আমাদের ভাষাপ্রেম ও 'বিসর্গ' বর্ণের অপব্যবহার। দৈনিক ইত্তেফাক, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১

আমাদের ভাষাপ্রেম ও 'বিসর্গ' বর্ণের অপব্যবহার

দৈনিক ইত্তেফাক, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১

পত্রিকার লিংক

মো. রহমত উল্লাহ্


পৃথিবীতে একমাত্র আমরাই জীবন দিয়ে রক্ষা করেছি আমাদের মাতৃভাষা, বাংলা ভাষা। আমাদের 'শহিদদিবস' তথা একুশে ফেব্রুয়ারি আজ ১৯৩টি দেশে পালিত হয় ইউনেস্কো স্বীকৃত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। অথচ ভাষার আন্দোলনে আজও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় অর্জিত হয়নি আমাদের সফলতা। 


সঠিক চর্চা ও পরিচর্যার মাধ্যমে মাতৃভাষার উৎকর্ষ সাধনে আমরা অনেকেই এখনো অনেক বেশি উদাসীন। এমনকি অক্ষরের প্রয়োগ, শব্দের বানান, শব্দ গঠন, শব্দ সংক্ষেপণ, শব্দের প্রয়োগ, বাক্য গঠন, যতিচিহ্নের ব্যবহার ইত্যাদি সাধারণ বিষয়েও আমরা প্রায় সবাই এত বেশি ভুল লিখি যা স্বল্প পরিসরে আলোচনা সম্ভব নয়। 


এই নিবন্ধে আমাদের বাংলা ভাষার একটি বর্ণ 'বিসর্গ' (ঃ) এর ব্যাপক অপব্যবহারের আংশিক চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করছি। ভাষার গতিবৃদ্ধির জন্য শব্দসংক্ষেপ অপরিহার্য। তাই শব্দ সংক্ষেপ করার জন্যও প্রত্যেক ভাষারই থাকা চাই সর্বজনবিদিত সুনির্দিষ্ট নিয়ম। আমাদের বাংলা ভাষায়ও আছে তেমন কিছু নিয়মকানুন। কিন্তু সে নিয়ম অনুসরণ করছি না, প্রয়োগ করছি না আমরা অনেকেই।


কিছু উদাহরণ দেওয়া যাক। ‘ডাঃ মোঃ মোঃ হোসেন, এমঃ বিঃ বিঃ এসঃ’। এক্ষেত্রে বিসর্গ (ঃ) গুলোর অপব্যবহার করা হয়েছে যতিচিহ্ন (শব্দ সংক্ষেপণ চিহ্ন) হিসেবে। অর্থাৎ ‘ডাক্তার মোহাম্মদ মোক্তার’, ‘ব্যাচেলর অফ মেডিক্যাল সাইন্স’ কথাগুলোকে সংক্ষিপ্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়েছে বিসর্গ দিয়ে।


আবার ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্মারক নম্বর’ কথাগুলোকে অনেক সময় সংক্ষেপে লেখা হয় ‘শিঃ মঃ স্মাঃ নং’ এভাবে। গভঃ দিয়ে গভর্নমেন্ট, প্রাঃ দিয়ে প্রাইভেট, লিঃ দিয়ে লিমিটেড, হঃ দিয়ে হযরত, ছঃ দিয়ে ‘ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম’, রাঃ দিয়ে ‘রাদিয়াল্লা হু আন হু’ ইত্যাদি লেখা হয়ে থাকে প্রায়শই। এভাবে বিসর্গ (ঃ) দিয়ে শব্দ সংক্ষেপ করা সঠিক নয়।


বিসর্গ (ঃ) কে যতিচিহ্ন হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। যতিচিহ্নের কোনো উচ্চারণ ধ্বনি নেই। বিসর্গ যতিচিহ্ন নয়। বিসর্গ একটি ব্যঞ্জনবর্ণ।  বিসর্গের (ঃ) আছে উচ্চারণ ধ্বনি। আছে সঠিক ব্যবহারের নিয়মকানুন। অথচ আমরা অনেকেই না জেনে, না বুঝে এই বিসর্গ (ঃ) ধ্বনিকে ব্যবহার করছি যতিচিহ্ন হিসেবে।  এতে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে বাংলা ভাষার শুদ্ধতা এবং বিলুপ্ত হচ্ছে বিসর্গ (ঃ) বর্ণের উচ্চারণ ধ্বনি ও অস্তিত্ব।


এইরূপ অপব্যবহূত বিসর্গ (ঃ) এর উচ্চারণ করতে গেলেও অর্থ দাঁড়াচ্ছে অন্যরকম। যেমন, ‘হাইমচর হামদর্দ হাসপাতাল’কে বিসর্গযোগে সংক্ষিপ্ত করতে গেলে হবে ‘হাঃ হাঃ হাঃ’। উচ্চারণ হবে ‘হাহ্ হাহ্ হাহ্’। অর্থ দাঁড়াবে উচ্চৈঃস্বরে হাসির শব্দ।


শব্দ সংক্ষেপ করার জন্য ব্যবহার করতে হবে যতিচিহ্ন। একমাত্র দাঁড়ি (। ) ব্যতীত সকল যতিচিহ্নই আমরা পেয়েছি বা নিয়েছি ইংরেজি ভাষা থেকে। তাই ব্যবহারও হচ্ছে ইংরেজি ভাষার রীতি অনুসারেই। সেমতে শব্দ সংক্ষেপ করার জন্য ব্যবহৃত হবে ডট (.)। বাংলায় আমরা এর নাম দিয়েছি এক বিন্দু (.) বা শব্দ সংক্ষেপণ চিহ্ন। যেমন: ডা. মো. সা. জা. ফয়েজ, এম. বি. বি. এস.। শি. ম. স্মা., এস. এস. সি., এম. এসসি., বি. এড., বি. জি. বি. ইত্যাদি।


