শিক্ষা ক্ষেত্রে ছেলেদের পিছিয়ে পড়ার কারণ ও প্রতিকার


পত্রিকার লিংক     পত্রিকার লিংক

শিক্ষাক্ষেত্রে ছেলেদের পিছিয়ে পড়ার কারণ ও প্রতিকার 

মো. রহমত উল্লাহ্

প্রকাশিত: জাগো নিউজ২৪.কম, ২৮ জুলাই ২০২৫ এবং

দৈনিক বাংলা, ৯ আগস্ট ২০২৫ 

>বিগত বেশ কয়েক বছর যাবত বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, শিক্ষাক্ষেত্রে মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা অনেক পিছিয়ে পড়েছে! ভর্তিতে, লেখাপড়ায়, পরীক্ষায় অংশগ্রহণে, পাশের হারে ও ফলাফল অর্জনে সব দিক থেকেই ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। কমেছে মেয়েদের ড্রপ আউটের পরিমাণ। শিক্ষার প্রতিটি স্তরে অর্থাৎ প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও এমনটি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। উচ্চশিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ ছেলেদের তুলনায় কম হলেও ভালো ফলাফলে অর্জনে মেয়েরাই উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে। মেয়েদের এগিয়ে যাওয়া যেমন আনন্দের, ছেলেদের পিছিয়ে পড়া তেমনি উদ্বেগের! 


আমাদের উচিত ছেলেদের ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ার সকল কারণ পুঙ্খানুপুঙ্খ চিহ্নিত করে ব্যাপক পর্যালোচনা করে বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সমাধানের পথ উদঘাটন করা ও দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। বাস্তবে শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের দেশে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের পিছিয়ে পড়ার অনেক ছোট-বড় কারণ বিদ্যমান। এ স্বল্প পরিসরে সবকিছু তুলে ধরে বিস্তারিত আলোচনা করা সম্ভব নয়। তাই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি অতি গুরুত্বপূর্ণ কারণ বা বাস্তবতা তুলে ধরে এর সমাধানে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। 


একটু পিছনে তাকালেই দেখা যাবে ছেলেদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে ছিল আমাদের মেয়েরা। মেয়েদের এগিয়ে আনার জন্য আমরা গ্রহণ করেছি বিভিন্ন পদক্ষেপ। অর্জন করেছি ব্যাপক সফলতা। যেতে হবে আরো অনেক দূর। শিক্ষাক্ষেত্রে মেয়েরা এখন ছেলেদের তুলনায় সংখ্যায় ও ফলাফলে অনেক এগিয়ে। আমরা মেয়েদের উৎসাহ উদ্দীপনা দেয়া, উপবৃত্তি দেয়া, অভিভাবকদের সচেতন করা, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করা, শিশুশ্রম রোধ করা ইত্যাদি কার্যক্রম চলমান রেখেছি। ১৯৯৪ সালে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রদান শুরু করা হয়। ২০০২ সালে তা উন্নীত করা হয় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে। আমাদের কন্যা শিশুরা এই কার্যক্রম গুলোর অধিক সুফল অর্জন করেছে তাই তাদেরকে ধন্যবাদ। অথচ প্রায় ১৫ বছর পরে ২০০৯ সালে এসে দরিদ্র পরিবারের ছেলে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির আওতায় আনা হয়েছে! রাষ্ট্রীয়ভাবে মেয়েদের প্রতি তুলনামূলক বেশি গুরুত্ব দিতে গিয়ে ছেলেদেরকে অবহেলা করা হয়েছে কিনা তা কিন্তু আমরা ভেবে দেখিনি! 


কন্যা শিশুদের এখন আর সেই আগের মত বাসা-বাড়িতে থেকে কাজ করতে দেখা যায় না। প্রায় সবাই উপবৃত্তির টাকা ঠিক রাখার জন্য নিয়মিত স্কুলে যায়। এটি অবশ্যই একটি শুভ লক্ষণ। এর জন্যই তো আমরা অপেক্ষায় ছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম শিশুশ্রম থেকে বেরিয়ে আসুক পুত্র-কন্যা নির্বিশেষে সকল শিশু। কিন্তু এখনো আমরা দেখতে পাচ্ছি পুত্র শিশুরা টেম্পুতে, গ্যারেজে, কারখানায়, নৌকায়, মাছ ধরায়, ইটভাটায়, হাটবাজারে, দোকানপাটে, মাঠে-ঘাটে, ক্ষেত-খামারে, টি-স্টলে হোটেল-রেস্টুরেন্টে ইত্যাদি অগণিত ক্ষেত্রে কায়িক শ্রম দিয়ে সামান্য উপার্জন করে নিজে জীবন ধারণ করছে ও পরিবারকে সহায়তা করছে। এমন অনেক শিশুর সঙ্গে আমি কথা বলে জেনেছি, তারা লেখাপড়া করতে চায়, কিন্তু সুযোগ পাচ্ছে না! নানান ধরনের অমানবিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে! দারিদ্র্যের কষাঘাতে নিষ্পেষিত এমন পুত্রশিশুরা স্কুলে ভর্তি হয় না। কেউ কেউ মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। আবার অনেকেই স্কুলে/ মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে দুএক বছর পরেই ঝরে পড়ে।   


অপরদিকে মেয়ে শিশুদের তুলনায় অধিক সংখ্যক ছেলেশিশু বাইরে বেশি সময় কাটায়, নেশাগ্রস্থ হয়ে থাকে, মাদকদ্রব্য কেনাবেচা করে, বেপরোয়া মোটরবাইক হাঁকায়, কিশোর গ্যাংএ জড়িত থাকে, চাঁদাবাজি করে, রাজনৈতিক নেতাদের পিছনে সময় ব্যয় করে, ঝগড়া বিবাদে জড়িত থাকে, নিয়ন্ত্রণহীন আচরণ করে, সারাক্ষণ গেইম চালায়, সারাদিন খেলাধুলা করে, আনন্দ আয়োজন করে, ফার্মের মুরগি চুরি করে, কৃষকের ফল-ফসল চুরি করে, দলে দলে ঘুরে বেড়ায় ইত্যাদি অনেক কিছুতেই অধিক হারে ছেলেরা জড়িয়ে পড়ায় অনেক বেশি পিছিয়ে পড়ছে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও এমন অশুভ চিত্র দেখা যায়। মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা বেশি মাত্রায় বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত বিধায়, শিক্ষক ও অভিভাবকের সঙ্গে বেশি বেয়াদবি করে বিধায় ছেলেদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ায় আমরা হাল ছেড়ে দিচ্ছি কিনা তা ভাবতে হবে বিশেষভাবে। তা না হলে আরো বেশি সংখ্যক ছেলেরা কর্মের অনুপযোগী হয়ে বেকারত্বে নিমজ্জিত হয়ে পরিবারে, সমাজে ও রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা বাড়িয়ে তুলবে বহুগুণ! আমরা যদি অসহায়ের মত বা দায়িত্বহীনের মত বসে থাকি তাহলে আর রক্ষা পাবো না কেউ।


এমন এক সময় ছিল যখন এলাকার সকল ছেলেদের শাসন-বারণ করার অধিকার ছিল সকল বড়দের। স্বার্থহীন আদর-স্নেহ দিয়ে অর্জন করে সেই অধিকার প্রয়োগ করতো বড়রা; আর নির্দ্বিধায় তা মেনে নিত ছোটরা। একজনের সন্তানের কল্যান চিন্তায় সক্রিয় থাকত শতজন অভিভাবক। বড়দের নেতৃত্বে ছোটরা করতো খেলাধুলা, শিক্ষামূলক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজ। আমি নিজেও কর্মী হয়ে অংশ নিয়েছি এবং পরে নেতৃত্ব দিয়েছি এমন অনেক কাজে। আমাদের প্রিয় শিক্ষকগণও অংশ নিতেন আমাদের সাথে। তখন শিশুরা বেড়ে উঠত অন্যের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করার মানসিকতা নিয়ে। কেউ বিপথে গেলে সবাই মিলে তাকে আনা হতো সুপথে। তেমন মানসিকতা নিয়ে আবার এগিয়ে আসতে হবে সবার। 


