প্রবন্ধ - দান ও দানগ্রহীতার সম্মান। খোলা কাগজ, ০৭ মে ২০২১

পত্রিকার লিংক

দান ও দানগ্রহীতার সম্মান

খোলা কাগজ, ০৭ মে ২০২১

মো. রহমত উল্লাহ্


ইসলাম ধর্মের অন্যতম শিক্ষা হচ্ছে গরিব মানুষের প্রতি সদয় হওয়া, অসহায় মানুষকে সহায়তা দেওয়া, অনাহারী মানুষকে খাবার দেওয়া। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে- রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দানকারী আল্লাহর নিকটতম, বেহেশতের নিকটতম এবং মানুষের নিকটতম হয়ে থাকে। আর দূরে থাকে জাহান্নাম থেকে।' পবিত্র রমজান মাসে এই দানের সোয়াব ৭০ গুণ বৃদ্ধি করা হয়। পবিত্র কোরআন শরিফ নাজিলের এই রমজান মাসেই নবিজি সর্বাধিক দান-সদকা করতেন। তাই আমাদেরও উচিত নবিজিকে অনুসরণ করা।


সমাজের গরিব-দুঃখী অনাহারী মানুষের কষ্ট অনুভব করার জন্যই ফরজ করা হয়েছে রোজা। রোজার সময় আমরা সবাই অনুভব করতে পারি অনাহারে থাকার যন্ত্রণা! এই যন্ত্রণা অনুভব করেই আমাদের সহানুভূতিশীল হয়ে উঠতে হবে অনাহারী মানুষের প্রতি। বাড়িয়ে দিতে হবে সাহায্যের হাত। রোজার শিক্ষা হচ্ছে- নিজে ভোগ-বিলাস, লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ থেকে বিরত থাকা এবং অন্যের কল্যাণে তথা সাহায্য-সহযোগিতায় নিবেদিত থাকা। 


পবিত্র রমযানের এই শিক্ষা নিয়ে সচ্ছলরা প্রতিজ্ঞা করব যে, আমরা নিজেরা এগিয়ে যাব গরিব দুঃখী মানুষকে সহায়তা করার জন্য। আমরা নিজেরাই খোঁজ নিয়ে জানবো আমাদের পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে কারা অভাবগ্রস্ত আছেন। প্রকৃত অভাবিদের প্রতি আমরা আমাদের সাধ্যমত চুপি চুপি এগিয়ে দেবো সাহায্যের হাত। আমাদের অধীনস্থ শ্রমিক-কর্মচারী বা কাজের লোকদের প্রতিও আমরা সহানুভূতিশীল হব। তাদের আর্থিক অবস্থা জেনে প্রয়োজনে সাধ্যমত সহায়তা করব। সর্বক্ষেত্রেই বজায় রাখব সর্বাধিক গোপনীয়তা ও সাহায্য গ্রহীতার সম্মান।


এই করোনা মহামারীর কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অনেক মানুষ। একসময়ের অনেক সচ্ছল মানুষও এখন অসচ্ছল। সম্মানবোধের কারণে তারা হাত বাড়াতে পাচ্ছেন না সবার কাছে। আমাদের পরিচিত এমন কেউ থেকে থাকলে তাকে একান্ত গোপনে সাহায্য করবো এবং সচ্ছলদের বলবো তাকে সাহায্য করার জন্য। সম্ভব হলে পরিচিত ধনীদের কাছ থেকে সাহায্য সংগ্রহ করে পরিচিত গরিবদের পৌঁছে দিব। 


রাস্তাঘাটে ও হাটবাজারে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর অনেক বেশি সংখ্যক ভিক্ষুক দেখা যাচ্ছে। মহামারি করোনার কারণে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ায় ভিক্ষুকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা বারবার আমাদের সামনে হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকছে। আমাদের সাধ্যমত তাদেরকে সামান্য সাহায্য দিব। কাউকে সাহায্য দিতে না পারলেও তাকে অপমান করবো না, তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করব না। মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করাও মাহে রমজানের শিক্ষা। 


কাউকে আর্থিক সাহায্য দিয়ে তার নিকট থেকে বিনিময়ে কোন কিছু প্রত্যাশা করবো না। এমনকি সাহায্য গ্রহীতা আমার প্রতি অতিরিক্ত সম্মান প্রদর্শন করুক, নমনীয়তা প্রদর্শন করুক, এমন চিন্তাও করবো না। আমাদের দান-সাহায্যের বিনিময় আল্লাহর নিকট থেকেই প্রত্যাশা করব। আমরা সব সময় মনে রাখবো, গরিব মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করা মানে তাকে খুশি করা নয়, মহান আল্লাহকে খুশি করা। এই রোজার মাসে দান-সাহায্য করলে আল্লাহতালা অতি খুশি হন, অধিক পুরষ্কার প্রদান করেন। একজন রোজাদারকে সামান্য ইফতার করালেই একটি সহি রোজার সোয়াব দান করেন। তাই এই রমজান মাসে, এই করোনাকালে আমরা সর্বাধিক দান-সাহায্য করবো ইনশাআল্লাহ।


মো. রহমত উল্লাহ্

সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক এবং অধ্যক্ষ -কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

Email- rahamot21@gmail.com


http://ekholakagoj.com/epaper/m/187601/6094181d17d29




Previous Post
Next Post

About Author

0 মন্তব্য(গুলি):