যে করেই হোক বন্ধ করতে হবে সনদ জালিয়াতি

যে করেই হোক বন্ধ করতে হবে সনদ জালিয়াতি

পত্রিকার লিংক 


যে করেই হোক বন্ধ করতে হবে সনদ জালিয়াতি 

মো. রহমত উল্লাহ্

দৈনিক বাংলা, o৩ মে ২০২৪

>সম্প্রতি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কম্পিউটার সেলের সিস্টেম এনালিস্ট এ কে এম শামসুজ্জামান সনদ জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে। সনদ জালিয়াতির ব্যাপারে তার স্বীকারোক্তি ও জবানবন্দীর পরিপ্রেক্ষিতে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সদ্যসাবেক চেয়ারম্যান আলী আকবর খান এর স্ত্রী সেহেলা পারভীনকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রয়োজনে আলী আকবর খানকেও গ্রেফতার করা হতে পারে। সেহেলা পারভীন সিস্টেম অ্যানালিস্ট এর সঙ্গে অবৈধ অর্থ লেনদেনের কথা স্বীকার করেছে। জানা গেছে আসামি একে এম শামসুজ্জামান বিপুলসংখ্যক জাল সার্টিফিকেট তৈরি করে দেশব্যাপী বিভিন্ন সার্টিফিকেট প্রত্যাশীদের কাছে বিক্রি করে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে আপলোড করেছে। অর্থাৎ সার্টিফিকেট জালিয়াতির কাজটি এমনভাবেই করা হয়েছে যে বোর্ডের ওয়েবসাইটে যাচাই করেও জাল সনদ চিহ্নিত করার কোন উপায় নেই! এমতাবস্থায় কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সকল সনদ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক নয় কি? যারা কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে প্রকৃতপক্ষে শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে বৈধ সনদের অধিকারী হয়েছেন তারাও এখন লজ্জিত, অপমানিত ও বিক্ষুব্ধ। বৈধ সনদের অধিকারীরাই অপরাধীদের বিরুদ্ধে সর্বাধিক সোচ্চার হওয়া উচিত এবং এটি তাদের নৈতিক দায়িত্ব। 


যোগ্যতার সনদ জালিয়াতি বাস্তবে একটিমাত্র অপরাধ নয়; অনেক অনেক অপরাধের সূত্রপাত। জাল সনদ প্রদানকারী ও গ্রহণকারী উভয়ই অপরাধী। জাল সনদ গ্রহণকারী জাল সনদ ব্যবহার করে সারা জীবনে যাই করুক সবই অপরাধ। সে নিজেকে এ সনদ অর্জনকারী বলা অপরাধ, এই সনদ কোথাও দাখিল করা অপরাধ, এ সনদ দ্বারা চাকরির আবেদন করা অপরাধ, এ সনদ দ্বারা একজন যোগ্য লোককে বঞ্চিত করা অপরাধ, এ সনদ দ্বারা চাকরি করা অপরাধ, এ সনদে প্রাপ্ত কর্মের/ চাকরির আয় অবৈধ, এ আয় দ্বারা জীবনযাপন অপরাধ, এ আয় খেয়ে ইবাদত নিষ্ফল, এ সনদের যোগ্যতা ও কর্ম দেখিয়ে বৈবাহিক সম্পর্ক করা অপরাধ! এমন আরো অনেক অনেক অপরাধের অংশীদার কিন্তু সেই অবৈধ সনদ প্রদানকারীও। একজন অবৈধ সনদ প্রদানকারী কিন্তু বহু জনকে বহু অবৈধ কাজের সুযোগ সৃষ্টিকারী! সে হাজারো অপরাধের সূত্রপাত ঘটায়! সে অনেক মানুষের সারা জীবনের জন্য নৈতিক স্খলন ঘটায়! কেননা তার দেওয়া অবৈধ সনদ দ্বারা কেউ কোন কাজে নিয়োজিত হলে আজীবন ওই অপকর্মেই থেকে যায়। ভুয়া সনদ প্রদানকারী বহু অপরাধের হুতা, সর্বাধিক শাস্তিযোগ্য অপরাধী! 


বিভিন্ন সময় দফায় দফায় হাজার হাজার জাল সনদধারী শিক্ষকের খোঁজ পাওয়া গেছে! এটি আমাদের শিক্ষক সমাজের জন্য, দেশের জন্য, জাতির জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক, লজ্জাজনক ও কলঙ্কজনক! সম্পূর্ণ অযোগ্য, জাল সনদধারী, চরম অনৈতিক হাজারো দুষ্ট লোক যে দেশে শিক্ষক হতে পারে, শিক্ষকতায় নিয়োজিত থাকতে পারে, সে দেশের শিক্ষার মান কেমন হবে তা তো যে কেউ অনুমান করতে পারবেন। এমন দুষ্ট লোকদের কাছে শিক্ষার্থীরা কেমন শিক্ষা লাভ করবে তা তো অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ! ভুয়া/ জাল/ অবৈধ সনদধারী কেউ যাতে শিক্ষাক্ষেত্রে থাকতে না পারে এবং শিক্ষকতায় আসতে না পারে সেজন্য সর্তকতা অবলম্বন করা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক। তদুপরি কোন অজুহাতে যাতে অযোগ্যরা আবারো শিক্ষক হতে না পারে সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখা আবশ্যক এবং শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে অধিক যোগ্য ও আদর্শ মানুষদের শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করা দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে অত্যন্ত প্রয়োজন। তড়িঘড়ি করে অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ করার চেয়ে বিলম্ব করে অধিক যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ করা দীর্ঘমেয়াদে অধিক কল্যাণকর। তাই কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এক বছর মেয়াদী এ্যাডভান্স সার্টিফিকেট ইন ফাইন আর্টস (চারু-কারুকলা) এবং কম্পিউটার টেকনোলজি (ICT) কোর্সের সনদ তড়িঘড়ি নিয়ে যারা সহজেই বেসরকারি শিক্ষক হবার ব্যাপক সুযোগ পাচ্ছেন তাদের এ সনদ ও যোগ্যতা নিয়ে পরে যেন কোন প্রশ্ন দেখা দিতে না পারে সে ব্যাপারে এখনই সতর্ক ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। সম্প্রতি এ দুটি বিষয়ে অতি সংক্ষিপ্ত সময়ে বিপুলসংখ্যক সনদ অর্জনকারীদের সনদের সত্যতা, কোর্স সম্পন্ন করানো প্রতিষ্ঠান গুলোর বৈধতা ও উপযুক্ততা এবং অনুমোদন প্রদানের যথার্থতা, প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রশিক্ষকদের প্রকৃত যোগ্যতা ও পর্যাপ্ততা, প্রশিক্ষণার্থী ভর্তির তারিখ থেকে কোর্স সমাপ্তির বাস্তব ডিউরেশন (অর্থাৎ ১২ মাসের কোর্সের ৮-৯ মাস কিংবা তারও বেশি সময় চলে যাওয়ার পর শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে কিনা!), প্রকৃতপক্ষে যথাযথ প্রশিক্ষণ গ্রহণের সত্যতা, প্রশিক্ষণে সফলতা অর্জনের সত্যতা ইত্যাদি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে বিশেষ কমিটি গঠন করে পিছন থেকে যাচাই-বাছাই করা আবশ্যক।


