সর্বাধিক যোগ্য প্রশিক্ষক চাই, দৈনিক শিক্ষা ও আমাদের বার্তা

পত্রিকার লিংক

নতুন শিক্ষাক্রম: সর্বাধিক যোগ্য প্রশিক্ষক চাই

মো. রহমত উল্লাহ্

দৈনিক শিক্ষা ও আমাদের বার্তা

২১ ও ২২ অক্টোবর ২০২৩

>নতুন শিক্ষাক্রম বিস্তরণে শিক্ষকদের পুনঃ পুনঃ প্রশিক্ষণ অত্যাবশ্যক। বিশেষকরে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ ব্যতীত নতুন পদ্ধতিতে পাঠদান ও মূল্যায়ন কোন শিক্ষকের পক্ষেই সঠিকভাবে সম্ভব নয়। জানাগেছে, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য প্রশিক্ষক তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু প্রশিক্ষক বাছাই প্রক্রিয়ার শুরুতেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। সরকারি স্কুলের শিক্ষকগণ বলছেন, একাডেমিক সুপারভাইজারদের নিকট থেকে তারা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবেন না। কেননা, একাডেমিক সুপারভাইজারগণ শিক্ষক নন। তারা প্রকল্প থেকে এসেছেন। তাই সরকারি স্কুলের শিক্ষকগণ শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের অধ্যাপকদের নিকট থেকে প্রশিক্ষণ নিতে চান। আবার একাডেমিক সুপারভাইজারগণ বলছেন, তারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ মাস্টার ট্রেইনার। অভিজ্ঞ মাস্টার ট্রেইনারগণ প্রশিক্ষক হবেন এটাই স্বাভাবিক। এই বিতর্ক চলমান থাকা কালেই চলমান জেলা পর্যায়ের প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ। প্রথম ব্যাচে গত ০৯ অক্টোবর থেকে গত ১৫ অক্টোবর ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত ৩৩০ জন একাডেমিক সুপারভাইজার ও ১৫৪ জন শিক্ষা কর্মকর্তা নতুন শিক্ষাক্রমের প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।


প্রশ্ন হচ্ছে, যারা একাডেমিক সুপারভাইজারদের প্রশিক্ষক তালিকার অন্তর্ভুক্ত করেছেন তারা কারা? আর যারা একাডেমিক সুপারভাইজারদের প্রশিক্ষক তালিকা থেকে বাদ দিতে বলছেন তারা কারা? আমাদের জানামতে শিক্ষা প্রশাসনে অধিকাংশ সরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকগণই নিয়োজিত আছেন। সেখানে তো কোন বেসরকারি শিক্ষক নিয়োজিত নেই! সরকারি শিক্ষকদের দ্বারা পরিচালিত শিক্ষা প্রশাসনের গৃহীত সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন সরকারি শিক্ষকগণ! এমতাবস্থায় একাডেমিক সুপারভাইজারদের প্রশিক্ষক তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে কোন্ ক্রাইটেরিয়াতে এই প্রশিক্ষকদের বাছাই করা হলো তা কিন্তু আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। সারাদেশের শিক্ষকদের পুনঃ পুনঃ প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য প্রশিক্ষক তৈরির কোন লিখিত ও অনুমোদিত নীতিমালা আছে কিনা তা আমার জানা নেই। লিখিত ও প্রকাশিত নীতিমালা থেকে থাকলে এবং সে নীতিমালা অনুসারে একাডেমিক সুপারভাইজারদের প্রশিক্ষক তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকলে নিশ্চয়ই সরকারি স্কুলের শিক্ষকগণ তা বাতিল বা সংশোধনের জন্য দাবি উত্থাপন করতেন। তেমন দাবি তাদের আবেদনপত্রে ও পত্র-পত্রিকায় দেখা যায়নি। সুষ্ঠু নীতিমালা প্রকাশিত থাকলে নিশ্চয়ই বিতর্ক সৃষ্টির সুযোগ থাকতো না এবং থাকবে না।  


মোট শিক্ষকের প্রায় ৯৫ শতাংশ বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্য থেকে কতজন, মোট সরকারি শিক্ষকদের মধ্য থেকে কতজন, মোট একাডেমিক সুপারভাইজারদের মধ্য থেকে কতজন ও মোট শিক্ষা কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে কতজন এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সে অনুপাত বিশ্লেষণ করতে গেলে চলে আসবে আরো অনেক কথা, অনেক বিতর্ক। তাছাড়া শিক্ষকদের প্রশিক্ষক হবার জন্য শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের সকল অধ্যাপক সর্বাধিক যোগ্য, সরকারি স্কুল-কলেজের সকল শিক্ষক অধিক যোগ্য, সকল একাডেমিক সুপারভাইজার/ শিক্ষা কর্মকর্তা বেশি যোগ্য, আর সকল বেসরকারি শিক্ষক অযোগ্য এমন বলা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও পক্ষপাত দুষ্ট। প্রতিটি ক্ষেত্রেই কম বা বেশি যোগ্য ও দক্ষ লোক বিদ্যমান। বিভিন্ন এনজিওতেও অনেক যোগ্য-দক্ষ প্রশিক্ষক আছেন। আসল কথা হচ্ছে, সবদিক বিবেচনা করে সর্বাধিক যোগ্য-দক্ষ প্রশিক্ষক বাছাইয়ের জন্য অবশ্যই সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন ও নিরপেক্ষভাবে তা অনুসরণ করা অত্যাবশ্যক। সর্বাধিক যোগ্য ও দক্ষ প্রশিক্ষক ব্যতীত উত্তম প্রশিক্ষণ অসম্ভব। শিক্ষকদের উত্তম প্রশিক্ষণ ব্যতীত মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা অসম্ভব। 


বিভিন্ন কারণে যারা প্রশিক্ষণ গ্রহণের ও প্রদানের বেশি সুযোগ পেয়েছেন তারা সবাই বেশি যোগ্য-দক্ষ হয়েছেন এমনটি বলা যায় না সবার ক্ষেত্রে। 

একজন উত্তম প্রশিক্ষকের থাকা চাই কাম্য শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিষয়ভিত্তিক গভীর জ্ঞান, পাঠদান পদ্ধতি ও কৌশল প্রয়োগে উচ্চ দক্ষতা, স্পষ্ট উচ্চারণ ও জোরালো কণ্ঠস্বর, মুদ্রাদোষমুক্ত আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, শুদ্ধভাবে বলায় ও লেখায় অভ্যস্ততা,  আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ দক্ষতা, সহজ বিশ্লেষণ ও সুন্দর উপস্থাপন ক্ষমতা, শারীরিক ও মানসিক ফিটনেস/সক্ষমতা, সুষ্ঠু শ্রেণি ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ দক্ষতা, ডিজিটাল প্রযুক্তিসহ আধুনিক শিক্ষা উপকরণ ব্যবহারে পটুতা, সহশিক্ষায় আগ্রহ ও পারদর্শীতা এবং সেই সাথে তাকে হতে হবে দেশপ্রেম ও জাতীয়তা বোধে উদ্বুদ্ধ আধুনিক তথ্যসমৃদ্ধ, বিজ্ঞানমনস্ক, নিরপেক্ষ, ধৈর্যশীল, মিষ্টভাষী, উদ্যমী, উৎসাহী, নিরলস… ইত্যাদি আরও অনেক গুণের অধিকারী। সিমুলেশন ক্লাসের মাধ্যমে উল্লিখিত যোগ্যতা ও দক্ষতা মূল্যায়ন করা সম্ভব। সিমুলেশন ক্লাস রেকর্ড করে প্রয়োজনে যাচাই করে বাছাইকারীদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা সম্ভব।