উল্লিখিত কারণগুলোর পাশাপাশি খুঁজে দেখতে হবে ছেলেদের ড্রপ আউট হবার ও পিছিয়ে পড়ার অন্যান্য কারণ। তবে মনে রাখতে হবে, এখন পাল্টে গেছে পরিবেশ ও পরিস্থিতি। সেই সাথে পাল্টে গেছে ডিজিটাল যুগের ছেলেমেয়েদের নিয়ন্ত্রণ কৌশল। তাই অভিভাবক ও শিক্ষকদের অবশ্যই শিখতে হবে স্মার্ট পেরেন্টিং, ইফেক্টিভ টিচিং। সবার আগে সক্রিয় হতে হবে শিক্ষক ও অভিভাবকদের। পর্যাপ্ত সাপোর্ট দিয়ে তৈরি করতে হবে আরো যোগ্য-দক্ষ সফল শিক্ষক। ছেলেমেয়েদের লালন-পালন তথা শিক্ষাদানে ঘরে-বাইরে থাকতে হবে আরো অনেক বেশি সতর্ক ও সক্রিয়। অভিভাবক, শিক্ষক, প্রশাসক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ মিলে প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে কার্যকর পরিকল্পনা। থাকতে হবে সরকারের সদিচ্ছা। মেয়ে বা ছেলে কাউকে দমিয়ে রেখে নয়, উভয়কে এগিয়ে এনে অর্জন করতে হবে সমতা। উভয়কেই এগিয়ে নিতে হবে সমান তালে। রাখতে হবে সঠিক পথে।


লেখক: অধ্যক্ষ, শিক্ষাবিদ ও শিশুসাহিত্যিক

Email - rahamot21@gmail.com 




পত্রিকার লিংক: 

https://www.jagonews24.com/opinion/article/1039672 



https://epaper.dainikbangla.com.bd/home/display

page/news_2025-08-09_5_15_b 

বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ: নিবন্ধন নয়, নিয়োগ পরীক্ষা হোক

 



পত্রিকার লিংক

বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ:

আর নিবন্ধন নয়, নিয়োগ পরীক্ষা হোক

মো. রহমত উল্লাহ্

বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে শূন্যপদ ছিল ১ লাখ ৮২২টি। এর বিপরীতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদন জমা পড়েছে ৫৭ হাজারের কিছু বেশি। অর্থাৎ প্রায় ৪৩ হাজার পথ শূন্য থাকবে। চাহিদা দিয়েও শিক্ষক পাবে না অনেক প্রতিষ্ঠান। ক্লাস থেকে বঞ্চিত হবে শিক্ষার্থীরা! এ ব্যাপারে কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন যে, আবেদন কালে প্রার্থীদের বয়স ৩৫ এর বেশি এবং নিবন্ধন সনদের মেয়াদ ৩ বছরের বেশি গ্রহণ না করার কারণে আবেদন কম পড়েছে। অর্থাৎ আরো কিছু ছাড় দেওয়া হলে আরো কিছু বেশি প্রার্থী আবেদন করতে পারত। বয়সে ও যোগ্যতায় বারবার ছাড় দিয়ে আবেদনের সুযোগ দিয়ে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ করা কোন উত্তম সমাধান নয়। ছাড় দিয়ে শিক্ষক নিয়োগ করা মানেই দীর্ঘ মেয়াদে দেশ ও জাতির অপূরণীয় ক্ষতি করা। একজন কম যোগ্য শিক্ষক তার শিক্ষকতা জীবনে তৈরি করেন অগণিত কম যোগ্য নাগরিক-কর্মী। তুলনামূলক কম যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে অধিক যোগ্য নাগরিক-কর্মী তৈরির প্রত্যাশা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, অবাস্তব! 


শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের তৃতীয় বিভাগ বা শ্রেণি এখন আর গ্রহণযোগ্য থাকা উচিত নয়। সরকারি এমনকি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বা কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রেও এখন আর তৃতীয় বিভাগ বা শ্রেণিধারী প্রার্থীদের আবেদন করার সুযোগ থাকে না। নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা, বয়স সীমা ও বাছাই প্রক্রিয়া অন্যদের তুলনায় বেসরকারি শিক্ষকদের শিথিল করা হলে এর অর্থ এমন দাঁড়ায় না যে বেসরকারি শিক্ষক তুলনামূলক কম যোগ্য হলেও চলে? এতে কি তাদের মান ও মর্যাদা হ্রাস পায় না? দেশের ৯৫ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থীদের পাঠদানকারী বেসরকারি শিক্ষকদের অধিক যোগ্য হওয়া কি অধিক গুরুত্বপূর্ণ নয়? তারা তো আমাদের সন্তানদেরই শিক্ষক হন। তারা অধিক যোগ্য হলেই তো আমাদের সন্তানরা অধিক যোগ্য হবার সম্ভাবনা অধিক থাকে। অর্থাৎ বয়সে, যোগ্যতায়, পরীক্ষায় ছাড় দিয়ে তুলনামূলক কম যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে নয়; বরং দ্রুত আর্থিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে অধিক যোগ্যদের আকৃষ্ট করে শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়াই অধিক মঙ্গলজনক।   


সার্বিক বিবেচনায় বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থাটিকে অতীতের ধারাবাহিকতায় আরও উন্নত করা আবশ্যক। সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা থাকলে তা সহজেই সম্ভব। সে লক্ষ্যে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগের অনুরূপ শিক্ষাগত যোগ্যতা, বয়স সীমা ও বাছাই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বেসরকারি শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া উচিত। অর্থাৎ শূন্য পদের বিপরীতে সরাসরি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে উত্তম বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উত্তম প্রার্থী বাছাই করে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। নিবন্ধনধারী সবাইকেই যদি নিয়োগ দিতে হয় তাহলে এটিকে নিবন্ধন পরীক্ষা না বলে নিয়োগ পরীক্ষা বলা ও কার্যকর করা অধিক যুক্তিযুক্ত নয় কি? তুলনামূলক কম নম্বর প্রাপ্ত নিবন্ধন ধারীরাও নিয়োগের দাবিদার হয়, নিয়োগের জন্য সোচ্চার হয়, বয়সের শিথিলতা দাবি করে, অশান্তি তৈরি করে। এমনকি অকৃতকার্যরাও আন্দোলন করে! অথচ সরাসরি নিয়োগ পরীক্ষায়/ প্রক্রিয়ায় কম নম্বর পেয়ে বাদ পড়ে যাওয়ারা আর নিয়োগের দাবিদার হতে পারে না, বয়সের শিথিলতা দাবি করতে পারে না, অশান্তি তৈরি করতে পারে না। 


অপরদিকে একবার নিবন্ধন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া, আবেদন নেওয়া, পরীক্ষা নেওয়া, তালিকা করা, সনদ দেওয়া এবং পরবর্তীতে আবার নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া, বাছাই করা, তালিকা করা, নিয়োগ করা ইত্যাদি নিয়োগ কর্তৃপক্ষ ও নিয়োগ প্রার্থী উভয়ের জন্যই দ্বিগুণ কষ্টসাধ্য ও সময় সাপেক্ষ। তদুপরি নিয়োগ প্রার্থীর জন্য দ্বিগুণ ব্যয় সাপেক্ষ। অধিক সংখ্যক শূন্য পদে নিয়োগ প্রার্থীদের বাছাই কেন্দ্রীয়ভাবে দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব না হলে জেলা প্রশাসকগণের দায়িত্বে ঐ জেলার সরকারি স্কুল-কলেজের সুযোগ্য শিক্ষকগণের সহযোগিতা নিয়ে সারাদেশে একই প্রশ্নে ও প্রক্রিয়ায় বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের বাছাই দ্রুত সম্পাদন করা সম্ভব হয় কিনা তা ভেবে দেখা যেতে পারে। যেমন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর করে থেকে।


