উপদেশ- এইচএসসি বা সমমান শিক্ষার্থী বন্ধুরা এগিয়ে যাও নতুন উদ্যোমে। দৈনিক ইত্তেফাক, 22 November 2020

 

logo
ঢাকা | রোববার, ২২ নভেম্বর ২০২০ | ৭ অগ্রহায়ণ ১৪২৭ | 
২৩ °সে

এইচএসসি বা সমমান শিক্ষার্থী বন্ধুরা এগিয়ে যাও নতুন উদ্যমে

facebook sharing button
twitter sharing button
messenger sharing button
whatsapp sharing button
sharethis sharing button
এইচএসসি বা সমমান শিক্ষার্থী বন্ধুরা এগিয়ে যাও নতুন উদ্যমে

মো. রহমত উল্লাহ্

তোমরা যারা এবারের এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষা পাশের সনদ পাওয়ার অপেক্ষায়, তাদের জানাচ্ছি আন্তরিক অভিনন্দন। জানি, পরীক্ষা ছাড়া সবাই পাশ করলেও সমান সন্তোষ্ট হবে না সবাই। ফলাফল যাই হোক বিনা পরীক্ষায় পাশ কোনো দিনই গৌরবময় হয় না, হবে না কারো জন্য। যাদের প্রস্তুতি ভালো ছিল, পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে আরও ভালো ফলাফল করার সম্ভাবনা ছিল, তাদের মন খারাপ হওয়া স্বাভাবিক। তাই বলে মন খারাপ করে বসে থাকলে তো আর চলবে না। হাজারো প্রতিকূলতা মোকাবিলা করেই এগিয়ে যেতে হয় জীবন চলার পথে। সৃষ্টির শুরু থেকেই সংগ্রাম করে, লড়াই করে, কৌশল করে, প্রতিকার করে, প্রতিরোধ করে টিকে থাকতে হয়েছে, হচ্ছে মানুষকে। দুই পা এগিয়ে যাওয়ার জন্যই কখনো কখনো পিছিয়ে আসতে হয়েছে, হচ্ছে এক পা। তেমনি মহামারি করোনা থেকে জীবন রক্ষার জন্য মানব জাতিকে আজ নিতে হচ্ছে নানান কৌশল। কিছু দিনের জন্য হলেও থামিয়ে দিতে হয়েছে চাকা, পাখা, বল, কল। তোমাদের জীবন রক্ষার জন্যই বন্ধ করে দিতে হয়েছে তোমাদের এইচএসসি পরীক্ষা। এটিকে মেনে নিয়ে, মনে নিয়ে এগিয়ে যাও নতুন উদ্যমে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এগিয়ে যাওয়ার জন্য নিজেকে তৈরি করতে পারাও বড় একটি যোগ্যতা। বর্তমান কঠিন বাস্তবতার সুরঙ্গে দাঁড়িয়ে ভবিষ্যত আলোর ঠিকানায় যাওয়ার প্রত্যয়ে এখন নিতে হবে সঠিক সিদ্ধান্ত। তাই উত্তম পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাও পরবর্তী শিক্ষায় বা কর্মে।

উচ্চ শিক্ষায় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কোচিং সেন্টারে যাবার কোন প্রয়োজন নেই। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির সিলেবাসভুক্ত বিষয় ও অধ্যায়গুলো পড়ে বুঝে আয়ত্তে রাখাই যথেষ্ট। তবে ভর্তির ক্ষেত্রে সঠিক বিষয় নির্বাচন বেশ জটিল। এজন্য পরামর্শ করো বড়দের সাথে। তৈরি করো পছন্দক্রম। ভালোভাবে জেনে নাও তোমার পছন্দের প্রতিটি বিষয়ের বর্তমান ও ভবিষ্যত সম্পর্কে। প্রয়োজনে নিয়ে নাও ইন্টারনেটের সহযোগিতা। জেনে নাও, কোনো বিষয়ে ভর্তি হয়ে কী পড়তে হবে তোমাকে। ভেবে দেখো, তা কি তোমার জন্য কঠিন হবে না সহজ হবে। গত পরীক্ষায় যে বিষয়ে বেশি নম্বর পেয়েছো, তা তোমার জন্য সঠিক বিষয় না-ও হতে পারে। বরং যে বিষয় তুমি নিজেই পড়ে বুঝতে পারো, যে বিষয়ের গভীরে যেতে তোমার ভালো লাগে, যে বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে তোমার আগ্রহ জাগে সেটিই হতে পারে তোমার উপযোগী উচ্চ শিক্ষার বিষয়। পছন্দের প্রতিষ্ঠানে পড়ার চেয়ে পছন্দের বিষয়ে পড়া, নিজের ও দেশের জন্য অধিক মঙ্গলজনক। মনে রাখতে হবে, উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্য শুধু উচ্চ বেতনে চাকরি করাই নয়; বরং নিজের মেধার সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটিয়ে সত্যিকারের মানুষ হয়ে অতি উচ্চ মাত্রায় দেশ ও জাতির সেবা করা।

