প্রকাশিতঃ যায়যায়দিন, বুধবার ০৯ মার্চ ২০১৬
নারীর সমঅধিকারের আন্দোলন প্রসঙ্গ

পত্রিকার লিংক
সমান অধিকারের অর্থ হচ্ছে যোগ্যতা অনুযায়ী অধিকার বা যোগ্যাধিকার। কোনো কিছু করার বা পাওয়ার যোগ্যতা সমান হলে অধিকার সমান হওয়া আবশ্যক। যোগ্যতার অসমতার যুক্তিযুক্ত কারণেই সব ক্ষেত্রে সবার অধিকার সমান নয়। এই কঠিন সত্যটি শুধু নারী-পুরুষের মধ্যে নয়; পুরুষ-পুরুষ, নারী-নারী তথা সবার জন্যই প্রযোজ্য। তাই কোনো নির্দিষ্ট যোগ্যতা সমান হওয়া সত্ত্বেও সেই যোগ্যতার প্রাপ্যাধিকার সমান না হলে আন্দোলন অপরিহার্য।
পারিবারিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ইত্যাদি অধিকারের ক্ষেত্রভিত্তিক আলোচনা করলেই সুস্পষ্ট হবে- আমাদের দেশে নারীরা কোন অধিকার যোগ্যতা অনুযায়ী ভোগ করছেন, কোন অধিকার ভোগের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বঞ্চিত হচ্ছেন, কোন অধিকার যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও দাবি করছেন এবং কোন কোন ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভোগ করছেন।
পারিবারিক ক্ষেত্রে সন্তান ধারণ, স্তন্যদান, লালন-পালন ইত্যাদি অপূরণীয় ত্যাগের জন্য মায়ের থাকা উচিত সন্তানের ওপর একচ্ছত্র অধিকার। অথচ ছেলের বউ, মেয়ের জামাই এসে ভাগ বসাচ্ছেন সেই অধিকারে। পিতা-মাতার সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট নারীদের অনীহা (নিজের পৈতৃক সম্পত্তির সুবিধা স্বামী-সন্তানকে ভোগ করতে না দিয়ে কেবল স্বামীর ও স্বামীর পৈতৃক সম্পত্তি ভোগের মানসিকতা) এবং সৎসাহসের অভাবই (বাপ/ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকার ও স্বামী/সন্তান কর্তৃক সম্পত্তি হাতছাড়া হওয়ার ভয়) প্রধান কারণ। নারীর এরূপ মানসিকতা ও ভূমিকা সমান অধিকারের পরিপন্থী হলেও কিছু অতি লোভী পুরুষ এর জন্য দায়ী। শুধু নারী কেন, দাবি না করলে পৈতৃক সম্পত্তির অধিকার পুরুষও পায় না সঠিকভাবে। সমাজে চলমান রীতি-নীতি থেকে সৃষ্ট কিছু অযৌক্তিক ধ্যান-ধারণার কারণে, ধনী দরিদ্র শিক্ষিত-অশিক্ষিত সব পরিবারেই বয়োজ্যেষ্ঠ নারী-পুরুষদের দ্বারা অধিক অবমূল্যায়িত কন্যা সন্তানেরা। বিশেষ করে অশিক্ষিত/আধা শিক্ষিত পরিবারে মেয়েদের বিয়েসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত বিষয়ে তাদের মতামত উপেক্ষা করা হচ্ছে প্রায়শই। কোনো কারণে ক্ষিপ্ত হলে সাধারণত নারীরা মানসিকভাবে এবং পুরুষরা শারীরিকভাবে পরস্পরকে আঘাত করে থাকে। শারীরিক শক্তি (যোগ্যতা) কম-বেশি না হলে কেমন হতো এই চিত্র? আসলে অপরকে আঘাত করার অধিকার কারোরই নেই।