দীর্ঘ ছুটিতে চরম ঝুঁকিতে আমাদের শিক্ষার্থীরা। খোলা কাগজ, ৩০ মে ২০২১




দীর্ঘ ছুটিতে চরম ঝুঁকিতে আমাদের শিক্ষার্থীরা

মো. রহমত উল্লাহ্

খোলা কাগজ, ৩০ মে ২০২১

>মহামারি করোনার কারণে গত ১৭ মার্চ ২০২০ তারিখ থেকে ১৪ মাস ধরে বন্ধ হয়ে আছে আমাদের দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রত্যক্ষ প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হয়ে আছে শিক্ষার্থীরা। তাই সবাইকে অটোপ্রমোশন দিয়ে তুলে দেওয়া হয়েছে উপরের ক্লাসে, পরীক্ষা ব্যতীতই দেওয়া হয়েছে সরকারি পরীক্ষায় পাসের সনদ! শিক্ষার্থীরা বুঝে গেছে পরীক্ষায় পাসের জন্য লেখাপড়ার প্রয়োজন নেই! তাই তারা ছেড়ে দিয়েছে লেখাপড়া। যদিও নেওয়া হয়েছে কিছু অনলাইন ক্লাস এবং বেতার-টিভিতে সম্প্রচার করা হয়েছে কিছু পাঠ। বাস্তবে বিভিন্ন কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থী বঞ্চিত রয়েছে এ সকল অনলাইন ক্লাস ও বেতার-টিভির পাঠগ্রহণ থেকে। যারা সুযোগ পেয়েছে তারাও আগ্রহ দেখায়নি এসকল ভার্চুয়াল ক্লাসে। অতি অল্প কিছু ব্যতিক্রম ব্যতীত এখনো এসকল ভার্চুয়াল ক্লাসে উপস্থিতি ও অংশগ্রহণের হার অত্যন্ত কম এবং যারা উপস্থিত হয় তারাও হাজিরা দিয়ে বেরিয়ে যায় প্রায় সবাই। ভার্চুয়াল ক্লাস নেওয়ার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও দক্ষতা দেশের সকল শিক্ষকের এখনো নেই এটি স্বীকার করতেই হবে। অপরদিকে নিচের ক্লাসের শিক্ষার্থীদের ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে পূর্ণ শিক্ষাদান প্রায় অসম্ভব। অধিকাংশ অভিভাবক এসকল ব্যবস্থায় অজ্ঞ ও অক্ষম। এমতাবস্থায় ভার্চুয়াল ক্লাসের সংখ্যা ও পরিধি যতই বৃদ্ধি করা হোক; সময়, শ্রম ও অর্থব্যয় যতই বৃদ্ধি করা হোক; সকল শিক্ষার্থীর কাছে অনলাইন ও বেতার-টিভির ক্লাস সফল করা সহসা সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না। তাই লেখাপড়া থেকে শিক্ষার্থীরা দূরেই থেকে যাচ্ছে।


বারবার ঘোষণা দিয়েও করোনার ভয়ে যাওয়া যাচ্ছে না খোলা যাচ্ছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যাওয়া যাচ্ছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ধারেকাছে। যদিও যাওয়া যাচ্ছে কারখানায়, গার্মেন্টসে, শপিংমলে, লঞ্চে, বসে, পার্কে, হাটে, মাঠে, ঘটে ও  অন্যান্য অনেক স্থানেই।   কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যতীত শিক্ষার্থীরাও যেতে পারছে সর্বত্র। দিতে পারছে আড্ডা, খেলতে পারছে গেম, করতে পারছে ঘুরাঘুরি, মারামারি এবং আরো অনেক কিছুই।  এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই দীর্ঘ ছুটিতে কেমন আছে শিক্ষার্থীরা? কেমন আছে আমাদের সন্তানেরা? কেমন আছে এদেশের ভবিষ্যত নাগরিকেরা? কেমন কাটছে তাদের দিন কাল? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এই দীর্ঘ ছুটিতে কোন দিকে যাচ্ছে তারা, কোন দিকে যাচ্ছে আমাদের দেশ?


একটু লক্ষ করলেই দেখা যাবে, বিভিন্ন উন্মুক্ত স্থানে বা অলিতে-গলিতে, ঝোপ-ঝাড়ে, মাঠে-ঘাটে, কালভার্টে অত্যন্ত গাদাগাদি হয়ে বসে/দাঁড়িয়ে আছে অনেক শিক্ষার্থী। সবার হাতে হাতে মোবাইল ফোন, সবার দৃষ্টি মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে, সবাই খেলছে অনলাইন গেম 'পাবজি' বা 'ফ্রি ফায়ার'। তারা এভাবেই কাটিয়ে দেয় দিন। কীভাবে যে সংসার চলে খোঁজ রাখে না তারা। বাবা-মা ভাই-বোন আত্মীয়-স্বজন কারোর খোঁজ রাখার সময় নেই, মানসিকতা নেই তাদের। এগিয়ে যেতে চায় না কারো বিপদে। এমনকি ফোন করলেও ধরে না, ধরলেও কথা লম্বা করে না। ফিরিয়ে ফোন করা তো অনেক দূরের কথা। দিনে দিনে তারা হয়ে উঠছে চরম স্বার্থপর! তাদের চাহিদা পূর্ণ করতে, তাদের মন খুশি রাখতে সদা ব্যস্ত-তটস্থ থাকতে হয় বাবা-মায়ের। প্রয়োজনীয় টাকার অভাব হলেই চড়াও হয় বাবা-মায়ের ওপর। কেউ কেউ বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ! 


এর চেয়েও ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে রাতে! সারারাত জেগে ছেলেমেয়েরা খেলছে এসব গেম এবং সাঁতরে বেড়াচ্ছে সারা পৃথিবীর পর্নো জগতে। ডুবে যাচ্ছে কূল-কিনারহীন  নীল নেশার অতল সাগরে। এসব অনলাইন খেলায় ও সীমাহীন পর্নো আদান-প্রদানে যোগ দেয় দেশ-বিদেশে অবস্থিত জানা-অজানা অনেক ছেলেমেয়ে। এভাবে তারা বিনিময় করে তাদের চিন্তা-চেতনা। একে আয়ত্ত করে, অনুসরণ করে, অনুকরণ করে অন্যের চলন-বলন। ধ্বংস করে নিজের পারিবারিক ও সামাজিক কৃষ্টি, কালচার, মূল্যবোধ। শিখে না অথবা ভুলে যায় আবশ্যকীয় ম্যানার্স এন্ড এটিকেটস।


অনেক শিক্ষার্থী জড়িয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন অপরাধকারী গ্যাং এর সঙ্গে। চলে গেছে অভিভাবকের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তারা সঙ্গবদ্ধ হয়ে করছে বিভিন্ন অপরাধ। গ্রুপে গ্রুপে করছে মারামারি। মেগাবাইট ও নেশাখাদ্য ক্রয়ের টাকা সংগ্রহের জন্য হানা দিচ্ছে নিজেদের ঘরে, অন্যের ফলের বাগানে, ফসলের মাঠে, মাছের পুকুরে, মুরগির ফার্মে, গাড়ির গ্যারেজে, পথচারীর পকেটে! এরই মধ্যে হয়তো একদল জড়িয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন আন্ডারগ্রাউন্ড সংগঠনের সঙ্গে। শিক্ষার্থীদের অবসর মস্তিষ্কে ঢুকে যাচ্ছে বিভিন্ন বৈধ-অবৈধ সংগঠনের মতাদর্শ এবং হিসাবহীন অর্থ হস্তগত করার নেশা।


সারারাত জেগে, সারাদিন ঘুমিয়ে মেজাজ খিটখিটে করে নিকটজনের সঙ্গে করছে খারাপ ব্যবহার। অমনোযোগী হয়ে গেছে লেখাপড়ায়। হারিয়ে ফেলছে সৃজনশীল চিন্তা করার ক্ষমতা। হয়ে পড়ছে চরম ধৈর্যহীন! কেউ কেউ হয়ে পড়ছে অত্যধিক হিংস্র! আবার কেউ কেউ হয়ে পড়ছে একেবারে নির্জীব। আক্রান্ত হয়ে পড়ছে চরম বিষন্নতায়। নিমজ্জিত হয়ে যাচ্ছে হতাশায়। হারিয়ে ফেলছে কর্ম উদ্যম। হয়ে যাচ্ছে নেশাগ্রস্ত!


