বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি। ২৩ আগস্ট ২০২২

বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি

আমাদের বার্তা, ২৩ আগস্ট ২০২২

মো. রহমত উল্লাহ্


'দুই ভাগে হোক বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ' শিরোনামে গত বছরের ১৪ আগস্টে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে আমি লিখেছিলাম, 'বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির দাবিটি তাদের প্রয়োজনের দিক থেকে খুবই মানবিক ও যৌক্তিক। দীর্ঘদিন ধরে এই দাবিতে সোচ্চার বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষকরা। এ কারণেই একাধিক এমপিও নীতিমালায় বদলির প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে একটি সুষ্ঠু নীতিমালা তৈরির মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি বাস্তবায়ন করার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু, কেন জানি- দীর্ঘ দিনেও তা সম্ভব হচ্ছে না বা করা হচ্ছে না! যতক্ষণ পর্যন্ত বদলির নীতিমালা প্রনয়ণ ও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না - ততক্ষণ পর্যন্ত অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া উচিত। কেননা, তারা আগে নিয়োগ পেয়েছেন এবং অনেকদিন ধরে কষ্ট করে দূরে চাকরি করছেন। কোন ভাবেই নতুন নিয়োগ প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামানো উচিত নয় বদলিপ্রত্যাশী বিদ্যমান এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের। 


বর্তমান নিয়োগ প্রক্রিয়াকে বিভক্ত করতে হবে দুইভাগে। প্রতিবছর বা প্রতিবার পৃথক ভাবে সম্পন্ন করতে হবে দু'টি নিয়োগ প্রক্রিয়া। প্রথমে প্রদান করতে হবে শুধুমাত্র এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের জন্য বিশেষ বিজ্ঞপ্তি। এক্ষেত্রে কোন নতুন প্রার্থী আবেদন করতে পারবেন না। কেবলমাত্র বিদ্যমান এমপিওভুক্ত নিবন্ধিত শিক্ষকরা আবেদন করতে পারবেন। এদের পুনঃনিয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন সম্পন্ন করার পরবর্তীতে চিহ্নিত করতে হবে শূন্য পদ। সেই শূন্য পদে নতুনদের নিয়োগের জন্য প্রকাশ করতে হবে গণবিজ্ঞপ্তি। সেক্ষেত্রে কোন এমপিওভুক্ত শিক্ষক আবেদন করতে পারবেন না। শুধুমাত্র নিবন্ধিত প্রার্থীরা আবেদন করবেন। তাদের নিয়োগের মাধ্যমে বিদ্যমান শূন্যপদসমূহ পূর্ণ করা সম্ভব হবে। এভাবে প্রতিবছর বা প্রতিবার বিদ্যমান এমপিওভুক্ত নিবন্ধিত শিক্ষকদের পুনঃনিয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের জন্য একটি এবং শুধু নিবন্ধিত প্রার্থীদের নতুন নিয়োগের জন্য একটি অর্থাৎ মোট দু'টি নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হলে অবশ্যই অনেকাংশে পূর্ণ হবে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বদলিপ্রত্যাশী লাখ লাখ শিক্ষকের দাবি। সেই সাথে নিয়োগ পাবেন অধিক সংখ্যক নতুন প্রার্থী এবং পূর্ণ হবে অধিক শূন্য পদ।'