সকল যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা যাচাই করে সিমুলেশন ক্লাসের মাধ্যমে দক্ষতা বিবেচনা করে উত্তম প্রশিক্ষক বাছাইয়ের পরেও বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রশিক্ষনার্থী শিক্ষকদের দ্বারা প্রশিক্ষকদের ধারাবাহিক মূল্যায়নের ব্যবস্থা রাখা আবশ্যক। অর্থাৎ প্রশিক্ষকগণ কেমন প্রশিক্ষণ প্রদান করেন তা প্রতিনিয়ত গঠনকালীন মূল্যায়নের আধুনিক ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে যেহেতু প্রশিক্ষনার্থীরা শিক্ষক সেহেতু তারা দক্ষতা ও নিরপেক্ষতা প্রয়োগ করে প্রশিক্ষকদের যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারবেন এবং করবেন বলে আশা করা যায়। এতে করে প্রশিক্ষকগণ ক্রমাগত নিজের মান বৃদ্ধি করা ও সর্বোচ্চটা প্রদান করার ব্যাপারে সদা সক্রিয় থাকবেন এবং কোন প্রশিক্ষকের যোগ্যতা ও দক্ষতা যে কোন পর্যায়ে কাঙ্খিত মাত্রায় না থাকলে বা তুলনামূলকভাবে কম থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে তাঁর স্থলে অধিক যোগ্য-দক্ষ লোক নিয়োজিত করা যাবে। 


যাদের সর্বাধিক যোগ্যতা, দক্ষতা, আত্মবিশ্বাস ও সৎসাহস আছে তাঁরা নিশ্চয়ই আমার এই প্রস্তাব চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে সুষ্ঠু নীতিমালা অনুসরণ করে প্রশিক্ষক হতে চাইবেন। এ প্রক্রিয়ায় যদি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের শিক্ষক, সরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষক, বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষক, শিক্ষা কর্মকর্তা, একাডেমিক সুপারভাইজার নির্বিশেষে নিরপেক্ষভাবে সর্বাধিক যোগ্য ও দক্ষদের প্রশিক্ষক হিসেবে নির্বাচন করা হয় এবং নিয়োজিত রাখা হয় তো প্রশিক্ষণের মান তথা শিক্ষার মান বিতর্কহীনভাবে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে এতে কোন সন্দেহ নেই। <


মো. রহমত উল্লাহ্

শিক্ষাগবেষক এবং অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।









https://www.dainikshiksha.com/%E0%A6%A8%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%A8-%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AE-%E0%A6%B8%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A7%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E0%A6%AF%E0%A7%8B%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%95-%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%87/262011/

শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ দক্ষতা অর্জন আবশ্যক, দৈনিক বাংলা

পত্রিকার লিংক

শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ দক্ষতা অর্জন আবশ্যক

মো. রহমত উল্লাহ্

দৈনিক বাংলা, ২৪ অক্টোবর ২০২৩

>কোন কিছু অন্যের বোধগম্য করে সহজ ও সুন্দরভাবে প্রকাশ করার যোগ্যতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বলা এবং লেখা মনের ভাব প্রকাশের ও তথ্য আদান-প্রদানের তথা যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। জীবন দক্ষতার সর্বাধিক ব্যবহৃত অন্যতম দক্ষতা হচ্ছে যোগাযোগ দক্ষতা। এই যোগাযোগ দক্ষতা মানুষের ব্যক্তি জীবনে, পারিবারিক জীবনে, কর্মজীবনে, সামাজিক জীবনে তথা সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। অন্যান্য কাম্য যোগ্যতার পাশাপাশি দেখে/শুনে/পড়ে বুঝে মনের ভাব বা নিজের কথা বিভিন্নভাবে লিখে/বলে প্রকাশ করার দক্ষতার উপর নির্ভর করেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেকাংশে সফল হয়ে ওঠেন অধিকাংশ মানুষ। যোগাযোগ দক্ষতার প্রধান দুটি ধাপ হচ্ছে, বুঝতে পারা ও প্রকাশ করতে পারা। এ দুটি ধাপ অতিক্রম করার জন্য ভাষার ব্যবহার অপরিহার্য। অর্থাৎ ভাষা আয়ত্ত করা ও প্রয়োগ করার দক্ষতাই যোগাযোগ দক্ষতা। লিখে, বলে, এঁকে, ইঙ্গিতে বা অন্য কোন ভাবে যার প্রকাশ ক্ষমতা যতো সুন্দর ও সফল তার অনুসারী তত বেশি। নেতা, কর্মী, শিল্পী, সাহিত্যিক, উৎপাদক, ব্যবস্থাপক, শিক্ষক, ধর্মযাজক ইত্যাদি সবার ক্ষেত্রেই তা কম/বেশি প্রযোজ্য। আজকের শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে যাই হবে যোগাযোগ দক্ষতার আরো বেশি প্রয়োজন হবে। অবাধ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগে যোগাযোগ দক্ষতা ব্যতীত কোন ক্ষেত্রেই কারো কাঙ্খিত সফলতা লাভের সম্ভাবনা নেই। তাই শিক্ষার্থীদের কোন কিছু করার দক্ষতা অর্জন করার পাশাপাশি দেখে/শুনে/পড়ে বুঝে বিভিন্নভাবে বলার ও লেখার যোগ্যতা-দক্ষতা অর্জন করা অত্যাবশ্যক। এক্ষেত্রে শিক্ষকের ভূমিকাই সর্বাধিক। 


