আসলেই আমি ঘটনাচক্রে শিক্ষক > দৈনিক শিক্ষা, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

আসলেই আমি ঘটনাচক্রে শিক্ষক

দৈনিক শিক্ষা > ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১



মো. রহমত উল্লাহ্

মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের কিছু উক্তি নিয়ে সম্প্রতি ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে শিক্ষক সমাজে। নতুন শিক্ষাক্রম বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে একটা বড় অংশ, ঘটনাচক্রে শিক্ষক। অন্য কোনো পেশায় অনেকেই যেতে পারেননি, শিক্ষকতা কোনোদিন তারা চাননি। আমাদের প্রশিক্ষিত শিক্ষক প্রয়োজন’। তিনি আরো বলেন, ‘যিনি শিক্ষকতা পেশায় আসবেন তিনি তার জীবনের লক্ষ্যই হবে শিক্ষকতা পেশা।  তিনি সেই লক্ষ্য নির্ধারণ করে আসবেন।’ [দৈনিক শিক্ষা, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১]


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশিত শিক্ষকদের বিভিন্ন মন্তব্য দেখে মনে হচ্ছে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের এসব কথায় খুবই কষ্ট পেয়েছেন তারা। তিনি অবশ্য সবাইকে 'ঘটনাচক্রে শিক্ষক' বলেন নি; শিক্ষকদের বড় একটা অংশকে 'ঘটনাচক্রে শিক্ষক' বলেছেন। সকল শিক্ষক ভাই ভাই। সুতরাং শিক্ষকদের বড় একটা অংশকে এমন কথা বললে সবাই কষ্ট পাবেন এটাই স্বাভাবিক। আমিও কষ্ট পেয়েছি। তবে সে কষ্টের কারণ সবার সঙ্গে নাও মিলতে পারে। 


অনেকেই বলার চেষ্টা করেছেন- আমি খুব ভাল ছাত্র ছিলাম, আমি অনেক কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষক হয়েছি, আমি অনেক ভাবেই অনেক যোগ্য। সুতরাং আমি 'ঘটনাচক্রে শিক্ষক' হয়নি। তাই শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের এই কথায় আমি খুব কষ্ট পেয়েছি! হ্যাঁ, একজন যোগ্য মানুষ যদি মনে করেন তাকে অযোগ্য বলা হয়েছে তো তিনি কষ্ট পাবেন এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। আমি তত যোগ্য মানুষ নই। তাই তেমন চিন্তা আমি করতে পারিনি। তেমন ভেবে আমি কষ্ট পাইনি। কেননা, আমি আসলেই 'ঘটনাচক্রে শিক্ষক' হয়েছি। যিনি সুযোগ পেয়েও অধিক বেতনের চাকরিতে না গিয়ে কিংবা অন্য পেশায় না গিয়ে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষকতা করবেন বলে স্বেচ্ছায় এদেশের বেসরকারি শিক্ষক হয়েছেন তিনি অবশ্যই আমার চেয়ে উত্তম। যদিও আমি জানি না, আসলে এমন আছেন ক'জন! 


বিভিন্ন বাস্তব ঘটনার কারণে এর চেয়ে অধিক উপার্জনক্ষম কোন পেশা অর্জন করতে পারিনি বলেই ঘটনাচক্রে আমি বেসরকারি শিক্ষকতায় এসেছি। যতই যুক্তিযুক্ত হোক সেসব কারণ, অন্য পেশা অর্জনে আমি ব্যর্থ হয়েছি এটিই শেষ কথা। তবে শিক্ষকতায় এসে আমি আর অনিহা দেখাইনি, দায়িত্ব-কর্তব্যে অবহেলা করিনি, কোন কাজে ফাঁকি দেইনি, শিক্ষার্থীদের ঠকাইনি। লেখাপড়া করেছি, প্রশিক্ষণ নিয়েছি, শিক্ষায় আত্মনিয়োগ করেছি। মনেপ্রাণে শিক্ষক হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছি ও করছি। বেতন-ভাতা কম পাই বলে কখনো কাজ কম করার চিন্তা করিনি। হয়েছি শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান। এতোকিছুর পরেও এটাই সত্য যে, আমি শিক্ষক হতে চাইনি, অন্য কোন পেশায় যেতে পারিনি, তাই ঘটনাচক্রে বেসরকারি শিক্ষক হয়েছি। আমার মত আরো অনেকেই আছেন। শুধু বেসরকারি নয়, যারা সরকারি শিক্ষক হয়েছেন তাদের অনেকেরই এটি ফার্স্ট চয়েজ ছিল না। অন্যান্য ক্যাডারে এবং পেশাতেও এমন উদাহরণ আছে। এটাই বাস্তব সত্য। এই সত্যটা স্বীকার করার সৎসাহস নেই আমাদের অনেকেরই। আমরা স্বীকার করি বা না করি, এই সত্যটাই স্বীকার করেছেন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী। তিনি পরিস্কার করেই বলেছেন, '‘আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে একটা বড় অংশ, ঘটনাচক্রে শিক্ষক। অন্য কোনো পেশায় অনেকেই যেতে পারেননি, শিক্ষকতা কোনোদিন তারা চাননি। আমাদের প্রশিক্ষিত শিক্ষক প্রয়োজন'। আমাদের দেশের বাস্তবতাটি উপলব্ধি করার জন্য মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়কে ধন্যবাদ। 


