শিক্ষা ক্ষেত্রে ছেলেদের পিছিয়ে পড়ার কারণ ও প্রতিকার


পত্রিকার লিংক     পত্রিকার লিংক

শিক্ষাক্ষেত্রে ছেলেদের পিছিয়ে পড়ার কারণ ও প্রতিকার 

মো. রহমত উল্লাহ্

প্রকাশিত: জাগো নিউজ২৪.কম, ২৮ জুলাই ২০২৫ এবং

দৈনিক বাংলা, ৯ আগস্ট ২০২৫ 

>বিগত বেশ কয়েক বছর যাবত বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, শিক্ষাক্ষেত্রে মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা অনেক পিছিয়ে পড়েছে! ভর্তিতে, লেখাপড়ায়, পরীক্ষায় অংশগ্রহণে, পাশের হারে ও ফলাফল অর্জনে সব দিক থেকেই ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। কমেছে মেয়েদের ড্রপ আউটের পরিমাণ। শিক্ষার প্রতিটি স্তরে অর্থাৎ প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও এমনটি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। উচ্চশিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ ছেলেদের তুলনায় কম হলেও ভালো ফলাফলে অর্জনে মেয়েরাই উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে। মেয়েদের এগিয়ে যাওয়া যেমন আনন্দের, ছেলেদের পিছিয়ে পড়া তেমনি উদ্বেগের! 


আমাদের উচিত ছেলেদের ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ার সকল কারণ পুঙ্খানুপুঙ্খ চিহ্নিত করে ব্যাপক পর্যালোচনা করে বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সমাধানের পথ উদঘাটন করা ও দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। বাস্তবে শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের দেশে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের পিছিয়ে পড়ার অনেক ছোট-বড় কারণ বিদ্যমান। এ স্বল্প পরিসরে সবকিছু তুলে ধরে বিস্তারিত আলোচনা করা সম্ভব নয়। তাই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি অতি গুরুত্বপূর্ণ কারণ বা বাস্তবতা তুলে ধরে এর সমাধানে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। 


একটু পিছনে তাকালেই দেখা যাবে ছেলেদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে ছিল আমাদের মেয়েরা। মেয়েদের এগিয়ে আনার জন্য আমরা গ্রহণ করেছি বিভিন্ন পদক্ষেপ। অর্জন করেছি ব্যাপক সফলতা। যেতে হবে আরো অনেক দূর। শিক্ষাক্ষেত্রে মেয়েরা এখন ছেলেদের তুলনায় সংখ্যায় ও ফলাফলে অনেক এগিয়ে। আমরা মেয়েদের উৎসাহ উদ্দীপনা দেয়া, উপবৃত্তি দেয়া, অভিভাবকদের সচেতন করা, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করা, শিশুশ্রম রোধ করা ইত্যাদি কার্যক্রম চলমান রেখেছি। ১৯৯৪ সালে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রদান শুরু করা হয়। ২০০২ সালে তা উন্নীত করা হয় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে। আমাদের কন্যা শিশুরা এই কার্যক্রম গুলোর অধিক সুফল অর্জন করেছে তাই তাদেরকে ধন্যবাদ। অথচ প্রায় ১৫ বছর পরে ২০০৯ সালে এসে দরিদ্র পরিবারের ছেলে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির আওতায় আনা হয়েছে! রাষ্ট্রীয়ভাবে মেয়েদের প্রতি তুলনামূলক বেশি গুরুত্ব দিতে গিয়ে ছেলেদেরকে অবহেলা করা হয়েছে কিনা তা কিন্তু আমরা ভেবে দেখিনি! 