যেহেতু বিদ্যমান বিধিবিধানের আওতায় বেসরকারি শিক্ষকদের সরাসরি বদলি করা সম্ভব নয় এবং যেহেতু বদলির জন্য নতুন নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে এখনো সরকারি কোন কমিটি গঠন করা হয়নি, সেহেতু তাদের সরাসরি বদলির সুযোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা অনিশ্চিত। তাই মন্দের ভালো হিসেবে উল্লেখিত লেখায় উত্থাপিত প্রস্তাবের সমর্থনেই ঐক্যবদ্ধ বদলিপ্রত্যাশী বেসরকারি শিক্ষকরা। সরাসরি বদলির বিকল্প পন্থাসমূহের মধ্যে এটিকেই সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মনে করেন তারা। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অন্যান্য বিবেকবান মানুষও অধিক যুক্তিযুক্ত মনে করেন এই প্রস্তাব। উল্লেখিত প্রক্রিয়ায় দু'টি পৃথক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে প্রথমে এমপিওভুক্ত নিবন্ধনধারী শিক্ষকদের এবং পরবর্তীতে শুধুমাত্র নিবন্ধনধারী প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে বলে 'ইনডেক্সধারীদের নিয়োগ আলাদা প্রক্রিয়ায়' শিরোনামে একটি সংবাদ গত ২২ আগস্ট ২০২২ তারিখের দৈনিক শিক্ষায় প্রকাশিত হলে বদলি প্রত্যাশীরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু গত ১২ অক্টোবর ২০২২ তারিখের দৈনিক শিক্ষায় প্রকাশিত অপর একটি প্রতিবেদনে চরমভাবে আশাহত হয়েছেন বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষকরা। যার শিরোনাম- 'প্রস্তাবেই আটকা ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের আলাদা নিয়োগ'। জানা যায়, কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সহজ ও প্রাপ্য সুযোগটিও পাচ্ছেন না বদলিপ্রত্যাশীরা। এদিকে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের জন্য চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আয়োজন চলছে। তাতে প্রতীয়মান হচ্ছে, এই গণবিজ্ঞপ্তির পূর্বে শুধুমাত্র ইনডেক্সধারী নিবন্ধিত শিক্ষকদের জন্য পৃথকভাবে বিশেষ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সম্ভাবনা নেই। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষকগণের জন্য এটি অবশ্যই অত্যন্ত দুঃসংবাদ ও পরিতাপের বিষয়! আরো বৃদ্ধি পেল তাদের বুকে জমে থাকা দীর্ঘদিনের পাথরচাপা কষ্ট!


সর্বশেষ তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দেখা গেছে যে, নতুন নিয়োগ প্রত্যাশী নিবন্ধনধারীদের সাথে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পুনঃনিয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়ার কারণে নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন নতুন প্রার্থীরা। অপরদিকে বিদ্যমান এমপিওভুক্ত নিবন্ধনধারী শিক্ষকদের সাথে নতুনদের আবেদন করার সুযোগ দেওয়ার কারণে তারা অনেকেই পুনঃনিয়োগ পাননি বিধায় যেতে পারেননি কাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠানে। তারা বঞ্চিত হয়েছেন পরোক্ষ বদলির এই ন্যূনতম সুযোগ থেকে। ক্ষতির শিকার হয়েছেন উভয়পক্ষই। অপরদিকে বেশ কিছু ইনডেক্সধারী শিক্ষক এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যাওয়ার কারণে শূন্য পদের অবস্থান পরিবর্তন হয়েছে মাত্র। ফলে প্রায় ৮৯ লাখ আবেদন নিয়ে বিশাল নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরেও শূন্য পদ রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার। যা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়! ক্ষতির শিকার হয়েছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অর্থাৎ সংঘটিত হয়েছে ত্রিমুখী ক্ষতি! এরূপ অযৌক্তিক প্রক্রিয়া চলতে থাকলে বারবার তৈরি হবে এমন চিত্র! বারবার প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন থেকে বঞ্চিত হবেন অনেক শিক্ষক, বারবার নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হবেন অনেক নতুন প্রার্থী, বারবার শূন্য থেকে যাবে অনেক অনেক পদ, প্রতিবারই অসন্তোষ বাড়তে থাকবে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের উপর; যা কারও কাম্য নয়।