নিকটজনের সঙ্গে যখন তখন করছে চরম দুর্ব্যবহার। সঠিকভাবে করছে না নাওয়া-খাওয়া। হচ্ছে না স্বাস্থ্য সচেতন। অর্জন করছে না রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। অর্জন করছে না প্রয়োজনীয় শক্তি-সাহস। চরমভাবে হয়ে পড়ছে দায়িত্ব-কর্তব্য হীন। নিজের প্রতি যেমন যত্ন নিচ্ছে না, তেমনি অন্যের প্রতি দায়িত্ব পালনে হচ্ছে না সচেতন। কারো অসুস্থতার খবর, মৃত্যুর খবর এদের মনে কোন প্রভাব ফেলে না। এসব এরা শুনে আর ভুলে যায়। এদের স্মরণশক্তি হ্রাস পাচ্ছে অতি দ্রুত। 


দেশের প্রতি তাদের কোন ভালবাসা তৈরি হচ্ছে না। জাতির প্রতিও কোন ভালবাসা তৈরি হচ্ছে না। সামাজিক দায়-দায়িত্ব থেকেও এরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। মননশীল বই থেকে সরে গেছে অনেক দূরে। জানে না তাদের পাঠ্য বইয়ের ও চ্যাপ্টারের নাম। অর্জন করছে না মনের উদারতা। তাদের অনেকেই আবার খেলার মাঠ থেকে চলে গেছে পথের ধারে বা অন্ধকার ঘরে। তারা নিচ্ছেনা সূর্যের আলোর পরশ, মুক্ত বাতাসের ছোঁয়া। দীর্ঘ ছুটিতে আমাদের ঘরে-বাইরে নিরবে তৈরি হচ্ছে শিক্ষাহীন এক অসার ও অপরাধী জেনারেশন। দ্রুত অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে দেশ ও জাতি!


এমতাবস্থায় আবারও সবিনয়ে বলছি, আর বৃদ্ধি করবেন না ছুটি। এবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিন। অন্ততপক্ষে করোনামুক্ত গ্রামসমূহের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরীক্ষামূলক ভাবে আগে খুলে দিন। গ্রামের একটি শিক্ষার্থীও যদি বিপথ থেকে মুক্ত থাকতে পারে, লেখাপড়ায় এগিয়ে যেতে পারে তো সে এদেশেরই সম্পদ হবে। গ্রামের অবস্থার অবনতি না হলে পর্যায়ক্রমে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিন। সেইসাথে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা নিন। সবই তো চলছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর বন্ধ থাকবে কেন? শিশু শিক্ষার্থীদের উপযোগী পর্যাপ্ত টিকা পাওয়া তো এখনো অনিশ্চিত। দেশের প্রায় পাঁচ কোটি শিক্ষার্থীর টিকা নিশ্চিত করতে যদি আরও কয়েক বছর সময় লাগে তো ততদিন কি বন্ধ রাখা হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান? যদি তাই হয় তো কোথায় গিয়ে ঠেকবে এ জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্ম? অদূর ভবিষ্যতে কাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে এ দেশ?


মো. রহমত উল্লাহ্ 

শিক্ষক, সাহিত্যিক ও কলামিস্ট

Email- rahamot21@gmail.com


কোনভাবেই গুজব ছড়াতে পারেন না কেউ বিশেষ করে শিক্ষক। ইত্তেফাক, ১০ জুন ২০২০

কোনভাবেই গুজব ছড়াতে পারেন না কেউ বিশেষ করে শিক্ষক। ইত্তেফাক, ১০ জুন ২০২০

 পত্রিকার লিংক

কোনভাবেই গুজব ছড়াতে পারেন না কেউ বিশেষকরে শিক্ষক  

-মো. রহমত উল্লাহ্

দৈনিক ইত্তেফাক >আলোকপাত, ১০ জুন, ২০২০

>গুজব ছড়ানো রাষ্ট্রীয় এবং ধর্মীয় কোনো দিক থেকেই সমর্থনযোগ্য নয়। কোনো সাধারণ বিবেকবান মানুষ এটি করতে পারেন না। যারা প্রকৃত ধর্মপ্রাণ, দেশপ্রেমিক ও মানবপ্রেমিক তারাতো কখনোই এটি করবেন না। গুজব ছড়ানো বা অপপ্রচার করা মানেই মিথ্যা বলা। ইসলাম ধর্মে বলা আছে, তোমরা নিশ্চিত না হয়ে কিছুই বলবে না এবং কোনো কিছুকে এক রত্তিও কমিয়ে বা বাড়িয়ে বলবে না। অন্য সব ধর্মই সমর্থন করে এই বক্তব্য। কেননা সব ধর্মমতেই মিথ্যা বলা মহাপাপ।


অথচ অনেকেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে প্রতিনিয়ত ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন অনলাইন বা সোসাল মিডিয়াতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চালাচ্ছে অনেক অপপ্রচার, ছড়াচ্ছে নানান গুজব। তারা অসত্ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বিষয়ের ভুল বা বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে ছড়াচ্ছে বিভ্রান্তি, দিচ্ছে উসকানি, তৈরি করছে অশান্তি! এসব আবার ভাইরাল করে অতি চালাকরা উপার্জন করছে অর্থ। সেগুলোকে দ্রুত লাইক ও শেয়ার দিচ্ছে তাদের গ্রুপভুক্ত সমমনারা। সেই সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কিছু শিক্ষক পদবিধারীরাও করছে হেন কাজ! এসব দেখে হুজুগে পড়ে, তথ্যসূত্রের নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত না হয়ে, গভীরভাবে চিন্তাভাবনা না করে, ভালোমন্দ বিবেচনা না করে, সেগুলোকে লাইক ও শেয়ার করে মিথ্যা তথ্য বা গুজব ছড়াচ্ছেন অনেক সাধারণ শিক্ষক।


এক্ষেত্রে অত্যন্ত সজাগ ও সতর্ক থাকা উচিত সব শিক্ষকের। ফেসবুক-মেসেঞ্জারসহ বিভিন্ন অনলাইন বা সোসাল মিডিয়াতে যা পাওয়া যায় তার সবই অন্ধের মতো বিশ্বাস করা, লাইক করা, শেয়ার করা কোনো বিবেকবান ও দায়িত্বশীল মানুষের তথা শিক্ষকের কর্ম হতে পারে না কোনোভাবেই। একটি সঠিক সংবাদ/সার্কুলার বিকৃতভাবে বা ভিন্ন কৌশলে উপস্থাপন করে অন্যকে উসকে দেওয়া অথবা বিভ্রান্ত করাও অপরাধ। শিক্ষকের সদাই মনে রাখতে হবে, তিনি একজন শিক্ষক। তার আছে অগণিত শিক্ষার্থী। সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি তার দায়িত্ব ও কর্তব্য সবচেয়ে বেশি। শুধু আইনের কাছে নয়, নিজের বিবেকের কাছেও তার জবাবদিহিতা অপরিসীম। তাই এমন কোনো কিছুকেই তিনি পোস্ট, লাইক ও শেয়ার দিতে পারেন না; যার দ্বারা সমাজে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে এবং যা আইনসিদ্ধ নয়।


