প্রবন্ধ - মুনিয়ার কাছে আমাদের দায়। খোলা কাগজ, ২৯/৪/২১

 পত্রিকার লিংক

মুনিয়ার কাছে আমাদের দায়

মো. রহমত উল্লাহ্

খোলা কাগজ, ২৯ এপ্রিল ২০২১


মোসারাত জাহান মুনিয়া। বয়স ২২ বছর। দেখতে ফুলের মত। বাবা মৃত শফিকুর রহমান। বাড়ি কুমিল্লা সদরে। থাকতো গুলশানে। বাসা ভাড়া ১ লাখ টাকা। একাই থাকতো সে। পড়তো দ্বাদশ শ্রেণিতে। ফ্যানের সাথে ওড়না দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায় তার মৃতদেহ। ২৭ এপ্রিল ২০২১ তারিখে মামলা করেন তার বড় বোন। আসামি করেন বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবাহান আনভীরকে। যার বয়স ৪৪ বছর।  এখন সবাই বলবো, বিচার চাই। হয়তো চিহ্নিত হবে খুনি। চিহ্নিত হবে আদেশ দাতা। বিচার হবে কোন একদিন। নয়তো সবই হয়ে যাবে কূলকিনারা হীন। কিন্তু মুনিয়াকে আর পাওয়া যাবে না কোনদিন! এখন মামলা চলবে নিজের গতিতে। বিষয়টি এখন বিচারাধীন। সুতরাং বলা যাবে না খুব বেশি কিছু। 


আমার কথা অন্যত্র। মুনিয়া পাখির মত সরল চেহারা ও সরল হাসির অধিকারী এই মেয়েটির আমরা যারা ভাই, বোন, চাচা, মামা, ফুফু, খালা, আত্মীয়-স্বজন; আমাদের কি কোন দায়িত্ব ছিল না? আমরা যারা ছোট বেলা থেকে তাকে আদর-সোহাগ দিয়ে লালন-পালন করেছি, এতোটুকু বড় করেছি; তারা কি কেউ জানতাম না কতটুকু বোকা বা বুদ্ধিমান এই মুনিয়া? কতটুকু সরল বা গরল তার মন-মানসিকতা? কতটুকু ইমোশনাল সে? কতটুকু বয়স হয়েছিল তার? কী যোগ্যতা হয়েছিল তার লাখ টাকার ভাড়া বাসায় একা একা থাকার? কী এবং কতটা যৌক্তিক ছিল তার এত অর্থের উৎস? করোনাকালীন ছুটিতেও কেন সে একা একা থাকত ঢাকায়? আমরা কি কেউ জানতে চেয়েছিলাম তার কাছে এসব কথা? কেউ কি খোঁজ নিয়েছিলাম তার এই জীবন যাপনের? কেউ কি গিয়েছিলাম সে বাসায়? দেখেছিলাম সেসব ছবি? তার সেই জীবনাচরণের যৌক্তিকতা বিবেচনা করে ছিলাম কি আমাদের সামাজিক ও ধর্মীয় বাস্তবতায়? জাগ্রত ছিল কি আমাদের পারিবারিক মর্যাদাবোধ? বোঝাতে চেষ্টা করেছিলাম কি তাকে? সেকি সবার অবাধ্য ছিল? তার প্রিয় ছিল না কি কোনো স্বজন, কোন শিক্ষক, কোন ম্যাডাম? আত্মীয়-স্বজনের কেউ কি ছিলনা তার প্রিয়? কেউ কি ছিলনা তাকে শাসন করার, বারণ করার, বন্দী করার? একজন, দুজন, তিনজন, সবজন মিলে বোঝানো যেত নাকি তাকে? দেখানো যেত না কি সঠিক পথ? এতই কি বেপারোয়া ছিল সে? এক দিনেই কি চলে গিয়েছিল এতদূর? তাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছি কি আমরা কেউ? ব্যর্থ হয়ে সহযোগিতা চেয়েছি কি অন্য স্বজনদের কাছে? ব্যর্থ হয়েছি কি সবাই? আমরা কিভাবে এড়াবো এই ব্যর্থতার দায়?


আমরা তাকে দিয়েছিলাম কি অতিরিক্ত আদর, উঠিয়েছিলাম কি মাথায়? গুরুত্ব দিয়েছিলাম কি তার অযৌক্তিক পছন্দের, অতি ইমোশনাল সিদ্ধান্তের? যে লোকটির সাথে মুনিয়ার এত এত ছবি সেই লোকটির বয়স ও পরিচয় জানতাম না কি কেউ? জানতাম না কি তার বিবি-সন্তানের সংবাদ? ভেবেছিলাম কি সম্পদের চাকচিক্যে ভুল করতেই পারে মধ্যবিত্ত পরিবারের অবুঝ মুনিয়া? পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আমরা কি তাকে এই শিক্ষা দিয়েছিলাম যে, নিজে পণ্য হতে হয় না; উত্তম মানুষ হয়ে উত্তম পণ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখতে হয়? আমাদের উচিত ছিল না কি ভেবে দেখা; কী হতে পারে এমন আকাশ-পাতাল ব্যবধানিক সম্পর্কের পরিণতি? আমরাও কি ছোট ছিলাম, অবুঝ ছিলাম, ইমোশনাল ছিলাম মুনিয়ার মতই? কেউ কি দেখিনি এমন সিনেমা-নাটক, পড়িনি এমন গল্প-উপন্যাস? দেরিতে হলেও মুনিয়া কি বলেনি এই লোক তাকে বিয়ে করবে না? বিয়ের প্রলোভনে এই অবুঝ মেয়েটির সঙ্গে কী হচ্ছে আমরা বুঝিনি কেন আগে? আমরা কি কেউ করেছিলাম দেখেও না দেখার ভান, শুনেও না শোনার ভান, জেনেও না জানার ভান? অথবা কারণে/অকারণে রাগ করে, অভিমান করে নেইনি কি তার কোন খোঁজ খবর? করেছি কি এমন ভাব; সে গোল্লায় যাক তাতে আমার কী? 


নাকি আরো বেশি পাপ ছিল আমাদের কারো চিন্তায়? অন্ধ হয়েছিলাম কি সম্পদের লোভে? মুনিয়ার চোখেও ঢুকিয়ে ছিলাম কি আমাদের লোভের পেরেক? ইন্নোসেন্ট ইমোশনাল মুনিয়াকে টোপ বানিয়ে ধরতে চেয়েছিলাম কি রুই-কাতল? আমরা কেউ কি কৌশলে ঠেলে দিয়েছিলাম তাকে এই পথে? সবকিছুর বিনিময়ে করতে চেয়েছিলাম কি পাহাড় সমান সম্পদের অধিকারী? আমাদের বড়দের ব্যর্থতার, অবহেলার, দায়িত্বহীনতার, লোভলালসার শিকার নয় কি এই অপরিপক্ক মুনিয়া? তার সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবার কোন দায় কি আমাদের নেই? আমরা সবাই কি ভুলে গিয়েছিলাম সেই বিখ্যাত প্রবাদ- 'পিপীলিকার পাখা হয় মরিবার তরে' বা 'অতি চালাকের গলায় দড়ি' কিংবা 'লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু'? 