নতুন শিক্ষাক্রমে আগের মত লিখিত পরীক্ষা না থাকায় শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনেক কিছু চিন্তা করে বা মনে করে লেখার প্রয়োজনীয়তা তেমন ভাবে অনুভব করছে না বিধায় দ্রুত চিন্তা করার, মনে করার ও লেখার অনুশীলনও হয়তো করছে না আগের মতো। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীদের লেখার যোগ্যতা-দক্ষতা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় অর্জিত হবার সম্ভাবনা কমে যেতে পারে। বর্তমান দক্ষতা-অভিজ্ঞতা ভিত্তিক শিক্ষাক্রমের প্রত্যাশা অনুসারে শিক্ষার্থীদের কোন কিছু করার দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্নভাবে বলার ও লেখার যোগ্যতা-দক্ষতা কাঙ্খিত মাত্রায় সকলের অর্জিত হচ্ছে কিনা অর্থাৎ সবাই সঠিক ভাবে বলতে পারছে কিনা এবং সবাই সঠিকভাবে লিখতে পারছে কিনা তা প্রতিনিয়ত গুরুত্ব সহকারে যাচাই করা উচিত। বিশেষ করে নির্ধারিত সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ লেখার যোগ্যতা-দক্ষতা সঠিকভাবে অর্জিত হচ্ছে কিনা তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। শিখন কালেই দেখতে হবে নির্ধারিত ভাষার প্রমিত শব্দ আত্মস্থ করায় ও প্রয়োগ করায় এবং সুন্দর বাক্য গঠনে ও সঠিক ভাব প্রকাশে শিক্ষার্থীরা শ্রেণি উপযোগী পটু হয়ে উঠছে কিনা। কোন পরিস্থিতিতে কোন কথাটি কীভাবে বলতে হবে অথবা বলতে হবে না তা বুঝতে পারছে কিনা। আন্তঃ ব্যক্তিক সম্পর্ক স্থাপন ও রক্ষা করতে পারছে কিনা। এক্ষেত্রে যদি কারো ঘাটতি থাকে তো তা পূর্ণ করার জন্য ওই শ্রেণিতেই নেওয়া উচিত যথাযথ ব্যবস্থা। কেননা এসব দুর্বলতা নিয়ে শিক্ষার্থীরা এক বা একাধিক শ্রেণি অতিক্রম করে গেলে সবাই আর পূর্ণ করতে পারে না সেই ঘাটতি! প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের বলার এবং লেখার কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা-দক্ষতা অর্জিত না হলে পরবর্তীতে কর্মে বা উচ্চশিক্ষায় গিয়ে তাদের ব্যর্থ হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই এ বিষয়টিকে হালকা করে দেখার কোন সুযোগ নেই। 


বর্তমানে নতুন কারিকুলামের আওতায় যে সকল একক কাজ, জোড়ায় কাজ, দলীয় কাজ, পরিদর্শন, ভ্রমণ, অনুষ্ঠান ইত্যাদি করানো হয় সেগুলো সম্পর্কে ও অন্যান্য উপযোগী বিষয় সম্পর্কে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে স্বতন্ত্রভাবে বলানো এবং লেখানো আবশ্যক। অর্থাৎ ব্যবস্থাটি এমন হওয়া উচিত যে, প্রতিটি কাজ বা ইভেন্ট প্রত্যেক শিক্ষার্থী নিজে করবে এবং সে কাজের অভিজ্ঞতাসহ বিভিন্ন দিক সম্পর্কে বিস্তারিত বলবে ও লিখবে। তদুপরি শ্রেণি উপযোগী অন্যান্য পারিপার্শ্বিক ও সমসাময়িক বিষয় সম্পর্কেও লিখবে-বলবে। অর্থাৎ শুধু করতে পারার মূল্যায়ন নয়, বলতে পারা এবং লিখতে পারার মূল্যায়নও ধারাবাহিকভাবে করা উচত। যাতে পাঠ্যক্রম অনুসারে কোন কিছু করতে পারার আগ্রহের মতো বলতে পারা এবং লিখতে পারার প্রতিও শিক্ষার্থীরা তাগিদ অনুভব করে, আগ্রহী থাকে। তাতে শিক্ষার্থীদের কাজ করার দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দেখে/শুনে/পড়ে বুঝার, বলার ও লেখার যোগ্যতা অর্জিত হবে, দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।<  


মো. রহমত উল্লাহ্ 

সাহিত্যিক, শিক্ষাগবেষক এবং অধ্যক্ষ- কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা।

২১ অক্টোবর ২০২৩



https://epaper.dainikbangla.com.bd/home/displaypage/news_2023-10-24_5_15_b

সর্বাধিক যোগ্য শিক্ষক চাই

 পত্রিকার লিংক

*সর্বাধিক যোগ্য শিক্ষক চাই*

দৈনিক বাংলা, ১২ অক্টোবর ২৩

মো. রহমত উল্লাহ্

>স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন আমরা রচনা করেছি সেটি বাস্তবায়ন করার জন্য স্মার্ট নাগরিক অত্যাবশ্যক। দেশের মাটি নয়; মানুষ স্মার্ট হলেই স্মার্ট হবে দেশ।

পোশাকে নয়; চিন্তায়, চেতনায় ও কর্মে স্মার্ট হলেই স্মার্ট হবে মানুষ। কর্মে স্মার্ট হবার জন্য আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে হতে হবে পটু। অন্যভাবে বলা যায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক উৎকর্ষের সাথে সাথে দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি ও কর্মক্ষেত্রের জন্য যে যত বেশি যোগ্য হবে তাকেই তত বেশি স্মার্ট ধরা হবে। স্মার্ট মানুষের অবশ্যই থাকতে হবে অভিযোজন যোগ্যতা। তেমন অধিকযোগ্য মানুষ তৈরির জন্যই প্রয়োজন সর্বাধিক যোগ্য শিক্ষক। তা না হলে ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রভাবে দ্রুত পরিবর্তনশীল নতুন নতুন কর্মক্ষেত্রে এসে আমাদের শিক্ষার্থী তথা নাগরিকরা প্রত্যাশিত স্মার্টনেস বা যোগ্যতা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হবে এবং প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়বে। 


শিক্ষকতা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল কর্ম। সকল পেশার মানুষ তৈরি করেন শিক্ষক। এজন্যই তিনি সর্বজন শ্রদ্ধেয়। শিক্ষকের যোগ্যতা ও দক্ষতার উপরই নির্ভর করে অন্যান্য পেশার মানুষ কতটা যোগ্য ও দক্ষ হবেন। যে দেশের শিক্ষক যত বেশি যোগ্য ও দক্ষ সে দেশের সকল পেশার মানুষ তত বেশি যোগ্য ও দক্ষ। একজন কম যোগ্য শিক্ষক সারা জীবনে তৈরি করেন অগণিত অযোগ্য নাগরিক। বিপরীত ক্রমে একজন অধিক যোগ্য শিক্ষক সারা জীবনে তৈরি করেন অগণিত সুযোগ্য মানুষ।


