প্রবন্ধ: উচ্চমাধ্যমিক স্তরে লাখ লাখ ফাঁকা আসন! দৈনিক ইত্তেফাক > ১০ অক্টোবর ২০২০

উচ্চমাধ্যমিক স্তরের লাখ লাখ ফাঁকা আসন

facebook sharing button
twitter sharing button
messenger sharing button
whatsapp sharing button
sharethis sharing button


মো. রহমত উল্লাহ্

একাধিক দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির যোগ্য সাড়ে ৭ হাজার কলেজ ও মাদ্রাসার মধ্যে ১৪৮টি প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য এবার কেউ আবেদন করেনি। কাম্যসংখ্যক আবেদন পায়নি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হবে সহস্রাধিক। এটি নিশ্চয়ই শিক্ষাক্ষেত্রের একটি বড় দুঃসংবাদ! চলতি ২০২০ সালে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫২৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে কলেজ-মাদ্রাসায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য প্রথম ধাপে আবেদন করেছে ১৩ লাখ ৪২ হাজার ৭১৩ জন। এর বিপরীতে ভর্তির জন্য আসন রয়েছে ২১-২২ লাখ। এই হিসাবে এবার একাদশ শ্রেণিতে ফাঁকা থাকবে ৮ লক্ষাধিক আসন! এমনটি যে শুধু এবারই ঘটছে তা কিন্তু নয়। দীর্ঘদিন ধরেই ক্রমবর্ধমান হারে বেড়ে চলেছে এই পরিকল্পনাহীন দুরবস্থা! অপ্রয়োজনীয় আসন কমানোর তাগিদ দিয়ে গত ২০১৬ সালে একই ইস্যুতে যখন আমি লিখেছিলাম তখনো একাদশ শ্রেণিতে ফাঁকা ছিল ৭ লক্ষাধিক আসন। কিন্তু গা করেনি কেউ! ফাঁকা আসন কমানো তো দূরের কথা; বরং বাড়িয়ে অতিরিক্তের ওপর আরো অতিরিক্ত করা হয়েছে ১ লাখ! ফাঁকা আসনের এই হিসাব একটু লম্বা করা হলে দেখা যাবে, এখন যারা দ্বাদশ শ্রেণিতে আছে তাদের সময়েও ফাঁকা ছিল কমবেশি ৮ লাখ আসন, যা এখনো বিদ্যমান। তাহলে দেখা যাচ্ছে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি মিলে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ফাঁকা বা প্রয়োজনের অতিরিক্ত আসন প্রায় ১৬ লাখ! কী অস্বাভাবিক চিত্র!

উচ্চমাধ্যমিক স্তরের লাখ লাখ ফাঁকা আসন

শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা গর্ব করে বলছেন, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আসন সংকট নেই। অথচ প্রয়োজনের অতিরিক্ত এই লাখ লাখ আসন ধরে রাখার জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত যে বিপুলসংখ্যক শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং এদের পেছনে যে ক্রমবর্ধমান হারে মোটা অঙ্কের টাকা প্রতি অর্থবছরে ব্যয় হচ্ছে, তা নিয়ে যেন কারো কোনো মাথাব্যথাই নেই! মোট আসনের এক-তৃতীয়াংশ প্রতি বছর ফাঁকা বা অতিরিক্ত থাকার অর্থ দাঁড়াচ্ছে এ খাতে বার্ষিক মোট ব্যয়ের তিন ভাগের এক ভাগই অপ্রয়োজনীয়। অপরদিকে এ স্তরে বিদ্যমান শিক্ষক-কর্মচারী ও প্রতিষ্ঠানের তিন ভাগের এক ভাগই প্রয়োজনের অতিরিক্ত, যা শিক্ষার এই স্তর জাতীয়করণের চরম অন্তরায়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পরিকল্পনাহীনভাবে সিট-শাখা ও কলেজ-মাদ্রাসা বাড়িয়ে কেন এত এত ফাঁকা আসন বৃদ্ধি করা হয়েছে ও হচ্ছে? এই পরিস্থিতিতে দেশের সব উচ্চমাধ্যমিক প্রতিষ্ঠান কাম্য শিক্ষার্থী না পাওয়াটাই তো স্বাভাবিক। প্রশাসন একদিকে লাখ লাখ অতিরিক্ত আসন সৃষ্টি করবে এবং অপর দিকে দেশের প্রায় সব কলেজ-মাদ্রাসায় কাম্য শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য তাগাদা দেবে, তা কী করে হয়?

একটা উদাহরণ দিই। ঢাকা শহরের মোহাম্মদপুরে তো বিশেষায়িত ও এমপিওভুক্ত কলেজ-মাদ্রাসার কোনো অভাব ছিল না। অথচ এই মোহাম্মদপুরেই অনুমোদন দেওয়া হলো মাইল স্টোন ও ক্যাব্রিয়ান কলেজের শাখাসহ আরো অনেক নতুন প্রতিষ্ঠান। এত এত সরকারি কলেজ, মডেল কলেজ, মিশন কলেজ, স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বিশেষ কলেজ, প্রাইভেট কলেজ, কারিগরি কলেজ ও মাদ্রাসা যে এলাকায় থাকবে, সে এলাকায় এমপিওভুক্ত কলেজ-মাদ্রাসায় তো সিট ফাঁকা থাকবেই। কাম্য শিক্ষার্থীর অভাব থাকবেই। এত গেল রাজধানী শহরের কথা। সারা দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরের চিত্র কমবেশি একই রকম। প্রায় উপজেলাতেই বিদ্যমান উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের ডজনাধিক কলেজ-মাদ্রাসা।

অনিয়মের প্রতিযোগিতায় নেমে অপ্রয়োজনীয় আসন ও কলেজ-মাদ্রাসা বাড়ানোর ফলে প্রতি বছর উচ্চমাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের যে লাখ লাখ সিট ফাঁকা থাকছে এর দায় নিশ্চয়ই শিক্ষকদের নয়। যারা অযৌক্তিকভাবে একই এলাকায় এত এত কলেজ-মাদ্রাসার অনুমোদন নিলেন ও দিলেন তারা কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না এর দায়। অথচ আজ মানসম্মান বিকিয়ে শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়েও পাওয়া পাচ্ছে না কাম্য শিক্ষার্থী। সুস্থমনে পাঠদানের স্থলে চাকরি হারানোর বা বেতন না পাওয়ার ভয়ে শিক্ষক থাকবেন তটস্থ। এভাবে কোনো দিনই নিশ্চিত হবে না সুশিক্ষা। এক্ষেত্রে জরুরি প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন ও এর আপসহীন বাস্তবায়ন।

লেখক :অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা




https://www.ittefaq.com.bd/print-edition/opinion/189589/%E0%A6%89%E0%A6%9A%E0%A7%8D%E0%A6%9A%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A7%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%96-%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%96-%E0%A6%AB%E0%A6%BE%E0%A6%81%E0%A6%95%E0%A6%BE-%E0%A6%86%E0%A6%B8%E0%A6%A8 

Previous Post
Next Post

About Author

0 মন্তব্য(গুলি):