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৈধ কর্ম সম্পাদন, পারিশ্রমিক দাবি, পেনশন লাভ ইত্যাদি অধিকার সরকারি পর্যায়ে নারী-পুরুষের একই রকম। বেসরকারি ও পারিবারিক ক্ষেত্রে বৈষম্য বিদ্যমান। অনেক যোগ্য নারীকেই বাইরে চাকরি করা থেকে বিরত রাখা হয় সাংসারিক কর্মের প্রয়োজনে। অথচ সংসার কর্মের জন্য যথাযথ মূল্যায়ন করা হয় না তাকে। এ ক্ষেত্রে নারীর প্রতি নারীর (মা, বোন, শাশুড়ি, জা, ননদ) সহায়ক ভূমিকার অভাব লক্ষণীয়। গৃহকর্মীদের আর্থিক ও অনার্থিক সুবিধা একেবারেই নগণ্য; যেটি নির্ধারণ করে থাকেন মহিলারাই। গার্মেন্টসের মতো প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের পারিশ্রমিক অত্যন্ত কম। এসব ক্ষেত্রে যথাযথ পারিশ্রমিক চাওয়া-পাওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু বেকারের সংখ্যাধিক্যের কারণে এটি অর্জিত হচ্ছে না। এক্ষেত্রে শুধু আন্দোলন নয়, কর্মক্ষেত্র বৃদ্ধি জরুরি। তাই উদ্যোক্তা হয়ে এগিয়ে আসতে হবে শিক্ষিত নারীদের।
সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সব নারী তুলনামূলক কম সুবিধা ভোগ করে; এই কথা সর্বাংশে সত্য নয়। জীবনধারণ, স্বাধীন চলাফেরা, পরিবার গঠন, চুক্তি সম্পাদন, শিক্ষালাভ, মাতৃভাষা, স্বাধীন চিন্তা, ধর্ম পালন, সম্পত্তি অর্জন-ভোগ-দান-বিক্রি, সভা-সমিতি করা ইত্যাদি সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার বর্তমানে শিক্ষিত নারীদের নাগালের খুব বেশি বাইরে নয়। তা ছাড়া রাজনীতি ও এনজিও সম্পৃক্ত শিক্ষিত/আধা শিক্ষিত নারীরা এসব অধিকার এখন নিয়মিতই ভোগ করছেন। নিরাপদে বেঁচে থাকা ও স্বাধীন চলাফেরার জন্য যতটুকু নিরাপত্তার প্রয়োজন তা আমাদের রাষ্ট্র দিতে ব্যর্থ। এটি শুধু নারীদের ক্ষেত্রে নয়, পুরুষদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য কম/বেশি। একান্তভাবে স্বধর্ম পালনের অধিকার সাধারণত নারীদের ছিল, আছে এখনো। যদিও নারীরাই তা মানছেন না পুরোপুরি! স্বামীকে তালাক দেয়ার অধিকার, গণ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অধিকার, খোলামেলা পোশাক পরে প্রকাশ্যে চলাফেরা করার অধিকার ইত্যাদি ইসলাম ধর্মে না থাকলেও মুসলমান পরিবারের অনেক নারীই তা ভোগ করছেন। আবার এই আধুনিক (?) নারীরাই ইসলাম ধর্মে প্রদত্ত অধিকার বলে বিয়ের সময় ধার্য ও আদায় করছেন দেনমোহরানার অর্থ (বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বামীর সঙ্গতির অতিরিক্ত) এবং তাদের কেউ কেউ স্বামীর সংসারে এসে বলছেন- ‘জানো না, স্ত্রীর ভরণপোষণের সম্পূর্ণ দায়িত্ব স্বামীর। আমার যা যা লাগে সব তোমার দিতে হবে। ছেলেমেয়ে মানুষ করার দায়িত্ব তোমার। তোমাকেই দিতে হবে কাজের মেয়ের টাকা। তোমার বেতনে না হলে, তুমি চুরি করবে না ডাকাতি করবে সেটি তোমার ব্যাপার! আমার উপার্জিত অর্থ দাবি করার কোনো অধিকার তোমার নেই। আমার টাকা দিয়ে আমার যা ইচ্ছা তা-ই করব।’ আবার তালাকের প্রশ্ন এলে দাবিও আদায় করছেন খোরপোশের অর্থ (উপার্জনক্ষম হলেও)। যেসব আধুনিক (?) নারী ইসলাম ধর্মের বিধান অনুসারে জীবনযাপন করে না, তাদের জন্য এসব অধিকার অগ্রাধিকার নয় কি? শিক্ষিত চাকুরে ছেলেরা তুলনামূলক কম শিক্ষিত বেকার মেয়েদের সংসার সঙ্গী করতে দ্বিধা করে না। কিন্তু শিক্ষিত চাকুরে (কোটায় প্রাপ্ত) মেয়েরা মেনে নেন না এমনটি। আবার কর্তৃত্বও মানতে চান না; করতে চান। করেও কেউ কেউ। অথচ তুলনামূলক কম যোগ্য ছেলে বিয়ে করেই মেয়েরা অর্জন করতে পারেন পারিবারিক কর্তৃত্ব করার অধিকার। ভেঙে দিতে পারেন পুরুষ শাসিত সমাজ। শিক্ষা লাভের অধিকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অধিকার। এই অধিকার অর্জনে সফল হলে অন্যান্য অধিকারের জন্য আন্দোলন তেমন প্রয়োজন পড়ে না। একমাত্র যোগ্যতাই দিতে পারে পূর্ণ অধিকার ও সম্মান। বর্তমানে মেয়েদের শিক্ষা উপ-বৃত্তিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও উৎসাহ দেয়া হচ্ছে শিক্ষালাভের জন্য। যেটি ছেলেদেরও দেয়া উচিত সমানভাবে। অন্যথায় সমাজে তৈরি হবে বিপরীত বৈষম্য। ভোটাধিকার প্রয়োগ করা, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া, বিচার দাবি করা, সরকারের সমালোচনা করা, যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি কর্ম পাওয়া, এসব রাজনৈতিক অধিকার বর্তমানে আমাদের শিক্ষিত নারীরা যোগ্যতার তুলনায় বেশিও ভোগ করছেন ক্ষেত্রবিশেষে। সংসদে আসন সংরক্ষণ, নির্বাচনে ও চাকরিতে কোটা সংরক্ষণ, পত্রিকায় আলাদা পাতা নির্ধারণ, যানবাহনে পৃথক আসন সংরক্ষণ অবশ্যই অগ্রাধিকার।
যেসব শিক্ষিত মেয়েরা সর্বক্ষেত্রে সমান অধিকারের কথা বলেন এবং আলোচিত/অনালোচিত কোনো কোনো ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভোগ করেন, তারা কিন্তু পুরুষদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আসছেন না সর্বক্ষেত্রে। অ্যাথলেটস ও খেলাধুলায় বিশ্বের সব দেশের মেয়েরাই প্রতিযোগিতা করছেন নিজেদের মধ্যে। এমন কি কার্ড ও দাবা খেলার মতো মানসিক (আই.কিউ.) প্রতিযোগিতায়ও তারা আলাদাই থাকছেন। দ্রুত মানবের রেকর্ড ভাঙতে পারেননি কোনো দ্রুত মানবী। অর্থাৎ প্রকৃতিগত কারণেই সবাই ভোগ করতে পারেন না, পারবেন না সব ক্ষেত্রে সমান অধিকার। যেমন- ভোটাধিকার নেই শিশুর ও পাগলের। সন্তান ধারণ করতে পারেন না পুরুষ। বলা যায় না এমন আরো অনেক কারণেই সর্বক্ষেত্রে সমান হতে পারে না নারী ও পুরুষের অধিকার। আমাদের পূর্বনারীরা তো কারণে-অকারণে বঞ্চিত হয়েছেন, আঘাত সয়েছেন অনেক। অতিরিক্ত অধিকার নিয়ে বা পাল্টা আঘাত দিয়ে সেসব কি আর উসুল করা যাবে এখন? কিংবা উসুল করা উচিত হবে বর্তমান অথবা ভবিষ্যৎ পুরুষদের ওপর?