শুধু শব্দ সংক্ষিপ্ত করার জন্যই যে বিসর্গ (ঃ) বর্ণের অপব্যবহার হচ্ছে তা নয়, বিশ্লেষণ করার জন্যও অহরহ অপব্যবহূত হচ্ছে বিসর্গ (ঃ) নামক বর্ণ ও ধ্বনি। ‘যেমন- / যেমন:’ কে বিসর্গ দিয়ে লেখা হচ্ছে ‘যেমনঃ’। ‘নাম- / নাম:’ কে লেখা হচ্ছে ‘নামঃ’। ‘গ্রাম- / গ্রাম:’ কে লেখা হচ্ছে ‘গ্রামঃ’। ‘পোস্ট- / পোস্ট:’ কে লেখা হচ্ছে ‘পোস্টঃ’। বিসর্গের মতো এমন অনেক ধ্বনি, বর্ণ এবং যতিচিহ্ন প্রয়োগ আমাদের খামখেয়ালির জন্য বাংলা ভাষা আজ ক্ষত-বিক্ষত ও দুঃখভারাক্রান্ত।


অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও বাস্তব যে, বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নামফলক, চিঠিপত্র, টেলিভিশন এমনকি অনেক প্রকাশিত বই এবং পত্রপত্রিকায় এমনি ভুলভাবে বিসর্গের অহরহ অপপ্রয়োগ দীর্ঘদিন দেখতে দেখতে এখন নতুন প্রজন্মসহ আমরা অনেকেই মনে করি তা-ই সঠিক। এমনকি আমাদের অধিকাংশ শিক্ষিত মানুষের নামের সংক্ষিপ্তরূপ আমাদের শিক্ষা সনদে লেখা হয়েছে ও হচ্ছে (ঃ) বিসর্গ দিয়ে। যেমন: মো., মোসা., মি. এসবকে লেখা হচ্ছে মোঃ, মোসাঃ, মিঃ, ইত্যাদি। আজীবন এই ভুল বয়ে বেড়াচ্ছি আমরা!


অথচ জন্মনিবন্ধন কর্তৃপক্ষ, জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান কর্তৃপক্ষ, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বোর্ড এবং সকল স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ সনদ লেখার সময় একটু সচেতন হলেই অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব এই চলমান/ প্রচলিত ভুল। নিজের শুদ্ধ সনদ দেখেই আমাদের সন্তানেরা শিখতে পারবে শব্দ সংক্ষেপণ চিহ্নের সঠিক ব্যবহার এবং পরিহার করতে পারবে (ঃ) বিসর্গের অপব্যবহার। 


তদুপরি যথাশীঘ্র সম্ভব বাংলা একাডেমিসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সকল প্রতিষ্ঠান এবং প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াসমূহ ঐকমত্যে এসে একই নিয়ম অনুসরণ অত্যাবশ্যক। এক্ষেত্রে শিক্ষকদেরও নিতে হবে অগ্রণী ভূমিকা। প্রমাণ করতে হবে, আমাদের ভাষাপ্রেম কতটা গভীর। মনে রাখতে হবে, সামান্য অবহেলায় ভাষার ভেতরে কোনো ভুল বিস্তৃত হয়ে পড়লে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভাষা; যা কাটিয়ে ওঠা হয়ে পড়ে অত্যন্ত কঠিন ও সময়সাপেক্ষ। 


মো. রহমত উল্লাহ্ : সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ এবং অধ্যক্ষ- কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

Email- rahamot21@gmail.com




জাতীযকরণ: শিক্ষাব্যবস্থা বনাম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সমকাল, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১

জাতীযকরণ: শিক্ষাব্যবস্থা বনাম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সমকাল, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১

জাতীয়করণ: শিক্ষাব্যবস্থা বনাম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

মো. রহমত উল্লাহ্‌

অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

প্রকাশ: দৈনিক সমকাল, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১


বেশ কিছুদিন ধরে আমাদের দেশের বেসরকারি শিক্ষক সমাজে সর্বাধিক উচ্চারিত দাবি হচ্ছে 'শিক্ষাব্যবস্থা' জাতীয়করণ। বিশেষ করে ২০২০ সাল ছিল এই দাবি উচ্চারণের উল্লেখযোগ্য বছর। তখন মনে হয়েছে, এই দাবিতে প্রতিযোগী মনোভাব নিয়ে সোচ্চার ও সক্রিয় আমাদের বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন। কেউ মাঠে সক্রিয়, কেউ ফেসবুকে। দাবি একটাই, 'শিক্ষাব্যবস্থা' জাতীয়করণ।


বেশিরভাগ শিক্ষক সংগঠনের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মনোভাব এমন যেন এখনই 'শিক্ষাব্যবস্থা' জাতীয়করণ হয়ে যাবে আর এর কৃতিত্ব নিজের ঘরে তুলতে হবে যে করেই হোক। সুতরাং চুপ করে থাকলে চলবে না। মুখ খুলতে হবে, স্ট্যাটাস দিতে হবে, কর্মসূচি দিতে হবে। যে করেই হোক, এই স্রোতের পক্ষেই থাকতে হবে। তা না হলে শিক্ষকপ্রিয়তা হারাতে হবে। এই যখন অবস্থা তখন আমাদের জাতীয় সংসদেও উত্থাপিত হয়েছে এ ইস্যুটি।


শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ ইস্যুতে জাতীয় সংসদে খুব পরিস্কার বক্তব্য দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সব এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানকে সরকারীকরণ না করার কারণ জানিয়ে তিনি বলেছেন, 'স্কুল করার একটা নিয়ম আছে। অনেকে সেই নিয়ম মানেননি। যেখানে-সেখানে যখন-তখন একটা স্কুল খুলে ফেলেছেন। হয়তো ছাত্রছাত্রীই নেই সেখানে। এ রকমও আছে, ছাত্রছাত্রীদের থেকে শিক্ষকের সংখ্যাও বেশি। নিয়মটা স্কুল এবং মাদ্রাসা সবার জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য।' এর আগেও জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারীকরণ করা হবে।


শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিও বলেছেন, 'শিক্ষাব্যবস্থা' পুরোটাই সরকারি হতে হবে- এমন কোনো কথা নেই। আমরা প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করেছি। আমাদের মাধ্যমিকে প্রায় ৩২ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে, যার বেশিরভাগই বেসরকারি। সবগুলোকে সরকারি করা খুবই বড় ব্যাপার। তা ছাড়া পুরোটা সরকারি হতে হবে- এমন কোনো কথা নেই। যারা বেসরকারি আছে, সেখানেও পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ আছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন দেওয়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন করে দেওয়া, শিক্ষার্থীদের বই দেওয়া, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, ল্যাব করে দেওয়া এসব দায়িত্ব কিন্তু সরকারেরই।