অন্যান্য চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে নির্ধারিত বয়স ও যোগ্যতার চেয়ে অধিক বয়স্কদের ও কম যোগ্যদের শিক্ষকতায় প্রবেশের সুযোগ দেওয়া মোটেও উচিত নয়। কিছুদিন পরপর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ করতে চাইলে বারবার অধিকতর যোগ্য ফ্রেশ ক্যান্ডিডেট পাওয়া যাবে। একজন ইয়ং এনার্জিটিক মেধাবী শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে তৈরি করতে ও পূর্ণ উদ্যমে দীর্ঘদিন পাঠদান করতে যতটা সক্ষম একজন বয়স্ক লোক ততটা সক্ষম না হওয়াই স্বাভাবিক। ব্যতিক্রম নগণ্য। একজন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকের প্রকৃত সফল শিক্ষক হয়ে উঠতে অনেক সময়, শ্রম, মেধা, চর্চা, উদ্যম, প্রশিক্ষণ, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা লাগে। কেউ শিক্ষক হয়ে উঠতেই যদি বৃদ্ধ হয়ে পড়েন তো সফল পাঠদানে নিরলস থাকবেন কীভাবে, কতদিন? 


আলোচিত বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে অধিক যুক্তিযুক্ত উন্নত নীতিমালা প্রণয়ন করে ঢেলে সাজানো উচিত সকল শিক্ষক নিয়োগের বাছাই প্রক্রিয়া। মূল্যায়নে বিবেচনা করা উচিত প্রার্থীর শিক্ষা জীবনের কর্মকাণ্ড ও ডেমো ক্লাসের মান। দ্রুত দূর করা উচিত একই দায়িত্ব-কর্তব্যে নিয়োজিত সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, বয়স সীমা, বাছাই প্রক্রিয়া এবং আর্থিক সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত সকল বৈষম্য। অর্থাৎ বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের জন্য আর নিবন্ধন পরীক্ষা নয়, নিতে হবে সরাসরি নিয়োগ পরীক্ষা। সেই সাথে বৃদ্ধি করতে হবে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা। শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করতে হবে সর্বাধিক যোগ্যদের। 



লেখক: অধ্যক্ষ, শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট 

rahamot21@gmail.com 


৩১.৭.২০২৫




জাগো নিউজ: 

https://www.jagonews24.com/m/opinion/article/1041481?fbclid=IwQ0xDSwL9c5hjbGNrAv1zB2V4dG4DYWVtAjExAAEeoGlpJ_XPitpNKL41px6uW6mkIGD53rWMKjU56oAyIlDFYltqULrlCuMKx18_ae

m_17Vn_q5UfFwFj-fiatclOQ 

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অকৃতকার্যদের জন্য পরামর্শ


পত্রিকার লিংক

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অকৃতকার্যদের জন্য পরামর্শ 

মো. রহমত উল্লাহ্

দৈনিক ইত্তেফাক, ০১ আগস্ট ২০২৫

প্রিয় শিক্ষার্থী, তোমরা যারা এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারোনি তাদের জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও সমবেদনা। হ্যাঁ, অবশ্যই শুভেচ্ছা, অর্থাৎ শুভ ইচ্ছা তোমাদের জন্য। শুভেচ্ছা বা শুভকামনা তো তোমাদের জন্যই বেশি প্রয়োজন। মন খারাপ করো না, হতাশায় নিমজ্জিত হয়ো না, জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না। কারো তিরস্কারে কান দিও না। আবেগকে নিয়ন্ত্রিত কর, বিবেককে জাগ্রত কর। জীবন অনেক দীর্ঘ ও মূল্যবান। অগণিত পরীক্ষায় ও সম্ভাবনায় ভরপুর মানুষের জীবন। আনুষ্ঠানিক শিক্ষার একটি প্রচলিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারা মানে জীবন ব্যর্থ হয়ে যাওয়া নয়। কৃতকার্য হওয়ার অর্থ হচ্ছে কোন কাজে সফল হওয়া। মানুষের সফল হওয়ার ক্ষেত্র অনেক বিস্তৃত। 


নিজের ভুলগুলো চিহ্নিত করো, সংশোধনের জন্য প্রতিজ্ঞা করো, পরিকল্পনা করো, বাস্তবায়ন করো। নিয়মিত ক্লাসে যাও, শিক্ষকগণের সহযোগিতা নাও। কাউকে দোষারোপ করো না। সমস্যা থাকবেই, প্রতিকূলতা থাকবেই। সৎ সাহস নিয়ে এগিয়ে যাও, প্রতিকূলতা মোকাবিলা করো। পিতা-মাতাকে সম্মান করো। পিতা-মাতার শাসনকে কল্যাণ মনে করো। রাগ-অভিমান করো না। মনে রেখো, যে তোমার কল্যাণ চায়, সেই তোমার মন্দে মন খারাপ করে, তোমাকে উপদেশ দেয়, বকাবাদ্য করে। এর গভীরে জমা থাকে অনেক আদর। ধৈর্য বৃদ্ধি করো, নিজেকে পরিশুদ্ধ করো, দৃঢ় পায়ে এগিয়ে যাও। এবার উত্তীর্ণ হলে যে ফলাফল করতে, আগামীবার এর চেয়ে ভালো ফলাফল করে উত্তীর্ণ হও। তবেই জিতে যাবে তুমি। জিতে যাবে তোমার শিক্ষক, অভিভাবক। 


যারা কোন কারণে পুনরায় এসএসসি বা সমমান পরীক্ষা দিতে পারবে না তাদেরও হতাশ হবার কিছু নেই। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ নিয়ে তোমরাও হতে পারো সফল। ছয় মাসেই নিতে পারো কুকিং, টেইলারিং, ওয়েল্ডিং, ইলেকট্রিক্যাল, এসি-ফ্রিজ রিপেয়ার, মোবাইল ফোন সার্ভিসিং, হেয়ার কাটিং, কম্পিউটার বা গ্রাফিক ডিজাইন, গাড়ি মেরামত, নির্মাণ, কৃষি ও পশুপালন ইত্যাদি প্রশিক্ষণ। এসব প্রশিক্ষণ উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানে বিনা খরচে বা স্বল্প খরচে দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করতে পারো দেশে ও বিদেশে। উদ্যোক্তা হয়ে গড়ে তুলতে পারো নিজের প্রতিষ্ঠান। করতে পারো নিজের ও অন্যের কর্মসংস্থান। ছোট থেকে তোমার প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে পারে অনেক বড়। এর পাশাপাশি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেকোনো বয়সে দিতে পারো এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা এবং নিতে পারো উচ্চশিক্ষা। আবার ভিন্ন ভাষা শিখে প্রায় বিনা খরচে চলে যেতে পারো বিদেশে। উপার্জন করতে পারো অনেক অর্থ। দেখবে, একদিন যারা তিরস্কার করেছিল, তারাই বাহবা দিবে, ভালোবাসা দিবে, পুরস্কার দিবে। 


ভালো করার ইচ্ছা রাখো, সর্বাধিক চেষ্টায় থাকো, সঠিক পথে এগিয়ে যাও; অবশ্যই ভালোভাবে উত্তীর্ণ হবে পরবর্তী পরীক্ষায় বা প্রশিক্ষণে। এর পাশাপাশি জয়ী হও এ+ মানুষ হবার পরীক্ষায়। সৎ হও, নীতিবান হও, বিবেকবান হও, পরিশ্রমী হও, মানুষের কল্যাণে নিবেদিত হও। তবেই তুমি হবে অধিক কৃতকার্য।