এমনিভাবে প্রতিনিয়ত আমাদের দ্বারা নির্মমতার শিকার হয় আমাদের অনেক সন্তান, অনেক মুনিয়া! সবকিছুর বিচার হয় না মানুষের আদালতে। বিচার চাওয়া হয় না অনেক অপরাধের। প্রমাণিত হয় না অনেক অপরাধ। তাই বলে কি আমরা মুক্তি পেয়ে যাবো এসবের দায় থেকে? মৃত্যুর প্রাক্কালে সে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছিল তার ভুল, হয়েছিল অনুতপ্ত। চিনতে পেরেছিল তার আসল শত্রু মিত্র। ভুলে গিয়েছিল সকল আবেগ, সকল মান-অভিমান। হয়ে উঠেছিল পরিপূর্ণ পরিপক্ক। হয়তোবা তার চোখে ভেসে উঠেছিল অতি আপন আমাদের কারো কারো মুখ। তাকে শাসন না করার দায়ে, খোঁজখবর না করার দায়ে, একা একা ছেড়ে দেওয়ার দায়ে অভিযুক্ত করেছিল আমাদের। নিশ্চিত তার এই অভিযোগ থেকে আমাদের মুক্তি মিলবে না কোনদিন। 


মো. রহমত উল্লাহ্

শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক।


অধ্যক্ষ -কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা। Email- rahamot21@gmail.com 


http://ekholakagoj.com/epaper/m/186918/60899a84ce9fb


প্রবন্ধ - শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি নজরদারি। ২৫ এপ্রিল ২০২১

 পত্রিকার লিংক

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারি নজরদারি



মো. রহমত উল্লাহ্ |  

দৈনিক খোলা কাগজ, ২৫ এপ্রিল ২০২১


একটা দেশে অগণিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হতে থাকবে কিন্তু সরকার জানবে না, সরকারের কাছে কোনো হিসাব থাকবে না, তা তো হতে পারে না। অথচ আমাদের দেশে মাদ্রাসা ও কেজি স্কুলের সংখ্যা কত তার সঠিক হিসাব নেই সরকারের কোনো দফতরেই। কিছু আলিয়া মাদ্রাসার হিসাব জানা থাকলেও দেশের আনাচে-কানাচে বিভিন্ন নামে বেনামে প্রতিদিন হতে থাকা কওমি (পুরুষ ও মহিলা) মাদ্রাসা ও কেজি স্কুলের কোনো হিসাব কারও জানা নেই। কেজি স্কুলগুলো পৃথকভাবে গড়ে উঠলেও অধিকাংশ মক্তব-মাদ্রাসা মসজিদভিত্তিক। এসবের হিসাব ও কর্মকা- সম্পর্কে তাদের নিজস্ব কিছু সংগঠনের জানা থাকলেও থাকতে পারে যা আমাদের অজানা।


অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা না থাকায় যার যখন ইচ্ছে, যেখানে ইচ্ছে মক্তব-মাদ্রাসা, কেজি স্কুল ও কোচিং সেন্টার গড়ে তুলছেন। এ সকল প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার আগে বা পরে কোনো কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে কিনা তাও তারা জানেন না। এক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা প্রশাসনের কোনো দায়-দায়িত্ব আছে বলে মনে হয় না। অবস্থা দৃষ্টে ধারণা করা যায় কওমি মাদ্রাসা ও কেজি স্কুলের সংখ্যা সর্বাধিক। বিশেষ করে মক্তব-মাদ্রাসা তৈরি করার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের তেমন কোনো অর্থ বিনিয়োগ করতে হয় না বিধায় দেশের শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত সর্বত্রই প্রতিদিন নতুন নতুন মক্তব-মাদ্রাসা তৈরি হচ্ছে। শুধু গ্রামে নয় শহরেও বিভিন্ন অলিগলিতে ভাড়া বাড়িতে দেখা যায় অগণিত মাদ্রাসার সাইনবোর্ড। আবার সাইনবোর্ডবিহীনও রয়েছে অনেক মহিলা মাদ্রাসা।


বিবিসি বাংলায় ১১ মে ২০২০ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সরকারি হিসাবে বাংলাদেশে ১৪ হাজার ৩৯৭টি কওমি মাদ্রাসা রয়েছে। তবে কওমি সংশ্লিষ্টদের দাবি, সারা দেশে মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। এসব প্রতিষ্ঠানে ২২ লাখের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে বলে তারা বলছেন।’ অথচ সরকারের কাছে এর কতটির সঠিক হিসাব ও প্রকৃত চিত্র আছে তা জানা নেই!


অপরদিকে কেজি স্কুল ও কোচিং সেন্টারের সঠিক সংখ্যা নিয়েও রয়েছে বিভিন্ন রকম তথ্য। দৈনিক ভোরের কাগজে প্রকাশিত ১৯ নভেম্বর ২০১৪ তারিখের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে প্রতীতি নামে ২০১৪ সালে প্রকাশিত স্মরণিকায় সারা দেশে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সংখ্যা ১৪ হাজার ৯৪টি উল্লেখ করা হয়েছে।’ অথচ বিভিন্ন কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, দেশে কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যা ৪০ হাজারেরও অধিক। এসব প্রতিষ্ঠানের সঠিক হিসাব এবং প্রকৃত চিত্র কতটুকু সরকারের কাছে আছে তাও বলা যাচ্ছে না।


উল্লিখিত অগণিত মক্তব-মাদ্রাসা ও কেজি স্কুলগুলোতে কারা শিক্ষক হচ্ছেন; কী পড়ানো হচ্ছে; জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুসরণ করা হচ্ছে কি না; লাখ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে জাতীয়তা বোধ জাগ্রত করা হচ্ছে কি না; নাগরিক দায়িত্ব-কর্তব্য বোধ সৃষ্টি করা হচ্ছে কি না; স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রবিরোধী মনোভাব সৃষ্টি করা হচ্ছে কি না; সমাজের অন্যান্য মানুষের প্রতি ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করা হচ্ছে কি না; কর্মমুখী ও বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তা-চেতনা বা শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে কি না; শিশু শিক্ষার্থীদের শারীরিক, মানসিক ও পাশবিক নির্যাতন করা হচ্ছে কি না; প্রকৃত ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত করা হচ্ছে কি না ইত্যাদি বিষয় তদারকি করা অবশ্যই সরকারের গুরুদায়িত্ব। অথচ এই দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে পালন করেছে বলে মনে হয় না আমাদের কোনো সরকার। তাই বিভেদ বৃদ্ধি পাচ্ছে বিভিন্নমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত নাগরিকদের মধ্যে। ভাইয়ের মুখোমুখি হয়ে যাচ্ছে ভাই!


সম্প্রতি সংগ্রহ করা হচ্ছে মাদ্রাসাসমূহের তথ্য। মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা প্রশাসনকে মাত্র কয়েকদিন সময় দিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এই তথ্য সংগ্রহের। প্রতিটি থানায় বা উপজেলায় যত্রতত্র যত সংখ্যক মাদ্রাসা বিদ্যমান সব ক’টির সঠিক তথ্য এত স্বল্প সময়ে সংগ্রহ করা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের পক্ষে আদৌ সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। ফলে তারা দায়সারা আদেশ পালন করার আশঙ্কাই বেশি।


অর্থাৎ সঠিক চিত্র পাওয়ার সম্ভাবনা কম। বাস্তবে যদি তাই হয় তো ভুল তথ্যের ওপর গৃহীত পরবর্তী সকল সিদ্ধান্তই ভুল হবে। ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে।


পর্যাপ্ত সময় দিয়ে একাধিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া উচিত এ সকল মক্তব-মাদ্রাসার পাশাপাশি কেজি স্কুলের তথ্য সংগ্রহের জন্য। সাধারণ প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসন, শিক্ষা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া উচিত তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব। বাস্তবে জনপ্রতিনিধিদের পক্ষেই অতি অল্প সময়ে অধিক শুদ্ধ তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব। প্রত্যেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ইউপি মেম্বার আন্তরিক হলে সহজেই দিতে পারবেন তার এলাকায় অবস্থিত মক্তব-মাদ্রাসা ও কেজি স্কুল সংক্রান্ত সঠিক তথ্য। পুলিশ প্রশাসন তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন পুলিশ ও গ্রামপুলিশের মাধ্যমে। সাধারণ প্রশাসন তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন কৃষি বিভাগের ব্লক সুপারভাইজার ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মাঠকর্মীদের মাধ্যমে।