যিনি মনেপ্রাণে শিক্ষক তিনি কোনোভাবেই কোনো অবস্থাতেই ছড়াতে পারেন না কোনো রকম অপপ্রচার বা গুজব। অন্যভাবে বলা যায়, যিনি গুজব ছড়ান তিনি প্রকৃতপক্ষে শিক্ষকই নন। নিয়োগপত্র পেলেই, ছাত্রছাত্রী পড়ালেই, বেতন-ভাতা পেলেই শিক্ষক হওয়া যায় না, শিক্ষক হয়ে উঠতে হয়। শিক্ষকতা চাকরি নয়, মহান ব্রত। অনেক কিছু পাওয়ার মধ্যে নয়, ভালো কিছু দেওয়ার মধ্যেই শিক্ষকতার আনন্দ ও সফলতা। শিক্ষকের থাকতে হয় সর্বোচ্চ সম্মানবোধ, ন্যায়নীতিবোধ ও সতাদর্শ।


লেখক :অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা


https://www.ittefaq.com.bd/print-edition/opinion/157044/%E0%A6%95%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A7%8B%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%87-%E0%A6%97%E0%A7%81%E0%A6%9C%E0%A6%AC-%E0%A6%9B%E0%A7%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%89

প্রবন্ধ - দান ও দানগ্রহীতার সম্মান। খোলা কাগজ, ০৭ মে ২০২১

পত্রিকার লিংক

দান ও দানগ্রহীতার সম্মান

খোলা কাগজ, ০৭ মে ২০২১

মো. রহমত উল্লাহ্


ইসলাম ধর্মের অন্যতম শিক্ষা হচ্ছে গরিব মানুষের প্রতি সদয় হওয়া, অসহায় মানুষকে সহায়তা দেওয়া, অনাহারী মানুষকে খাবার দেওয়া। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে- রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দানকারী আল্লাহর নিকটতম, বেহেশতের নিকটতম এবং মানুষের নিকটতম হয়ে থাকে। আর দূরে থাকে জাহান্নাম থেকে।' পবিত্র রমজান মাসে এই দানের সোয়াব ৭০ গুণ বৃদ্ধি করা হয়। পবিত্র কোরআন শরিফ নাজিলের এই রমজান মাসেই নবিজি সর্বাধিক দান-সদকা করতেন। তাই আমাদেরও উচিত নবিজিকে অনুসরণ করা।


সমাজের গরিব-দুঃখী অনাহারী মানুষের কষ্ট অনুভব করার জন্যই ফরজ করা হয়েছে রোজা। রোজার সময় আমরা সবাই অনুভব করতে পারি অনাহারে থাকার যন্ত্রণা! এই যন্ত্রণা অনুভব করেই আমাদের সহানুভূতিশীল হয়ে উঠতে হবে অনাহারী মানুষের প্রতি। বাড়িয়ে দিতে হবে সাহায্যের হাত। রোজার শিক্ষা হচ্ছে- নিজে ভোগ-বিলাস, লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ থেকে বিরত থাকা এবং অন্যের কল্যাণে তথা সাহায্য-সহযোগিতায় নিবেদিত থাকা। 


পবিত্র রমযানের এই শিক্ষা নিয়ে সচ্ছলরা প্রতিজ্ঞা করব যে, আমরা নিজেরা এগিয়ে যাব গরিব দুঃখী মানুষকে সহায়তা করার জন্য। আমরা নিজেরাই খোঁজ নিয়ে জানবো আমাদের পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে কারা অভাবগ্রস্ত আছেন। প্রকৃত অভাবিদের প্রতি আমরা আমাদের সাধ্যমত চুপি চুপি এগিয়ে দেবো সাহায্যের হাত। আমাদের অধীনস্থ শ্রমিক-কর্মচারী বা কাজের লোকদের প্রতিও আমরা সহানুভূতিশীল হব। তাদের আর্থিক অবস্থা জেনে প্রয়োজনে সাধ্যমত সহায়তা করব। সর্বক্ষেত্রেই বজায় রাখব সর্বাধিক গোপনীয়তা ও সাহায্য গ্রহীতার সম্মান।


এই করোনা মহামারীর কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অনেক মানুষ। একসময়ের অনেক সচ্ছল মানুষও এখন অসচ্ছল। সম্মানবোধের কারণে তারা হাত বাড়াতে পাচ্ছেন না সবার কাছে। আমাদের পরিচিত এমন কেউ থেকে থাকলে তাকে একান্ত গোপনে সাহায্য করবো এবং সচ্ছলদের বলবো তাকে সাহায্য করার জন্য। সম্ভব হলে পরিচিত ধনীদের কাছ থেকে সাহায্য সংগ্রহ করে পরিচিত গরিবদের পৌঁছে দিব। 


রাস্তাঘাটে ও হাটবাজারে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর অনেক বেশি সংখ্যক ভিক্ষুক দেখা যাচ্ছে। মহামারি করোনার কারণে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ায় ভিক্ষুকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা বারবার আমাদের সামনে হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকছে। আমাদের সাধ্যমত তাদেরকে সামান্য সাহায্য দিব। কাউকে সাহায্য দিতে না পারলেও তাকে অপমান করবো না, তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করব না। মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করাও মাহে রমজানের শিক্ষা। 


কাউকে আর্থিক সাহায্য দিয়ে তার নিকট থেকে বিনিময়ে কোন কিছু প্রত্যাশা করবো না। এমনকি সাহায্য গ্রহীতা আমার প্রতি অতিরিক্ত সম্মান প্রদর্শন করুক, নমনীয়তা প্রদর্শন করুক, এমন চিন্তাও করবো না। আমাদের দান-সাহায্যের বিনিময় আল্লাহর নিকট থেকেই প্রত্যাশা করব। আমরা সব সময় মনে রাখবো, গরিব মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করা মানে তাকে খুশি করা নয়, মহান আল্লাহকে খুশি করা। এই রোজার মাসে দান-সাহায্য করলে আল্লাহতালা অতি খুশি হন, অধিক পুরষ্কার প্রদান করেন। একজন রোজাদারকে সামান্য ইফতার করালেই একটি সহি রোজার সোয়াব দান করেন। তাই এই রমজান মাসে, এই করোনাকালে আমরা সর্বাধিক দান-সাহায্য করবো ইনশাআল্লাহ।


মো. রহমত উল্লাহ্

সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক এবং অধ্যক্ষ -কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

Email- rahamot21@gmail.com


http://ekholakagoj.com/epaper/m/187601/6094181d17d29




প্রবন্ধ - সর্বাত্মক লকডাউন এর বিকল্প। খোলা কাগজ, ২৭ এপ্রিল ২০২১

 পত্রিকার লিংক

সর্বাত্মক লকডাউনের বিকল্প



মো. রহমত উল্লাহ্ | 

খোলা কাগজ, ২৭ এপ্রিল ২০২১


বারবার সর্বাত্মক লকডাউন দেওয়া হলে অনাহারে মরে যাবে অনেক খেটে খাওয়া মানুষ। যারা একদিন উপার্জন করতে না পারলে না খেয়ে থাকতে হয় তারা ১০-১৫ দিন লকডাউন মানবে কেমন করে? কাজ করতে না পারলে কোথায় পাবে টাকা, কী খেয়ে বেঁচে থাকবে পরিবার-পরিজন নিয়ে? আমাদের দেশে তো দৈনিক খেটে খাওয়া মানুষের সংখ্যা অনেক। রিকশাচালক, ভ্যানচালক, গাড়িচালক, দোকানের কর্মচারী, হোটেলের কর্মচারী, গাড়ির হেলপার, রাস্তাঘাটের হকার, উন্নয়ন কাজের লেবার, সেলুনের কর্মী, জুতা সেলাই কর্মী, বাসা-বাড়ির কাজের বুয়া ইত্যাদি অনেক রকম খেটে খাওয়া মানুষ আছেন আমাদের দেশে যাদের পরিবার চলে তাদের দৈনিক আয়ের উপর। এক দিন সর্বাত্মক লকডাউন মানেই তাদের পরিবারের সবাই এক দিন না খেয়ে থাকা!