লেখক: অধ্যক্ষ, শিক্ষাবিদ ও শিশুসাহিত্যিক


পত্রিকার লিংক:

https://epaper.ittefaq.com.bd/m/471335/688b78e5e26fb


[লেখাটি ভালো লাগলে শেয়ার করে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের উপকৃত করতে পারেন]

শিক্ষা ক্ষেত্রে ছেলেদের পিছিয়ে পড়ার কারণ ও প্রতিকার



পত্রিকার লিংক

শিক্ষাক্ষেত্রে ছেলেদের পিছিয়ে পড়ার কারণ ও প্রতিকার 

মো. রহমত উল্লাহ্

বিগত বেশ কয়েক বছর যাবত বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, শিক্ষাক্ষেত্রে মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা অনেক পিছিয়ে পড়েছে! ভর্তিতে, লেখাপড়ায়, পরীক্ষায় অংশগ্রহণে, পাশের হারে ও ফলাফল অর্জনে সব দিক থেকেই ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। কমেছে মেয়েদের ড্রপ আউটের পরিমাণ। শিক্ষার প্রতিটি স্তরে অর্থাৎ প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও এমনটি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। উচ্চশিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ ছেলেদের তুলনায় কম হলেও ভালো ফলাফলে অর্জনে মেয়েরাই উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে। মেয়েদের এগিয়ে যাওয়া যেমন আনন্দের, ছেলেদের পিছিয়ে পড়া তেমনি উদ্বেগের! 


আমাদের উচিত ছেলেদের ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ার সকল কারণ পুঙ্খানুপুঙ্খ চিহ্নিত করে ব্যাপক পর্যালোচনা করে বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সমাধানের পথ উদঘাটন করা ও দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। বাস্তবে শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের দেশে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের পিছিয়ে পড়ার অনেক ছোট-বড় কারণ বিদ্যমান। এ স্বল্প পরিসরে সবকিছু তুলে ধরে বিস্তারিত আলোচনা করা সম্ভব নয়। তাই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি অতি গুরুত্বপূর্ণ কারণ বা বাস্তবতা তুলে ধরে এর সমাধানে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। 


একটু পিছনে তাকালেই দেখা যাবে ছেলেদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে ছিল আমাদের মেয়েরা। মেয়েদের এগিয়ে আনার জন্য আমরা গ্রহণ করেছি বিভিন্ন পদক্ষেপ। অর্জন করেছি ব্যাপক সফলতা। যেতে হবে আরো অনেক দূর। শিক্ষাক্ষেত্রে মেয়েরা এখন ছেলেদের তুলনায় সংখ্যায় ও ফলাফলে অনেক এগিয়ে। আমরা মেয়েদের উৎসাহ উদ্দীপনা দেয়া, উপবৃত্তি দেয়া, অভিভাবকদের সচেতন করা, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করা, শিশুশ্রম রোধ করা ইত্যাদি কার্যক্রম চলমান রেখেছি। ১৯৯৪ সালে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রদান শুরু করা হয়। ২০০২ সালে তা উন্নীত করা হয় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে। আমাদের কন্যা শিশুরা এই কার্যক্রম গুলোর অধিক সুফল অর্জন করেছে তাই তাদেরকে ধন্যবাদ। অথচ প্রায় ১৫ বছর পরে ২০০৯ সালে এসে দরিদ্র পরিবারের ছেলে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির আওতায় আনা হয়েছে! রাষ্ট্রীয়ভাবে মেয়েদের প্রতি তুলনামূলক বেশি গুরুত্ব দিতে গিয়ে ছেলেদেরকে অবহেলা করা হয়েছে কিনা তা কিন্তু আমরা ভেবে দেখিনি! 


কন্যা শিশুদের এখন আর সেই আগের মত বাসা-বাড়িতে থেকে কাজ করতে দেখা যায় না। প্রায় সবাই উপবৃত্তির টাকা ঠিক রাখার জন্য নিয়মিত স্কুলে যায়। এটি অবশ্যই একটি শুভ লক্ষণ। এর জন্যই তো আমরা অপেক্ষায় ছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম শিশুশ্রম থেকে বেরিয়ে আসুক পুত্র-কন্যা নির্বিশেষে সকল শিশু। কিন্তু এখনো আমরা দেখতে পাচ্ছি পুত্র শিশুরা টেম্পুতে, গ্যারেজে, কারখানায়, নৌকায়, মাছ ধরায়, ইটভাটায়, হাটবাজারে, দোকানপাটে, মাঠে-ঘাটে, ক্ষেত-খামারে, টি-স্টলে হোটেল-রেস্টুরেন্টে ইত্যাদি অগণিত ক্ষেত্রে কায়িক শ্রম দিয়ে সামান্য উপার্জন করে নিজে জীবন ধারণ করছে ও পরিবারকে সহায়তা করছে। এমন অনেক শিশুর সঙ্গে আমি কথা বলে জেনেছি, তারা লেখাপড়া করতে চায়, কিন্তু সুযোগ পাচ্ছে না! নানান ধরনের অমানবিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে! দারিদ্র্যের কষাঘাতে নিষ্পেষিত এমন পুত্রশিশুরা স্কুলে ভর্তি হয় না। কেউ কেউ মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। আবার অনেকেই স্কুলে/ মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে দুএক বছর পরেই ঝরে পড়ে।   


অপরদিকে মেয়ে শিশুদের তুলনায় অধিক সংখ্যক ছেলেশিশু বাইরে বেশি সময় কাটায়, নেশাগ্রস্থ হয়ে থাকে, মাদকদ্রব্য কেনাবেচা করে, বেপরোয়া মোটরবাইক হাঁকায়, কিশোর গ্যাংএ জড়িত থাকে, চাঁদাবাজি করে, রাজনৈতিক নেতাদের পিছনে সময় ব্যয় করে, ঝগড়া বিবাদে জড়িত থাকে, নিয়ন্ত্রণহীন আচরণ করে, সারাক্ষণ গেইম চালায়, সারাদিন খেলাধুলা করে, আনন্দ আয়োজন করে, ফার্মের মুরগি চুরি করে, কৃষকের ফল-ফসল চুরি করে, দলে দলে ঘুরে বেড়ায় ইত্যাদি অনেক কিছুতেই অধিক হারে ছেলেরা জড়িয়ে পড়ায় অনেক বেশি পিছিয়ে পড়ছে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও এমন অশুভ চিত্র দেখা যায়। মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা বেশি মাত্রায় বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত বিধায়, শিক্ষক ও অভিভাবকের সঙ্গে বেশি বেয়াদবি করে বিধায় ছেলেদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ায় আমরা হাল ছেড়ে দিচ্ছি কিনা তা ভাবতে হবে বিশেষভাবে। তা না হলে আরো বেশি সংখ্যক ছেলেরা কর্মের অনুপযোগী হয়ে বেকারত্বে নিমজ্জিত হয়ে পরিবারে, সমাজে ও রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা বাড়িয়ে তুলবে বহুগুণ! আমরা যদি অসহায়ের মত বা দায়িত্বহীনের মত বসে থাকি তাহলে আর রক্ষা পাবো না কেউ।


এমন এক সময় ছিল যখন এলাকার সকল ছেলেদের শাসন-বারণ করার অধিকার ছিল সকল বড়দের। স্বার্থহীন আদর-স্নেহ দিয়ে অর্জন করে সেই অধিকার প্রয়োগ করতো বড়রা; আর নির্দ্বিধায় তা মেনে নিত ছোটরা। একজনের সন্তানের কল্যান চিন্তায় সক্রিয় থাকত শতজন অভিভাবক। বড়দের নেতৃত্বে ছোটরা করতো খেলাধুলা, শিক্ষামূলক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজ। আমি নিজেও কর্মী হয়ে অংশ নিয়েছি এবং পরে নেতৃত্ব দিয়েছি এমন অনেক কাজে। আমাদের প্রিয় শিক্ষকগণও অংশ নিতেন আমাদের সাথে। তখন শিশুরা বেড়ে উঠত অন্যের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করার মানসিকতা নিয়ে। কেউ বিপথে গেলে সবাই মিলে তাকে আনা হতো সুপথে। তেমন মানসিকতা নিয়ে আবার এগিয়ে আসতে হবে সবার। 