অপরদিকে এটিও মনে রাখতে হবে, আগামী ২০২৩ সাল থেকে আমরা যে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি শিক্ষকগণ সেই মননশীল কর্মযজ্ঞের অগ্রবর্তী সৈনিক। শিক্ষকদের মনে আনন্দ না থাকলে শিক্ষার্থীদের জন্য আনন্দঘন শিক্ষার পরিবেশ মোটেও তৈরি করা সম্ভব হবে না। নিশ্চয়ই বিপুল অর্থ ব্যয় হবে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের জন্য। তার কতটা বেসরকারি শিক্ষকদের ভাগ্যে নতুন করে আসবে তা আমরা জানি না, যদিও তা অত্যাবশ্য। অথচ কোনরূপ সরকারি অর্থ ব্যয় ব্যতীত তাদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ তথা বদলির সুযোগ দিয়ে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কষ্ট থেকে কিছুটা মুক্তি দেয়া এবং শিক্ষাক্ষেত্রে কিছুটা আনন্দঘন পরিবেশ যুক্ত করা সম্ভব। যারা এ বিষয়টিকে গুরুত্বহীন ভাবছেন তারা নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে তথা শিক্ষার মানোন্নয়নে কতটা আন্তরিক সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। 


লেখক: শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক

আমাদের বার্তা, ২৩ আগস্ট ২০২২


বিনামূল্যের বই অবৈধ বিক্রি রোধ যেভাবে। আমাদের বার্তা, ২৮ নভেম্বর ২০২২

পত্রিকার লিংক

বিনামূল্যের বই অবৈধ বিক্রি রোধ যেভাবে

আমাদের বার্তা, ২৮ নভেম্বর ২০২২




মো. রহমত উল্লাহ্ 

গত ২৫ নভেম্বর ২০২২ তারিখে দৈনিক শিক্ষায় প্রকাশিত একটি সংবাদের শিরোনাম ছিল "শিক্ষকদের পিকনিকের টাকা জোগাতে বিনামূল্যের বই বিক্রি"। জানা যায়, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্রয়-বিক্রয় কমিটি পুরাতন খাতা বিক্রি করার সময় বিনামূল্যে বিতরণযোগ্য সরকারি পুরাতন বই বিক্রি করে দিয়েছে। সরকারি বই পুরাতন হলেও বিক্রি করার অনুমতি না থাকায় তা বিক্রি করা আইনত দণ্ডনীয়। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারি বই বিক্রি করার ছবিসহ পত্রিকায় রিপোর্ট হওয়ার কারণে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধরা পড়েছে, শুধুমাত্র সেই প্রতিষ্ঠানই কি সরকারি বই বিক্রি করেছে নাকি আরও কোনো প্রতিষ্ঠান সরকারি বই বিক্রি করেছে ও করছে? যিনি পুরাতন বই ক্রয় করে ট্রাক ভর্তি করেছেন তাকে অনুসরণ করা হলে হয়ত তার গোডাউনে গিয়ে আরো অনেক সরকারি বই পাওয়া যাবে। তার মতো অন্যান্য ব্যবসায়ীদের খোঁজখবরও পাওয়া যাবে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে নিশ্চয়ই এমন আরো অনেক বই ক্রয়-বিক্রয়ের তথ্য পাওয়া যাবে। জানা যাবে, আর কোন কোন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা থেকে সে/তারা বই ক্রয় করেছে? কোনো শিক্ষা অফিস থেকে সরকারি পুরাতন বই ক্রয় করেছে কিনা? তখনই জানা যাবে, যারা সরকারি পুরাতন বই বিক্রি করে পত্রিকায় শিরোনাম হয়নি তাদের পরিচয় কী ও সংখ্যা কত!


বিভিন্ন সময় পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে এবং আমার কাছে আসা একাধিক টেলিফোন থেকে জানা যায় যে, সরকারি পুরাতন বই বিক্রির সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম নয়। পুরাতন কাগজ ক্রয় করে এমন একাধিক ব্যক্তি আমাকে প্রতিবছরই বারবার ফোন করে পুরাতন বই বিক্রির জন্য প্রস্তাব দিয়ে থাকে। তারা কোথায় থেকে আমার ফোন নম্বর পায় এমন প্রশ্ন করলে এর উত্তরে জানায় যে, সকল স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার ফোন নম্বরই তাদের কাছে আছে এবং তারা সবাইকেই ফোন করে পুরাতন বই-খাতা ক্রয় করে থাকে। কয়েকদিন আগেও আমাকে একজন ফোন করে বলেছে, পুরাতন বই-খাতা থাকলে আমাদের দিয়ে দেন স্যার। আমরা রেট ভালো দিবো। এখন কাগজের রেট ভালো আছে। বর্তমানে প্রতি কেজি বই ৪৫ টাকা এবং প্রতি কেজি খাতা ৫৫ টাকা দরে নেওয়া যাবে। পরে হয়তো এই রেট নাও থাকতে পারে। আপনার কোন সমস্যা হবে না স্যার। আপনি যখন বলবেন তখনই আমরা এসে নিয়ে যাব। 