কিন্তু যুগ যুগ ধরে অধিক যোগ্যরা শিক্ষকতায় না আসার দায় কার? আমরা কেন যুগ যুগ ধরে ঘটনাচক্রে শিক্ষক হলাম? আমরা কেন স্বেচ্ছায় শিক্ষক হতে চাইনি? আমরা কেন শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় থাকতে চাই না? আমাদের চেয়ে অধিক যোগ্যরা কেন স্বেচ্ছায় শিক্ষক হলো না? আমাদের অধিক যোগ্য সন্তানটি কেন সেচ্ছায় শিক্ষকতায় আসতে চায় না? অধিক যোগ্যদের লক্ষ্য কেন শিক্ষকতা নয়? আমরা কেন শিক্ষকতার পাশাপাশি অন্য পেশায় মনোযোগ দিতে বাধ্য হচ্ছি? কেন শিক্ষকতায় পূর্ণ শ্রম, সময়, মেধা ও মনোযোগ দিতে পারছি না? অনেকেই কেন এখনও যথাযথ প্রশিক্ষণবিহীন রয়ে গেছি? 'ঘটনাচক্রে শিক্ষক' দিয়ে কতটুকু বাস্তবায়ন সম্ভব আসন্ন আধুনিক শিক্ষাক্রম? কতটুকু সম্ভব বিশ্বমানের নাগরিক-কর্মী তৈরি? আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও সেচ্ছায় না হয়ে কেন 'ঘটনাচক্রে শিক্ষক' হচ্ছেন প্রায় শতভাগ শিক্ষক? এখানেই তো আমার কষ্ট! অতীত ও বর্তমান কোন সরকার কি এড়াতে পারে এই দায়?


মো. রহমত উল্লাহ্

শিক্ষক, সাহিত্যিক ও কলাম লেখক 

পত্রিকার লিংক

যোগাযোগ: অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা না রাখার সিদ্ধান্ত হোক এলাকাভিত্তিক, জাগো নিউজ ২৪ ডটকম

 পত্রিকার লিংক

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা না রাখার সিদ্ধান্ত হোক এলাকাভিত্তিক 

Jagonews24.com 15.9.2021

মো. রহমত উল্লাহ্


মহামারি করোনা সংক্রমণের কারণে প্রায় দেড় বছর সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখ প্রথম খোলা হলো প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে লক্ষ্য করা গেছে ব্যাপক উতসাহ-উদ্দীপনা। প্রথম দিনেই অনেক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন শ্রেণিতে প্রায় শতভাগ ছিল শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার। শিক্ষার্থী ও অভিভাবক প্রমান করে দিয়েছেন যে, শিক্ষার্থীরা করোনা মোকাবিলা করেই শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত হয়ে লেখাপড়া করতে চায়। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রেও কতিপয় অভিভাবক ব্যতীত প্রায় সকলের মধ্যে লক্ষ্য করা গেছে ব্যাপক আগ্রহ। বিশেষকরে শিক্ষার্থীরা ছিল অত্যধিক সতর্ক। এটি অবশ্যই একটি শুভ লক্ষণ। প্রতিষ্ঠানে এসে শিক্ষার্থীরা যদি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে অভ্যস্ত হয়ে উঠে তো এটি হবে আমাদের জন্য অত্যন্ত মঙ্গলজনক। শিক্ষার্থী তথা সন্তানের দেখাদেখি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করবেন অনেক অসচেতন অভিভাবক। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মান্য করা ও টিকা প্রদান দ্রুত সম্পন্ন করা অত্যন্ত জরুরি। অন্যান্য দেশের মতো আমাদেরও শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্টদের টিকা প্রদানে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।   

 

এদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার আগেই গত ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় বলেছেন, ‘করোনা সংক্রমণ বাড়লে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনরায় বন্ধ করে দেয়া হবে’। এ বিষয়ে গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীও এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, 'করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়লে আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সুপারিশ করা হবে।' এ ব্যাপারে দ্বিমত করার কোন অবকাশ নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কারণে করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেলে অবশ্যই বন্ধ করে দিতে হবে পুনরায়।  তবে মনে রাখতে হবে, মহামারি করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে শিক্ষাখাত। সরাসরি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে আমাদের প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থী। শিক্ষার ক্ষতি অত্যন্ত দীর্ঘমেয়াদী ও বিভিন্নমূখী হওয়ায় সাধারণভাবে চোখে পড়ে না অনেকেরই। শিক্ষাখাতে এমন কিছু ক্ষতি আছে যা আর কখনোই রিকভার করা সম্ভব হয় না। প্রায় দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় যে সকল শিক্ষার্থী স্থায়ীভাবে ঝরে পড়ে শিশুশ্রম ও বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে তাদের জীবন থেকে কখনোই আর মুছে দেওয়া সম্ভব হবে না এই ক্ষত। অনেকের অবসর মস্তিষ্ক হয়েছে শয়তানের আড্ডাখানা। হয়ত কোনদিনই আর সুপথে আনা যাবে না তাদের বড় একটা অংশ!


এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যদি করোনা সংক্রমণ কোন এলাকায় বেড়ে যায় তাহলে কি সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবার বন্ধ রাখা হবে? এক বা একাধিক এলাকায় সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে সকল এলাকার শিক্ষার্থীরা কি আবারও সরাসরি পাঠদান থেকে বঞ্চিত হবে? আমি মনে করি এমনটি হওয়া মোটেও উচিত নয়। তাই আমি আগেও অনেকবার অনুরোধ করেছিলাম, যে সকল এলাকায় সংক্রমণ কম ছিল সে সকল এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় অন্তত কিছু দিনের জন্য হলেও খুলে দেওয়ার জন্য। এখনও আবার অনুরোধ করছি, যে সকল এলাকায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে সে সকল এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখুন। কোন এলাকায় করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একযোগে বন্ধ না করে  কেবল সেই এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিছুদিনের জন্য বন্ধ রাখুন এবং সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এলে পুনরায় খুলে দিন। এভাবেই পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো অঞ্চল ভিত্তিক ট্রায়েল এন্ড এরর ভিত্তিতে এগিয়ে যেতে হবে আমাদেরও। এই লক্ষ্যে প্রয়োজনে জেলা বা উপজেলা ভিত্তিক শিক্ষা বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে তদারক কমিটি গঠন করা যেতে পারে এবং তাদের হাতে সেই এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা বা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দেওয়া যেতে পারে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও ক্যাডেট কলেজসহ বিভিন্ন বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সমূহকে এইরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দেওয়া যেতে পারে। তাতে করে সংক্রমণের হার বিবেচনায় দেশের কোনো না কোনো এলাকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা কোনো না কোনো ধরনের বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিছুকিছু সময়ের জন্য হলেও বারবার খোলা রাখা সম্ভব হবে। 


যেহেতু আমাদের সারাদেশে অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা ও অবস্থান একই রকম নয়, ইন্টারনেট সুবিধা একই রকম নয়, অভিভাবকদের আর্থিক অবস্থা একই রকম নয়, শিক্ষার হার একই রকম নয়; সেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা বা না রাখার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ অত্যাবশ্যক। অঞ্চল ভিত্তিক সংক্রমণের হার ও অন্যান্য দিক বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি খোলা রাখা সম্ভব হয় তাহলে সেটি অবশ্যই হবে মঙ্গলজনক। করোনা সংক্রমণ কম থাকার সুবাদে কোন এলাকার শিক্ষার্থীরা সরাসরি ক্লাস করার সুযোগ বেশি পেলে অন্যদের তো কোন ক্ষতি নেই। কারো বিরোধিতা করারও কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ নেই। যারা ইন্টারনেটে ক্লাস করার সুযোগ বেশি পাচ্ছে তারা তো তা করছে। কেউ তো এর বিরোধিতা করছে না। 


একটা বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, আমাদের দেশের প্রত্যন্ত ও বিচ্ছিন্ন এলাকায় করোনা সংক্রমণের হার তুলনামূলকভাবে কম এবং সেসব এলাকার মানুষের  রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। ইন্টারনেট ও স্মার্ট ফোনের সুবিধা থেকে কম/বেশি বঞ্চিত পিছিয়ে পড়া সেসব গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা যদি করোনা সংক্রমণ কম থাকায় সরাসরি ক্লাস করার সুযোগ বেশি পায় তাহলে আমাদের সবারই তো খুশি হবার কথা। আমাদের সবারই তো দায়িত্ব লেখাপড়ার সুযোগ বাড়িয়ে দিয়ে তাদেরকে সামনে এগিয়ে আনা। তারাও তো এ দেশেরই নাগরিক। তারা শিক্ষিত হলে এদেশেরই কল্যাণ হবে। সুতরাং কোনো একটি শহরে বা এলাকায় করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেলে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একযোগে বন্ধ রাখা অনুচিত। 


মো. রহমত উল্লাহ্

সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক এবং অধ্যক্ষ - কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। Email- rahamot21@gmail.com 

