শব্দদূষণ রোধে এগিয়ে আসতে হবে সবার। খোলা কাগজ, ২৪ জুলাই ২০২১

পত্রিকার লিংক

শব্দদূষণ রোধে এগিয়ে আসতে হবে সবার

খোলা কাগজ, ২৪ জুলাই ২০২১

মো. রহমত উল্লাহ্


সৌদি আরব আজান ও ইকামত ছাড়া মসজিদের মাইক ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। এ ছাড়া মাইকের আওয়াজ এক-তৃতীয়াংশে সীমিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে। গত ২৩ মে ২০২১ তারিখে গালফনিউজ জানায়, সৌদির ইসলামবিষয়ক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ আল শেখ এই সার্কুলার জারি করেছেন মহানবী (সা.)-এর একটি হাদিসের ভিত্তিতে, যেখানে বলা হয়েছে, ‘মনে রেখো, তোমরা প্রত্যেকে নিঃশব্দে পালনকর্তাকে ডাকবে। আল্লাহকে ডাকতে গিয়ে একজন অপরজনকে কষ্ট দিবে না এবং কারো তেলাওয়াত বা প্রার্থনার আওয়াজ যেন অন্যজনের কণ্ঠস্বরের চেয়ে উঁচু না হয়।' গালফনিউজ আরও জানায়, মোহাম্মদ বিন সালেহ আল ওথাইমীন এবং সালেহ আল ফাজওয়ানের মতো জ্যেষ্ঠ ইসলামি চিন্তাবিদদের পরামর্শে সৌদি আরবে মসজিদের মাইক শুধু আজান ও ইকামতের জন্য ব্যবহারের এই নিয়ম জারি করা হয়েছে।


আমরা অনেকেই জানি না যে, আমাদের দেশেও শব্দ দূষণ প্রতিরোধের লক্ষ্যে ২০০৬ সালে একটি বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। সেই বিধি অনুযায়ী 'হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উপাসনালয়ের সামনে এবং আবাসিক এলাকায় হর্ন বাজানো, মাইকিং করা, সেইসঙ্গে সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নামে জোরে শব্দ সৃষ্টি করা আইনত দণ্ডনীয়।' কিন্তু সেই আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ার কারণে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছেনা শব্দ দূষণের মাত্রা। পরিবেশ অধিদফতরের মতে, শব্দের সহনীয় মাত্রা হচ্ছে দিনে সর্বোচ্চ ৪৫ ডেসিবেল এবং রাতে ৩৫ ডেসিবেল পর্যন্ত। শয়নকক্ষে এই শব্দের সহনীয় মাত্রা ২৫ ডেসিবেল এর নিচে থাকতে হবে। অথচ আমাদের দেশে এই শব্দের মাত্রা ১২০ ডেসিবেল পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই মাত্রাতিরিক্ত শব্দ অর্থাৎ শব্দদূষণ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ! 


শহর এলাকায় গাড়ির হর্ন হচ্ছে সর্বাধিক শব্দ দূষণের কারণ। আমাদের দেশের চালকগণ প্রয়োজন ব্যতীত গাড়ির হর্ন বাজাতে থাকেন। যেখানে হর্ন বাজানোর কোন প্রয়োজন নেই সেখানেও হর্ন বাজিয়ে থাকেন,  যেখানে একবার হর্ন বাজালেই যথেষ্ট সেখানে ১০/২০ বার হর্ন বাজিয়ে থাকেন। যার শব্দ ৮০ থেকে ১০০ ডেসিবেল পর্যন্ত হয়ে থাকে। অতিরিক্ত হর্ন বাজানোর ক্ষতি সম্পর্কে চালকের অজ্ঞতা এবং বিচারহীনতা এর প্রধান কারণ। অধিকাংশ গাড়ির চালক স্বল্প শিক্ষিত এবং নিয়ম ভাঙ্গার মানসিকতাসম্পন্ন বিধায় তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান ও  জরিমানা করাই এই শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের কার্যকর  উপায়।  


রাস্তায় চলাচলের সময় শব্দদূষণে অতিষ্ঠ হয়ে বাসা-বাড়িতে ফিরে এসে যখন একটু প্রশান্তি খুঁজতে চাই, লেখাপড়া করতে চাই, ইবাদত করতে চাই, শান্তিতে ঘুমাতে চাই, তখনও পড়তে হয় শব্দদূষণের কবলে! উন্নয়নশীল এলাকায় পাইলিংয়ের শব্দ, রড কাটার শব্দ, টাইলস কাটার শব্দ, ইট ভাঙ্গার শব্দ, ঢালাই মেশিন এর শব্দ ইত্যাদি মারাত্মক অসহনীয় ৮০ থেকে ৯০ ডেসিবেল মাত্রা তো আছেই। তার উপরে আবাসিক এলাকায় রয়েছে গ্রিল ও আসবাবপত্র তৈরির কারখানা এবং বিভিন্ন দোকানপাট। সম্প্রতি আসবাবপত্র কারখানায় যুক্ত হয়েছে বিকট শব্দকারি ডিজাইনিং মেশিন! অথচ আবাসিক এলাকায় কারখানা ও দোকানপাট স্থাপন সম্পূর্ণ বেআইনি। এক্ষেত্রেও নেই আইনের যথাযথ  প্রয়োগ। আইন ও অধিকার সম্পর্কে সচেতন নয় বেশির ভাগ মানুষ। তারা মনে করে, যার যা ইচ্ছা তাই করবে এটার নামই স্বাধীনতা! তারা জানেই না যে, একের অসুবিধা করে অন্যের স্বাধীনতা ভোগ করার কোন অধিকার নেই। হাতেগোনা যে কয়জন এসব বিষয়ে সচেতন তারা সংখ্যালঘু বিধায় দুর্বল। তাই প্রতিবাদে এগিয়ে আসেন না কেউ। যারা প্রতিবাদে এগিয়ে আসার কথা তাদের কেউ কেউ আবার করে থাকেন অন্যরকম শব্দদূষণ। 


আবাসিক এলাকায় সবচেয়ে বেশি শব্দদূষণ হয়ে থাকে লাউডস্পিকারের কারণে।  "সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নামে জোরে শব্দ সৃষ্টি করা আইনত দণ্ডনীয়" হলেও কেউ মানছেন না এই আইন! প্রয়োগকারী সংস্থাও কার্যকর করছেনা দণ্ড। জন্মদিন, খতনা, গায়ে হলুদ, বিয়ে, বৌ-ভাত ইত্যাদি অনুষ্ঠানের নামে পাড়া-মহল্লায় সারারাত বাজানো হচ্ছে লাউডস্পিকার। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে, ইসলাম ধর্মের অনুসারীরাও বিয়ের মতো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ধর্মীয় বিধান লংঘন করে একাধিক দিনরাত বাজাচ্ছে বিকট বাদ্যযন্ত্র, করছে বেফাঁস নাচ-গান। জোর করে নিজের পছন্দের গান-বাজনা শুনতে বাধ্য করছে সবাইকে! সেসব বিয়েতে অংশ নিচ্ছেন অনেক স্থানীয় ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতাগণ। ফলে শব্দ দূষণ রোধ করার মত আর অবশিষ্ট থাকছে না কেউ।   ছেলেপেলে মিলে প্রায়শই রাতব্যাপী করছে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানেও লাউডস্পিকারে বাজানো হচ্ছে বিকট বাদ্যযন্ত্র। জন্মদিন, খতনা, বিয়ে, খেলাধুলা, সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি উপলক্ষে লাউড স্পিকারের ৯০ থেকে ১০০ ডেসিবেল শব্দে হারাম করা হচ্ছে এলাকাবাসীর লেখাপড়া, ঘুম ও ইবাদত! করা হচ্ছে ব্যাপক আতশবাজি! গ্রামগঞ্জেও ছড়িয়ে পড়েছে এসব শব্দ দূষণ। পিকনিকের গাড়িতে, স্পটে, পার্কে ও রিসোর্টে হাই ভভলিউম লাউডস্পিকারে চালানো হচ্ছে ধুমধারাক্কা গান-বাজনা। এসবের প্রতিবাদ করতে গেলে তৈরি হচ্ছে মার খাওয়ার উপক্রম। প্রতিবাদকারীর পক্ষ নিচ্ছে না এলাকার জনপ্রতিনিধি ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা! হালকা করে বলা হচ্ছে, দু'একদিন করুক না। বাস্তবে অমুকে দু'একদিন তমুকে দু'একদিন করতে করতে এলাকাবাসীর অসহনীয় যন্ত্রণা প্রতিদিন!


অপরদিকে অধিকাংশ এলাকার বিভিন্ন মসজিদে বাজানো হচ্ছে উচ্চশব্দে লাউডস্পিকার। আযান ও ইকামত ছাড়াও বিভিন্ন সময় জিকির, গজল, হামদ, নাত, দুরুদ, কেরাত, বয়ান, সবিনা ইত্যাদি করা হচ্ছে আযান পরিবেশনকারী লাউডস্পিকারে/ উঁচু মাইকে। এমনও মসজিদ আছে যেখানে মুসল্লির সংখ্যা অল্প থাকা সত্ত্বেও জুম্মাবারের বয়ান, খুতবা, দোয়া পরিবেশন করা হয় আযানের মাইকেই। এমনকি জামাত নামাজও পড়ানো হয় আযানের মাইকে। ফলে বাসাবাড়িতে অতি বৃদ্ধ ও মহিলাদের নামাজের অসুবিধা হয়। তাই মসজিদে উপস্থিত মুসল্লির সংখ্যা অনুপাতে ঘরোয়া স্পিকারের সংখ্যা নির্ধারণ করে নিম্ন আওয়াজে এসব করাই উত্তম। এমন আদেশই দেওয়া হয়েছে সৌদি আরবে। এমন আইনই জারি করা আছে বাংলাদেশে। তবু অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিকট লাউডস্পিকারেই করা হচ্ছে এসব, আয়োজন করা হচ্ছে সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক ও বার্ষিক তাফসির/ওয়াজ মাহফিল। লম্বা তার টেনে অনেকগুলো বড় বড় হর্ন লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে অনেক দূরের মোড়ে মোড়ে ও বাসাবাড়ির গলিতে। বিকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন সুরে চালানো হচ্ছে ওয়াজ। সর্বশক্তি দিয়ে গলা ফাটিয়ে দেওয়া হচ্ছে স্লোগান। মানুষের কানের ভিতর জোর করে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ ডেসিবেল আওয়াজ! মাজার, খানকা, মন্দির, পেগুডা ইত্যাদি থেকেও লাউডস্পিকারে ভেসে আসছে নানান রকম পরিবেশনার বিকট শব্দ! অথচ সেই মাহফিলে, মাজারে, মন্দিরে, পেগুডায় গেলে হয়ত দেখা যায় হাতেগোনা কিছু লোক উপস্থিত। ছোট্ট একটা ইনডোর স্পিকারেই যাদের কানে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব এ সকল পরিবেশনা। 


