প্রবন্ধ- 'সাত লাখ আসন ফাঁকা থাকার দায় কার?' -দৈনিক শিক্ষা- ২১ জুন ২০১৬
সাত লাখ আসন ফাঁকা থাকার দায় কার?
মো. রহমত উল্লাহ্ | দৈনিক শিক্ষা ডট কম। জুন ২১, ২০১৬ | মতামত
Rahamat Ullah
মো. রহমত উল্লাহ্
>দৈনিক শিক্ষায় একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়-`দেশে বিদ্যমান সাড়ে ৪ হাজার উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ও মাদ্রাসার মধ্যে সাড়ে ৭শ’ প্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ ২০টি করে ভর্তির আবেদন জমা পড়েছে। মোট প্রতিষ্ঠানের হিসাবে এটা সাড়ে ১৬ শতাংশ।
মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১৪ লাখ ৫৫ হাজার ৩৬৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে এবার ১৩ লাখ ১ হাজার ৯৯ জন কলেজ-মাদ্রাসায় ভর্তির আবেদন করে। সরকারি হিসাবে, এবার সরকারি-বেসরকারি কলেজগুলোতে একাদশে ভর্তিতে ২১ লাখ ১৪ হাজার ২৬৫টি আসন রয়েছে।
শিক্ষার্থী অনুসারে প্রায় ৭ লাখ আসন এবার ফাঁকা থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, `উল্লিখিত সাড়ে ৭শ প্রতিষ্ঠান যদি এমপিওভুক্ত হয়ে থাকে, তাহলে এসব প্রতিষ্ঠানের পেছনে বছরে গচ্চা যাবে অন্ততপক্ষে ১২৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা। কেননা, এসব প্রতিষ্ঠানে সর্বনিম্ন ৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী থাকার কথা। কিন্তু এখন শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যা হবে বেশি। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. আশফাকুস সালেহীন বলেন, সাধারণত একটি কলেজকে স্বীকৃতি বিশেষ করে এমপিও পেতে হলে ৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী থাকতে হয়। যেহেতু নানা ‘ফ্যাক্টরের’ কারণে চাইলে এসব প্রতিষ্ঠানের পাঠদান বাতিল করতে পারি না। তাই আমরা সাধারণত চিহ্নিত এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে ‘ওয়ার্নিং’ (সতর্কতা) দেই। এবারও সেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।‘
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এত ফাঁকা আসন সৃষ্টি/বৃদ্ধি করা হলো কেন? এমতাবস্থায় সকল কলেজ কাম্য শিক্ষার্থী পাবে কীভাবে?
কলেজ পরিদর্শক একদিকে কিছু কলেজে অতিরিক্ত আসন বাড়াবেন আর অন্যদিকে কিছু কলেজে আরো শিক্ষার্থী বাড়াতে বলবেন তা কি যৌক্তিক? তদুপরি আরো নতুন নতুন সাধারন কলেজ, কারিগরি কলেজ, মাদ্রাসা অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে কেন? কেন পুরাতন এত প্রতিষ্ঠান রেখে তার পাশেই নতুন করে প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে সরকারি কলেজ?
একটা উদাহরণ দিই, ঢাকার মোহাম্মদপুরে তো কলেজের কোন অভাব ছিল না, তা হলে “ঢাকা উদ্যান সরকারি কলেজ” নামে গত বছর কেন নতুন করে তৈরি করা হলো আরো একটি কলেজ? এবার কেন আবার সাতমসজিদ রোডের একটি কারিগরি প্রতিষ্ঠানকে করা হলো “মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজ” নামে সাধারণ সরকারি কলেজ? এটি যদি করাই হবে তো এত এত টাকা ব্যয় করে গত বছর কেন তৈরি করা হলো “ঢাকা উদ্যান সরকারি কলেজ”?
এর আগেও ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কজেজের পেটের ভিতরে তৈরি করা হলো মোহাম্মদপুর মডেল কলেজ। যার ঠিক উলটা পাশেই অবস্থিত আল হেরা কলেজ। আশেপাশেই অবস্থিত আরো ৮/১০টি কলেজ, মাদ্রাসা এবং স্কুল এন্ড কলেজ। এরপরও কেন এই মোহাম্মদপুরেই অনুমতি দেওয়া হচ্ছে মাইল স্টোনের ক্যাম্পাস? একই এলাকায় এত কলেজ হলে কীভাবে পূর্ণ হবে সবার আসন? এত এত সরকারি কলেজ, মডেল কলেজ, মিশন কলেজ, স্কুল এন্ড কলেজ, বিশেষ কলেজ, প্রাইভেট কলেজ, কারিগরি কলেজ, মাদ্রাসা যে এলাকায় থাকবে সে এলাকায় এমপিও কলেজে সিট ফাঁকা থাকাটা কি খুবই অস্বাভাবিক? এই সিট ফাঁকা থাকার দায় কি কেবল এমপিও কলেজের? যারা একই এলাকায় এত কলেজ অনুমোদন দিল তাদের কি কোনই দায় নেই? কেন কলেজ শিক্ষকগণ ছুটবেন শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি? সরকারের পরিকল্পনা হীন কাজের জন্য পস্তাবে কেন শিক্ষকগণ?
এমনি ভাবে সারা দেশেই অপরিকল্পিত ভাবে সাধারণ কলেজ, কারিগরি কলেজ ও মাদ্রাসা অনুমোদন দিয়ে এবং এমপিও দিয়ে জামেলা পাকিয়ে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। তাই এখন ফাঁকা থাকছে এত আসন। কম/শূন্য ছাত্রের কলেজগুলো যদি বাঁচিয়ে রাখার সদিচ্ছা থাকে, তো বড় কলেজগুলোর আসন এখনই কমিয়ে দেওয়া এবং ছোট কলেজগুলোর প্রতি আরো বেশি নজর দেওয়া উচিৎ কর্তৃপক্ষের।
লেখক: শিক্ষাবিদ এবং অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
0 মন্তব্য(গুলি):