সর্বাধিক মেধাবীদেরই সর্বাধিক যোগ্য শিক্ষক হবার সম্ভাবনা সর্বাধিক। কম মেধাবীদের প্রশিক্ষণ দিয়েও কাঙ্ক্ষিত মানে উন্নীত করা সম্ভব হয় না বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। উত্তম শিক্ষক হবার জন্য উত্তম মেধাবী হওয়ার পাশাপাশি আইসিটিতে ও সহশিক্ষায় পারদর্শী হওয়াসহ আরো অনেক উত্তম গুণের অধিকারী হতে হয়। থাকতে হয় যোগ্যতা দিয়ে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করার, দীক্ষা দিয়ে শিষ্যে পরিণত করার, গুণের পরশে গুণান্বিত করার, প্রেষণা দিয়ে উজ্জীবিত করার, সুশিক্ষা দিয়ে সুযোগ্য করার ও আদর দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার মতো দক্ষতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি।


অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে আমরা অনেকেই তা অনুধাবন করতে পারছি না। আমরা কম যোগ্য শিক্ষক দিয়ে সকল কাজের জন্য অধিক যোগ্য মানুষ গড়তে চাইছি। বাস্তবে তা কখনোই সম্ভব নয়। তাই সর্বাধিক মেধাবীদের শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করা অত্যাবশ্যক। অথচ সর্বাধিক মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করার জন্য আমাদের বাস্তব পদক্ষেপ মোটেও সন্তোষজনক নয়। সেই আদিকালের গুরুদের মতই কিছু না নিয়ে শুধু নিজেকে উজাড় করে দিবেন একজন শিক্ষক এমন মানসিকতা পোষণ করে বসে আছি এখনো। আমরা ভাবি না যে, অন্যান্য পেশাজীবীদের মতই শিক্ষকদেরও আছে পরিবার-পরিজন। তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্যও প্রয়োজন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, নিরাপত্তা, সামাজিকতা, আনন্দ-উৎসব ইত্যাদির।


দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের শিক্ষকদের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা অন্যান্য পেশাজীবীর তুলনায় অত্যন্ত কম থাকায় শিক্ষকতায় আসছেন না ও থাকছেন না অধিক মেধাবীরা। যারা সরকারি চাকরির জন্য বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন তাদের পছন্দক্রমের তলানিতে থাকে শিক্ষকতা। আর যারা বেসরকারি শিক্ষক হতে আসেন তাদের প্রায় সবারই সর্বশেষ আশ্রয়স্থল হয় এটি। যতক্ষণ বয়স থাকে ততক্ষণ তারা চেষ্টায় থাকে অন্য পেশায় যাওয়ার। অর্থাৎ অধিকাংশরাই অনিচ্ছায় বা কমিচ্ছায় শিক্ষক। তাইতো আমাদের দেশে আজ মনে-প্রাণে শিক্ষকের বড়ই অভাব। মনে-প্রাণে শিক্ষক হচ্ছে, চিন্তায় চেতনায় ধ্যানে জ্ঞানে মননে শিক্ষক। ছোটবেলা থেকে শিক্ষক হবার ইচ্ছায় শিক্ষক। নিজের ও মা-বাবার স্বপ্ন পূরণে শিক্ষক। শিক্ষক হবার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে শিক্ষক। শুধুমাত্র শিক্ষকতার জন্য শিক্ষক। তেমন শিক্ষক ব্যতীত সফল শিক্ষা সম্ভব নয়। 


বর্তমান যুগের চৌকশ শিক্ষার্থীদের সফল পাঠদানের মাধ্যমে বিশ্বমানের সুযোগ্য মানুষে পরিণত করার জন্য আধুনিক শিক্ষা সামগ্রী, বহুতল ভবন ও নতুন শিক্ষাক্রম যেমন প্রয়োজন এর চেয়েও অধিক প্রয়োজন সার্বিক বিবেচনায় সর্বাধিকযোগ্য শিক্ষক। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে যেকোনো মূল্যে সর্বাধিক যোগ্যদের আকৃষ্ট করতে হবে শিক্ষকতায়।<


মো. রহমত উল্লাহ্

সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ এবং অধ্যক্ষ - কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

rahamot21@gmail.com




শিক্ষক নিয়োগ: সাক্ষাৎকার ও ডেমো ক্লাসের গুরুত্ব

পত্রিকার লিংক

শিক্ষক নিয়োগ: সাক্ষাৎকার ও ডেমো ক্লাসের গুরুত্ব 

দৈনিক শিক্ষা ও আমাদের বার্তা

০৫ অক্টোবর ২০২৩

মো. রহমত উল্লাহ্

>সফল শিক্ষকতা হচ্ছে সর্বাধিক জটিল কর্ম সাধন। একজন শিক্ষকের জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সফলভাবে সঞ্চারিত করার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি অন্যান্য অনেক যোগ্যতার প্রয়োজন হয়। সেসব যোগ্যতা একই সাথে জন্মগত ও অর্জনীয়। এমন কিছু যোগ্যতা ও দক্ষতা আছে যা প্রশিক্ষণ দিয়েও পূর্ণ করা যায় না। অথচ শিক্ষকতায় সে সকল যোগ্যতা ও দক্ষতার আবশ্যকতা অস্বীকার করা যায় না। বিভিন্ন স্তরে (স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে) শিক্ষক নিয়োগের বাছাই প্রক্রিয়ায় অন্যান্য আবশ্যকীয় যোগ্যতাগুলো কোন কর্তৃপক্ষ কীভাবে কতটুকু মূল্যায়ন করেন তা আমার বিস্তারিত জানা নেই। তবে মাঠের বাস্তবতায় এই মূল্যায়নের ফলাফল সন্তোষজন বলে মনে হয় না। নিজের যোগ্যতা দিয়ে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করার, দীক্ষা দিয়ে শিষ্যে পরিণত করার, গুণের পরশে গুণান্বিত করার, পদ্ধতি দিয়ে পাঠদান করার, প্রেষণা দিয়ে উজ্জীবিত করার, সুশিক্ষা দিয়ে সুযোগ্য করার ও আদর দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার মতো শিক্ষকের সংখ্যা আনুপাতিক হারে খুব বেশি নয়। উত্তম শিক্ষক বাছাই করার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি অন্যান্য যোগ্যতাগুলো যাচাই করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা উত্তম শিক্ষক হবার জন্য উত্তম মেধাবী হওয়ার পাশাপাশি আইসিটিতে ও সহশিক্ষায় পারদর্শী হওয়াসহ আরো অনেক উত্তম গুণের অধিকারী হতে হয়। যার অধিকাংশই যাচাই করা যায় প্রার্থীর সাক্ষাৎকার এবং ডেমো ক্লাসের মাধ্যমে; যদি কর্তৃপক্ষের তেমন সদিচ্ছা ও দক্ষতা থাকে।