আমাদের দেশে কেউ কেউ বলছেন, যত বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাবে জিকির, গজল, হামদ, নাত, দুরুদ, সবিনা, কেরাত, কাওয়ালি, ওয়াজ, বয়ান, তাফসির ইত্যাদি তত বেশি সওয়াব। তাই সবচেয়ে পাওয়ারফুল লাউডস্পিকার লাগানো হয় এসব প্রচারের জন্য। বাস্তবে কর্মব্যস্ত মানুষ মনোযোগ দিয়ে এসব শোনার সময় ও সুযোগ কোনোটাই পান না। অথচ মানুষের অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয় স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি এই শব্দ দূষণ! সীমার বাইরের শব্দ দূষণ মাথা ব্যথার কারণ হয়, ইবাদত ও ঘুমের বিঘ্ন ঘটায়, শ্রবণ ক্ষমতা ধ্বংস করে, মেজাজ খিটখিটে করে, ধৈর্যচ্যুতি ঘটায়, ফুসফুস আক্রান্ত করে, মানসিক ভারসাম্য বিনষ্ট করে, বুদ্ধিমত্তা বাধাগ্রস্ত করে, লেখাপড়ায় অমনোযোগী করে, বিষন্নতায় নিমজ্জিত করে, স্মরণ শক্তি কমায়, পেশীতে খিচুনি তৈরি করে, কর্মক্ষমতা হ্রাস করে এবং আরো অনেক রকম শারীরিক ও মানসিক সমস্যা তৈরি করে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থরা। অন্যকে কষ্ট দেওয়া কোনো যুক্তিতেই সমর্থনযোগ্য নয়। তাই তো মহানবি হজরত মুহাম্মদ (স.) বলেছেন, ‘মনে রেখো, তোমরা প্রত্যেকে নিঃশব্দে পালনকর্তাকে ডাকবে। আল্লাহকে ডাকতে গিয়ে একজন অপরজনকে কষ্ট দিবে না এবং কারো তেলাওয়াত বা প্রার্থনার আওয়াজ যেন অন্যজনের কণ্ঠস্বরের চেয়ে উঁচু না হয়।'


বর্তমানে জিকির, গজল, হামদ, নাত, দুরুদ, সবিনা, কেরাত, কাওয়ালি, ওয়াজ, বয়ান, তাফসির ইত্যাদি শোনার সুযোগ মানুষের ঘরে ঘরেই বিদ্যমান। রেডিও, টেলিভিশন ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যার যখন যেমন ইচ্ছা তেমন শুনতে ও দেখতে পারেন। একদেশে বসে একটা মোবাইল ফোনেই এখন শোনা যায়, দেখা যায়, বিশ্বের সব দেশের বিখ্যাত সব ধর্মীয় পরিবেশনা।  কারো কানের ভিতর জোর করে ওয়াজের আওয়াজ পৌঁছে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। কাজের চাপে পরিবর্তিত হয়ে গেছে মানুষের দৈনন্দিন রুটিন। কেউ যদি ধর্মীয় কোন পরিবেশনার অতিরিক্ত আওয়াজে বিরক্ত হয় তো তিনি পূণ্যের চেয়ে পাপের ভাগীদার হবার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। হজরত আবু বকর (রা.) বলতেন, 'তোমরা তাহাজ্জুদ নামাজের  কোরআন তেলাওয়াত খুব নিম্নস্বরে করো। যাতে অন্য কারও ঘুম না ভাঙ্গে'। হজরত ওমর (রা.) বলতেন, 'আমি চাই তেলাওয়াত হালকা উচ্চস্বরে হোক। যাতে নিদ্রিত ব্যক্তির ঘুম না ভাঙ্গে'। 


এমতাবস্থায় আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সকল প্রকার শব্দ দূষণ রোধে সরকারের পাশাপাশি সর্বাগ্রে এগিয়ে আসা উচিত ধর্মীয় নেতা ও হুজুরদের। শব্দ দূষণের বিরুদ্ধে  ব্যাপক ওয়াজ করা উচিত গণমাধ্যমে ও ইউটিউবে। সেইসাথে এগিয়ে আসা আবশ্যক রাজনৈতিক নেতা ও শিক্ষকদের। ইমাম-মুয়াজ্জিন ও শিক্ষকদের  প্রশিক্ষণে বৈজ্ঞানিক ও ধর্মীয় ব্যাখ্যা দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া উচিত কেনো বিভিন্ন দেশের আইনে ও ধর্মে নিষেধ করা আছে শব্দ দূষণ। যাতে তারা সেই শিক্ষা প্রদান করতে পারেন তাদের শিক্ষার্থী ও অনুসারীসহ সবাইকে। তারা নিজেরা যদি শব্দ দূষণ থেকে বিরত থাকেন, অন্যদেরকে শব্দ দূষণ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেন ও সব ধরনের শব্দ দূষণ রোধে আইন প্রয়োগে সহায়তা করেন তাহলে সফল হবার সম্ভাবনা সর্বাধিক। মানুষকে শান্তি দেওয়াই তো ইসলাম ধর্মর অন্যতম কাজ। #

মো. রহমত উল্লাহ্

শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

----------------

অধ্যক্ষ -কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। 

০৫ জুলাই ২০২১




শিক্ষক হিসেবে প্রতিনিয়ত নিজেকে মূল্যায়ন করা আবশ্যক। ১৩, ১৪, ১৬ জুলাই ২০২১ > ইত্তেফাক

 শিক্ষক হিসেবে প্রতিনিয়ত নিজেকে মূল্যায়ন করা আবশ্যক

দৈনিক ইত্তেফাক > ১৩, ১৪ ও ১৭ জুলাই ২০২১

   

মো. রহমত উল্লাহ্


নিয়োগপত্র পেলেই শিক্ষক হওয়া যায় না, শিক্ষক হয়ে উঠতে হয়। শিক্ষক হয়ে ওঠা মোটেও সহজ কাজ নয়। কেননা, শিক্ষকতা কোন সাধারন পেশা নয়, মহান ব্রত। উত্তম শিক্ষক হয়ে ওঠার জন্য থাকতে হয় ঐকান্তিক প্রচেষ্টা। সেই প্রচেষ্টা হতে হয় বিরামহীন। মানব শিশুকে মানুষ করার গুরুদায়িত্ব শিক্ষকের। এই কঠিন দায়িত্ব পালনের জন্য শিক্ষককে হয়ে উঠতে হয় সুযোগ্য সুদক্ষ আত্মত্যাগী উৎকৃষ্ট মানব। শিক্ষার্থীর প্রতি দায়িত্ব কর্তব্যে থাকতে হয় নিরলস নিবেদিত। জ্ঞানে গুণে কর্মে কথায় হয়ে উঠতে হয় শিক্ষার্থীর পরম পূজনীয়। প্রতিনিয়ত নিজেই পরখ করে দেখতে হয় নিজের ভুলত্রুটি। কোনো ভুলকেই ভাবা যায় না ছোট, কোনো ত্রুটিকেই  করা যায় না অবহেলা। একান্তে ও একাগ্রচিত্তে চালাতে হয় ভুলত্রুটির উর্ধ্বে উঠে নিজের উন্নয়ন সাধনের প্রচেষ্টা। বারবার নিজেই নিজেকে মূল্যায়ন করে দেখতে হয়, আমি কতটা শিক্ষক হয়ে উঠতে পারলাম! সেই মূল্যায়নের জন্য জাগ্রত করতে হয় বিবেক, বিবেচনায় আনতে হয় ছোট-বড় অনেক বিষয়। 

চলুন, একজন শিক্ষক হিসেবে কয়েকটি সাধারণ প্রশ্ন করি নিজের বিবেককে, নিজেই সামান্য মূল্যায়ন করে দেখি নিজেকে।


*আমি কি প্রতিটি ক্লাসে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে, সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে পাঠদান করি? নাকি যেনতেনভাবে সময় পার করি?


*পাঠদানকৃত বিষয়ে জ্ঞানের গভীরতা বাড়াতে আমি কি সদা সক্রিয় থাকি? নাকি যেনতেনভাবে পাঠদান চালিয়ে যাই?


*গৃহীত প্রশিক্ষণ প্রয়োগ করে উন্নত পাঠদানে আমি কি অধিক সচেষ্ট থাকি? নাকি নিজের মতো যেনতেন পাঠদান করে থাকি?


*আধুনিক প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে আরো যোগ্য করে তুলতে আমি কি বেশি আগ্রহী? নাকি অর্থ আনার জন্য  প্রশিক্ষণে যেতে বেশি আগ্রহী?


*আধুনিক ও নিত্যনতুন শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করে কি প্রতিটি ক্লাসকে আরো আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করি? নাকি গতানুগতিক  দু-একটি উপকরণ দিয়েই ক্লাস চালিয়ে নিই?


*শিক্ষার্থীদের স্বার্থে ডিজিটাল যুগের উপযোগী শিক্ষক হয়ে ওঠার জন্য কি ধৈর্য ধরে চেষ্টা করি? নাকি আধুনিকতাকে পাশ কাটিয়ে কৌশলে সময় পার করার চেষ্টা করি?


*শিক্ষার্থীদের সাথে আমি কি শুদ্ধ ভাষায় কথা বলি? আমি কি শুদ্ধভাবে লিখতে ও পড়তে জানি?   নাকি আঞ্চলিক বা অশুদ্ধ ভাষায় কথা বলি? নাকি ভুল বাক্যে/বানানে লিখি, ভুল উচ্চারণে পড়ি?


*সাজপোশাকে আমি কি শালীন ও পরিপাটি থাকি? নাকি উগ্র/ মলিন/ অশালীন/ অপরিচ্ছন্ন থাকি?