শুধুমাত্র শিক্ষকতায়ই নয় অন্যান্য চাকরিতেও অবৈধ সনদধারী থাকার সম্ভাবনা আছে। বিশেষ করে যে সকল কর্মে/ চাকরিতে অষ্টম শ্রেণি পাশের সনদ দিয়ে নিয়োজিত হওয়া যায় সে সকল ক্ষেত্রে সর্বাধিক ভুয়া সনদধারী পাওয়ার সম্ভাবনা বিদ্যমান। শুধুমাত্র নাম দস্তখত করতে জানেন, আর কিছুই লিখতে পড়তে পারেন না, এমন অনেকেই অষ্টম শ্রেণি পাস সনদ দিয়ে বিভিন্ন সেক্টরে নিয়োজিত ছিলেন, আছেন। জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় আবারও তেমনটি ঘটবে বলে পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়। অপরদিকে টেকনিক্যাল ট্রেনিং ও প্র্যাকটিক্যাল এডুকেশন রিলেটেড সার্টিফিকেট দিয়ে যে সকল কর্মে নিয়োজিত হওয়া যায় সে সকল ক্ষেত্রেও ভুয়া সনদধারী থাকার সম্ভাবনা বেশি। এমন অনেক চাকরিজীবী আছেন যারা তাদের সনদে লিখিত যোগ্যতা ও দক্ষতা ন্যূনতম প্রমাণে সক্ষম নন। লোভে বা চাপে এমন অনেক ভুয়া বা অবৈধ সনদ দিয়ে থাকেন বা দিতে বাধ্য হন অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধান। এ সকল বাস্তবতায় জাল বা অবৈধ কিংবা ভুয়া বা আংশিক ভুয়া সনদ কিন্তু অনেক রকম হতে পারে। এক. কোন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়নি, নির্ধারিত কোর্স সম্পন্ন করেনি, পরীক্ষায় বা কাজে অংশগ্রহণ করেনি এমন কাউকে কোন পরীক্ষা পাশের বা কাজের দক্ষতা লাভের সনদ তৈরি করে দেওয়া। দুই. প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছে কিন্তু কোর্স সম্পন্ন করেনি ও পরীক্ষায় বা কাজে অংশগ্রহণ করেনি এমন কাউকে কোন পরীক্ষা পাশের বা কাজের দক্ষতা লাভের সনদ দেওয়া। তিন. প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছে কিন্তু নির্ধারিত কোর্স সম্পন্ন করেনি ও পরীক্ষায় বা কাজে অংশগ্রহণ করে কৃতকার্য হয়নি এমন কাউকে সনদ দেওয়া। চার. প্রতিষ্ঠানে বিলম্বে ভর্তি হয়েছে বিধায় বা অন্য কোন কারণে নির্ধারিত কোর্স সম্পন্ন করেনি বা করতে পারেনি তাকে অনৈতিকভাবে পাস দেখিয়ে/করিয়ে সনদ দেওয়া। পাঁচ. পরীক্ষায় বা মূল্যায়নে নকল করার অবাধ/উন্মুক্ত সুযোগ দিয়ে পাস করিয়ে সনদ দেওয়া। ছয়. প্রকৃত প্রাপ্ত গ্রেডকে অবৈধ ভাবে আপগ্রেড করে সনদ দেওয়া। অর্থাৎ জাল বা অবৈধ সনদ কিংবা ভুয়া বা আংশিক ভুয়া সনদ যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রকৃত কাগজে প্রকৃত সিল-স্বাক্ষর যুক্ত হয়েও তৈরি হতে পারে, আবার সবকিছুই নকল হতে পারে। যখন সবকিছুই নকল হয় তখন শুধুমাত্র সনদ যাচাই করে সত্যতা/ অসত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। কিন্তু যখন যথাযথ কর্তৃপক্ষের আসল কাগজে আসল সিল-স্বাক্ষর যুক্ত হয়ে অবৈধ বা ভুয়া কিংবা আংশিক ভুয়া সার্টিফিকেট তৈরি হয় তখন সেটির যাচাই কাজ অনেক পিছন থেকে শুরু করতে হয়। তাই সে প্রক্রিয়াটি অনেক গভীর ও দীর্ঘ হয়। তেমন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সনদের সত্যতা যাচাই করা হয় না বললেই চলে। তাই অনেক ভুয়া বা অবৈধ সনদধারীরা আলোচনার ও ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়। তারা টেকনিক্যাল এডুকেশন এবং সাধারণ শিক্ষা উভয় ধরনের বা একেক জন একেক ধরনের সনদধারী হতে পারে। বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে সার্বিকভাবে বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত রাখা অত্যাবশ্যক। তা না হলে একসময় জাল সনদের জালে আটকে যেতে পারে আমাদের অনেক ক্ষেত্র। যে করেই হোক ভুয়া শিক্ষকের শিক্ষকতা ও ভুয়া চিকিৎসকের চিকিৎসা থেকে মুক্ত হওয়াসহ ভুয়া বা অবৈধ সনদধারীমুক্ত করতে হবে আমাদের দেশের প্রতিটি ব্যক্তি, প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও সবকটি ক্ষেত্র।<