যিনি অভ্যাসগত ও স্বভাবগতভাবেই হাসিমাখা মুখে, প্রমিত বাংলায়, স্পষ্ট উচ্চারণে, মধুর কন্ঠে, শুদ্ধ বাক্যে, সরল ভাষায়, উঁচু-নিচু স্বরে, গভীর আন্তরিকতায় সবার সাথে কথা বলেন তাঁকে শিক্ষার্থীরা অধিক পছন্দ করবে এটাই স্বাভাবিক। কোন শিক্ষকের ভাষা অসুন্দর হলে, উচ্চারণ অস্পষ্ট হলে, বাক্য গঠন ভুল হলে, এ্যা অ্যা ও করে কথা বললে, বলার গতি খুব কম/বেশি হলে ও কণ্ঠস্বর অতি নিচু বা বিরক্তিকর হলে শিক্ষার্থীরা সে শিক্ষকের ক্লাসে আগ্রহী থাকে না, মনোযোগী থাকে না। তাই সে শিক্ষকের পাঠদান সফল হয় না। যিনি অত্যন্ত ধৈর্য ধরে কোন বিষয়বস্তুকে গভীরভাবে আত্মস্থ করে, আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করে, সহজ ভাবে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে বুঝিয়ে দিতে পারেন তিনি শিক্ষার্থীদের অধিক প্রিয় হবেন, পাঠদানে সর্বাধিক সফল হবেন এটাই বাস্তব। শিক্ষা মনোবিজ্ঞানীরাও তাই বলে থাকেন। শিক্ষার্থীরা যাকে বেশি পছন্দ করে, ব্যক্তিত্ববান মনে করে, আইডল মনে করে, তার নিকট থেকেই বেশি শিখে। সে শিক্ষাই স্থায়ী হয়।


সরাসরি পাঠদানে মুখের ভাষার প্রভাব সর্বাধিক। তাই শিক্ষকের আঞ্চলিক ভাষা পরিহার ও প্রমিত বাংলা ভাষা ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  

কোন কিছু সহজে শিশুদের বুঝিয়ে দেয়ার জন্য দু'একটি স্থানীয় শব্দের প্রয়োগ হতে পারে। তবে এনসিটিবি'র বই অনুসারে শিক্ষার্থীদের প্রমিত বাংলা ব্যবহারে অভ্যস্ত বা পাকা করে তোলা শিক্ষকের দায়িত্ব। সে দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার জন্যই শিক্ষককে প্রমিত বাংলা শুদ্ধভাবে লেখার পাশাপাশি সঠিকভাবে অনর্গল বলায় পারদর্শী হতে হয়। একাধিক শিক্ষাসনদ অর্জন করেও যিনি কথা বলার সময় আঞ্চলিক ভাষা পরিহার করতে পারেন না তিনি শ্রেণি পাঠদানে প্রমিত বাংলায় কথা বলবেন কীভাবে? আবার যিনি সামান্য অসচেতন হলে ও দ্রুত কথা বলতে গেলে স্থানীয় ভাষা প্রয়োগ করেন তিনিও শ্রেণি পাঠদানে সর্বাবস্থায় প্রমিত বাংলায় কথা বলতে ব্যর্থ হবেন! সেই সাথে ব্যর্থ হবে শিক্ষার্থীরা। কেননা, শিক্ষক হচ্ছেন শিক্ষার্থীদের কাছে অনুকরণীয় অনুসরণীয় রোল মডেল। 


একজন মানুষ যতই মেধাবী হোক, জ্ঞানী হোক, শিক্ষক হিসেবে তাঁর সবচেয়ে বড় যোগ্যতা হচ্ছে সেই জ্ঞান শিক্ষার্থীদের নিকট সঠিকভাবে উপস্থাপন, বিশ্লেষণ ও সংশ্লেষণ করা। শিখন-শিখানো কার্যক্রম সফল করার জন্য আবশ্যকীয় ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য উপাদান হচ্ছে শিক্ষকের সুন্দর ভাষা, উত্তম ব্যবহার, উচ্চ প্রকাশ-ক্ষমতা। শিক্ষকের প্রকাশ-ক্ষমতার উপরই অধিকাংশ নির্ভর করে তাঁর বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান শিক্ষার্থীদের মধ্যে কতটা সঞ্চারিত হবে। সরাসরি পাঠদানের ক্ষেত্রে যার প্রকাশ-ক্ষমতা যত বেশি সে তত বেশি সফল শিক্ষক। বিশেষ করে মৌখিকভাবে কোন কিছু সহজে প্রকাশ করার সর্বাধিক ক্ষমতা থাকা চাই শিক্ষকের। সেইসাথে অবশ্যই থাকতে হয় সর্বাধিক মেধা ও বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান। থাকতে হয় আধুনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) ব্যবহারের দক্ষতা। হতে হয় ব্যাপক তথ্যসমৃদ্ধ এবং চিন্তা-চেতনায় কর্মে-কথায় অত্যন্ত স্মার্ট। তাই যেকোন মূল্যে শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করতে হবে সার্বিক বিবেচনায় সর্বাধিক যোগ্যদের। 


অন্যান্য পেশার মতো নয় শিক্ষকতা। এটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল কর্ম। সকল পেশার মানুষ তৈরি করেন শিক্ষক। এজন্যই তিনি সর্বজন শ্রদ্ধেয়। শিক্ষকের যোগ্যতা ও দক্ষতার উপরই নির্ভর করে অন্যান্য পেশার মানুষ কতটা যোগ্য ও দক্ষ হবেন। একজন অযোগ্য শিক্ষক সারা জীবনে তৈরি করেন অগণিত অযোগ্য নাগরিক। অর্জন করতে ব্যর্থ হন শ্রদ্ধা। ভালো শিক্ষক হবার জন্য যেমন ভালো ছাত্র হতে হয় তেমনি অন্যান্য যোগ্যতাও থাকতে হয়। বিশেষ কিছু যোগ্যতার দ্বারাই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঞ্চারিত করেন শিক্ষা ও সহশিক্ষার সকল বিষয়বস্তু। তাই শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং লিখিত পরীক্ষার পাশাপাশি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার ও ডেমো ক্লাসের উপর আরো বেশি গুরুত্ব দিয়ে সার্বিক যোগ্যতার মূল্যায়ন করা অত্যাবশ্যক। সেক্ষেত্রে ট্রান্সপারেন্সি নিশ্চিত করার জন্য অবশ্যই ধারণ ও সংরক্ষণ করতে হবে সেসব সাক্ষাৎকার এবং ডেমো ক্লাসের ভিডিও। স্মার্ট বাংলাদেশে তা সহজেই সম্ভব। 


মো. রহমত উল্লাহ্

শিশুসাহিত্যিক এবং অধ্যক্ষ - কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

Email - rahamot21@gmail.com 


লেখা: ০২ অক্টোবর ২০২৩, ঢাকা


আমাদের বার্তা, ০৫ অক্টোবর ২০২৩


ইটিভিতে আমার সাক্ষাৎকার

ইটিভিতে আমার সাক্ষাৎকার

 *বিশ্ব শিক্ষক দিবস ২০২৩*

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে অবস্থিত কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী শিক্ষক এবং অধ্যক্ষের (মো. রহমত উল্লাহ) সাক্ষাৎকার। Link of ETv 


https://youtu.be/NzJ3IRzQYTw?si=-mvBw8Nfrl68yoPD 

শিক্ষাই হোক মেগা প্রকল্প। দৈনিক শিক্ষা ও আমাদের বার্তা, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

