শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ দক্ষতা অর্জন আবশ্যক, দৈনিক বাংলা

পত্রিকার লিংক

শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ দক্ষতা অর্জন আবশ্যক

মো. রহমত উল্লাহ্

দৈনিক বাংলা, ২৪ অক্টোবর ২০২৩

>কোন কিছু অন্যের বোধগম্য করে সহজ ও সুন্দরভাবে প্রকাশ করার যোগ্যতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বলা এবং লেখা মনের ভাব প্রকাশের ও তথ্য আদান-প্রদানের তথা যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। জীবন দক্ষতার সর্বাধিক ব্যবহৃত অন্যতম দক্ষতা হচ্ছে যোগাযোগ দক্ষতা। এই যোগাযোগ দক্ষতা মানুষের ব্যক্তি জীবনে, পারিবারিক জীবনে, কর্মজীবনে, সামাজিক জীবনে তথা সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। অন্যান্য কাম্য যোগ্যতার পাশাপাশি দেখে/শুনে/পড়ে বুঝে মনের ভাব বা নিজের কথা বিভিন্নভাবে লিখে/বলে প্রকাশ করার দক্ষতার উপর নির্ভর করেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেকাংশে সফল হয়ে ওঠেন অধিকাংশ মানুষ। যোগাযোগ দক্ষতার প্রধান দুটি ধাপ হচ্ছে, বুঝতে পারা ও প্রকাশ করতে পারা। এ দুটি ধাপ অতিক্রম করার জন্য ভাষার ব্যবহার অপরিহার্য। অর্থাৎ ভাষা আয়ত্ত করা ও প্রয়োগ করার দক্ষতাই যোগাযোগ দক্ষতা। লিখে, বলে, এঁকে, ইঙ্গিতে বা অন্য কোন ভাবে যার প্রকাশ ক্ষমতা যতো সুন্দর ও সফল তার অনুসারী তত বেশি। নেতা, কর্মী, শিল্পী, সাহিত্যিক, উৎপাদক, ব্যবস্থাপক, শিক্ষক, ধর্মযাজক ইত্যাদি সবার ক্ষেত্রেই তা কম/বেশি প্রযোজ্য। আজকের শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে যাই হবে যোগাযোগ দক্ষতার আরো বেশি প্রয়োজন হবে। অবাধ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগে যোগাযোগ দক্ষতা ব্যতীত কোন ক্ষেত্রেই কারো কাঙ্খিত সফলতা লাভের সম্ভাবনা নেই। তাই শিক্ষার্থীদের কোন কিছু করার দক্ষতা অর্জন করার পাশাপাশি দেখে/শুনে/পড়ে বুঝে বিভিন্নভাবে বলার ও লেখার যোগ্যতা-দক্ষতা অর্জন করা অত্যাবশ্যক। এক্ষেত্রে শিক্ষকের ভূমিকাই সর্বাধিক। 


নতুন শিক্ষাক্রমে আগের মত লিখিত পরীক্ষা না থাকায় শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনেক কিছু চিন্তা করে বা মনে করে লেখার প্রয়োজনীয়তা তেমন ভাবে অনুভব করছে না বিধায় দ্রুত চিন্তা করার, মনে করার ও লেখার অনুশীলনও হয়তো করছে না আগের মতো। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীদের লেখার যোগ্যতা-দক্ষতা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় অর্জিত হবার সম্ভাবনা কমে যেতে পারে। বর্তমান দক্ষতা-অভিজ্ঞতা ভিত্তিক শিক্ষাক্রমের প্রত্যাশা অনুসারে শিক্ষার্থীদের কোন কিছু করার দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্নভাবে বলার ও লেখার যোগ্যতা-দক্ষতা কাঙ্খিত মাত্রায় সকলের অর্জিত হচ্ছে কিনা অর্থাৎ সবাই সঠিক ভাবে বলতে পারছে কিনা এবং সবাই সঠিকভাবে লিখতে পারছে কিনা তা প্রতিনিয়ত গুরুত্ব সহকারে যাচাই করা উচিত। বিশেষ করে নির্ধারিত সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ লেখার যোগ্যতা-দক্ষতা সঠিকভাবে অর্জিত হচ্ছে কিনা তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। শিখন কালেই দেখতে হবে নির্ধারিত ভাষার প্রমিত শব্দ আত্মস্থ করায় ও প্রয়োগ করায় এবং সুন্দর বাক্য গঠনে ও সঠিক ভাব প্রকাশে শিক্ষার্থীরা শ্রেণি উপযোগী পটু হয়ে উঠছে কিনা। কোন পরিস্থিতিতে কোন কথাটি কীভাবে বলতে হবে অথবা বলতে হবে না তা বুঝতে পারছে কিনা। আন্তঃ ব্যক্তিক সম্পর্ক স্থাপন ও রক্ষা করতে পারছে কিনা। এক্ষেত্রে যদি কারো ঘাটতি থাকে তো তা পূর্ণ করার জন্য ওই শ্রেণিতেই নেওয়া উচিত যথাযথ ব্যবস্থা। কেননা এসব দুর্বলতা নিয়ে শিক্ষার্থীরা এক বা একাধিক শ্রেণি অতিক্রম করে গেলে সবাই আর পূর্ণ করতে পারে না সেই ঘাটতি! প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের বলার এবং লেখার কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা-দক্ষতা অর্জিত না হলে পরবর্তীতে কর্মে বা উচ্চশিক্ষায় গিয়ে তাদের ব্যর্থ হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই এ বিষয়টিকে হালকা করে দেখার কোন সুযোগ নেই। 


বর্তমানে নতুন কারিকুলামের আওতায় যে সকল একক কাজ, জোড়ায় কাজ, দলীয় কাজ, পরিদর্শন, ভ্রমণ, অনুষ্ঠান ইত্যাদি করানো হয় সেগুলো সম্পর্কে ও অন্যান্য উপযোগী বিষয় সম্পর্কে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে স্বতন্ত্রভাবে বলানো এবং লেখানো আবশ্যক। অর্থাৎ ব্যবস্থাটি এমন হওয়া উচিত যে, প্রতিটি কাজ বা ইভেন্ট প্রত্যেক শিক্ষার্থী নিজে করবে এবং সে কাজের অভিজ্ঞতাসহ বিভিন্ন দিক সম্পর্কে বিস্তারিত বলবে ও লিখবে। তদুপরি শ্রেণি উপযোগী অন্যান্য পারিপার্শ্বিক ও সমসাময়িক বিষয় সম্পর্কেও লিখবে-বলবে। অর্থাৎ শুধু করতে পারার মূল্যায়ন নয়, বলতে পারা এবং লিখতে পারার মূল্যায়নও ধারাবাহিকভাবে করা উচত। যাতে পাঠ্যক্রম অনুসারে কোন কিছু করতে পারার আগ্রহের মতো বলতে পারা এবং লিখতে পারার প্রতিও শিক্ষার্থীরা তাগিদ অনুভব করে, আগ্রহী থাকে। তাতে শিক্ষার্থীদের কাজ করার দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দেখে/শুনে/পড়ে বুঝার, বলার ও লেখার যোগ্যতা অর্জিত হবে, দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।<  


মো. রহমত উল্লাহ্ 

সাহিত্যিক, শিক্ষাগবেষক এবং অধ্যক্ষ- কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা।

২১ অক্টোবর ২০২৩



https://epaper.dainikbangla.com.bd/home/displaypage/news_2023-10-24_5_15_b

Previous Post
Next Post

About Author

0 মন্তব্য(গুলি):