শিশুতোষ গল্প- 'গুলতি'

গুলতি


মো. রহমত উল্লাহ্


আলো ঝলঝল সকাল। স্বপন হাতে নেয় গুলতি। পকেটে নেয় অনেক মারবেল। মার্বেলই গুলতির গুলি। বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। কথা বলে নিজে নিজে। পাখি শিকার করবোই আজ। ফিরবো না খালি হাতে। হাঁটে বাগানের দিকে। তার বয়স সাত বছর। সুঠাম দেহ। তামাটে গায়ের রং। কাল চুল। বড় চোখ। হাসি হাসি মুখ। চৌকস চেহারা। যেন, পাকা শিকারি।


আম জাম কাঁঠালের বাগান। সবুজে ভরপুর চারদিক। গাছে গাছে অনেক পাখি। ঐতো, একটা বুলবুলি। বসেছে পেয়ারা গাছে। তিড়িং বিড়িং করছে। কালছে গায়ের রং। পিছনে খানিকটা লাল। বাঁকা হয়ে দাঁড়ায় স্বপন। তাক করে গুলতি। নিশানা করে বুলবুলির লালে। ঠিক থাকেনা নিশানা। তিড়িং বিড়িং করে বুলবুলি। নড়ে যায় স্বপনের হাত। আবার ঠিক করে নিশানা। টানে গুলতির রাবার। ছুড়ে মারে মার্বেল। লাগেনা বুলবুলির গায়ে। উড়ে যায় ফুড়ুৎ করে। আফসোস করে স্বপন। ভাবে, তাড়াহুড়া ঠিক না।


আরো সামনে যায় স্বপন। দেখে, জামগাছে একটা দোয়েল। সাদাকালো গায়ের রং। লেজ নাড়ায় বার বার। গাছের নিচে যায় স্বপন। নিচেই একটা মাটির ঢিবি। দাঁড়ায় ঢিবিটার উপর। তাক করে গুলতি। ঠিক করে নিশানা। পায়ে কামড় দেয় পিঁপড়ায়। ইস! ব্যথা লাগে খুব। সয়ে নেয় সে ব্যথা। শিকারের নেশায় বিভোর এখন। সরে যায় অন্য ঢিবিতে। আবার ঠিক করে নিশানা। তাক করে গুলি। নিয়ে নেয় দম। বাড়ায় সাহস। ছুড়ে মারে মারবেল। টুস! লাগে ঠিক দোয়েলের গায়ে। উড়াল দেয় দোয়েল। বাড়ি খায় পাতায় পাতায়। পড়ে যায় নিচে। ঝাপটাতে থাকে ডানা। গর্বিত হয় স্বপন। শিকারে লাগাতে পেরেছে গুলি। খুশিতে ভরে ওঠে মন। ছুটে যায় দোয়েলের কাছে। ভয়ে পালাতে চায় দোয়েল। উড়তে চায়, উড়তে চায়। উড়ে যায় ফুড়ুৎ করে। আফসোস করে স্বপন। ইস, চলে গেলো! হয়তো তেমন লাগেনি গুলি। মারতে হবে আরো জোরে।


কুড়ড়, কুড়ড়, ডাকছে ঘুঘু। কোথায় ডাকছে? কোথায়? এদিক না। ওদিক না। উপরে তাকায় স্বপন। হুম, কাঁঠাল গাছে। নিচে গিয়ে দাঁড়ায়। তাক করে গুলতি। না। ঠিক হয় না নিশানা। কী করা যায়? কী করা যায়? খুব সাবধানে উঠে গাছে। বসে, ডালের গোড়ায়। কাত করে মাথা। দূরবিন করে চোখ। তাকায় ঘুঘুর দিকে। সাদাছাই গায়ের রং। কিছুটা ছিটছিট। কবুতরের মতো শরীরের গঠন। স্বপন তাক করে গুলতি। হ্যা। ঠিক আছে এবার। কুড়ড়, কুড়ড়, কুড়ড়। একমনে ডাকছে ঘুঘু। ফুলে উঠছে গলার লোম। খেয়াল করছে না কিছুই। স্বপন ভাবে, এটাই সুযোগ। ঠিক করে নিশানা। বাড়ায় বুকের বল। ভাবে, সফল হবেই এবার। খুব জোরে টানে গুলতি। ছুড়ে মারে মারবেল। শব্দ হয় টস করে। আহত হয় ঘুঘু। দপ দপ দপ। বাড়ি খায় পাতায় পাতায়। লুটিয়ে পড়ে মাটিতে।


তাড়াতাড়ি নেমে আসে স্বপন। ডানা ঝাপটাতে থাকে ঘুঘু। উড়তে পারেনা। গুলি লেগেছে খুব জোরে। কাছে থেকে দেখে স্বপন। কমে আসে ঘুঘুর ঝাপটানো। হেলিয়ে দেয় মাথা। তাকায় স্বপনের দিকে। হা, করে বার বার। যেন, বলছে বাঁচাও বাঁচাও। মায়া হয় স্বপনের। ভার লাগে বুক। অনুতাপ জাগে মনে। হাতে নেয় ঘুঘু। কাঁধে ঝুলায় গুলতি। ছুটে যায় পুকুর ঘাটে। পানি দেয় ঘুঘুর মুখে। এক ফোঁটা, দুই ফোঁটা। বসে থাকে অনেক সময়। কিছুটা সেরে ওঠে ঘুঘু। নাড়াতে শুরু করে চোখ। মাথা তুলে। বসে। দাঁড়ায়। হাঁটে। পাখা মেলে। আশার আলো দেখে স্বপন। উড়ে যেতে চায় ঘুঘু। বাধা দেয় না স্বপন। উড়াল দেয়। কিছু দূর যায়। মাটিতে বসে। উড়াল দেয় আবার। হাততালি দেয় স্বপন। আকাশে উড়ে যায় ঘুঘু।


স্বপন বসে থাকে চুপচাপ। মনে পড়ে মায়ের কথা। শিকার করা মায়ের নিষেধ। গুলতি হাতে নেয় স্বপন। দেখে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। দেখে বার বার। অন্যরকম লাগে গুলতিটা। ছুড়ে ফেলে দেয় পুকুরে।//


[সংশোধিত - নভেম্বর ২০১৭]


(শিশুদের এই গল্পটির কোন বাক্যে চারটির বেশি শব্দ নেই এবং কোন শব্দে যুক্তবর্ণ নেই।)


[29 January 2016 at 8am to 9am
Dinning Room, CCDB Home, Savar.]

Previous Post
Next Post

0 মন্তব্য(গুলি):