শিশু পঠ্য ছড়া- 'চাকা' -২৯ এপ্লিল ২০১৬




Screenshot_2016-04-29-07-14-50গল্প > চাকা





মো. রহমত উল্লাহ্




কালের কন্ঠ   >   ২৯ এপ্রিল ২০১৬





>চাকা চালায় হানিফ। সাইকেলের পুরনো চাকা। টায়ার নেই, টিউব নেই, ইস্পুক নেই, কেবল রিং। হাতে ঠেলে চালু করে। ঠেলে কাঠি দিয়ে। চলতে থাকে চাকা। ছুটতে থাকে হানিফ। দৌড়ায় চাকার পিছু পিছু। চষে বেড়ায় গ্রাম।


শিমুলদের উঠানে আসে হানিফ। শোনা যায় কড়কড় কড়কড়। চাকা চালায় কয়েক পাক। দেখে শিমুল। শিমুলের দিকে ফিরেও তাকায় না হানিফ। এ-বাড়ি ও-বাড়ির উঠানে যায়। একা একা চালায়। কাউকে দেয় না। আফসোস করে সবাই। জেদ লাগে শিমুলের। তারও চাকা চাই।বাবার কাছে যায় শিমুল। ‘বাবা, আমার চাকা চাই। হানিফের চাকার মতো।’ বাবা বলেন, পুরনো চাকা পাব কই? আমাদের তো নতুন সাইকেল। ফিরে আসে শিমুল।বাড়ির কাছেই বাজার। যায় সাইকেল মেকারের দোকানে। চায় পুরনো রিং। মেকার বলেন, নেই। চাকা পাওয়ার আশা নেই। ফিরে আসে বাড়িতে। ভাবে, কী করা যায়।


পরদিন সকাল। স্কুলে যায় শিমুল। দেখা হয় নাইমের সঙ্গে। কথা হয় চাকা নিয়ে। আসে সাজিদ। কথা হয় তিনজনে। ঠিক হয়, তারা নিজেরাই বানাবে চাকা। সমবয়সী তিনজন। বয়স ছয় কি সাত। দেখতে সবার বড় শিমুল। গায়ের রং তামাটে। কালো চুল। চৌকস চেহারা। বলে, ঠিক আছে। মনে থাকে যেন।


ছুটির দিন। একসঙ্গে হয় তিনজন। যায় বনবাদাড়ে। দা নেয়। সুতা নেয়। বনের ভেতর ঢোকে। একটা গাছ খুঁজে পায়। দীর্ঘ চিকন শাখা। আগাগোড়া এক রকম। পুরোটাই মসৃণ। সহজে বাঁকানো যায়। ভাঙে না। ফাটে না। মচকে না। চাকা বানানোর উপযোগী।


ফিরে আসে জামতলায়। নিয়ে আসে শাখাগুলো। ছাঁটায় প্রতিটি শাখার দুই মাথা। বাঁকা করে একটি। কৌশলে মেলায় দুই মাথা। ধরে একজনে। বাঁধে দুইজনে। হয়ে যায় চাকা। হানিফের চাকার চেয়ে বড়। হাহ-হা। হেসে ওঠে সবাই। বানায় আরেকটি। আরো বড়। বানায় আরো একটি। আরো বড়। সবার বড়টা নেয় শিমুল। এরপর নেয় জামের ডাল। গুলতির বাঁটের মতো। তিনটি ডাল কাটে। বানায় তিনটি হাতল। এমন হাতলেই চলে চাকা। এখন সব রেডি। এখন সবাই খুশি। শুরু হয় চাকা চালানো।


তিনজনে চালায় চাকা। ছুটে গ্রামের পথে। যায় হানিফদের উঠানে। চালাতে থাকে জোরসে। হানিফও চালায়। সবার আগে শিমুল। শিমুলের চাকা বড়। বড় চাকা বেশি চলে। সবার পেছনে হানিফ। হানিফের চাকা ছোট। লোহার তৈরি। বেশ ভারী। তাই কম চলে। শরম লাগে তার। চালায় না সবার সঙ্গে। বসে থাকে চুপচাপ। বুঝতে পারে শিমুল। কেন হানিফের মুখ ভার।


হানিফের কাছে যায় শিমুল। চালাতে দেয় নিজের চাকা। বলে, এই নে। আমার বড়টা তুই চালা। তোর ছোটটা আমি চালাই। আরেকটা বানাব। আরো বড় করে। শুনে, অবাক হয় হানিফ। মনে পড়ে আগের কথা। ভাবে, ডাট দেখানো ঠিক না।


একসঙ্গে চাকা চালায় চারজনে। হাহ হা হোহ হো। হুর রে।<


!--more-->

 http://www.kalerkantho.com/feature/tuntuntintin/2016/04/29/352716#sthash.JiurEnYN.dpuf


Previous Post
Next Post

৯টি মন্তব্য:

  1. "CHAKA" Excellent ! very simple language, simple event of Bangladeshi rural areas but your dipiction with a moral at the end is really praiseworthy.

    উত্তরমুছুন
  2. Really you are a keen reader. Thanks a lot for giving most valuable opinion.

    উত্তরমুছুন
  3. Oh! It's a successful short story of a powerful writer. I think, this short story has a great literary and educative value. It has the qualities to be immortal winning the passes of time. Thanks for the author.
    Fazlul Haque, Tangail.

    উত্তরমুছুন
  4. আপনার এই মূল্যায়ন আমাকে উতসাহ যোগাবে। তবে আমি এখনো ততটুকু নই। অনেক ধন্যবাদ।

    উত্তরমুছুন
  5. ধন্যবাদ, খন্দকার শারমিন আক্তার।
    আপনার মতামত আমাকে উদ্দীপ্ত করবে। শুধু ভাল দিকের কথা না বলে কিছু মন্দ দিকের কথাও বলবেন আশাকরি। যাতে আমার পরের লেখায় মন্দ কম থাকে।

    উত্তরমুছুন
  6. Rohmot bhai a wonderful person and a great writer.the story is short but the message is very big which is a very importent for the story aswell as for the little readers of the world.keep it up brother.

    উত্তরমুছুন
  7. আপনার মতো বড় লেখকগণ ভালো বললে কার না ভালো লাগে? যদিও আমি ততটা নই।
    আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

    উত্তরমুছুন
  8. চাকা বানানোর গাছটির নাম কি স্যার ?

    উত্তরমুছুন
  9. সবুজ পাহাড় এলাকায় এই গাছটির নাম গুরগিল গাছ। এই নামটি আমার মূল গল্পে লেখা ছিল। সম্ভবত সবার কাছে এই নামটি পরিচিত না থাকায় সম্পাদক মহোদয় বাদ দিয়ে দিয়েছেন।

    এটিকে বেড়ি গাছও বলা হয়ে থাকে। কেননা এ গাছের ডাল দিয়ে বাঁশের তৈরি ঢালার চাক/বেড়ি লাগানো হয়।

    এ গাছের গোটা দিয়ে মারবেল খেলা যায়। তাই এটিকে মারবেল গাছও বলে থাকে কেউ কেউ।

    ধন্যবাদ আপনাকে এটি খেয়াল করার জন্য।

    উত্তরমুছুন