্ষার অধিকার থেকে অধিক বঞ্চিত গ্রামবাংলার শিক্ষার্থীরা।
দেশ-জাতির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার যুক্তিতেই বিভিন্ন চাকরি ক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে কোটা। শিক্ষক নিয়োগে এর হার সর্বাধিক। এমনকি এ কোটা পূরণের জন্য শিথিল করা হচ্ছে মেয়েদের শিক্ষাগত যোগ্যতা! অথচ গভীরভাবে ভেবে দেখা হচ্ছে না এর ফল। অন্যান্য চাকরি ক্ষেত্রে যা-ই হোক, জাতি গঠনের কারিগর 'শিক্ষক' নিয়োগের ক্ষেত্রে গভীরভাবে ভেবে নেয়া দরকার এ কোটা সংরক্ষণের সুফল-কুফল। সরকার একদিকে বলছে নতুন শিক্ষানীতি অনুসারে প্রাথমিক শিক্ষার স্তর হবে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত, অন্যদিকে সেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদানের জন্য নিয়োগ দিচ্ছে মাত্র এসএসসি পাস শিক্ষক! কোনো পর্যায়েই এখন আর যোগ্যতার প্রশ্নে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে।
এ ছাড়াও সুদূরপ্রসারী কোনোরূপ সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও অধিক কল্যাণকর নীতিমালা ছাড়াই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সাময়িক স্বার্থে রেজিস্ট্রিকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি করার কারণে এবং যত্রতত্র যেনতেনভাবে গড়ে ওঠা স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত করার কারণে এবং এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান সরকারি করার কারণে দেশের জনগণের টাকায় সরকারি সুবিধাপ্রাপ্ত শিক্ষকসমাজের মূল স্রোতে যুক্ত হয়ে পড়েছে অনেক অযোগ্য শিক্ষক। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, একটি উন্নত শিক্ষানীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরুর পরেও থেমে নেই এসব অশুভ/অকল্যাণকর পদক্ষেপ। ভালো ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রেজিস্ট্রি করা, এমপিওভুক্ত করা, সরকারি করা হোক তা আমিও চাই। কিন্তু তার আগে দেখে নেয়া হোক সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অবস্থা ও অবস্থান। সেখানে বিদ্যমান জমির পরিমাণ কতটুকু। তাতে নিশ্চিত করা যাবে কিনা খেলার মাঠ, সবুজ বনায়ন, প্রাকৃতিক আলো-বাতাস এবং নির্মাণ করা যাবে কিনা আধুনিক শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজনীয় ভবন। আছে কিনা সহজ যাতায়াতের প্রয়োজনীয় রাস্তা ও প্রয়োজনে নতুন করে অধিগ্রহণ করার মতো সংলগ্ন খালি জায়গা। বজায় থাকছে কিনা নিকটবর্তী সমজাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এর প্রমাণ দূরত্ব। বিদ্যমান সব শিক্ষকের আদৌ আছে কিনা বিশ্বমানের নাগরিক-কর্মী তৈরির উপযোগী হয়ে ওঠার সব যোগ্যতা। তা না হলে, দেশ ও জাতির অধিকতর স্বার্থে সন্তোষজনক গোল্ডেন হ্যান্ডশেক ও অন্যান্য সুবিধা দিয়ে অগ্রিম অবসরে পাঠিয়ে দিতে হবে অযোগ্যদের। কেননা, সরকার কর্তৃক রেজিস্ট্রিকৃত, সরকারি এমপিওভুক্ত বা সম্পূর্ণ সরকারিকৃত কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের লোকবল ও শিক্ষার পরিবেশ তো আর যেনতেন হলে চলে না, চলবে না।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে অনেকটা ভিন্ন রকমের। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা, ক্লাব-সমিতি ইত্যাদি পণ্য বা সেবা উৎপাদনকরী প্রতিষ্ঠানের মতো স্বল্প মেয়াদে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সফলতা বা ব্যর্থতা মূল্যায়ন করা চলে না। কারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোনো পণ্যের একক উৎপাদন করে না। বরং মানসম্পন্ন পণ্য বা সেবা উৎপাদনের জন্য মানসম্পন্ন মানবসম্পদ উৎপাদনের গুরুদায়িত্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথা প্রতিষ্ঠান-প্রধান ও শিক্ষকের ওপর ন্যস্ত। শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। অন্যান্য কারিগরের চেয়ে তারা ভিন্ন। শিক্ষার মূল লক্ষ্য 'আচরণের স্থায়ী অনুকূল পরিবর্তন' একটি দীর্ঘমেয়াদি মননশীল কর্ম বা ব্রত; যা শিক্ষকের মনের গভীরে লালিত। শুভচিন্তা, জাতীয় চেতনা, সুশিক্ষা, ইত্যাদি সদ্গুণ স্বেচ্ছায় সুকৌশলে শিক্ষার্থীর মনে রোপণ ও লালন-পালন করতে হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-প্রধানকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত এ প্রক্রিয়া। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-প্রধান একাধারে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, অভিভাবকসহ আরো অনেকেরই শিক্ষক। তাই তার হওয়া চাই সবচেয়ে বড় শিক্ষক। শিক্ষাদানের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান ব্যাপক আর্থিক ও অনার্থিক বিষয়। শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা অন্য যে কোনো প্রশাসন বা ব্যবস্থাপনা থেকে পৃথক ও জটিল। প্রতিষ্ঠান-প্রধানকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয় পুরো শিক্ষা কার্যক্রম এবং আর্থিক-অনার্থিক ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসন। প্রতিষ্ঠানের ভিন্নতা বা বিশেষত্বের কারণেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-প্রধানের দায়িত্ব ও কর্তব্যের পরিধি এত বেশি যার সব কটি চিহ্নিত/উল্লেখ/দৃশ্যমান করা প্রায় অসম্ভব। এ বিশাল গুরুদায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করার জন্যই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-প্রধানের থাকা চাই দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান অনেক ধরনের যোগতা ও দক্ষতা। শুধু বয়সের মাপকাঠিতে যার মূল্যায়ন সঠিক হয় না।
যোগ্য নাগরিক-কর্মী তৈরির কারখানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষকরা এ কারখানর কারিগর। তাই যোগ্য মন্ত্রী, আমলা, নেতা, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী, বিচারক, আইনবিদ, সাংবাদিক, লেখক, শ্রমিক-কর্মচারী সবই তৈরির পূর্বশর্ত সুযোগ্য শিক্ষক।
শুধু বেসরকারি নয়, সব শিক্ষক, প্রশিক্ষক ও হুজুরেরই যথাযথ শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি অত্যন্ত ভালোভাবে জানা থাকতে হবে শিক্ষার সংজ্ঞা, শিক্ষার উদ্দেশ্য, শিশু-কিশোর মনোবিজ্ঞান ও শিক্ষা প্রদানের আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি। অবশ্যই থাকতে হবে বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ এবং প্রতিনিয়ত প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান আহরণ ও বিতরণের ঐকান্তিক ইচ্ছা। তদুপরি একজন শিক্ষককে প্রকৃত শিক্ষক হয়ে ওঠার জন্য তার থাকা চাই অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব।
যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদের বাদ দেয়া কঠিন। কিন্তু নতুন করে কেন আবার নিয়োগ দিতে হবে থার্ড-ক্লাস শিক্ষক? এখন তো আর প্রথম/দ্বিতীয় বিভাগ/শ্রেণিপ্রাপ্ত প্রার্থীর অভাব নেই। শিক্ষকদের আর্থিক ও অনার্থিক সুযোগ-সুবিধা আরো বৃদ্ধি করে সর্বাধিক ভালো ছাত্রদের শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করতে পারলে তারা অবশ্যই ভালো শিক্ষক হবেন। তাই দেশ ও জাতির সুদূরপ্রসারী কল্যাণার্থে এখন আমাদের সস্নোগান হোক_ 'আর নয় থার্ড-ক্লাস শিক্ষক'। দুর্নীতিমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, জঙ্গিবাদমুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার উপযোগী ফার্স্ট-ক্লাস মানুষ তৈরির জন্য চাই ফার্স্ট-ক্লাস শিক্ষক। যার জন্য এখনই প্রয়োজন সঠিক সরকারি সিদ্ধান্ত ও কার্যকর পদক্ষেপ।