'শিক্ষাব্যবস্থা' জাতীয়করণ স্লোগানটির অর্থ খুবই অস্পষ্ট। এটি স্পষ্ট করার কথা আমি বিভিন্ন সময়ে সভা-সেমিনার ও টকশোতে বলেছি। শিক্ষাব্যবস্থাকে ইংরেজিতে বলা হয় এডুকেশন সিস্টেম। যেমন সমাজব্যবস্থা হচ্ছে সোশ্যাল সিস্টেম। একটা সিস্টেম বা ব্যবস্থাকে কীভাবে জাতীয়করণ করা সম্ভব তা আমার বোধগম্য নয়। শিক্ষার অগণিত ক্ষেত্র ও উন্মুক্ত পরিধির মতোই শিক্ষাব্যবস্থা ব্যাপক বিস্তৃত ও সম্প্রসারণশীল।


যদি অন্যদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে আমিও বলি, 'শিক্ষাব্যবস্থা' জাতীয়করণ মানে হচ্ছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ সরকারীকরণ; তাহলেও কয়েকটা প্রশ্ন এসে দাঁয়ায় : কোন কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারীকরণের জন্য আমরা দাবি করছি? কোন স্তর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারীকরণের জন্য আমরা দাবি করছি? অগণিত কেজি স্কুল ও কওমি মাদ্রাসা থেকে শুরু করে হাইস্কুল, কলেজ, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সবই কি সরকারি করার দাবি আমাদের? নাকি কোনো বিশেষ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি করার দাবি করছি আমরা?


প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করা হয়েছে (যদিও প্রাথমিক স্তরের অগণিত কেজি স্কুল ও বিভিন্ন মাদ্রাসা এখনও প্রাইভেট রয়ে গেছে এবং আরও নতুন নতুন তৈরি হচ্ছে)। এখন কি আমরা মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করতে চাই? নাকি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত জাতীয়করণ করতে চাই? নাকি উচ্চশিক্ষাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করতে চাই? এ বিষয়টি পরিস্কার বলা হয়নি আগে কখনোই। প্রায় সবাই শুধু একই স্লোগান দিয়েছেন ও দিচ্ছেন, একযোগে 'শিক্ষাব্যবস্থা' জাতীয়করণ চাই।


শিক্ষামন্ত্রী বলছেন, শুধু মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি করাই খুব বড় ব্যাপার। অন্যদিকে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেছেন, 'এমন একটা সময় আসবে যখন দেশে কোনো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকবে না। সব সরকারি করা হবে। ধাপে ধাপে আমরা এগুচ্ছি।'


শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে একটা ইঙ্গিত লক্ষণীয় যে, তিনি মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সরকারীকরণ তথা মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক ও সার্বজনীন করার সক্ষমতা-সম্ভাব্যতা বিবেচনা করছেন। অথচ প্রতি উপজেলায় একটি করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি করার ক্ষেত্রে তার এই মনোভাবের বাস্তবায়ন লক্ষ্য করা যায়নি। বরং সে ক্ষেত্রে পানিসম্পদ উপমন্ত্রীর বক্তব্যের কিছুটা বাস্তবায়ন লক্ষ্য করা গেছে। অর্থাৎ শিক্ষা অবৈতনিক ও সার্বজনীন করার ক্ষেত্রে সরকার কোন দিকে এগুচ্ছে, তা আমাদের কাছে অস্পষ্ট।


শিক্ষানীতি অনুসারে আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার স্তর যদি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত হতো; তাহলে হয়তো সে পর্যন্ত শিক্ষা বাধ্যতামূলক, অবৈতনিক ও সার্বজনীন হয়ে যেত অনেক আগেই। এখন আরও কিছুটা খাটো হতো আমাদের দাবির পরিধি। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। অবৈতনিক শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আমাদের উপবৃত্তিবহির্ভূত শিক্ষার্থীরা এবং অসচ্ছল জীবনযাপন করছেন বেসরকারি শিক্ষকরা। তাই অত্যন্ত যৌক্তিকভাবেই উত্থাপিত হচ্ছে শিক্ষা অবৈতনিক তথা জাতীয়করণের দাবি।


ইদানীং অবশ্য কেউ কেউ শুধু এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সরকারীকরণকেই 'শিক্ষাব্যবস্থা' জাতীয়করণ বোঝাতে চাচ্ছেন। তাতে নাখোশ হচ্ছেন অন্যরা। আবার কেউ কেউ বলছেন, প্রাথমিকের মতো মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি করা হোক। তাতে আবার নাখোশ হচ্ছেন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। পরস্পর বিরোধী এমন মনোভাব অবশ্যই দাবি আদায়ের অন্তরায়।


আরও গণমুখী করা উচিত আমাদের দাবি উত্থাপনের ভাষা ও কৌশল। শিক্ষা অবৈতনিক ও সার্বজনীন করার দাবির কথা শুনলেই শিক্ষকদের সঙ্গে যোগ দিতে আসবেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। শুধু শিক্ষক চাইলে হবে না। অভিভাবকদের চাইতে হবে, ছাত্রদের চাইতে হবে, নেতাদের চাইতে হবে। সে লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে। নির্ধারিত করা প্রয়োজন যোগ্য নেতৃত্ব, দাবি আদায়ের উত্তম কৌশল ও সঠিক আন্দোলনের রূপরেখা।


যতটুকু চাই, ততটুকু চাওয়া উচিত যৌক্তিকভাবে, সমস্বরে, একই স্লোগানে, একতাবদ্ধ হয়ে। মনে রাখা জরুরি, সব স্তরের শিক্ষা অবৈতনিক ও সার্বজনীন করার বৃহত্তর দীর্ঘমেয়াদি দাবির পাশাপাশি অবশ্যই সোচ্চার থাকতে হবে আমাদের এখনই প্রাপ্য বাড়ি ভাড়া ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, উৎসব ভাতা, অন্যান্য ভাতা ও পেনশন সুবিধার ব্যাপারে। তা ছাড়া বদলি ব্যবস্থা চালু করা, কমিটি প্রথা বাতিল করা বা উচ্চশিক্ষিতদের কমিটিতে যুক্ত করা, অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করা ইত্যাদি দাবিতেও থাকা উচিত সক্রিয়। শুধু সভা, সেমিনার, ফেসবুকে নয়; যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবেও উপস্থাপন করা আবশ্যক আমাদের সব দাবি-দাওয়া। সেইসঙ্গে প্রয়োজন প্রত্যেকের পেশাগত উৎকর্ষ সাধন।


