শিশুপাঠ্য গল্প- 'মার্বেল' -যায়যায়দিন- ১৫ জুন ২০১৬

IMG_20180425_152647_1


যায়যায়দিন- ১৫ জুন ২০১৬


মার্বেল


মো. রহমত উল্লাহ্‌


মার্বেল খেলছে চারজন। কনক, ঝলক, গগন, পবন। বটতলায় তাদের খেলার মাঠ।  উঠানের মতো টনটনে মাটি।  ঘাস বিহীন সমান জায়গা।  ছোট মার্বেল, ছোট মাঠ।


প্রথমে একের দানের খেলা। চারজনে জমা দেয় মার্বেল। যতোর দান ততোটি করে। একের দানে একটি করে। জমা হয় চারটি। মিলায় একের দান। খেলায় নামে কনক।সে এখন শিকারি। হাতে নেয় পাঁচটি মার্বেল। একের দানের চারটি। আর নিজের গুলি একটি। মোট পাঁচটি। দাঁড়ায় নির্ধারিত দাগে। মাঠে ছড়ায় চারটি মার্বেল। হাতে রাখে একটি। এটিকেই ছুড়তে হবে। এটির নামই গুলি। লাগাতে হবে মাঠের একটিতে। যেটি দেখাবে প্রতিযোগীরা। লাগাতে হবে ঠিক সেটিতেই। সেটির নাম শিকার। সাদা মার্বেলটি দেখায় একজনে। বলে, এটি শিকার। একমত হয় সবাই। শিকারে লাগলেই জিত। অন্যটিতে লাগলে হার। কোনটিতেই না লাগলে বাতিল। নিশানা ঠিক করে কনক। না, ঠিক থাকে না। কেঁপে ওঠে হাত। ভয় লাগে মনে। না পারার ভয়। নিশানা ঠিক করে আবার। ছুড়ে মারে। কেঁপে ওঠে হাত। না, লাগেনি। শিকারে লাগেনি। তাই জিতেনি। অন্যটিতেও লাগেনি। তাই হারেওনি। কোনটিতেই লাগেনি। তাই বাতিল হয় সে।শেষ হয়না একের দান। বদল হয়শিকারির পালা। শিকারি হয় অন্যজন। সরে যায় কনক। ভার হয় তার মন। কালো হয় তামাটে মুখ। চুপসে যায় চওড়া বুক।


এবার ঝলকের পালা। ঝলক এখন শিকারি। হাতে নেয় মার্বেল। একের দানের চারটি। সাথে নেয় নিজের একটি। এটি তার গুলি। দাঁড়ায় দাগে। ছড়ায় মার্বেল। চারটি মাঠে। আর গুলিটি হাতে। মাঠের লালটি দেখায় একজনে। বলে, এটি শিকার। এতে একমত হয় সবাই। গুলি ছুড়তে হবে এটিতেই। নিশানা ঠিক করে ঝলক। ভয় ভয় লাগে তার। নড়ে যায় নিশানা। আবার ঠিক করে। টুক টুক করে বুক। হাত কাঁপে। হারায় মনের জোর। ভাবে, পারবেনা। হারবে বা হারাবে দান। কিছুটা সময় নেয়। দম নেয় ঘনঘন। ছুড়ে মারে গুলি। আহ্ হা। লেগেছে অন্যটিতে। অন্যটিতে লাগলেই হারতে হয়। হারাতে হয় গুলি। হতে হয় বাতিল। হারাতে হয় পালা। হেরে গেছে ঝলক। হারিয়েছে তার গুলি। সেটি এখন দানের মার্বেল। দানে এখন পাঁচটি মার্বেল। শেষ হয়নি একের দান। জিতলেই শেষ হয় দান। নাহয় চলে আরো। আবার বদল হয় খেলোয়াড়।


এবার পালা গগনের। হাতে নেয় ছয়টি মার্বেল। একের দানের পাঁচটি। আর নিজের একটি। নিজেরটি তার গুলি। দাঁড়ায় দাগে। ছড়ায় দান। মাঠে পাঁচটি মার্বেল। নীল মার্বেলটি দেখায় একজনে। বলে, এটি শিকার। এতে সায় দেয় সবাই। নিশানা ঠিক করে গগন। ভয় পায়না মোটেও। হাসিখুসি মুখ।  ছুড়ে মারে গুলি। টুস। লাগে ঠিক শিকারে। হাহ্ হা। জিতে যায় গগন। কুড়ায় পাঁচটি মার্বেল। ঢোকায় নিজের পকেটে। শেষ হয় একের দান। কেউ জিতলেই দান শেষ।


এবার খেলবে পবন। দুয়ের দান। মার্বেল দেয় দুইটি করে। যতোর দান ততোটি করে। চারজনে দেয় আটটি। পবন হাতে নেয় নয়টি। আটটি দুইয়ের দানের। আর একটি তার গুলি। দাঁড়ায় দাগে। ছড়ায় দান। মাঠে আটটি মার্বেল। হলুদটি দেখায় একজনে। বলে, এটি শিকার। তাতে একমত হয় সবাই। নিশানা ঠিক করে পবন। ভাবে না তেমন। ভয় পায়না মোটেও। যেনো দুধভাত। যেনো জিতবেই। ছুড়ে মারে গুলি। টুস। লাগে ঠিক ঠিক। হাহ্ হা। জিতে যায় পবন। তুলে নেয় আটটি মার্বেল। পকেটে রাখে আর হাসে। শেষ হয় দুয়ের দান। কেউ জিতে গেলেই দান শেষ।


আবার কনকের পালা। সবার এক পালা শেষ। কনক খেলবে আবার। এবার তিনের দানের খেলা। মার্বেল দেয় চারজনে। একেকজনে দেয় তিনটি করে। বারোটি হয় দানের মার্বেল। তেরোটি মার্বেল কনকের হাতে। বারোটি তিনের দানের। আর একটি তার গুলি। দাঁড়ায় দাগে। ছড়ায় দানের মার্বেল। মাঠে বারোটি। কনকের হাতে একটি। সবুজ মার্বেলটি দেখায় একজনে। বলে, এটি শিকার। একমত হয় সবাই। হাত তাক করে কনক। ভাবে, জিততে হবে এবার। এটি তিনের দান। মার্বেল মোটামুটি বেশি। চারজনের খেলা। চারের বেশি দান নেই। চারের দানেই বেশি মার্বেল। তবে খেলবে পরের জন। তাই জিততে হবে এটিতেই। খেলতে হবে সাহস করে। যেমন খেলে গগন। যেমন জিতে পবন। ভয় পেলে চলবে না। ভয় পেলেই হারতে হয়। গগন পারে, আমিও পারবো। পবন পারে, আমিও পারবো। পারতেই হবে এবার। সাহসে ভরে ওঠে বুক। বেড়ে যায় গায়ের বল। অপলক বড় বড় চোখ। একটুও কাঁপে না হাত। বয়স তার সাত বছর। এখন মনে হয় সতেরো। ঠিক করে নিশানা। ভাবে, লাগবেই। ছুড়ে মারে গুলি। টুস। লাগে ঠিক শিকারে। হাহ্ হা। হুর রে। এবার জিতে যায় কনক।


এখন চারের দানের খেলা। খেলবে ঝলক।<


[সংশোধিত- নভেম্বর ২০১৭]


(শিশুদের জন্য লেখা এই গল্পটির কোন বাক্যে চারটির বেশি শব্দ নেই এবং কোন শব্দে যুক্ত বর্ণ নেই।)

Previous Post
Next Post

0 মন্তব্য(গুলি):