শিক্ষক বাছাইয়ে শিথিলতা কাম্য নয়



পত্রিকার লিংক

শিক্ষক বাছাইয়ে শিথিলতা কাম্য নয় 

মো. রহমত উল্লাহ্

দৈনিক বাংলা, ১২ জুন ২০২৫

>বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের আসন্ন বিজ্ঞপ্তিতে বয়সের কোন উর্ধ্বসীমা থাকবে না বলে বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে জানা যাচ্ছে। জানা যায়, নিবন্ধনধারী হলে অধিক বয়স্করাও বেসরকারি শিক্ষক হতে পারবেন। অর্থাৎ সরকারি ও অন্যান্য চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নির্ধারিত বয়সসীমা অতিক্রম করলেও বেসরকারি শিক্ষকতায় প্রবেশ করা যাবে। অপরদিকে আরো একটি বিধান বিদ্যমান যে, বেসরকারি শিক্ষক হবার শিক্ষাগত যোগ্যতায় একটি তৃতীয় বিভাগ বা শ্রেণি গ্রহণযোগ্য হবে। যদিও সরকারি এমনকি অনেক প্রাইভেট কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতায় কোন তৃতীয় বিভাগ বা শ্রেণি বা সমমান গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের নিয়োগের বাছাই প্রক্রিয়াও উন্নত হয় এবং অধিক মেধাবীরা নির্বাচিত হয়। অথচ ওইসব প্রথম ও দ্বিতীয় বিভাগ বা শ্রেণিধারীদের তৈরি করার দায়িত্ব শিক্ষকদের! কী অদ্ভুত! তুলনামূলক কম যোগ্য শিক্ষকরা তৈরি করবেন বেশি যোগ্য নাগরিক! 


নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা, বয়স সীমা ও বাছাই প্রক্রিয়া অন্যদের তুলনায় বেসরকারি শিক্ষকদের শিথিল করা হলে এর অর্থ এমন দাঁড়ায় না যে বেসরকারি শিক্ষক তুলনামূলক কম যোগ্য হলেও চলে? এতে কি তাদের মান ও মর্যাদা হ্রাস পায় না? দেশের ৯৫ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থীদের পাঠদানকারী বেসরকারি শিক্ষকদের অধিক যোগ্য হওয়া কি অধিক গুরুত্বপূর্ণ নয়? তারা তো আমাদের সন্তানদেরই শিক্ষক হন। তারা অধিক যোগ্য হলেই তো আমাদের সন্তানরা অধিক যোগ্য হবার সম্ভাবনা অধিক থাকে। সাধারণত যে দেশের শিক্ষক যত বেশি যোগ্য হয় সে দেশের নাগরিক তত বেশি যোগ্য হয়। আমাদের শিক্ষকগণ তুলনামূলক কম যোগ্য হলে নাগরিকগণ তুলনামূলক অধিক যোগ্য হবেন কীভাবে? *একজন কম যোগ্য শিক্ষক তো সারা শিক্ষকতা জীবনে তৈরি করেন অগণিত কম যোগ্য নাগরিক! দ্রুত বেকার সমস্যার সমাধান ও শিক্ষক পদের শূন্যতা পূরণের লক্ষ্যে যদি বিভিন্ন দিক ছাড় দেওয়া হয় এবং এতে তুলনামূলক কম যোগ্যরা নিয়োগ প্রাপ্ত হন তো তারা কিন্তু থেকে যাবে দীর্ঘদিন। অর্থাৎ নিকট ভবিষ্যতে চাইলেও এ সকল পদে আর নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে না অধিক যোগ্য শিক্ষক।* 