কন্যা শিশুদের এখন আর সেই আগের মত বাসা-বাড়িতে থেকে কাজ করতে দেখা যায় না। প্রায় সবাই উপবৃত্তির টাকা ঠিক রাখার জন্য নিয়মিত স্কুলে যায়। এটি অবশ্যই একটি শুভ লক্ষণ। এর জন্যই তো আমরা অপেক্ষায় ছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম শিশুশ্রম থেকে বেরিয়ে আসুক পুত্র-কন্যা নির্বিশেষে সকল শিশু। কিন্তু এখনো আমরা দেখতে পাচ্ছি পুত্র শিশুরা টেম্পুতে, গ্যারেজে, কারখানায়, নৌকায়, মাছ ধরায়, ইটভাটায়, হাটবাজারে, দোকানপাটে, মাঠে-ঘাটে, ক্ষেত-খামারে, টি-স্টলে হোটেল-রেস্টুরেন্টে ইত্যাদি অগণিত ক্ষেত্রে কায়িক শ্রম দিয়ে সামান্য উপার্জন করে নিজে জীবন ধারণ করছে ও পরিবারকে সহায়তা করছে। এমন অনেক শিশুর সঙ্গে আমি কথা বলে জেনেছি, তারা লেখাপড়া করতে চায়, কিন্তু সুযোগ পাচ্ছে না! নানান ধরনের অমানবিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে! দারিদ্র্যের কষাঘাতে নিষ্পেষিত এমন পুত্রশিশুরা স্কুলে ভর্তি হয় না। কেউ কেউ মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। আবার অনেকেই স্কুলে/ মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে দুএক বছর পরেই ঝরে পড়ে।   


অপরদিকে মেয়ে শিশুদের তুলনায় অধিক সংখ্যক ছেলেশিশু বাইরে বেশি সময় কাটায়, নেশাগ্রস্থ হয়ে থাকে, মাদকদ্রব্য কেনাবেচা করে, বেপরোয়া মোটরবাইক হাঁকায়, কিশোর গ্যাংএ জড়িত থাকে, চাঁদাবাজি করে, রাজনৈতিক নেতাদের পিছনে সময় ব্যয় করে, ঝগড়া বিবাদে জড়িত থাকে, নিয়ন্ত্রণহীন আচরণ করে, সারাক্ষণ গেইম চালায়, সারাদিন খেলাধুলা করে, আনন্দ আয়োজন করে, ফার্মের মুরগি চুরি করে, কৃষকের ফল-ফসল চুরি করে, দলে দলে ঘুরে বেড়ায় ইত্যাদি অনেক কিছুতেই অধিক হারে ছেলেরা জড়িয়ে পড়ায় অনেক বেশি পিছিয়ে পড়ছে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও এমন অশুভ চিত্র দেখা যায়। মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা বেশি মাত্রায় বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত বিধায়, শিক্ষক ও অভিভাবকের সঙ্গে বেশি বেয়াদবি করে বিধায় ছেলেদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ায় আমরা হাল ছেড়ে দিচ্ছি কিনা তা ভাবতে হবে বিশেষভাবে। তা না হলে আরো বেশি সংখ্যক ছেলেরা কর্মের অনুপযোগী হয়ে বেকারত্বে নিমজ্জিত হয়ে পরিবারে, সমাজে ও রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা বাড়িয়ে তুলবে বহুগুণ! আমরা যদি অসহায়ের মত বা দায়িত্বহীনের মত বসে থাকি তাহলে আর রক্ষা পাবো না কেউ।


এমন এক সময় ছিল যখন এলাকার সকল ছেলেদের শাসন-বারণ করার অধিকার ছিল সকল বড়দের। স্বার্থহীন আদর-স্নেহ দিয়ে অর্জন করে সেই অধিকার প্রয়োগ করতো বড়রা; আর নির্দ্বিধায় তা মেনে নিত ছোটরা। একজনের সন্তানের কল্যান চিন্তায় সক্রিয় থাকত শতজন অভিভাবক। বড়দের নেতৃত্বে ছোটরা করতো খেলাধুলা, শিক্ষামূলক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজ। আমি নিজেও কর্মী হয়ে অংশ নিয়েছি এবং পরে নেতৃত্ব দিয়েছি এমন অনেক কাজে। আমাদের প্রিয় শিক্ষকগণও অংশ নিতেন আমাদের সাথে। তখন শিশুরা বেড়ে উঠত অন্যের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করার মানসিকতা নিয়ে। কেউ বিপথে গেলে সবাই মিলে তাকে আনা হতো সুপথে। তেমন মানসিকতা নিয়ে আবার এগিয়ে আসতে হবে সবার। 