*ক্লাসের ঘন্টা বাজার আগেই কি শিক্ষার্থীদের হাজিরা খাতা, মার্কার-ডাস্টার ও অন্যান্য শিক্ষাসামগ্রী রেডি রেখে অপেক্ষা করি? নাকি ঘন্টা বাজার পরে এসব রেডি করতে শুরু করি?


*প্রতিটি ক্লাসের নির্ধারিত সময় কি পূর্ণ করে ক্লাস শেষ করি? নাকি যথাসম্ভব কম সময়ে ক্লাস শেষ করে দায় সরানোর ফাঁক খুঁজি?


*ক্লাসে যাওয়ার সময় আমি কি যথাসম্ভব দ্রুত গিয়ে ক্লাসে যোগদান করার চেষ্টা করি? নাকি ধীরে ধীরে হেঁটে বা কারো সঙ্গে কথা বলে বিলম্বে হাজির হই? 


*নির্দিষ্ট দুর্বল/দায়ী শিক্ষার্থীকে ব্যক্তিগতভাবে ডেকে এনে একান্তে বুঝিয়ে কি দোষত্রুটি সংশোধনের চেষ্টা করি? নাকি ক্লাসরুমে রাগারাগি, বকাবাধ্য, লজ্জিত ও অপমানিত করে অধিকাংশ সময় পার করে দিই?


*আমি কি আমার শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে পড়িয়ে, শিখিয়ে সন্তুষ্ট রাখতে চাই? নাকি অন্যভাবে কথা বলে, মাথায় হাত বুলিয়ে, নোট-গাইড দিয়ে, সাজেশন দিয়ে, খুশি রাখতে চাই?


*শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন করলে আমি কি আগ্রহ সহকারে শিক্ষার্থীদের সকল প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিই? নাকি পাল্টা প্রশ্ন করে শিক্ষার্থীদের থামিয়ে দিই? 


*নির্ধারিত ক্লাসের চেয়ে কি কয়েকটি ক্লাস বেশি করার চেষ্টা করি? নাকি দু'একটি ক্লাস  কম করে দায় সারানোর  সুযোগ খোঁজি?


*আমি কি ক্লাসে সবকিছু ভালোভাবে বুঝিয়ে পড়িয়ে থাকি? নাকি প্রাইভেটে গিয়ে পড়ার জন্য প্রভাবিত করে থাকি?


*প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত ক্লাসে কি আমি ভালো পড়াই? নাকি প্রাইভেট-কোচিং এ ভালো পড়াই?


*আমার শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ব্যাপারে আমি কি বেশি যত্নশীল? নাকি নিজের সন্তান ও ভাইবোনের লেখাপড়ার ব্যাপারে বেশি যত্নশীল? নাকি উভয় ক্ষেত্রে সমান যত্নশীল?


*আমার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমি কি সবচেয়ে ভালো ব্যবহার করি? নাকি নিজের সন্তান ও ভাইবোনের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করি? নাকি উভয় ক্ষেত্রে সমান ভালো ব্যবহার করি?


*সকল শিক্ষার্থীর প্রতি কি সর্বত্র সমান তথা নিরপেক্ষ আচরণ ও দৃষ্টি প্রদর্শন করি? নাকি কোনো ক্ষেত্রে কারো প্রতি পক্ষপাতিত্ব করে থাকি?   


*একজন শিক্ষার্থী আমার ক্লাস থেকে বঞ্চিত হলে, লেখাপড়া থেকে ঝরে পড়লে, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে আমি কি নিজেকে দায়ী মনে করে অনুতপ্ত হই? নাকি এমন ভাবি যে, তাতে আমার কী?


*শিক্ষা লাভের জন্য, শুভ কাজের জন্য শিক্ষার্থীদের কি অনুপ্রাণিত করি, উৎসাহিত করি, উজ্জীবিত করি? নাকি তিরস্কার করে, নিরুৎসাহিত করে তাদের মন ভেঙ্গে দেই? 


*সুশিক্ষা অর্জনে শিক্ষার্থীরা যাতে আমরণ আন্তরিক থাকে, প্রকৃতি ও পুস্তক থেকে জ্ঞান আহরণে নিবেদিত থাকে, এমন শিক্ষা কি আমি দিই?  নাকি সহজে সনদ লাভের কৌশল শিখিয়ে দিই? 


*শিক্ষার্থীদের আদর-স্নেহ দিয়ে কি সুপথে আনার চেষ্টা করি? নাকি শাসন-বারন করে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করি? 


*শিক্ষার্থীরা যাতে ছোটদের স্নেহ ও বড়দের মান্য করে তেমন শিক্ষা দিই, নাকি আমি নিজেই তেমন করি না?  


*লেখাপড়ার পাশাপাশি সহশিক্ষায় পারদর্শী হয়ে ওঠার ব্যাপারে আমি কি শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করি? নাকি সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিলে লেখাপড়ার ক্ষতি হয় বলে মনে করি? 


*সামাজিক কাজে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য আমি কি শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করি? নাকি আমি নিজেই অসামাজিক জীবন যাপন করি?   


*শিক্ষার্থীদের কি সত্যবাদী, ন্যায় পরায়ন ও দুর্নীতি বিরোধী হয়ে উঠতে শিখাই? নাকি আমি নিজেই তেমন না হয়ে সুবিধাবাদী হয়ে উঠতে শিখাই?


*কর্মক্ষম, আত্মনির্ভর, পরোপকারী হয়ে ওঠার যোগ্যতা ও দক্ষতা লাভে শিক্ষার্থীদের কি উদ্বুদ্ধ করি, দিকনির্দেশনা দিই? নাকি তাদের কর্ম অক্ষম, পরনির্ভরশীল, স্বার্থপর করে তুলি?  


*ভিন্ন ধর্ম-বর্ণ-জাতি ও সম্প্রদায়ের প্রতি শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধাশীল করার ব্যাপারে আমি কি সদা সক্রিয়? নাকি এসব বিষয়ে নিজেই উদাসীন বা শ্রদ্ধাহীন?


*শিক্ষার্থীর মনে ধর্মীয় মূল্যবোধ, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, দেশপ্রেম, ভাষাপ্রেম ও জাতীয়তা বোধ জাগ্রত করার ব্যাপারে আমি কি সদা সচেষ্ট? নাকি এ সকল বিষয়ে আমি উদাসীন বা ভিন্ন দৃষ্টিসম্পন্ন?


*দেশ ও জাতির সঠিক ইতিহাস কি শিক্ষার্থীদের মধ্যে তুলে ধরি? নাকি নিজের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে ভুল বা বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করি?


*জাতীয় দিবসসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিবসের প্রকৃত তাৎপর্য কি শিক্ষার্থীদের মধ্যে তুলে ধরি? সেসব দিবস উদযাপনের  জন্য কি শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করি? নাকি আমি নিজেই এসব দিবস উদযাপনে অনীহা পোষণ করি, অনুপস্থিত থাকার কৌশল করি? 


*আমি কি শিক্ষার্থীর আশ্রয়স্থল হয়ে সকল সমস্যা শুনে সমাধানের চেষ্টা করি? নাকি ভয়ের পাত্র হয়ে বা দায়িত্বহীন হয়ে পাশ কাটিয়ে থাকতে চাই? 


*নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও পরিচর্যার  মাধ্যমে শিক্ষার্থীর ভিতর থেকে আমি কি তার যোগ্যতা বের করে আনার চেষ্টা করি? নাকি তার প্রতি মনোযোগ না দিয়ে, সকল কাজের অযোগ্য ভেবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করি? 


*নিজের সন্তানের মতোই কি শিক্ষার্থীদেরও 'তুমি' করে সম্বোধন করি? নাকি তুই তোকারি করি?


*শিক্ষার্থীদের মাঝে কি আমার সময় সবচেয়ে বেশি ভালো কাটে? নাকি অন্যত্র বেশি ভালো কাটে?


*শিক্ষার্থীর সাথে আমি কি সর্বদা পবিত্র সম্পর্ক বজায় রাখি? তাদের প্রতি কি নিষ্পাপ দৃষ্টিতে তাকাই? নাকি শিক্ষার্থীর সরলতা ও বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে লোভ-লালসা চরিতার্থ করার চেষ্টা করি?


*প্রাপ্য ছুটি না কাটানোর বা কম কাটানোর জন্য কি চেষ্টা করি? নাকি প্রয়োজন না হলেও ছুটি ভোগ করি এবং আরো অতিরিক্ত ছুটি কাটানোর চেষ্টা করি?


*শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাজ করার সময় কি আমার আগ্রহ বেশি থাকে? নাকি অন্য কাজ করার সময় আমার আগ্রহ বেশি থাকে? 


*নিজ দায়িত্বে নিজের আগ্রহে ও আনন্দসহকারে কি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাজ করি? নাকি কর্তৃপক্ষের আদেশে বাধ্য হয়ে মন খারাপ করে কোন কাজের দায় সারানোর চেষ্টা করি?


*দায়িত্ব-কর্তব্য পালনের কথা কি আমার বেশি মনে থাকে? নাকি সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার কথা বেশি মনে থাকে? 


*শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে ও শিক্ষার্থীর কল্যাণে আমি কি সর্বদা সচেষ্ট থাকি? নাকি এমন মনে করি যে- প্রতিষ্ঠানের উন্নতি-অবনতিতে আমার কী যায়-আসে? আমার তো বেতন পেলেই হলো। কেউ চেষ্টা করে না, আমি করবো কেন? সবাই ফাঁকি দেয়, আমি ফাঁকি দিব না কেন?


*আমি কি কর্তৃপক্ষের আদেশ-নির্দেশ মেনে চলি? নাকি এমন ভাবি যে- অনেকেই তো কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করে, আমি অমান্য করলে আর কী হবে? আমাকে তো কিছুই করতে পারবে না! 


*শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের কল্যাণে আরো কী কী করা উচিত তা চিন্তা করে নতুন নতুন কাজ কি আমি উদ্ভাবন করি? নাকি কাজ বেড়ে যাবার ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে রাখি এবং অন্যকেও গুটিয়ে রাখার চেষ্টা করি?


*প্রশাসনের কোন ভুলত্রুটি বা প্রতিষ্ঠানের কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা চোখে পড়লে আমি কি তা তৎক্ষণাৎ ধরিয়ে দিই? নাকি চুপ করে থাকি বা অন্যত্র বলে বেড়াই?