কলেজের অভিভাবক সদস্য নির্বাচনে জটিলতা নিরসন জরুরি, দৈনিক শিক্ষা, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১

কলেজের অভিভাবক সদস্য নির্বাচনে জটিলতা নিরসন জরুরি

দৈনিক শিক্ষা > ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১



মো. রহমত উল্লাহ্ 

করোনা পরিস্থিতির কারণে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়নি বিধায় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি গঠন স্থগিত ছিল দীর্ঘদিন। তাই অ্যাডহক কমিটির মাধ্যমে চলছিল বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নিয়মিত গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি গঠন করার কথা বলা হয়েছে।

 

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা, ২০০৯  এর প্রবিধি-৪ (ঘ) এর বর্ণনা অনুসারে ‘উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অভিভাবকগণের মধ্য হইতে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অভিভাবকগণের ভোটে অভিভাবক সদস্য নির্বাচিত হইবেন’। এই প্রবিধান অনুসারে বিদ্যমান কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণের অন্ততঃ ৮০ দিন পূর্বে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে হবে।


বাস্তবতা হচ্ছে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে এসএসসি-২০২১ পরীক্ষা যথাসময়ে অনুষ্ঠিত না হওয়ায় ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে এখনো শিক্ষার্থী ভর্তি করা যায়নি। অপরদিকে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে দ্বাদশ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন এবং তাদেরকে দ্বিতীয় বর্ষের কোর্স পড়ানো হচ্ছে। ফলে বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণির কোন শিক্ষার্থী বিদ্যমান নেই। আগামী ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের প্রথমার্ধেই তাদের এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা যায়। সেক্ষেত্রে তারা তখন আর বর্তমান প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী থাকবেন না।

 

তাছাড়া ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসি পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করা হলেও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ার কারণে অদ্যাবধি তারা তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত আছেন। আগামী ডিসেম্বর মাসের প্রথমার্ধে তাদের এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে। সে ক্ষেত্রে তারাও তখন আর বর্তমান প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী থাকবেন না।  

 

প্রকৃতপক্ষে এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণির কোন শিক্ষার্থী ও অভিভাবক না থাকায় উল্লেখিত প্রবিধি ২০০৯ অনুসরণ করে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের অভিভাবক সদস্য নির্বাচন করতে গিয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিপাকে পড়েছে। এমতাবস্থায়, নিয়মিত গভর্নিং বডি গঠনের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের অভিভাবক সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের করণীয় নির্ধারণ করে একটি নির্দেশনা দেওয়া খুবই জরুরি। 

 

লেখক : শিক্ষক ও কলাম লেখক


পত্রিকার লিংক


শিক্ষকের মর্যাদা > ইত্তেফাক, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১


শিক্ষকের মর্যাদা 

দৈনিক ইত্তেফাক > ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

মো. রহমত উল্লাহ্

মানবসন্তানকে মানুষে পরিণত করার ঐকান্তিক তপস্যা হচ্ছে শিক্ষকতা। তাই পৃথিবীর সকল দেশেই শিক্ষকের প্রকৃত মর্যাদা সর্বাধিক। সামষ্টিক বিবেচনায় যে কোন পেশার তুলনায় শিক্ষকতা অধিক সম্মানজনক। কেননা শিক্ষকতা মূলত একটি ব্রত। তাই প্রতিটি সমাজেই অগণিত অপেশাদার শিক্ষক বিদ্যমান। শুধু পেশা হিসেবে শিক্ষকতায় সফলতা নেই, পরিতৃপ্তি নেই। শিক্ষাদান হচ্ছে অতি উত্তম পূণ্য কর্ম। মহান সৃষ্টিকর্তা নিজেই প্রধান শিক্ষক। বিভিন্ন ধর্মের প্রবর্তকগণ ছিলেন উৎকৃষ্ট শিক্ষক। অর্থাৎ উৎকৃষ্ট মানবেরাই উৎকৃষ্ট শিক্ষক। উৎকৃষ্ট মানব তথা উৎকৃষ্ট শিক্ষকের মর্যাদাও উৎকৃষ্ট। শিক্ষক ব্যতীত কোন সমাজ নেই। সকল মানুষেরই শিক্ষক আছেন। যে সমাজের শিক্ষক যত বেশি উৎকৃষ্ট সে সমাজের মানুষ তত বেশি উৎকৃষ্ট। 


