শিশুপাঠ্য গল্প- 'লাটিম' -নবারুণ- ফেব্রুয়ারি ২০১৮

গল্প- লাটিম -নবারুণ

http://dfp.portal.gov.bd/site/publications/c396f8a5-3dd5-492b-a54b-0d858cc216ed

নবারুণ- ফেব্রুয়ারি ২০১৮

লাটিম
মো. রহমত উল্লাহ্

লাটিম খেলা চলছে। একসাথে খেলছে তিনজন। কেউ সূতা প্যাঁচায়। কেউ ছুড়ে মারে। লাটিম ঘুরে। ঝিম ধরে। পুনপুন করে। কেউ হাতে নেয়। তালুতে রাখে। তালুতেই ঘুরে লাটিম। দেখতে খুব ভালো লাগে। পলাশের হাতে ঘুরে। বকুলের হাতে ঘুরে। তারা বাহাদুরি করে। তারা ডাট দেখায়। অপমান লাগে শিমুলের।

লাটিম ছুড়ে শিমুল। তেমন ঘুরে না। তাওড় খায়। পড়ে যায়। আবার হাতে নেয়। সূতা প্যাঁচায় লাটিমে। ছুড়ে মারে জোরছে। একটু ঘুরে। আগের মতই। পড়ে যায় হেলেদুলে। আবার মারে। পড়ে যায়। আবার মারে। আবার পড়ে যায়। মন ভার শিমুলের। মলিন ফরসা মুখ!

শিমুল পারে না। বলাবলি করে সবাই। হাসাহাসি করে সবাই। চাতুরি করে পলাশ। খোঁচা মারে বকুল। সমবয়সী সবাই। শরম লাগে শিমুলের। নুয়ে যায় দেহ। সুঠাম শিমুল। বয়স সাত। হয়ে যায় ছোট। জেদ হয়। নিজের উপর। নিজের লাটিমের উপর। চলে আসে বাড়িতে।

তাকায় লাটিমের দিকে। দেখে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। খেয়াল করে পেরেকটা। লাটিমের নিচের পেরেক। পেরেকেই ঘুরে লাটিম। হুম, পেয়েছি। কথা বলে নিজেই। পেরেকটা হয়ত বাঁকা। হুম, তাইতো। বাঁকাইতো। একটু বাঁকা আছে। তাই পড়ে যায়। ঘুরে না তেমন। পেয়ে গেছি কারণ! দেখা যাক এখন। কী করা যায়।

দোকানে যায় শিমুল। লাটিমের দোকান। পরখ করে লাটিম। একটা, দুইটা, তিনটা। চারটা, পাঁচটা, ছয়টা। সাতটা, আটটা, নয়টা। একে একে দেখে। অনেক গুলো দেখে। বাছাই করে একটা। কাঠ ভালো। আকার ভালো। গা সমান। লাল দাগ দেওয়া। পেরেক সোজা। যেমন চেয়েছে। নিয়ে আসে সেটি।

বাড়িতে আসে শিমুল। ছুটে যায় উঠানে। হাতে নতুন লাটিম। সূতা প্যাঁচায় লাটিমে। ছুড়ে মারে। ওয়াও! ঘুরছে। আবার সূতা প্যাঁচায়। আবার ঘুরায়। ওয়াও! কী মজা! ভালোই পারে। আবার করে। আরো ভাল পারে। আবার করে। আরো ভাল পারে। ঝিম ধরে লাটিম। ঘুরে পুনপুন করে। হাতে তুলে শিমুল। হাতের তালুতে লাটিম। ঘুরে আর ঘুরে। এভাবেই চলে অনুশীলন। হা হা, হা হা। কী মজা! কী মজা! অনুশীলনেই সফলতা।

তিনদিন পর। মাঠে যায় শিমুল। নেয় নতুন লাটিম। পলাশ আসে। বকুল আসে। সবার হাতে লাটিম। শুরু হয় ঘুরানো। চলছে প্রতিযোগিতা। একসাথে ছুড়ছে সবাই। ঘুরছে সবার লাটিম। তুলছে হাতের তালুতে। হাতেই ঘুরছে লাটিম! ঘুরছে তো ঘুরছে। পলাশের লাটিম থেমেছে। বকুলের লাটিম থেমেছে। শিমুলের লাটিম ঘুরছে। সবাইতো অবাক।

শুরু হলো আবার। একসাথে ছুড়ছে সবাই। ঘুরছে সবার লাটিম। তুলছে হাতের তালুতে। লাটিম ঘুরছে। সবার হাতে হাতে। বকুলের লাটিম থেমেছে। পলাশের লাটিম থেমেছে। তাদের মুখ মলিন। শিমুলের মুখে হাসি। হাতের তালুতে লাটিম। ঘুরছে তো ঘুরছে!

(শিশুদের জন্য লেখা এই গল্পটির কোন বাক্যে ৩টির বেশি শব্দ নেই এবং কোন শব্দে যুক্তাক্ষর নেই।)

[চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরেের মাসিক 'নবারুণ' এর ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সংখ্যয়]
Previous Post
Next Post

২টি মন্তব্য:

  1. দারুন!সহজ সরল ভাষায় অপূর্ব প্রকাশ।বাচ্চাদের উপযোগী।

    উত্তরমুছুন