বাস্তবে যারা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত তারা অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত। শিক্ষার সুযোগ লাভের দাবিতেই হওয়া উচিত আন্দোলন। নারীদের মনে রাখতে হবে, এই আন্দোলন জীবনসঙ্গী বা অন্য পুরুষদের বিরুদ্ধে নয়; নিজেদের কুসংস্কার, অশিক্ষা, অযোগ্যতা, হীনমন্যতা ও অদূরদর্শিতার বিরুদ্ধে। তাই জাগ্রত করতে হবে নিজের বিবেক। উপলব্ধি করতে হবে প্রকৃত মর্যাদা। অর্জন করতে হবে সুশিক্ষা। অধিকারের জন্য প্রয়োজন যোগ্যতা অর্জন ও দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পাদন। সমান অধিকারের দাবিতে অগ্রাধিকার নয়; বিদ্যমান ও অর্জিত যোগ্যতার শক্তিতেই ভোগ করতে হবে যোগ্যাধিকার।
http://www.bhorerkagoj.net/print-edition/2016/03/08/79047.php
নারীর সমঅধিকারের আন্দোলন প্রসঙ্গ
মো. রহমত উল্লাহ্ : শিক্ষক, লেখক।
ভোরের কাগজ >মঙ্গলবার, ৮ মার্চ ২০১৬
সমান অধিকারের অর্থ হচ্ছে যোগ্যতা অনুযায়ী অধিকার বা যোগ্যাধিকার। কোনো কিছু করার বা পাওয়ার যোগ্যতা সমান হলে অধিকার সমান হওয়া আবশ্যক। যোগ্যতার অসমতার যুক্তিযুক্ত কারণেই সব ক্ষেত্রে সবার অধিকার সমান নয়। এই কঠিন সত্যটি শুধু নারী-পুরুষের মধ্যে নয়; পুরুষ-পুরুষ, নারী-নারী তথা সবার জন্যই প্রযোজ্য। তাই কোনো নির্দিষ্ট যোগ্যতা সমান হওয়া সত্ত্বেও সেই যোগ্যতার প্রাপ্যাধিকার সমান না হলে আন্দোলন অপরিহার্য।
পারিবারিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ইত্যাদি অধিকারের ক্ষেত্রভিত্তিক আলোচনা করলেই সুস্পষ্ট হবে- আমাদের দেশে নারীরা কোন অধিকার যোগ্যতা অনুযায়ী ভোগ করছেন, কোন অধিকার ভোগের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বঞ্চিত হচ্ছেন, কোন অধিকার যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও দাবি করছেন এবং কোন কোন ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভোগ করছেন।
পারিবারিক ক্ষেত্রে সন্তান ধারণ, স্তন্যদান, লালন-পালন ইত্যাদি অপূরণীয় ত্যাগের জন্য মায়ের থাকা উচিত সন্তানের ওপর একচ্ছত্র অধিকার। অথচ ছেলের বউ, মেয়ের জামাই এসে ভাগ বসাচ্ছেন সেই অধিকারে। পিতা-মাতার সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট নারীদের অনীহা (নিজের পৈতৃক সম্পত্তির সুবিধা স্বামী-সন্তানকে ভোগ করতে না দিয়ে কেবল স্বামীর ও স্বামীর পৈতৃক সম্পত্তি ভোগের মানসিকতা) এবং সৎসাহসের অভাবই (বাপ/ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকার ও স্বামী/সন্তান কর্তৃক সম্পত্তি হাতছাড়া হওয়ার