উল্লিখিত কারণগুলোর পাশাপাশি খুঁজে দেখতে হবে ছেলেদের ড্রপ আউট হবার ও পিছিয়ে পড়ার অন্যান্য কারণ। তবে মনে রাখতে হবে, এখন পাল্টে গেছে পরিবেশ ও পরিস্থিতি। সেই সাথে পাল্টে গেছে ডিজিটাল যুগের ছেলেমেয়েদের নিয়ন্ত্রণ কৌশল। তাই অভিভাবক ও শিক্ষকদের অবশ্যই শিখতে হবে স্মার্ট পেরেন্টিং, ইফেক্টিভ টিচিং। সবার আগে সক্রিয় হতে হবে শিক্ষক ও অভিভাবকদের। পর্যাপ্ত সাপোর্ট দিয়ে তৈরি করতে হবে আরো যোগ্য-দক্ষ সফল শিক্ষক। ছেলেমেয়েদের লালন-পালন তথা শিক্ষাদানে ঘরে-বাইরে থাকতে হবে আরো অনেক বেশি সতর্ক ও সক্রিয়। অভিভাবক, শিক্ষক, প্রশাসক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ মিলে প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে কার্যকর পরিকল্পনা। থাকতে হবে সরকারের সদিচ্ছা। মেয়ে বা ছেলে কাউকে দমিয়ে রেখে নয়, উভয়কে এগিয়ে এনে অর্জন করতে হবে সমতা। উভয়কেই এগিয়ে নিতে হবে সমান তালে। রাখতে হবে সঠিক পথে।


লেখক: অধ্যক্ষ, শিক্ষাবিদ ও শিশুসাহিত্যিক

Email - rahamot21@gmail.com 




পত্রিকার লিংক: 

https://www.jagonews24.com/o

pinion/article/1039672 

খুব বেশি প্রয়োজন মানবিক শিক্ষক। দৈনিক ইত্তেফাক

পত্রিকার লিংক

প্রয়াত মাহেরিন চৌধুরীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা:

খুব বেশি প্রয়োজন মানবিক শিক্ষক

মো. রহমত উল্লাহ্

দৈনিক ইত্তেফাক, ২৭ জুলাই ২০২৫

>মানবিক গুণাবলীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পরোপকার। অর্থাৎ স্বার্থহীন ভাবে অন্যের উপকার করা। অন্যের দুঃখ-কষ্ট অনুভব করা। তার প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া। দুঃখ-কষ্ট লাঘবে সচেষ্ট হওয়া। কেউ বিপদগ্রস্ত হলে তাকে উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়া। সমাজে পরোপকারী মানুষের সংখ্যা যত বেশি হয় ততই মঙ্গলজনক। তাই শিক্ষার্থীদের মানবিক গুণাবলী অর্জন অপরিহার্য। কেননা, শিক্ষার্থীরা মানবিক গুণাবলী অর্জন করলেই মানবিক হয় দেশ ও জাতি।


সততা, ভদ্রতা, সংযম, সহানুভূতি, দয়াশীলতা, ক্ষমাশীলতা, সহনশীলতা, ন্যায়বোধ, দায়িত্ববোধ, কর্তব্যপরায়ণতা ইত্যাদি মানবিক গুণাবলীর দ্বারাই পরোপকার নিশ্চিত হয়। এ সকল গুণাবলীর অভাব দেখা দিলে একজনের বিপদে এগিয়ে আসে না অন্যজন। সমাজে নেমে আসে চরম স্বার্থপরতা, অস্থিরতা, হানাহানি, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, বিশৃঙ্খলা! শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানবিক গুণাবলী প্রথিত করার প্রধান দায়িত্বে নিয়োজিত শিক্ষক। এ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের জন্য সর্বপ্রথম শিক্ষককেই হতে হয় মানবিক। নিজেকে উজাড় করে দিতে হয় শিক্ষার্থীদের জন্য। শিক্ষার্থীদের প্রতি হতে হয় সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল, কর্তব্যপরায়ণ, সহানুভূতিশীল। শিক্ষক মানবিক হলেই স্বার্থহীন হয়, উন্নত হয়, চিরস্থায়ী হয়, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক। শিক্ষক অমানবিক হলে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক হয় দুর্বল, ভঙ্গুর, ব্যাহত হয় সুশিক্ষা। সঠিক পাঠদানের পাশাপাশি মানবিক গুণাবলী অর্জন, প্রয়োগ ও সঞ্চালনের মাধ্যমেই একজন শিক্ষক হয়ে ওঠেন প্রকৃত শিক্ষক। 


সম্প্রতি আমাদের সামনে এসেছে একজন সর্বোচ্চ মানবিক শিক্ষকের উদাহরণ। তিনি হলেন মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের মাহেরিন চৌধুরী ওরফে মাহিরিন মিস। বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান তাদের প্রতিষ্ঠানে বিধ্বস্ত হয়ে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের গায়ে আগুন লেগে গেলে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন উদ্ধার কাজে। বারবার আগুনে গিয়ে নিজে দগ্ধ হয়ে যতক্ষণ পেরেছেন ততক্ষণ উদ্ধার করেছেন শিশুদের। মৃত্যুর আগে বলেছেন, "ওই বাচ্চাগুলোও আমার বাচ্চা। ওদের মুখে আমার বাচ্চাগুলোর ছবি ভাসতেছিল। আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে যতগুলা পারছি প্রায় ২০-২৫ জনকে টেনে বের করে দিছি। এরপরে কী হলো আমি জানি না"! সে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আগুনে দগ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন মাসুকা নামে আরও একজন শিক্ষক এবং অনেক কোমলমতি নিষ্পাপ শিক্ষার্থী। স্পটডেড না হলে হয়তো মাসুকা মিসও ঝাঁপিয়ে পড়তেন প্রিয় শিক্ষার্থীদের বাঁচানোর জন্য। জাতীয়ভাবে আলোচিত মাহেরিন আমাদের দেখিয়ে গেছেন কীভাবে নিজেকে উজাড় করে দিতে পারেন একজন পরোপকারী মানুষ, মানবিক মানুষ, উত্তম শিক্ষক। একজন মানবিক মানুষের দ্বারা কীভাবে উপকৃত হয় চরম অসহায় মৃত্যু পথযাত্রী অগণিত মানুষ। 


মাহেরিন মিসের সংস্পর্শে নিশ্চয়ই মানবিক গুণাবলী অর্জন করেছে অনেক শিক্ষার্থী। তিনি প্রচন্ড ভালোবাসতেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। অনেক সময় ও শ্রম দিতেন প্রতিষ্ঠানের কাজে। নিভৃতে নিবেদিত ছিলেন অন্যের কল্যাণে। প্রতিদিন স্কুল ছুটির পর প্রতিটি শিশুকে তার অভিভাবকের দায়িত্বে তুলে দিয়ে পরে ফিরে যেতেন নিজের বাসায়। বেঁচে থাকলে অবশ্যই তাঁর সান্নিধ্যে আরো বেশি পাঠ্যবিষয় ও মানবিক গুণাবলী অর্জন করত অগণিত শিক্ষার্থী। আমাদের শিক্ষকদের স্বার্থহীন হয়ে ওঠার জন্য, মানবিক হয়ে ওঠার জন্য, পরোপকারী হয়ে ওঠার জন্য এবং শিক্ষার্থীদের অনুরূপ গুণে গুণান্বিত করে তোলার জন্য মাহেরিন ম্যাডামের দেওয়া এই শিক্ষা চির অনুকরণীয়, অনুসরণীয়। 


