প্রবন্ধ- 'গ্রেডিং পদ্ধতিতে ফলাফল এবং শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালা' -ইত্তেফাক- ০৮ জুন ২০১৩

প্রবন্ধ- 'গ্রেডিং পদ্ধতিতে ফলাফল এবং শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালা' -ইত্তেফাক- ০৮
জুন ২০১৩
গ্রেডিং পদ্ধতিতে ফলাফল এবং শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালা -ইত্তেফাক

দৈনিক ইত্ত্ফাক, ৮ জুন ২০১৩ ২৫ জৈষ্ঠ্য ১৪২০

শিক্ষা
গ্রেডিং পদ্ধতিতে ফলাফল এবং শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালা
মো. রহমত উল্লাহ্
কেউ স্বীকার করুক আর নাই করুক একথা সত্য যে, বর্তমান সরকারের আমলে আমূল অনুকূল পরিবর্তন এসেছে শিক্ষা ক্ষেত্রের বিভিন্ন দিকে। শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রেও এসেছে বেশকিছু লক্ষণীয় পরিবর্তন। আগের তুলনায় অনেক কমে এসেছে ভর্তি বাণিজ্যের সুযোগ। আমাদের দেশের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ছিল না অতীতে। এ ব্যাপারে বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে বর্তমান সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করা, ভর্তি ফি নির্ধারণ করা ও অন-লাইনে ভর্তির ব্যবস্থা করা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। PSC, JSC, SSC পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ভর্তি করা হচ্ছে পরবর্তী শ্রেণীতে। এতে হরাস পেয়েছে ভর্তি কোচিং বাণিজ্য। বিভিন্ন কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে যেখানে ভালো ফলাফলধারী শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতা চরমে সেখানেই বর্তমান গ্রেডিং পদ্ধতির নির্ধারিত ধাপসমূহ অনেকটা অকার্যকর। বিশেষ করে যে সকল প্রতিষ্ঠানে সকল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা সকল বিষয়ে GPA-5 (A+) প্রাপ্ত হয় সে সকল প্রতিষ্ঠানে শুধুমাত্র গ্রেডিং পদ্ধতির ফলাফলের ভিত্তিতে ভর্তির জন্য বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার কার্যকর করা অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়াতেও অসম্ভব। চলতি ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণীতে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য প্রকাশিত নীতিমালায়ও এর প্রমাণ মিলে। যাতে বলা হয়েছে: 'ভর্তির জন্য কোন বাছাই বা ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে না। কেবল শিক্ষার্থীর এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ভর্তি করা হবে। জিপিএ- ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সকল বিষয়ের উপর সর্বমোট ৪৩ গ্রেড পয়েন্ট ধরে প্রাপ্ত জিপিএ-এর ভিত্তিতে মেধাক্রম নির্ধারণ করতে হবে। ( ৯ বিষয়ের প্রতি বিষয়ে গ্রেড পয়েন্ট ৫ হিসাবে ৪৫ পয়েন্ট হওয়ার কথা। কিন্তু চতুর্থ বিষয়ে ২ পয়েন্ট বাদ দেয়ার কারণে ৪৩ পয়েন্ট হয়েছে)। * বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির ক্ষেত্রে সমান জিপিএ প্রাপ্তদের মেধাক্রম নির্ধারণের জন্য সাধারণ গণিত অথবা উচ্চতর গণিত/জীববিজ্ঞানে প্রাপ্ত জিপিএ বিবেচনায় আনতে হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে ইংরেজি, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞানে প্রাপ্ত জিপিএ বিবেচনায় আনতে হবে। * মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ক্ষেত্রে সমান জিপিএ অর্জিতদের বিষটি নিষ্পত্তির লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে ইংরেজি, গণিত ও বাংলা বিষয়ে অর্জিত জিপিএ বিবেচনায় আনতে হবে। * এক বিভাগের শিক্ষার্থী অন্য বিভাগে ভর্তির ক্ষেত্রে একাধিক প্রার্থীর মোট জিপিএ সমান হলে পর্যায়ক্রমে ইংরেজি, গণিত ও বাংলা বিষয়ে অর্জিত জিপিএ বিবেচনায় আনতে হবে। * তদুপরি উল্লিখিত নিয়মে মেধাক্রম নির্ধারণ করা না গেলে পর্যায়ক্রমে প্রাপ্ত মোট নম্বর ও বর্ণিত একই নিয়মে বিষয় ভিত্তিক প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম নির্ধারণ করা হবে।' লক্ষণীয় যে, এই নীতিতেই স্বীকার করা হয়েছে; মেধাক্রম নির্ধারণের জন্য গোপনে হলেও (গোপন থাকবে কি শেষ পর্যন্ত?) শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর জানার প্রয়োজন আছে।