শিক্ষক পদে বর্তমানে অধিক যোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা তো মোটেও কম নয়; বরং শূন্য পদের তুলনায় অনেক অনেক বেশি। গত ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনে আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ১৮ লাখ ৬৫ হাজার। অথচ তখন পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তিতে শূন্য পদের সংখ্যা ছিল ৯৬ হাজার ৭৩৬ টি। তাহলে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ অন্যান্য বিষয়ে এত শিথিলতা বলবৎ রাখার প্রয়োজন কী? যারা যত বেশি কঠিন পরীক্ষা দিয়ে ভালো রেজাল্ট করে নির্বাচিত হন সাধারণত তারা তত বেশি মূল্যায়িত হন, মর্যাদাবান হন। এক্ষেত্রে কেউ যদি এমন যুক্তি খাড়া করতে চান যে, তুলনামূলক কম যোগ্যদের আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হলেও অধিক যোগ্যরাই নির্বাচিত হবেন। সুতরাং তাদের আবেদন করার সুযোগ দিলে অসুবিধা নেই। এমন যুক্তি কিন্তু সামরিক/ বেসামরিক কর্মকর্তা ও সরকারি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও দেওয়া সম্ভব, কিন্তু সেখানে আমরা দিচ্ছি না! অর্থাৎ সরকারি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা, বয়স সীমা ও বাছাই প্রক্রিয়া ততটা শিথিল করা হচ্ছে না। (সেখানেও বাছাই কালে ডেমো ক্লাস দেখা উচিত।) তারাও কিন্তু আমাদের সন্তানদেরই পাঠদান করেন। সকল সরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা কিন্তু বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের তুলনায় অগ্রগামী নয়। অথচ সরকারি শিক্ষকদের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা ও মর্যাদা বেসরকারি শিক্ষকদের তুলনায় অনেক বেশি। 


বেসরকারি শিক্ষকদের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা সামান্য বৃদ্ধি করা হলে আরো অনেক বেশি যোগ্য প্রার্থী বেসরকারি শিক্ষক হতে আগ্রহী হবেন। সেটি করা খুবই জরুরি। তা না করে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা, বয়সসীমা ও বাছাই প্রক্রিয়া সরকারি শিক্ষক নিয়োগের তুলনায় অহেতুক শিথিল রাখার/করার ফলে এমন প্রমাণ থেকে যাচ্ছে না যে সরকারিদের তুলনায় বেসরকারি শিক্ষকগণ কম গুরুত্বপূর্ণ, কম যোগ্য ও কম মর্যাদাবান! তাই তারা সরকারিদের তুলনায় আর্থিক সুযোগ-সুবিধা ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা কম পাবেন এটাই স্বাভাবিক! এমনকি ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির জন্য বেসরকারি শিক্ষকগণ দাবি-দাওয়া করতে গেলেও বারবার এ কথা তুলে ধরা হয়, তুলে ধরা হবে এবং বঞ্চিত করা হবে। বেসরকারি শিক্ষকগণ জোর গলায় বলতে পারেন না, পারবেন না যে, আমরাও সরকারিদের মত সমান যোগ্যদের, সমান বয়সীদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে আবেদন করে তেমন বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছি। তাই আমাদের সুযোগ-সুবিধা ও মর্যাদা তাদের সমান হতেই হবে। 


এমতাবস্থায় অধিক যোগ্য প্রার্থীদের সোচ্চার হওয়া আবশ্যক যে, *সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগের অনুরূপ শিক্ষাগত যোগ্যতা, বয়স সীমা ও বাছাই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বেসরকারি শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া হোক।* অর্থাৎ শূন্য পদের বিপরীতে সরাসরি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে উত্তম বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উত্তম প্রার্থী বাছাই করে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হোক। বর্তমানে নিবন্ধনধারী অধিক যোগ্যদের নিয়োগ দিয়ে নিবন্ধন প্রক্রিয়া থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসা হোক। নিবন্ধনধারী সবাইকেই যদি নিয়োগ দিতে হয় তাহলে এটিকে নিবন্ধন পরীক্ষা না বলে নিয়োগ পরীক্ষা বলা ও কার্যকর করা অধিক যুক্তিযুক্ত নয় কি? তুলনামূলক কম নম্বর প্রাপ্ত নিবন্ধন ধারীরাও নিয়োগের দাবিদার হয়, নিয়োগের জন্য সোচ্চার হয়, বয়সের শিথিলতা দাবি করে, অশান্তি তৈরি করে। অথচ নিয়োগ পরীক্ষায়/ প্রক্রিয়ায় কম নম্বর পেয়ে বাদ পড়ে যাওয়ারা আর নিয়োগের দাবিদার হতে পারে না, বয়সের শিথিলতা দাবি করতে পারে না, অশান্তি তৈরি করতে পারে না। 


