শিশুতোষ গল্প- 'আম কুড়ানো'

আম কুড়ানো


মো. রহমত উল্লাহ্


স্কুল থেকে ফিরছে দুই ভাই। তানভির, সাবির। পথে বিশাল সবুজ বাগান। বাগানে আম, জাম, কাঁঠালের গাছ। তাদের খুব পরিচিত এ বাগান। পাখির গান, গাছের ছায়া, রাখালের বাঁশি। খুব আপন এই গোপিন দাদার বাগ। এপথ ধরেই স্কুলে যাওয়া আসা তাদের।


গুড়ুম, গুড়ুম, গুড়ুম। ডাকছে আকাশ। নেমে এসেছে অনেক নিচে। হয়েছে আঁধার কালো। সাঁই, সাঁই, সাঁই। ছুটছে বাতাস। দোলছে সবুজ গাছপালা। বাড়ির দিকে ছুটছে তানভির, সাবির। না, বেশি দূর যাওয়া গেলো না। শুরু হলো ঝড়বাদল। দাঁড়ালো গরুর গোয়ালে। খড়ের উপর রাখলো বইখাতা। ভাবনায় পড়ে গেলো দুজন। কে জানে, কখন থামে এই ঝড়বাদল। ভয়ে ধুক ধুক করছে বুক।ণ


বৈশাখ মাসের বিকাল। আম পড়ছে গাছ থেকে। খেয়াল করলো তানভির। ছুটে গেলো আম কুড়াতে। সাথে গেলো সাবির। কে মানে ঝড়বাদল। জুড়ে দিলো গান। ‘আয় আয় ঝড়, আরো আম পড়’। ‘আয় আয় ঝড়, আরো আম পড়’। আম কুড়াতে লাগলো দুজন। খুশিতে উড়ে গেলো সব ভয়।


 গাছের পাতা ছিড়ে পড়ছে। উড়ছে খড়কুটা। গুরুম গুরুম ডাকছে আকাশ। চিলিক চিলিক করছে বিজলি। ঝম ঝম করে পড়ছে পানি। গায়ে যেনো বিঁধছে পানির ফোঁটা। বাতাসে নড়ছে ভিজা চুল। ভ্যা ভ্যা করছে মাঠের ছাগল। দড়ি ছিড়ে গোয়ালে যেতে চাইছে গরু। ভয় লাগছেনা তবু তানভির ও সাবিরের। আরো বেশি তোফান চাই। আরো আম পড়া চাই। ছোট আম নয়, বড় আম চাই।


 ছুটে যায় আরেক গাছের নিচে। না, বড় আম পড়েনি। ভাবে, ঝড় বাড়ছেনা কেনো। ছুটে যায় আরেক গাছের নিচে। সাবির পেয়ে যায় একটা আধাপাকা আম। সে আম খপ করে নেয় তানভির। কিছুটা মন খারাপ হয় সাবিরের।


 ছুটে যায় আরেক গাছের নিচে। খুব বড় বড় এ গাছের আম। তারা জানে, এটি কাচামিঠা গাছ। কাচাই মিঠা হয় এ গাছের আম। হুড়রে! পড়েছে অনেক। তবে কুড়ানো কঠিন। গাছের নিচে অনেক ছনবন, কাঁটাঝুপ। আম পড়েই গড়িয়ে যায় ঢালে। চলে যায় শেয়ালের গর্তে। হারিয়ে যায় ছনের নিচে। খুঁজতে গেলেই বিপদ! গর্তে আছে শেয়াল। বাইরে আছে বেতকাটা। তবে এখন লাগেনা শেয়ালের ভয়। টের পায়না কাঁটার আঘাত। দুইভাইয়ে চালায় আম কুড়ানো প্রতিযোগিতা। জমা করে অনেক আম।