*প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কাজে আমি কি সাধ্যমত অংশগ্রহণ করি? শিক্ষার্থীদের কি বিভিন্ন কাজে অংশ গ্রহণে উৎসাহিত করি?  নাকি সকল কাজকর্ম থেকে আমি নিজেই পাশ কাটিয়ে থাকার কৌশল করি?  


*আমি কি পরিচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভালো কিছু আমাদের প্রতিষ্ঠানে প্রয়োগের প্রস্তাব করি, চেষ্টা করি? নাকি যিনি এমন প্রস্তাব করেন, চেষ্টা করেন, তাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করি?


*নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা আরো বৃদ্ধি করে আমি কি পূর্ণ দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পাদনে বেশি ঐকান্তিক? নাকি কেবল বেতন-ভাতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টায় সারাক্ষণ ব্যস্ত-তটস্থ? 


*সর্বোপরি শিক্ষক হিসেবে নিজের মানোন্নয়নে আমি কি সর্বদা সক্রিয়? নাকি দায়সারা দায়িত্ব পালন করে দিন গুজরানে নিয়োজিত? 


আমরা যদি আমাদের অবস্থা ও অবস্থান অনুসারে প্রতিনিয়ত এমন ছোট বড় বিভিন্ন প্রশ্নোত্তর  একান্তে ভেবে দেখি, তাহলে নিজেই বুঝতে পারবো শিক্ষকতায় আমি কতটা  যযথাযথ/পারফেক্ট আছি এবং আরো পারফেক্ট হওয়ার জন্য কোথায় কোথায় নিজের মধ্যে কীরকম অনুকূল পরিবর্তন আনয়ন করতে হবে। যতক্ষণ শিক্ষকতায় আছি ততক্ষণ অধিক পারফেক্ট হওয়ার চেষ্টা করাই তো আমার নৈতিক দায়িত্ব। কেননা, আমি তো সবকিছু জেনে-মেনে এই শিক্ষকতায় এসেছি ও রয়েছি। আমি বেতন-ভাতা কম পাচ্ছি বলে শিক্ষার্থীদের কম শিক্ষা দিবো তা তো হতে পারে না। আমার বেতন-ভাতা কম পাওয়ার দায় তো শিক্ষার্থীর নয়। 



মো. রহমত উল্লাহ্

সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক এবং অধ্যক্ষ -কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। 

Email - rahamot21@gmail 


২৫ জুন ২০২১ 






শিক্ষকের হাত আরও শক্তিশালী হোক। খোলা কাগজ, ১৭ জুলাই ২০২১

 শিক্ষকের হাত আরও শক্তিশালী হোক 

খোলা কাগজ > ১৭ জুলাই ২০২১

মো. রহমত উল্লাহ্


বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে জানা গেছে যে, 'রাজশাহীর বাগমারায় লকডাউন নিশ্চিত করতে গিয়ে এক কলেজ শিক্ষককে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এসি ল্যান্ডের (উপজেলা সহকারী কমিশনার-ভূমি) বিরুদ্ধে। ওই শিক্ষকের নাম আবদুল আজিজ। তিনি উপজেলার সাধনপুর পঙ্গু ও শিশু নিকেতন ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক।' এই সংবাদটি ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে শিক্ষক সমাজে। বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের ফেসবুক পেইজে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিচার দাবি করেছেন শিক্ষক সমাজ। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন অবস্থা বিরাজ না করলে হয়ত এর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসতেন অনেকেই। আমাদের দেশে শিক্ষক লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। বিশেষ করে অসহায় অভাবগ্রস্ত হওয়ার কারণে বেসরকারি শিক্ষকগণই লাঞ্চিত হয়ে থাকেন বারবার। কমিটির লোকজন দ্বারা লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাই ঘটে থাকে বেশি। কমিটির অনেক সদস্যই রক্ষকের ভূমিকা পালন করে না। তাই বিদ্যমান কমিটি ব্যবস্থা এখন প্রশ্নবিদ্ধ! বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিচারকদের কাছেই আশ্রয় নিতে হয় শিক্ষকদের। সেই বিচারকই যদি শিক্ষককে পিটিয়ে হাত ভেঙ্গে দেন তো শিক্ষকের আর আশ্রয় স্থল কোথায়? 


'তবে, এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এসি ল্যান্ড মাহমুদুল হাসান। দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, লকডাউন কার্যকর করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলাকালে তিনি লোকজনকে ধাওয়া দিয়ে বাড়িতে পাঠানোর সময় কলেজ শিক্ষক আবদুল আজিজ মাটিতে পড়ে গিয়ে আহত হন।' এসিল্যান্ড সাহেবের বক্তব্য অনুসারে মনে হচ্ছে কলেজ শিক্ষক সাহেব মিথ্যা কথা বলেছেন। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এসিল্যান্ড  মিথ্যাবাদী নাকি শিক্ষক মিথ্যাবাদী? স্থানীয়ভাবে বসবাসকারী একজন বেসরকারি শিক্ষক সরকারি প্রশাসনের স্থানীয় একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করবেন কেনো, কোন সাহসে? তাদের মধ্যে পূর্ব শত্রুতার কোন সংবাদ তো আমরা পাইনি। 


প্রাপ্ত সংবাদ অনুসারে শিক্ষক হিসাবে আব্দুল আজিজ যথেষ্ট উদারতার পরিচয় দিয়েছিলেন এই ঘটনায়। তার স্ত্রী সংবাদদাতাকে বলেছেন যে, ‘এসি ল্যান্ড ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমরা যদি তাকে ক্ষমা না করি, তবে তার চাকরি হুমকির মুখে পড়বে। তাই, আমরা তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। আমাদের আর কোনও অভিযোগ নেই।’ স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু সাহেব কর্তৃক আয়োজিত শিক্ষা টিভি'র এক আলোচনায় অংশ নিয়ে আব্দুল আজিজ সাহেব নিজেও বলেছেন যে, '…সকালবেলা টিএনও সাহেব এসিল্যান্ডকে নিয়ে আটটা সময় আমার বাসায় ঢুকেন। ঢোকার পরে আমাকে বলেন, আজিজ ভাই, কালকের অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য আমাদের ভুল হয়ে গেছে। আমাদেরকে আপনি ক্ষমা করেন। আপনার চিকিৎসার খরচ আমরা করব। উনারা এসেছিলেন শুক্রবার দিন। আমি প্রাথমিকভাবে বলেছি, ক্ষমা করে দিব। …কিন্তু পরবর্তীতে তারা আমার সঙ্গে আর কোন যোগাযোগ করেননি!'


ঘটনাটি সেই শুক্রবারেই শেষ হয়ে যেতে পারত এবং তা হতো সবচেয়ে উত্তম। ভুল/অপরাধ করে অনুতপ্ত হলে, দুঃখ প্রকাশ করলে, ক্ষমা চাইলে কেউ খাটো হয় না। ক্ষমা করলেও কেউ খাটো হয় না। সম্ভবত উভয়ই তাদের অবস্থান কম/বেশি পরিবর্তন করার কারণে আপস মিমাংসা সফল হয়ে ওঠেনি। কেননা, এই অভিযোগ অস্বীকার করে এসি ল্যান্ড মাহমুদুল হাসান জানান, 'আদালতের অভিযান পরিচালনা করছিলাম বলে আমাকে দোষ দেওয়া হচ্ছে। তিনি লোকজনের মধ্যে দৌঁড়ে যাওয়ার সময় পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন। তার আঘাত পাওয়ার খবর শুনে আমরা তার সঙ্গে কথা বলার জন্য বাড়িতে গিয়েছিলাম।’ ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টিও অস্বীকার করেন এসি ল্যান্ড মাহমুদুল হাসান। এদিকে আবদুল আজিজ সাহেবও এখন এই ঘটনা নিয়ে সোচ্চার। আবারো সেই প্রশ্ন: স্থানীয়ভাবে বসবাসকারী একজন বেসরকারি শিক্ষক সরকারি প্রশাসনের স্থানীয় দুইজন প্রভাবশালী কর্মকর্তার উপর এমন মিথ্যা কথা বলবেন কেনো, কোন সাহসে? শিক্ষক কেন বলবেন, এসিল্যান্ড সাহেব আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন, আমি ক্ষমা করে দিয়েছি বা ক্ষমা করে দিব? বিশেষ করে যেখানে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মহোদয়ের উপস্থিতির কথাও বলা হচ্ছে! এত বড় সাহস তিনি কোথায় পাবেন? তিনি বলেছেন, এসিল্যান্ড সাহেব পুলিশের হাত থেকে লাঠি নিয়ে তাকে বাড়ি মেরেছেন। অর্থাৎ দুটি ঘটনার জন্য দুজন সরকারি লোককেই শিক্ষক সাক্ষী মানছেন। তাকে আঘাত করার সাক্ষী পুলিশ সাহেব আর তার কাছে ক্ষমা চাওয়ার সাক্ষী টিএনও সাহেব। তাঁর মধ্যে কোনো দুরভিসন্ধি থাকলে তিনি সরকারি লোকদের সাক্ষী মানবেন কেন? ক্ষমা চাওয়ার কথা বা ক্ষমা দেওয়ার কথা স্বীকার করবেন কেন? শিক্ষক সাহেবের হাত ভাঙার দায়ে যদি এসিল্যান্ড  সাহেব কোন কারণে অনুতপ্ত না হয়ে থাকেন তাহলে শিক্ষকের বাসায় তিনি যাওয়ার তাগাদা অনুভব করলেন কেন? এর পরেও কি আমরা বলবো, একজন শিক্ষক সব কথাই মিথ্যা বলছেন? মার খেয়ে তিনি কোনো মামলা করেছেন বলেও তো শুনিনি! 