দায়িত্বশীলদের বক্তব্য অনুসারে এটি পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে যে, আমাদের দেশের সব স্তরের সম্পূর্ণ শিক্ষা জাতীয়করণ প্রায় অসম্ভব। কোনোভাবে সম্ভব হলেও এটি হবে একটি দীর্ঘমেয়াদি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই দূর ভবিষ্যতে সরকারীকরণের আশায় এখন এসব পাওনা ছেড়ে দিয়ে বসে থাকলে চলবে না। কোনোভাবেই যেন হালকা হয়ে না যায়, আড়ালে পড়ে না যায়, আমাদের সব স্তরের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের এসব দাবির স্লোগান এবং নতুন করে আরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার দাবি। একেকটি দাবি আদায় করা মানেই জাতীয়করণে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া।


[আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে অবশ্যই সব যৌক্তিক দাবি আদায় করা সম্ভব। যেখানে ঐক্য নেই, সেখানে বিজয় নেই। দল, মত, পথ, যাই থাকুক, এক দাবিতে একাট্টা থাকা উচিত সবাই। তাহলেই আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নীতিমালা প্রণয়ন করে শিক্ষা অবৈতনিক ও সর্বজনীন করার জন্য দ্রুত এগিয়ে আসবে সরকার।]


https://samakal.com/chaturango/article/210252873/%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%80%E0%A7%9F%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%A3--%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A6%BE-%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AE-%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B7%E0%A7%8D%E0%A6%A0%E0%A6%BE%E0%A6%A8

বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক কেন কিনতে হবে? Jagonews24.com. 11 ফেব্রুয়ারি 2021

বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক কেন কিনতে হবে? Jagonews24.com. 11 ফেব্রুয়ারি 2021

 বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক কেন কিনতে হবে?


জাগো নিউজ 24 ডটকম। সম্পাদকীয় ডেস্ক। ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ 

মূল পত্রিকার লিংক


মো. রহমত উল্লাহ্


নতুন বছরের প্রথম দিন নতুন বই হাতে পাওয়া একজন শিক্ষার্থীর জন্য কী যে আনন্দের বিষয় তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়! নতুন বই হাতে নিয়ে শিক্ষার্থীদের এই আনন্দ-উল্লাসের ছবি প্রতি বৎসর আমরা দেখতে পাই জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে। এই অফুরন্ত আনন্দের উৎসমূলে রয়েছেন আমাদের বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


বিগত ৮ বছর ধরে তিনি বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন নতুন পাঠ্যপুস্তক; যা বর্তমান পৃথিবীতে একটি অনন্য উদাহরণ। কোভিড 19 এর ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলা করে ২০২১ সালেও প্রায় সাড়ে চার কোটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে তুলে দেওয়া হয়েছে ও হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৩৫ কোটি নতুন পাঠ্যপুস্তক। ধন্যবাদ শিক্ষাবান্ধব আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।


প্রতি বৎসর জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে যারা বিনামূল্যে নতুন পাঠ্যবই হাতে পেয়েছেন তাদের আনন্দ উল্লাসটুকুই আমরা বেশি করে দেখেছি, প্রকাশ করেছি, প্রচার করেছি। কিন্তু এই আনন্দের দিনে যে সকল শিক্ষার্থী নতুন বই হাতে পায়নি তাদের সবার কষ্টটুকুর খোঁজ খবর তেমন নেইনি এবং সেই কষ্ট লাঘবের কার্যকর কোন পদক্ষেপও আমরা নেইনি।


অপরদিকে যে সকল শিক্ষক কিছু কিছু শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দিতে বিলম্ব করেছেন তাদের সুবিধা-অসুবিধা গুলোও আমরা খতিয়ে দেখিনি, আলোচনা করিনি, আমলে নেইনি, সমাধানের চেষ্টা করিনি। প্রায় প্রতি বৎসরই জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে এমন কিছু সংবাদ আমরা পড়েছি যে, এই এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা এত টাকা করে দিয়ে বই নিতে হয়েছে এবং যারা টাকা দিতে পারেনি তারা বই পায়নি। যারা নতুন বই পায়নি তাদের কষ্টের কথা বলে শেষ করার উপায় নেই! যারা বিনামূল্যের সরকারি বই টাকা দিয়ে নিয়েছে তাদের কষ্টটাও কিন্তু কম নয়!


সরকার প্রদত্ত বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করে এর মূল্য বাবদ কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টাকা আদায় করবে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সেটি হোক সরকারি প্রতিষ্ঠান বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। বাস্তবে এমনটি কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হয়ে থাকলে তা অবশ্যই অবশ্যই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আর যদি বকেয়া বেতন-ফি বাবদ কোন টাকা কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে থাকে তো সেটি বিশ্লেষণ করে দেখার প্রয়োজন আছে।


সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মত বেসরকারি বা প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আর্থিক হিসাব একরকম নয়। আবার সকল বেসরকারি বা প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানর অবস্থাও একরকম নয়। ভাল প্রতিষ্ঠান নামে খ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদের বেতন-ফি তেমন বকেয়া থাকে না। ভর্তি বাতিল হবার ভয়ে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকগণ সেসব স্কুলের বেতন-ফি না চাইতেই দিয়ে দেন। তাই তাদের বেতন-ফি আদায়ের জন্য তেমন কোনো কৌশল অবলম্বনের প্রয়োজন পড়ে না। তাদের শিক্ষার্থীদের কোন বকেয়া বেতন-ফি থাকে না, নতুন বছরের শুরুতে কেউ ভর্তিবিহীন থাকেনা। তাদের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়ার জন্য অর্থসংকটও থাকে না। তাদের শিক্ষার্থীরা নতুন বই নিয়ে চুপিচুপি অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যাবার সম্ভাবনা থাকে না। তাই তাদের বই দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের কোন ভিন্ন চিন্তা বা অনীহাও থাকে না। শিক্ষা বিভাগের চাহিদা অনুসারে যে কোন সময় তাদের ভর্তিকৃত শিক্ষার্থী এবং বিলিকৃত বইয়ের হিসাব দিতে কোন অসুবিধাও হয় না।