 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপ (২০১৭) অনুযায়ী, আমাদের দেশে মোট ৬ কোটি ৮ লাখ লোক মজুরির বিনিময়ে কোনো না কোনো কাজ করেন। এর মধ্যে ৫ কোটি ১৭ লাখ শ্রমিকের কাজ স্বাভাবিক অবস্থাতেই অনানুষ্ঠানিক বা অনিশ্চিত। করোনাকালে তাদের অবস্থা আরও অনেক বেশি ভয়াবহ! অগণিত ভিক্ষুকের অবস্থা তো আরও বেশি খারাপ! অপরদিকে বিশ্বব্যাংকের মতে, যাদের দৈনিক আয় ১০ ডলার থেকে ৫০ ডলারের মধ্যে তারা মধ্যবিত্ত। এই হিসাবে বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫ কোটি। উপার্জন বন্ধ থাকলে তারা না চাইতে পারেন, না খাইতে পারেন!


নিত্য খেটে খাওয়া মানুষের ক্ষুধার রাজ্যে নেই কোনো মরণের ভয়। একজন সেলুনকর্মী আমাকে বলছিলেন- ‘স্যার, কাজ না করলে খাব কী? না খেয়ে মারা গেলে সন্তান অভিশাপ দেবে, জাতির বদনাম হবে, দেশের বদনাম হবে। তারচেয়ে করুণায় মারা যাওয়া ভালো। কত রোগেই তো মারা যায় মানুষ। মাস্ক পরি, হাত ধুই, সেভলন লাগাই। চেষ্টা করি বেঁচে থাকার। বাকি আল্লাহর ইচ্ছা।’ তার এই অল্প কথায় নিহিত আছে অনেক কথা। নিহিত আছে পরিবার-পরিজনের প্রতি দায়িত্ববোধ, দেশ ও জাতির প্রতি সম্মানবোধ, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রতি আনুগত্য এবং নিজের উপার্জন খেয়ে বেঁচে থাকার ইচ্ছা। কিন্তু সর্বাত্মক লকডাউনে কোথায় পাবে সে কাস্টমার?


২০২০ সালে মাত্র ৫০ লাখ নিম্নবিত্ত পরিবারকে ২৫০০ টাকা হারে এককালীন অর্থ সাহায্য দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারও নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় এই সহায়তার পরিমাণ অত্যন্ত কম। তদুপরি বিপুল সংখ্যক শ্রমজীবী মানুষকে দিনের পর দিন প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা প্রদান করার সক্ষমতাও আমাদের নেই। তাই জীবিকার পথে বারবার দীর্ঘ লকডাউন এলে অনেকেরই না খেয়ে মরতে হবে নিশ্চিত। সেজন্যই ভাবতে হবে সর্বাত্মক কঠোর লকডাউনের বিকল্প।


লকডাউনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করা। অর্থাৎ জনসমাগম বন্ধ করা বা মানুষের সঙ্গে মানুষের শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করা। ২০২০ সালের শুরুর দিকে যখন আমরা করোনার ভয়ে তটস্থ ছিলাম, স্বেচ্ছায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে ছিলাম তখন আমাদের আক্রান্তের হার ছিল কম, মৃত্যুর হার ছিল দৈনিক ১০ থেকে ১৫ জন। পরে যখন আমরা উদাসীন হয়ে গেলাম, যত্রতত্র জমায়েত শুরু করে দিলাম, ছোটাছুটি শুরু করে দিলাম, আনন্দ উৎসব করতে শুরু করে দিলাম, মাস্ক পরিহার করলাম, হাত ধোয়া বন্ধ করলাম তখনই দেখা দিল ভয়াবহ রূপ! করোনায় আক্রান্ত হয়ে দৈনিক মৃত্যুর হার উঠে গেল এক শ’তে। আবার কঠোর লকডাউনে যেতে বাধ্য হলো সরকার।


আমরা নিজেরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলব না। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মরে গেলে সরকারকে দায়ী করব। সরকার লকডাউন দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে গেলেও আমরা মানতে চাইব না। দল বেঁধে বাড়িতে ছুটব, গাদাগাদি করে গাড়িতে চড়ব, ঠেলাঠেলি করে লঞ্চে উঠব, নিয়ম ভেঙে রাস্তায় নামব, সামান্য বিষয়ে অসামান্য বিবাদে জড়াব। আর সবকিছুর জন্যই সরকারকে দায়ী করব। কঠোর লকডাউন দিয়ে সরকার আমাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করলে আমরা কর্মহীন হয়ে যাব, অর্ধাহারে কষ্ট পাব, অনাহারে মারা যাব এবং এখানেও সরকারকেই দায়ী করব। এই দুরবস্থা তো বেশিদিন চলতে পারে না কোনোভাবেই।


আমাদের মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি, সরকারকেও ভাবতে হবে সর্বাত্মক লকডাউনের বিকল্প। যার টাকার প্রয়োজন সে ব্যাংকে যাবেই। যার চাল-ডাল প্রয়োজন সে বাজারে যাবেই। যার ভিক্ষা করা প্রয়োজন সে বাইরে বেরোবেই। যার যেখানে যাওয়ার প্রয়োজন সে সেখানে যাবেইÑ একদিন আগে হোক আর দুদিন পরে হোক। মালিক ও শ্রমিকরা যানবাহন চালাতে চাইবেই, কারখানা খোলা রাখতে চাইবেই, ব্যাংক-বীমা খোলা রাখতে চাইবেই, দোকানপাট খোলা রাখতে চাইবেই। ছাত্র-শিক্ষক স্কুল-কোচিংয়ে যেতে চাইবেই। এটাই বাস্তবতা, এটাই প্রয়োজনীয়তা। দীর্ঘদিন এসব বন্ধ রাখাও যাবে না, অল্পদিনে করোনামুক্ত হওয়াও যাবে না। এই মহামারী করোনা মোকাবিলা করেই এগিয়ে যেতে হবে আমাদের।


বাস্তবতার আলোকে প্রণয়ন করতে হবে পরিকল্পনা। ভেবে দেখতে হবে সপ্তাহে দুই দিন ২ ঘণ্টা করে ব্যাংক খোলা রেখে গাদাগাদি করে ২ হাজার মানুষের সেবা দেওয়া অধিক স্বাস্থ্যসম্মত নাকি মাসে প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা করে খোলা রেখে শারীরিক দূরত্ব বজায় ২ হাজার মানুষের সেবা দেওয়া অধিক স্বাস্থ্যসম্মত। এমন আরও অনেক প্রতিষ্ঠান ও ক্ষেত্র আছে যেগুলো বেশি সময় খোলা রাখলেও বেশি মানুষ যাবে না আবার কম সময় খোলা রাখলেও যাদের প্রয়োজন তারা যাবেই। এমন বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সার্বক্ষণিক খোলা/ চালু রাখার বিষয় বিবেচনা করা উচিত। আবার যে সকল ক্ষেত্র আংশিক চালু/ খোলা রাখা হলে আংশিক লোকের উপস্থিতি ঘটবে এবং যে সকল ক্ষেত্র সাময়িক বন্ধ রাখা হলেও মানুষের তেমন অসুবিধা হবে না সেগুলো চালু/ খোলা বা বন্ধ রাখার শিডিউল সেভাবেই প্রণয়ন করা উচিত। অর্থাৎ সর্বাত্মক লকডাউন পরিহার করে যে ক্ষেত্রে যখন যা না করলেই নয় তাই করা উচিত। ক্ষেত্র বিবেচনায় বিধি নিষেধ, লকডাউন, কঠোর লকডাউন, যাই দেওয়া হোক না কেন, থাকতে হবে জীবন ও জীবিকা দুই-ই বাঁচানোর সর্বাধিক যৌক্তিক প্রচেষ্টা।


সর্বোপরি সবাই মিলে সর্বত্র শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে বিদ্যমান স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। সেই সঙ্গে উদ্ভাবন করার চেষ্টা করতে হবে করোনাকে পরাস্ত করার অধিক কার্যকর কৌশল। অবশ্যই অতীতের মতো ভবিষ্যতেও বিজয়ী হবে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ।


মো. রহমত উল্লাহ্ : অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা

করোনামুক্ত গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগে খুলে দিন। jalalabad24.com, 06 May 2021