অপরদিকে একবার নিবন্ধন পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া, আবেদন নেওয়া, পরীক্ষা নেওয়া, তালিকা করা, সনদ দেওয়া এবং পরবর্তীতে আবার নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া, বাছাই করা, তালিকা করা, নিয়োগ করা ইত্যাদি নিয়োগ কর্তৃপক্ষ ও নিয়োগ প্রার্থী উভয়ের জন্যই দ্বিগুণ কষ্টসাধ্য ও সময় সাপেক্ষ। তদুপরি নিয়োগ প্রার্থীর জন্য দ্বিগুণ ব্যয় সাপেক্ষ। অধিক সংখ্যক শূন্য পদে নিয়োগ প্রার্থীদের বাছাই কেন্দ্রীয়ভাবে দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব না হলে জেলা প্রশাসকগণের দায়িত্বে ঐ জেলার সরকারি স্কুল-কলেজের সুযোগ্য শিক্ষকগণের সহযোগিতা নিয়ে সারাদেশে একই প্রশ্নে ও প্রক্রিয়ায় বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের বাছাই দ্রুত সম্পাদন করা সম্ভব। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর তো গতবারও ১৩,০৯,৪৬১ জন আবেদনকারী থেকে ৩২,৫৭৭ জন নিয়োগের বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে।


কিছুদিন পরপর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ করা হলে বারবার ফ্রেশ ক্যান্ডিডেট পাওয়া যাবে। একজন ইয়ং এনার্জিটিক মেধাবী শিক্ষার্থী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেলে আধুনিক প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে তৈরি করতে ও পূর্ণ উদ্যমে দীর্ঘদিন সফল পাঠদান করতে যতটা সক্ষম হবে, একজন অধিক বয়স্ক লোক নিয়োগ পেলে ততটা সক্ষম না হওয়াই স্বাভাবিক। ব্যতিক্রম নগণ্য। তাই আলোচিত বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে অধিক যুক্তিযুক্ত উন্নত নীতিমালা প্রণয়ন করে ঢেলে সাজানো উচিত সকল শিক্ষক নিয়োগের বাছাই প্রক্রিয়া। মূল্যায়নে বিবেচনা করা উচিত প্রার্থীর শিক্ষা জীবনের কর্মকাণ্ড ও ডেমো ক্লাসের মান। *দ্রুত দূর করা উচিত একই দায়িত্ব-কর্তব্যে নিয়োজিত সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, বয়স সীমা, বাছাই প্রক্রিয়া এবং আর্থিক সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত সকল বৈষম্য।* <


লেখক: শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও কলামিস্ট 

Email - rahamot21@gmail.com


পত্রিকার লিংক: 

https://epaper.dainikbangla.com.bd/

এনটিআরসিএ শিক্ষক নিয়োগ: আবেদনের সময় যেসব বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে

 


পত্রিকার লিংক

এনটিআরসিএ শিক্ষক নিয়োগ:

আবেদনের সময় যেসব বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে

মো. রহমত উল্লাহ্ 

প্রথম আলো > ২৭ জুন ২০২৫

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) অধীন এমপিওভুক্ত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি ও ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১ লাখ ৮২২ জন শিক্ষক নিয়োগে আবেদন শুরু হয়েছে। আবেদন করা যাবে আগামী ১৩ জুলাই পর্যন্ত।

বিপুলসংখ্যক বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাঁরা এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হতে আগ্রহী, তাঁদের উচিত বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান–সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য জেনেবুঝে বাস্তবতার আলোকে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা। কেননা, অতি আবেগতাড়িত হয়ে বা অন্য চাকরি না পেয়ে অথবা ভিন্ন কোনো কারণে সবকিছু না জেনে না বুঝে বেসরকারি শিক্ষক হয়ে নিজের কর্মের ওপর সন্তুষ্ট থাকতে না পারলে ব্যক্তিগত সফলতা অর্জন এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ সাধন মোটেও সম্ভব নয়।