যে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুনাম ও শিক্ষার্থী সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম তাদের অভিভাবকগণ নিয়মিত বেতন-ফি পরিশোধ না করার কারণে, নতুন বছরের শুরুতে ভর্তি নিশ্চিত না করার কারণে, নতুন বই নিয়ে চুপিচুপি অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যাবার সম্ভাবনা থাকার কারণে; বর্তমান প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে তা আদায়ের চেষ্টা করতে হয়। কেননা, এই টাকা দিয়েই দিতে হয় শিক্ষক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন-ভাতা, মিটাতে হয় প্রতিষ্ঠান অন্যান্য খরচ।


এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যাদের শিক্ষক-কর্মচারীরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকে বার্ষিক পরীক্ষার পরে কিছু বেতন ভাতা পাওয়ার জন্য। তাই তারা বাধ্য হয়েই সাময়িকভাবে কিছু শিক্ষার্থীর প্রমোশন ফল আটকে রেখে, নতুন বই প্রদান বিলম্বিত করে ও অন্যান্য কৌশল অবলম্বন করে চেষ্টা করে থাকে বিগত বছরের বকেয়া বেতন-ফি আদায়ের জন্য এবং নতুন বছরের ভর্তি নিশ্চিত করে নতুন বই প্রদান করার জন্য। তা না হলে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে বিগত বছরের বকেয়া বেতন-ফি আর কখনোই আদায় করা যায় না এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের প্রাপ্য বেতন-ভাতাও প্রদান করা সম্ভব হয় না!


অপরদিকে ভর্তি বা পুনঃভর্তি ব্যতীত সকল শিক্ষার্থীকে বই বিতরণ করতে গেলেও বেকায়দায় পড়তে হয় শিক্ষকদের। তা করতে গেলে শিক্ষা বিভাগের চাহিদা অনুসারে বিনামূল্যে প্রদত্ত সরকারি পাঠ্যপুস্তকের শ্রেণিভিত্তিক বিলীকৃত সংখ্যা এবং প্রতিষ্ঠানে ভর্তিকৃত/ বিদ্যমান শ্রেণিভিত্তিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা মিলিয়ে সমান করে সঠিক হিসাব প্রদান করারও কোনো উপায় থাকে না। অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা কোনভাবে নতুন বই পেয়ে গেলে ভর্তি বা পুনঃভর্তি নাহয়েই ক্লাস করতে থাকে মাসের পর মাস!


এমন উদাহরণ থাকে যে, বিগত বছরের জানুয়ারিতে ভর্তি হয়ে শিক্ষার্থী আর কোনোদিন ক্লাস করেনি, বেতন-ফি দেয়নি, সাময়িক পরীক্ষা দেয়নি; অথচ ডিসেম্বর মাসে এসে বার্ষিক পরীক্ষা দিয়ে ফেল করে বা পরীক্ষা না দিয়ে প্রমোশন নিতে চায়, বিনামূল্যের নতুন পাঠ্যবইও নিতে চায়। শক্তিশালী সুপারিশও থাকে তার পক্ষে! প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও নিজেদের চাকরি ধরে রাখার স্বার্থে সবই করতে বাধ্য হন বেসরকারি ও প্রাইভেট স্কুলের শিক্ষকগণ! এটি হলো গতানুগতিক চিত্র। বর্তমান কোভিড পরিস্থিতিতে এই অবস্থা আরো অনেক বেশি ভয়াবহ! তেমনভাবে আলোচিতও হয় না, সহানুভূতির সাথে দেখাও হয় না অসহায় শিক্ষকদের এই দুরবস্থার দিকটা!


অনেকেই হয়তো বলবেন, সরকারি বই আটকে রেখে শিক্ষার্থীদের বকেয়া বেতন-ফি আদায়ের কৌশল নিবেন কেন শিক্ষকগণ। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এমনটি করতে বাধ্য হচ্ছেন বা করার সুযোগ পাচ্ছেন কেন শিক্ষকগণ? বিনামূল্যে সরকারি পাঠ্যপুস্তক বিতরণের একটা সুষ্ঠু নীতিমালা যদি জারি করা থাকতো তাহলে কি শিক্ষকগণ কোন অজুহাতে পারতেন এই বই আটকে রেখে বা বিলম্বে দিয়ে শিক্ষার্থীদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত করতে? কী কী যোগ্যতার ভিত্তিতে একজন শিক্ষার্থী কোন শ্রেণির নতুন পাঠ্যপুস্তক জানুয়ারি মাসের ১ তারিখেই হতে পাবে তার কি কোন ব্যাখ্যা কোথাও পরিষ্কারভাবে দেওয়া আছে?


যেসকল শিক্ষার্থী উপরের শ্রেণিতে প্রমোশন পায়নি; কিন্তু পরবর্তীতে যে কোন উপায়ে প্রমোশন পাওয়ার সম্ভাবনা আছে বা নেই তাদেরকে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে কোন শ্রেণির বই প্রদান করা হবে? যে সকল শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানে পুনঃভর্তি নিশ্চিত করেনি এবং যারা অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যাবার সম্ভাবনা আছে বা আর লেখাপড়া করার সম্ভাবনা নেই তাদেরকে কিসের ভিত্তিতে, কী ভরসায় ১ তারিখে নতুন বই প্রদান করা হবে?