যেমন ধরা যাক, ভালো শিক্ষার্থীদের একটি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে আসনসংখ্যা ১০০ টি। সেখানে সকল বিষয়ে A+ অর্জনকারী ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫০ জন। যেহেতু ভর্তিচ্ছু সকল শিক্ষার্থীই সকল বিষয়ে A+ বা GPA-5 প্রাপ্ত সেহেতু এই নিয়মে কাউকেই বাদ দেয়ার যুক্তিযুক্ত কোন উপায় নেই। এ ক্ষেত্রে লটারির মাধ্যমে বাছাই করা হলেও মেধাবীদের প্রতি সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হবে না। উল্লিখিত উদাহরণটি নাম ধরে দেবার মতো একাধিক কলেজ রয়েছে প্রতিটি শিক্ষাবোর্ডের অধীনেই। তাই মেধাক্রম নির্ধারণে শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর বিবেচনায় নেয়া না হলে সুবিচার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। বিশেষ করে ৮০ নম্বর থেকে ১০০ নম্বর পর্যন্ত প্রাপ্ত সকলেরই যখন নির্ধারিত A+ বা GPA-5 অর্থাত্ এক সমান। যে হারে গোল্ডেন রেজাল্ট বেরোচ্ছে তাতে ভর্তি পরীক্ষা ব্যতীত ভর্তির প্রক্রিয়াটি বজায় রাখার প্রয়োজনেই নম্বরপত্র প্রদান করে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতেই নির্ধারণ করা উচিত ভর্তির যোগ্যতা। অন্যথায় পুনর্বিন্যাস করা উচিত বিদ্যমান গ্রেডিং পদ্ধতি। কোন বিষয়ে ৭০ থেকে ৮০ পাওয়া যত কঠিন তার চেয়ে শতগুণ বেশি কঠিন ৮০ থেকে ৮৫ নম্বর, ৮৫ থেকে ৯০ নম্বর ও ৯০ থেকে ৯৫ নম্বর পাওয়া। তাই কোনমতেই এক সমান হওয়া উচিত নয় এ সকল শিক্ষার্থীর ফলাফল গ্রেড। তাই ৯০ এর ঊর্ধ্বে নম্বর প্রাপ্তদের জন্য নির্ধারণ করা উচিত A++ বা GPA-5.5। তদুপরি কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের SSC পরীক্ষার নম্বরের সাথে মূল্যায়ন করা উচিত JSC পরীক্ষার নম্বর। যাতে আরো বেশি সঠিক হবে মেধাবী বাছাই এবং আরো গুরুত্ব বাড়বে JSC পরীক্ষার। তা না হলে গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে JSC পরীক্ষা এবং ধস নেমে আসবে এর ফলাফলে। শুধু তাই নয়, সকল পরীক্ষার ফলাফলে প্রস্তাবিত গ্রেড প্রবর্তন করে অথবা নম্বরপত্র প্রদান করে পূর্ববর্তী একাধিক সরকারি পরীক্ষার ফলাফল বিবেচনায় আনা উচিত, তাহলে শিক্ষা ক্ষেত্রেও বাতিল করা সম্ভব হবে ভর্তি পরীক্ষা ও ভর্তি বাণিজ্য।

