সরকারিদের টিউশন-ফি বাড়িয়েই জাতীয়করণ সম্ভব সকল যোগ্য ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
মো. রহমত উল্লাহ্ | মার্চ ৩১, ২০১৭, দৈনিক শিক্ষা।
দৈনিক শিক্ষা ডটকমে প্রকাশিত খবরে জানাযায়, আগামী বাজেটে (২০১৭-১৮) দেশের সব সরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি পাঁচগুণ বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ বিষয়ে আমার একটি লেখা দৈনিক শিক্ষায় প্রকাশিত হয়েছিলো গত ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে। যার শিরোনাম ছিলো ‘মোটেও কঠিন নয় সকল যোগ্য ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ’। জানি না আমার সকল পাঠক এবং মাননীয় মন্ত্রীগণের চোখে পড়েছিলো কি না সেই লেখাটি। এই আশায়ই আবারো অতি সংক্ষেপে তুলে ধরছি সেই লেখাটির সংশোধিত অংশবিশেষ।
‘দেশের সকল সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি শ্রেণি ও অবস্থা ভেদে ২শ টাকা থেকে ৩শ টাকা ধার্য করে অনলাইনের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে নিয়ে যোগ্য সকল বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা শিক্ষক-কর্মচারীর চাকুরি জাতীয়করণ করে দেওয়া সম্ভব।
এখন দেশের মানুষের আয় বেড়েছে। এই পরিমান টাকা পরিশোধ করা প্রায় সকল শিক্ষার্থীর পক্ষেই সম্ভব। যারা আসলেই হত দরিদ্র তাদের ফ্রি / হাফ-ফ্রি দেওয়া যেতে পারে। যে ছাত্রছাত্রী শহরে থেকে খেয়ে পরে সরকারি স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারে সে মাসে ২০ টাকার বেশি টিউশন ফি দিতে পারে না এটি নাটক ছাড়া আর কী?
যে শিক্ষক করযোগ্য আয় করেন (বেতন ও অন্যান খাতে) সে বেসরকারি বলে সরকারকে আয়কর দিতে পারে না, এমনকি রিটার্নও জমা দিতে পারে না, এটিও নাটক ছাড়া আর কী?
বর্তমানে হাতেগুনা কয়েকজন শিক্ষার্থী ছাড়া সবাইতো লেখাপড়া করছে বেসরকারি স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারাতো ভর্তিই হচ্ছে অনেক টাকা দিয়ে, আর মাসে মাসে হাজার হাজার টাকা দিচ্ছে টিউশন ফি। তাছাড়াও পরিশোধ করছে আরো শত রকম ফি! এতে কি শিক্ষা বাণিজ্য হচ্ছে না? এতে কি অসার্বজনিন হচ্ছে না আমাদের শিক্ষা?
তাহলে সারাদেশের যোগ্য শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ করে আরো অধিক যোগ্যদেরকে শিক্ষকতায় আগ্রহী করে জাতীয়ভাবে শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য সকল শিক্ষার্থীর টিউশন ফি যুক্তিযুক্ত পর্যায়ে বাড়িয়ে শ্রেণি ও অবস্থা ভেদে একই মাত্রায় ধার্য করা হলে শিক্ষা গেলো, শিক্ষা গেলো, বলে হায় হায় করার বা সমালোচনা করার অথবা আন্দোলন করার কোন উচিত কারণ থাকবে কি?
বাস্তবে অধিকাংশ মানুষ এখন শিক্ষা ও চিকিতসা খাতে টাকা ব্যয় করতে সক্ষম এবং অকৃপন। গ্রামের ছেলেমেয়েরাও এখন দৈনিক ২০-৩০ টাকা খরচ করে চিপস / এনার্জি ডিংস জাতীয় খাবার খেয়ে; কিছু ব্যতীক্রম ব্যতীত। ছাই দিয়ে এখন আর দাঁত মাঝে না কেউ। মোবাইল ফোন এখন ভিক্ষুকসহ সবার হাতে হাতে। গ্রামেও তৈরি হয়েছে প্রাইভেট কেজি স্কুল। সেখানেও অভাব হয় না শিক্ষার্থীর। শহরের ছেলেমেয়েদের মতো গ্রামের অনেকেই ইদানিং যেতে চায় না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
এমতাবস্থায় আবারো বলছি, দেশের বর্তমান আর্থিক অবস্থা অনুসারে সকল শিক্ষার্থীর নিকট থেকে একটি যুক্তিযুক্ত টিউশন ফি নিয়ে এবং সকল শিক্ষকের নিকট থেকে আয়কর রিটার্ন নিয়ে সরকারের আয় বৃদ্ধি করে সকল যোগ্য ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করার মাধ্যমে সারা দেশে একই মানের শিক্ষা নিশ্চিত করা এখন আর মোটেও কঠিন কাজ নয়।
মো. রহমত উল্লাহ্: শিক্ষাবিদ এবং অধ্যক্ষ- কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা।
- See more at: http://www.dainikshiksha.com/%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%95%e0%a7%81%e0%a6%b2-%e0%a6%95%e0%a6%b2%e0%a7%87%e0%a6%9c-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%b2-2/79968/#sthash.00JzdGxp.dpuf