বর্তমান বাস্তবতায় উৎকৃষ্ট শিক্ষকের সংখ্যা অনেকটা রাষ্ট্রীয় মর্যাদার উপর নির্ভরশীল। যে দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে শিক্ষকের সম্মান ও সম্মানি বেশি সে দেশে উৎকৃষ্ট শিক্ষকের সংখ্যা বেশি। যে দেশে উৎকৃষ্ট শিক্ষকের সংখ্যা বেশি সে দেশে উৎকৃষ্ট নাগরিকের সংখ্যা বেশি। উৎকৃষ্ট নাগরিক তৈরির লক্ষ্যে শিক্ষকের সম্মান ও সম্মানি সর্বাধিক নির্ধারণ করা কল্যাণ রাষ্ট্রের দায়িত্ব। শিক্ষকের সার্বিক মর্যাদা তথা সম্মান ও সম্মানি সর্বাধিক হলেই সর্বাধিক যোগ্য লোক শিক্ষক হন। রাষ্ট্রের সর্বত্র ন্যায়-নীতি পরায়ন যোগ্য লোক নিশ্চিত করার পূর্বশর্ত হচ্ছে শিক্ষক হিসেবে সর্বাধিক ন্যায়-নীতি পরায়ন যোগ্য লোক নিশ্চিত করা। কোন রাষ্ট্র যদি তা করতে ব্যর্থ হয় বা অনীহা দেখায় তো সেই রাষ্ট্রের নাগরিকদের সততা, সভ্যতা, যোগ্যতা ও দক্ষতা অনিশ্চিত। তাই শিক্ষকের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হয়। 


সামাজিক বা রাষ্ট্রীয়ভাবে শিক্ষকের মর্যাদা যতই উপরে নির্ধারণ করা হোক না কেন শিক্ষক নিজে উৎকৃষ্ট না হলে তা বজায় রাখা অসম্ভব। শিক্ষক নিজে নিকৃষ্ট হলে মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয়। মর্যাদা বা ঘৃণা মানুষের অন্তর্নিহিত বিষয়। সর্বদা এটির বহিঃপ্রকাশ নাও ঘটতে পারে। শিক্ষক উৎকৃষ্ট হলেই মানুষের কাছে বৃদ্ধি পায় তার প্রকৃত মর্যাদা। যে শিক্ষক যত বেশি উৎকৃষ্ট সে শিক্ষকের প্রকৃত মর্যাদা তত বেশি। দাপট প্রদর্শন ও শ্রদ্ধা অর্জন এক নয়। দাপটে প্রকৃত মর্যাদা নেই, শ্রদ্ধায় প্রকৃত মর্যাদা আছে। যে শিক্ষক তার শিক্ষার্থীকে যত বেশি সুশিক্ষা প্রদান করতে সক্ষম সে শিক্ষক তত বেশি শ্রদ্ধা অর্জন করতে সক্ষম। শিক্ষকের জ্ঞানের গভীরতায় ও দক্ষতার উচ্চতায় বিস্তৃত থাকে শিক্ষার্থীর শ্রদ্ধাবোধ। শিক্ষার্থীর মনে শিক্ষকের একটা চিত্র অঙ্কিত হয়। সেই চিত্রটি যত উত্তম হয় শিক্ষার্থী তত শ্রদ্ধাশীল হয়। শিক্ষকের চিন্তা-চেতনা, চলা-বলা  ও কাজ-কর্মের প্রতিফলন ঘটে শিক্ষার্থীর মনে। শিক্ষক উত্তম চিন্তা ও কর্ম করতে ব্যর্থ হলে উত্তম মানুষ তৈরি করতে ব্যর্থ হন। সমাজ ও রাষ্ট্রে উত্তম মানুষের অভাব হলেই শিক্ষকের মর্যাদার অভাব হয়। উত্তম মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেই শিক্ষকের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। এই উত্তম মানুষ তৈরির দায়িত্ব শিক্ষকের। যিনি শিক্ষক তিনি কোনোভাবেই অবহেলা করতে পারেন না এই দায়িত্বে। কেননা শিক্ষকতা একটি ব্রত। নিয়োগপত্র পেলেই শিক্ষক হওয়া যায় না, শিক্ষক হয়ে উঠতে হয়। 


মো. রহমত উল্লাহ্

সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ 

 rahamot21@gmail.com  

অধ্যক্ষ -কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। 

১৭ জুলাই ২০২১ 

পত্রিকার লিংক


https://www.ittefaq.com.bd/print-edition/practice/276337/%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A6%BE

কভিডকালীন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ > ইত্তেফাক, ৩১ আগস্ট ২০২১

 কভিডকালীন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ

দৈনিক ইত্তেফাক > ৩১ আগস্ট ২০২১

মো. রহমত উল্লাহ্



সুপ্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, তোমরা যারা ২০২১ সালের এসএসসি বা সমমান পরীক্ষা দেওয়ার অপেক্ষায় আছ তাদের জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা। তোমাদের পরীক্ষা নিয়ে শুধু তোমরা নয় আমরা সবাই অনিশ্চয়তায় ছিলাম দীর্ঘদিন ধরে। সম্প্রতি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তোমাদের পরীক্ষার বিষয়ে। তিনি বলেছেন, (ক) কভিড-১৯ পরিস্থিতি অনুকূল হলে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে আগামী নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে সরাসরি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সেক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের আলোকে গ্রুপ ভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ের পরীক্ষা হবে। সেই পরীক্ষায় সময় ও নম্বর হ্রাস করা হবে। প্রতি বিষয়ে ৫০ নম্বর করে পরীক্ষা হবে। সেই ৫০ নম্বরকে আবার ১০০ নম্বরে কনভার্ট করা হবে। 