লেখক :অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা
http://www.ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMDZfMDhfMTNfMV80XzFfNDY5Nzk=

প্রবন্ধ- 'গার্স ক্যাডেট কলেজের সংখ্যা বাড়াতে হবে' -ইত্তেফাক- ২৯ জুন ২০১৪

প্রবন্ধ- 'গার্স ক্যাডেট কলেজের সংখ্যা বাড়াতে হবে' -ইত্তেফাক- ২৯ জুন ২০১৪
গার্স ক্যাডেট কলেজের সংখ্যা বাড়াতে হবে -ইত্তেফাক

দৈনিক ইত্তেফাক, ২৯ জুন ২০১৪
আরো বৃদ্ধি করা উচিত গার্লস ক্যাডেট কলেজের সংখ্যা
মো. রহমত উল্লাহ্‌
এ বছর ১০ শিক্ষাবোর্ডে ৭ লাখ ৭১ হাজার ৬৯০ জন ছেলে পরিক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে ৯১ দশমিক ৮৪ শতাংশ। অন্যদিকে ৬ লাখ ৯৫ হাজার ২৩৩ জন মেয়ে অংশ নিয়ে পাস করে ৯০ দশমিক ৮১ শতাংশ। গত বছর মেয়েদের পাসের হার ছিল ৮৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং ছেলেদের পাসের ছিল ৮৯ দশমিক ১৮ শতাংশ। সাধারণ ৮ শিক্ষাবোর্ডের ক্ষেত্রেও মেয়েদের চেয়ে ছেলেরা পাসের হারে এগিয়ে রয়েছে। একইভাবে জিপিএ-৫ এর ক্ষেত্রেও মেয়েদের চেয়ে ছেলেরা এগিয়ে আছে। ৮ সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই বোর্ডগুলোতে সর্বমোট ১ লাখ ২২ হাজার ৩১৩ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৪ হাজার ৪১৪ জন এবং মেয়ে ৫৭ হাজার ৮৯৯ জন। (ইত্তেফাক রিপোর্ট(>১৮ মে ২০১৪)।

সারাদেশে মোট পাশের হার ও প্রাপ্ত জিপিয়ের হিসাবে এবার মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা সামান্য এগিয়ে থাকলেও সমান সুবিধা প্রাপ্ত মেয়েরা কিন্তু পিছিয়ে নেই মোটেও। যেমন জেলার শীর্ষস্থান দখল করেছে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়’। কক্সবাজারে জিপিএ-৫ পেয়েছে এক হাজার ১৪০ জন, যা গত বছরের তুলনায় ১৮০ জন বেশি। এই বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরিক্ষা দিয়েছে ২৫০ জন। এর মধ্যে পাস করে ২৪৯ জন। পাসের হার ৯৯ দশমিক ৬০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৭০ জন। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সেরা ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় এই বিদ্যালয়ের অবস্থান। (প্রথম আলো>১৮ মে ২০১৪)। শুধু তাই নয়। সারাদেশে অবস্থিত বিশেষ প্রতিষ্ঠান গুলুতেও মেয়েরা কেউ পিছিয়ে নেই। ভিকারুন্নেসা নুন কলেজ, ফেনি গার্স ক্যাডেট কলেজ, জয়পুর হাট গার্স ক্যাডেট কলেজ ও ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের মেয়েরাই স্বস্ব শিক্ষা বোর্ডে দখল করে আছে উল্লেখযোগ্য স্থান।