লেখক: অধ্যক্ষ, শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট 


https://epaper.dainikbangla.com.bd/home/displaypage/news_2024-05-03_5_15_b

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি প্রসঙ্গ

পত্রিকার লিংক

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি প্রসঙ্গ

মো. রহমত উল্লাহ্

দৈনিক বাংলা, ৩১ মার্চ ২০২৪

“বিতর্ক এড়িয়ে রমজান মাসে ছুটি কার্যকর রাখতে আগামীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল হতে পারে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। মঙ্গলবার (২৬ মার্চ ২০২৪) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভায় এ কথা জানান তিনি।” শিক্ষার্থীদের বৃহত্তর স্বার্থে যে কোন গঠনমূলক সিদ্ধান্ত বিবেকবান শিক্ষক সমাজ আন্তরিকভাবে মেনে নিবেন এবং সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন এটাই স্বাভাবিক। তথাপি কোন সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার পূর্বে সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল স্তরের শিক্ষক, অভিভাবক ও বিশেষজ্ঞের সঙ্গে মতবিনিময় করে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথকভাবে বার্ষিক মোট কর্মদিবস তথা মোট কর্মঘন্টা যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করে নেওয়া উত্তম। এক্ষেত্রে ডাবল শিফট ও সংযুক্ত বিদ্যালয়ের কথাও বিবেচনায় রাখতে হবে। রমজান মাসের ছুটি নিশ্চিত করার জন্য শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি কাটছাঁট করা এখন আর সহজ হবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাপ্তাহিক ছুটি দুইদিন ঘোষণা করার আগেই এমন আরো অনেক বিষয় বিবেচনা করা উচিত ছিল। রমজান মাসের ছুটি ছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি সংক্রান্ত আরো অনেক বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে, আলোচনা করতে হবে, ঐক্যমতে পৌঁছতে হবে। সকল ক্ষেত্রেই অর্জন করার চেষ্টা করতে হবে আন্তর্জাতিক মান। সেই সাথে অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে শিক্ষকদের জীবনমান।


শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবারের পরিবর্তে বৃহস্পতি ও শুক্রবার নির্ধারণ করা অধিক যুক্তিযুক্ত হতে পারে। এতে করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে অভিভাবকদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পাবে; যা শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। বিশেষ করে কর্মজীবী অভিভাবকগণ তাদের সন্তানদের শুক্রবারে নিজেদের মত সময় দিতে পারবেন এবং শনিবারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সন্তানদের সম্পর্কে খোঁজ খবর নিয়ে শিক্ষকগণের পরামর্শ নিতে পারবেন ও প্রয়োজনীয় মতামত দিতে পারবেন। অর্থাৎ অভিভাবক-শিক্ষক সমিতি (পিটিএ) এর কার্যক্রম আরো জোরদার করা যাবে। পরিচালনা পরষদ (জিবি, এসএমসি, এমএমসি) এ অধিক শিক্ষিত কর্মজীবীদের অন্তর্ভুক্ত করে শনিবারে সভা করে উপস্থিতি বৃদ্ধি করে অধিক সহযোগিতা নেওয়া যাবে। তাছাড়া শিক্ষক-কর্মচারীরা বৃহস্পতিবারে ছুটি না নিয়ে নিজেদের ব্যাংক একাউন্ট অপারেট করাসহ অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট কাজ সম্পাদন করতে পারবেন। তদুপরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসন চাইলে বৃহস্পতিবারে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের অফিসিয়াল কাজও সম্পাদন করতে পারবেন। অপরদিকে যানজট নিয়ন্ত্রণ ও পানি-বিদ্যুৎ বন্টনের ক্ষেত্রেও তা সামান্য সহায়ক হবে। 


প্রাথমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক ধরনের ছুটির তালিকা, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আরেক ধরনের ছুটির তালিকা এবং উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আরেক ধরনের ছুটির তালিকা কাঙ্খিত নয়। সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই রকম ছুটির তালিকা থাকা উচিত। একটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয় যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটির তালিকায় জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দিবস ছুটি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যেমন: ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৭ মার্চ, ২৬ মার্চ, বাংলা নববর্ষ, ১৫ আগস্ট ও ১৬ ডিসেম্বর। কিন্তু সে সকল দিবস উদযাপনের জন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে বলা হয়। দিবস উদযাপনের জন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন বিধায় কর্মচারীদেরও প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে হয়। অর্থাৎ অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর মত শিক্ষক-কর্মচারীরা ঐ সকল জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসে বাস্তবে ছুটি ভোগ করতে পারেন না। এক্ষেত্রে অনেকের মনে অসন্তোষ বিরাজ করে। এসকল দিবস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য ছুটির দিন নাকি খোলার দিন তা পরিষ্কার নয়! তাই প্রতিষ্ঠান প্রধানরাও শিক্ষকদের ম্যানেজ করতে গিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জটিল সমস্যার সম্মুখীন হন। প্রতিষ্ঠান প্রধানের সঙ্গে শিক্ষকদের মতপার্থক্য হয়, দূরত্ব বৃদ্ধি পায় ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘ্নিত হয়। তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছুটির দিনে এক বা একাধিক শিক্ষক-কর্মচারী অনুপস্থিত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে তা পরিষ্কারভাবে বলা না থাকায় প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ চরম বেকায়দায় পড়েন। 


শিক্ষার্থীদের বিশেষ দিবসে প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থাকা ও বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণ করাকে ধারাবাহিক মূল্যায়নে অন্তর্ভুক্ত করে কিছুটা বাধ্যবাধকতা আরোপ করা গেলেও শিক্ষকদের ক্ষেত্রে উপস্থিত থাকার বাধ্যবাধকতা আরোপ করার তেমন কোন নির্ধারিত উপায় ঘোষণাকৃত নেই। কোন শিক্ষক-কর্মচারী জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ দিবসে স্বপ্রণোদিত হয়ে স্বেচ্ছায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে না চাইলে অর্থাৎ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে অনুপস্থিত থাকতে চাইলে বা বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত থাকলে প্রতিষ্ঠান প্রধান কী করবেন বা কী ধরনের ব্যবস্থা নিবেন তা পরিষ্কার করে উল্লেখ থাকা উচিত। একজনকে বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ঐদিন অনুপস্থিত থাকার অনুমতি দেওয়া হলে ১০ জন ১০ রকমের সমস্যা উত্থাপন করে অনুপস্থিত থাকার আবদার করেন! সবার আবদার রাখতে গেলে দিবস উদযাপন করা সম্ভব হয় না। আবার অনুপস্থিতির সংখ্যা হ্রাস করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠান প্রধানের ক্ষমতা বলে ওই দিনের অনুপস্থিতির কারণে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মচারীর একদিনের নৈমিত্তিক ছুটি কমিয়ে দেওয়া হলে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন; যদিও ছুটিবিধি অনুসারে কর্মী বৎসরে পূর্ণ বিশ দিন নৈমিত্তিক ছুটি অধিকার হিসেবে প্রাপ্য নন এবং প্রতিষ্ঠান প্রধান তা দিতে বাধ্য নন। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবস উদযাপনের দায়িত্ব কেবল প্রতিষ্ঠান প্রধানের ও আগ্রহী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করে। এমতাবস্থায় এ ব্যাপারে একটা পরিষ্কার দিকনির্দেশনা থাকা আবশ্যক। 


অপরদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন কিছু ছুটি বিদ্যমান যে সকল ছুটির দিনে বা ভ্যাকেশনে সরকারি অফিস খোলা থাকে। তাই সংশ্লিষ্ট সরকারি অফিস থেকে বিভিন্ন আদেশ-নির্দেশ এসে থাকে; যা জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করতে হয় বিধায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অফিস খোলা রাখতে হয়। প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অফিসিয়াল কাজ বা হিসাব সংক্রান্ত কাজেও ভ্যাকেশনের সময় অফিস খোলা রাখার প্রয়োজন পড়ে। ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন, ফরম ফিলাপ, বেতন-বিল তৈরি ইত্যাদি কাজে প্রতিষ্ঠান নিয়মিত খোলা না রেখে উপায় থাকে না। তখন প্রতিষ্ঠান প্রধান, সহপ্রধান ও কর্মচারীদের উপস্থিত থাকতে হয়। অর্থাৎ তারা ওই ভ্যাকেশন উপভোগ করতে পারেন না। আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্টর কর্মী হিসেবে ট্রিট করার কারণে বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা ছুটি অর্জন ও বিক্রির সুবিধা থেকে বঞ্চিত এবং তারা পিআরএল ভোগের সুবিধা থেকেও বঞ্চিত। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধান, সহপ্রধান ও কর্মচারী প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে না চাইলে কী রকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে তাও পরিষ্কার ভাবে ব্যাখ্যা থাকা উচিত। তবে যে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী অবকাশ বিভাগের সুবিধা ভোগ করতে পারেন না তাদেরকে অবকাশ বিভাগের কর্মী হিসেবে বিবেচনা করা কতটা যুক্তিযুক্ত তাও ভাবতে হবে।

 

সর্বোপরি শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অফিসের জন্য পৃথকভাবে যৌক্তিক বার্ষিক মোট কর্মদিবস তথা মোট কর্মঘন্টা নির্ধারণ করে ছুটির তালিকা প্রণয়ন করা এবং জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসসহ বিভিন্ন দিবসে ও অন্যান্য ভ্যাকেশনে প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থেকে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রধান, সহপ্রধান, শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য পুরস্কার-তিরস্কার নির্দিষ্ট করা আবশ্যক। 


লেখক: অধ্যক্ষ, শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক 


২৯.০৩.২০২৪ 

ঢাকা


https://epaper.dainikbangla.com.bd/

ছড়া- সিন্ডিকেটের কবলে

 


সময়ের ছড়া

আমাদের সময়, ২৪ মার্চ ২০২৪


সিন্ডিকেটের কবলে

মো. রহমত উল্লাহ্


গভীর রাতে যুক্তি করে 

সকালবেলা দাম বাড়ায়

প্রতিদিনই নতুন নতুন 

অজুহাতের নাম বাড়ায়!


সবকিছুতে ভেজাল করে 

মুখে ছাড়ে ন্যায় বুলি

আসল বলে নকল বেচে 

সবার চোখে দেয় ধুলি!


মাপে ঠকায় মানে ঠকায় 

দামে ঠকায় নিত্যদিন

কৃষক শ্রমিক ভোক্তা ঠকায়

কুড়ায় সবার দ্বিত্বঘিন!


ব্যবসায়ীদের লেবাস দেখে 

ক্রেতারা সব খাবি খায়

কে যে আসল কে যে নকল 

বুঝাই এখন বড় দায়! 


সকল বাজার করল দখল 

কুচক্রী ও সবলে

আর কতদিন থাকতে হবে

সিন্ডিকেটের কবলে? 


[ছন্দ: স্বরবৃত্ত, মাত্রা: ৮+৭]

ভালো লাগলে শেয়ার করতে পারেন।

https://epaper.dainikamadershomoy.com/view/2024/03/24/08/08_107

ছড়া - এইভাবে কতদিন, আমাদের সময়

সময়ের ছড়া, আমাদের সময়, ২১.৩.২৪

পত্রিকার লিংক

এইভাবে কতদিন

মো. রহমত উল্লাহ্

দাম বাড়ে বন্যায় দাম বাড়ে খরাতে

সাধারণ জনগণ দুই মুখী করাতে !


দাম বাড়ে পার্বনে উপবাসে পূজাতে

দাম বাড়ে দুই ঈদে সংযমে রোজাতে

  

দাম বাড়ে বর্ষায় শীতে আর গরমে

সৎ পথে চলাদের ভোগান্তি চরমে!


দাম বাড়ে বছরের শুরুতে ও অন্তে

ভয়ে মরে প্রতিবাদী খিল ধরে দন্তে!


মার খায় কৃষকেরা মার খায় ভোক্তা

ব্যবসায়ী-চাঁদাবাজ ধনে হয় পোক্তা!


অসাধুরা আনন্দে তাল দেয় তবলে

মনে হয় বাজারটা হায়নার কবলে!


সাধুবুলি শোষকের ঠকবাজি ফন্দি

আমাদের ভাগ্যটা নুন-ভাতে বন্দি!


সবকিছু দামি হয়, আমরাই ফেলনা

এইভাবে কতদিন রয়ে যাব খেলনা?


[ছন্দ: মাত্রাবৃত্ত। প্রতি লাইনে মাত্রা: ৮ + ৭ = ১৫ টি।] 

রুদ্ধ হোক অপসংস্কৃতি বিস্তারের পথ, দৈনিক বাংলা ১৩ মার্চ ২০২৪

পত্রিকার লিংক

রুদ্ধ হোক অপসংস্কৃতি বিস্তারের পথ  

মো. রহমত উল্লাহ্

দৈনিক বাংলা, ১৩ মার্চ ২০২৪

>হাজার বছরের সংগ্রাম ও সাহসী বুকের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের বাঙালিত্ব, বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশ। সেই সাথে অর্জিত আমাদের নিজস্ব সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। আমাদের রয়েছে পরিশীলিত পোশাক-আশাক, চলন-বলন, রীতিনীতি, সাজগোজ, আচার-আচরণ, জীবনযাপন, খাদ্য-খাবার, রুচি-পছন্দ, বাদ্য-বাজনা, সুর-ছন্দ, নাচ-গান, ভাষা-সাহিত্য ইত্যাদি। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমরা আজ ভুলতে বসেছি অনেক কিছুই। হারাতে বসেছি আমাদের অতীত ঐতিহ্য ও নিজস্বতা। ইচ্ছে করে, ন্যাকামি করে, আধুনিকতা করে বিকৃত করছি মায়ের ভাষার উচ্চারণ। পরিধান করছি ভিন দেশিদের পোশাক। চুল কাটছি উদ্ভট করে। বিদেশি গান গাইছি ও শুনছি আঁকাবাঁকা হয়ে। বাংলা গানের কথায় জুড়ে চিচ্ছি ইংরেজি গানের সুর। এসব বিকৃত আধুনিকতাকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন একশ্রেণির ন্যায়নীতিহীন অভিভাবক এবং এসব প্রচার করছে কিছু ন্যায়নীতিহীন রেডিও-টেলিভিশন আর ওপেন কনসার্ট।


ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, প্রতিষ্ঠানিক অনুষ্ঠানিকতা উপলক্ষে এমনকি জাতীয় দিবসেও বড়-ছোট অনেক শহরে, কিছু কিছু উপশহরে, কোনো কোনো মফস্বল এলাকায় এমনকি বাসা-বাড়ির ছাদে বা সামনের রাস্তায় ওপেন বাজানো হচ্ছে বিকট শব্দে বিদেশি বাদ্যযন্ত্র, গাওয়া হচ্ছে ইংরেজি ও হিন্দি গান, করা হচ্ছে উদ্ভট নৃত্য! হারাম করে দেয়া হচ্ছে এলাকাবাসীর সারারাতের ঘুম। বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, গায়ে হলুদে, বিয়েতে, জন্মদিনে, মুসলমানিতে, ঈদে, পূজায়, বড়দিনে, ইংরেজি নববর্ষে, এমনকি বাংলা নববর্ষেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে অপসংস্কৃতির চর্চা হয়ে থাকে। অথচ এসবের প্রতিবাদ করার শক্তি সাহস, মনমানসিকতা যেন আজ আর অবশিষ্ট নেই কারোর মাঝেই। মনে হচ্ছে, যেখানে সেখানে, যখন তখন তাদের এসব অশান্তি করার অধিকার আছে; কিন্তু আমাদের নিজের ঘরে শান্তিতে ইবাদত করার, লেখাপড়া করার, ঘুমিয়ে থাকার কোনো অধিকার নেই। (বর্তমান পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশেই অন্যের অসুবিধা হয় এমন স্থানে ও সময়ে বিশেষ করে রাত ১০টার পরে লাউড স্পিকার চালানো যায় না।) অথচ নিজের দল ভারী করার আশায় এসবে সমর্থন ও অর্থ দিয়ে থাকে কেউ কেউ, অংশ নিয়ে থাকে তাদের অনুসারীরা। প্রকৃত বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী নেতৃবৃন্দ এড়াতে পারেন না এ দায়। বাস্তবে আমাদের পুলিশ ও সিভিল প্রশাসন আন্তরিক হলে এসব দমন করা যে অসম্ভব তা কিন্তু নয়। 


অন্যদিকে কতিপয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নবীন বরণ, পিকনিক, রেগ-ডে, ক্লাস পার্টি, সংবর্ধনা প্রদান, বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদিসহ বিভিন্ন উপলক্ষে করা হচ্ছে চরম অশালীন বিদেশি নাচ-গানের আয়োজন। ব্যয় করা হচ্ছে অভিভাবকদের কাছ থেকে আদায় করা অর্থ। আর শিক্ষার্থীদের দেয়া হচ্ছে অপসংস্কৃতি অনুশীলন ও বাঙালি সংস্কৃতি পরিহারের কুশিক্ষা। অনেক ক্ষেত্রে নিজেদের ইচ্ছার বিরুদ্ধেও শিক্ষকরা বাধ্য হচ্ছেন এমন আয়োজন করতে। তাছাড়া কতিপয় বিবেকহীন অতি উৎসাহী শিক্ষার্থী, শিক্ষক, প্রতিষ্ঠান প্রধান ও পরিচালক আধুনিকতার নামে এসব অপসংস্কৃতি চর্চার আয়োজন করে থাকে। এসব যে শুধু ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই হয়ে থাকে তা কিন্তু নয়; আমাদের জাতীয় শিক্ষাক্রমের আওতাভক্ত কতিপয় বাংলা ও ইংলিশ ভার্শন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও কমবেশি এসব হয়। তাছাড়া বিভিন্ন পিকনিক স্পটে, পার্কে, রিসোর্টেও প্রতিনিয়ত হাই ভলিয়ামে বাজানো হয়ে থাকে বিদেশি নাচের গান-বাজনা। অথচ এসব যেন খেয়ালই করছে না সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ। দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিদেশি নাচ-গান বাদ্য-বাজনা নিষিদ্ধ করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি কঠোর আদেশ ও তার সঠিক বাস্তবায়ন তদারক করা একান্ত আবশ্যক। 


শুধু যে আনুষ্ঠানিকতার নামেই, বাড়িঘরের বাইরেই অপসংস্কৃতি চর্চা হচ্ছে তা কিন্তু নয়। দৃষ্টি নিজের দিকে সামান্য ফিরালেই দেখা যাবে- কী হচ্ছে ঘরে ঘরে? কী দেখা হচ্ছে টিভিতে? সারা বছর চলছে বিদেশি চ্যানেল, হিন্দি সিরিয়াল। অধিকাংশ বাসা-বাড়ির একটিমাত্র টিভির রিমোট বড়দের হাতে বিশেষ করে গৃহকর্ত্রীর হাতে থাকে বিধায় ছোটরাও দেখতে বাধ্য হচ্ছে বড়দের কূটচালে ভরা অতি নাটকীয় অবাস্তব হিন্দি সিরিয়াল। তাই আমাদের শিশুরা বেড়ে উঠতে বাধ্য হচ্ছে বিকৃত রুচি ও মানসিকতা নিয়ে। এই সিরিয়াল পাগলেরা এমনই পাগল যে, শহিদ দিবসে, স্বাধীনতা দিবসে, বিজয় দিবসে, ঈদের দিনে, পূজার দিনে, পহেলা বৈশাখে, এমনকি শোকের দিনেও দেখেন না বাংলাদেশের অনুষ্ঠান। ফলে ছোটরাও দেখতে পারে না আমাদের দেশের অনেক শিক্ষণীয় বাংলা অনুষ্ঠান। শুনতে পারে না আমাদের গুণীজনদের কথা। জানতে পারে না আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। অর্থাৎ বিশেষ বিশেষ দিবসেও আমাদের শিশুদের মাথায় ঠেলে দেয়া হচ্ছে ভিনদেশি সংস্কৃতি। 