শুধু শিক্ষক-শিক্ষার্থী নয়, সবার জন্যই তা শিক্ষণীয়। উনার এ মহামূল্যবান গুণ মনেপ্রাণে ধারণ করলে, লালন করলে এবং শিক্ষার্থী তথা সন্তানদের মধ্যে সঞ্চারিত করলেই উত্তম হয়ে উঠবো আমরা, উত্তম হয়ে উঠবে আমাদের সমাজ। সবার মানবিকতায় চিরদিন বেঁচে থাকবেন মানবিক মাহেরিন চৌধুরী।


লেখক: অধ্যক্ষ, শিক্ষাবিদ ও শিশুসাহিত্যিক


পত্রিকার লিংক:

https://epaper.ittefaq.com.bd/m/469119/6884dfd349909 


*ভালো লাগলে শেয়ার করতে পারেন।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট তৈরি ও হালনাগাদকরণ: দশ বছরে সম্ভব হয়নি, ১০ মাসেই সম্ভব।

 

পত্রিকার লিংক

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট তৈরি ও হালনাগাদকরণ:  

১০ বছরেও সম্ভব হয়নি, ১০ মাসেই সম্ভব

মো. রহমত উল্লাহ্ 

আবারও “সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ওয়েবসাইট তৈরি ও হালনাগাদের নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। গত ১৪ জুলাই ২০২৫ তারিখে জারিকৃত পত্রে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইটে প্রতিষ্ঠান পরিচিতি, প্রতিষ্ঠানের পাঠদানের অনুমতি ও স্বীকৃতি, শ্রেণি ও লিঙ্গভিত্তিক শিক্ষার্থীর তথ্য, শ্রেণিভিত্তিক অনুমোদিত শাখার তথ্য, পাঠদান সংক্রান্ত তথ্য (শিক্ষক, শিক্ষিকার নামসহ পূর্ণাঙ্গ রুটিন, পাঠ্যসূচি, বিবিধ নোটিশ ইত্যাদি), এমপিও, প্রতিষ্ঠানের ফোন/মোবাইল নম্বরসহ যোগাযোগের ঠিকানা, তথ্যসেবা কেন্দ্রের ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর, অভিযোগ নিষ্পত্তি কর্মকর্তার ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর, প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ সব শিক্ষক-কর্মচারীর তথ্য, ব্যবস্থাপনা কমিটির তথ্য হালনাগাদ রাখতে হবে।”

বিষয়টি অবশ্যই অনেক গুরুত্বপূর্ণ! কেননা, কোন প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ওই প্রতিষ্ঠানকে ভার্চুয়ালি উপস্থাপন করে। আর সে উপস্থাপনটি হয় অত্যন্ত ব্যাপক পরিসরে, গোটা পৃথিবীজুড়ে। তাই মাউশি নির্ধারিত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ডায়নামিক ওয়েবসাইট থাকা এবং সেখানে মাউশি নির্দেশিত বিষয়গুলোসহ প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য তথ্যাদি ও কৃতিত্ব উপস্থাপিত থাকা অত্যাবশ্যক। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, অনুরূপ আদেশ বারবার দেওয়ার পরেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এসব আদেশ পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করছে না অথবা বাস্তবায়ন করতে পারছে না! 

একটু পিছনে তাকালে দেখা যায় যে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অনুরূপ আদেশ সম্বলিত প্রথম পরিপত্রটি জারি করা হয়েছিল ০২ মে ২০১৫ তারিখে। যেটির বিষয় ছিল 'সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ডায়নামিক ওয়েবসাইট তৈরি ও হালনাগাদকরণ।' এরপরে শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে গত ২৪ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে এবং গত ১৯ আগস্ট ২০২৩ তারিখে এ সংক্রান্ত আরও দুটি আদেশ জারি করা হয়েছিল। অর্থাৎ সেই ২০১৫ সাল থেকে গত ১০ বছর ধরে বারবার আদেশ/ পুনরাদেশ দেওয়া হলেও বাংলাদেশের সকল স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনো ডায়নামিক ওয়েবসাইট তৈরি করানো এবং সকল তথ্য সংযুক্ত করে হালনাগাদ রাখানো সম্ভব হয়নি! 

মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা হচ্ছে, যখনই ডায়নামিক ওয়েবসাইট তৈরির আদেশ দেওয়া হচ্ছে তখনই অনেক ভুঁইফুর ও নামসর্বস্ব সফটওয়্যার/ আইটি প্রতিষ্ঠান স্বল্পমূল্যে ওয়েবসাইট তৈরি ও পরিচালনা করবে বলে চটকদার বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, মোবাইল ফোনে এসএমএস দিচ্ছে, লোকজন ধরাধরি করছে, প্রতিষ্ঠানে এসে ধরনা দিচ্ছে। কোন কৌশলে চুক্তিবদ্ধ হয়ে যেনতেন কাজ করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এসকল সফটওয়্যার কোম্পানির বৈধতা কোন অথরিটির কেমন সনদ দেখে নিশ্চিত হতে হবে তা জানা নেই অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানের। অবশ্য শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে বৈধ সফটওয়্যার/ আইটি প্রতিষ্ঠানগুলোর কোন তালিকা দেওয়া হলে তারাও আবার সিন্ডিকেট করে অতিরিক্ত চার্জ ধার্য করার কৌশল নিতে পারে। অপরদিকে নামিদামি সফটওয়্যার/ আইটি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের এককালীন ও মাসিক চার্জ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি করছে। তাদের সফটওয়ারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সকল ডাটা আপলোড করা হলে প্রতি বৎসর চার্জ বাড়ানোর কৌশল করছে। ফলে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই নিজস্ব ডাইনামিক ওয়েবসাইট তৈরি করতে ও পরিচালনা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। বিশেষ করে অসচ্ছল ও কম সচ্ছল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রকৃত ডায়নামিক ওয়েবসাইট প্রস্তুত করার এককালীন ব্যয় এবং রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। সারা দেশে এমন অনেক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা আছে যেখানে শিক্ষার্থীরা মাসিক বেতনই ঠিকমত দেয় না এবং শিক্ষকগণ তাদের প্রতিষ্ঠান অংশ থেকে তেমন কিছুই পান না! 

আরেকটি বাস্তবতা হচ্ছে, ওয়েবসাইট নিয়মিত হালনাগাদ করা ও সমস্যা হলে সমাধান করার মত দক্ষ জনবল অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই নেই। আউটসোর্সিং করতে গেলে যে বাড়তি টাকার প্রয়োজন সেটিও অনেক প্রতিষ্ঠানে নেই। দুঃখজনক হলেও সত্য যে অধিকাংশ আইসিটি টিচার ও কম্পিউটার অপারেটর প্রাক্টিক্যাল/ ডিজিটাল কাজে অত্যন্ত দুর্বল। সাধারণ শিক্ষকদের কথা আর কী বলব! প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কম্পিউটার অপারেটরকে ওয়েবসাইট আপডেট রাখার বিষয়ে গাইড করার মত যোগ্যতা, আগ্রহ ও দায়িত্ব বেশিরভাগ আইসিটি টিচারের নেই! অথচ প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তর স্বার্থে সকল শিক্ষককেই শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি সহ-শিক্ষা কার্যক্রম ও অন্যান্য কার্যক্রম সম্পাদন করতে হয়। 