একটু পিছনে তাকালেও দেখা যায় আরো উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। গত ১৬ জুলাই ২০১০ তারিখে প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছিলো একটি রঙিন ছবি। যার নিচে লেখাছিলো- ‘ঢাকা বোর্ডের মেধা তালিকায় প্রথম হওয়া ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কলেজের প্রিন্সিপাল’। আমরা অনেকেই হয়ত গভীর ভাবে খেয়াল করিনি যে, আমাদের অনেক কথা, অনেক ম্যাসেস, অনেক অহংকার সংযুক্ত ছিলো সেই ছবিতে। লাল-সবুজ পতাকার পাশে সোনালি আলোয় ঝলমল করছিলো খাকি পোশাক। সোনালি পোশাক পরিহিত প্রতিটি ক্যাডেটই যেন নিখাদ স্বর্ণের অলংকার। মজবুত হাতের বন্ধন। মাথায় বিশ্ব জয়ের মুকুট। অপলক দুরদৃষ্টি। সুদৃঢ় আসন গ্রহণ। আত্মপ্রত্যয়ে ভরপুর। এরা পঞ্চাশ জন। ২০১০ সালের এইচ.এস.সি. পরিক্ষায় সবাই (দু’জন ব্যতীত) অর্জন করেছে জ.পি.এ.-৫। সেরা হয়েছে ঢাকা বোর্ডে। সেরা হয়েছে সমগ্র বাংলাদেশে। শুধু এরাই নয়, আমাদের অন্যান্য মেয়েরাও এগিয়ে গেছে অনেক। জীবন চলার পথে হটিয়ে দিয়েছে আমাদের ইভটিজার ছেলেদের। এরাই দেশের অহংকার। আমাদের আজকের সফল মেয়েরা তথা আগামী দিনের শ্রেষ্ঠ মায়েরা নিঃশব্দে বলে দিয়েছে- 'কোন কোটা নয়- অগ্রধিকার নয়- অনুকম্পা নয়, প্রাপ্য সুযোগ পেলে আমরাও করতে পারি জয়, আমরাও করতে পারি সর্বোচ্চ আসন গ্রহণ’।

আসলে আমরা কি এখনো নিশ্চিত করতে পেরেছি আমাদের মেয়েদের সুশিক্ষা অর্জনের মৌলিক অধিকার? পারিবারিক, সামাজিক এমনকি রাষ্ট্রীয় ভাবেও মেয়েদের মেধানুসারে সর্বোচ্চ অর্জনের সুযোগ ও অনুকুল পরিবেশ তুলনামুলক ভাবে অনেক কম। মুধুমাত্র ক্যাডেট কলেজের কথাই ধরা যাক। ক্যাডেট কলেজ সমূহের প্রসপেক্টাস অনুসারে- ‘বাংলাদেশে বিদ্যমান ক্যাডেট কলেজ সমূহ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধিনে সেনাবাহিনীর এ্যাডজুটেন্ট জেনারেল এর প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে স্বায়ত্বশাসিত আবাসিক প্রতিষ্ঠান। স্বাধীনতা পূর্বকালে মোট ৪ টি ক্যাডেট কলেজ ছিল। জাতীয় জীবনে ক্যাডেট কলেজের প্রভূত অবদানের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীনতা উত্তর-কালে আরো ৮ টি ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে মোট ১২ টি ক্যাডেট কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে ৯ টি ছেলেদের এবং ৩ টি মেয়েদের। এখানে ইংরেজি মাধ্যমে জাতীয় পাঠ্যক্রম বাস্তবায়নের পাশাপাশি ক্যাডেটদের শারীরিক, মানসিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, চারিত্রিক, সাংস্কৃতিক ও নেতৃত্বের গুণাবলী বিকাশের লক্ষে শিক্ষা সম্পূরক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এই শিক্ষা কার্যক্রম একজন ক্যাডেটকে সম্যক রূপে বিকশিত করে। ফলে শিক্ষা শেষে শিক্ষার্থীরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে প্রশংসনীয় দক্ষতার ও সাফল্যের স্বাক্ষর রাখে।’ এখানে সুস্পষ্ট ভাবে লক্ষণীয় যে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত হওয়া সত্ত্বেও উল্লিখিত সুশিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সুযোগ মাত্র এক তৃতীয়াংশ। মোট ১২ টি ক্যাডেট কলেজে প্রতি বৎসর কম/বেশি ৬০০ জন বাছাইকৃত উত্তম শিক্ষার্থী ৭ম শ্রেণীতে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে ৪৫০ জন ছেলে এবং মাত্র ১৫০ জন মেয়ে ভর্তির সুযোগ পায়। সারা দেশে বিদ্যমান যোগ্য শিক্ষার্থীর তুলনায় এই সংখ্যা একেবারেই নগন্য। এই নগন্য সুযোগ টুকুও এসেছে মাত্র কিছু দিন আগে। সকল ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষে নারী পুরুষ উভয়ের আত্বত্যগে স্বাধীনতা অর্জনের ১০ বৎসর পর ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আজকের সেরা ‘ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ’। দেশের প্রথম ও একমাত্র এই গার্লস ক্যাডেট কলেজে প্রতি এক বৎসরে ভর্তির সুযোগ সৃষ্টি হয় সারাদেশ থেকে মাত্র ৫০ জন মেয়ের। বঞ্চিত হতে থাকে অন্যরা। চরম অবহেলায় কেটে যায় আরো অনেক সময়। স্বাধীনতার ৩৪ বৎসর পর ২০০৬ সালে এসে প্রতিষ্ঠিত হয়- ‘ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজ’ ও ‘জয়পুরহাট গার্লস ক্যাডেট কলেজ’। এখনো অধিক বঞ্চিত মেয়েরাই। অথচ আর কোন ক্যাডেট কলেজ স্থাপিত হয়নি এর পর। না মেয়েদের, না ছেলেদের।