শিক্ষা প্রশাসন তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকদের মাধ্যমে। তাছাড়াও এনজিও ব্যুরো তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন মাঠ পর্যায়ে কর্মরত বিভিন্ন এনজিওকর্মীদের মাধ্যমে। উপযোগিতা অনুসারে উল্লিখিত একাধিক উপায়ে সংগৃহীত তথ্যগুলো কম্পাইল করে তৈরি করতে হবে চূড়ান্ত তালিকা। যাতে প্রতিটি মক্তব-মাদ্রাসা ও কেজি স্কুল সম্পর্কে থাকবে বিস্তারিত তথ্য।


প্রতিনিয়ত গড়ে ওঠা বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের তথ্য সংগ্রহের জন্য অবশ্যই থাকতে হবে একটি ধারাবাহিক চলমান প্রক্রিয়া। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড ও ব্যানবেইসকেই নিতে হবে সেই দায়িত্ব। মক্তব-মাদ্রাসা, কেজি স্কুল, কোচিং সেন্টার ইত্যাদি তৈরি ও পরিচালনার জন্য থাকতে হবে পূর্বানুমতির ব্যবস্থা। পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই তা বিদ্যমান। নিজের টাকায় কোনো প্রতিষ্ঠান করতে গেলেও অনুমতি নিতে হয় সরকারের। যারা সঠিক শিক্ষাদানের সৎ উদ্দেশ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করবেন তাদেরও থাকা উচিত স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করার মানসিকতা ও সৎ সাহস। প্রতিনিয়ত স্বেচ্ছায় দেওয়া উচিত প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সকল তথ্য। এটি ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই কাম্য।


মো. রহমত উল্লাহ্ : শিক্ষক, সাহিত্যিক ও কলাম লেখক 


http://m.kholakagojbd.com/public-opinion/75852

বেসরকারি শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনে চাই অগ্রাধিকার। এডুকেশন বাংলা, ২২ এপ্রিল ২০২১

 


পত্রিকার লিংক

বেসরকারি শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনে চাই অগ্রাধিকার

এডুকেশন বাংলা, ২২ এপ্রিল ২০২১

মো. রহমত উল্লাহ্



আমাদের দেশের বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির দাবিটি তাদের প্রয়োজনের দিক থেকে খুবই মানবিক ও যৌক্তিক। চাকরিতে বদলির সুযোগ একদিকে কর্মীর অধিকার, অপরদিকে কর্তৃপক্ষের হাতিয়ার। সুযোগ থাকলে যেমন কর্মী উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে তার পছন্দমতো স্থানে বা দপ্তরে যেতে পারেন, তেমনি কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে বা শাস্তিসরূপ কর্মীকে অন্যত্র বদলি করতে পারে। এই ব্যবস্থাটি বিশ্বস্বীকৃত। যা একই প্রতিষ্ঠানে/ সংস্থায়/ ব্যাংকে/ এনজিওতে কর্মরত বিভিন্ন দপ্তর ও শাখার কর্মীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে দীর্ঘদিনে গড়ে উঠা ও বেড়ে চলা আমাদের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের শিক্ষকদের ক্ষেত্রে এখনই তেমন সার্বজনীন বদলির সুযোগ দেওয়া খুবই কঠিন। এর অনেকগুলো কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি সম্পূর্ণ আলাদা। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়োগ, বেতনভাতা, পদোন্নতি, শাস্তি ইত্যাদি প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ আলাদা। এমনকি সরকারি বেতনভাতাও আলাদা কমিটির মাধ্যমেই প্রদান করা হয়ে থাকে।  


এমতাবস্থায় নতুন আইন ও নীতিমালা প্রবর্তন ব্যতীত বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি বাস্তবায়ন করা অসম্ভব। সম্ভবত এ কারণেই বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এমপিও নীতিমালায় এমনকি উচ্চ আদালতেও বদলি শব্দটির স্থলে 'প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন' কথাগুলো ব্যবহার করা হয়। আমাদের জোরালো দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তারা নীতিমালা প্রণয়ন করে বদলির বা প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের ব্যবস্থা করার কথা বলে থাকেন। সরাসরি বদলির আদেশ দেন না বা দিতে পারেন না। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, দীর্ঘ দিনেও হচ্ছে না সেই নীতিমালা প্রণয়ন, হচ্ছে না আমাদের বদলির ব্যবস্থা। এই আন্দোলনে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি বারবার! আমাদের সেই কাঙ্খিত নীতিমালা কতদিনে হবে, কী রকম হবে, কিভাবে বদলির সুযোগ পাবেন কোন শিক্ষক তা সম্পূর্ণই অনিশ্চিত! 


আমরা অনেকেই মনে করে থাকি যে, এনটিআরসিএ বেসরকারি শিক্ষকদের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ। বাস্তবে এনটিআরসিএ কোন শিক্ষককে নিয়োগপত্র দিতে পারে না, নিয়োগের জন্য বাছাই করে দিতে পারে মাত্র। একজন প্রার্থী যে প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য আবেদন করেন সেই প্রতিষ্ঠান ব্যতীত অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে তাকে নিয়োগের জন্য নির্বাচন বা সুপারিশও করতে পারে না এনটিআরসিএ।  পৃথক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের বরাবরে পৃথকভাবে আবেদন করে যোগ্যতার বলে প্রতিযোগিতা করেই নিয়োগ নিয়ে থাকেন শিক্ষকগণ। এসব বাস্তবতায় সকল সরকারি শিক্ষকদের মতো সকল বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির সুযোগ বর্তমানে নেই। 


বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। তাই বদলির দাবিতে আন্দোলন যুগ যুগ ধরে চলমান। অবশ্যই আমাদের চালিয়ে যেতে হবে বদলির আন্দোলন এবং সেইসাথে নিতে হবে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের বিদ্যমান সুযোগ। এমপিও নীতিমালা ২০২১ অনুসারে নিবন্ধনধারী এমপিওভুক্ত শিক্ষকগণ অন্য প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাওয়ার জন্য আবেদন করার সুযোগ পাবেন। এনটিআরসিএ কর্তৃক প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২১ এও সেই সুযোগ রাখা হয়েছে। তাই আমি মনে করি আন্দোলন করে, বদলি বাস্তবায়ন করে নিজের পছন্দমত প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার জন্য বদ্ধপরিকর না থেকে এখনই আবেদন করে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করাই বুদ্ধিমানের কাজ। যাদের নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর বেশি আছে তারা অবশ্যই এই সুযোগ পাবেন। এক্ষেত্রে নিবন্ধনধারী এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য তাদের নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর এর সাথে বিধি মোতাবেক শিক্ষকতায় অভিজ্ঞতার একটি নম্বর যোগ করে আবেদিত প্রতিষ্ঠানের জন্য বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা উচিত। বদলি প্রার্থীদের সুবিধার্থে এনটিআরসিএ সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনা করবেন আশা করি। 


মো. রহমত উল্লাহ্

প্রাবন্ধিক এবং অধ্যক্ষ - কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা। Email-

rahamot21@gmail.com 






গণপাঠ্য ছড়া - রোজা এলেই...। দৈনিক আমাদের সময়, ১৭ এপ্রিল ২০২১

 গণপাঠ্য ছড়া

দৈনিক আমাদের সময়

১৭ এপ্রিল ২০২১


রোজা এলেই...

মো. রহমত উল্লাহ্

  

রোজা এলেই রাতারাতি

নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে 

অসাধু সব ব্যবসায়ীদের 

অস্বাভাবিক কাম বাড়ে।

অল্প দিনেই হয় যে ধনী 

চতুর্দিকে নাম বাড়ে! 