আলোচিত বিভিন্ন বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে শুধুমাত্র শহরের কতিপয় অতি সচ্ছল ও শিক্ষিত অভিভাবকদের সন্তান যে সকল প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে সে সকল প্রতিষ্ঠানের দিকে তাকিয়ে সবকিছু চিন্তা করলে হবে না, প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকায় অবস্থিত অসচ্ছল ও অশিক্ষিত বা স্বল্পশিক্ষিত পরিবারের সন্তানরা যে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে সেগুলোর দিকেও তাকাতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে সমানতালে এগিয়ে নিতে হবে সবাইকে। এমতাবস্থায় শিক্ষামন্ত্রণালয় বা এর অধীনস্থ কোনো প্রতিষ্ঠান যদি একটি শক্তিশালী ডায়নামিক ওয়েবসাইট ও সফটওয়্যার প্রস্তুত করে প্রয়োজনীয় ম্যানু, সাব-ম্যানু যুক্ত করে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সেটির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে দেয় তাহলে এই সমস্যার সহজ সমাধান হবে বলে আমি মনে করি। সে ওয়েবসাইট প্রস্তুত, কাস্টমাইজ ও রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে নামমাত্র বার্ষিক ফি নেওয়া যেতে পারে। এ ফি ছোট-বড় প্রতিষ্ঠানের ব্যবহৃত ডাটা/স্পেস অনুসারে কম-বেশি হতে পারে। তাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমান বিড়ম্বনা, অতিরিক্ত ব্যয় ও আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকি থেকে মুক্তি পাবে। তদুপরি দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় তথ্য শিক্ষামন্ত্রণালয়ের ও এর অধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদা মত ফরমেট অনুসারে একটি প্লাটফর্মে রেডি পাওয়া যাবে। কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেই ওয়েবসাইট ও সফটওয়্যার ব্যবহার না করার এবং নিয়মিত আপডেট না করার কোন অজুহাত দেখাতে পারবে না। তবে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি শিক্ষামন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ওয়েবসাইট ও সফটওয়্যারের ব্যবহার শতভাগ নিশ্চিত করে এর পাশাপাশি নিজস্ব অর্থায়নে অন্যকোন ওয়েবসাইট/ সফটওয়্যার প্রস্তুত ও পরিচালনা করতে চায় তাহলে সে সুযোগ দিতে হবে। অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের স্বতন্ত্র ওয়েবসাইট ব্যবহারের সুযোগ থাকতে হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় যেহেতু বর্তমানে প্রায় সকল শ্রেণির ভর্তি কার্যক্রম অনলাইনে চালাতে সক্ষম সেহেতু সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবহার উপযোগী একটি ডায়নামিক ওয়েবসাইট ও প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার প্রস্তুত এবং রক্ষণাবেক্ষণ করতে অবশ্যই সক্ষম হবে বলে আমি মনে করি। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে তারা বুয়েট বা অন্য কোন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতা নিতে পারে। ঢাকা শিক্ষাবোর্ড বেশ কিছুদিন আগেই প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ইআইআইএন নম্বরযুক্ত আইডি দিয়ে একটি কমন ওয়েবসাইট প্রস্তুত করে দিয়েছে, যা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু সেটিতে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের তথ্য আপলোড করেনি। এমনকি অনেকে জানেনও না যে, তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য সম্পূর্ণ ফ্রি ব্যবহার উপযোগী একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা আছে। বাস্তবে সেটির ব্যবহার বাধ্যতামূলক না করায়, সেটিতে প্রতিষ্ঠানের তথ্যাদি আপলোড করার জন্য তেমন তাগাদা না দেওয়ায়, সেটিকে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করে কাঙ্খিত মানে উন্নীত না করায় এবং অপরদিকে পৃথক ডায়নামিক ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বারবার আদেশ ও পুনরাদেশ দেওয়ায় কোনোটিই সঠিকভাবে হয়নি বলে ধারণা করা যাচ্ছে। 

শিক্ষার্থীদের ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন, ট্রান্সফার, ফরম পূরণ, পরীক্ষা গ্রহণ, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, ফলাফল প্রদান, সনদ প্রদান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি প্রদান, স্বীকৃতি নবায়ন, স্বীকৃতি বাতিলকরণ, কমিটি গঠন, কমিটির অনুমোদন প্রদান, কমিটি বাতিলকরণ, শিক্ষক-কর্মচারীদের শাস্তি নিশ্চিতকরণ বা অব্যাহতি প্রদান ইত্যাদি বিভিন্ন কাজ যেহেতু শিক্ষাবোর্ডের নিয়ন্ত্রণে অর্থাৎ শিক্ষা বোর্ড যেহেতু শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত সর্বাধিক তথ্যের ব্যবহারকারী সেহেতু শিক্ষাবোর্ডকেই একটি কমন ডায়নামিক ওয়েবসাইট ও সফটওয়্যার তৈরি এবং আপডেট ও রক্ষণাবেক্ষণ করার দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যয় তারা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি প্রদান ও নবায়ন ফি বাবদ আদায়কৃত অর্থের অংশবিশেষ দিয়ে নির্বাহ করতে পারে। অপরদিকে প্রাথমিক শিক্ষাঅধিদপ্তরের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অধিদপ্তর তাদের বাস্তবতার আলোকে পৃথক ওয়েবসাইট ও সফটওয়্যার তৈরি এবং মেন্টেন করতে পারে। মনে রাখতে হবে, দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থা ও অবস্থান যেহেতু একই রকম নয় সেহেতু মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা বিবেচনা করে কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বিত সকলের জন্য অনুকূল কোন উদ্যোগ ব্যতীত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডায়নামিক ওয়েবসাইট ও সফটওয়্যারের ব্যবহার সমভাবে নিশ্চিত করে অত্যাধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা সচল রাখা প্রায় অসম্ভব।

লেখক: অধ্যক্ষ, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট 

১৭.৭.২০২৫

https://www.jagone

ws24.com/opinion/article/1037587 

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা ২০২৫ এর ফলাফল প্রসঙ্গ

দৈনিক বাংলার লিঙ্ক 

জাগো নিউজের লিঙ্ক



এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা ২০২৫ এর ফলাফল প্রসঙ্গ

মো. রহমত উল্লাহ্

দৈনিক বাংলা, ১৬ জুলাই ২০২৫

>এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা ২০২৫ এর ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে গত ১০ জুলাই ২০২৫ তারিখে। এতে দেখা যায় যে, ১১ শিক্ষা বোর্ড থেকে মোট ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন অংশগ্রহণ করে মোট পাস করেছেন ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন শিক্ষার্থী। গড় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন। গত বছর পাসের হার ছিল ৮৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এ বছর পাসের হার কমেছে ১৪.৯৫ শতাংশ জিপিএ-৫ কমেছে ৪৩ হাজার ৯৭ জন। গত ১৫ বছরে এবারই পাশের হার সর্বনিম্ন এবং জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও সর্বনিম্ন।   


টানা প্রায় ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে পরীক্ষার ফলাফল ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রকাশের অভিযোগ ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সেই পথে হাঁটেনি বলে মনে করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সিআর আবরার পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের আগেই বলেছিলেন, এবারের এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্টে শিক্ষার্থীদের মেধার প্রকৃত মূল্যায়ন করা হচ্ছে। অর্থাৎ তারা যেভাবে পরীক্ষা দিয়েছে, প্রকৃত মূল্যায়নে সেই ফলাফল তাদের হাতে পৌঁছানো হবে। ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে অতীতের মতো রেজাল্ট আর দেওয়া হবে না। এমন একটি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয়কে ধন্যবাদ। শিক্ষার্থীদের শিক্ষামূল্যায়নে শতভাগ শততা, স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষার আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। সততা, স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা অর্জিত হয়। আত্মবিশ্বাসী হয়ে নিজের যোগ্যতায় এগিয়ে যেতে শিখে। যোগ্যাধিকারে বিশ্বাসী হয়। বিপরীত ক্রমে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বা মূল্যায়নে শিথিলতা প্রদর্শন করলে, গ্রেস নম্বর প্রদান করলে, অটো প্রমোশন দেওয়া হলে তারা লেখাপড়ায় গুরুত্ব কমিয়ে দেয়। অন্যের দয়ার উপর নির্ভরশীল হয়। নৈতিকতা বিবর্জিত হয়। অসদুপায় অবলম্বনে মরিয়া হয়। অযোগ্যতা দিয়ে পরীক্ষায় পাশ করা, চাকরিতে প্রবেশ করা, বাড়তি সুবিধা ভোগ করা ইত্যাদিকে অধিকার মনে করে অন্যের উপর চড়াও হয়। তাই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বা মূল্যায়নে কোনরূপ শিথিলতা প্রদর্শনের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি।