দেশ ও জাতির সার্বিক অগ্রগতি ত্বরান্নিত করার লক্ষে অধিক যোগ্য নাগরিক-কর্মী তৈরির জন্যই বৃদ্ধি করা প্রয়োজন মোট ক্যাডেট কলেজের সংখ্যা। তবে সর্বগ্রে আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি করতে হবে গার্লস ক্যাডেট কলেজ। সামরিক বাহিনীসহ সকল কর্মক্ষেত্রে প্রায় সমান তালেই অংশ নিচ্ছে মেয়েরা। কোটায় চাকরি দিয়ে দয়া দেখানোর চেয়ে শিক্ষার সুযোগ দিয়ে সুযোগ্য করেই বৃদ্ধি করা সম্ভব নারীর প্রকৃত মর্যাদা ও ক্ষমতা। তাই আমাদের যোগ্য মেয়েদের জন্য রাষ্ট্রীয় ভাবে নিশ্চিত করতে হবে সুশিক্ষা অর্জনের প্রাপ্য অধিকার। মনে রাখতে হবে- শ্রেষ্ঠ মাতা গঠনই শ্রেষ্ঠ জাতি গঠনের পূর্বশর্ত। //

শিক্ষাবিদ এবং অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা।

প্রবন্ধ- কেমন হবে ঈদের জামা। ইত্তেফাক- ২১ জুলাই ২০১৪


দৈনিক ইত্তেফাক
২১ জুলাই ২০১৪
কেমন হবে ঈদের জামা
মো. রহমত উল্লাহ্
ঈদ শব্দের অর্থ আনন্দ! বিশ্বের সকল মুসলমানদের সবচেয়ে বড় আনন্দ উত্সব হচ্ছে ঈদ! এই ঈদের আনন্দ বৃদ্ধির জন্যই চাই নতুন জামা। ছোট-বড়, ছেলে-মেয়ে, নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ, ধনী-গরীব, সবারই চাই দু’একটি নতুন জামা। নতুন জামা না হলে যেনো ঈদই হয় না। তো কেমন হবে ঈদের নতুন জামা? সাদা, লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, কমলা, বেগুনি, আকাশী, নাকি সব রঙের? ছোট নাকি বড়? হাফ-ফুল নাকি থ্রিকোয়ার্টার? সালোয়ার-কামিজ নাকি প্যান্ট-শার্ট? পায়জামা-পাঞ্জাবি নাকি শাড়ি-লুঙ্গি? ফতুয়া নাকি গেঞ্জি? কাতুয়া নাকি লেহেঙ্গা? দেশি নাকি বিদেশি? টাইটফিট নাকি লুজফিট? মশারি মতো পাতলা নাকি চটের মতো মোটা? নায়ক-নায়িকার মতো নাকি ধর্মীয় আদলে? শালীন নাকি অশালীন? শোভন নাকি অশোভন? যেমন ইচ্ছে তেমন, নাকি যেমন নিয়ম তেমন? নিয়ম মেনে ইচ্ছে, নাকি ইচ্ছে মেনে অনিয়ম? নিয়ম কিসের? ঈদের নিয়ম। কিসের ঈদ? মুসলমানদের ঈদ। ইসলাম ধর্মের ঈদ। ইসলাম ধর্মের নিয়মইতো ঈদের নিয়ম। মুসলমানদের পোশাকইতো মুসলমানদের ঈদের জামা। মুসলমানদের পোশাক কী? শালীন পোশাক। পবিত্র পোশাক। শালীন, পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র পোশাক বৃদ্ধি করে নিজের মনের পবিত্রতা। অন্যের মনে জায়গায় শ্রদ্ধাবোধ। অশালীন পোশাক নিজের ও অন্যের মনে জাগাতে পারে অশুভ চিন্তা। রঙিন পোশাকে রাঙিয়ে তুলে মন। শুভ ভাবনা জাগায় শোভন পোশাক।