আবশ্যিক বিষয়সমূহের উপর কোন পরীক্ষা হবে না। তোমাদের জেএসসি বা সমমান পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে আবশ্যিক বিষয়গুলো মূল্যায়ন করা হবে। অর্থাৎ আবশ্যিক বিষয় বাংলা, ইংরেজি, গণিত, আইসিটি ও ধর্ম এর জন্য জেএসসি বা সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর বিবেচনা করা হবে।


অত:পর, ৩টি নৈর্বাচনিক বিষয়ে অনুষ্ঠেয় পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর এবং ৫টি আবশ্যিক বিষয়ের জন্য জেএসসি বা সমমান পরীক্ষার ফলাফল থেকে অর্জিত নম্বর একসঙ্গে সমন্বয় করে মোট/চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণ করা হবে। 


(খ) অতিমারি কভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে সরাসরি পরীক্ষা গ্রহণ সম্ভব না হলে তোমাদের জেএসসি বা সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে আবশ্যিক ৫টি বিষয় মূল্যায়ন করা হবে এবং সেইসাথে গ্রুপ ভিত্তিক নৈর্বাচনিক  ৩টি বিষয়ের   এসাইনমেন্ট কার্যক্রমের মূল্যায়ন সমন্বয় করে মোট/চূড়ান্ত ফলাফল তৈরি করা হবে। 


(গ) কোন অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে পরীক্ষা গ্রহণ করা ও এসাইনমেন্টের মূল্যায়ন বিবেচনা করা সম্ভব না হলে শুধুমাত্র জেএসসি বা সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে আবশ্যিক ৫টি বিষয় মূল্যায়ন করে চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণ করা হবে। 


লক্ষণীয় যে, আবশ্যিক ৫টি বিষয়ের কোন পরীক্ষা বা এসাইনমেন্ট কার্যক্রম হবে না। চতুর্থ বিষয় হিসেবে কোন বিষয় থাকবে না। তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয় পরীক্ষার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে বা এসাইনমেন্টের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে অথবা মূল্যায়নের বাইরে রাখা হবে। 


মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় আরো বলেছেন যে, তোমরা যারা এসাইনমেন্ট কার্যক্রম ভালোভাবে সম্পাদন করবে তারা চূড়ান্ত পরীক্ষায় অবশ্যই ভালো ফলাফল করবে। আশা করি ৩টিমাত্র নৈর্বাচনিক  বিষয়ের ২৪টি এসাইনমেন্ট তোমরা ভালোভাবে সম্পাদন করতে পারবে। এসাইনমেন্টের জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর গুলো খুব ভালভাবে স্টাডি করতে হবে। মনে রাখতে হবে যদি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় তো এই ২৪টি এসাইনমেন্ট থেকেই পরীক্ষায় প্রশ্ন থাকবে। অর্থাৎ ভালোভাবে এসাইনমেন্ট করা মানেই চূড়ান্ত পরীক্ষার ভালো প্রস্তুতি নেওয়া। চূড়ান্ত পরীক্ষায় অন্যান্য বারের মতোই বেশি সংখ্যক প্রশ্ন থাকবে কিন্তু এবার খুবই কম সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। সুতরাং এসাইনমেন্ট গুলো ভালোভাবে করা থাকলে কোন প্রশ্ন আনকমন হবার সম্ভাবনা থাকবে না। নির্ধারিত এসাইনমেন্ট গুলো বারবার স্টাডি করে ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে। বার বার পড়তে হবে মূল বই। মনে রাখতে হবে বিভিন্ন নাম, তারিখ, স্থান, সুত্র, সংজ্ঞা, কোটেশন, বিক্রিয়া, সমীকরণ, বৈজ্ঞানিক নামসহ গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অনলাইনে নিয়ে নিতে হবে শিক্ষকগণের সহযোগিতা। প্রয়োজনে অনলাইনেই সহপাঠীদের সঙ্গে করতে হবে গ্রুপ স্টাডি। ফাঁকি দেওয়া চলবে না কোনোভাবেই।  মনে রেখো, লেখাপড়ায় ফাঁকি দেওয়া মানে কিন্তু নিজেকেই ফাঁকি দেওয়া!  


