দৈনিক জনকন্ঠ> ১৭ জুন ২০১৬
মিতুর পণ
জাকিয়া মায়িশা
ভোরে ঘুম থেকে ওঠে মিতু। যায় বাবার রুমে। বাবা জাগেননি এখনও। মনে হয় রাত জেগে ছিলেন। বাবার রাতজাগা নিষেধ। মিতু জানে। মানা করতে মন চায়। তবু মানা করে না। রাত না জেগে লিখবেন কখন। সারাদিন অফিস আর কাজ। বাবার লেখা খুব ভাল লাগে মিতুর। মাথার কাছে বসে থাকে চুপচাপ। ডাক দেয় না। হাত বুলায় বাবার চুলে। জেগে ওঠেন বাবা। কী মিতু মনি? মিতু বলে, আজ আমাদের রেজাল্ট দেবে। বাবা বলেন, ও তাই নাকি? খুব ভাল খবর। কি হবে তুমি, প্রথম না দ্বিতীয়? মিতু বলে, অবশ্যই প্রথম। তোমার মেয়ে না আমি। দ্বিতীয় হব কেন? বাবা বলেন, ভেরি গুড। মনে সাহস থাকা চাই। মনের বলই সবচেয়ে বড় বল। ঠিক আছে, রেডি হও। আমিও যাব তোমার সঙ্গে।
স্কুলের ড্রেস পরে রেডি হয় মিতু। বাবার আগেই চলে আসে খাবার টেবিলে। সব কিছুতেই আগে থাকে সে। ডাকে মাকে, মা তাড়াতাড়ি নাস্তা দাও। মা রুটি আর ডিম নিয়ে আসেন। মিতু বলে, ডিম খাব না। আলু ভাজি দাও। শুরু হয় মায়ের বকুনি। মেয়েটা ডিম, দুধ, শাক-সবজি একদমই খেতে চায় না। সবজি না খেতে না খেতে চোখের অবস্থা কী বানিয়েছে! একটুখানি মেয়ে, এত্তবড় চশমা। আমরা যখন ছোট ছিলাম...। মায়ের এসব কথার কোন জবাব দেয় না মিতু। ডাকে বাবাকে। বাবা, তাড়াতাড়ি কর। সাতটা বাজে। খাবার টেবিলে আসেন বাবা। বলেন, আহা হয়েছে তো। এবার থামাও তোমার ছোটবেলার ইতিহাস। দেখ, ক্লাস সেভেনে উঠেই শাক-সবজি খাওয়া শুরু করবে মিতু। তাই না মামুনি? খেয়ে নাও, খেয়ে নাও। এখন যা আছে তাই খাও। না হয় দেরি হয়ে যাবে। চটপট নাস্তা সেরে বেরিয়ে পড়ে দু’জন। বড় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে মিতু আর বাবা। আজও দেরি করছে স্কুল বাস। এখান থেকেই প্রতিদিন স্কুল বাসে উঠতে হয় মিতুকে। সকালে তাকে তুলে দিয়ে অফিসে যান বাবা। অনেক কষ্টকর মিতুর যাওয়া আসা। বান্ধবীরা যায় নিজেদের গাড়িতে। তারা সঙ্গে নিতে চায় মিতুকে। তাদের সঙ্গে যায় না সে। তার চেয়ে স্কুল বাসই ভাল। কাছে এসে থামে স্কুল বাস। মিতুর সঙ্গে বাসে উঠতে যান বাবা। বাবাকে নিতে রাজি হয় না বাসের লোকেরা। মন খারাপ হয় মিতুর। নেমে আসে বাস থেকে। রিক্সায় চড়ে দু’জন। বাবা বলেন, কী হতো আমাকে নিলে? বাসে তো সিট খালিই ছিল। মিতু বলে, বাবা, আমি ডাক্তার হয়ে তোমাকে একটা গাড়ি কিনে দেব। মিতুকে জড়িয়ে ধরেন বাবা। বলেন হ্যাঁ, তুমি অবশ্যই পারবে। মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। জানো, কোন্ সে স্বপ্ন? যে স্বপ্ন মানুষ জেগে জেগে দেখে। যে স্বপ্ন সফল করার জন্য মানুষ পণ করে, শ্রম দেয়, মেধা দেয়, মন দেয়, জেগে থাকে। তুমি যদি তাই কর তবেই সফল হবে তোমার স্বপ্ন। মুখ খুলে কিছুই বলে না মিতু। পণ করে মনে মনে।
স্কুলের গেটে এসেই দৌড়ে ভেতরে চলে যায় সে। বাইরে অপেক্ষা করেন বাবা। রেজাল্ট নিয়ে বেরিয়ে আসে সবাই। মিতু আসে না। দারোয়ানকে বলে ভেতরে যান বাবা। দেখেন, করিডরে দাঁড়িয়ে আছে মিতু। চুপিচুপি গিয়ে মিতুর মাথায় হাত রাখেন বাবা। বাবাকে দেখেই কেঁদে ওঠে মিতু। বলে, বাবা আমি ফার্স্ট হতে পারিনি। সেকেন্ড হয়েছি। হরতালে স্কুল মিস হয়েছিল কয়েকদিন। তাই হাজিরায় কম পেয়েছি এক নম্বর। মিতুকে জড়িয়ে ধরেন বাবা। বলেন, তাতে কী হয়েছে? এটা তো ফার্স্ট টার্ম। সেকেন্ড টার্মে তুমি দুই নম্বর বেশি পেলেই তো ফাইনালে ফার্স্ট। মনে মনে পণ করে মিতু, ফাইনালে ফার্স্ট হবেই হবে তাকে।
৭ম শ্রেণী, ক্যাডেট নং-৬০১
ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজ, ফেনী
- See more at: https://www.dailyjanakantha.com/details/article/198333/%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A6%A3#sthash.2EpmPgiR.dpuf
0 মন্তব্য(গুলি):