জামা-কাপড়ের নাম যা-ই হোক, দেশি হোক আর বিদেশি হোক, বেশি দামি হোক আর কম দামি হোক, সাদা হোক আর রঙিন হোক, সিম্পল হোক আর ফ্যাসনেবল হোক, জাতীয় হোক আর বিজাতীয় হোক, মুসলমানদের ঈদের পোশাক অবশ্যই হতে হবে ইসলাম ধর্মের দৃষ্টিতে শালীন। কেননা ঈদ কেবল ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। ঈদ অর্থ আনন্দ হলেও, লাগামহীন নয় এই আনন্দ। সামাজিক, পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান যেমন ঐ সমাজ, পরিবার ও রাষ্ট্রের বিধিবিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত; তেমনি সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠানও ঐ ধর্মের বিধিবিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অন্যান্য উত্সবের চেয়ে এর মাহাত্ম্য মুসলমানদের জন্য অনেক বেশি। সমাজের সকল মুসলমান একসাথে ঈদ উদযাপন করলেও এটি কেবল সামাজিক অনুষ্ঠান নয়; এটি মূলত ইসলাম ধর্মের একটি বিধান পালন বা ইবাদত।

মহান আল্লাহ্তায়ালার নির্ধারিত বিধান অনুসারে ঈদ উদযাপন যেমন পুণ্য কর্ম; তেমনি সেই বিধান অমান্য করে যথেচ্ছ পোশাক পরে ঈদের নামে লাগামহীন আনন্দ-উত্সব মুসলমানদের জন্য পাপ কর্ম। আল্লাহ্তায়ালা আমাদেরকে এই পাপ কর্ম থেকে হেফাজত করুন। যেনো কোন হুজুগে আমরা ভুলে না যাই, কেমন হবে আমাদের ঈদের জামা। যেনো নিজেরা পরতে পারি সত্যিকার ঈদের আসল জামা এবং উপহার দিতে পারি অন্যকেও।

লেখক: অধ্যক্ষ,(কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা, Email: rahamot21@gmail.com