ভিন্ন ভিন্ন ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত প্রতিটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পৃথক, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি পদ সম্পূর্ণ পৃথক, চাকরির আবেদনের চয়েস লিস্টের প্রতিটি চয়েস পৃথক। পদ শূন্য থাকলে নিজের যোগ্যতা ও ইচ্ছা অনুসারে বাড়ির পাশে বা দূরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদন করা যায়। এ ক্ষেত্রে একজন প্রার্থী তাঁর পছন্দের ক্রমানুসারে অনেকগুলো (ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি অনুসারে ৪০টি) প্রতিষ্ঠানে চয়েস দিয়ে স্বেচ্ছায় আবেদন করতে পারেন। পছন্দের তালিকার যেকোনো একটিতে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ পেতে পারেন। কর্তৃপক্ষ প্রার্থীর পছন্দের তালিকার বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠানে কাউকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করতে পারেন না।

এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে সরাসরি বদলি হওয়ার বা প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ এখনো অত্যন্ত সীমিত। তাই দ্রুত বদলি হওয়ার মানসিকতা পরিহার করে যেখানে নিয়োগ পাবেন, সেখানেই দীর্ঘদিন চাকরি করবেন, এমন মানসিকতা নিয়ে আবেদন করা উচিত। কেউ কোনো দিন প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ পেলেও সেটি তাঁর পছন্দমতো না–ও হতে পারে। আবারও অনেকগুলো চয়েস দিয়ে কোনো একটিতে সুযোগ পেতে পারেন। তখনো তাঁকে অন্য একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই যেতে হবে এবং সেটির ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির অধীন হয়েই চাকরি করতে হবে।

মোট শূন্য পদের বিপরীতে মোট প্রার্থীসংখ্যা যা–ই থাকুক না কেন ভালো, সচ্ছল, সুবিধাজনক প্রতিষ্ঠানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক। নিবন্ধন পরীক্ষায় বেশি নম্বরপ্রাপ্ত হয়ে থাকলেও ভালো প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পেতে চাইলে একাধিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করার প্রয়োজন হবে। যাঁদের নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর তুলনামূলক কম, তাঁদের আরও বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করার প্রয়োজন হবে। সে ক্ষেত্রে নিজের বাড়ির আশপাশে অবস্থিত একাধিক প্রতিষ্ঠানে এবং অনেক দূরদূরান্তে অবস্থিত একাধিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারেন।

যে প্রতিষ্ঠানেই আবেদন করুন না কেন; ধরে নিতে হবে ওই প্রতিষ্ঠানেই আপনার চাকরি হবে এবং আপনি অবশ্যই সেখানে চাকরি করতে যাবেন। নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর বেশি বা মেরিট পজিশন আগে না থাকলে বেশি ভালো বা সুবিধাজনক প্রতিষ্ঠানে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে। সে ক্ষেত্রে অধিকসংখ্যক আবেদন করার প্রয়োজন হতে পারে।

নিজের এলাকায় ও কম দূরে অবস্থিত যাতায়াত সুবিধা আছে, এমন প্রতিষ্ঠানগুলোকে পছন্দের ক্ষেত্রে যথাসম্ভব অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিশেষ করে যাঁদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যা আছে এবং যাঁরা নারী প্রার্থী, তাঁদের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিজের বাড়িতে থেকে কম বেতন পেলেও টিকে থাকা যায় এবং অন্যান্য অনেক সুবিধা পাওয়া যায়।

প্রতিষ্ঠানের সুনাম, অবস্থা, অবস্থান, কর্মপরিবেশ, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, আর্থিক সচ্ছলতা ও শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি সন্তোষজনক কি না, তা জেনে নেওয়া। শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম থাকলে প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ-সুবিধার পরিমাণও সাধারণত কম থাকে।

আবেদনের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত পদটি এমপিওভুক্ত শূন্য পদ কি না, এ পদের বিপরীতে কাম্য শিক্ষার্থী আছে কি না, কোনো মামলা–মোকদ্দমা আছে কি না, এমপিওভুক্ত হবে কি না, হলে কত দিন লাগতে পারে, তা নিশ্চিত হওয়া।

কোনো কারণে নন-এমপিও পদে আবেদন করতে চাইলে তা জেনেবুঝেই করা। প্রতিষ্ঠানের সচ্ছলতা নিশ্চিত হওয়া এবং প্রতিষ্ঠান থেকে সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় কি না, তা নিশ্চিত হওয়া। কারণ, সরকারি আদেশ থাকার পরও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান থেকেই নন-এমপিও শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সমপরিমাণ আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হয় না।