 পত্রিকার লিংক

শিক্ষাই হোক মেগা প্রকল্প

মো. রহমত উল্লাহ্

দৈনিক শিক্ষা ও আমাদের বার্তা

০৩ অক্টোবর ২০২৩

'বাইচান্স শিক্ষক নয়, আমাদের দরকার মনে-প্রাণে শিক্ষক। তাদের মাধ্যমেই আমরা দক্ষ, যোগ্য ও মানবিক মানুষ গড়ে তুলেতে চাই। এজন্য শিক্ষাই প্রধান হাতিয়ার। শিক্ষাই হবে মেগা প্রকল্প। তাই আমাদের শিক্ষকদের পেশাগত মর্যাদা ও আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। সময়ের প্রয়োজনেই তাকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এগিয়ে রাখতে হবে।' মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গত ৩০ জুলাই ২০২৩ তারিখে প্রথম 'বাংলাদেশ স্টার্টআপ' সম্মেলনে এমন আরো অনেক মূল্যবান কথা বলেছেন। আমি যদি ভুল না বুঝে থাকি তাহলে 'বাইচান্স শিক্ষক, মানে ঘটনাচক্রে শিক্ষক, দৈবক্রমে শিক্ষক, ভাগ্যক্রমে শিক্ষক, হঠাৎ করে শিক্ষক। অর্থাৎ যিনি শিক্ষক হতে চান না তিনি অন্য কিছু হতে ব্যর্থ হয়ে কোন না কোন উপায়ে শেষমেষ শিক্ষক। কথাটি বলতে ও শুনতে খুবই খারাপ লাগছে! যদিও সবার ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। তবে যাদের জন্য প্রযোজ্য দায়টা কি তাদের? বাস্তব অবস্থাটি এমন হল কেন, হচ্ছে কেন, হবে কেন? 


অন্য আরেকটি কথা আমি যদি ভুল না বুঝে থাকি তাহলে 'মনে-প্রাণে শিক্ষক' মানে চিন্তায় চেতনায় ধ্যানে জ্ঞানে মননে শিক্ষক। ছোটবেলা থেকে শিক্ষক হবার ইচ্ছায় শিক্ষক। নিজের ও মা-বাবার স্বপ্ন পূরণে শিক্ষক। শিক্ষক হবার স্বপ্ন দেখতে দেখতে শিক্ষক। শিক্ষক হবার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে শিক্ষক। শুধুমাত্র শিক্ষকতার জন্য শিক্ষক। অথচ অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, কিছু ব্যতিক্রম ব্যতীত এমন শিক্ষক আমরা পাচ্ছি না! বেসরকারি তো দূরের কথা সরকারি চাকরিতেও পছন্দক্রমের তলানিতে থাকে শিক্ষকতা! সরকারি শিক্ষক হয়েও অনেকেই চলে যেতে চান, চলে যান অন্য পেশায়, অন্য ক্যাডারে। বাস্তব অবস্থাটি এমন হল কেন, হচ্ছে কেন, হবে কেন? 


সত্যি করে বলছি- আমিও আমার সন্তানের জন্য 'ঘটনাচক্রে শিক্ষক' চাই না, 'বাইচান্স শিক্ষক' চাই না; 'মনে-প্রাণে শিক্ষক' চাই, সর্বাধিক যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক চাই। আমি নিজেকে অযোগ্য শিক্ষক মনে করি না। তথাপি আমি আমার চেয়ে অধিক যোগ্য শিক্ষক চাই। আমার এ চাওয়া আজকের নয়, দীর্ঘদিনের। যখন শিক্ষার মূল ভিত্তি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসএসসি পাস শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তখনও আমি আপত্তি করেছি, লিখেছি। যখন ব্যাপক হারে কোটা সংরক্ষণ করে তুলনামূলক বেশি যোগ্য ছেলেদের বাদ দিয়ে কম যোগ্য মেয়েদের শিক্ষকতায় প্রবেশ করানো হয়েছে তখনও আমি আপত্তি করেছি, লিখেছি। যখন বেসরকারি শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা না বাড়িয়ে যোগ্যতা কমিয়ে একাধিক তৃতীয় বিভাগ বা শ্রেণিধারী প্রার্থীকে শিক্ষকতায় প্রবেশ করানো হয়েছে তখনও আমি আপত্তি করেছি, লিখেছি। এখনো বেসরকারি শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা না বাড়িয়ে যোগ্যতা কমিয়ে একটি তৃতীয় বিভাগ বা শ্রেণিধারীকে শিক্ষক হবার সুযোগ দেওয়ার ব্যাপারে আমি তীব্র আপত্তি করছি। সরকারি শিক্ষক হবার জন্য যদি তৃতীয় বিভাগ বা শ্রেণিধারীকে গ্রহণ করা না হয় তাহলে বেসরকারি শিক্ষক হবার ক্ষেত্রে কেন গ্রহণ করা হবে? বেসরকারি শিক্ষকগণ তো এ দেশের শতকরা ৯৫ ভাগের বেশি সন্তানদের লেখাপড়া করাচ্ছেন।  


আমার মত আরও অনেকেই 'বাইচান্স শিক্ষক' চায় না, 'মনে-প্রাণে শিক্ষক' চায়। অর্থাৎ সর্বাধিক যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক চায়। যারা সন্তানকে ভালোবেসে ভালো ভালো স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসায় ভর্তি করাতে চায় তারা সর্বাধিক যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক চায়। যারা শিক্ষক হয়েও সন্তানকে নিজের প্রতিষ্ঠানে না পড়িয়ে আরো ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়াতে চায় তারাও অধিক যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক চায়। যারা সন্তানকে ভালোভাবে নাচ, গান, অভিনয়, আবৃত্তি, তেলাওয়াত, খেলা, সাঁতার, শিকার, ড্রাইভিং, পাইলটিং ইত্যাদি শিখাতে চায় তারাও সে লাইনের সর্বাধিক যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক চায়। যারা সকল শিক্ষার্থীর অধিক কল্যাণ চায়, আরো উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ চায়, প্রতিটি ক্ষেত্রে অধিক যোগ্য কর্মী চায়, দেশ ও জাতির প্রকৃত উন্নয়ন চায়, তারা সবাই সর্বাধিক যোগ্য শিক্ষক চায়। অর্থাৎ সকল বিবেকবান মানুষ তার সন্তানকে দক্ষ, যোগ্য ও মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সর্বাধিক দক্ষ, যোগ্য ও মানবিক শিক্ষক চায়। শিক্ষকের নিকট থেকে আরও বেশি জ্ঞান চায়, দক্ষতা চায়, ত্যাগ চায়। 


