সর্বাধিক যোগ্য শিক্ষক চাই

 পত্রিকার লিংক

*সর্বাধিক যোগ্য শিক্ষক চাই*

দৈনিক বাংলা, ১২ অক্টোবর ২৩

মো. রহমত উল্লাহ্

>স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন আমরা রচনা করেছি সেটি বাস্তবায়ন করার জন্য স্মার্ট নাগরিক অত্যাবশ্যক। দেশের মাটি নয়; মানুষ স্মার্ট হলেই স্মার্ট হবে দেশ।

পোশাকে নয়; চিন্তায়, চেতনায় ও কর্মে স্মার্ট হলেই স্মার্ট হবে মানুষ। কর্মে স্মার্ট হবার জন্য আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে হতে হবে পটু। অন্যভাবে বলা যায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক উৎকর্ষের সাথে সাথে দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি ও কর্মক্ষেত্রের জন্য যে যত বেশি যোগ্য হবে তাকেই তত বেশি স্মার্ট ধরা হবে। স্মার্ট মানুষের অবশ্যই থাকতে হবে অভিযোজন যোগ্যতা। তেমন অধিকযোগ্য মানুষ তৈরির জন্যই প্রয়োজন সর্বাধিক যোগ্য শিক্ষক। তা না হলে ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রভাবে দ্রুত পরিবর্তনশীল নতুন নতুন কর্মক্ষেত্রে এসে আমাদের শিক্ষার্থী তথা নাগরিকরা প্রত্যাশিত স্মার্টনেস বা যোগ্যতা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হবে এবং প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়বে। 


শিক্ষকতা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল কর্ম। সকল পেশার মানুষ তৈরি করেন শিক্ষক। এজন্যই তিনি সর্বজন শ্রদ্ধেয়। শিক্ষকের যোগ্যতা ও দক্ষতার উপরই নির্ভর করে অন্যান্য পেশার মানুষ কতটা যোগ্য ও দক্ষ হবেন। যে দেশের শিক্ষক যত বেশি যোগ্য ও দক্ষ সে দেশের সকল পেশার মানুষ তত বেশি যোগ্য ও দক্ষ। একজন কম যোগ্য শিক্ষক সারা জীবনে তৈরি করেন অগণিত অযোগ্য নাগরিক। বিপরীত ক্রমে একজন অধিক যোগ্য শিক্ষক সারা জীবনে তৈরি করেন অগণিত সুযোগ্য মানুষ।


সর্বাধিক মেধাবীদেরই সর্বাধিক যোগ্য শিক্ষক হবার সম্ভাবনা সর্বাধিক। কম মেধাবীদের প্রশিক্ষণ দিয়েও কাঙ্ক্ষিত মানে উন্নীত করা সম্ভব হয় না বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। উত্তম শিক্ষক হবার জন্য উত্তম মেধাবী হওয়ার পাশাপাশি আইসিটিতে ও সহশিক্ষায় পারদর্শী হওয়াসহ আরো অনেক উত্তম গুণের অধিকারী হতে হয়। থাকতে হয় যোগ্যতা দিয়ে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করার, দীক্ষা দিয়ে শিষ্যে পরিণত করার, গুণের পরশে গুণান্বিত করার, প্রেষণা দিয়ে উজ্জীবিত করার, সুশিক্ষা দিয়ে সুযোগ্য করার ও আদর দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার মতো দক্ষতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি।


অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে আমরা অনেকেই তা অনুধাবন করতে পারছি না। আমরা কম যোগ্য শিক্ষক দিয়ে সকল কাজের জন্য অধিক যোগ্য মানুষ গড়তে চাইছি। বাস্তবে তা কখনোই সম্ভব নয়। তাই সর্বাধিক মেধাবীদের শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করা অত্যাবশ্যক। অথচ সর্বাধিক মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করার জন্য আমাদের বাস্তব পদক্ষেপ মোটেও সন্তোষজনক নয়। সেই আদিকালের গুরুদের মতই কিছু না নিয়ে শুধু নিজেকে উজাড় করে দিবেন একজন শিক্ষক এমন মানসিকতা পোষণ করে বসে আছি এখনো। আমরা ভাবি না যে, অন্যান্য পেশাজীবীদের মতই শিক্ষকদেরও আছে পরিবার-পরিজন। তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্যও প্রয়োজন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, নিরাপত্তা, সামাজিকতা, আনন্দ-উৎসব ইত্যাদির।


দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের শিক্ষকদের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা অন্যান্য পেশাজীবীর তুলনায় অত্যন্ত কম থাকায় শিক্ষকতায় আসছেন না ও থাকছেন না অধিক মেধাবীরা। যারা সরকারি চাকরির জন্য বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন তাদের পছন্দক্রমের তলানিতে থাকে শিক্ষকতা। আর যারা বেসরকারি শিক্ষক হতে আসেন তাদের প্রায় সবারই সর্বশেষ আশ্রয়স্থল হয় এটি। যতক্ষণ বয়স থাকে ততক্ষণ তারা চেষ্টায় থাকে অন্য পেশায় যাওয়ার। অর্থাৎ অধিকাংশরাই অনিচ্ছায় বা কমিচ্ছায় শিক্ষক। তাইতো আমাদের দেশে আজ মনে-প্রাণে শিক্ষকের বড়ই অভাব। মনে-প্রাণে শিক্ষক হচ্ছে, চিন্তায় চেতনায় ধ্যানে জ্ঞানে মননে শিক্ষক। ছোটবেলা থেকে শিক্ষক হবার ইচ্ছায় শিক্ষক। নিজের ও মা-বাবার স্বপ্ন পূরণে শিক্ষক। শিক্ষক হবার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে শিক্ষক। শুধুমাত্র শিক্ষকতার জন্য শিক্ষক। তেমন শিক্ষক ব্যতীত সফল শিক্ষা সম্ভব নয়। 


বর্তমান যুগের চৌকশ শিক্ষার্থীদের সফল পাঠদানের মাধ্যমে বিশ্বমানের সুযোগ্য মানুষে পরিণত করার জন্য আধুনিক শিক্ষা সামগ্রী, বহুতল ভবন ও নতুন শিক্ষাক্রম যেমন প্রয়োজন এর চেয়েও অধিক প্রয়োজন সার্বিক বিবেচনায় সর্বাধিকযোগ্য শিক্ষক। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে যেকোনো মূল্যে সর্বাধিক যোগ্যদের আকৃষ্ট করতে হবে শিক্ষকতায়।<


মো. রহমত উল্লাহ্

সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ এবং অধ্যক্ষ - কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

rahamot21@gmail.com




Previous Post
Next Post

About Author

0 মন্তব্য(গুলি):