মোটেও কঠিন নয় শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ
মো. রহমত উল্লাহ্ | ডিসেম্বর ১৩, ২০১৫ | দৈনিক শিক্ষা.কম। মতামত।
গত ১২ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখ শুক্রবারে দৈনিক শিক্ষাডটকমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে “এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা অন্য সরকারি চাকুরেদের মতো গেজেট জারি হলেই নতুন কাঠামোয় বেতন পাবেন না। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আয়-ব্যয় পর্যালোচনা করা এবং আয়ের অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা নেওয়ার পথ বের করতে সরকার একটি কমিটি গঠন করবে। ওই কমিটির সুপারিশ কার্যকর করে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকদের নতুন বেতন কাঠামোতে বেতন দেওয়া হবে। গত ১ জুলাই থেকে তত দিন পর্যন্ত বর্ধিত বেতন বকেয়া হিসেবে পাবেন তাঁরা।”
সরকারের এইরূপ সিদ্ধান্তে গ্রাম ও শহরের শিক্ষকগণ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে। এতে গ্রামের শিক্ষকগণ সম্মত হবেন, কারণ তারা প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে বেতন-ভাতা বাবদ তারা তেমন কিছুই পাচ্ছেন না; আর শহরের কিছু তথাকথিত ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রাগব বোয়াল শিক্ষকগণ এতে দ্বিমত করবেন, কারণ তারা অনেক বেশি টাকা প্রতিষ্ঠান থেকে নেন। এই ভাগাভাগির ফলশ্রুতিতে সরকার বেসরকারি শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ তীব্র আন্দোলনের মুখে পড়ার সম্ভাবনা মুক্ত থেকে যা ইচ্ছে তাই করতে পারবে এমন ধারনা করছেন অনেকেই। এমন ধারনা যে একেবারে অবাস্তব তাও কিন্তু নয়। কারণ বেসরকারি শিক্ষক নেতাদের অধিকাংশই আছেন শহরের ছাত্রাধিক্য বিশিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। তারা মাসে কয়েকজন সরকারি শিক্ষকের চেয়েও বেশি আর্থিক সুবিধা ভোগ করে থাকেন অনেকেই। তাছাড়া নিজে বড় নেতা হবার জন্য বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত আমাদের অধিকাংশ নেতারা কে কখন কোন ধরনের সরকারি সুবিধা / পদবী পেয়ে রণেভঙ্গ দিয়ে গাড়ি হাকাবেন তারতো কোন ঠিক ঠিকানা নেই।
নিকট ও দূর অতীতের শিক্ষক নেতাদের সাংগঠিক কৌশল, আন্দোলনের ধরন এবং সেই নেতৃত্বের সুবাদে বৈধ / অবৈধ সুবিধা ভোগ দখলের চিত্র পর্যালোচনা করলেই তা পরিস্কার দেখাযায়। তাই আমাদের ঠকানো তেমন কঠিন হয়নি, হবেনা কোন সরকারের পক্ষেই।
বর্তমান সরকার যদি এখন শরের কিছু শিক্ষক ও নেতাদের কথায় গ্রামের প্রায় নব্বই ভাগ শিক্ষকদেরকে ঠকানোর অপকৌশল নেয় তো মারাত্মক ভুল করবে। কারণ বর্তমান সরকারের বিশেষ করে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রদত্ত আশ্বাসে শিক্ষকগণ যেভাবে ভরসা করে বুক বেধে আছেন তাতে আঘাত করা হলে নিশ্চিত নিরবে প্রতিঘাত আসবে আসন্ন সকল নির্বাচনে এবং শিক্ষানীতিসহ সরকারের অনেক কর্মসুচি বাস্তবায়নে।
তাই বলছি- সরকারি বেসরকারি সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি শ্রেণি ও অবস্থা ভেদে ৩ শ টাকা থেকে ৫ শ টাকা ধার্য করে অনলাইনের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে নিয়ে সকল বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীর চাকুরি জাতীয়করণ করে দেওয়া হোক। এখন দেশের মানুষের আয় বেড়েছে। এই পরিমান টাকা পরিশোধ করা প্রায় সকল শিক্ষার্থীর পক্ষেই সম্ভব। যারা আসলেই হত দরিদ্র তাদের ফ্রি / হাফ-ফ্রি দেওয়া যেতে পারে। যে ছাত্রছাত্রী শহরে থেকে খেয়ে পরে সরকারি স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারে সে মাসে ২০ টাকার বেশি টিউশন ফি দিতে পারেনা এটি নাটক ছাড়া আর কী?
যে শিক্ষকগণ করযোগ্য আয় করেন (বেতন ও অন্যান খাতে) তারা বেসরকারি বলে সরকারকে আয়কর দিতে পারেনা, এমনকি রিটার্নও জমা দিতে পারেনা এটিও নাটক ছাড়া আর কী?
বর্তমানে হাতেগুনা কয়েকজন শিক্ষার্থী ছাড়া সবাইতো লেখাপড়া করছে বেসরকারি স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারাতো ভর্তিই হচ্ছে অনেক টাকা দিয়ে, আর মাসে মাসে হাজার হাজার টাকা দিচ্ছে টিউশন ফি। তাছাড়াও পরিশোধ করছে আরো শত রকম ফি! এতে কি শিক্ষা বাণিজ্য হচ্ছে না? এতে কি অসার্বজনিন হচ্ছে না আমাদের শিক্ষা? তাহলে সারাদেশের শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ করে আরো অধিক যোগ্যদেরকে শিক্ষকতায় আগ্রহী করে জাতীয়ভাবে শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য সকল শিক্ষার্থীর টিউশন ফি সামান্য বাড়িয়ে শ্রেণি ও অবস্থা ভেদে একই মাত্রায় ধার্য করা হলে শিক্ষা গেলো, শিক্ষা গেলো, বলে হায় হায় করার বা সমালোচনা করার অথবা আন্দোলন করার কোন উচিত কারণ থাকবে কি? বাস্তবে অধিকাংশ মানুষ এখন শিক্ষা ও চিকিতসা খাতে টাকা ব্যয় করতে সক্ষম এবং অকৃপন। গ্রামের ছেলেমেয়েরাও এখন দৈনিক ২০-৩০ টাকা খরচ করে চিপস / এনার্জি ডিংস জাতীয় খাবার খেয়ে; কিছু ব্যতীক্রম ব্যতীত। ছাই দিয়ে এখন আর দাত মাঝেনা কেউ। মোবাইল ফোন এখন ভিক্ষুক সহ সবার হাতে হাতে। গ্রামেও তৈরি হয়েছে প্রাইভেট কেজি স্কুল। সেখানেও অভাব হয়না শিক্ষার্থীর। শহরের ছেলেমেয়েদের মত গ্রামের অনেকেই ইদানিং যেতে চায়না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
এমতাবস্থায় সরকারি বেসরকারি সকল শিক্ষার্থী একটি যুক্তিযুক্ত টিউশন ফি এবং সরকারি বেসরকারি সকল শিক্ষক আয়কর রিটার্ন দাখিল করে সরকারের আয় বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখলে আমাদের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ করে সারা দেশে একই মানের শিক্ষা নিশ্চিত করা মোটেও কঠিন বিষয় নয়।
http://www.dainikshiksha.com/%E0%A6%AE%E0%A7%8B%E0%A6…/17974
মো. রহমত উল্লাহ্: অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা।
0 মন্তব্য(গুলি):