পরামর্শ
দুই ভাগে হোক বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ
মো. রহমত উল্লাহ্
প্রথম আলো > ১৪ আগস্ট ২০২১
বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে প্রত্যাশা ছিল অনেক। দীর্ঘদিন পর চাকরি পাবেন অনেক বেকার, পূর্ণ হবে প্রতিষ্ঠানের অনেক শূন্য পদ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হতাশায় পর্যবসিত হয়েছে সেই প্রত্যাশা। অর্ধলাখ শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আশায় বুক বেঁধেছিলেন অনেক নিবন্ধনধারী প্রার্থী। কিন্তু অর্ধেকও পূর্ণ হয়নি তাঁদের সেই আশা। তাঁদের অভিযোগ হচ্ছে, বিদ্যমান এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পুনর্নিয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়ার কারণে নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন নতুন প্রার্থীরা। অপর দিকে বিদ্যমান এমপিওভুক্ত নিবন্ধনধারী শিক্ষকগণের অভিযোগ হচ্ছে, তাঁদের সঙ্গে নতুন প্রার্থীদের আবেদন করার সুযোগ দেওয়ার কারণে তাঁরা অনেকেই পুনর্নিয়োগ পাননি বিধায় যেতে পারেননি কাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠানে। তাঁরা বঞ্চিত হয়েছেন পরোক্ষ বদলির এই সুযোগ থেকে। ক্ষতির শিকার হয়েছেন উভয় পক্ষই। অপর দিকে শূন্য পদ পূর্ণ না হওয়ায় ক্ষতির শিকার হয়েছে প্রতিষ্ঠান। অর্থাৎ সংঘটিত হয়েছে ত্রিমুখী ক্ষতি!
এনটিআরসিএর তৃতীয় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে ৮৯ লাখ আবেদন জমা পড়েছিল। নিয়োগ সুপারিশ পাওয়ার কথা ছিল ৫১ হাজার ৭৬১ জনের। কিন্তু নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে ৩৮ হাজার ২৮৬ জনকে। নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা যায়নি ১৫ হাজার ৩২৫ জনকে। এনটিআরসিএ জানায়, নারী কোটায় প্রার্থী না পাওয়ায় ৬ হাজার ৭৭৭ জনকে সুপারিশ করা যায়নি এবং আবেদন না পাওয়ায় ৮ হাজার ৪৪৮ জনকে সুপারিশ করা যায়নি। প্রার্থীদের অভিযোগ, সুপারিশপ্রাপ্ত ৩৮ হাজারের প্রায় অর্ধেক পদ ইনডেক্সধারীদের দখলে চলে গেছে। অর্থাৎ তাঁরা আগে থেকেই বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন এবং এমপিওভুক্ত আছেন। তাঁরা প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করেছেনমাত্র। এক প্রতিষ্ঠানের পদ শূন্য করে অন্য প্রতিষ্ঠানের শূন্য পদে নিয়োগ পেয়েছেন। মোট শূন্য পদ পূরণে কোনো ভূমিকা রাখেননি। ফলে এই বিশাল নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরও শূন্য রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার পদ, যা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়! প্রতিটি আবেদনের জন্য পৃথকভাবে ফি জমা দিয়ে একেকজন প্রার্থী ১০-২০টি আবেদন করেও নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আগামীতে হয়তো আবেদন করার বয়সই থাকবে না এদের অনেকের।
মূলত সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে একদিকে বিপুলসংখ্যক পদ শূন্য রয়েছে, অপর দিকে বিপুলসংখ্যক নতুন প্রার্থী নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এরূপ অযৌক্তিক প্রক্রিয়া চলতে থাকলে বারবার তৈরি হবে এমন চিত্র! বারবার প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন থেকে বঞ্চিত হবেন অনেক শিক্ষক, বারবার নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হবেন অনেক নতুন প্রার্থী, বারবার শূন্য থেকে যাবে অনেক অনেক পদ, প্রতিবারই অসন্তোষ বাড়তে থাকবে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের ওপর; যা কারও কাম্য হওয়া উচিত নয়। অথচ সামান্য সদিচ্ছা থাকলে এবং পরিকল্পনা করে এগুলে খুব সহজেই এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে বর্তমান নিয়োগ প্রক্রিয়াকে দুই ভাগে বিভক্ত করতে হবে। প্রতিবছর পৃথকভাবে সম্পাদন করতে হবে দুটি নিয়োগ প্রক্রিয়া। প্রথমে প্রদান করতে হবে শুধু এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পুনর্নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। এ ক্ষেত্রে কোনো নতুন প্রার্থী আবেদন করতে পারবে না। কেবল বিদ্যমান এমপিওভুক্ত ও নিবন্ধিত শিক্ষকগণই আবেদন করতে পারবেন। এদের পুনর্নিয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন সম্পন্ন করার পরবর্তী শূন্য পদ চিহ্নিত করতে হবে। সেই শূন্য পদে নতুন প্রার্থীদের নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে কোনো এমপিওভুক্ত শিক্ষক আবেদন করতে পারবেন না। কেবল নিবন্ধিত ও ননএমপিও প্রার্থীগণ আবেদন করবেন। তাঁদের নিয়োগের মাধ্যমে বিদ্যমান শূন্য পদগুলো পূর্ণ করা সম্ভব হবে। এভাবে প্রতিবছর বিদ্যমান এমপিওভুক্ত নিবন্ধিত শিক্ষকদের পুনর্নিয়োগের জন্য একটি এবং ননএমপিও নিবন্ধিত শিক্ষকদের নতুন নিয়োগের জন্য একটি করে মোট দুটি নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হলে অবশ্যই অনেকাংশে সমাধান হবে এই সমস্যার।
মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশের বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির দাবিটি তাঁদের প্রয়োজনের দিক থেকে খুবই মানবিক ও যৌক্তিক। এ কারণেই একাধিক এমপিও নীতিমালায় বদলির প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে একটি সুষ্ঠু নীতিমালা তৈরির মাধ্যমে বদলি বাস্তবায়ন করার জন্য বলা হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত বদলি নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা সম্ভব না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ শিক্ষকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেওয়া উচিত। কেননা, তাঁরা আগে নিয়োগ পেয়েছেন এবং অনেক দিন ধরে কষ্ট করে দূরে চাকরি করছেন। কোনোভাবেই নতুন নিয়োগ প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামানো উচিত নয় বদলিপ্রত্যাশী বিদ্যমান এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের।
*মো. রহমত উল্লাহ্, শিক্ষক ও কলাম লেখক
0 মন্তব্য(গুলি):