এমতাবস্থায় 'বাইচান্স শিক্ষক নয়, আমাদের দরকার মনে-প্রাণে শিক্ষক' এই বক্তব্য দ্বারা মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় যদি এমন বুঝিয়ে থাকেন যে, নতুন যারা শিক্ষকতায় আসবেন তারা যেন 'বাইচান্স শিক্ষক' না হয়ে 'মনে-প্রাণে শিক্ষক' হন, যোগ্যতা ভিত্তিক শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে সর্বাধিক সফল শিক্ষক হন। তাহলে নিশ্চয়ই শিক্ষক পদের জন্য এখনই নির্ধারণ করতে হবে সর্বোচ্চ যোগ্যতা ও সুযোগ-সুবিধা; যাতে সর্বোচ্চ মেধাবীদের পেশা পছন্দের তালিকায় প্রথমে থাকে শিক্ষকতা। সেইসাথে ব্যাপক অর্থ বরাদ্দ দিয়ে সকল স্তরের সকল শিক্ষকের জন্য নিশ্চিত করতে হবে শিক্ষকতার তথা পাঠদানের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ও কলা-কৌশল সম্পর্কিত মূল প্রশিক্ষণ। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে শিক্ষক হবার জন্য ব্যাচেলর ইন টিচিং ডিগ্রি বাধ্যতামূলক। কেননা যতই আধুনিক শিক্ষা উপকরণ যুক্ত করা হোক, নতুন শিক্ষাক্রম ও মূল্যায়ন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হোক, উন্নত সুযোগসুবিধা সম্বলিত বহুতল ভবন নির্মাণ করা হোক; শিক্ষকের মান বৃদ্ধি করা সম্ভব না হলে শিক্ষার মান বৃদ্ধি করা অসম্ভব।


শিক্ষক পদের জন্য সর্বাধিক যোগ্যতা ও সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণে বিলম্ব করা মানেই দেশ ও জাতির দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি করা। কেননা, এখন যিনি শিক্ষক তথা মানুষ গড়ার কারিগর হবেন তিনি তুলনামূলক কম যোগ্য হলে কমপক্ষে ৩০ বছর তৈরি করবেন অগণিত অযোগ্য বা কম যোগ্য মানুষ। অর্থাৎ অযোগ্যতা ছড়িয়ে দিবেন সকল ক্ষেত্রে, সকল পেশায়! অপরদিকে এখন যিনি শিক্ষক তথা মানুষ গড়ার কারিগর হবেন তিনি সর্বাধিক যোগ্য হলে কমপক্ষে ৩০ বছর তৈরি করবেন অগণিত অধিক যোগ্য মানুষ। দ্রুত বাস্তবায়িত হবে প্রকৃত স্মার্ট বাংলাদেশ। মনে রাখতে হবে, তুলনামূলক কম যোগ্য শিক্ষক দিয়ে অধিক যোগ্য ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, আমলা, কৃষিবিদ, কর্মী তথা সকল পেশাজীবী ও জনপ্রতিনিধি তৈরির প্রত্যাশা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, অবাস্তব, অসম্ভব। আশা করি বিষয়টি এখনই অনুধাবন করবে বর্তমান সরকার, দ্রুত বাস্তবায়ন করবে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের সেই মূল্যবান বক্তব্য- 'শিক্ষাই হবে মেগা প্রকল্প। শিক্ষকদের পেশাগত মর্যাদা ও আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে।' 

________________________


মো. রহমত উল্লাহ্

সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ এবং অধ্যক্ষ -কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

rahamot21@gmail.com 


পরিমার্জিত: ০১ অক্টোবর ২০২৩





শিক্ষাই হোক মেগা প্রকল্প। প্রথম আলো, ১৪ আগস্ট ২০২৩

পত্রিকার লিংক 

শিক্ষাই হোক মেগা প্রকল্প

দৈনিক প্রথম আলো, ১৪ আগস্ট ২০২৩


মো. রহমত উল্লাহ্ 

'বাইচান্স শিক্ষক নয়, আমাদের দরকার মনে-প্রাণে শিক্ষক। তাদের মাধ্যমেই আমরা দক্ষ, যোগ্য ও মানবিক মানুষ গড়ে তুলেতে চাই। এজন্য শিক্ষাই প্রধান হাতিয়ার। শিক্ষাই হবে মেগা প্রকল্প। তাই আমাদের শিক্ষকদের পেশাগত মর্যাদা ও আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। সময়ের প্রয়োজনেই তাকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এগিয়ে রাখতে হবে।' মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গত ৩০ জুলাই ২০২৩ তারিখে প্রথম 'বাংলাদেশ স্টার্টআপ' সম্মেলনে এমন আরো অনেক মূল্যবান কথা বলেছেন। আমি যদি ভুল না বুঝে থাকি তাহলে 'বাইচান্স শিক্ষক, মানে ঘটনাচক্রে শিক্ষক, দৈবক্রমে শিক্ষক, ভাগ্যক্রমে শিক্ষক, হঠাৎ করে শিক্ষক। অর্থাৎ যিনি শিক্ষক হতে চান না তিনি অন্য কিছু হতে ব্যর্থ হয়ে কোন না কোন উপায়ে শেষমেষ শিক্ষক। কথাটি বলতে ও শুনতে খুবই খারাপ লাগছে! যদিও সবার ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। তবে যাদের জন্য প্রযোজ্য দায়টা কি তাদের? বাস্তব অবস্থাটি এমন হল কেন, হচ্ছে কেন, হবে কেন? 


অন্য আরেকটি কথা আমি যদি ভুল না বুঝে থাকি তাহলে 'মনে-প্রাণে শিক্ষক' মানে চিন্তায় চেতনায় ধ্যানে জ্ঞানে মননে শিক্ষক। ছোটবেলা থেকে শিক্ষক হবার ইচ্ছায় শিক্ষক। নিজের ও মা-বাবার স্বপ্ন পূরণে শিক্ষক। শিক্ষক হবার স্বপ্ন দেখতে দেখতে শিক্ষক। শিক্ষক হবার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে শিক্ষক। শুধুমাত্র শিক্ষকতার জন্য শিক্ষক। অথচ অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, কিছু ব্যতিক্রম ব্যতীত এমন শিক্ষক আমরা পাচ্ছি না! বেসরকারি তো দূরের কথা সরকারি চাকরিতেও পছন্দক্রমের তলানিতে থাকে শিক্ষকতা! সরকারি শিক্ষক হয়েও অনেকেই চলে যেতে চান, চলে যান অন্য পেশায়, অন্য ক্যাডারে। বাস্তব অবস্থাটি এমন হল কেন, হচ্ছে কেন, হবে কেন? 