আশির দশকে এমন একটা সময় ছিল, যখন এসব হিন্দি চ্যানেল আমাদের টিভিতে দেখা যেত না। আমাদের এত টিভি চ্যানেলও ছিল না। তখন সবাই বিটিভির অনুষ্ঠানই দেখতে বাধ্য ছিল। আর তখন ছিল আমাদের ইতিহাস বিকৃত ও ঐতিহ্য ধ্বংস করার যুগ। চির বিজয়ী বীরবাঙালি জাতিকে বিভক্ত করে ভীতু বাংলাদেশি বানানোর যুগ। তখন সঠিক ইতিহাস প্রচার করা হতো না আমাদের টিভিতে। তাই বাধ্য হয়ে ভুলটাই সবাই দেখতে হতো তখন। প্রকৃত ইতিহাস সমৃদ্ধ বইও ছিল কম। পাঠ্য বইয়েও ছিল অনেক ভুল তথ্য। এখনকার মত ওপেন সোর্স ছিল না তখন। ছিলনা এত স্বাধীনভাবে সবকিছু যাচাই করার ও জানার সুযোগ। ডিজিটাল বা স্মার্ট ছিল না দেশ। বিভ্রান্তিতে আক্রান্ত ছিল আমাদের ভাষা, দেশ ও জাতির ইতিহাস। সেই সময়ের বিভ্রান্তরাই এখনকার বেশির ভাগ দাদা-দাদি, নানা-নানি, মা-বাবা, চাচা-মামা, ফুফু-খালা। তাদের হাতেই এখন বেশিরভাগ টিভি সেটের রিমোট। তাদের কারো কারো প্রকৃত বাঙালিত্ব বোধ না থাকায় বা দুর্বল থাকায় এবং প্রত্যাশিত মানের অনুষ্ঠান কম থাকায় অনেকেরই ভালো লাগে না বাংলাদেশের অনুষ্ঠান। তারাই বেশি পাগল হয় হিন্দি সিরিয়াল দেখার জন্য। তারা না করে বাঙালি সংস্কৃতির চর্চা, না করে ইসলামি সংস্কৃতির চর্চা।


এখন যখন আমাদের অনেক টিভি চ্যানেল। এখন যখন আমাদের অধিকাংশ টিভিতে আমাদের সঠিক ইতিহাস ও ঐতিহ্য কম-বেশি প্রচারিত হচ্ছে; তখন আমাদের ওপর জেঁকে বসেছে বিদেশি চ্যানেল বিশেষ করে ভারতীয় হিন্দি চ্যানেল। অর্থাৎ বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা আগে শিখেছে ভুল ইতিহাস আর এখন শিখছে ভিনদেশি কালচার। এমতাবস্থায় দাবি উঠছে, কয়েকটি বিদেশি চ্যানেল বন্ধ করার। মতামত রয়েছে এই দাবির পক্ষে বিপক্ষে। সেটি বন্ধ হলে ভালো। না হলে, কমপক্ষে আমাদের শহিদ দিবসে, স্বাধীনতা দিবসে, বিজয় দিবসে, শোক দিবসে, পহেলা বৈশাখে এবং অন্যান্য বিশেষ দিবসে বন্ধ রাখা হোক সব বিদেশি চ্যানেল, বিদেশি নাচ-গান ও বাদ্য-বাজনার ওপেন কনসার্ট। যাতে অন্তত এ কয়েকটা দিন আমাদের কিছু সংখ্যক সন্তানরা দেখতে পারে আমাদের চেহারা, আমাদের দেশের সৌন্দর্য, আমাদের সংস্কৃতির রূপ; শুনতে পারে আমাদের কথা, জানতে পারে আমাদের অতীত, জাগ্রত করতে পারে জাতীয় চেতনা, বর্ধিত করতে পারে দেশপ্রেম, তৈরি করতে পারে সুরুচি, রচনা করতে পারে সঠিক ভবিষ্যৎ।


লেখক: অধ্যক্ষ, শিক্ষাবিদ ও শিশুসাহিত্যিক


১০.০৩.২০২৪


https://epaper.dainikbangla.com.bd/home/displaypage/news_2024-03-13_5_15_b

ভাষীদের ঐকমত্যই ভাষার শৃঙ্খলা ও শক্তি। দৈনিক বাংলা

ভাষীদের ঐকমত্যই ভাষার শৃঙ্খলা ও শক্তি। মো. রহমত উল্লাহ্

দৈনিক বাংলা, ০১ মার্চ ২০২৪

পত্রিকার লিংক

>ভাষা আন্দোলন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি আমাদের এ আন্দোলনে সফলতা লাভের দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে মাত্র। আমাদের রক্তে রঞ্জিত সেই ২১শে ফেব্রুয়ারি এখন ইউনেসকো স্বীকৃত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। গত ১৭ নভেম্বর ১৯৯৯ তারিখে ১৮৮ দেশের সমর্থনে এই স্বীকৃতি অর্জিত হয়। বিশ্বের ১৯৪ টি দেশ আজ উদযাপন করছে আমাদের শহিদদিবস তথা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের ও গৌরবের। ভাষীর সংখ্যা বিবেচনায় বাংলা ভাষার স্থান এখন ৫ম। বহুল ব্যবহৃত ভাষা হিসেবে বিশ্বে বাংলার অবস্থান ৭ম। প্রায় ৩০ কোটি মানুষ কথা বলে বাংলায়; যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ। সময় চলে যাচ্ছে মূল্যায়নের।  নিজেকে প্রশ্ন করে জানা অপরিহার্য; বাংলা ভাষার আন্দোলনে তথা সঠিক বাংলা চর্চায় আমরা কতটা সফল?  