ভয়) প্রধান কারণ। নারীর এরূপ মানসিকতা ও ভূমিকা সমান অধিকারের পরিপন্থী হলেও কিছু অতি লোভী পুরুষ এর জন্য দায়ী। শুধু নারী কেন, দাবি না করলে পৈতৃক সম্পত্তির অধিকার পুরুষও পায় না সঠিকভাবে। সমাজে চলমান রীতি-নীতি থেকে সৃষ্ট কিছু অযৌক্তিক ধ্যান-ধারণার কারণে, ধনী দরিদ্র শিক্ষিত-অশিক্ষিত সব পরিবারেই বয়োজ্যেষ্ঠ নারী-পুরুষদের দ্বারা অধিক অবমূল্যায়িত কন্যা সন্তানেরা। বিশেষ করে অশিক্ষিত/আধা শিক্ষিত পরিবারে মেয়েদের বিয়েসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত বিষয়ে তাদের মতামত উপেক্ষা করা হচ্ছে প্রায়শই। কোনো কারণে ক্ষিপ্ত হলে সাধারণত নারীরা মানসিকভাবে এবং পুরুষরা শারীরিকভাবে পরস্পরকে আঘাত করে থাকে। শারীরিক শক্তি (যোগ্যতা) কম-বেশি না হলে কেমন হতো এই চিত্র? আসলে অপরকে আঘাত করার অধিকার কারোরই নেই।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৈধ কর্ম সম্পাদন, পারিশ্রমিক দাবি, পেনশন লাভ ইত্যাদি অধিকার সরকারি পর্যায়ে নারী-পুরুষের একই রকম। বেসরকারি ও পারিবারিক ক্ষেত্রে বৈষম্য বিদ্যমান। অনেক যোগ্য নারীকেই বাইরে চাকরি করা থেকে বিরত রাখা হয় সাংসারিক কর্মের প্রয়োজনে। অথচ সংসার কর্মের জন্য যথাযথ মূল্যায়ন করা হয় না তাকে। এ ক্ষেত্রে নারীর প্রতি নারীর (মা, বোন, শাশুড়ি, জা, ননদ) সহায়ক ভূমিকার অভাব লক্ষণীয়। গৃহকর্মীদের আর্থিক ও অনার্থিক সুবিধা একেবারেই নগণ্য; যেটি নির্ধারণ করে থাকেন মহিলারাই। গার্মেন্টসের মতো প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের পারিশ্রমিক অত্যন্ত কম। এসব ক্ষেত্রে যথাযথ পারিশ্রমিক চাওয়া-পাওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু বেকারের সংখ্যাধিক্যের কারণে এটি অর্জিত হচ্ছে না। এক্ষেত্রে শুধু আন্দোলন নয়, কর্মক্ষেত্র বৃদ্ধি জরুরি। তাই উদ্যোক্তা হয়ে এগিয়ে আসতে হবে শিক্ষিত নারীদের।
সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সব নারী তুলনামূলক কম সুবিধা ভোগ করে; এই কথা সর্বাংশে সত্য নয়। জীবনধারণ, স্বাধীন চলাফেরা, পরিবার গঠন, চুক্তি সম্পাদন, শিক্ষালাভ, মাতৃভাষা, স্বাধীন চিন্তা, ধর্ম পালন, সম্পত্তি অর্জন-ভোগ-দান-বিক্রি, সভা-সমিতি করা ইত্যাদি সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার বর্তমানে শিক্ষিত নারীদের নাগালের খুব বেশি বাইরে নয়। তা ছাড়া রাজনীতি ও এনজিও সম্পৃক্ত শিক্ষিত/আধা শিক্ষিত নারীরা এসব অধিকার এখন নিয়মিতই ভোগ করছেন। নিরাপদে বেঁচে থাকা ও স্বাধীন চলাফেরার জন্য যতটুকু নিরাপত্তার