সত্যি করে বলছি- আমিও আমার সন্তানের জন্য 'ঘটনাচক্রে শিক্ষক' চাই না, 'বাইচান্স শিক্ষক' চাই না; 'মনে-প্রাণে শিক্ষক' চাই, সর্বাধিক যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক চাই। আমি নিজেকে অযোগ্য শিক্ষক মনে করি না। তথাপি আমি আমার চেয়ে অধিক যোগ্য শিক্ষক চাই। আমার এ চাওয়া আজকের নয়, দীর্ঘদিনের। যখন শিক্ষার মূল ভিত্তি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসএসসি পাস শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তখনও আমি আপত্তি করেছি, লিখেছি। যখন ব্যাপক হারে কোটা সংরক্ষণ করে তুলনামূলক বেশি যোগ্য ছেলেদের বাদ দিয়ে কম যোগ্য মেয়েদের শিক্ষকতায় প্রবেশ করানো হয়েছে তখনও আমি আপত্তি করেছি, লিখেছি। যখন বেসরকারি শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা না বাড়িয়ে যোগ্যতা কমিয়ে একাধিক তৃতীয় বিভাগ বা শ্রেণিধারী প্রার্থীকে শিক্ষকতায় প্রবেশ করানো হয়েছে তখনও আমি আপত্তি করেছি, লিখেছি। এখনো বেসরকারি শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা না বাড়িয়ে যোগ্যতা কমিয়ে একটি তৃতীয় বিভাগ বা শ্রেণিধারীকে শিক্ষক হবার সুযোগ দেওয়ার ব্যাপারে আমি তীব্র আপত্তি করছি। সরকারি শিক্ষক হবার জন্য যদি তৃতীয় বিভাগ বা শ্রেণিধারীকে গ্রহণ করা না হয় তাহলে বেসরকারি শিক্ষক হবার ক্ষেত্রে কেন গ্রহণ করা হবে? বেসরকারি শিক্ষকগণ তো এ দেশের শতকরা ৯৫ ভাগের বেশি সন্তানদের লেখাপড়া করাচ্ছেন।  


আমার মত আরও অনেকেই 'বাইচান্স শিক্ষক' চায় না, 'মনে-প্রাণে শিক্ষক' চায়। অর্থাৎ সর্বাধিক যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক চায়। যারা সন্তানকে ভালোবেসে ভালো ভালো স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসায় ভর্তি করাতে চায় তারা সর্বাধিক যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক চায়। যারা শিক্ষক হয়েও সন্তানকে নিজের প্রতিষ্ঠানে না পড়িয়ে আরো ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়াতে চায় তারাও অধিক যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক চায়। যারা সন্তানকে ভালোভাবে নাচ, গান, অভিনয়, আবৃত্তি, তেলাওয়াত, খেলা, সাঁতার, শিকার, ড্রাইভিং, পাইলটিং ইত্যাদি শিখাতে চায় তারাও সে লাইনের সর্বাধিক যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক চায়। যারা সকল শিক্ষার্থীর অধিক কল্যাণ চায়, আরো উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ চায়, প্রতিটি ক্ষেত্রে অধিক যোগ্য কর্মী চায়, দেশ ও জাতির প্রকৃত উন্নয়ন চায়, তারা সবাই সর্বাধিক যোগ্য শিক্ষক চায়। অর্থাৎ সকল বিবেকবান মানুষ তার সন্তানকে দক্ষ, যোগ্য ও মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সর্বাধিক দক্ষ, যোগ্য ও মানবিক শিক্ষক চায়। শিক্ষকের নিকট থেকে আরও বেশি জ্ঞান চায়, দক্ষতা চায়, ত্যাগ চায়। 


এমতাবস্থায় 'বাইচান্স শিক্ষক নয়, আমাদের দরকার মনে-প্রাণে শিক্ষক' এই বক্তব্য দ্বারা মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় যদি এমন বুঝিয়ে থাকেন যে, নতুন যারা শিক্ষকতায় আসবেন তারা যেন 'বাইচান্স শিক্ষক' না হয়ে 'মনে-প্রাণে শিক্ষক' হন, যোগ্যতা ভিত্তিক শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে সর্বাধিক সফল শিক্ষক হন। তাহলে নিশ্চয়ই শিক্ষক পদের জন্য এখনই নির্ধারণ করতে হবে সর্বোচ্চ যোগ্যতা ও সুযোগ-সুবিধা; যাতে সর্বোচ্চ মেধাবীদের পেশা পছন্দের তালিকায় প্রথমে থাকে শিক্ষকতা। সেই সাথে আমরা যারা বর্তমানে শিক্ষকতায় নিয়োজিত আছি; কিন্তু 'মনে-প্রাণে শিক্ষক' হতে পারছি না, 'বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এগিয়ে' থাকতে পারছি না, ডিজিটাল তথা স্মর্ট হয়ে উঠতে পারছি না, কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারছি না, তাদের জন্য থাকা উচিত হ্যান্ডসাম এমাউন্ট নিয়ে অগ্রিম অবসরে যাওয়ার ব্যবস্থা। যাতে দ্রুত উন্মোচিত হয় অধিক যোগ্যদের শিক্ষকতায় আগমনের অধিক দ্বার। 


শিক্ষক পদের জন্য সর্বাধিক যোগ্যতা ও সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণে বিলম্ব করা মানেই দেশ ও জাতির দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি করা। কেননা, এখন যিনি শিক্ষক তথা মানুষ গড়ার কারিগর হবেন তিনি তুলনামূলক কম যোগ্য হলে কমপক্ষে ৩০ বছর তৈরি করবেন অগণিত অযোগ্য বা কম যোগ্য মানুষ। অর্থাৎ অযোগ্যতা ছড়িয়ে দিবেন সকল ক্ষেত্রে, সকল পেশায়! অপরদিকে এখন যিনি শিক্ষক তথা মানুষ গড়ার কারিগর হবেন তিনি সর্বাধিক যোগ্য হলে কমপক্ষে ৩০ বছর তৈরি করবেন অগণিত অধিক যোগ্য মানুষ। দ্রুত বাস্তবায়িত হবে প্রকৃত স্মার্ট বাংলাদেশ। মনে রাখতে হবে, তুলনামূলক কম যোগ্য শিক্ষক দিয়ে অধিক যোগ্য ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, আমলা, কর্মী তথা সকল পেশাজীবী ও জনপ্রতিনিধি তৈরির প্রত্যাশা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, অবাস্তব, অসম্ভব। আশা করি বিষয়টি এখনই অনুধাবন করবে বর্তমান সরকার, দ্রুত বাস্তবায়ন করবে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের সেই মূল্যবান বক্তব্য- 'শিক্ষাই হবে মেগা প্রকল্প। শিক্ষকদের পেশাগত মর্যাদা ও আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে।' 


মো. রহমত উল্লাহ্

সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ এবং অধ্যক্ষ -কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

rahamot21@gmail.co

০৭ আগস্ট ২০২৩





https://nagorik.prothomalo.com/ayojon/lev41c7pyp