উল্লিখিত কারণগুলোর পাশাপাশি খুঁজে দেখতে হবে ছেলেদের ড্রপ আউট হবার ও পিছিয়ে পড়ার অন্যান্য কারণ। তবে মনে রাখতে হবে, এখন পাল্টে গেছে পরিবেশ ও পরিস্থিতি। সেই সাথে পাল্টে গেছে ডিজিটাল যুগের ছেলেমেয়েদের নিয়ন্ত্রণ কৌশল। তাই অভিভাবক ও শিক্ষকদের অবশ্যই শিখতে হবে স্মার্ট পেরেন্টিং, ইফেক্টিভ টিচিং। সবার আগে সক্রিয় হতে হবে শিক্ষক ও অভিভাবকদের। পর্যাপ্ত সাপোর্ট দিয়ে তৈরি করতে হবে আরো যোগ্য-দক্ষ সফল শিক্ষক। ছেলেমেয়েদের লালন-পালন তথা শিক্ষাদানে ঘরে-বাইরে থাকতে হবে আরো অনেক বেশি সতর্ক ও সক্রিয়। অভিভাবক, শিক্ষক, প্রশাসক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ মিলে প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে কার্যকর পরিকল্পনা। থাকতে হবে সরকারের সদিচ্ছা। মেয়ে বা ছেলে কাউকে দমিয়ে রেখে নয়, উভয়কে এগিয়ে এনে অর্জন করতে হবে সমতা। উভয়কেই এগিয়ে নিতে হবে সমান তালে। রাখতে হবে সঠিক পথে।


লেখক: অধ্যক্ষ, শিক্ষাবিদ ও শিশুসাহিত্যিক

Email - rahamot21@gmail.com 




পত্রিকার লিংক: 

https://www.jagonews24.com/opinion/article/1039672 



https://epaper.dainikbangla.com.bd/home/display

page/news_2025-08-09_5_15_b 

বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ: নিবন্ধন নয়, নিয়োগ পরীক্ষা হোক

 



পত্রিকার লিংক

বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ:

আর নিবন্ধন নয়, নিয়োগ পরীক্ষা হোক

মো. রহমত উল্লাহ্

বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে শূন্যপদ ছিল ১ লাখ ৮২২টি। এর বিপরীতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদন জমা পড়েছে ৫৭ হাজারের কিছু বেশি। অর্থাৎ প্রায় ৪৩ হাজার পথ শূন্য থাকবে। চাহিদা দিয়েও শিক্ষক পাবে না অনেক প্রতিষ্ঠান। ক্লাস থেকে বঞ্চিত হবে শিক্ষার্থীরা! এ ব্যাপারে কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন যে, আবেদন কালে প্রার্থীদের বয়স ৩৫ এর বেশি এবং নিবন্ধন সনদের মেয়াদ ৩ বছরের বেশি গ্রহণ না করার কারণে আবেদন কম পড়েছে। অর্থাৎ আরো কিছু ছাড় দেওয়া হলে আরো কিছু বেশি প্রার্থী আবেদন করতে পারত। বয়সে ও যোগ্যতায় বারবার ছাড় দিয়ে আবেদনের সুযোগ দিয়ে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ করা কোন উত্তম সমাধান নয়। ছাড় দিয়ে শিক্ষক নিয়োগ করা মানেই দীর্ঘ মেয়াদে দেশ ও জাতির অপূরণীয় ক্ষতি করা। একজন কম যোগ্য শিক্ষক তার শিক্ষকতা জীবনে তৈরি করেন অগণিত কম যোগ্য নাগরিক-কর্মী। তুলনামূলক কম যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে অধিক যোগ্য নাগরিক-কর্মী তৈরির প্রত্যাশা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, অবাস্তব! 


শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের তৃতীয় বিভাগ বা শ্রেণি এখন আর গ্রহণযোগ্য থাকা উচিত নয়। সরকারি এমনকি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বা কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রেও এখন আর তৃতীয় বিভাগ বা শ্রেণিধারী প্রার্থীদের আবেদন করার সুযোগ থাকে না। নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা, বয়স সীমা ও বাছাই প্রক্রিয়া অন্যদের তুলনায় বেসরকারি শিক্ষকদের শিথিল করা হলে এর অর্থ এমন দাঁড়ায় না যে বেসরকারি শিক্ষক তুলনামূলক কম যোগ্য হলেও চলে? এতে কি তাদের মান ও মর্যাদা হ্রাস পায় না? দেশের ৯৫ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থীদের পাঠদানকারী বেসরকারি শিক্ষকদের অধিক যোগ্য হওয়া কি অধিক গুরুত্বপূর্ণ নয়? তারা তো আমাদের সন্তানদেরই শিক্ষক হন। তারা অধিক যোগ্য হলেই তো আমাদের সন্তানরা অধিক যোগ্য হবার সম্ভাবনা অধিক থাকে। অর্থাৎ বয়সে, যোগ্যতায়, পরীক্ষায় ছাড় দিয়ে তুলনামূলক কম যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে নয়; বরং দ্রুত আর্থিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে অধিক যোগ্যদের আকৃষ্ট করে শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়াই অধিক মঙ্গলজনক।   


সার্বিক বিবেচনায় বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থাটিকে অতীতের ধারাবাহিকতায় আরও উন্নত করা আবশ্যক। সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা থাকলে তা সহজেই সম্ভব। সে লক্ষ্যে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগের অনুরূপ শিক্ষাগত যোগ্যতা, বয়স সীমা ও বাছাই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বেসরকারি শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া উচিত। অর্থাৎ শূন্য পদের বিপরীতে সরাসরি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে উত্তম বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উত্তম প্রার্থী বাছাই করে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। নিবন্ধনধারী সবাইকেই যদি নিয়োগ দিতে হয় তাহলে এটিকে নিবন্ধন পরীক্ষা না বলে নিয়োগ পরীক্ষা বলা ও কার্যকর করা অধিক যুক্তিযুক্ত নয় কি? তুলনামূলক কম নম্বর প্রাপ্ত নিবন্ধন ধারীরাও নিয়োগের দাবিদার হয়, নিয়োগের জন্য সোচ্চার হয়, বয়সের শিথিলতা দাবি করে, অশান্তি তৈরি করে। এমনকি অকৃতকার্যরাও আন্দোলন করে! অথচ সরাসরি নিয়োগ পরীক্ষায়/ প্রক্রিয়ায় কম নম্বর পেয়ে বাদ পড়ে যাওয়ারা আর নিয়োগের দাবিদার হতে পারে না, বয়সের শিথিলতা দাবি করতে পারে না, অশান্তি তৈরি করতে পারে না। 


অপরদিকে একবার নিবন্ধন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া, আবেদন নেওয়া, পরীক্ষা নেওয়া, তালিকা করা, সনদ দেওয়া এবং পরবর্তীতে আবার নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া, বাছাই করা, তালিকা করা, নিয়োগ করা ইত্যাদি নিয়োগ কর্তৃপক্ষ ও নিয়োগ প্রার্থী উভয়ের জন্যই দ্বিগুণ কষ্টসাধ্য ও সময় সাপেক্ষ। তদুপরি নিয়োগ প্রার্থীর জন্য দ্বিগুণ ব্যয় সাপেক্ষ। অধিক সংখ্যক শূন্য পদে নিয়োগ প্রার্থীদের বাছাই কেন্দ্রীয়ভাবে দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব না হলে জেলা প্রশাসকগণের দায়িত্বে ঐ জেলার সরকারি স্কুল-কলেজের সুযোগ্য শিক্ষকগণের সহযোগিতা নিয়ে সারাদেশে একই প্রশ্নে ও প্রক্রিয়ায় বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের বাছাই দ্রুত সম্পাদন করা সম্ভব হয় কিনা তা ভেবে দেখা যেতে পারে। যেমন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর করে থেকে।