এখন যেহেতু বিষয়টি জাতীয়ভাবে জানাজানি হয়ে গেছে এবং যেহেতু পরস্পর পরস্পরকে দোষারোপ করা শুরু করেছেন, সেহেতু সকল সত্যতা উন্মোচিত হওয়া আবশ্যক। আমরা জানতে চাই কোথায় আসল সত্য লুকিয়ে আছে? কে সত্যি বলছেন আর কে মিথ্যা বলছেন? আপস যদি হয়ে থাকে তাহলে মীমাংসা হয়নি কেন? শিক্ষক বেসরকারি বলে তাঁকে তুচ্ছ মনে করা হয়েছে বা হচ্ছে কিনা? এসিল্যান্ড সরকারি বলে প্রশাসন ওনার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বা নিচ্ছে  কিনা? বাস্তবে এমন যদি হয়ে থাকে তো এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছুই হতে পারে না! এমনটি হতে দেওয়াও উচিত নয়, মেনে নেওয়াও উচিত নয়। সত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া, ন্যায় বিচার নিশ্চিত হওয়া সবার জন্যই মঙ্গল। প্রকাশ্য দিবালোকে ঘটে যাওয়া সেই দুটি ঘটনার নিশ্চয়ই আরো অনেক সাক্ষী বিদ্যমান। শিক্ষক সাহেব মিথ্যা বলে থাকলে অবশ্যই তাঁর শাস্তি হওয়া উচিত। আর এসিল্যান্ড সাহেব যদি আসলেই শিক্ষককে লাঠিপেটা করে থাকেন এবং সেজন্য অনুতপ্ত না হয়ে থাকেন, দুঃখ প্রকাশ না করে থাকেন, ক্ষমা প্রার্থনা না করে থাকেন, তাহলে তাঁরও যথাযথ বিচার হওয়া উচিত। 


মনে রাখতে হবে, সবারই কেউ না কেউ শিক্ষক ছিলেন, শিক্ষক আছেন। শিক্ষকের হাতেই মানুষ হবার চেষ্টা করেছেন আমাদের পূর্বপুরুষ। শিক্ষকের হাতেই মানুষ হবার চেষ্টা করেছি/করছি আমরা। শিক্ষকের হাতেই মানুষ হবার চেষ্টা করবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। শিক্ষকের হাত দুর্বল হলেই দুর্বল হবে আমাদের সন্তান। শিক্ষকের মনোবল ভেঙ্গে দিলে তৈরি হবে না সন্তানের মনোবল! শিক্ষক অসহায় হলে তৈরি হবে দিশেহারা সমাজ। বারবার মার খাওয়া শিক্ষকের হাতে তৈরি হবে বারবার মার খাওয়া জাতি! সুতরাং শিক্ষকের হাত ভেঙে দিলে চলবে না, ভেঙে দেওয়া যাবে না, ভেঙে দেওয়া সম্ভব না! বরং সবদিক থেকে আরও অনেক শক্তিশালী করতে হবে সকল শিক্ষকের হাত। তবেই সবদিক থেকে আরও শক্তিশালী হবে আমাদের জাতি। 


মো. রহমত উল্লাহ্

শিক্ষক, সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক 


অধ্যক্ষ -কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।




শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগ: কী হওয়া উচিত বিবেচ্য বিষয়? সমকাল, ১০ জুন ২০১৯

শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান-প্রধান নিয়োগ:

কী হওয়া উচিত বিবেচ্য বিষয়?

সমকাল > ১০ জুন ২০১৯ (পরিমার্জিত) 



মো. রহমত উল্লাহ্‌

স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার প্রধান নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রায়শই অনিয়মের অভিযোগ উঠে থাকে। বেসরকারি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই অনিয়মের অভিযোগ অত্যধিক। শিক্ষক অযোগ্য হলে দীর্ঘমেয়াদী অপুরণীয় ক্ষতি হয় দেশ ও জাতির। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান-প্রধান অযোগ্য হলে জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পায় সেই ক্ষতির পরিমান। শিক্ষক ও পরিচালনা পরিষদ ভাল হলে একটি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের প্রধানের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে ঐ প্রতিষ্ঠানের সফলতা। যোগ্য প্রতিষ্ঠান-প্রধানই প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নয়নে গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেন স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি বিভিন্ন পরিকল্পনা। নিশ্চিত করেন শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা। বিভিন্ন মুখি সহশিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের করে তোলেন মননশীল। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্রতিনিয়ত প্রদান করেন উদ্দীপনা, বৃদ্ধি করেন কর্ম উদ্যম, নিশ্চিত করেন সফলতা। শিক্ষার্থীদের প্রদান করেন নৈতিক, অধুনিক ও বিজ্ঞানমনষ্ক শিক্ষা। গড়ে তোলেন ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক সুসম্পর্ক। নিশ্চিত করেন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনের সচ্ছতা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন। এছাড়াও একজন ভাল প্রতিষ্ঠান-প্রধান প্রতিনিয়ত করে থাকেন আরও অনেক অনেক শুভ কাজ। এককথায় জুতা সেলাই থেকে চন্ডিপাঠ পর্যন্ত করতে হয় একজন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান-প্রধানকে। তাই তাঁর থাকতে হয় নানামুখি যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা। যা তালিকা করে শেষ করা অসম্ভব। তাই শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের মান, ধরন, অবস্থা ও অবস্থান অনুসারে যথাযোগ্য প্রধান বাছাই করা খুব সহজ কাজ নয়। যারা বাছাই করবেন তাদেরও থাকতে হবে ততোধিক সততা, দক্ষতা, নিরপেক্ষতা ও দূরদর্শিতা।


কেবল একাডিক রেজাল্ট দেখে কিংবা লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে প্রতিষ্ঠান-প্রধান হবার যোগ্যতা পরিমাপ করা প্রায় অসম্ভব। এসব পরীক্ষায় কেউ বেশি নম্বর পেলেই তাকে প্রতিষ্ঠান প্রধান হবার জন্য সুযোগ্য মনে করা সঠিক নয়। কেননা, অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রার্থীর সংখ্যা কমানোর উদ্দেশ্যে অধিক নম্বরের অপ্রাসঙ্গিক ও অতিজাটিল প্রশ্নে নেওয়া হয় এসব লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা। আসলে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান-প্রধান হবার যোগ্যতার মাপকাঠি আরো অনেক বিস্তৃত। এটি অভিজ্ঞতা ভিত্তিক একটি জটিল প্রশাসনিক পদ। এই পদে প্রশাসন থেকে ব্যবস্থাপনাই বেশি। এইরূপ নির্বাহী পদে অধিক পাকা/পরিপক্ক লোক নিয়োগের জন্য বাছাই প্রক্রিয়ায় হাতে লিখিত পরীক্ষার গুরুত্ব অনভিজ্ঞ এন্ট্রি পোস্টের তুলনায় অনেক কম। ব্যাংক-বীমাসহ দেশী-বিদেশী অধিকাংশ আর্থিক/অনার্থিক প্রতিষ্ঠানেই নির্বাহী/উচ্চ পদে নিয়োগের জন্য প্রার্থীর জীবন-বৃত্তান্ত বিবেচনা করে সাক্ষাতকার নেওয়া হয়ে থাকে। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান-প্রধানের কলমের জোরের পাশাপাশি পারিপার্শিক জ্ঞান, মনোবৈজ্ঞানিক জ্ঞান, বাস্তব অভিজ্ঞতা, তাতক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, মানবীয় গুণাবলি ও সতসাহস থাকা অত্যাবশ্যক। প্রতিষ্ঠানের প্রধান বিখ্যাত ও সুযোগ্য হলে তাঁকে নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক গর্বিত হয়। তাঁর কারণে প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। শিক্ষার্থীরা বিখ্যাত ও সুযোগ্য হবার স্বপ্ন দেখে। কর্মে, কথায়, ধর্মে, জ্ঞানে তিনি হবেন সকল মানুষের শ্রদ্ধার পাত্র। শিক্ষার্থীদের জন্য হবেন সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য আপন মানুষ। তাই কাউকে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান-প্রধান করার আগে শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অবদান, মন-মানসিকতা, আচার-আচরন, নৈতিক চরিত্র, জাতীয়তা বোধ, দেশপ্রেম, ইত্যাদিসহ দীর্ঘ অতীত জীবনের কর্মকান্ড সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া খুব জরুরি। ছোট বেলা থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রদত্ত নেতৃত্ব ও অর্জিত কৃতিত্বসহ ভালভাবে মূল্যায়ন করা উচিত তাঁর পূর্ণ জীবন-বৃত্তান্ত। নেওয়া উচিত প্রার্থীর দীর্ঘ সাক্ষাতকার (দমবন্ধ মৌখিক পরীক্ষা নয়)। উন্নত বিশ্বে অন-লাইনেও হয়ে থাকে সেই সাক্ষাতকার। গুগল বা সোসাল মিডিয়া থেকেও নেওয়া হয় প্রার্থী সম্পর্কিত তথ্যাদি।