বর্তমান শিক্ষা প্রশাসন এই জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে অর্থাৎ খাতা মূল্যায়নে সহানুভূতি দেখিয়ে অতিরিক্ত নম্বর প্রদান ও অপ্রাসঙ্গিক উত্তরে অহেতুক নম্বর প্রদান না করার কারণে ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে বলে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। বিগত বছরের তুলনায় ফলাফল খারাপ হবার অবশ্যই এটি যৌক্তিক কারণ। তবে এটি একমাত্র বা সবচেয়ে বড় কারণ নয়। লক্ষনীয় যে, বিদেশে অবস্থিত শিক্ষার্থীদের ফলাফল দেশে অবস্থিত শিক্ষার্থীদের তুলনায় ভালো হয়েছে। বিভিন্ন দেশে অবস্থিত এসএসসি পরীক্ষার ৮টি কেন্দ্র থেকে ৪২৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে ৩৭৩ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। সেগুলোতে পাশের শতকরা হার ৮৭.৩৫ জন। তাদের উত্তরপত্র মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রেও কিন্তু সহানুভূতি নম্বর প্রদান করা হয়নি, অপ্রাসঙ্গিক উত্তরে নম্বর প্রদান করা হয়নি। সুতরাং ফলাফল বিপর্যয়ের এ দুটি কারণের সাথে অবশ্যই আরও অনেক কারণ বিদ্যমান। যেগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় আনা প্রয়োজন। যেমন: করোনা কালে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া থেকে দূরে সরে যাওয়া, শিখন ঘাটতি নিয়ে বারবার উপরের ক্লাসে উঠে যাওয়া, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে সর্বাধিক পিছিয়ে পড়া, ক্লাসে উপস্থিতি কমে যাওয়া, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক দুর্বল হওয়া, অনেক শিক্ষার্থী অবাধ্য হওয়া, শিখন ঘাটতি পূরণে শিক্ষকগণ ব্যর্থ হওয়া, নির্বাচনী পরীক্ষায় শিথিলতা দেখিয়ে প্রায় সবাইকেই এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের সুযোগ দেওয়া ইত্যাদি। এ সকল কারণ খতিয়ে দেখে পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক। 


আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, এবার মোট ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে মোট ৯ লাখ ৬৭ হাজার ৭৩৯ জন মেয়ে এবং ৯ লাখ ৬১ হাজার ২৩১ জন ছেলে। মেয়েদের পাশের হার ৭১.০৩ শতাংশ এবং ছেলেদের পাশের হার ৬৫.৮৮ শতাংশ। ছেলেদের চেয়ে ৮ হাজার ২০০ জন বেশি মেয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে। বিগত বৎসরগুলোতেও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, পাশের হার, জিপিএ-৫ ইত্যাদি ক্ষেত্রে মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা অনেক পিছিয়ে। মেয়েদের এগিয়ে আসা অবশ্যই সুসংবাদ। এ জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা করে আসছি। উৎসাহ উদ্দীপনা দেয়া, উপবৃত্তি দেয়া, অভিভাবকদের সচেতন করা, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করা, শিশুশ্রম রোধ করা ইত্যাদি কার্যক্রম চলমান রেখেছি। আমাদের কন্যা শিশুরা এই কার্যক্রম গুলোর অধিক সুফল অর্জন করেছে তাই তাদেরকে ধন্যবাদ। অবশ্যই অব্যাহত রাখতে হবে মেয়েদের এই অগ্রযাত্রা। সেইসাথে বৃদ্ধি করতে হবে ছেলেদের সঠিক পথে এগিয়ে চলার গতি। মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা অধিক হারে শিশুশ্রমে জড়াতে বাধ্য হওয়া এবং শিক্ষক ও অভিভাবকদের অবাধ্য হওয়াসহ আরো অনেক কারণ বিদ্যমান পিছিয়ে পড়ার পিছনে। মেয়েরা যখন লেখাপড়া করে, ছেলেরা তখন বাইরে আড্ডা মারে। মেয়েরা যখন স্কুলে ও কোচিংয়ে যায়, ছেলেরা তখন বিকট শব্দে মোটরসাইকেল চালায়। মেয়েরা যখন ঘুম যায়, ছেলেরা তখন নেশা খায়। সব ছেলেরা এসব করে না। যারা এসব করে তারা বেশিরভাগই ড্রপ আউট হয়, পরীক্ষায় ফেল করে।  বাস্তব অবস্থা পর্যালোচনা করে চিহ্নিত করতে হবে সব রকম সমস্যা। এখনই নিতে হবে সমাধানের কার্যকর পদক্ষেপ। তা না হলে কিছুকাল পরেই উল্টোভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বে আমাদের সমাজ। তৈরি হবে আরো অনেক রকম ভয়াবহ সমস্যা! 


গতবারে তুলনায় এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা প্রায় ১ লাখ কম। শুধু তাই নয়, গত পাঁচ বৎসরে সবচেয়ে কম পরীক্ষার্থী ছিল এবার। ২০২৪ সালে ছিল ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন। ২০২৩ সালে ছিল ২০ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ জন, ২০২২ সালে ছিল ১৯ লাখ ৯৪ হাজার ১৩৭ জন এবং ২০২১ সালে ছিল ২২ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৫ জন। যে সকল সমস্যার কারণে প্রায় এক লাখ শিক্ষার্থী এবার ড্রপ আউট হয়েছে অর্থাৎ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি সে সকল সমস্যার প্রভাব যে অংশগ্রহণকারীদের উপর কম/বেশি ছিল না তা কিন্তু নয়! এখানেও বিদ্যমান অনেক শিক্ষার্থীর ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ। এমন আরো অনেক কারণ চিহ্নিত করতে হবে আমাদের। আমরা যদি ফলাফল বিপর্যয়ের দু’একটি কারণ ভেবে বসে থাকি, অন্যান্য কারণ চিহ্নিত না করি, সকল সমস্যার সমাধান না করি তাহলে কিন্তু ভেস্তে যাবে সকল আলোচনা, সমালোচনা।


মোটকথা সুবিধাবঞ্চিত ও পাঠবিমুখ শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় ফিরিয়ে আনা এবং শিক্ষকদের শিক্ষাদানে নিবেদিত করা ব্যতীত শিক্ষাক্ষেত্রে প্রকৃত সফলতা অর্জন অসম্ভব। শিক্ষায় সফলতা ব্যতীত দেশ ও জাতির টেকসই অগ্রগতি অন্য কোনভাবেই সম্ভব নয়। শিক্ষাক্ষেত্রে প্রকৃত সফলতা অর্জনের জন্য শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ উন্নত করা এবং শিক্ষকদের সচ্ছলতা বৃদ্ধি করে অধিক যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ করা জরুরি। এসব কিছুর জন্যই প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা। অভিভাবক, শিক্ষক, প্রশাসক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ মিলে প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে কার্যকর পরিকল্পনা। 


লেখক: অধ্যক্ষ, সাহিত্যিক ও কলামিস্ট 

Email: rahamot21@gmail.com


পত্রিকার লিংক: 

https://epaper.dainikbangla.com.bd/home/displaypage/news_2025-07-16_5_14_b