বাস্তবে বাংলা ভাষার সমৃদ্ধি অর্জনে আমাদের সফলতা কোন ক্ষেত্রেই সন্তোষজনক নয়। এমনকি সবাই সকল শব্দ একইভাবে বাংলায় লেখার ক্ষেত্রেও আমরা বিভিন্ন কারণে ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি! 'শহিদমিনার' শব্দটিও আমরা একেকজন একেকভাবে লিখে থাকি। যেমন, শহীদ মিনার, শহীদমিনার, শহিদ মিনার, শহিদমিনার অর্থাৎ এক শব্দে, দুই শব্দে, ঈ-কার দিয়ে, ই-কার দিয়ে লিখি! অথচ সরকারি প্রতিষ্ঠান ‘জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট’ কর্তৃক প্রকাশিত এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয় চারজন পন্ডিত আনিসুজ্জামান, ওয়াহিদুল হক, জামিল চৌধুরী ও নরেন বিশ্বাস কর্তৃক যৌথভাবে সম্পাদিত ব্যবহারিক বাংলা উচ্চারণ অভিধানে ‘শহিদমিনার’ এভাবে ই-কার দিয়ে এক শব্দে লেখা আছে। যার অর্থ শহিদদের উদ্দেশে নির্মিত স্মৃতিসৌধ। স্মৃতিসৌধ ও শহিদমিনার দুটোই সমাসবদ্ধ পদ বিধায় এক শব্দে লেখা উচিত। শহিদমিনার বিদেশি শব্দ বিধায় এটি ই-কার দিয়ে লেখাই বাংলা একাডেমির বিধান। অথচ এটি অনুসরণ করেন না অনেক ব্যক্তি, অনুসরণ করা হয় না অনেক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। শুধু তাই নয় ‘ফেব্রুয়ারি’ ‘প্রভাতফেরি’ বানানও আমরা কেউ কেউ ই-কার দিয়ে আবার কেউ কেউ ঈ-কার দিয়ে লিখে থাকি। আবার কেউ কেউ ‘প্রভাত’ ‘ফেরি’ আলাদা করে লিখে থাকি। ‘শহিদদিবস’ কেউ একসঙ্গে লিখি, কেউ আলাদা ‘শহিদ’ ‘দিবস’ লিখি। এমন বিস্তর উদাহরণ দেওয়া যাবে। এর কারণ যেমন অনেক, তেমনি মতপার্থক্যও কম নয়। অন্তত শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সকল সরকারি প্রতিষ্ঠান, সকল সরকারি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও তালিকাভুক্ত গণমাধ্যম সমূহ যদি একই কথা/শব্দ সদা-সর্বদা একই রকম করে লিখত তাহলে এতদিনে অনেকটা কেটে যেত আমাদের বিভ্রান্তি। কিন্তু এই বিভ্রান্তির ভিতর বেড়ে ওঠা, শিক্ষা লাভ করা সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী, সকল গণমাধ্যম কর্মী,  এমনকি সকল শিক্ষকও এসব বিভ্রান্তির উর্ধ্বে নয়! 

 


স্কুল-কলেজ এবং মাদ্রাসার শিক্ষকগণ একই রকম বানান অনুসরণ করেন না এমন অনেক শব্দ আছে। স্কুল-কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক এনসিটিবির তথা বাংলা একাডেমির বানান রীতি অনুসরণে একমত হলেও অধিকাংশ মাদ্রাসার শিক্ষক সেটি পুরোপুরি অনুসরণ করতে নারাজ বলেই প্রতিমান হয়। বিশেষ করে মাদ্রাসার হুজুরগণ ব্যক্তিগতভাবে যে সকল বই বা কিতাব বাংলায় লিখে থাকেন সেগুলোতে তারা প্রায় সবাই সর্বাধিক আরবি, উর্দু, ফার্সি ভাষার শব্দ ব্যবহার করে থাকেন এবং ঐ সকল শব্দের উচ্চারণ অনুযায়ী বানান লেখাকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন বিভিন্ন যুক্তিতে। তাদের এই প্রবণতা ইংরেজিসহ অন্যান্য ভাষার শব্দ বাংলায় লেখার ক্ষেত্রেও লক্ষ্য করা যায়। যদিও বিশ্বের অনেক দেশের অনেক ভাষার অনেক শব্দই উচ্চারণ অনুযায়ী লেখা হয় না বা বানান অনুযায়ী উচ্চারণ হয় না। যেমন, judge, character, lieutenant ইত্যাদি। বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয় যে, মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টরা অধিকাংশ বিদেশি শব্দে ঈ-কার প্রয়োগ করে থাকেন। এ কিতাবগুলো যারা পড়ান ও যারা পড়েন তারা সবাই বিদেশি শব্দসহ অন্যান্য অনেক শব্দে ঈ-কার প্রয়োগে অভ্যস্ত হয়ে উঠেন। এ ধারার বিপুসংখ্যক শিক্ষার্থী যখন হুজুর হন বা অন্য কর্মক্ষেত্রে যান বা লেখালেখি করেন তখন তারা অনেক শব্দের তেমন (উচ্চারণ অনুযায়ী) বানান অর্থাৎ বাংলা একাডেমির বিধি বহির্ভূত বানানই লিখে থাকেন বেশি। সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মিডিয়াতেও এটি লক্ষ্য করা যায়। অথচ স্কুল-কলেজের সাথে সম্পৃক্ত অধিকাংশরাই এরূপ উচ্চারণ অনুযায়ী সকল বানান লেখার ব্যাপারে একমত পোষণ করেন না। ফলে অনেক শব্দের বানান বাংলায় লেখার ক্ষেত্রে আমরা জাতিগতভাবে মোটাদাগে দুইভাগে বিভক্ত এবং একে অপরের লেখাকে ভুল বলায় লিপ্ত। শিক্ষাধারার ভিত্তিতে সৃষ্ট আমাদের এ দুই ভাগের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ভাষা বিষয়ক জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বড় একটি চলমান অন্তরায়। 


অন্য বাস্তবতা হচ্ছে শিক্ষার্থীরা কোনো একটি শব্দের বানান তাদের পাঠ্যপুস্তক থেকে একরকম শিখে, আবার যখন অন্যান্য বইয়ে, পত্রপত্রিকায়, প্রজ্ঞাপনে, টেলিভিশনে, লিফলেটে, ফেস্টুনে, ব্যানারে, নোটিশে, চিঠিপত্রে অন্যরকম দেখে, তখন বিভ্রান্তি নিয়েই বেড়ে ওঠে। তাই সঠিক শিক্ষাটি তাদের অন্তরে/ অস্তিত্বে স্থায়ীত্ব লাভ করে না, করতে পারে না। তাই তারা নিজেরাও একেক সময় একেক ক্ষেত্রে একেকরকম লিখে থাকে। বড় হয়ে নিজের এই দুর্বলতা বা অনাস্থা আড়াল করার জন্য কেউ কেউ বলে থাকে, একভাবে লিখলেই হয়, কোনটাই ভুল নয়! তেমন বিভ্রান্তি ও মনোভাব নিয়েই বেড়ে উঠেছি আমি ও আমরা অনেকেই। এর বাইরে নিজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ও বিশেষ কারো সহযোগিতায় ব্যতিক্রম হয়ে ওঠার উদাহরণ খুব বেশি নেই।