দূরবর্তী কোনো প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে হলে সেই প্রতিষ্ঠান ও এলাকা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে, শুনে, দেখে নেওয়া। তদুপরি সেখানে যাতায়াত সুবিধা কেমন, থাকা-খাওয়ার সুবিধা আছে কি না, নিরাপত্তাব্যবস্থা কেমন, ছুটিতে বা প্রয়োজনে নিজের আপনজনের কাছে যাওয়া-আসা করা যাবে কি না, যেসব অসুবিধা আছে, সেগুলো সহজে মেনে নেওয়া যাবে কি না, তা–ও বিবেচনা করা। প্রার্থী মহিলা হলে এসব বিষয় অধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখা।

যে পদে আবেদন করবেন সেই পদের মর্যাদা কতটুকু, সরকারি বেতন স্কেল, বর্তমান মূল বেতন, অন্যান্য ভাতা, মাসিক কর্তনের পরিমাণ, বিভিন্ন বোনাসের পরিমাণ, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, পদোন্নতির সুযোগ আছে কি না, অবসরকালে কী পরিমাণ আর্থিক সুবিধা পাওয়া যেতে পারে এবং অন্যান্য পেশার তুলনায় সুযোগ-সুবিধা কতটুকু কমবেশি ইত্যাদি জেনে নেওয়া।

একাধিক স্তরবিশিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত পদে যোগদান করলে কোন কোন স্তরে ক্লাস নিতে হবে, তা জেনে নেওয়া এবং সেই স্তরে ক্লাস নেওয়ার জন্য নিজের ইচ্ছা ও যোগ্যতা আছে কি না বা থাকবে কি না তা ভেবে নেওয়া।

আপনার আইসিটি দক্ষতা আছে কি না বা আইসিটি দক্ষতা অর্জনে সক্ষমতা আছে কি না এবং দক্ষতা প্রয়োগ করে পাঠদান করতে আগ্রহী কি না, তা ভেবে নেওয়া। কেননা, এখনই পাঠদানে এআইয়ের ব্যবহার শুরু হয়েছে।

বর্তমানে এমপিওর মাধ্যমে সরকার মাধ্যমিক স্তরের একজন প্রশিক্ষণবিহীন সহকারী শিক্ষককে মূল বেতন দেয় ১২ হাজার ৫০০ টাকা। উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের একজন প্রভাষককে প্রাথমিক মূল বেতন দেওয়া হয় ২২ হাজার টাকা। এ ছাড়া সব স্তরের শিক্ষকদের বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট অনধিক ৫ শতাংশ, বাড়ি ভাড়া ভাতা এক হাজার টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা, উৎসব ভাতা ৫০ শতাংশ, বাংলা নববর্ষ ভাতা ২০ শতাংশ দেওয়া হয়। অপর দিকে এই মূল বেতন থেকে অবসর ও কল্যাণ তহবিলের জন্য ১০ শতাংশ টাকা জমা রাখা হয়। নিয়মিত ২৫ বা ততোধিক বছর চাকরি করে অবসরে গেলে কল্যাণ ও অবসর তহবিল থেকে সর্বশেষ মূল বেতনের প্রায় ১০০ গুণ টাকা পাওয়ার বিধান বিদ্যমান। তবে তা পেতে অনেক বছর অপেক্ষা করতে হয়। 

লেখক: অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা

27/06/2025


পত্রিকার লিংক: 

https://epaper.prothomalo.com/Home/MIndex?eid=1&edate=27/06/2025&sedId=1&pgid=485683&isProductPanel=true&MagazineEdID=0&MagEdDate=27/06/2025&isIssueRefresh=False&uemail=49c66a16a5 


https://epaper.prothomalo.com/Home/MIndex?eid=1&edate=27/06/2025&sedId=1&pgid=485682&isProductPanel=true&MagazineEdID=0&MagEdDate=27/06/2025&isIssueRefresh=False&uemail=49c66a16a5 


শিক্ষাবর্তার লিংক: 

https://shikshabarta.com/223021/