 পত্রিকার লিংক

করোনামুক্ত গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগে খুলে দিন

Jalalabad24.com  মে ৬, ২০২১ 



মো. রহমত উল্লাহ

মহামারি করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে শিক্ষাখাত। সরাসরি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে আমাদের প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থী। শিক্ষার ক্ষতি অত্যন্ত দীর্ঘমেয়াদী ও বিভিন্নমূখী হওয়ায় সাধারণভাবে চোখে পড়ে না অনেকেরই। শিক্ষাখাতে এমন কিছু ক্ষতি আছে যা আর কখনোই রিকভার করা সম্ভব হয় না।


দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় যে সকল শিক্ষার্থী স্থায়ীভাবে ঝরে পড়ে শিশুশ্রম ও বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে তাদের জীবন থেকে কখনোই আর মুছে দেওয়া সম্ভব হবে না এই ক্ষত। জানা যায়, ২০১৯ সালে প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার ছিল ১৭.৯ শতাংশ আর মাধ্যমিকে এই হার ছিল ৩৭.৬২ শতাংশ। ২০২১ সালে এই ঝরে পড়ার হার আরো বাড়বে এটাই নিশ্চিত। বিশেষ করে কন্যাশিশুরা এই ক্ষতির শিকার হয়েছে ও হবে সর্বাধিক। তাছাড়া অনেক বড় শিক্ষার্থীরাও পূর্ণ করতে পারেনি, পারবে না তাদের কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা। অর্জন হয়নি, হবে না তাদের প্রত্যাশিত যোগ্যতা এবং নিয়োগ পায়নি, পাবে না যথাযোগ্য কর্মে। অনেকের অবসর মস্তিষ্ক হয়েছে ও হবে শয়তানের আড্ডাখানা। হয়ত কোনদিনই আর সুপথে আনা যাবে না তাদের! ইত্যাদি নানামুখী কারণে দূর ও অদূর ভবিষ্যতে চরমভাবে ব্যাহত হবে জাতীয় অগ্রগতি এবং মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাবে বিশৃংখলা।


গত ০৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী সনাক্তের পর ১৭ মার্চ ২০২০ তারিখ থেকে বন্ধ হয়ে আছে আমাদের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিপর্যস্ত হয়ে আছে প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী ও তৎসংশ্লিষ্ট বেসরকারি শিক্ষকদের জীবন। শহরভিত্তিক কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাস পরিচালনা সম্ভব হলেও গ্রামে অবস্থিত বিপুল সংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তা সম্ভব হয়নি ইন্টারনেট সংযোগ, পর্যাপ্ত ডাটা ও ডিভাইজের অভাবে। গ্রামের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রয়োজনীয় আইসিটি দক্ষতা না থাকাও অনলাইন ক্লাস না হওয়ার আরো একটি কারণ। বিভিন্ন এলাকার কিছু সরকারি/প্রাইভেট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হাতেগোনা আকর্ষণীয় ভিডিও ক্লাস ব্যতীত অনলাইন ক্লাস এর ক্ষেত্রে সারাদেশের প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হয়েছে সর্বাধিক। এমনকি শহরের অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতেও অনুষ্ঠিত হয়নি অনলাইন ক্লাস।


টেলিভিশনে ও রেডিওতে কিছু ক্লাস সম্প্রচার হলেও তার সফলতার হার নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন মত। গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত গণসাক্ষরতা অভিযানের সমীক্ষায় দেখা যায় যে, প্রায় ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী দূরশিক্ষণে অংশ নিয়েছে। ব্র্যাকের একটি সমীক্ষা মতে, টেলিভিশন পাঠদানে ৫৬ শতাংশ শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। অর্থাৎ সরকারিভাবে পরিচালিত দূরশিক্ষণ কার্যক্রমের বাইরে অন্তত অর্ধেক শিক্ষার্থী। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, ৯২ শতাংশ শিক্ষার্থী দূরশিক্ষণের অধীনে এসেছে। আর স্কুল শিক্ষকদের মাধ্যমে অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে ৮৫ শতাংশকে লেখাপড়ার মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। বাস্তব অবস্থা হচ্ছে, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে সব শিক্ষার্থীর কাছে বেতার-টিভির ক্লাস পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। তদুপরি দীর্ঘ ছুটিকালে শিক্ষার্থীদের এসকল ক্লাসে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছেন অধিকাংশ অভিভাবক। বিশেষ করে গ্রামের অভিভাবকগণ শিক্ষার্থীদের ঘরে রাখতেই ব্যর্থ হচ্ছেন; ক্লাসে অংশগ্রহণ করানো তো আরো অনেক দূরের কথা।


গ্রামে অবস্থিত আমার আপন ছোট ভাই মো. ছানা উল্লাহ্ কিছুদিন পর পর ফোন করে জানাচ্ছে বিভিন্ন সমস্যা, জানতে চাচ্ছে স্কুল খোলার খবর। "ইস্কুল কবে খুলবে? আর তো পারি না! পোলাপান নিয়া খুব অশান্তিতে আছি! এগুলি সারাদিন কই যায়, কই থাকে, খুঁজে পাই না। কোন লেখাপড়া নাই। একটা কাজও করে না। কোন কথা শোনে না। খাওয়া-দাওয়া করে না। বাড়িতে থাকে না। এখানে সেখানে চলে যায়। খেলাধুলা করে, ঝগড়া-বিবাদ করে, মারামারি করে। খুব অশান্তিতে আছি! আর ভাল্লাগে না। ইস্কুল খোলা হবে কবে? কিসের করোনা? গ্রামে তো কোন করোনা দেখি না? সবাই হাটে যায়, বাজারে যায়, ক্যারাম খেলে, দোকানে আড্ডা দেয়। কেউ মাস্ক পরে না। গ্রামের ইস্কুল বন্ধ কেন? শুধু ইস্কুলেই কি করোনা? শহরে করোনা থাকলে শহরের ইস্কুল বন্ধ থাকুক। আপনি কী লেখালেখি করেন? সরকারকে বলেন, গ্রামের ইস্কুল খুলে দিতে। আমাদের পোলাপান তো শেষ! এগুলি আর কোন কাজেই লাগবে না!"


আমার এই ছোট ভাইয়ের কথাগুলো নিশ্চয়ই অধিকাংশ গ্রামীণ অভিভাবকের কথা। কেননা, এটি হচ্ছে আমাদের গ্রাম বাংলার প্রকৃত চিত্র। এটি অবশ্যই আমাদের জন্য অনেক বড় সুখবর ও সম্ভাবনা। এই সুযোগ ও সম্ভাবনাকে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগিয়ে শিক্ষা খাতের লাগাতার ক্ষতি কিছুটা হলেও ঠেকিয়ে দেওয়া সম্ভব ছিল এবং আছে। গত প্রায় ছয় মাস আগে থেকেই আমি বলে আসছি যে, অন্তত পরীক্ষামূলক ভাবে হলেও গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া হোক। বিশেষ করে যে সকল এলাকায় কোন করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি সে সকল এলাকার প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিয়ে পল্লী চিকিৎসকদের দ্বারা গঠিত একটি কমিটির মাধ্যমে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা যেতে পারে। অবস্থার অবনতি হলে আবার বন্ধ করে দেওয়া এবং অবনতি না হলে ধাপে ধাপে আরও অধিক প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যাবে। আমরা যে যা-ই বলি না কেন সরাসরি ক্লাসের শতভাগ বিকল্প নয় অন্য কোন পদ্ধতির ক্লাস।


দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অত্যন্ত অনটনে পড়ে গেছেন বেসরকারি ও প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ। ইতোমধ্যেই সাইনবোর্ড উঠে গেছে হাজার হাজার প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এবং বেকার হয়ে গেছেন লাখ লাখ প্রাইভেট শিক্ষক। অপরদিকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকগণ সামান্য সরকারি বেতন পেলেও অধিকাংশরাই প্রতিষ্ঠান থেকে পাচ্ছেন না তেমন কিছুই। কেননা, গ্রামের স্কুলগুলোতে ক্লাস বন্ধ থাকায় অভিভাবকগণ কোন টাকা দিচ্ছেন না। শহরকেন্দ্রিক যে কয়টি প্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাস হয় সেগুলোর অধিকাংশ অভিভাবকই টিউশন ফি দিতে চান না। এমতাবস্থায় সরকারি শিক্ষক যা-ই বলুক, বেসরকারি শিক্ষক ঐকান্তিক ভাবেই চাচ্ছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হোক। জীবন ও জীবিকার সমন্বয় সাধন করা হোক। পৃথিবী করোনামুক্ত হলে তারপর খুলে দেওয়া হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান; এমন চিন্তা করে বসে থাকলে চলবে না। মহামারি করোনাকে মোকাবিলা করেই এগিয়ে যেতে হবে আমাদের। অতীতেও অনেক প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে বিজয়ী হয়েছে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ।


এখন থেকে ১০০ বছর আগেও আজকের এমন পরিস্থিতিতে পড়েছিল পৃথিবী। আমেরিকার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের তথ্য মতে, বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ইউরোপে ও আমেরিকায় যক্ষায় মারা যেত প্রতি সাতজনে একজন। সেই মহামারি পরিস্থিতিতে শিশুরা যাতে নিরাপদে স্কুলে ফিরতে পারে তার সমাধান হিসাবে জন্ম নিয়েছিল খোলা মাঠে স্কুল ব্যবস্থা। তখনো অনির্দিষ্টকালের জন্য বিনষ্ট হতে দেওয়া হয়নি শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সময়।


জার্মানি ও বেলজিয়ামে ১৯০৪ সালে প্রথম চালু হয় ওপেন এয়ার স্কুল। হালকা ওজনের টেবিল ও চেয়ার নিয়ে যাওয়া হয় বাগানে। টিচাররা মাঠে বসে প্রকৃতির সান্নিধ্যে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে শুরু করেন। অল্পদিনের মধ্যেই এটি একটি আন্দোলন হিসাবে ছড়িয়ে পড়ে অন্য দেশে। চলতে থাকে শিক্ষা কার্যক্রম। প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করেও শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় খোলা মাঠে অনুষ্ঠিত ক্লাসে। ব্যাপক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায় শিক্ষার্থীরা। অথচ আরো অনেক পরে ১৯২১ সালে এসে আবিষ্কৃত হয় যক্ষার প্রতিষেধক টিকা। যা বিশ্বের সকল দেশে পৌঁছাতে সময় লাগে আরো বেশ কয়েক বছর। কিন্তু সে সময় পর্যন্ত থেমে থাকেনি শিক্ষা।


[জার্মানি ও বেলজিয়ামে ১৯০৪ সালে চালু হওয়া ওপেন স্কুলের ছবি।]


প্রয়োজনে আমাদের আবার ফিরে যেতে হবে সেই ১০০ বছর আগের পদ্ধতিতে। কেননা, শহরের কিছু প্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হলেও গ্রামে তা সম্ভব হচ্ছে না। তাই চরমভাবে পিছিয়ে পড়ছে গ্রামের শিক্ষার্থীরা! বর্তমানে আমাদের প্রায় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই রয়েছে পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ। প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই রয়েছে পর্যাপ্ত টেবিল চেয়ার ও বেঞ্চ। গ্রামে গ্রামে রয়েছে ছোট/বড় ঈদগাহ ও খেলার মাঠ। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষেই নিরাপদ দুরত্বে শিক্ষার্থীদের বসিয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব। যেখানে তেমন ব্যবস্থা অপ্রতুল সেখানে নেওয়া যেতে পারে ওপেন ফিল্ড ক্লাস। স্কুলে আনা যেতে পারে একেকদিন একেক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে মাস্ক পরিধানসহ সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। সেই গ্রামে/প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি অনুসারে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে বহিরাগতদের যাতায়াত। ক্লাস পরিচালনা সফল হলে পরীক্ষা নেওয়ার কথাও ভাবা যাবে এই পদ্ধতিতে।


শুধু সহকারি পরীক্ষা নয়, শ্রেণির পরীক্ষাগুলো নেওয়াও অত্যন্ত জরুরি। কোনভাবেই আর অটো প্রমোশন কাম্য নয়। অটোপ্রমোশনে উপরের ক্লাসে উঠে যাওয়া এমন অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা তাদের গতবারের পাঠ্যবইয়ের নামও বলতে পারবে না এখন! অটো প্রমোশন শিক্ষার্থীদের পাঠবিমুখ করে, মর্যাদাহানি করে, মূল্যমান কমায় ও হীনমন্যতায় ভোগায়। শতবর্ষ আগের অভিজ্ঞতায় আজও সম্ভব শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও পরীক্ষা পরিচালনা করা। প্রয়োজনে যুগোপযোগী করে নিতে হবে সেই পদ্ধতি। তাই আমি আবারো বলছি, স্থানীয় শিক্ষাপ্রশাসনের দায়িত্বে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে করোনামুক্ত গ্রামসমূহের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পরীক্ষামূলক ভাবে আগে খুলে দিন। কেননা, প্রত্যন্ত এলাকার একটি গ্রামের শিক্ষার্থীরাও যদি নিরাপদে থেকে সামান্য লেখাপড়া করতে পারে, কিছুটা এগিয়ে যেতে পারে তো লাভ এদেশেরই হবে।


মো. রহমত উল্লাহ

সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ

অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

Email- rahamot21@gmail.com

করণা মোকাবিলায় বিজয়ী হবে মানুষ। সমকাল, ০৪ মে ২০২১

পত্রিকার লিংক 

করোনা মোকাবিলায় মানুষের বিজয় হবেই

মো. রহমত উল্লাহ্

সমকাল, ০৪ মে ২০২১

সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষ নানান প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে টিকে আছে পৃথিবীতে। অস্তিত্বের লড়াইয়ে মাঝে মাঝে দু'এক পা পিছু হটলেও হেরে যায়নি বিলীন হয়ে যাওয়া প্রজাতির মত। স্রষ্টার দেওয়া মেধা কাজে লাগিয়ে সৃষ্টিজগৎ থেকেই উদ্ভাবন করেছে সৃষ্টিজগতের প্রতিকূলতা মোকাবিলা করার হাতিয়ার। উদ্ভাবন করেছে মহামারী ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বেঁচে থাকার কৌশল। সম্প্রসারিত করেছে জ্ঞান-বিজ্ঞান, অর্জন করেছে বিজয়। উন্মুক্ত করেছে এগিয়ে চলার নতুন নতুন দ্বার। 


অতীতের ধারাবাহিকতায় আমরাও সফল হব মহামারী করোনা মোকাবিলায়। এখানেও উদ্ভাবন করতে হবে সফল হাতিয়ার, প্রয়োগ করতে হবে সঠিক কৌশল। কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে এযাবৎ উদ্ভাবিত স্বাস্থ্যবিধি। সেই সাথে চলমান রাখতে হবে গবেষণা, ভরসা রাখতে হবে স্রষ্টায়। অবশ্যই অর্জিত হবে অধিক কার্যকর প্রতিরোধ। অর্জিত হবে মানুষের বিজয়। মনে রাখতে হবে, সামান্য অবহেলায় জীবন যাবে আমার ও আমার আপনজনের। সবাই সচেতন না হলে অস্তিত্বের সংকটে পড়বে মানবজাতি!


