শিশুতোষ গল্প- 'চাকা'
চাকা
মো. রহমত উল্লাহ্
চাকা চালায় নিশাত। সাইকেলের পুরাতন চাকা। টায়ার নেই। টিউব নেই। ইসপুক নেই। কেবল রিং। দাদাভাই দিয়েছেন এটি। পুরাতন সাইকেলের রিং। নতুন রিং লাগিয়েছেন সাইকেলে। তাই পুরাতনটি বাতিল। এটি এখন নিশাতের খেলনা। নিশাত এটি চালায়। চালু করে হাতে ঠেলে। তারপর ঠেলে কাঠি দিয়ে। চলতে থাকে চাকা। ছুটতে থাকে নিশাত। দৌড়ায় চাকার পিছুপিছু। চষে বেড়ায় গ্রাম।
দীপনদের উঠানে আসে নিশাত। শুনা যায় কড়কড় কড়কড়। চাকা চালায় কয়েক পাক। দেখে দীপন। যায় পিছনে পিছনে। একটু চালাতে চায় সে। দেয় না নিশাত। আবার চায় দীপন। দেয় না নিশাত। আরো জোরছে চালায়। ভাব দেখায়। ডাঁট দেখায় খুব। চলে যায় অন্য দিকে। সবার উঠানে যায়। একা একা চালায়। দেয় না কাউকেই। আফসোস করে সবাই। জেদ লাগে দীপনের। তারও চাকা চাই।
বাবার কাছে যায় দীপন। বাবা, আমার চাকা চাই। নিশাতের চাকার মত। আমিও চালাতে চাই। চালাবো তার আগে আগে। আমাকে চালাতে দেয়নি নিশাত। মুখ খুলেন বাবা। পুরাতন চাকা পাবো কই? আমাদেরতো নতুন সাইকেল। বাতিল চাকা নেই। তাই দেওয়া যাবে না। শুনে, ফিরে আসে দীপন। ভাবে, কী করা যায়।
বাড়ির কাছেই বাজার। সেখানে যায় দীপন। যায় সাইকেল মেকারের দোকানে। চায় পুরাতন রিং। মেকার বলেন, নেই। দীপনদের পরিচিত মেকার। বলেন, পাওয়া গেলে রাখবো। পরে নিও। সহজে মিলে না। কে জানে কখন মিলে। বুঝতে পারে দীপন। পাওয়ার আশা নেই। ফিরে আসে বাড়িতে। ভাবে, কী করা যায়। কী করা যায়...। আসে দীপনের বোন। বসে গা ঘেঁষে। বলে, মন খারাপ করো না। সাহস রাখো। মাথা খাটাও। আরো খোঁজো। উপায় একটা হবেই।
পরদিন সকাল। স্কুলে যায় দীপন। দেখা হয় পলকের সাথে। কথা হয় চাকা নিয়ে। আসে শিপন। যোগদেয় সেও। কথা হয় তিনজনে। চাকা বানাতে বলে দীপন। খুলে বলে বানানোর কৌশল। একমত হয় সবাই। চাকা বানাবে তারা। সবার মুখে হাসি। সমবয়সী তিনজন। বয়স ছয় কি সাত। দেখতে সবার বড় দীপন। গায়ের রং তামাটে। সুঠাম দেহ। কালো চোখ। কালো চুল। চৌকশ চেহারা। সে বলে, ঠিক আছে। মনে থাকে যেনো।
দুইদিন পর। ছুটির দিন। একসাথে হয় তিনজন। দা নেয়। সূতা নেয়। যায় বনবাদাড়ে। ঢুকে অনেক ভিতর। তিনটি শাখ কাটে। ঘোরগিল গাছের শাখ। দীর্ঘ চিকন শাখ। আগা গোড়া এক রকম। পুরোটাই সরু। পুরোটাই মসৃণ। সহজেই বাঁকানো যায়। ভাঙে না। ফাটে না। মচকে না। চাকা বানানোর উপযোগী। তিনজনের হাতে তিনটি শাখ।
তারা ফিরে আসে জামতলায়। নিয়ে আসে শাখ গুলো। ছাঁটায় শাখের দুই মাথা। বাঁকা করে একটি। কৌশলে মিলায় দুই মাথা। ধরে দুই জনে। বাঁধে এক জনে। হয়ে যায় চাকা। নিশাতের চাকার চেয়ে বড়। হাহ্ হা। হেসে উঠে সবাই। বানায় আরেকটি। আরো বড়। বানায় আরো একটি। আরো বড়। সবার বড়টা নেয় দীপন।
এরপর কাটে জামের ডাল। তিনটি ডাল নেয়। গুলতির বাঁটের মতো। বানায় তিনটি হাতল। এমন হাতলেই চলে চাকা। বিশেষ চাকার বিশেষ হাতল। এখন সব রেডি। এখন সবাই খুশি। সবার মুখে হাসি। শুরু করে চাকা চালানো।
তিন জনে চালায় চাকা। ছুটে গ্রামের পথে পথে। যায় নিশাতদের উঠানে। চালাতে থাকে জোরছে। নিশাতও চালায় তাদের সাথে। শুরু হয় প্রতিযোগিতা। সবার আগে দীপন। দীপনের চাকা বড়। বড় চাকা বেশি চলে। সবার পিছনে নিশাত। নিশাতের চাকা ছোট। লোহার তৈরি। বেশ ভারি। তাই কম চলে। শরম লাগে তার। চালায় না সবার সাথে। বসে থাকে চুপচাপ। বুঝতে পারে দীপন। কেন নিশাতের মুখ ভার।
নিশাতের কাছে যায় দীপন। চালাতে দেয় নিজের চাকা। বলে, এই নাও। আমার বড়টি তুমি চালাও। সবার আগে যাও তুমি। প্রথম হও। তোমার ছোটটি আমাকে দাও। আজ তোমারটি আমি চালাই। আরেকটি বানিয়ে নিবো কাল। দীপনের কথায়
অবাক নিশাত। তাকায় দীপনের মুখের দিকে। মনে পড়ে আগের কথা। দীপনকে ডাঁট দেখানোর কথা। চাকা না দেওয়ার কথা। অনুতাপ জাগে। ভাবে মনে মনে। ডাঁট দেখানো ঠিক না। কখনো দেখাবে না ডাঁট।
একসাথে চাকা চালায় চারজনে। হাহ্ হা। হোহ্ হো। হুর্ রে। <
[সংশোধিত - নভেম্বর ২০১৭]
(শিশুদের জন্য লেখা এই গল্পটির কোন বাক্যে চারটির বেশি শব্দ নেই এবং কোন শব্দে যুক্তবর্ণ নেই।)
0 মন্তব্য(গুলি):