প্রবন্ধ- কেমন হবে ঈদের পোশাক। আলোকিত বাংলাদেশ- ০৮ আগস্ট ২০১৩

আলোকিত বাংলাদেশ
০৮ আগস্ট ২০১৩
কেমন হবে ঈদের পোশাক 
মো. রহমত উল্লাহ্
ঈদ শব্দের অর্থ আনন্দ! বিশ্বের সকল মুসলমানদের সবচেয়ে বড় আনন্দ উত্সব হচ্ছে ঈদ! এই ঈদের আনন্দ বৃদ্ধির জন্যই চাই নতুন জামা। ছোট-বড়, ছেলে-মেয়ে, নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ, ধনী-গরীব, সবারই চাই দু'একটি নতুন জামা। নতুন জামা না হলে যেনো ঈদই হয় না। তো কেমন হবে ঈদের নতুন জামা? সাদা, লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, কমলা, বেগুনি, আকাশী, নাকি সব রঙের? ছোট নাকি বড়? হাফ-ফুল নাকি থ্রিকোয়ার্টার? সালোয়ার-কামিজ নাকি প্যান্ট-শার্ট? পায়জামা-পাঞ্জাবি নাকি শাড়ি-লুঙ্গি? ফতুয়া নাকি গেঞ্জি? কাতুয়া নাকি লেহেঙ্গা? দেশি নাকি বিদেশি? টাইটফিট নাকি লুজফিট? মশারি মতো পাতলা নাকি চটের মতো মোটা? নায়ক-নায়িকার মতো নাকি ধর্মীয় আদলে? শালীন নাকি অশালীন? শোভন নাকি অশোভন? যেমন ইচ্ছে তেমন, নাকি যেমন নিয়ম তেমন? নিয়ম মেনে ইচ্ছে, নাকি ইচ্ছে মেনে অনিয়ম? নিয়ম কিসের? ঈদের নিয়ম। কিসের ঈদ? মুসলমানদের ঈদ। ইসলাম ধর্মের ঈদ। ইসলাম ধর্মের নিয়মইতো ঈদের নিয়ম। মুসলমানদের পোশাকইতো মুসলমানদের ঈদের জামা। মুসলমানদের পোশাক কী? শালীন পোশাক। পবিত্র পোশাক। শালীন, পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র পোশাক বৃদ্ধি করে নিজের মনের পবিত্রতা। অন্যের মনে জায়গায় শ্রদ্ধাবোধ। অশালীন পোশাক নিজের ও অন্যের মনে জাগাতে পারে অশুভ চিন্তা। রঙিন পোশাকে রাঙিয়ে তুলে মন। শুভ ভাবনা জাগায় শোভন পোশাক।

জামা-কাপড়ের নাম যা-ই হোক, দেশি হোক আর বিদেশি হোক, বেশি দামি হোক আর কম দামি হোক, সাদা হোক আর রঙিন হোক, সিম্পল হোক আর ফ্যাসনেবল হোক, জাতীয় হোক আর বিজাতীয় হোক, মুসলমানদের ঈদের পোশাক অবশ্যই হতে হবে ইসলাম ধর্মের দৃষ্টিতে শালীন। কেননা ঈদ কেবল ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। ঈদ অর্থ আনন্দ হলেও, লাগামহীন নয় এই আনন্দ। সামাজিক, পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান যেমন ঐ সমাজ, পরিবার ও রাষ্ট্রের বিধিবিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত; তেমনি সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠানও ঐ ধর্মের বিধিবিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অন্যান্য উত্সবের চেয়ে এর মাহাত্ম্য মুসলমানদের জন্য অনেক বেশি। সমাজের সকল মুসলমান একসাথে ঈদ উদযাপন করলেও এটি কেবল সামাজিক অনুষ্ঠান নয়; এটি মূলত ইসলাম ধর্মের একটি বিধান পালন বা ইবাদত।

মহান আল্লাহ্তায়ালার নির্ধারিত বিধান অনুসারে ঈদ উদযাপন যেমন পুণ্য কর্ম; তেমনি সেই বিধান অমান্য করে যথেচ্ছ পোশাক পরে ঈদের নামে লাগামহীন আনন্দ-উত্সব মুসলমানদের জন্য পাপ কর্ম। আল্লাহ্তায়ালা আমাদেরকে এই পাপ কর্ম থেকে হেফাজত করুন। যেনো কোন হুজুগে আমরা ভুলে না যাই, কেমন হবে আমাদের ঈদের জামা। যেনো নিজেরা পরতে পারি সত্যিকার ঈদের আসল জামা এবং উপহার দিতে পারি অন্যকেও।

লেখক: অধ্যক্ষ,(কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা, Email: rahamot21@gmail.com