অন্যান্য চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে নির্ধারিত বয়স ও যোগ্যতার চেয়ে অধিক বয়স্কদের ও কম যোগ্যদের শিক্ষকতায় প্রবেশের সুযোগ দেওয়া মোটেও উচিত নয়। কিছুদিন পরপর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ করতে চাইলে বারবার অধিকতর যোগ্য ফ্রেশ ক্যান্ডিডেট পাওয়া যাবে। একজন ইয়ং এনার্জিটিক মেধাবী শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে তৈরি করতে ও পূর্ণ উদ্যমে দীর্ঘদিন পাঠদান করতে যতটা সক্ষম একজন বয়স্ক লোক ততটা সক্ষম না হওয়াই স্বাভাবিক। ব্যতিক্রম নগণ্য। একজন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকের প্রকৃত সফল শিক্ষক হয়ে উঠতে অনেক সময়, শ্রম, মেধা, চর্চা, উদ্যম, প্রশিক্ষণ, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা লাগে। কেউ শিক্ষক হয়ে উঠতেই যদি বৃদ্ধ হয়ে পড়েন তো সফল পাঠদানে নিরলস থাকবেন কীভাবে, কতদিন? 


আলোচিত বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে অধিক যুক্তিযুক্ত উন্নত নীতিমালা প্রণয়ন করে ঢেলে সাজানো উচিত সকল শিক্ষক নিয়োগের বাছাই প্রক্রিয়া। মূল্যায়নে বিবেচনা করা উচিত প্রার্থীর শিক্ষা জীবনের কর্মকাণ্ড ও ডেমো ক্লাসের মান। দ্রুত দূর করা উচিত একই দায়িত্ব-কর্তব্যে নিয়োজিত সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, বয়স সীমা, বাছাই প্রক্রিয়া এবং আর্থিক সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত সকল বৈষম্য। অর্থাৎ বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের জন্য আর নিবন্ধন পরীক্ষা নয়, নিতে হবে সরাসরি নিয়োগ পরীক্ষা। সেই সাথে বৃদ্ধি করতে হবে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা। শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করতে হবে সর্বাধিক যোগ্যদের। 



লেখক: অধ্যক্ষ, শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট 

rahamot21@gmail.com 


৩১.৭.২০২৫




জাগো নিউজ: 

https://www.jagonews24.com/m/opinion/article/1041481?fbclid=IwQ0xDSwL9c5hjbGNrAv1zB2V4dG4DYWVtAjExAAEeoGlpJ_XPitpNKL41px6uW6mkIGD53rWMKjU56oAyIlDFYltqULrlCuMKx18_ae

m_17Vn_q5UfFwFj-fiatclOQ 

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অকৃতকার্যদের জন্য পরামর্শ


পত্রিকার লিংক

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অকৃতকার্যদের জন্য পরামর্শ 

মো. রহমত উল্লাহ্

দৈনিক ইত্তেফাক, ০১ আগস্ট ২০২৫

প্রিয় শিক্ষার্থী, তোমরা যারা এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারোনি তাদের জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও সমবেদনা। হ্যাঁ, অবশ্যই শুভেচ্ছা, অর্থাৎ শুভ ইচ্ছা তোমাদের জন্য। শুভেচ্ছা বা শুভকামনা তো তোমাদের জন্যই বেশি প্রয়োজন। মন খারাপ করো না, হতাশায় নিমজ্জিত হয়ো না, জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না। কারো তিরস্কারে কান দিও না। আবেগকে নিয়ন্ত্রিত কর, বিবেককে জাগ্রত কর। জীবন অনেক দীর্ঘ ও মূল্যবান। অগণিত পরীক্ষায় ও সম্ভাবনায় ভরপুর মানুষের জীবন। আনুষ্ঠানিক শিক্ষার একটি প্রচলিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারা মানে জীবন ব্যর্থ হয়ে যাওয়া নয়। কৃতকার্য হওয়ার অর্থ হচ্ছে কোন কাজে সফল হওয়া। মানুষের সফল হওয়ার ক্ষেত্র অনেক বিস্তৃত। 