রোজা এলেই দাম বাড়ে তাই 

দরিদ্রতার ধাপ বাড়ে 

খাদ্যপণ্য যায় না কেনা 

ক্ষুধার জ্বালার তাপ বাড়ে। 

বাড়তে থাকে বাকির খাতা   

পাওনাদারের চাপ বাড়ে!


: রোজা তো নয় সাধারণের 

রক্ত চোষার ছদ্ম নাম।

রোজা এলেই বাড়বে কেন 

নিত্যপণ্যের বাজার দাম?

--------------------------------



বেসরকারি শিক্ষকদের অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন আবশ্যক। সাম্প্রতিক দেশকাল, ২১ এপ্রিল ২০২১

পত্রিকার লিংক

বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ, সমন্বয় ও বদলিতে অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন আবশ্যক


সাম্প্রতিক দেশকাল, ২১ এপ্রিল ২০২১



মো. রহমত উল্লাহ্


আমাদের বেশ কিছু নিবন্ধিত শিক্ষক বিভিন্ন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে সরকারি বিধিমোতাবেক নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে নিয়মিত কর্মরত থাকার পরও দীর্ঘদিন ধরে এমপিওভুক্ত হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। বিশেষ করে অনার্স মাস্টার্স পর্যায়ে পাঠদানের জন্য সরকারি বিধিমোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত ও নিয়মিত কর্মরত প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষক আছেন যারা দীর্ঘদিন ধরে এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না। এমপিওভুক্ত হবার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও বিধি মোতাবেক নিয়োগ থাকার পরও সরকারি সিদ্ধান্ত এবং প্রাতিষ্ঠানিক জটিলতার কারণে তারা এমপিও থেকে বঞ্চিত আছেন। এছাড়াও মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক (পাস) পর্যায়ে সরকারি বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে নিয়মিত কর্মরত থাকার পরও প্রতিষ্ঠানে প্যাটার্নভুক্ত পদ শূন্য/সৃষ্টি না হওয়ায় এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না এমন বেশ কিছু শিক্ষক রয়েছেন। নিয়োগ লাভের পর থেকেই তারা এমপিওভুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছেন। বিশেষ করে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ে পাঠদানকারী বৈধ শিক্ষকগণ এমপিওভুক্ত করার দাবিতে বিভিন্ন আন্দোলন/সংগ্রাম করে আসছেন দুই যুগেরও অধিক সময় ধরে। 


এনটিআরসিএ কর্তৃক প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২১ অনুসারে জানা যায় যে, ১২ জুন ২০১৮ তারিখে প্রবর্তিত এমপিও নীতিমালা জারি করার পূর্বে যারা শিক্ষক নিবন্ধন সনদ অর্জন করেছিলেন তাদের বয়স ৩৫ বছরের উর্দ্ধে হলেও তারা আবেদন করতে পারবেন। এটি অবশ্যই তাদের জন্য একটি বড় সুযোগ। যদিও নবীনদের বঞ্চিত করে অধিক বয়স্কদের শিক্ষক হিসেবে নতুন করে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকেই দ্বিমত করছেন। যারা শিক্ষকতা ব্যতীত অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত থেকে বয়স কম/বেশি ৪০ পার করে দিয়েছেন তারা নতুন করে শিক্ষকতায় এসে নিজেকে আধুনিক ডিজিটাল যুগের উপযোগী করে তোলার ক্ষেত্রে নবীনদের তুলনায় কতদিনে কতটা সফল হবেন এবং কতদিন কর্মোদ্যম নিয়ে সফলভাবে শিক্ষকতা করতে পারবেন এটি অবশ্যই ভাববার বিষয়। তবে যারা শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি বিধিমোতাবেক নিয়োগ নিয়েও এমপিও বঞ্চিতাবস্থায় নিয়মিত শিক্ষকতা করে আসছেন তাদেরকে এই নিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। কেননা, তারা দীর্ঘদিন শিক্ষকতায় নিয়োজিত থাকায় কিছুটা হলেও তৈরি হয়ে উঠেছেন, অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। কিন্তু সরকারি এমপিও থেকে বঞ্চিত থাকায় অত্যন্ত কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। তাই তাদের এমপিওভুক্ত করা অথবা এমপিওভুক্ত পদে নিয়োগ করা আবশ্যক। এক্ষেত্রে নিয়োগে অগ্রাধিকার পাওয়ার সুবিধার্থে তাদের অভিজ্ঞতাকে মূল্যায়ন করা উচিত। অর্থাৎ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় তাদের প্রাপ্ত নম্বরের সাথে সরকারি বিধিমোতাবেক শিক্ষকতায় অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে একটা নম্বর যোগ করে আসন্ন নিয়োগের জন্য মেধাক্রম তৈরি করা উচিত। তাহলেই তারা পেতে পারেন বয়স শিথিল করার সুবিধা এবং এমপিওভুক্ত চাকরি পাওয়ার সুযোগ। তা দেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।


তাছাড়াও সরকারি বিধিমত নিয়োগপ্রাপ্ত ও নিয়মিত কর্মরত এমপিও বহির্ভূত শিক্ষকদের শূন্য পদের বিপরীতে সমন্বয় করে এমপিওভুক্ত করা উচিত। এক্ষেত্রে জনবল কাঠামো ২০২১ এর ৯.৩ উপধারায় বলা হয়েছে যে, 'এমপিওভুক্ত উদ্বৃত্ত পদের শিক্ষক/কর্মচারীদের সমন্বয়ের পর অবশিষ্ট শূন্যপদে বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত কিন্তু এমপিওভুক্ত নয় এমন একই বিষয়/পদে শিক্ষক/কর্মচারীকে প্যাটার্নভুক্ত শূন্য পদের বিপরীতে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সমন্বয় করা হবে।' বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত কিন্তু এমপিওভুক্ত নয় এমন শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করার ক্ষেত্রে এই ধারাটি অবশ্যই সহায়ক। বিশেষ করে অনার্স-মাস্টার্স পর্যায়ের জন্য নিয়োগকৃত শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করার ক্ষেত্রে এই ধারাটি প্রয়োগ করা হলে তারা আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এমপিওভুক্ত হতে পারবেন। ফলে মূল্যায়িত হবে তাদের অভিজ্ঞতা, পূর্ণ হবে দীর্ঘদিনের দাবি। এক্ষেত্রে কোনো রকম 'যদি কিন্তু' উত্থাপন করে তাদেরকে বঞ্চিত করা মোটেও উচিত হবে না। কেননা, অনার্স-মাস্টার্স পর্যায়ের জন্য নিয়োগকৃত হলেও তারা স্নাতক (পাস) ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদান করতে পারেন, পারবেন। আবার স্নাতক (পাস) বা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে এমপিওভুক্ত করা হলেও তারা অনার্স-মাস্টার্স পর্যায়ে পাঠদান করতে পারবেন, পারছেন।


অপরদিকে বদলির দাবিতে আন্দলন করে আসছেন এমপিওভুক্ত হাজার হাজার শিক্ষক। বিশেষ করে যারা নিজের এলাকা থেকে অনেক দূর-দূরান্তের প্রতিষ্ঠানে আবেদন করে এনটিআরসিএ কর্তৃক সুপারিশ প্রাপ্ত হয়ে নিয়োগ নিয়ে কর্মরত আছেন তারা বারবার বদলির দাবি করে আসছেন। কিন্তু বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো স্বতন্ত্র থাকায় সরাসরি বদলির সুযোগ বিদ্যমান নেই বিধায় তারা বদলি হতে পারছেন না। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের একটি সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করার কথা একাধিক 'জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা'য়  বারবার বলা হলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। তাই দূর-দূরান্তের প্রতিষ্ঠানে সল্প বেতনে কর্মরত শিক্ষকগণ বিশেষ করে নবীন শিক্ষকগণ অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।  'বদলি' বা 'প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন' যে নামেই হোক না কেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কর্মস্থল পরিবর্তনের একটা নিয়মিত সুযোগ চলমান থাকা অত্যাবশ্যক। 


নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে যোগ্য বিবেচিত হলে এমপিওভুক্ত শিক্ষকগণ আবেদন করে অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেওয়ার জন্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ আগেও ছিল, এখনো আছে সীমিত আকারে। চলতি ২০২১ সালে এনটিআরসিএ কর্তৃক প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কেবল নিবন্ধনধারী এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের এমন সুযোগ দেওয়া হয়েছে সমপদে। কিন্তু শুধুমাত্র শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অর্জিত নম্বরের ভিত্তিতে প্রতিযোগিতা করে এই সুযোগ লাভ করতে পারবেন না অনেক শিক্ষক। বিশেষ করে প্রথম থেকে পঞ্চম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষকগণ পিছিয়ে থাকবেন এই প্রতিযোগিতায়। তাই এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ বৃদ্ধি করতে চাইলে মূল্যায়ন করতে হবে তাদের অভিজ্ঞতার। অর্থাৎ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অর্জিত নম্বরের সাথে তাদের এমপিওভুক্ত শিক্ষকতায় অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে একটা নম্বর যোগ করে তারপর তৈরি করতে হবে মেধাক্রম। তবেই বদলি প্রত্যাশী শিক্ষকদের অনেকে পাবেন 'প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন'র এই সুযোগ।


উল্লিখিত যৌক্তিক বিষয়গুলো সক্রিয় বিবেচনায় নিয়ে কর্মরত বিপুলসংখ্যক শিক্ষকদের মধ্যে বিরাজমান অসন্তোষ নিরসন করে শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নিবেন বলে প্রত্যাশা করি। কেননা, এজন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের কোনো প্রয়োজন নেই। 


মো. রহমত উল্লাহ্

কলাম লেখক, সাহিত্যিক এবং অধ্যক্ষ -কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা।

Email- rahamot21@gmail.com

বেসরকারি শিক্ষক হবার আগে যা বিবেচনা করা উচিত। প্রথম আলো, ১৬ এপ্রিল ২০২১


বেসরকারি শিক্ষক হবার আগে যা বিবেচনা করা উচিত

প্রথম আলো, ১৬ এপ্রিল ২০২১

মো. রহমত উল্লাহ্


এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রসায় শিক্ষক নিয়োগের জন্য গত ৩০ মার্চ ২০২১ তারিখ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে এনটিআরসিএ। বিজ্ঞপ্তি অনুসারে সারাদেশে ৫৪ হাজার ৩০৪ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে শূন্য পদের সংখ্যা ৩১ হাজার ১০১টি, যার মধ্যে এমপিও ২৬ হাজার ৮৩৮টি এবং ননএমপিও পদ চার হাজার ২৬৩টি। মাদরাসা, কারিগরি ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনায় ২০ হাজার ৯৯৬টি পদের মধ্যে এমপিও ১৯ হাজার ১৫৪ এবং ননএমপিও এক হাজার ৮৪২টি। আবেদনের সময় ০৪ এপ্রিল ২০২১ তারিখ থেকে ৩০ এপ্রিল ৩০২১ তারিখ পর্যন্ত। প্রতিটি আবেদনের জন্য ১০০ (একশত) টাকা ফি দিয়ে পৃথক পৃথক আবেদন করতে হবে। একটি আবেদন করে পছন্দক্রম নির্ধারণ করার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। যথাযথ যোগ্যতা থাকলে একজন প্রার্থী একাধিক প্রতিষ্ঠানে একাধিক পদে আবেদন করতে পারবেন। দেশের যে কোন স্থানে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। পদ শূন্য থাকলে নিজের যোগ্যতা ও ইচ্ছা অনুসারে বাড়ির পাশে/ দূরে/ বহুদূরে/ শহরে/ গ্রামে/ স্কুলে/ কলেজে/ মাদ্রাসায় আবেদন করতে পারবেন। 


মনে রাখতে হবে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠান পৃথক, প্রতিটি পদ পৃথক, প্রতিটি আবেদনও পৃথক। এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে সরাসরি বদলি হওয়ার কোনো সুযোগ বিদ্যমান নেই। কেন নেই সে ব্যাখ্যা অনেক বিস্তৃত, অনেক বিতর্কিত। প্রতিষ্ঠান বদলের সহজ কোনো সুযোগ আদৌ তৈরি হবে কিনা, হলেও কতদিনে হবে তা অনিশ্চিত। যখনই হোক, যে নীতিমালা তৈরি করা হবে সেই নীতিমালায় কে কতটুকু সুযোগ পাবে তাও অজানা। বর্তমানে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ থাকলেও এনটিআরসিএ কর্তৃক প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুসারে নতুন করে নিয়োগের জন্য আবেদন করে যোগ্যতা প্রমাণ করে নিয়োগ লাভ করে সেখানে গিয়ে নতুন করে যোগদান করতে হবে। সে ক্ষেত্রে সমপদ হলে পূর্ব অভিজ্ঞতা গণনাযোগ্য হবে।  


শূন্য পদের বিপরীতে প্রার্থীসংখ্যা অত্যধিক থাকায় যে কোনো প্রার্থী মনে করতে পারেন যে, তিনি একটি বা দুটি আবেদন করলে তার চাকরি নাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে তিনি নিজের বাড়ির আশেপাশে অবস্থিত একাধিক প্রতিষ্ঠানে এবং অনেক দূর-দূরান্তে অবস্থিত একাধিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করার তাগিদ অনুভব করতে পারেন। যে প্রতিষ্ঠানেই আবেদন করুন না কেন; একজন প্রার্থীর অবশ্যই উচিত সেই প্রতিষ্ঠান ও এলাকা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে, শুনে, দেখে আবেদন করা। এমনকি নিয়োগ পাওয়ার পরেও কোন প্রতিষ্ঠানে যোগদান করার পূর্বে সেই প্রতিষ্ঠানের অবস্থা ও অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে-বুঝে নেওয়া উচিত। বিশেষ করে দূরবর্তী কোনো প্রতিষ্ঠানে আবেদন ও যোগদান করার পূর্বে জেনে নেওয়া উচিত সেখানে যাতায়াত সুবিধা কেমন, থাকা-খাওয়ার সুবিধা আছে কিনা, ছুটিতে বা যখন তখন নিজের আপনজনের কাছে যাওয়া-আসা করা যাবে কিনা, যে সকল অসুবিধা আছে সেগুলো সহজে মেনে নেওয়া যাবে কিনা ইত্যাদি। 


অপরদিকে একজন প্রার্থী যে পদে আবেদন করবেন সেই পদের মর্যাদা কতটুকু, এমপিও ভুক্ত কিনা, বেতন স্কেল কী, বর্তমান মূল বেতন কত, অন্যান্য ভাতাদি পরিমাণ কত, মাসিক কর্তনের পরিমাণ কত, বিভিন্ন বোনাসের পরিমাণ কত, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট আছে কিনা, পদোন্নতির সুযোগ আছে কিনা, যে প্রতিষ্ঠানে যোগদান করবেন সেখানে সুযোগ-সুবিধা কেমন, আধুনিক শিক্ষকতায় কাজের ধরন-পরিধি কেমন, লেখাপড়ায় লেগে থাকতে ভালো লাগে কিনা, শিক্ষকের দায়িত্ব-কর্তব্য কতটুকু, কর্মকালে ছুটি ভোগের বিধান কেমন, অবসরকালে প্রাপ্য সম্ভাব্য আর্থিক সুবিধা কেমন, অন্যান্য পেশার তুলনায় সুযোগ-সুবিধা কতটুকু কমবেশি, নিজের যোগ্যতা ও মন-মানসিকতার সাথে এই পেশা খাপ খায় কিনা ইত্যাদি খুব ভালোভাবে জেনে সার্বিক বিবেচনায় মনোপুত হলেই আবেদন ও যোগদান করা উচিত। 