আমাদের দেশে বেসরকারি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের প্রধান নিয়োগে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার একটা প্রচলন বিদ্যমান। অথচ এই লিখিত এবং/অথবা মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার লিখিত কোন বিধান বা বাধ্যবাদকতা নেই। তদুপরি নেওয়া হলে কোন কোন বিষয়ক প্রশ্নে শতকরা কত নম্বরের লিখিত এবং কত নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা নিতে হবে তাও নির্ধারিত নেই। তাই এক্ষেত্রে নিয়োগ নির্বাচনী কমিটির সেচ্ছাচারিতার অবাধ সুযোগ বিদ্যমান। আমি মনেকরি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান-প্রধান নিয়গের জন্য বাছাই প্রকৃয়ায় একজন প্রার্থীর কোন কোন বিষয়/দিক কীভাবে কতটুকু মূল্যায়্ণ করতে হবে তার একটা সুনির্দিষ্ট নীতিমালা জারি থাকা আবশ্যক। সেক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্টেটাস অনুসারে যথাযোগ্য প্রধান নিয়োগের বাছাই প্রকৃয়ায় প্রাসঙ্গিক লিখিত পরীক্ষা ও দীর্ঘ সাক্ষাতকারের পাশাপাশি অনুসরণ করা যেতে পারে আমাদের জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান নির্বাচনের জন্য প্রবর্তীত কিছু কৌশল বা নীতিমালা। যার আলোকে মূল্যায়ণ করা যেতে পারে একজন প্রার্থীর: (১) শিক্ষাগত যোগ্যতা (২) অভিজ্ঞতা (৩) জ্ঞান ও নিষ্ঠা (৪) পরিবেশ সচেতনতা, সৃজনশীলতা ও দূরদর্শিতা (৫) ছাত্র-ছাত্রী ও সহকর্মীদের উপর প্রভাব এবং অভিভাবক ও কর্তৃপক্ষের সাথে সহযোগিতার প্রবনতা (৬) চারিত্রিক দৃঢ়তা, ব্যক্তিত্ব, সততা ও সুনাম (৭) দায়িত্ব-কর্তব্য বোধ এবং প্রশাসনিক দক্ষতা ও আর্থিক শৃঙ্খলা (৮) মাল্টিমিডিয়া ক্লাসে আগ্রহ ও আইসিটি বিষয়ে দক্ষতা (৯) সহশিক্ষা বিষয়াদিতে আগ্রহ ও দক্ষতা (১০) পাঠ্যপুস্তক প্রনয়ণ ও পেশাগত/গবেষণামূলক সৃজনশীল প্রকাশনা (১১) গুণগত মানের শিক্ষায় উদ্ভাবনী/সৃজনশীল উদ্যোগ ও উত্তম চর্চার নিদর্শন (১২) দেশপ্রেম ও জাতীয়তা বোধ। উল্লিখিত বিষয়সমূহে থাকা উচিত শতকরা ষাট ভাগ নম্বর। যদিও এসকল বিষয় সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা কষ্ঠসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ কাজ। এক্ষেত্রে, যে প্রার্থী ছাত্র জীবনে ভাল ছাত্র ছিলেন, ক্লাসে কেপ্টেইন ছিলেন, রোভার স্কাউট বা গার্স গাইড লিডার ছিলেন, বিএনসিসি লিডার ছিলেন, অসহায়দের সহায়তায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন আয়োজনে নেতা ছিলেন, ক্রীড়া সংগঠক ছিলেন, সাংবাদিকতা/লেখালেখিতে সক্রিয় ছিলেন, রচনা-বক্তৃতা-বিতর্কে বিজয়ী ছিলেন, জাতীয় দিবস উদযাপনে সক্রিয় ছিলেন, কল্যাণমূখি ক্লাব বা সংগঠনের উদ্যোক্তা/নেতা ছিলেন, সাধারন শিক্ষার্থীদের আপন ছিলেন, স্টুডেন্ড কেবিনেট/কাউন্সিলে নির্বাচিত ছিলেন, শিক্ষকগণের খুব প্রিয় পাত্র ছিলেন, সর্বোপরি শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়ে ছিলেন এবং যিনি শিক্ষকতা জীবনে এসে শিক্ষার্থীদের প্রিয় শিক্ষক হয়েছেন, শিক্ষকদের প্রতিনিধি হয়েছেন, পরিচালনা কমিটির সদস্য হয়েছেন, অত্যন্ত সততারসাথে অডিট ও উন্নয়ন কমিটিতে কাজ করেছেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনে ও জাতীয় দিবস উদযাপনে অগ্রণী ভুমিকা রেখেছেন, বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বক্তব্য রেখেছেন, প্রতিষ্ঠানের ক্লাস রূটিন ও বাজেট তৈরির করেছেন, পরীক্ষা পরিচালনা করেছেন, বোর্ড/বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষক হয়েছেন, প্রশাসনের বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করেছেন, দাপ্তরিক কাজে বিভিন্ন অফিসে গিয়েছেন, অভিভাবকদের সাথে সুসম্পর্ক রেখেছেন, পাঠ্যবই/মননশীল বই বা শিক্ষা বিষয়ক লেখালেখি করছেন, চিন্তা-চেতনায় বিজ্ঞানমনস্ক ও জাতীয়তা বোধে সমৃদ্ধ হয়েছেন, সর্বোপরি শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন এবং যিনি কোন প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সততা, দক্ষতা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন বা শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন; এমন প্রার্থী/প্রার্থীগণ পেতে  পারেন অন্যের তুলনায় অধিক নম্বর।      

     

যতই কষ্টসাধ্য যুক্তিযুক্ত মান নির্ধারন করে উল্লিখিত বিষয়গুলোর আলোকে সঠিক জীবন-বৃত্তান্ত মূল্যায়নের মাধ্যমে নিরপেক্ষ ভাবে বাছাই করে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান-প্রধান নিয়োগ করা হলে অবশ্যই অধিক লাভবান হবে শিক্ষার্থী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হচ্ছেন জীবন্ত আইকন। তাঁর দিকে চোখ পড়ে সবারই। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা তাঁকে পেতে চায় সূর্যের মত আলোপ্রদ, বটবৃক্ষের মত ছায়াপ্রদ, আকাশের মত অসীম, প্রকৃতির মত যুক্তিবাদী, মুক্তি সেনার মত প্রতিবাদী, অপরিসীম জ্ঞান ও দক্ষতার অধিকারী এক পূজনীয় ব্যক্তিত্ব রূপে। কেননা, তিনি হচ্ছেন সবার বড় স্যার। সচেতন ও অবচেতন ভাবে এই বড় স্যারকেই অনুকরণ ও অনুসরণ করে অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। ধারন করে বড় স্যারের ন্যায়নীতি, সতাদর্শ ও সদাচরন। হয়ে উঠে এ+ মানুষ। তাই এসব দিক বিবেচনায় রেখে সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রয়োগের মাধ্যমে নিরপেক্ষভাবে বাছাই করে নিয়োগ করা উচিত অধিক যোগ্য শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান-প্রধান।


মো. রহমত উল্লাহ্‌

অধ্যক্ষ

কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ

মোহাম্মদপুর, ঢাকা। ০১৭১১১৪৭৫৭০ 

প্রত্যেক শিক্ষকের জন্য প্রশিক্ষণ অত্যাবশ্যক, প্রথম আলো, ০৭ জুলাই ২০২১

 পত্রিকার লিংক

প্রত্যেক শিক্ষকের জন্য প্রশিক্ষণ অত্যাবশ্যক

প্রথম আলো, ০৭ জুলাই ২০২১

মো. রহমত উল্লাহ্


পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে শিক্ষক হবার জন্য ব্যাচেলর ইন টিচিং ডিগ্রি বাধ্যতামূলক। তিনি যে পর্যায়ের, যে বিষয়ের শিক্ষকই হতে চান না কেন তার নিজস্ব বিষয়ে ডিগ্রির পাশাপাশি ব্যাচেলর ইন টিচিং ডিগ্রি থাকতেই হবে। অর্থাৎ পাঠদানের বৈজ্ঞানিক কৌশল না জেনে কেউ শিক্ষক হতে পারেন না। অথচ আমাদের দেশে যে কেউ যে কোনো সময় শিক্ষক হয়ে যাচ্ছেন! শিক্ষক হবার জন্য শিক্ষকতা শিক্ষা করার অর্থাৎ শিক্ষা মনোবিজ্ঞান ও পাঠদানের আধুনিক কলাকৌশল আয়ত্ত করার কোন বাধ্যবাধকতা নেই! এমনকি অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় কেউ তার কাঙ্খিত অন্যান্য পেশায় যাওয়ার চেষ্টা করতে করতে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে শিক্ষকতায় আসেন/এসেছেন।  দীর্ঘদিন ধরে এদেশে শিক্ষকতায় আর্থিক সুবিধা অত্যন্ত কম থাকা এর অন্যতম কারণ। নিজেই নিজেকে ব্যর্থ মনে করে অনিচ্ছায় শিক্ষকতায় আশা ও থাকা একজন মানুষ মনেপ্রাণে শিক্ষক হয়ে ওঠার সম্ভাবনা খুব কম থাকে। এরমধ্যে যিনি নিজের ঐকান্তিক চেষ্টায় প্রয়োজনীয় জ্ঞান, প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা লাভ করে শিক্ষক হয়ে উঠেন তিনি বা তারা সংখ্যায় খুব বেশি নন। 


যতই আধুনিক শিক্ষা উপকরণ যুক্ত করা হোক, উন্নত সুযোগসুবিধা সম্বলিত বহুতল ভবন নির্মাণ করা হোক; শিক্ষকের মান বৃদ্ধি করা সম্ভব না হলে শিক্ষার মান বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়। শিক্ষকের মান বৃদ্ধি করা খুবই কঠিন কাজ বিশেষ করে আমাদের দেশে যেখানে সর্বোচ্চ মেধাবীরা শিক্ষকতায় আসেননি, আসছেন না যুগ যুগ ধরে। টাকা হলে রাতারাতি শিক্ষা উপকরণ বদল করা যায়, পুরনো ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করা যায়; কিন্তু শিক্ষকদের বদল বা মান বৃদ্ধি করা যায় না। শিক্ষকের মান বৃদ্ধি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। শিক্ষকের বেতন সর্বোচ্চ নির্ধারণ করে দেওয়ার সাথে সাথেই আমাদের সকল শিক্ষকের মান সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত হয়ে যাবে এমনটি অবাস্তব। কেননা, এই আমি যতদিন আছি ততদিন দিয়েই যাবো ফাঁকি, রেখেই যাব কম দক্ষতার স্বাক্ষর। ছোটবেলা থেকে এমন বলেই তো আমি হতে পারেনি ভালো ছাত্র, যেতে পারিনি অন্য কোথাও। তথাপি বৃদ্ধি করতে হবে আমার তথা শিক্ষকদের আর্থিক সুবিধা। প্রশিক্ষিতদের দিতে হবে আরো বর্ধিত বেতন। শিক্ষকতায় আনতে হবে সর্বোচ্চ মেধাবী ও যোগ্যদের। আমাদের সর্বাধিক মেধাবী ও যোগ্য সন্তানেরা যেদিন সাগ্রহে এসে দখল করবে আমাদের স্থান সেদিনই উন্নীত হবে আমাদের শিক্ষকদের কাঙ্খিত মান। সেটি যতই সময়সাপেক্ষ হোক এখন হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না কোন অজুহাতেই। ব্যাপক প্রশিক্ষণ দিয়ে যথাসম্ভব বৃদ্ধি করার চেষ্টা করতে হবে আমার মত বিদ্যমান শিক্ষকদের মান। যতটুকু সম্ভব প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর পাঠদানে। এর কোনো বিকল্প নেই বর্তমান বাস্তবতায়।


আমাদের দেশে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের সুযোগ ও সুবিধা দুটোই অত্যন্ত সীমিত। ফলে এমপওভুক্ত ৫ লাখসহ বিপুল সংখ্যক প্রাইভেট ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অধিকাংশ শিক্ষকই রয়েছেন প্রশিক্ষণের বাইরে। কেননা, নিয়মিত শিক্ষকতার পাশাপাশি বিএড/ এমএড কোর্স সম্পন্ন করার সুযোগ অবারিত নয়। প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের সংখ্যা কম থাকায় শিক্ষাছুটি দিতে চাননা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে পাঠিয়ে দিলে শিক্ষার্থীরা ক্লাস থেকে বঞ্চিত হয় বিধায় কর্তৃপক্ষ অনীহা দেখিয়ে থাকেন। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস পাওয়ার বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ছুটি না নিয়ে কর্মরত শিক্ষকদের বিএড ও এমএড কোর্স করার সুযোগ থাকা আবশ্যক। 