অতিমারি কোভিড-১৯ এর কারণে যদি আসন্ন পরীক্ষা গ্রহণ সম্ভব না হয় তো তোমাদের এসাইনমেন্ট পেপার গুলোই হয়ে যাবে চূড়ান্ত পরীক্ষার উত্তরপত্র। অর্থাৎ তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ের এসাইনমেন্ট পেপারের উপর প্রাপ্ত নম্বর যুক্ত হবে তোমাদের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফলে। সুতরাং এসাইনমেন্ট পেপার গুলো তৈরি করতে হবে অত্যন্ত যত্নসহকারে। মূল বই পড়ে এমনভাবে  উত্তর লিখতে হবে যেন শিক্ষক বুঝতে পারেন এটি তুমি নিজের মেধা থেকেই লিখেছ। তাতে তোমার নম্বর বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। মনে রেখো, কোথাও থেকে কারো এসাইনমেন্ট পেপার কপি করা উচিত নয়। এটি নীতি-নৈতিকতা বিরোধী অন্যায় ও পাপ কাজ। 


এখন কিন্তু আর সময় বিনষ্ট করার সুযোগ নেই। পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগাতে হবে এসাইনমেন্টের জন্য নির্ধারিত ১২ সপ্তাহ সময়। ভালোর জন্য চেষ্টা করা আর মন্দের জন্য প্রস্তুত থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করার জন্য থাকতে হবে প্রস্তুত। তাই নিজেকে রাখতে হবে সুস্থ ও সবল। কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। অনুশীলন করতে হবে ধর্মীয় বিধিবিধান। নিয়মিত করতে হবে নাওয়া, খাওয়া, বিশ্রাম ও ব্যায়াম। ঠিক রাখতে হবে ঘুমসহ সকল কাজের রুটিন। নিশ্চিত করতে হবে সুস্থ দেহে সুস্থ মন। তবেই সফলতার দিকে এগিয়ে যাবে তোমাদের জীবন।




মো. রহমত উল্লাহ্ 

সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ এবং অধ্যক্ষ -কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। 

----------------



কভিডকালীন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ > ইত্তেফাক, ২৫ আগস্ট ২০২১

 কভিডকালীন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ

দৈনিক ইত্তেফাক, ২৫ আগস্ট ২০২১

মো. রহমত উল্লাহ্



সুপ্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, আশা করি ভালো আছ সবাই। তোমরা যারা ২০২১ সালের উচ্চমাধ্যমিক তথা এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষা দেওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছ তাদের জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা। নিশ্চয়ই তোমরা জেনেছ যে, পরীক্ষার বিষয়ে তোমাদের অপেক্ষার শীঘ্রই অবসান হতে যাচ্ছে। সম্প্রতি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তোমাদের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার বিষয়ে। তিনি বলেছেন, (ক) কভিড-১৯ পরিস্থিতি অনুকূল হলে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে আগামী ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে তোমাদের সরাসরি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সেক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের আলোকে গ্রুপ ভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ের পরীক্ষা হবে। সেই পরীক্ষায় সময় ও নম্বর হ্রাস করা হবে। প্রতি পত্রে ৫০ নম্বর করে পরীক্ষা হবে। সেই ৫০ নম্বরকে আবার ১০০ নম্বরে কনভার্ট করা হবে। 


আবশ্যিক বিষয়সমূহের উপর কোন পরীক্ষা হবে না। তোমাদের জেএসসি বা সমমান এবং এসএসসি বা সমমান এ দুটি পরীক্ষার যৌথ ফলাফলের ভিত্তিতে আবশ্যিক বিষয়গুলো মূল্যায়ন করা হবে। অর্থাৎ আবশ্যিক বাংলা, ইংরেজি, ও আইসিটি এই ৩টি বিষয়ের জন্য জেএসসি বা সমমান এবং এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর যৌথভাবে (কম-বেশি হারে) বিবেচনা করা হবে।


অত:পর, ৩টি নৈর্বাচনিক বিষয়ে অনুষ্ঠেয় পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর এবং ৩টি আবশ্যিক বিষয়ের জন্য জেএসসি বা সমমান ও এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার ফলাফল থেকে অর্জিত নম্বর একসঙ্গে সমন্বয় করে মোট/চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণ করা হবে। 


(খ) অতিমারি কভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে সরাসরি পরীক্ষা গ্রহণ সম্ভব না হলে তোমাদের জেএসসি বা সমমান এবং এসএসসি বা সমমান  পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে আবশ্যিক বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটি এই ৩টি বিষয় মূল্যায়ন করা হবে। সেইসাথে গ্রুপ ভিত্তিক নৈর্বাচনিক  ৩টি বিষয়ের এসাইনমেন্ট কার্যক্রমের মূল্যায়ন সমন্বয় করে মোট/চূড়ান্ত ফলাফল তৈরি করা হবে। 


(গ) কোন অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে পরীক্ষা গ্রহণ করা ও এসাইনমেন্টের মূল্যায়ন বিবেচনা করা সম্ভব না হলে শুধুমাত্র জেএসসি বা সমমান এবং এসএসসি বা সমমান এ দুটি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে আবশ্যিক ৩টি বিষয় মূল্যায়ন করে চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণ করা হবে। 