বিভিন্ন কারণে যাদের যাওয়া হবে না উচ্চ শিক্ষায় তারা এমন ভেবো না যে এখনই হেরে গেছো জীবনে। জীবন অনেক বড়। তুমিও হতে পারো অনেকের চেয়ে অধিক সফল। সাহস রাখো, উদ্যম রাখো, আস্থা রাখো নিজের উপর। বাস্তবতাকে স্বীকার করে তৈরি করো নতুন পরিকল্পনা। মোটেও পার করা যাবে না বেকার সময়। অবসর মস্তিষ্ক শয়তানের আড্ডাখানা। দীর্ঘ অবসরে ও বেকারত্বে নিজের অজান্তেই তুমি আক্রান্ত হতে পারো বিষন্নতায়। দুষ্টুসংঘে চলে যেতে পারো ভুল পথে। হয়ে যেতে পারো মাদকাসক্ত। অবশ্যই নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে এসব থেকে। নিয়োজিত করতে হবে উত্তম কর্মে। উত্তম কর্মেই উত্তম হয় মানুষ। নিজের যোগ্যতা ও আগ্রহকে গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করতে হবে আধুনিক যুগপোযোগী কর্মমুখী পরিকল্পনা। গ্রহণ করতে হবে প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। সরকারি যুব উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে পছন্দমতো প্রশিক্ষণ নিয়ে তুমিও হতে পারো উদ্যোক্তা। গড়তে পারো কৃষি খামার, করতে পারো মত্স চাষ, স্থাপন করতে পারো ক্ষুদ্র শিল্প এবং আরও অনেক কিছুই। হতে পারো ফ্রিল্যান্সার। গড়ে তুলতে পারো আইটি ফার্ম। আন্তরিক প্রচেষ্টায় বিন্দু থেকে হয়ে উঠতে পারো সিন্দু। করতে পারো নিজের এবং হাজারো বেকারের কর্মসংস্থান। সাধন করতে পারো দেশ ও জাতির অশেষ কল্যাণ।

যারা বিদেশে গিয়ে কাজ করতে চাও, তারাও বাড়াতে পারো নিজের দেশ, জাতি ও পরিবারের সমৃদ্ধি। অর্জন করতে পারো বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা। এগিয়ে যাও বৈধ পথে। জেনে নাও সরকারি বিধি-বিধান। সক্ষমতা ও প্রত্যাশিত বেতন অনুসারে পছন্দ করো দেশ ও কাজ। নিয়ে নাও সে কাজের উপযোগী উত্তম প্রশিক্ষণ। অর্জন করো অধিক দক্ষতা। শিখে নাও সে দেশের ভাষা। তবেই তুমি হবে উত্তম কর্মী। নিশ্চিত পাবে পছন্দের কাজ ও প্রত্যাশিত বেতন। অর্জিত হবে অধিক বৈদেশিক মুদ্রা। তোমার কর্মদক্ষতায় বিদেশের মাটিতে বৃদ্ধি পাবে দেশের মর্যাদা। তোমাকে নিয়ে গর্বিত হবে সবাই।

লেখক:সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ এবং অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।




Previous Post
Next Post

About Author

0 মন্তব্য(গুলি):