যারা জানুয়ারি মাস জুড়ে ভর্তি হয় না, ক্লাস করে না, বই নেয় না তাদের বই দেওয়ার ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত হবে? নতুন পাঠ্যবই বিতরণের হিসাব কখন, কিভাবে প্রদান করতে হবে? এ সকল প্রশ্নের উত্তর বিশ্লেষণ করে, সাধারণ শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আর্থিক দিক বিবেচনা করে, বিনামূল্যে সরকারি পাঠ্যপুস্তক বিতরণের জন্য একটি সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রকাশ করা আবশ্যক।


আমরা যে যাই বলি না কেন, আলোচিত বর্তমান বাস্তবতায় জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে শতভাগ শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যের সরকারি পাঠ্যবই উঠছে না এটাই সত্য। মাঠ পর্যায়ের এই সত্য কথাটি আমরা কেউ বলছি না, প্রকাশ করছি না, স্বীকার করছি না! আসলেই জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে (প্রায়) শতভাগ শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যের সরকারি পাঠ্যবই তুলে দেওয়ার মতো অত্যন্ত কঠিন কর্মটি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা বাস্তব ভিত্তিক নীতিমালা ব্যতীত অসম্ভব।


প্রতি বৎসর জানুয়ারি মাসের ১ তারিখেই শতভাগ শিক্ষার্থী পাঠ্যবই হতে না পেলে বা না নিলে অর্থাৎ কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী যৌক্তিক কারণে কয়েকদিন পরে বই হাতে পেলে বা নিলে বিনামূল্যে বই প্রদানের কৃতিত্ব সরকারের থাকবে না এমনটি ভাবা/বলা সঠিক নয়। বরং মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতার আলোকে প্রাপ্যতার ভিত্তিতে সুষ্ঠুভাবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা সম্ভব হলে সরকারের সুনাম আরো বৃদ্ধি পাবে। সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রকাশিত থাকলে তা অনুসরণ করে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে নতুন বই দেওয়া-নেওয়ার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত থাকবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। তখনই বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বই উৎসবের দিন প্রায় শতভাগ পাঠ্যপুস্তক বিতরণ।


লেখক : সাহিত্যিক এবং অধ্যক্ষ কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা।

rahamot21@gmail.com


https://www.jagonews24.com/opinion/news/642743

পৈতৃক সম্পত্তিতে মুসলিম নারীর অধিকার ও ভোগদখল। বাংলা ট্রিবিউন, 1 ফেব্রুয়ারি 2021

পৈতৃক সম্পত্তিতে মুসলিম নারীর অধিকার ও ভোগদখল। বাংলা ট্রিবিউন, 1 ফেব্রুয়ারি 2021

 পৈতৃক সম্পত্তিতে মুসলিম নারীর অধিকার ও ভোগদখল

মো. রহমত উল্লাহ্

বাংলা ট্রিবিউন > কলাম, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২১


ধর্মীয় এবং রাষ্ট্রীয় বিধান থাকা সত্ত্বেও পৈতৃক সম্পত্তিতে মুসলিম নারীর অধিকার অধিকাংশ ক্ষেত্রে  অনর্জিতই থেকে যায় আমাদের দেশে। এর নানাবিধ কারণের মধ্যে সচেতনতার অভাবই প্রধান। ইসলাম ধর্ম মতে পিতামাতার অবর্তমানে তাদের স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তিতে মেয়ের অধিকার হিসাব করেই দেওয়া আছে। যদিও এটি ভাইয়ের প্রাপ্যাংশের তুলনায় অর্ধেক। অবশ্য পিতামাতা ইচ্ছে করলে তাঁদের সম্পত্তি ছেলেমেয়েকে সমান হারেও ভাগ করে দিতে পারেন। এতে ইসলাম ধর্মে কঠিন নিষেধ নেই। নতুন কোনও আইনেরও প্রয়োজন নেই। পরিমাণ যাই হোক মূল প্রশ্ন হচ্ছে, এই অধিকারটুকু আমাদের মুসলিম নারীরা অর্জন ও ভোগদখল করতে পারছেন কিনা? যদি কেউ পেরে থাকেন তো মোটের তুলনায় এটি খুবই নগণ্য।


আমাদের সমাজে এমন একটি ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত যে, ‘বাপের বাড়ির সম্পত্তির অংশ মেয়েরা নিয়ে নিলে স্বামীর সংসারে অনটন নেমে আসে এবং ভাইদের সাথে বোনদের সম্পর্কের কোনও সেতুবন্ধন থাকে না। বোনেরা ভাইদের বাড়িতে এবং ছেলেমেয়েরা মামার বাড়িতে যাবার বা আপ্যায়ন পাবার যোগ্যতা হারায়।’


আসল কথা হচ্ছে, মেয়েদের স্থায়ীভাবে ঠকানোর এটি একটি চতুর কৌশল ছাড়া আর কিছুই না। ভাইয়েরা পৈতৃক সম্পত্তি ভাগাভাগি (বোনদের অংশসহ) করে ভোগ-দখল করলে যদি অভিশপ্ত না হয়, সম্পর্ক অবনতি না হয়, পরস্পরের বংশধরদের আপ্যায়ন পাওয়ার অধিকার থাকে, পরস্পরের সুখে-দুঃখে এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতা থাকে, তো বোনদের অপরাধ কোথায়? বোনের প্রাপ্য সম্পত্তি ভাই ভোগদখল করবে সারা জীবন, ফুফুর সম্পত্তি ভাইপো ভোগদখল করবে জোর করে; তাতে অপরাধ হবে না– অথচ পিতামাতার সম্পত্তির বৈধ প্রাপ্যাংশ কন্যা ভোগদখল করলেই ‘অভিশপ্ত’ হবে– এটা কোন নীতি-ধর্মের কথা?


ইসলাম ধর্মে ও আমাদের রাষ্ট্রীয় আইনে অন্যের প্রাপ্য সম্পত্তি ভোগদখল করার কোনও বৈধতা নেই। বরং কাউকে অধিকার থেকে বঞ্চিত করা পাপ, অপরাধ। নারী তো ভাইয়ের সম্পত্তি পায় না, পিতামাতার সম্পত্তি পায়। এতে ভাইয়ের রাগ করার, ‘অভিশাপ’ দেওয়ার বৈধতা ও যৌক্তিকতা কোথায়? ভাইকে প্রাপ্যাংশ দিতে কষ্ট না থাকলে, বোনকে দিতে এত কষ্ট কেন?


অবাক ব্যাপার, যে বাবা মেয়েকে বেশি আদর দেখায়, পুত্র-পুত্রবধূ রেখেও মেয়ের সেবা-যত্ন প্রত্যাশা করে মৃত্যু শয্যায়; সে বাবাই তার সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি অনেক সময় কূটকৌশলে ছেলের দখলে দিয়ে মরে যায়। এমন অনেকেই আছেন, ধর্মীয় সকল নিয়ম-কানুন মেনে চলেন কিন্তু নিজের মেয়ে সন্তানদের বঞ্চিত করে ভালো মানুষ সাজেন!