প্রয়োজন তা আমাদের রাষ্ট্র দিতে ব্যর্থ। এটি শুধু নারীদের ক্ষেত্রে নয়, পুরুষদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য কম/বেশি। একান্তভাবে স্বধর্ম পালনের অধিকার সাধারণত নারীদের ছিল, আছে এখনো। যদিও নারীরাই তা মানছেন না পুরোপুরি! স্বামীকে তালাক দেয়ার অধিকার, গণ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অধিকার, খোলামেলা পোশাক পরে প্রকাশ্যে চলাফেরা করার অধিকার ইত্যাদি ইসলাম ধর্মে না থাকলেও মুসলমান পরিবারের অনেক নারীই তা ভোগ করছেন। আবার এই আধুনিক (?) নারীরাই ইসলাম ধর্মে প্রদত্ত অধিকার বলে বিয়ের সময় ধার্য ও আদায় করছেন দেনমোহরানার অর্থ (বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বামীর সঙ্গতির অতিরিক্ত) এবং তাদের কেউ কেউ স্বামীর সংসারে এসে বলছেন- ‘জানো না, স্ত্রীর ভরণপোষণের সম্পূর্ণ দায়িত্ব স্বামীর। আমার যা যা লাগে সব তোমার দিতে হবে। ছেলেমেয়ে মানুষ করার দায়িত্ব তোমার। তোমাকেই দিতে হবে কাজের মেয়ের টাকা। তোমার বেতনে না হলে, তুমি চুরি করবে না ডাকাতি করবে সেটি তোমার ব্যাপার! আমার উপার্জিত অর্থ দাবি করার কোনো অধিকার তোমার নেই। আমার টাকা দিয়ে আমার যা ইচ্ছা তা-ই করব।’ আবার তালাকের প্রশ্ন এলে দাবিও আদায় করছেন খোরপোশের অর্থ (উপার্জনক্ষম হলেও)। যেসব আধুনিক (?) নারী ইসলাম ধর্মের বিধান অনুসারে জীবনযাপন করে না, তাদের জন্য এসব অধিকার অগ্রাধিকার নয় কি? শিক্ষিত চাকুরে ছেলেরা তুলনামূলক কম শিক্ষিত বেকার মেয়েদের সংসার সঙ্গী করতে দ্বিধা করে না। কিন্তু শিক্ষিত চাকুরে (কোটায় প্রাপ্ত) মেয়েরা মেনে নেন না এমনটি। আবার কর্তৃত্বও মানতে চান না; করতে চান। করেও কেউ কেউ। অথচ তুলনামূলক কম যোগ্য ছেলে বিয়ে করেই মেয়েরা অর্জন করতে পারেন পারিবারিক কর্তৃত্ব করার অধিকার। ভেঙে দিতে পারেন পুরুষ শাসিত সমাজ। শিক্ষা লাভের অধিকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অধিকার। এই অধিকার অর্জনে সফল হলে অন্যান্য অধিকারের জন্য আন্দোলন তেমন প্রয়োজন পড়ে না। একমাত্র যোগ্যতাই দিতে পারে পূর্ণ অধিকার ও সম্মান। বর্তমানে মেয়েদের শিক্ষা উপ-বৃত্তিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও উৎসাহ দেয়া হচ্ছে শিক্ষালাভের জন্য। যেটি ছেলেদেরও দেয়া উচিত সমানভাবে। অন্যথায় সমাজে তৈরি হবে বিপরীত বৈষম্য। ভোটাধিকার প্রয়োগ করা, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া, বিচার দাবি করা, সরকারের সমালোচনা করা, যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি কর্ম পাওয়া, এসব রাজনৈতিক অধিকার বর্তমানে আমাদের শিক্ষিত নারীরা যোগ্যতার তুলনায় বেশিও ভোগ করছেন ক্ষেত্রবিশেষে। সংসদে আসন সংরক্ষণ, নির্বাচনে ও চাকরিতে কোটা সংরক্ষণ, পত্রিকায় আলাদা পাতা নির্ধারণ, যানবাহনে পৃথক আসন সংরক্ষণ অবশ্যই অগ্রাধিকার।