নিজের ভুলগুলো চিহ্নিত করো, সংশোধনের জন্য প্রতিজ্ঞা করো, পরিকল্পনা করো, বাস্তবায়ন করো। নিয়মিত ক্লাসে যাও, শিক্ষকগণের সহযোগিতা নাও। কাউকে দোষারোপ করো না। সমস্যা থাকবেই, প্রতিকূলতা থাকবেই। সৎ সাহস নিয়ে এগিয়ে যাও, প্রতিকূলতা মোকাবিলা করো। পিতা-মাতাকে সম্মান করো। পিতা-মাতার শাসনকে কল্যাণ মনে করো। রাগ-অভিমান করো না। মনে রেখো, যে তোমার কল্যাণ চায়, সেই তোমার মন্দে মন খারাপ করে, তোমাকে উপদেশ দেয়, বকাবাদ্য করে। এর গভীরে জমা থাকে অনেক আদর। ধৈর্য বৃদ্ধি করো, নিজেকে পরিশুদ্ধ করো, দৃঢ় পায়ে এগিয়ে যাও। এবার উত্তীর্ণ হলে যে ফলাফল করতে, আগামীবার এর চেয়ে ভালো ফলাফল করে উত্তীর্ণ হও। তবেই জিতে যাবে তুমি। জিতে যাবে তোমার শিক্ষক, অভিভাবক। 


যারা কোন কারণে পুনরায় এসএসসি বা সমমান পরীক্ষা দিতে পারবে না তাদেরও হতাশ হবার কিছু নেই। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ নিয়ে তোমরাও হতে পারো সফল। ছয় মাসেই নিতে পারো কুকিং, টেইলারিং, ওয়েল্ডিং, ইলেকট্রিক্যাল, এসি-ফ্রিজ রিপেয়ার, মোবাইল ফোন সার্ভিসিং, হেয়ার কাটিং, কম্পিউটার বা গ্রাফিক ডিজাইন, গাড়ি মেরামত, নির্মাণ, কৃষি ও পশুপালন ইত্যাদি প্রশিক্ষণ। এসব প্রশিক্ষণ উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানে বিনা খরচে বা স্বল্প খরচে দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করতে পারো দেশে ও বিদেশে। উদ্যোক্তা হয়ে গড়ে তুলতে পারো নিজের প্রতিষ্ঠান। করতে পারো নিজের ও অন্যের কর্মসংস্থান। ছোট থেকে তোমার প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে পারে অনেক বড়। এর পাশাপাশি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেকোনো বয়সে দিতে পারো এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা এবং নিতে পারো উচ্চশিক্ষা। আবার ভিন্ন ভাষা শিখে প্রায় বিনা খরচে চলে যেতে পারো বিদেশে। উপার্জন করতে পারো অনেক অর্থ। দেখবে, একদিন যারা তিরস্কার করেছিল, তারাই বাহবা দিবে, ভালোবাসা দিবে, পুরস্কার দিবে। 


ভালো করার ইচ্ছা রাখো, সর্বাধিক চেষ্টায় থাকো, সঠিক পথে এগিয়ে যাও; অবশ্যই ভালোভাবে উত্তীর্ণ হবে পরবর্তী পরীক্ষায় বা প্রশিক্ষণে। এর পাশাপাশি জয়ী হও এ+ মানুষ হবার পরীক্ষায়। সৎ হও, নীতিবান হও, বিবেকবান হও, পরিশ্রমী হও, মানুষের কল্যাণে নিবেদিত হও। তবেই তুমি হবে অধিক কৃতকার্য।


লেখক: অধ্যক্ষ, শিক্ষাবিদ ও শিশুসাহিত্যিক


পত্রিকার লিংক:

https://epaper.ittefaq.com.bd/m/471335/688b78e5e26fb


[লেখাটি ভালো লাগলে শেয়ার করে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের উপকৃত করতে পারেন]