যদি পুরাতন কাগজ ব্যবসায়ীদের এসকল বক্তব্য শতভাগ সঠিক নাও হয়; তথাপি এটি পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে, সারাদেশে অবস্থিত অনেক সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সরকারি পুরাতন বই বিক্রি করে থাকে। শুধু যে পিকনিক করার জন্য বা আর্থিক অনটনের জন্য অথবা অবৈধ অর্থ উপার্জনের জন্য এ সকল বই বিক্রি হয়ে থাকে তা নয়। আর্থিক অনটন বা অবৈধ অর্থ উপার্জন ছাড়াও এর সঙ্গে বেশ কিছু কারণ জড়িত। বাস্তব অবস্থা হচ্ছে, প্রতিবছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের নিচের শ্রেণির শিক্ষার্থীর সংখ্যাকে ভিত্তিতে করে তার সাথে ফাঁকা আসনের বিপরীতে সম্ভাব্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা যোগ করে উপরের ক্লাসের বইয়ের আনুমানিক চাহিদা দিয়ে থাকে। যেমন, একটি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণিতে যত জন শিক্ষার্থী থাকে তার সাথে আগামী বছর পঞ্চম শ্রেণিতে যতজন শিক্ষার্থী ভর্তি হবার সম্ভাবনা থাকে তা যোগ করে পঞ্চম শ্রেণির বইয়ের চাহিদা দেওয়া হয়। কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক ও/বা প্রথম শ্রেণিতে এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে কতজন শিক্ষার্থী ভর্তি হবে তা সম্পূর্ণ প্রত্যাশার ভিত্তিতে অবাস্তব অনুমান করে বইয়ের চাহিদা দেওয়া হয়। অন্যান্য শ্রেণিতেও আসন ফাঁকা থাকা সাপেক্ষে প্রত্যাশার ভিত্তিতে বইয়ের চাহিদা কিছুটা বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ তারা কিছু বাড়তি বইয়ের চাহিদা দিয়ে থাকে যাতে শিক্ষার্থীরা উপরের ক্লাসে প্রমোশন পেয়ে বা নতুন ভর্তি হয়ে নতুন বই পেতে বিলম্ব/অসুবধা না হয় এবং শিক্ষার্থীদের মন খারাপ না হয়। কেননা, আগে থেকেই নিশ্চিত হওয়া যায় না যে, কোন ক্লাসের কতজন শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হবে, কতজন শিক্ষার্থী ঝরে পড়বে, কতজন নতুন শিক্ষার্থী এসে ভর্তি হবে। পরবর্তীতে সকল শিক্ষার্থী প্রমোশন না পেলে, কিছু শিক্ষার্থী ঝরে পড়লে ও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি না হলে বিভিন্ন শ্রেণির কিছু কিছু বই অতিরিক্ত থেকে যায়। বিশেষ করে কোভিড ১৯ পরিস্থিতির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালের অনেক বই অব্যবহৃত রয়ে গেছে। এই বাস্তব কারণে অতিরিক্ত থেকে যাওয়া কয়েক বৎসরের বই থানা/ উপজেলা শিক্ষা অফিস ফেরত না নিলে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই স্থান সংকুলান সমস্যা হয় এবং অযত্নে বিনষ্ট হয়। আবার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেঁচে যাওয়া একাধিক বছরের বই একত্রে থানা/উপজেলা শিক্ষা অফিসে রাখার জায়গাও পর্যাপ্ত নেই। কেননা, প্রতি বৎসর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও শিক্ষা অফিসে নতুন বই রাখার জন্য পর্যাপ্ত জায়গার প্রয়োজন হয়। তাই অনেক প্রতিষ্ঠান বাধ্য হয়ে পুরাতন বই বিক্রি করে দিতে চায়। কিন্তু বৈধভাবে তা করতে পারে না!