হাজার বছর ধরেই এদেশের শিক্ষকদের আর্থিক সুবিধা অত্যন্ত কম ছিল। এখনো আমাদের শিক্ষকদের আর্থিক সুবিধা অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় অর্ধেকেরও কম বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষকদের। বর্তমানে এমপিও এর মাধ্যমে সরকার মাধ্যমিক স্তরের একজন সহকারি শিক্ষককে ন্যূনতম মূল বেতন দিয়ে থাকে মাত্র ১২,৫০০ টাকা! উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের একজন প্রভাষককে প্রাথমিক মূল বেতন দেওয়া হয় ২২,০০০ টাকা। এছাড়া সকল স্তরের শিক্ষকদের বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট অনধিক ৫ শতাংশ, বাড়ি ভাড়া ভাতা ১,০০০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা, উৎসব ভাতা ২৫ শতাংশ, বাংলা নববর্ষ ভাতা ২০ শতাংশ দেওয়া হয়ে থাকে। অপরদিকে এই মূল বেতন থেকে অবসর + কল্যাণ তহবিলের জন্য ১০ শতাংশ টাকা জমা রাখা হয়। নিয়মিত ২৫ বা ততোধিক বৎসর চাকরি করে অবসরে গেলে কল্যাণ + অবসর তহবিল থেকে সর্বশেষ মূল বেতনের প্রায় ১০০ গুন টাকা পাওয়ার বিধান বিদ্যমান। উল্লিখিত সরকারি সুবিধার অতিরিক্ত কোন সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব স্বচ্ছলতা ও বিধি-বিধানের উপর নির্ভরশীল। এই ডিজিটাল যুগে নিজেকে তৈরি করতে জানলে এর চেয়ে অধিক উপার্জনের বহুমুখী সুযোগ দেশে ও বিদেশে অবারিত। বেসরকারি শিক্ষকদের বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা কতদিনে কতটুকু বৃদ্ধি পাবে তা সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। কতকালে কতটি প্রতিষ্ঠান সরকারি হবে তা আরো বেশি অনিশ্চিত। আমার দীর্ঘ অতীত অভিজ্ঞতা তাই বলে বারবার।


কেউ যদি ধারণা করেন, অন্যান্য চাকরির তুলনায় শিক্ষকতায় সময়, শ্রম ও মেধা কম দিতে হয় তো সেটি ভুল। শিক্ষকতায় কাজের পরিধি এখন অনেক বিস্তৃত। নিত্যনতুন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সঠিক জ্ঞান দেওয়ার জন্য শিক্ষককে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হয় প্রতিনিয়ত। আয়ত্ত করতে হয় অত্যাধুনিক পাঠদান ও মূল্যায়ন কৌশল। আত্মনিবেদিত থাকতে হয় সর্বক্ষণ। বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদযাপনের জন্য ছুটির দিনেও আসতে হয় প্রতিষ্ঠানে। শিক্ষার্থীর কল্যাণার্থে চিন্তাচেতনার দিক থেকে প্রকৃত শিক্ষকের কোনো ছুটি নেই। শিক্ষক হবার আগে অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে এসব।


মোট কথা হচ্ছে, না জেনে না বুঝে শিক্ষকতায় এসে কেউ যদি হতাশায় ভোগেন তো তিনি নিজে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হন তেমনি শিক্ষার্থীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই সবকিছু জেনে বুঝে, মেনে নিয়ে, মনে নিয়ে, তবেই শিক্ষকতায় আসা উচিত বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষকতায়। তা না হলে এখানে এসে সারাক্ষণ মন খারাপ করে, দাবিদাওয়া করে, আন্দোলন করে, দলাদলি করে, অন্যকে দোষারোপ করে, অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করে, বিক্ষুব্ধ বা হতাশাগ্রস্ত হয়ে নিজের পেশাকে মন্দ বলে বলে মন্দ সময় পার করে; না হওয়া যায় শিক্ষক, না পাওয়া যায় শান্তি, না পাওয়া যায় সচ্ছলতা!


মো. রহমত উল্লাহ্

সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ এবং অধ্যক্ষ -কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা। Email- rahamot21@gmail.com 


০৩ এপ্রিল ২০২১


বেসরকারি স্কুল-কলেজের জনবল কাঠামো ও বিজ্ঞান শিক্ষা প্রসঙ্গ। Jagonews24.com , 6/2/21

মূল পত্রিকা লিংক

বেসরকারি স্কুল-কলেজের জনবল কাঠামো ও বিজ্ঞান শিক্ষা প্রসঙ্গ


সম্পাদকীয় ডেস্ক | jagonews24.com

০৬ এপ্রিল ২০২১



মো. রহমত উল্লাহ্


>বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা- ২০২১ এ বর্ণিত জনবল কাঠামো সংক্রান্ত ধারা ৬.১ এর একাধিক উপধারা অনুসারে দেখা যাচ্ছে:

গ) উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় (৬শ - ১২শ) পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, উদ্ভিদবিজ্ঞান/ প্রাণিবিজ্ঞান বিষয়ে ল্যাব চালু থাকলে প্রতি বিষয়ে ১ (এক) জন করে প্রদর্শক এবং ১ (এক) জন করে ল্যাব সহকারী পাবে। [উপধারা ২১ ও ২৬)]। অর্থাৎ ৪ (চার) জন প্রদর্শক ও ৪ (চার) জন ল্যাব সহকারী মিলে মোট ৮ (আট) জন পর্যন্ত নিতে পারবে!


ঘ) উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ (১১শ - ১২শ) পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, উদ্ভিদবিজ্ঞান/ প্রাণিবিজ্ঞান বিষয় অনুমোদন ও ল্যাব চালু থাকলে ঐচ্ছিক প্রতি বিষয়ে ১ (এক) জন করে প্রদর্শক পাবে। [উপধারা ৭]। অর্থাৎ মোট ৪ (চার) জন প্রদর্শক পাবে। কিন্তু পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, উদ্ভিদবিজ্ঞান/ প্রাণিবিজ্ঞান বিষয় অনুমোদন ও ল্যাব চালু থাকলে ঐচ্ছিক প্রতি বিষয়ে ১ (এক) জন করে ল্যাব সহকারী পাবে। [উপধারা ১১] অর্থাৎ মোট ৩ (তিন) জন ল্যাব সহকারী পাবে। এক্ষেত্রে কেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের প্রদর্শক পাবে কিন্তু ল্যাব সহকারী পাবে না তা পরিষ্কার নয়! তবে ৪ (চার) জন প্রদর্শক ও ৩ (তিন) জন ল্যাব সহকারী মিলে মোট ৭ (সাত) জন পর্যন্ত নিতে পারবে!


ঙ) স্নাতক (পাস) কলেজ (১১শ - ১৫শ) পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, উদ্ভিদবিজ্ঞান, প্রাণিবিজ্ঞান বিষয় অনুমোদন ও ল্যাব চালু থাকলে ঐচ্ছিক প্রতি বিষয়ে ১ (এক) জন করে প্রদর্শক এবং ১ (এক) জন করে ল্যাব সহকারী পাবে। অর্থাৎ ৫ (পাঁচ) জন প্রদর্শক ও ৫ (পাঁচ) জন ল্যাব সহকারী মিলে মোট ১০ (দশ) জন পর্যন্ত নিতে পারবে!


