পত্রিকার লিংক
বেসরকারি শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনে চাই অগ্রাধিকার
এডুকেশন বাংলা, ২২ এপ্রিল ২০২১
মো. রহমত উল্লাহ্
আমাদের দেশের বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির দাবিটি তাদের প্রয়োজনের দিক থেকে খুবই মানবিক ও যৌক্তিক। চাকরিতে বদলির সুযোগ একদিকে কর্মীর অধিকার, অপরদিকে কর্তৃপক্ষের হাতিয়ার। সুযোগ থাকলে যেমন কর্মী উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে তার পছন্দমতো স্থানে বা দপ্তরে যেতে পারেন, তেমনি কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে বা শাস্তিসরূপ কর্মীকে অন্যত্র বদলি করতে পারে। এই ব্যবস্থাটি বিশ্বস্বীকৃত। যা একই প্রতিষ্ঠানে/ সংস্থায়/ ব্যাংকে/ এনজিওতে কর্মরত বিভিন্ন দপ্তর ও শাখার কর্মীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে দীর্ঘদিনে গড়ে উঠা ও বেড়ে চলা আমাদের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের শিক্ষকদের ক্ষেত্রে এখনই তেমন সার্বজনীন বদলির সুযোগ দেওয়া খুবই কঠিন। এর অনেকগুলো কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি সম্পূর্ণ আলাদা। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়োগ, বেতনভাতা, পদোন্নতি, শাস্তি ইত্যাদি প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ আলাদা। এমনকি সরকারি বেতনভাতাও আলাদা কমিটির মাধ্যমেই প্রদান করা হয়ে থাকে।
এমতাবস্থায় নতুন আইন ও নীতিমালা প্রবর্তন ব্যতীত বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি বাস্তবায়ন করা অসম্ভব। সম্ভবত এ কারণেই বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এমপিও নীতিমালায় এমনকি উচ্চ আদালতেও বদলি শব্দটির স্থলে 'প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন' কথাগুলো ব্যবহার করা হয়। আমাদের জোরালো দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তারা নীতিমালা প্রণয়ন করে বদলির বা প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের ব্যবস্থা করার কথা বলে থাকেন। সরাসরি বদলির আদেশ দেন না বা দিতে পারেন না। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, দীর্ঘ দিনেও হচ্ছে না সেই নীতিমালা প্রণয়ন, হচ্ছে না আমাদের বদলির ব্যবস্থা। এই আন্দোলনে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি বারবার! আমাদের সেই কাঙ্খিত নীতিমালা কতদিনে হবে, কী রকম হবে, কিভাবে বদলির সুযোগ পাবেন কোন শিক্ষক তা সম্পূর্ণই অনিশ্চিত!
আমরা অনেকেই মনে করে থাকি যে, এনটিআরসিএ বেসরকারি শিক্ষকদের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ। বাস্তবে এনটিআরসিএ কোন শিক্ষককে নিয়োগপত্র দিতে পারে না, নিয়োগের জন্য বাছাই করে দিতে পারে মাত্র। একজন প্রার্থী যে প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য আবেদন করেন সেই প্রতিষ্ঠান ব্যতীত অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে তাকে নিয়োগের জন্য নির্বাচন বা সুপারিশও করতে পারে না এনটিআরসিএ। পৃথক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের বরাবরে পৃথকভাবে আবেদন করে যোগ্যতার বলে প্রতিযোগিতা করেই নিয়োগ নিয়ে থাকেন শিক্ষকগণ। এসব বাস্তবতায় সকল সরকারি শিক্ষকদের মতো সকল বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির সুযোগ বর্তমানে নেই।
বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তাই বদলির দাবিতে আন্দোলন যুগ যুগ ধরে চলমান। অবশ্যই আমাদের চালিয়ে যেতে হবে বদলির আন্দোলন এবং সেইসাথে নিতে হবে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের বিদ্যমান সুযোগ। এমপিও নীতিমালা ২০২১ অনুসারে নিবন্ধনধারী এমপিওভুক্ত শিক্ষকগণ অন্য প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাওয়ার জন্য আবেদন করার সুযোগ পাবেন। এনটিআরসিএ কর্তৃক প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২১ এও সেই সুযোগ রাখা হয়েছে। তাই আমি মনে করি আন্দোলন করে, বদলি বাস্তবায়ন করে নিজের পছন্দমত প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার জন্য বদ্ধপরিকর না থেকে এখনই আবেদন করে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করাই বুদ্ধিমানের কাজ। যাদের নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর বেশি আছে তারা অবশ্যই এই সুযোগ পাবেন। এক্ষেত্রে নিবন্ধনধারী এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য তাদের নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর এর সাথে বিধি মোতাবেক শিক্ষকতায় অভিজ্ঞতার একটি নম্বর যোগ করে আবেদিত প্রতিষ্ঠানের জন্য বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা উচিত। বদলি প্রার্থীদের সুবিধার্থে এনটিআরসিএ সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করবেন আশা করি।
মো. রহমত উল্লাহ্
প্রাবন্ধিক এবং অধ্যক্ষ - কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা। Email-
0 মন্তব্য(গুলি):