Previous Post
Next Post

1 টি মন্তব্য:

  1. নিবন্ধটিতে গতানুগতিক পুরানো কথাই বলা হয়েছে এবং “যতো দোষ নন্দ ঘোষ” অর্থাৎ মানসম্পন্ন শিক্ষক আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্যে শিক্ষকদের যোগ্যতা বা প্রকারান্তরে শিক্ষকদেরকেই তথা বেসরকারী শিক্ষক সমাজকে দায়ি করা হয়েছে এবং প্রবন্ধটি অনেকখানি আমলাতান্ত্রিকতা দোষে দুষ্ট।
    পাঠদান এক ধরনের আর্ট বা শিল্পকলা যা শুধুমাত্র BCS Cadre দিয়ে পরিমাপ করা যায় না । আমি তো আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি অনেক বেসরকারী কলেজ সরকারী হওয়ার পরে অনেক Non BCS শিক্ষক, BCS শিক্ষকের থেকেও ভালো পাঠ দান করে থাকেন। BCS কখনো ভালো শিক্ষক হওয়ার নিশ্চয়তা দেয়না । যদি BCS ভালো শিক্ষক হওয়ার নিশ্চয়তা বিধান করতো তবে পবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে BCS প্রথা চালু থাকতো। এর চেয়ে বরং BED বা MED ধরনে প্রশিক্ষণ ‘ভালো শিক্ষক, হওয়ার ক্ষেত্রে BCS এর থকে অনেক বেশী সহায়ক। একজন শিক্ষার্থীর সফলতা বা ব্যার্থতার দায়ভার শুধুমাত্র শিক্ষকের নয় এর সাথে যুক্ত থাকে সরকারের পাঠ্য কারিক্যুলামের সাবলীলতা, মাধূর্য্য, সহজ বোধগম্যতা, শিক্ষার্থীর আর্থ সামাজিক অবস্থা সহ নানাবিধ বিষয়। এ বিষয়গুলো গবেষোনা ও বিশ্লেষন স্বাপেক্ষ । পরীক্ষা পদ্ধতী গবেষণা ও তা প্রয়োগে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা তো এখন পুরোমাত্রায় এক্সপেরিমেন্টের গিনিপিগে পরিণত। মানসম্পন্ন শিক্ষক আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্যে প্রয়োজন আমলাতান্ত্রিকতা মুক্ত পরিবেশের। আর এ জন্যে অনিবার্য্য হয়ে উঠেছে স্বাধীন শিক্ষা কমিশন যা পরিচালিত হওয়া দরকার দেশবরেন্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, বুদ্ধিজীবির দ্বারা। শিক্ষক একজন শিক্ষার্থীর আলো বিতরনকারী কিন্তু তার পাহারাদার নয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরেও রয়েছে এক ব্যাপক পরিমন্ডল যা একজন শিক্ষকের আয়ত্বের বাইরে সেখানে পঁচনশীল রাজনীতির কারনে কোন অযোগ্য মন্ত্রী, আমলা, নেতা, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী, বিচারক, আইনবিদ, সাংবাদিক, লেখক সৃষ্টি হয় তাহলে এর দায়ভার কেন একজন শিক্ষক বহন করবে? সরকারী বেসরকারী বৈষম্য জিঁইয়ে রেখে আবার মানসম্পন্ন ফলাফল আাশা করা দূরাশা ছাড়া আর কিছু নয় ! আর “৩য় বিভাগ যদি অযোগ্যতার মানদন্ড হয় তাহলে সরকার শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ৩য় বিভাগ উঠিয়ে দিলেই তো পারতো তাহলে ৩য় বিভাগ প্রাপ্তরা আর অযোগ্য থাকতো না” এমন যৌক্তিক দাবিটি কিন্তু আমার নয় ৩য় বিভাগ প্রাপ্তরদের যা বিবেচনা করে রাষ্ট্র ৩য় বিভাগ পূণর্বহাল করে। মনে রাখতে হবে ৩য় বিভাগও একটি বিভাগ রাষ্ট্রের সৃষ্ট। প্রবন্ধে কর্মরত অযোগ্যদের কে (লেখকরে ধারনা অনুযায়ী) যোগ্য করার কোন সুপারিশই করা হয়নি বরং তাদের বিকাশের পথ রুদ্ধ করাতে উৎসাহিত করেছে যা (লেখক স্বয়ং) একজন শিক্ষক হিসেবে কাম্য নয়। (সফ্টওয়ারের সমস্যার কারণে বানান ভুলের জন্যে দুঃখিত)

    উত্তরমুছুন