কভিডকালীন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ > ইত্তেফাক, ৩১ আগস্ট ২০২১

 কভিডকালীন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ

দৈনিক ইত্তেফাক > ৩১ আগস্ট ২০২১

মো. রহমত উল্লাহ্



সুপ্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, তোমরা যারা ২০২১ সালের এসএসসি বা সমমান পরীক্ষা দেওয়ার অপেক্ষায় আছ তাদের জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা। তোমাদের পরীক্ষা নিয়ে শুধু তোমরা নয় আমরা সবাই অনিশ্চয়তায় ছিলাম দীর্ঘদিন ধরে। সম্প্রতি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তোমাদের পরীক্ষার বিষয়ে। তিনি বলেছেন, (ক) কভিড-১৯ পরিস্থিতি অনুকূল হলে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে আগামী নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে সরাসরি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সেক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের আলোকে গ্রুপ ভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ের পরীক্ষা হবে। সেই পরীক্ষায় সময় ও নম্বর হ্রাস করা হবে। প্রতি বিষয়ে ৫০ নম্বর করে পরীক্ষা হবে। সেই ৫০ নম্বরকে আবার ১০০ নম্বরে কনভার্ট করা হবে। 


আবশ্যিক বিষয়সমূহের উপর কোন পরীক্ষা হবে না। তোমাদের জেএসসি বা সমমান পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে আবশ্যিক বিষয়গুলো মূল্যায়ন করা হবে। অর্থাৎ আবশ্যিক বিষয় বাংলা, ইংরেজি, গণিত, আইসিটি ও ধর্ম এর জন্য জেএসসি বা সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর বিবেচনা করা হবে।


অত:পর, ৩টি নৈর্বাচনিক বিষয়ে অনুষ্ঠেয় পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর এবং ৫টি আবশ্যিক বিষয়ের জন্য জেএসসি বা সমমান পরীক্ষার ফলাফল থেকে অর্জিত নম্বর একসঙ্গে সমন্বয় করে মোট/চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণ করা হবে। 


(খ) অতিমারি কভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে সরাসরি পরীক্ষা গ্রহণ সম্ভব না হলে তোমাদের জেএসসি বা সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে আবশ্যিক ৫টি বিষয় মূল্যায়ন করা হবে এবং সেইসাথে গ্রুপ ভিত্তিক নৈর্বাচনিক  ৩টি বিষয়ের   এসাইনমেন্ট কার্যক্রমের মূল্যায়ন সমন্বয় করে মোট/চূড়ান্ত ফলাফল তৈরি করা হবে। 


(গ) কোন অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে পরীক্ষা গ্রহণ করা ও এসাইনমেন্টের মূল্যায়ন বিবেচনা করা সম্ভব না হলে শুধুমাত্র জেএসসি বা সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে আবশ্যিক ৫টি বিষয় মূল্যায়ন করে চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণ করা হবে। 


লক্ষণীয় যে, আবশ্যিক ৫টি বিষয়ের কোন পরীক্ষা বা এসাইনমেন্ট কার্যক্রম হবে না। চতুর্থ বিষয় হিসেবে কোন বিষয় থাকবে না। তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয় পরীক্ষার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে বা এসাইনমেন্টের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে অথবা মূল্যায়নের বাইরে রাখা হবে। 


মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় আরো বলেছেন যে, তোমরা যারা এসাইনমেন্ট কার্যক্রম ভালোভাবে সম্পাদন করবে তারা চূড়ান্ত পরীক্ষায় অবশ্যই ভালো ফলাফল করবে। আশা করি ৩টিমাত্র নৈর্বাচনিক  বিষয়ের ২৪টি এসাইনমেন্ট তোমরা ভালোভাবে সম্পাদন করতে পারবে। এসাইনমেন্টের জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর গুলো খুব ভালভাবে স্টাডি করতে হবে। মনে রাখতে হবে যদি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় তো এই ২৪টি এসাইনমেন্ট থেকেই পরীক্ষায় প্রশ্ন থাকবে। অর্থাৎ ভালোভাবে এসাইনমেন্ট করা মানেই চূড়ান্ত পরীক্ষার ভালো প্রস্তুতি নেওয়া। চূড়ান্ত পরীক্ষায় অন্যান্য বারের মতোই বেশি সংখ্যক প্রশ্ন থাকবে কিন্তু এবার খুবই কম সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। সুতরাং এসাইনমেন্ট গুলো ভালোভাবে করা থাকলে কোন প্রশ্ন আনকমন হবার সম্ভাবনা থাকবে না। নির্ধারিত এসাইনমেন্ট গুলো বারবার স্টাডি করে ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে। বার বার পড়তে হবে মূল বই। মনে রাখতে হবে বিভিন্ন নাম, তারিখ, স্থান, সুত্র, সংজ্ঞা, কোটেশন, বিক্রিয়া, সমীকরণ, বৈজ্ঞানিক নামসহ গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অনলাইনে নিয়ে নিতে হবে শিক্ষকগণের সহযোগিতা। প্রয়োজনে অনলাইনেই সহপাঠীদের সঙ্গে করতে হবে গ্রুপ স্টাডি। ফাঁকি দেওয়া চলবে না কোনোভাবেই।  মনে রেখো, লেখাপড়ায় ফাঁকি দেওয়া মানে কিন্তু নিজেকেই ফাঁকি দেওয়া!  


অতিমারি কোভিড-১৯ এর কারণে যদি আসন্ন পরীক্ষা গ্রহণ সম্ভব না হয় তো তোমাদের এসাইনমেন্ট পেপার গুলোই হয়ে যাবে চূড়ান্ত পরীক্ষার উত্তরপত্র। অর্থাৎ তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ের এসাইনমেন্ট পেপারের উপর প্রাপ্ত নম্বর যুক্ত হবে তোমাদের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফলে। সুতরাং এসাইনমেন্ট পেপার গুলো তৈরি করতে হবে অত্যন্ত যত্নসহকারে। মূল বই পড়ে এমনভাবে  উত্তর লিখতে হবে যেন শিক্ষক বুঝতে পারেন এটি তুমি নিজের মেধা থেকেই লিখেছ। তাতে তোমার নম্বর বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। মনে রেখো, কোথাও থেকে কারো এসাইনমেন্ট পেপার কপি করা উচিত নয়। এটি নীতি-নৈতিকতা বিরোধী অন্যায় ও পাপ কাজ। 


এখন কিন্তু আর সময় বিনষ্ট করার সুযোগ নেই। পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগাতে হবে এসাইনমেন্টের জন্য নির্ধারিত ১২ সপ্তাহ সময়। ভালোর জন্য চেষ্টা করা আর মন্দের জন্য প্রস্তুত থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করার জন্য থাকতে হবে প্রস্তুত। তাই নিজেকে রাখতে হবে সুস্থ ও সবল। কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। অনুশীলন করতে হবে ধর্মীয় বিধিবিধান। নিয়মিত করতে হবে নাওয়া, খাওয়া, বিশ্রাম ও ব্যায়াম। ঠিক রাখতে হবে ঘুমসহ সকল কাজের রুটিন। নিশ্চিত করতে হবে সুস্থ দেহে সুস্থ মন। তবেই সফলতার দিকে এগিয়ে যাবে তোমাদের জীবন।




মো. রহমত উল্লাহ্ 

সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ এবং অধ্যক্ষ -কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। 

----------------



Previous Post
Next Post

About Author

0 মন্তব্য(গুলি):