এমতাবস্থায় অব্যবহৃত সরকারি পুরাতন বই বিক্রি করার জন্য প্রতি বৎসর বাজার দর যাচাই করে ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করে একটি সরকারি আদেশ জারি করা আবশ্যক। সেই আদেশটি হতে পারে এমন যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিজে এক বছরের অধিক পুরাতন বই বিক্রি করে প্রাপ্ত টাকা সরকারি কোষাগরের নির্দিষ্ট হিসাব নম্বরে জমা দিবে। সেই সাথে কোন কোন শ্রেণির কোন কোন বিষয়ের মোট কতটি বই কত কেজি হয়েছিল তার একটি ছকবদ্ধ হিসাব অনলাইনে ও হার্ডকপিতে জমা দিবে। যাতে তাদের প্রদত্ত বইয়ের চাহিদা, ব্যবহৃত বইয়ের সংখ্যা ও অব্যবহৃত বইয়ের সংখ্যা তুলনা করে সিস্টেম লস নির্ধারণ করে জবাবদিহিতার আওতায় আনা সম্ভব হয়। অথবা এর চেয়ে উত্তম হতে পারে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এক বৎসরের অধিক অব্যবহৃত সকল পুরাতন বই নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে থানা/উপজেলা শিক্ষা অফিসে জমা দিবে। শিক্ষা অফিস সে বই প্রতি বৎসর নিলামে বিক্রি করে প্রাপ্ত টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিবে এবং সেইসাথে বিক্রিত বইয়ের ছকবদ্ধ হিসাব অনলাইনে ও হার্ডকপিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিবে। এতে করে সরকারি পুরাতন বই অবৈধভাবে বিক্রির সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে এবং নতুন বই সযত্নে রাখার শূন্যস্থান বৃদ্ধি পাবে। 


তাছাড়া বইয়ের চাহিদা নেওয়ার সময়ও এমন আদেশ থাকতে হবে যেন, কোনভাবেই অস্বাভাবিক অতিরিক্ত বইয়ের চাহিদা কেউ দিতে না পারে। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় এক ট্রাক অব্যবহৃত বই থাকা কোনভাবে স্বাভাবিক সিস্টেম লস নয়। বর্তমান ডিজিটাল যুগে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিভিত্তিক প্রকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যাসহ প্রায় সকল তথ্যই শিক্ষাবিভাগে বিদ্যমান। কোন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের, থানার/উপজেলার ও জেলার বিগত কয়েক বৎসরের প্রকৃত শিক্ষার্থী হ্রাস-বৃদ্ধির হার পর্যালোচনা করলেই সংশ্লিষ্টদের বইয়ের স্বাভাবিক চাহিদা নির্ধারণ করা সম্ভব; যাতে সামান্য সিস্টেম লস থাকতে পারে। কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অস্বাভাবিক অতিরিক্ত বইয়ের চাহিদা প্রদান করলে তাও আইডেন্টিফাই করা সম্ভব। নতুন শিক্ষাবর্ষে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের যাওয়া-আসা ঘটলেও একটি থানার/উপজেলার বা জেলার মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুব বেশি হেরফের ঘটে না। শহরের তুলনায় গ্রামে এই হেরফের আরও কম থাকে। তাই অস্বাভাবিক অতিরিক্ত বইয়ের চাহিদা প্রদানকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান, থানা/উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা ও শাস্তি নিশ্চিত করা আবশ্যক। মনে রাখতে হবে, সাধারণ জনগণের টাকায় ছাপানো এ সকল বই অপচয় করা মানেই সরকারি সম্পদের অপচয় করা। এক্ষেত্রে কারো উদাসীনতা, দায়িত্বহীনতা ও দুর্ভিসন্ধি কোনভাবেই মেনে নেওয়া উচিত নয়। 


মো. রহমত উল্লাহ্ 

সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ও কলাম লেখক


অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ।


https://www.dainikshiksha.com/%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%82%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%87-%E0%A6%85%E0%A6%AC%E0%A7%88%E0%A6%A7-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF-%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A7-%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87/242799/

পত্রিকার লিংক