সকল ধর্মেই দেওয়া হয়েছে জীবন রক্ষার আদেশ। থাকতে বলা হয়েছে সতর্ক, নিতে বলা হয়েছে চিকিৎসা। শুধু দোয়ার কথাই বলা হয়নি, বলা হয়েছে দাওয়ার কথাও। স্রষ্টার কৃপায় সৃষ্টির উপাদানেই তৈরি হয় দাওয়া/ঔষধ। স্রষ্টার দেওয়া জ্ঞানেই করা হয় গবেষণা। ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের কোন বিরোধ নেই। যে চশমা দিয়ে পাঠ করা হয় ধর্মগ্রন্থের প্রিন্টেড বা অনলাইন ভার্সন, যে লাউডস্পিকারে বা মোবাইল ফোনে পরিবেশন করা হয় ধর্মের বাণী, যে কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয় ধর্মীয় পোশাক, সেসব বিজ্ঞানেরই আবিষ্কার। সুতরাং বিজ্ঞান মেনেই কিছুদিন হাত ধুয়ে, মাস্ক পরে, দূরে থেকে, ঘরে থেকে চালাতে হবে ভাইরাস মুক্ত থাকার চেষ্টা। সেইসাথে উদ্ভাবন করতে হবে আরও সহজ ও কার্যকর কৌশল।


বেশি দিন যাপন করা যাবে না ঘরবন্দি জীবন। অবশ্যই বেরোতে হবে জীবনের জীবিকায়। সেজন্যই সাময়িক ঘরবন্দি থেকে টিকিয়ে রাখতে হবে অস্তিত্ব। মাঝে মাঝে এক পা পিছিয়ে নিতে হবে দুই পা এগিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি। নিজের স্বার্থেই সবাইকে মেনে নিতে হবে সাময়িক লকডাউন। জীবন রক্ষার জন্য স্বীকার করে নিতে হবে কিছুটা কষ্ট। বেঁচে থাকলে আবার যাওয়া যাবে হাটে, ঘাটে, কর্মে, ক্লাবে, স্কুলে, পার্কে। উপভোগ করা যাবে পৃথিবীর অপার সৌন্দর্য। অবশ্যই আমরা এগিয়ে যাব নতুন উদ্যোমে। তাই নিয়ম মেনে, চিকিৎসা নিয়ে, জীবন রক্ষা করে অপেক্ষা করতে হবে সেই শুভদিনের এবং এগিয়ে যেতে হবে পরিকল্পিতভাবে।


লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুতে আতঙ্কিত হয়ে যেমন চুপসে গেলে চলবে না, তেমনি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে করা যাবে না অবহেলা। 'আমার কিছুই হবে না' এমন ভাবনা বয়ে আনতে পারে চরম অমঙ্গল! সদা সর্বত্র মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি, থাকতে হবে সতর্ক। অন্যকেও করতে হবে সচেতন, করতে হবে সহায়তা। কোনভাবেই হওয়া যাবে না স্বার্থপর। আত্মনিবেদিত থাকতে হবে অসহায় মানুষের কল্যাণে। মানব জাতির অস্তিত্ব রক্ষায় সকল ভেদাভেদ ভুলে মহামারি মোকাবিলায় সকল মানুষকেই থাকতে হবে সতর্ক ও সক্রিয়। অতীতের মতোই পরাস্ত করতে হবে মানব জাতির শত্রু, অর্জন করতে হবে যৌথ বিজয়। স্রষ্টার অশেষ কৃপায় হারেনি, হারবে না সৃষ্টির সেরা জীব 'মানুষ'।

মো. রহমত উল্লাহ্

কলাম লেখক, সাহিত্যিক এবং অধ্যক্ষ -কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।





প্রবন্ধ - গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিন। ০৪ মে ২০২১

পত্রিকার লিংক

গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিন

মো. রহমত উল্লাহ্ 

খোলা কাগজ, ০৪ মে ২০২১


মহামারী করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে শিক্ষাখাত। সরাসরি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে আমাদের প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থী। শিক্ষার ক্ষতি অত্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি ও বিভিন্নমুখী হওয়ায় সাধারণভাবে চোখে পড়ে না অনেকেরই। শিক্ষাখাতে এমন কিছু ক্ষতি আছে যা আর কখনই রিকভার করা সম্ভব হয় না। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় যে সকল শিক্ষার্থী স্থায়ীভাবে ঝরে পড়ে শিশুশ্রম ও বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে তাদের জীবন থেকে কখনোই আর মুছে দেওয়া সম্ভব হবে না এই ক্ষত। জানা যায়, ২০১৯ সালে প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার ছিল ১৭.৯ শতাংশ আর মাধ্যমিকে এই হার ছিল ৩৭.৬২ শতাংশ। ২০২১ সালে এই ঝরে পড়ার হার আরও বাড়বে এটাই নিশ্চিত। বিশেষ করে কন্যাশিশুরা এই ক্ষতির শিকার হয়েছে ও হবে সর্বাধিক। তাছাড়া অনেক বড় শিক্ষার্থীও পূর্ণ করতে পারেনি, পারবে না তাদের কাক্সিক্ষত শিক্ষা। অর্জন হয়নি, হবে না তাদের প্রত্যাশিত যোগ্যতা এবং নিয়োগ পায়নি, পাবে না যথাযোগ্য কর্মে। অনেকের অবসর মস্তিষ্ক হয়েছে ও হবে শয়তানের আড্ডাখানা ইত্যাদি নানামুখী কারণে দূর ও অদূর ভবিষ্যতে চরমভাবে ব্যাহত হবে জাতীয় অগ্রগতি।


গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর ১৭ মার্চ ২০২০ তারিখ থেকে বন্ধ হয়ে আছে আমাদের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিপর্যস্ত হয়ে আছে প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী ও তৎসংশ্লিষ্ট বেসরকারি শিক্ষকদের জীবন। শহরভিত্তিক কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাস পরিচালনা সম্ভব হলেও গ্রামে অবস্থিত বিপুল সংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তা সম্ভব হয়নি ইন্টারনেট সংযোগ, পর্যাপ্ত ডাটা ও ডিভাইসের অভাবে। গ্রামের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রয়োজনীয় আইসিটি দক্ষতা না থাকাও অনলাইন ক্লাস না হওয়ার আরও একটি কারণ। বিভিন্ন এলাকার কিছু সরকারি/ প্রাইভেট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হাতেগোনা আকর্ষণীয় ভিডিও ক্লাস ব্যতীত অনলাইন ক্লাস এর ক্ষেত্রে সারা দেশের প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হয়েছে সর্বাধিক। এমনকি শহরের অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতেও অনুষ্ঠিত হয়নি অনলাইন ক্লাস।


টেলিভিশনে ও রেডিওতে কিছু ক্লাস সম্প্রচার হলেও তার সফলতার হার নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন মত। গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত গণসাক্ষরতা অভিযানের সমীক্ষায় দেখা যায় যে, প্রায় ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী দূরশিক্ষণে অংশ নিয়েছে। ব্র্যাকের একটি সমীক্ষা মতে, টেলিভিশন পাঠদানে ৫৬ শতাংশ শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। অর্থাৎ সরকারিভাবে পরিচালিত দূরশিক্ষণ কার্যক্রমের বাইরে অন্তত অর্ধেক শিক্ষার্থী। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, ৯২ শতাংশ শিক্ষার্থী দূরশিক্ষণের অধীনে এসেছে। আর স্কুল শিক্ষকদের মাধ্যমে অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে ৮৫ শতাংশকে লেখাপড়ার মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। বাস্তব অবস্থা হচ্ছে, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে সব শিক্ষার্থীর কাছে বেতার-টিভির ক্লাস পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। তদুপরি দীর্ঘ ছুটিকালে শিক্ষার্থীদের এসব ক্লাসে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হচ্ছেন অধিকাংশ অভিভাবক। বিশেষ করে গ্রামের অভিভাবকগণ শিক্ষার্থীদের ঘরে রাখতেই ব্যর্থ হচ্ছেন; ক্লাসে অংশগ্রহণ করানো তো আরও অনেক দূরের কথা।