বর্তমানে শিক্ষকদের বিএড ও এমএড কোর্স করার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোতে এবং ইউজিসির অধীন কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ব্যবস্থা বিদ্যমান সেখানে ইভিনিং কোর্স করার কোন অনুমোদিত সুযোগ নেই। অথচ এমন সুযোগ থাকা খুব বেশি প্রয়োজন। যেমন আইনজীবীদের জন্য রয়েছে অনুমোদিত নাইট কলেজ। কর্মরত শিক্ষকগণ বিশেষ করে অধিকাংশ বেসরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য না পাচ্ছেন ছুটি, না পাচ্ছেন ইভিনিং কোর্স করার সুযোগ। ফলে তারা নিতে পারছেন না শিক্ষক হবার প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ। টিটি কলেজগুলো পাচ্ছেনা কাঙ্খিত প্রশিক্ষণার্থী। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সক্রিয় বিবেচনা করা জরুরি। প্রয়োজনে সংশোধন বা পরিবর্তন বা প্রবর্তন করা উচিত ইভিনিং কোর্স চালু সংক্রান্ত বিধি-বিধান।


প্রাথমিক স্তরের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য নেওয়া উচিত ব্যাপক পরিকল্পনা। শুধু বেসরকারি বা প্রাইভেট নয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও রয়েছেন বিপুল সংখ্যক কম যোগ্য, কম দক্ষ শিক্ষক! শিশুদের পাঠদান অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া। শিশু-মনোবিজ্ঞান সম্পর্কিত জ্ঞান ও আধুনিক পাঠদান কৌশল আয়ত্ত না করে শিশুদের পাঠদান প্রায় অসম্ভব। শুধু সরকারি সাড়ে ৪ লাখ শিক্ষকের জন্য নয়, বিপুল সংখ্যক বেসরকারি/প্রাইভেট স্কুল এবং মাদ্রাসার শিক্ষকদের জন্যও থাকা উচিত প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ ও বাধ্যবাধকতা। কেননা, তারাও পাঠদান করেন আমাদের সন্তানদের। 


অপরদিকে আমরা ভুলেই বসে আছি যে, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষকদেরও জানতে হয় টিচিং মেথট। শুধু নিজের পঠিত বিষয়ে ভালো ফলাফল করলেই ভালো শিক্ষক হওয়া যায় না। জানা এবং জানানোর মধ্যে অনেক তফাৎ। উন্নত অনেক দেশে পাঠদান যোগ্যতা ব্যতীত পিএইচডি ডিগ্রি থাকলেও কোন পর্যায়েরই শিক্ষক হওয়া যায় না। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া তো আরো অনেক দূরের কথা। শিক্ষক হতে হলে বিষয়ভিত্তিক ডিগ্রির পাশাপাশি ব্যাচেলর ইন টিচিং বা অনুরূপ ডিগ্রি থাকতে হয়। আমাদেরও ভাবতে হবে তেমনভাবে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও গুরুত্ব দিতে হবে তাদের বিদ্যমান ও অনাগত শিক্ষকদের আধুনিক টিচিং মেথড তথা পাঠদান কলাকৌশল ভিত্তিক প্রশিক্ষণের বিষয়ে।


সকল পর্যায়ের বিপুলসংখ্যক বিদ্যমান ও অনাগত শিক্ষকের পুনঃ পুনঃ প্রশিক্ষণের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার জন্য ৫৪ টি পিটিআই এবং ১৪ টি সরকারি ও ৭১ টি বেসরকরি টিটি কলেজ যথেষ্ট নয়। বর্তমানে শুধু মাধ্যমিক স্তরেই প্রশিক্ষণ বিহীন শিক্ষকের সংখ্যা ২ লক্ষাধিক! একজন শিক্ষক একবার প্রশিক্ষণ নিয়ে সারা জীবন শিক্ষকতা করবেন এমনটি হওয়া উচিত নয়। পুরনো প্রশিক্ষণ নবায়ন করার জন্য, অধিক উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান করার জন্য, অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করার জন্য, উৎসাহিত উজ্জীবিত করে কর্মোদ্যম বৃদ্ধি করার জন্য প্রতি পাঁচ বছর পর পর দেওয়া উচিত আপডেট প্রশিক্ষণ। অনন্তকাল চলমান এই ব্যাপক কর্মযজ্ঞ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করার জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করতে হবে প্রয়োনীয়সংখ্যক  পাঠদান প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানগুলোতে থাকতে হবে সর্বস্তরের শিক্ষক তৈরির জন্য যথা উপযোগী প্রশিক্ষণ প্রদানের অত্যাধুনিক ব্যবস্থা। শিক্ষকদের বারবার প্রশিক্ষণে যাওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা যাতে প্রাপ্য ক্লাস থেকে বঞ্চিত না হয় সেজন্য রাখতে হবে ইভিনিং কোর্স করার সুযোগ। 


অবশ্যই শিথিল করতে হবে টিচিং প্রশিক্ষণে ভর্তির নিয়মকানুন। বিশেষ করে বিদ্যমান শিক্ষকদের সবাইকেই দিতে হবে ভর্তিতে অগ্রাধিকার। মনে রাখতে হবে বিদ্যমান শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ খুব বেশি প্রয়োজন। যা অবশ্যই হতে হবে বাধ্যতামূলক। যে শিক্ষকের একাডেমিক রেজাল্ট ভাল নেই তার জন্য প্রশিক্ষণ আরো বেশি প্রয়োজন। সকল শিক্ষকের জন্য টিচিং প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করে, বিদ্যমান শিক্ষকদের জন্য ভর্তির নিয়ম শিথিল করে, অনাগত শিক্ষকদের জন্য হাই কোয়ালিটি এনশিওর করে, প্রশিক্ষণ প্রতষ্ঠানগুলোতে ইভিনিং কোর্স চালু করে দিলেই প্রয়োজন হবে আরো প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের।


নিয়োগপত্র পেলেই শিক্ষক হওয়া যায় না; শিক্ষক হয়ে উঠতে হয়। শিক্ষক হয়ে ওঠার জন্য অন্যান্য অনেক যোগ্যতা ও গুণাবলীর পাশাপাশি অত্যাধুনিক পাঠদান কলা-কৌশল শিক্ষা করা (ব্যাচেলর ইন টিচিং ডিগ্রি) অত্যাবশ্যক। এই দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের টিচার্স ট্রেনিং কলেজ গুলোর নাম হওয়া উচিত 'টিচিং কলেজ'। [Teaching colleges provide classes to help prepare people to teach at various levels. These may include elementary, middle and secondary school levels, as well as higher education, special education, adult education, vocational education etc.]



আগামীতে অন্যান্য উন্নত দেশের মতো আমাদেরও এমন একটা পর্যায়ে উপনীত হতে হবে যে, যারা শিক্ষকতায় আসবেন তারা আগেই প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে আসবেন। প্রশিক্ষণবিহীন কেউ শিক্ষক হবার জন্য আবেদন করতে পারবেন না। সেইসাথে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করতে হবে আমাদের শিক্ষক হবার যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণের মান। কেননা, মানব সন্তানকে মানুষ করার কঠিনতম কর্মটি হচ্ছে শিক্ষকের। শিক্ষক যত সুযোগ্য হবেন, আদর্শ হবেন, উত্তম হবেন; শিক্ষার্থী তথা সর্বস্তরের নাগরিক তত যোগ্য হবেন, আদর্শ হবেন, উত্তম হবেন। 



মো. রহমত উল্লাহ্

সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ এবং অধ্যক্ষ - কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা।

লেখা - ২৫ মার্চ ২০২১

করোনাকালীন শিক্ষায় এসাইনমেন্টের গুরুত্ব > দৈনিক ইত্তেফাক, ০৬ ও ০৭ জুলাই ২০২১

পত্রিকার লিংক     পত্রিকার লিংক

করোনাকালীন শিক্ষায় এসাইনমেন্টের গুরুত্ব 

দৈনিক ইত্তেফাক, ০৬ ও ০৭ জুলাই ২০২১

মো. রহমত উল্লাহ্


কিছু দিন আগেও আমাদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা এসাইনমেন্ট শব্দটির সঙ্গে পরিচিত ছিল না। কেবল বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এসাইনমেন্ট শব্দটির সঙ্গে পরিচিত ছিল। কেননা, তাদের এসাইনমেন্ট করতে হতো। মহামারি করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রায় দেড় বছর যাবৎ সরাসরি পাঠদান বন্ধ থাকায়, অনলাইন পাঠদান শতভাগ সফল না হওয়ায়, শিক্ষা মূল্যায়নে অনলাইন ব্যবস্থা প্রবর্তন সম্ভব না হওয়ায় বর্তমানে এসাইনমেন্ট নির্ভর হয়ে পড়েছে আমাদের শিক্ষা ও শিক্ষা মূল্যায়ন। এটি অবশ্যই আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বিকল্প সমূহের মধ্যে অন্যতম। মৃত্যু ঝুঁকির কারণে সম্ভব হচ্ছে না সরাসরি পাঠদান। পর্যাপ্ত ডিভাইস, ইন্টারনেট ও প্রশিক্ষণ না থাকায় সম্ভব হচ্ছেনা সম্পূর্ণভাবে অনলাইন পাঠদান ও মূল্যায়ন। এমতাবস্থায় এসাইনমেন্টকেই মনে করা হচ্ছে উত্তম ব্যবস্থা। 