যেসব শিক্ষিত মেয়েরা সর্বক্ষেত্রে সমান অধিকারের কথা বলেন এবং আলোচিত/অনালোচিত কোনো কোনো ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভোগ করেন, তারা কিন্তু পুরুষদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আসছেন না সর্বক্ষেত্রে। অ্যাথলেটস ও খেলাধুলায় বিশ্বের সব দেশের মেয়েরাই প্রতিযোগিতা করছেন নিজেদের মধ্যে। এমন কি কার্ড ও দাবা খেলার মতো মানসিক (আই.কিউ.) প্রতিযোগিতায়ও তারা আলাদাই থাকছেন। দ্রুত মানবের রেকর্ড ভাঙতে পারেননি কোনো দ্রুত মানবী। অর্থাৎ প্রকৃতিগত কারণেই সবাই ভোগ করতে পারেন না, পারবেন না সব ক্ষেত্রে সমান অধিকার। যেমন- ভোটাধিকার নেই শিশুর ও পাগলের। সন্তান ধারণ করতে পারেন না পুরুষ। বলা যায় না এমন আরো অনেক কারণেই সর্বক্ষেত্রে সমান হতে পারে না নারী ও পুরুষের অধিকার। আমাদের পূর্বনারীরা তো কারণে-অকারণে বঞ্চিত হয়েছেন, আঘাত সয়েছেন অনেক। অতিরিক্ত অধিকার নিয়ে বা পাল্টা আঘাত দিয়ে সেসব কি আর উসুল করা যাবে এখন? কিংবা উসুল করা উচিত হবে বর্তমান অথবা ভবিষ্যৎ পুরুষদের ওপর?
বাস্তবে যারা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত তারা অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত। শিক্ষার সুযোগ লাভের দাবিতেই হওয়া উচিত আন্দোলন। নারীদের মনে রাখতে হবে, এই আন্দোলন জীবনসঙ্গী বা অন্য পুরুষদের বিরুদ্ধে নয়; নিজেদের কুসংস্কার, অশিক্ষা, অযোগ্যতা, হীনমন্যতা ও অদূরদর্শিতার বিরুদ্ধে। তাই জাগ্রত করতে হবে নিজের বিবেক। উপলব্ধি করতে হবে প্রকৃত মর্যাদা। অর্জন করতে হবে সুশিক্ষা। অধিকারের জন্য প্রয়োজন যোগ্যতা অর্জন ও দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পাদন। সমান অধিকারের দাবিতে অগ্রাধিকার নয়; বিদ্যমান ও অর্জিত যোগ্যতার শক্তিতেই ভোগ করতে হবে যোগ্যাধিকার।
http://www.bhorerkagoj.net/print-edition/2016/03/08/79047.php
একতারা

একতারা
মো. রহমত উল্লাহ্
দৈনিক কালের কন্ঠ, ১১ মার্চ ২০১৬
নাক ডেকে ঘুমায় লুপিন। দেখে, একটা বিশাল বন। খুবই মলিন। পাতা নেই। ফুল নেই। ফল নেই। পশু নেই। পাখি নেই। ভাবে, এমন হলো কেন?
তাকায় এদিক-ওদিক। দেখে পাশে একটা নদী। পানি নেই। মাছ নেই। নৌকা নেই। ধুধু বালু চর। ভাবে, এমন হলো কেন?