গ্রামে অবস্থানকারী আমার আপন ছোট ভাই কিছুদিন পর পর ফোন করে জানাচ্ছে বিভিন্ন সমস্যা, জানতে চাচ্ছে স্কুল খোলার খবর। ‘ইস্কুল কবে খুলবে? আর তো পারি না! পোলাপান নিয়া খুব অশান্তিতে আছি! এগুলি সারাদিন কই যায়, কই থাকে, খুঁজে পাই না। কোনো লেখাপড়া নাই। একটা কাজও করে না। কোনো কথা শোনে না। খাওয়া-দাওয়া করে না। বাড়িতে থাকে না। এখানে সেখানে চলে যায়। খেলাধুলা করে, ঝগড়া-বিবাদ করে, মারামারি করে। খুব অশান্তিতে আছি! আর ভাল্লাগে না। ইস্কুল খোলা হবে কবে? কীসের করোনা? গ্রামে তো কোনো করোনা দেখি না? সবাই হাটে যায়, বাজারে যায়, ক্যারাম খেলে, দোকানে আড্ডা দেয়। কেউ মাস্ক পরে না। গ্রামের ইস্কুল বন্ধ কেন? শুধু ইস্কুলেই কি করোনা? শহরে করোনা থাকলে শহরের ইস্কুল বন্ধ থাকুক। আপনি কী লেখালেখি করেন? সরকারকে বলেন, গ্রামের ইস্কুল খুলে দিতে। আমাদের পোলাপান তো শেষ! এগুলি আর কোনো কাজেই লাগবে না!’


আমার এই ছোট ভাইয়ের কথাগুলো নিশ্চয়ই অধিকাংশ গ্রামীণ অভিভাবকের কথা। কেননা, এটি হচ্ছে গ্রাম-বাংলার প্রকৃত চিত্র। এটি অবশ্যই আমাদের জন্য অনেক বড় সুখবর ও সম্ভাবনা। এই সুযোগ ও সম্ভাবনাকে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগিয়ে শিক্ষা খাতের লাগাতার ক্ষতি কিছুটা হলেও ঠেকিয়ে দেওয়া সম্ভব ছিল এবং আছে। গত প্রায় ছয় মাস আগে থেকেই আমি বলে আসছি, অন্তত পরীক্ষামূলকভাবে হলেও গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া হোক। বিশেষ করে যে সকল এলাকায় কোনো করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি সে সকল এলাকার প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিয়ে পল্লী চিকিৎসকদের দ্বারা গঠিত একটি কমিটির মাধ্যমে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা যেতে পারে। অবস্থার অবনতি হলে আবার বন্ধ করে দেওয়া এবং অবনতি না হলে ধাপে ধাপে আরও অধিক প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যাবে। আমরা যে যা-ই বলি না কেন সরাসরি ক্লাসের শতভাগ বিকল্প নয় অন্য কোনো পদ্ধতির ক্লাস।


দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনটনে পড়ে গেছেন বেসরকারি ও প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। ইতোমধ্যেই সাইনবোর্ড উঠে গেছে হাজার হাজার প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। বেকার হয়ে গেছেন লাখ লাখ প্রাইভেট শিক্ষক। অপরদিকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা সামান্য সরকারি বেতন পেলেও অধিকাংশই প্রতিষ্ঠান থেকে পাচ্ছেন না তেমন কিছু। গ্রামের স্কুলগুলোতে ক্লাস বন্ধ থাকায় অভিভাবকরা কোনো টাকা দিচ্ছেন না। শহরকেন্দ্রিক যে কয়টি প্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাস হয় সেগুলোর অধিকাংশ অভিভাবকই টিউশন ফি দিতে চান না। এমতাবস্থায় সরকারি শিক্ষক যা-ই বলুক, বেসরকারি শিক্ষকরা ঐকান্তিকভাবেই চাচ্ছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হোক। জীবন ও জীবিকার সমন্বয় সাধন করা হোক। পৃথিবী করোনামুক্ত হলে তারপর খুলে দেওয়া হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান; এমন চিন্তা করে বসে থাকলে চলবে না। মহামারী করোনাকে মোকাবিলা করেই এগিয়ে যেতে হবে আমাদের। অতীতেও অনেক প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে বিজয়ী হয়েছে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ।


এখন থেকে ১০০ বছর আগেও আজকের এমন পরিস্থিতিতে পড়েছিল পৃথিবী। আমেরিকার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের তথ্য মতে, বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ইউরোপে ও আমেরিকায় যক্ষ্মায় মারা যেত প্রতি সাতজনে একজন। সেই মহামারী পরিস্থিতিতে শিশুরা যাতে নিরাপদে স্কুলে ফিরতে পারে তার সমাধান হিসেবে জন্ম নিয়েছিল খোলা মাঠে স্কুল ব্যবস্থা। তখনো অনির্দিষ্টকালের জন্য বিনষ্ট হতে দেওয়া হয়নি শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সময়। জার্মানি ও বেলজিয়ামে ১৯০৪ সালে প্রথম চালু হয় ওপেন এয়ার স্কুল। হালকা ওজনের টেবিল ও চেয়ার নিয়ে যাওয়া হয় বাগানে। টিচাররা মাঠে বসে প্রকৃতির সান্নিধ্যে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে শুরু করেন।


অল্পদিনের মধ্যেই এটি একটি আন্দোলন হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে অন্য দেশে। চলতে থাকে শিক্ষা কার্যক্রম। প্রচ- শীত উপেক্ষা করেও শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় খোলা মাঠে অনুষ্ঠিত ক্লাসে। ব্যাপক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায় শিক্ষার্থীরা। অথচ আরও অনেক পরে ১৯২১ সালে এসে আবিষ্কৃত হয় যক্ষ্মার প্রতিষেধক টিকা। যা বিশ্বের সকল দেশে পৌঁছাতে সময় লাগে আরও বেশ কয়েক বছর। কিন্তু সে সময় পর্যন্ত থেমে থাকেনি শিক্ষা।


প্রয়োজনে আমাদের আবার ফিরে যেতে হবে সেই ১০০ বছর আগের পদ্ধতিতে। বর্তমানে আমাদের প্রায় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই রয়েছে পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ। প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই রয়েছে পর্যাপ্ত টেবিল চেয়ার ও বেঞ্চ। গ্রামে গ্রামে রয়েছে ছোট/ বড় ঈদগাহ ও খেলার মাঠ। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষেই নিরাপদ দূরত্বে শিক্ষার্থীদের বসিয়ে ক্লাস নেওয়া সম্ভব। যেখানে তেমন ব্যবস্থা অপ্রতুল সেখানে নেওয়া যেতে পারে ওপেন ফিল্ড ক্লাস। স্কুলে আনা যেতে পারে একেকদিন একেক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে মাস্ক পরিধানসহ সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। সেই গ্রামে/ প্রতিষ্ঠানে নিষিদ্ধ থাকতে হবে বহিরাগতদের যাতায়াত। ক্লাস পরিচালনা সফল হলে পরীক্ষা নেওয়ার কথাও ভাবা যাবে এই পদ্ধতিতে।


শুধু সহকারী পরীক্ষা নয়, শ্রেণির পরীক্ষাগুলো নেওয়াও অত্যন্ত জরুরি। কোনোভাবেই আর অটো প্রমোশন কাম্য নয়। অটো প্রমোশনে উপরের ক্লাসে উঠে যাওয়া এমন অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা তাদের গতবারের পাঠ্যবইয়ের নামও বলতে পারবে না এখন! অটো প্রমোশন শিক্ষার্থীদের পাঠবিমুখ করে, মর্যাদাহানি করে, মূল্যমান কমায় ও হীনম্মন্যতায় ভোগায়। শতবর্ষ আগের অভিজ্ঞতায় আজও সম্ভব শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও পরীক্ষা পরিচালনা করা। প্রয়োজনে যুগোপযোগী করে নিতে হবে সেই পদ্ধতি। তাই আবারো বলছি, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে অন্তত পরীক্ষামূলকভাবে হলেও আপাতত করোনামুক্ত গ্রামসমূহের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিন।


মো. রহমত উল্লাহ্ : অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা


http://m.kholakagojbd.com/public-opinion/76451