এসাইনমেন্ট শব্দটির বাংলা অর্থ হচ্ছে নির্দিষ্ট কর্ম। এসাইনমেন্ট করা মানে হচ্ছে কোন নির্ধারিত কাজ করা। Assignment এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হচ্ছে duty, job, task ইত্যাদি। সহজ করে বলতে গেলে শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এসাইনমেন্ট হচ্ছে বাড়ির কাজ। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা ছোটবেলা থেকেই বাড়ির কাজ তথা বাড়িতে লেখাপড়া করে অভ্যস্ত। কেননা, শিক্ষকগণ প্রতিষ্ঠানে যাই পড়ান না কেন শিক্ষার্থীদের বাড়িতে গিয়ে করার জন্য কিছু লেখাপড়া নির্দিষ্ট করে দিয়ে থাকেন। বিশেষ করে কোন কিছু লেখার কাজ বাড়িতেই করতে বলা হয়ে থাকে। আমাদের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকগণও এটি প্রত্যাশা করেন। যেটি প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের কাছেও হোম ওয়ার্ক বা HW নামে পরিচিত। সুতরাং এসাইনমেন্ট শব্দটি শুনে আমাদের ঘাবড়ে যাওয়ার মত কিছুই নেই। 


যেহেতু এসাইনমেন্ট প্রবর্তন এর মধ্যে দুটি উদ্দেশ্য বিদ্যমান সেহেতু শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সবার জন্যই এসাইনমেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত এসাইনমেন্ট দ্বারা শিক্ষা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং দ্বিতীয়ত এসাইনমেন্ট মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষা মূল্যায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত সংক্ষিপ্ত সিলেবাস অনুসারে বাছাইকৃত চেপ্টার থেকে দেওয়া হচ্ছে বাড়ির কাজ তথা নির্দিষ্ট কর্ম তথা এসাইনমেন্ট। শিক্ষার্থীরা যাতে প্রতিটি এসাইনমেন্ট সংশ্লিষ্ট চেপ্টার ভালোভাবে পড়ে, বুঝে, স্টাডি করে লিখতে পারে সেজন্য দেওয়া হচ্ছে এক সপ্তাহ সময়। শিক্ষকগণের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে এসাইনমেন্ট (প্রশ্ন-উত্তর প্রবন্ধ-নিবন্ধ, গণিত-বিজ্ঞান ইত্যাদি) লেখার কলাকৌশল। শিক্ষকগণকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে এসাইনমেন্ট মূল্যায়নের বিভিন্ন মানদন্ড এবং বাতলে দেওয়া হয়েছে মূল্যায়নের ও শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়নের বিভিন্ন উপায়। 


এমতাবস্থায় আমি প্রিয় শিক্ষার্থীদের বলবো, এসাইনমেন্টকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতে হবে তোমাদের। এসাইনমেন্ট অর্থাৎ নির্দিষ্ট কর্ম সম্পাদনের জন্য স্টাডি করেই অর্জন করতে হবে প্রয়োজনীয় শিক্ষা। ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে নির্ধারিত  চেপ্টারের খুঁটিনাটি সকল বিষয়। প্রয়োজনে অনলাইনে ডিসকাস করে নিতে হবে সহপাঠী বা শিক্ষকগণের সঙ্গে। চেষ্টা করতে হবে নিয়মিত অনলাইন ক্লাস করার। মনে রাখতে হবে, শুধু লেখার কাজটি এসাইনমেন্ট নয়; স্টাডি করা, জ্ঞান অর্জন করা, তথ্য সংগ্রহ করা, তথ্য উপস্থাপনের কৌশল উদ্ভাবন করা ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে নির্ধারিত বিষয়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষা লাভ করাই মূলত এসাইনমেন্ট। লেখার কাজটি হচ্ছে এই এসাইনমেন্টের বা নির্ধারিত কর্মসমূহের সুন্দর পরিবেশনা। অর্থাৎ এসাইনমেন্ট এর জন্য স্টাডি করা হচ্ছে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা এবং সেই এসাইনমেন্ট লিখিতভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে পরীক্ষার উত্তরপত্র তৈরি করা। এই দুটো কাজই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হয়, যদি সরাসরি পরীক্ষা গ্রহণ সম্ভব না হয়, তাহলে হয়তো এই এসাইনমেন্টের মাধ্যমেই নির্ধারিত হবে তোমাদের পরীক্ষার ফলাফল তথা শিক্ষা মূল্যায়ন। অর্থাৎ শিক্ষা ও সনদ এ দুটোই লাভ করতে হবে এই নির্দিষ্ট কাজের বা এসাইনমেন্টের মাধ্যমে। তাই কোনভাবেই ফাঁকি দেওয়া উচিত নয় এই কাজে। নিজের লেখাপড়ায় ফাঁকি দেওয়া মানে নিজেকেই ফাঁকি দেওয়া। বজায় রাখতে হবে শতভাগ সততা। মূল পাঠ্য বই পড়তে হবে বারবার। নোট করে নিতে হবে বিভিন্ন পয়েন্ট বা তথ্য। আয়ত্ত করে নিতে হবে গুরুত্বপূর্ণ নাম, তারিখ, সূত্র ইত্যাদি। চূড়ান্ত এসাইনমেন্ট পেপার বা উত্তরপত্র লেখার আগে দু'একবার লিখে নিতে হবে রাফ খাতায়। অবশ্যই নিজের মেধা ও মনন থেকে লিখতে হবে চূড়ান্ত এসাইনমেন্ট পেপার। 


শিক্ষার্থীদের এসাইনমেন্ট কার্যক্রম চলাকালে সম্মানিত অভিভাবকগণের থাকতে হবে অত্যন্ত সজাগ ও সক্রিয়। প্রিয় সন্তানকে প্রদান করতে হবে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা। এসাইনমেন্টের মাধ্যমে সে যেন অর্জন করতে পারে প্রয়োজনীয় শিক্ষা এবং লাভ করতে পারে প্রকৃত শিক্ষাভিত্তিক সনদ। যেহেতু আপনার সন্তান ঘরে বসে অর্জন করছে শিক্ষা এবং তৈরি করছে উত্তরপত্র সেহেতু শতভাগ সততার সঙ্গে এসব করছে কিনা তা খেয়াল রাখা আপনার গুরু দায়িত্ব ও কর্তব্য। এই এসাইনমেন্ট পেপার তৈরি করার কাজটি অনেকটা 'ওপেন বুক এক্সাম' এর মতো। তাই অন্য কারো প্রস্তুতকৃত এসাইনমেন্ট কপি করার মানসিকতা যেন আপনার সন্তানের তৈরি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। পর্যাপ্ত সুযোগ পাওয়ার পরও যেন অসদুপায় অবলম্বন না করে সেই শিক্ষায় শিক্ষিত করার সুযোগ কিন্তু এখনই। মনে রাখতে হবে, সন্তান শুধু জিপিএ ৫ পেলেই হবে না, এ প্লাস মানুষ হতে হবে।


শিক্ষার্থীদের এসাইনমেন্ট দেওয়া, স্টাডি করার কৌশল ও রেফারেন্স বাতলে দেওয়া, সঠিকভাবে কাজটি করিয়ে নেওয়া, প্রয়োজনে মানোন্নয়ন করিয়ে নেওয়া, স্টাডি পেপার মূল্যায়ন করা ইত্যাদি যাবতীয় কাজ যেহেতু শিক্ষক করে থাকেন সেহেতু শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্য সর্বাধিক। ঘরবন্দী শিক্ষার্থীদের মনোবল চাঙ্গা করা, সুস্থ থাকার ব্যাপারে পরামর্শ প্রদান করা, প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করার সাহস ও কৌশল প্রদান করা,  বই পড়া ও স্টাডি করার ব্যাপারে উৎসাহিত করা, এসাইনমেন্ট পেপার তৈরি করার ব্যাপারে গাইড করা, সততা ধরে রাখার মত নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব-কর্তব্য সঠিকভাবে সম্পাদনের মাধ্যমে একজন শিক্ষক নিশ্চিত করতে পারেন তাঁর শিক্ষার্থীর সঠিক শিক্ষা তথা 'সুস্থ দেহে সুস্থ মন'। এসাইনমেন্ট পেপার তথা সম্ভাব্য পরীক্ষার উত্তরপত্র  মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণের থাকতে হবে অত্যন্ত সতর্ক ও নিরপেক্ষ। মনোযোগ দিয়ে দেখতে হবে প্রতিটি এসাইনমেন্ট পেপার। খেয়াল করতে হবে শিক্ষার্থীর নিজস্ব মেধা ও মনন থেকে লিখেছে, নাকি অন্য কারো প্রস্তুতকৃত এসাইনমেন্ট কপি করে দিয়েছে!  সামান্য বাড়তি কষ্ট হলেও শিক্ষার্থীদের করিয়ে নিতে হবে প্রয়োজনীয় মানোন্নয়ন। একজন শিক্ষকের একটু অবহেলা, অলসতা ও পক্ষপাতিত্বের কারণে অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে অনেক শিক্ষার্থীর! 


বর্তমান করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রশাসনের সহযোগিতায়  শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের যৌথ প্রচেষ্টায় এসাইনমেন্টসহ বিভিন্ন বিকল্প উপায়ে যথাসম্ভব এগিয়ে নিতে হবে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম। এজন্য সবাইকে হতে হবে অত্যন্ত আন্তরিক।


মো. রহমত উল্লাহ্

প্রাবন্ধিক, শিক্ষাবিদ  এবং অধ্যক্ষ - কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। Email: rahamot21@gmail





গৃহপালিত বুদ্ধিজীবী, খোলা কাগজ, ০৬ জুলাই ২০২১


 গৃহপালিত বুদ্ধিজীবী

মো. রহমত উল্লাহ্


আছে কিছু বুদ্ধিজীবী

উচিৎ কথা বলে না

দলের রাস্তা ছেড়ে তারা

এক কদমও চলে না!


দলের বাচাল নেতার মতই

মিথ্যা মারে বিবৃতি

ইতিহাসের পাতায় পাতায়

ঘটায় কেবল বিকৃতি!


আপন স্বার্থ ক্ষুন্ন হলে

করে নানান মন্তব্য

স্বার্থ হাসিল করাই যেন

এ জীবীদের গন্তব্য!


অর্থ পদক পদের লোভে

এরা কিন্তু সব পারে

একটা কিছু দিয়ে দিলেই

বসে বসে লেজ নাড়ে!


কুশাসনের কূটুবুদ্ধি

কুটুর কুটুর দেয় বলে

ক্ষেপে গেলে আমজনতা

তাদের সাথেই যায় মিলে!


বুদ্ধিজীবী(?) কুবুদ্ধিতে

শ’বিভাজন এক জাতিতে!

: দৃষ্টি খুল নিজেরা

আঁস্তাকুড়ে যাক ওরা। 

---------