মেয়েদের বঞ্চিত করে ছেলেদের নামে মূল্যবান জমি-বাড়ি দলিল করে দখল দিয়ে যান এমন নীতি-আদর্শহীন বাবার সংখ্যাও আমাদের সমাজে কম নয়। যে ভাইয়ের জন্য সবার আগে নির্দ্বিধায় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এমনকি প্রাণও দিতে পারে বোন; সেই ভাই-ই বোনের প্রাপ্যাংশ না দেওয়ার জন্য বা কম দেওয়ার জন্যে আঁটে নানান কূটকৌশল। কেউ কেউ বছরে দু-একটা দাওয়াত ও কাপড়চোপড় দিয়েই সারতে চায় বোনের প্রাপ্য সম্পত্তি না দেওয়ার দায়। কোনও অধিকার সচেতন বোন তার প্রাপ্যাংশের দাবিতে সোচ্চার হলে, বিচারপ্রার্থী হলে, আদালতের আশ্রয় নিলে, ভাই ধর্মীয় পোশাক পরে ভালো মানুষ সেজে হাজির হয় বিচারকের সামনে। কোনও অসতর্ক, অসুস্থতা বা বিপদের সময় বাবার, মায়ের, বোনের স্বাক্ষর/টিপসই নিয়ে বোনকে অধিকার বঞ্চিত করে বা করার চেষ্টা করে, এমন ভাইয়ের সংখ্যাও অনেক। এমন ভাইকেও বলা হয় আপন ভাই!


সাধারণত ধনী পরিবারের কন্যার সঙ্গে ধনী পরিবারের পুত্রেরই বিয়ে। এটা আমাদের সমাজে বেশি হয়। সেসব বিয়েতে বিয়ের দেনমোহরও ধার্য হয় তুলনামূলক বেশি। অথচ ধনী পিতার সম্পত্তির প্রাপ্যাংশ যদি ওই মেয়ে ও তার সন্তানেরা না-ই পায়, তো তাকে অধিক মূল্যায়নের ভিত্তি কোথায়?


যুগ যুগ ধরে পুত্রসন্তানের ভোগদখলে দিয়ে রাখে সব সম্পত্তি। সেই মেয়ে কখনও সম্পত্তির অধিকার চাইতে গেলে বলা হয়, তোমাকে লালন-পালন করা হয়েছে, লেখাপড়া করানো হয়েছে, বিয়ে দেওয়া হয়েছে, আবার সম্পত্তি দেবো কেন!


কী অদ্ভুত কথা! যে ছেলেকে হয়তো মেয়ের চেয়ে ভালোভাবে লালন-পালন করা হয়েছে, অধিক লেখাপড়া করানো হয়েছে, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে, অধিক ব্যয় করে বিয়েশাদি করানো হয়েছে; সেই ছেলের ভোগদখলেই থাকবে সব সম্পত্তি!


বাস্তবে আমাদের অনেক মুসলিম নারী স্বামীর সম্পত্তিতে নিজের নাম লেখানোর ও ভোগ-দখল করার জন্য যতটুকু সংগ্রাম ও অশান্তি করে, পৈতৃক সম্পত্তিতে নিজের নাম জন্মসূত্রে লেখা থাকলেও সেটি ভোগদখল করার জন্য ততটুকু সংগ্রাম করে না। বিভিন্ন যৌক্তিক, অযৌক্তিক ও ভ্রান্ত ধারণার কারণে পৈতৃক সম্পত্তি গ্রহণ ও ভোগদখল না করে উদারতা দেখালেও, নিঃশর্তে দলিল করে ভাইকে দিয়ে দেয় এমন নারীর সংখ্যা নেই বললেই চলে। অর্থাৎ নারীরা তার রক্তের অধিকার পৈতৃক সম্পত্তির দাবি সত্যিকার অর্থে মন থেকে ত্যাগ করতে পারে না, করে না কোনোদিনই। দাবি অব্যাহত রেখেই মৃত্যুবরণ করে। এই দাবির দাবিদার হয় তার সন্তানেরা। দাবি আদায় করতে গেলেই হয় বিবাদ।


কোনও নারী যদি মনে করে তার পিতামাতার নিকট থেকে প্রাপ্যাংশ ভাইকে বা ভাইয়ের সন্তানদের দিয়ে দেবেন, তো এটি মনে রাখা উচিত যে তার এই প্রাপ্য সম্পত্তির ওপর নিজের সন্তানের অধিকার ও দাবিই অগ্রগণ্য। নিজের সন্তানকে বঞ্চিত করে ভাই, ভাইয়ের সন্তানকে সম্পত্তি দেওয়া অনুচিত। ভাইয়ের অভাবের কারণে দিতে হলেও নিজের স্বামী-সন্তানের মতামত নেওয়া প্রয়োজন।


পৈতৃক সম্পত্তিতে নারীর অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হলে যাদের অবৈধ স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে, তাদের গা জ্বালা হওয়া স্বাভাবিক। এর বিপক্ষে তারা যতই যুক্তি খোঁজুক, ফন্দি আঁটুক, পৈতৃক সম্পত্তির (স্থাবর-অস্থাবর) ওপর নারীর এই জন্মগত অধিকার অর্জন ও ভোগ করার জন্য মনের জোর নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে নারীকেই। নিজের ও নিজের কন্যাসন্তানের ন্যায্য পাওনা বুঝে নিতে ও দিতে হবে যেকোনও মূল্যে।


লেখক: অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা।


https://www.banglatribune.com/c/664901/%E0%A6%AA%E0%A7%88%E0%A6%A4%E0%A7%83%E0%A6%95-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%AE-%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80%E0%A6%B0-%E0%A6%85%E0%A6%A7%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%93-%E0%A6%AD%E0%A7%8B%E0%A6%97%E0%A6%A6%E0%A6%96%E0%A6%B2