লক্ষণীয় যে, আবশ্যিক ৩টি বিষয়ের কোন পরীক্ষা বা এসাইনমেন্ট কার্যক্রম হবে না। চতুর্থ বিষয় হিসেবে কোন বিষয় থাকবে না। ৩টি নৈর্বাচনিক বিষয় পরীক্ষার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে বা এসাইনমেন্টের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে অথবা মূল্যায়নের বাইরে রাখা হবে। 


মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় আরো বলেছেন যে, তোমরা যারা এসাইনমেন্ট কার্যক্রম ভালোভাবে সম্পাদন করবে তারা চূড়ান্ত পরীক্ষায় অবশ্যই ভালো ফলাফল করবে। আশা করি ৩টিমাত্র নৈর্বাচনিক  বিষয়ের ৩০টি এসাইনমেন্ট তোমরা ভালোভাবে সম্পাদন করতে পারবে। এসাইনমেন্টের জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর গুলো খুব ভালভাবে স্টাডি করতে হবে। মনে রাখতে হবে যদি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় তো এই ৩০টি এসাইনমেন্ট থেকেই পরীক্ষায় প্রশ্ন থাকবে। অর্থাৎ ভালোভাবে এসাইনমেন্ট করা মানেই চূড়ান্ত পরীক্ষার ভালো প্রস্তুতি নেওয়া। চূড়ান্ত পরীক্ষায় অন্যান্য বারের মতোই বেশি সংখ্যক প্রশ্ন থাকবে কিন্তু এবার খুবই কম সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। সুতরাং এসাইনমেন্ট গুলো ভালোভাবে করা থাকলে কোন প্রশ্ন আনকমন হবার সম্ভাবনা থাকবে না। নির্ধারিত এসাইনমেন্ট গুলো বারবার স্টাডি করে ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে। বার বার পড়তে হবে মূল বই। মনে রাখতে হবে বিভিন্ন নাম, তারিখ, স্থান, সুত্র, সংজ্ঞা, কোটেশন, বিক্রিয়া, সমীকরণ, বৈজ্ঞানিক নামসহ গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অনলাইনে নিয়ে নিতে হবে শিক্ষকগণের সহযোগিতা। প্রয়োজনে অনলাইনেই সহপাঠীদের সঙ্গে করতে হবে গ্রুপ স্টাডি। ফাঁকি দেওয়া চলবে না কোনোভাবেই।  মনে রেখো, লেখাপড়ায় ফাঁকি দেওয়া মানে কিন্তু নিজেকেই ফাঁকি দেওয়া!  


অতিমারি কোভিড-১৯ এর কারণে যদি আসন্ন পরীক্ষা গ্রহণ সম্ভব না হয় তো তোমাদের এসাইনমেন্ট পেপার গুলোই হয়ে যাবে চূড়ান্ত পরীক্ষার উত্তরপত্র। অর্থাৎ ৩টি নৈর্বাচনিক বিষয়ের এসাইনমেন্ট পেপারের উপর প্রাপ্ত নম্বর যুক্ত হবে তোমাদের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফলে। সুতরাং এসাইনমেন্ট পেপার গুলো তৈরি করতে হবে অত্যন্ত যত্নসহকারে। মূল বই পড়ে এমনভাবে  উত্তর লিখতে হবে যেন শিক্ষক বুঝতে পারেন এটি তুমি নিজের মেধা থেকেই লিখেছ। তাতে তোমার নম্বর বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। মনে রেখো, কোথাও থেকে কারো এসাইনমেন্ট পেপার কপি করা উচিত নয়। এটি নীতি-নৈতিকতা বিরোধী অন্যায় ও পাপ কাজ। 


এখন কিন্তু আর সময় বিনষ্ট করার সুযোগ নেই। পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগাতে হবে এসাইনমেন্টের জন্য নির্ধারিত ১৫ সপ্তাহ সময়। ভালোর জন্য চেষ্টা করা আর মন্দের জন্য প্রস্তুত থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করার জন্য থাকতে হবে প্রস্তুত। তাই নিজেকে রাখতে হবে সুস্থ ও সবল। কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। অনুশীলন করতে হবে ধর্মীয় বিধিবিধান। নিয়মিত করতে হবে নাওয়া, খাওয়া, বিশ্রাম ও ব্যায়াম। ঠিক রাখতে হবে ঘুমসহ সকল কাজের রুটিন। নিশ্চিত করতে হবে সুস্থ দেহে সুস্থ মন। তবেই সফলতার দিকে এগিয়ে যাবে তোমাদের জীবন।





মো. রহমত উল্লাহ্ 

সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ এবং অধ্যক্ষ -কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। 

----------------