 এখন ভাবনা, এত আম রাখবে কোথায়। বাড়িতে নিবে কীভাবে। দুজনেই চুপচাপ ভাবে কিছু সময়। হুররে, বলে লাফিয়ে উঠে সাবির। খুলে ফেলে গায়ের জামা। গিঁট দিয়ে বানিয়ে নেয় থলি। সেই থলিতে ভরে নেয় আম। একই কাজ করে তানভির। অবাক হয় সাবিরের কৌশল দেখে। সাবির ছোট। বয়স সাত। হালকা পাতলা গড়ন। গায়ের রং ফরসা। অনেক বুঝে। তানভির বড়। বয়স নয়। সবল দেহ। গায়ের রং তামাটে। খেলাধুলায় এগিয়ে। খুব মিল দুই ভাইয়ের। একে অপরের খেলার সাথী।


 কিছু সময় পর থামে ঝড়বাদল। দুজনেই হাতে নেয় আম আর বইখাতা। নেচে নেচে ফিরে আসে বাড়িতে। মাকে ডাকে তানভির। বলে, দেখো, কত আম নিয়ে এসেছি। তাদের দেখে খুশি হননি মা। বলেন, একি দশা হয়েছে তোমাদের! খালি গায়ে কেন? এভাবে ভিজেছো কেন? অসুখ হবে যে! আমের কি দরকার ছিলো? মায়ের কথায় মন খারাপ দুই ভাইয়ের।


 এমন সময় আসেন বাবা। কথা বলেন আরো রেগে। বলেন, এসবতো আমাদের গাছের আম নয়। বলো, কার গাছের আম? কী কাজ করেছো তোমরা! কার গাছের আম নিয়ে এসেছো? কথা বলছোনা কেনো? এবার মুখ খুলে সাবির। বলে, এসব গোপিন দাদুর গাছের আম। ঝড়ে পড়েছে। আমরা কুড়িয়ে এনেছি। গাছ থেকে পেড়ে আনিনি। সাবিরের কথায় আরো রেগে যান বাবা। বলেন, কুড়িয়ে এনেছো, তাতো বুঝলাম। যার গাছ তাঁকে বলে এনেছো? ঝড়ে পড়েছে বলে কি হয়েছে? গোপিনের আম কি তোমাদের হয়ে গেছে? না বলে এনেছো কেনো? যাও, এখনই নিয়ে যাও। গোপিনের আম গোপিনের বাড়িতে দিয়ে আসো।


 আমের পুটলি নিয়ে হাঁটা দেয় দুইভাই। এখন টের পায় সেই কাঁটার আঘাত! হাজির হয় গোপিনের বাড়িতে। তারা একই এলাকার মানুষ। একে অপরের খুবই পরিচিত। তবু তানভির সাবিরের মনে জাগে অপরাধ বোধ। ভয়ে কাঁপতে থাকে বুক। ভেবে পায়না কী বলবে। উঠানে দাঁড়িয়ে থাকে চুপচাপ।


 তাদের দেখে অবাক হয় গোপিন। ডেকে নেয় কাছে। আদর করে বসতে দেয় ঘরে। কেটে যায় তাদের ভয়। ঘটনা খুলে বলে সাবির। শুনে অভিভূত হয় গোপিনের বাড়ির সবাই। তাদের খইদই খেতে দেয় গোপিনের বউ। খুব মজা করে খায় দুইভাই। আমের পুটলি খালি করে গোপিনের ছেলে। রেখে দেয় ঝড়ে পড়া আমগুলো। দিয়ে দেয় পাকা পাকা ভাল ভাল আম। বিদায় দেয় গায়ে হাত ভুলিয়ে।


 হাসিমুখে তারা হাঁটা দেয় বাড়ির পথে। খুব খুশি লাগে তাদের। এ যেনো মহা বিজয়ের খুশি। ভাবে, না বলে আর কখনো ধরবেনা অপরের জিনিস।<


[সংশোধিত- নভেম্বর ২০১৭]


(শিশুদের জন্য লেখা এই গল্পটির কোন শব্দে যুক্তবর্ণ নেই এবং কোন বাক্যে ৮ টির বেশি শব্দ নেই।)

Previous Post
Next Post

0 মন্তব্য(গুলি):