বাংলা শব্দের বানান বিভ্রাটের আরও একটি বড় কারণ যুক্ত হয়েছে সম্প্রতি। সেটি হলো মোবাইল ফোনে ও কম্পিউটারে লেখার ক্ষেত্রে অ্যাপ বা সফটওয়্যারের ভুল সাজেশন। বিশেষ করে বহুল ব্যবহৃত মোবাইল ফোন সেটে ইউনিকোড ফন্টে লেখার ক্ষেত্রে ও ভয়েস টাইপ করার ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি অত্যন্ত প্রকট। যা আমি নিজেও অত্যন্ত বিরক্তি সহকারে ফেস করি প্রতিনিয়ত। মোবাইল ফোন সেটে বাংলা লেখার কিবোর্ড অভ্র, রিদমিক, জি-বোর্ড ইত্যাদি অ্যাপ/ সফটওয়্যা তৈরিতে  বাংলা একাডেমির বানান রীতি পুরোপুরি অনুসরণ করা হয়নি বিধায় অনেক ভুল বানান সাজেশন দিয়ে থাকে। বিশেষ করে বিদেশি শব্দসমূহে ঈ-কার যুক্ত বানান লিখে/দেখিয়ে থাকে এবং সমাসবদ্ধ পদগুলোকে পৃথকভাবে লিখে/দেখিয়ে থাকে। যেমন শহীদ মিনার, শহীদ দিবস, ভাষা শহীদ, ফেব্রুয়ারী, জানুয়ারী, সরকারী, ইংরেজী, বীমা, শ্রেণী, ফ্রী ইত্যাদি। অপরদিকে যতিচিহ্ন প্রয়োগের ক্ষেত্রেও সমস্যা হয়ে থাকে। যেমন, (.) একবিন্দু ও (:) কোলনকে (ঃ) বিসর্গ লিখে/দেখিয়ে থাকে। তাই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী বিশেষকরে অগণিত ফেসবুক ব্যবহারকারী এই ভুল বানানগুলো দেখতে দেখতে ও লিখতে লিখতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। ফলে তারা ভুল-শুদ্ধের বিভ্রান্তিতে পড়ে যায়! ভুলের ছড়াছড়িতে শুদ্ধটিও ভুলে যায়!  


অপরদিকে বাংলার পন্ডিতগণের একদল বলেন, সমাসবদ্ধ পদ একত্রে মিশে বসবে। তা না হলে ভুল হবে। আবার অন্যদল বলেন, সমাসবদ্ধ পদ একত্রে মিশে না বসলেও ভুল হবে না। অর্থাৎ ফাঁক রেখে পাশাপাশি বসলেও শুদ্ধ হবে। একেকজনের যুক্তি এক এক রকম। লক্ষণীয়, ‘Education reporter- এডুকেশন রিপোর্টার’ ফাঁক রেখে দুই শব্দে লেখার ব্যাপারে সবাই একমত হলেও ‘শিক্ষা প্রতিবেদক’ বা ‘শিক্ষা সাংবাদিক’ ফাঁক রেখে দুই শব্দে লেখার ব্যাপারে সবাই একমত নন। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে এমন উদাহরণ অনেক। আমি মনে করি, সমাসবদ্ধ পদ মিশিয়ে বা ফাঁক রেখে যেভাবে যেখানে লিখলে সঠিক অর্থ প্রকাশ পায়, সংক্ষিপ্ত হয়, শ্রুতিমধুর হয়, লিখতে/বলতে ও বুঝতে সহজ হয় সেখানে সেভাবে লেখাই উত্তম। যেমন, মুক্তিসেনা, স্মৃতিসৌধ, মাতৃভাষা, শহিদমিনার, শহিদদিবস, ভাষাশহিদ, পুষ্পাঞ্জলি, নবীন বরণ, প্রধান শিক্ষক, শিক্ষক সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ সরকার, সংবাদপত্র পরিচালক ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে অগণিত সমাসবদ্ধ পদ একত্র বা সন্ধি করতে গিয়ে অতি দীর্ঘ জটিল শব্দ তৈরি করাও উচিত নয়। কেননা, অতি দীর্ঘ জটিল শব্দ লিখতে, পড়তে ও মনে রাখতে অধিক চাপ নিতে হয়। যা শিশুদের জন্য আরও বেশি কষ্টকর হয়। তাই দুটির অধিক সমাসবদ্ধ পদ একত্রিত না করা এবং অধিক বর্ণ যুক্ত জটিল শব্দ তৈরি না করার বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছা যায় কিনা ভেবে দেখা উচিত। 


মোট কথা, সকল বিভ্রান্তি নিরসন করে ভাষা যত সহজ করা যায়, বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো যায়, সাধারণ মানুষের উপযোগী করা যায় ততই মঙ্গলজনক। কেননা, ভাষার ব্যবহার বৃদ্ধি ও অস্তিত্ব রক্ষার জন্য এসব অপরিহার্য। সেই সাথে সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সকল ধরনের ও পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সকল প্রকার এনজিও, সকল ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া, সকল প্রকাশনা সংস্থা, বাংলা লেখার অ্যাপ বা সফটওয়্যার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এবং এ সকল প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সবাই যাতে একই শব্দ বাংলায় একইভাবে লিখতে বাধ্য হন তেমন ঐক্য প্রতিষ্ঠার কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যক। যত বেশি শব্দ তেমন ঐক্যের আওতায় আনা যাবে ভাষা তত বেশি শক্তিশালী হবে। লেখায়, বলায়, ভাব প্রকাশে ভাষীদের ঐকমত্যই ভাষার শৃঙ্খলা ও শক্তি। 


লেখক: অধ্যক্ষ, গবেষক ও প্রাবন্ধিক 


https://epaper.dainikbangla.com.bd/home/displaypage/news_2024-03-01_5_15_b

দেশের গান, সবুজ পাতার ভীড়ে কেন যে পলাশ হলো লাল

 


দেশের গান


সবুজ পাতার ভীড়ে কেনোযে পলাশ হলো লাল

শিমুলের ফুলে কেনো লাগলো এ রঙ-

তুমি জানো কি

হে নবীন তুমি জানো কি? ।।


মায়ের মুখের সুরে তোমায় ডাকি

সেইনা সুরে ডাকে হাজার পাখি।

আমাদের কন্ঠে কীকরে এলো এই গান

তুমি জানো কি?

হে নবীন তুমি জানো কি? ।।


ভাইয়ের ভাষায় বলি 'ভালবাসি'

এমাটির ফুলে ফলে ভাইয়ের হাসি।

আমাদের সূর্যে কে দিলো এতো লাল প্রাণ

তুমি জানো কি?

হে নবীন তুমি জানো কি? ।।


গীতিকার- মো. রহমত উল্লাহ্‌

(গানটি গাইতে পারেন শিল্পী বন্ধুরা।)