প্রশ্ন হচ্ছে, হাতে গোনা দুই একটি প্রতিষ্ঠান ব্যতীত সারা বাংলাদেশের স্কুল-কলেজে যেখানে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সবচেয়ে কম, যেখানে প্রতিদিন ব্যবহারিক ক্লাসের প্রয়োজন পড়ে না ও হয় না; সেখানে ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য এত বেশি সংখ্যক জনবল রাখা হলো কেন? উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের রসায়ন বিষয়ে পাঠদানকারী একজন বিখ্যাত সহকারী অধ্যাপক বলেছেন, নির্ধারিত সিলেবাস অনুসারে একাদশ শ্রেণির জন্য ১২ (বার) টি এবং দ্বাদশ শ্রেণির জন্য ১২ (বার) টি মিলে দুই বছরে মোট ২৪ (চব্বিশ) টি ব্যবহারিক ক্লাস হলেই যথেষ্ট। এক বছরে ১২টি অর্থাৎ মাসে মাত্র ১টি করে ব্যবহারিক ক্লাস নেওয়ার জন্য একটি বিষয়ে ১জন শিক্ষক, ১জন প্রদর্শক ও ১জন ল্যাব সহকারী কী কারণে প্রয়োজন হবে তা বোধগম্য নয়! এতে সরকারি টাকার অপচয় ছাড়া আর কী হবে? যারা এই নীতিমালা প্রণয়ন করেছেন তারা কি বাংলাদেশের বাস্তবতা জানেন না?


কিছু ব্যতিক্রম ব্যতীত সারাদেশের কলেজ পর্যায়ে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রতিষ্ঠানভেদে ১৫ থেকে ৩০ জন। আমরা সবাই জানি যে, তারা বোর্ড পরীক্ষায় প্রায় সবাই ২০ থেকে ২৫ নম্বর পেয়ে থাকে ব্যবহারিক পরীক্ষায়। তাদেরকে আর কত নম্বর পাওয়ানোর জন্য এত জনবল বৃদ্ধি করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে? এতে করে কি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও মান বৃদ্ধি পাবে, প্রতিষ্ঠান অন্যান্য শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে? এই অতিরিক্ত প্রদর্শকগণ তো ব্যবসায় শিক্ষা শাখার কিংবা মানবিক শাখার শিক্ষার্থীদের কোন ক্লাস নিতে সক্ষম হবেন না।


বাংলা পড়াতে পারবেন না, ইংরেজি পড়াতে পারবেন না। উল্লিখিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা দ্বিগুণ হলেও তো তাদের ব্যবহারিক ক্লাসের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে না। তাহলে সারাবছর বসে বসে কী করবেন তারা? অথচ এদের স্থলে বাংলা, ইংরেজি, আইসিটি ইত্যাদি আবশ্যিক বিষয়গুলোতে একাধিক শিক্ষক নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা হলে প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষার্থী অনেক বেশি লাভবান হতো। সকলের দাবিও ছিল সেটি। সেই দাবি উপেক্ষা করে সকল শিক্ষার্থীর জন্য আবশ্যিক বিষয়গুলোতেও পূর্বের ন্যায় মাত্র একজন করে শিক্ষক রাখার বিধান করা হয়েছে! যা শিক্ষার্থীদের জন্য চরম ক্ষতির কারণ!


বাংলা, ইংরেজিতে তো শিক্ষার্থীদের পাঠ দানের প্রয়োজনীয়তা আরো অনেক বেশি। কেননা, বাংলা ও ইংরেজিতে যুগ যুগ ধরে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়ে থাকে বা কম নম্বর পেয়ে থাকে। বিশেষ করে ইংরেজিতে দুর্বল থাকার কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষায় ও কর্মক্ষেত্রে গিয়ে খুব বেশি ভালো করতে পারে না এবং বিদেশে যাওয়ার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হয়।


বিজ্ঞান শিক্ষার উন্নতি চাইলে, বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়াতে চাইলে সরাসরি শিক্ষার্থীদের প্রণোদনা দেওয়া উচিত এবং তাদের কর্মক্ষেত্র সম্প্রসারণ করা উচিত। বিজ্ঞান শাখার শিক্ষার্থীদের যদি প্রতিমাসে ৫০০ টাকা হারে শিক্ষা ভাতা প্রদান করা হয় তাহলে খুব বেশিদিন লাগবে না বিজ্ঞান শিক্ষায় মেধাবী বিশেষ করে দরিদ্র-মেধাবী শিক্ষার্থীদের আগ্রহ তৈরি করার জন্য। যখন শিক্ষার্থীরা আর্থিক প্রণোদনা পাবে এবং কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা পাবে তখন এখানে অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী আসতে চাইবে এবং মেধাবী শিক্ষার্থী বাছাই করে নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। তবেই বিজ্ঞান শিক্ষার সত্যিকারের উন্নতি সাধিত হবে। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনের অতিরিক্ত উল্লিখিত জনবলের বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয়ের তুলনায় শিক্ষার্থীদের পিছনে শিক্ষাভাতা বাবদ ব্যয় অনেক কম হবে এবং শিক্ষার্থীরা অধিক উপকৃত হবে ও সরকারের প্রতি চির কৃতজ্ঞ থাকবে।


তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়টি যেহেতু ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই আবশ্যিক ও ব্যবহারিক সেহেতু এই বিষয়ে সকল পর্যায়ে একজন করে প্রদর্শক ও একজন করে ল্যাব সহকারী রাখা যেতে পারে। অবশ্যই তাদের এমন যোগ্যতা থাকা উচিত যেন তারা শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি কম্পিউটারের সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার এর সাধারণ মেরামত কাজ করতে জানেন ও পারেন। যারা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষক হয়ে আসেন তাদেরও এ বিষয়ে আরো বেশি ব্যবহারিক জ্ঞান থাকা আবশ্যক। তাছাড়া প্রায় ৯০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে যেখানে বিজ্ঞান বিভাগে খুব বেশি শিক্ষার্থী না থাকলেও প্রতি বিষয়ের জন্য পৃথক শিক্ষক রয়েছেন; সেখানে বিজ্ঞান বিভাগের একাধিক ল্যাবের জন্য বর্তমান বাস্তবতায় ১জন প্রদর্শক ও ১জন ল্যাব সহকারী থাকাই যথেষ্ট।


অপরদিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও উচ্চমাধ্যমিক কলেজে কর্মচারীর সংখ্যা অত্যন্ত কম রাখা হয়েছে। ধারা ৬.১ এর উপ ধারা (খ), (গ) ও (ঘ) অনুসারে দেখা যায় যে, এসকল প্রতিষ্ঠানে ১জন নৈশপ্রহরী, ১জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ১জন নিরাপত্তাকর্মী রাখা হয়েছে। সহশিক্ষা ও বালিকা বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে আরও একজন আয়া রাখা বিধান করা হয়েছে। এটি মোটেও যথেষ্ট নয়। কেননা, নৈশ প্রহরী বাদ দিলে দেখা যাবে দিনের বেলা একটি বালক বিদ্যালয়ে মাত্র একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও একজন নিরাপত্তাকর্মী থাকবে।


নিরাপত্তাকর্মী গেটে অবস্থান করলে একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী দ্বারা পুরো প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করা মোটেও সম্ভব হয় না। এখানে বলা হয়েছে, প্রয়োজনে প্রাতিষ্ঠানিক বেতন-ভাতায় অতিরিক্ত লোক নিয়োগ দিতে হবে। অথচ বিজ্ঞান বিভাগে যেসকল প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী আছে তাদের তো আয়ও পর্যাপ্ত আছে। প্রয়োজনে তারা ল্যাবে অতিরিক্ত লোক নিয়োগ দিতে পারত। সেটিইতো সারা বাংলাদেশের বাস্তবতায় উচিত ছিল। সেটি না করে সকল স্কুল-কলেজের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী কমিয়ে দেওয়া কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত হয়নি।


মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে (৬শ-১০শ) ১জন মাত্র 'অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারি' রাখা হয়েছে। পাঁচটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বেতন-ফি আদায় সংক্রান্ত হিসাব রাখা, পুরো প্রতিষ্ঠানের একাউন্টস মেনটেন করা, যাবতীয় অফিসিয়াল চিঠিপত্র লেখালেখি করা, শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন ও ফরম ফিলাপ সংক্রান্ত কাজ করা এবং প্রয়োজনে ব্যাংক ও অন্যান্য অফিসে যাতায়াত করার জন্য একজন লোক কোনভাবেই যথেষ্ট নয়।


বর্তমানে প্রতিদিন সরকারি অফিস থেকে সময়ে অসময়ে যে হারে মেইল আসতে থাকে সেগুলো চেক করে জবাব তৈরি করার জন্যই একজন লোককে হিমশিম খেতে হয়। তাই এ পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানে 'অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী' এর পাশাপাশি 'অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর' নামে আরো একটি পদ সৃষ্টি করা আবশ্যক।


উল্লেখিত বিষয়গুলো বাংলাদেশের মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতার নিরিখে নিরপেক্ষভাবে বিবেচনায় নিয়ে জনবল কাঠামো ২০২১ এর এসকল ধরা/উপধারা পুনর্বিন্যাস করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হবেন বলে আশা করি। মনে রাখতে হবে, কেবল ঢাকা বা অন্য শহরে অবস্থিত বড় বড় দু'একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল চিত্র কিন্তু সারা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদ্যমান নেই।


লেখক : সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ এবং অধ্যক্ষ -কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা।

rahamot21@gmail.com

বেসরকারি শিক্ষকদের উৎসব ভাতা শত ভাগে উন্নীত করা আবশ্যক। সাম্প্রতিক দেশকাল। ০৫ এপ্রিল ২০২১

মূল পত্রিকার লিংক

বেসরকারি শিক্ষকদের উৎসব ভাতা শতভাগে উন্নীত করা আবশ্যক

সাম্প্রতিক দেশকাল। ০৫ এপ্রিল ২০২১



মো. রহমত উল্লাহ্

>সরকারি এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকদের বর্তমানে জাতীয় বেতন স্কেলের আওতায় আনা হয়েছে। শতভাগ বেতন দেয়া, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, বৈশাখী তথা বাংলা নববর্ষ ভাতা, অনেক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা এমপিও ভুক্ত করা হচ্ছে। এতে অবশ্যই তারা আগের তুলনায় কিছুটা ভালো আছেন এটি অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু উৎসব ভাতা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তারা দীর্ঘদিন বঞ্চিত আছেন এটিও অস্বীকার করার সুযোগ নেই। 


গত ২২ জানুয়ারি ২০০৪ তারিখে একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তৎকালীন বিএনপি সরকার এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকদের ২৫ শতাংশ এবং কর্মচারীদের ৫০ শতাংশ হারে উৎসব ভাতা দেয়া শুরু করে। দীর্ঘ ১৭ বৎসরেও এই উৎসব ভাতার পরিমাণ আর বৃদ্ধি করা হয়নি। শিক্ষকগণ অত্যন্ত যৌক্তিকভাবেই এই উৎসব ভাতা শতভাগ প্রদানের দাবি করে আসছেন বারবার। সর্বশেষ সবার ধারণা ছিলো এমপিও নীতিমালা ২০২১ এর মাধ্যমে ঘোষণা করা হবে শতভাগ উৎসব ভাতা। কিন্তু তা হয়নি! সরকারি শিক্ষকগণ শতভাগ উৎসব ভাতা পাবেন অথচ একই দায়িত্ব পালনকারী বেসরকারি শিক্ষকগণ পাবেন সিকিভাগ, এটি কোনো যুক্তিতেই মেনে নেয়া যায় না। 


বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সেচ্ছায় এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকদের জাতীয় বেতন স্কেলের অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছে, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট প্রদানের ব্যবস্থা করতে পেরেছে, বৈশাখী ভাতা প্রদান করার ব্যবস্থা করতে পেরেছে, অনেক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা এমপিও ভুক্ত করতে পেরেছে; অথচ শিক্ষকদের ২৫ ভাগ ও কর্মচারীদের ৫০ ভাগ উৎসব ভাতাকে শতভাগে উন্নীত করতে পারছে না, করছে না, কোন যুক্তিতে? এতকিছু দেয়ার পরেও সামান্য উৎসব ভাতার জন্য শিক্ষক-কর্মচারীদের মন খারাপ করে থাকতে হবে কেন? প্রতি বৎসর উৎসব এলেই সরকারের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠতে হবে কেন? এর পিছনে কিন্তুটা কি? 


অতিমারি কভিডের কারণে গত এক বছরেরও অধিক সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষকগণ অত্যন্ত কষ্টের জীবন যাপন করছেন। অধিকাংশ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে গত ২০২০ সালের টিউশন ফি নেয়া যায়নি এবং ২০২১ সালের সেশন চার্জ নেয়া যায়নি, টিউশন ফিও নেয়া যাচ্ছে না। সকল অভিভাবক বেতন-ফি দিতে অক্ষম তা কিন্তু নয়। ক্লাস না হওয়ার কারণে যারা সক্ষম তারাও বেতন-ফি দিতে চাচ্ছেন না, দিচ্ছেন না। শহরকেন্দ্রিক কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাস চলমান থাকলেও এই ক্লাসকে অধিকাংশ অভিভাবক ক্লাস মনে করছেন না। শিক্ষার্থীরাও এখন আর অনলাইন ক্লাস করতে চাচ্ছে না। এমনকি এসাইনমেন্ট করতেও অনীহা দেখাচ্ছে অনেক শিক্ষার্থী। বেতন চাইতে গেলে শিক্ষকদের সাথে খারাপ ব্যবহার করছেন অনেক অভিভাবক। হাতে গোনা দুই/একটি নামিদামী ও বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান ব্যতীত সারাদেশের চিত্র এমন অথবা এর চেয়েও খারাপ।


বর্তমান বাজারে শুধুমাত্র এমপিওর সামান্য টাকা দিয়ে একজন শিক্ষকের সংসার চালানো কোনভাবেই সম্ভব নয়। অথচ গত এক বছর যাবত শিক্ষকগণ প্রতিষ্ঠান থেকে তেমন কিছুই পাচ্ছেন না। বোনাস পাওয়ার তো প্রশ্নই উঠে না। যারা সরকারি নিয়ম মেনে প্রাইভেট টিউশনি করতেন তারাও টিউশনি করতে পারছেন না। এমতাবস্থায় আসন্ন ঈদে যদি শিক্ষকদের শতভাগ বোনাস দেয়া না হয় তাহলে- ঈদ অর্থ আনন্দ সেটি আর তাদের কাছে সত্য থাকবে না। 


সরকার ও মন্ত্রণালয়ের সকল আদেশ-নির্দেশ মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নকারী প্রায় ৯৮ শতাংশ বেসরকারি শিক্ষকদের প্রতি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ  এমতাবস্থায় প্রকৃতপক্ষে সহানুভূতিশীল হয়ে সময়মত যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করলে আসন্ন ঈদে শতভাগ উৎসব বোনাস পাওয়া যাবে বলে শিক্ষকরা বিশ্বাস করেন। কেন না, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষকদের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। 


মো. রহমত উল্লাহ: কলাম লেখক, সাহিত্যিক এবং অধ্যক্ষ- কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।