সবাই এ প্লাস মানুষ হও। দৈনিক ইত্তেফাক, 1 ফেব্রুয়ারি 2021

সবাই এ প্লাস মানুষ হও। দৈনিক ইত্তেফাক, 1 ফেব্রুয়ারি 2021

 সবাই এ প্লাস মানুষ হও

মো. রহমত উল্লাহ্


দৈনিক ইত্তেফাক, ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ 


প্রিয় শিক্ষার্থী, এবার যারা এইচএসসি (হায়ার সেকেন্ডারি সার্টিফিকেট) বা সমমান সনদ অর্জন করেছ তাদের জানাচ্ছি অভিনন্দন। তোমরা জানো, ইতোমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে তোমাদের শিক্ষা মূল্যায়নের ফল। এটি নিয়ে চলছে অনেক আলোচনা, সমালোচনা ও পর্যালোচনা। কেননা, কোভিড ১৯ পরিস্থিতির কারণে আনুষ্ঠানিক পরীক্ষা ব্যতীতই ঘোষণা করা হয়েছে তোমাদের এই ফলাফল। যারা এবার ফরম ফিলাপ করেছিলে তারা সবাই পাস করেছ। জেএসসি বা সমমান ও এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়েছে তোমাদের গ্রেড। অর্থাৎ যারা আগে ভালো ফল করেছিলে তারা এখনো ভালো ফল করেছ। যারা আগে ভালো করতে পারোনি তাদের ফল এখনো তেমন ভালো হয়নি। পিছনে আর ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। মনে রাখতে হবে, সবসময়ই ভালো করার চেষ্টা করা জরুরি। গুরুত্ব দিতে হবে জীবনের প্রতিটি স্তরে। কোন কিছুকেই হালকা করে দেখার বা অবহেলা করার কোন সুযোগ নেই।


যে যাই বলুক, তোমাদের আস্থা রাখতে হবে নিজের উপর। নিজেকে নিজে অযোগ্য ভাবা উচিত নয়। মানুষ সর্বদাই তার উত্তম চিন্তা, চেতনা, চেষ্টা ও কাজের দ্বারা উত্তম। পরীক্ষা দিতে না পারার দায় তোমাদের নয়। তোমরা পরিস্থিতির শিকার। ভালো করার জন্য তোমাদের প্রস্তুতি ছিল, ইচ্ছা ছিল, চেষ্টা ছিল এবং নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দেওয়ার সৎ সাহস ছিল; এখানেই তোমরা উত্তম। আগের পরীক্ষায় তোমরা উত্তীর্ণ হয়েছিলে বলেই এই পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হয়েছো; এখানেও তোমরা উত্তম। তোমাদের সেই জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে অনেকেই, কৃতকার্য হয়েছ তোমরা। সেজন্য তোমাদেরও অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারো কথায় কিছুই যায় আসে না তোমাদের! একটুও মন খারাপ করা চলবে না কারো উপহাসে, অবহেলায়, বাঁক কথায়। তোমাদের ভাবতে হবে, বলতে হবে ও বিশ্বাস করতে হবে; মোটেও অটো পাস করো নি তোমরা। না, এটি কোন মিথ্যা কথা নয়। এটিই সত্য কথা, এটিই সঠিক কথা, এটিই যুক্তিযুক্ত কথা। কেননা, এমনি এমনিই পাস করানো হয়নি তোমাদের। মুক্ত হস্তে দান করা হয়নি তোমাদের এই সুফল। কারো দয়া বা অনুগ্রহের ফসল নয় এটি। তোমাদের পূর্ববর্তী শিক্ষার মূল্যায়নের ভিত্তিতেই তোমরা অর্জন করেছ এই গ্রেড। মোটেও ভিত্তিহীন নয় তোমাদের সনদ। তোমরা নিজের যোগ্যতায়ই পাস করেছ জেএসসি ও এসএসসি এবং সমাপ্ত করেছ এইসএসসি এর সম্পূর্ণ সিলেবাস। তোমাদের প্রস্তুতি ছিল, অধিকার ছিল, পরীক্ষা দিয়ে নিজের বাড়তি যোগ্যতা প্রমাণ করার। কিন্তু করোনা মহামারীর হাত থেকে জীবন রক্ষার স্বার্থে তোমাদের পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। এই ব্যর্থতার দায় মোটেও তোমাদের নয়। বরং মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ দয়ায় ২০২০ সালে তোমরা বেঁচে আছো এটিই সফলতা।


মনে রাখতে হবে, জীবন অনেক দীর্ঘ। জীবনে সফলতার পথ অবারিত। তোমাদের মেধা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখার ক্ষেত্র অগণিত। মানুষের পুরো জীবনটাই পরীক্ষাক্ষেত্র। একটি পরীক্ষা দিতে পারোনি বলে হতাশ হলে চলবে না। তোমাদের যদি ঐকান্তিক ইচ্ছা থাকে, আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকে, সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়ার দিশা থাকে; তো অবশ্যই তোমরা সফল হবে জীবনের বিভিন্ন পরীক্ষায়। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, বিজয়ী হতে হবে মানুষ হবার পরীক্ষায়। সেখানে রাখতে হবে মেধার স্বাক্ষর, যোগ্যতার প্রমাণ, হতে হবে উত্তম। আমাদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষার এই প্রচলিত পরীক্ষায় যারা এক বা একাধিক বিষয়ে এ প্লাস পেয়েছ এবং যারা কোন বিষয়েই এ প্লাস পাওনি তাদের সবাই হয়ে উঠতে হবে এ প্লাস মানুষ। অর্থাৎ তোমাদের হতে হবে সেরা মানুষ, শ্রেষ্ঠ মানুষ, উত্তম মানুষ। এ প্লাস হচ্ছে পজেটিভ সাইন, উত্তমের প্রতীক, শ্রেষ্ঠত্বের উপমা। তোমরা যখন সৎ হবে, নীতিবান হবে, বিবেকবান হবে, বিজ্ঞানমনস্ক হবে, উৎপাদনক্ষম হবে, দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হবে; সর্বোপরি মানুষের কল্যাণে ও স্রষ্টার সন্তুষ্টিতে নিবেদিত হবে তখনই তোমরা হবে এ প্লাস মানুষ। তখনই তোমরা হবে সৃষ্টির সেরা জীব। তাইতো আমি বার বার বলি, ভালো করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হও, সর্বশক্তি দিয়ে সচেষ্ট হও, সাধ্যমত এগিয়ে যাও, সৎকর্মে নিবেদিত হও, মানুষ হবার পরীক্ষায় বিজয়ী হও। সেখানেই চূড়ান্ত সফলতা।


লেখক : অধ্যক্ষ - কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা


https://www.ittefaq.com.bd/anushilon/218850/%E0%A6%B8%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%87-%E0%A6%8F-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%B8-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%81%E0%A6%B7-%E0%A6%B9%E0%A6%93

পত্রিকার লিংক