আবার তাকায় এদিক-ওদিক। দেখে, জালে আটক অনেক মানুষ। চেনা যায় না কাউকেই। এগিয়ে যায় কাছে। খুব ভালো করে দেখে। ভেসে উঠে অন্য রকম চেহারা। ঠিক মানুষের মতো নয়। সাপের মতো! শিয়ালের মতো! হায়েনার মতো! কুমিরের মতো! এলিয়েনের মতো! হাসে না। মিশে না। কেবল বিবাদ করে। মারামারি করে। কাড়াকাড়ি করে।
লুপিন বলে, তোমরা কারা? তোমাদের চেহারা এমন কেন? তোমরা জালে আটক কেন? হাসো না কেন? মিশো না কেন? বিবাদ করো কেন? মারামারি করো কেন? কাড়াকাড়ি করো কেন? সবখানে বাজে লুপিনের কথা। মুখ খুলে সবাই। একজন বলে, আমি এসব করি না। অন্যরা করে। আমাকে ছেড়ে দাও। কয়েকজন বলে, আমরা এমন খারাপ না। অন্যরা খারাপ। আমাদের ছেড়ে দাও। অনেকজন বলে, আমরা ভালো। আর সবাই খারাপ। আমাদের ছেড়ে দাও। লুপিন বলে, আমি ছাড়ব কিভাবে? খুলব কিভাবে এ জাল? আমি তো জানি না তা। আমি তো একজন। তোমরা অনেকজন। তোমরা সবাই মিলে যাও। একসঙ্গে অভিযান চালাও। ছিঁড়ে ফেলো জাল। বেরিয়ে এসো বাইরে। তারা বলে, আমরা তো পারি না তা। এ তো কঠিন জাল। অন্য রকম। দিনে দিনে আরো মোটা হয়। আরো ঘন হয়। কমে যায় আমাদের আলো। বেড়ে যায় আমাদের আঁধার। অথচ কিছুই জানি না। কিছুই বুঝি না আমরা। কেন আটক হলাম এই জালে! কখন আটক হলাম! কিভাবে আটক হলাম! কে আটক করল আমাদের! কী করব আমরা এখন? তুমি তো মুক্ত আছ। আমাদের মুক্ত করো।
বকুল ভাবে, কী করা যায়? বসে বটতলায়। পাতাহীন বটগাছ। তাকায় এদিক-ওদিক। চোখে পড়ে একতারা। হাতে নেয় সেটি। না, ভালো নেই। ছিঁড়ে আছে তার। লেগে আছে ধুলাবালি। তার জোড়া লাগায়। টোকা দেয় তারে। টুনটুন। টুনটুন। অবাক সবাই! ওয়াও। কী দারুণ সুর! সবাই শুনে মন দিয়ে। কথা বলে না কেউ। বিবাদ করে না। মারামারি করে না। কাড়াকাড়ি করে না। বাজতে থাকে মধুর সুর। ঠিক হতে থাকে সবার চেহারা। হাসতে থাকে তারা। খুলতে থাকে জাল। বেড়োতে থাকে সবাই।
পাখিরা আসে গাছে গাছে। ডালে আসে নতুন পাতা। সবুজ হয় গাছ। রঙিন ফুল হয়। কাঁচা-পাকা ফল হয়। পাখিরা গান গায়। পশুরা ঘুরে বেড়ায়। নদীতে জোয়ার আসে। পালতোলা নৌকা ভাসে। মাছেরা খেলা করে।
এবার উঠে আসে একজন। বলে, আমি বাউল। তোমার নাম কী খোকা? লুপিন বলে, অমার নাম লুপিন। বাউল বলে, তুমি খুব ভালো। তুমি খুব ভালো। খুব ভালো। বাউল হাত বুলায় লুপিনের মাথায়। ঘুম থেকে জেগে ওঠে লুপিন। দেখে, তার মাথায় মায়ের হাত।
শিশু পাঠ্য গল্প- 'পাখি তাড়ানো' -জনকন্ঠ- ১২ মার্চ ২০১৬
পাখি তাড়ানো
মো. রহমত উল্লাহ্
দৈনিক জনকন্ঠ, ঝিলিমিলি পাতা, ১২ মার্চ ২০১৬।
>পাখি তাড়ায় শিমুল। ক’দিন ধরে এটি তার কাজ। সকাল দুপুর বিকেল। পাখি আসে ঝাঁকে ঝাঁকে। বাবুই পাখিই বেশি। খেয়ে যায় ধান। পাকাধান যেন সোনার দানা। জমির আইলে শিমুল। হাততালি দেয় জোরে। উড়ে যায় কাছের পাখিরা। গিয়ে বসে আরেক পাশে। শুরু করে ধান খাওয়া। শিমুল যায় সেখানে। হাততালি দেয় আবার। উড়ে যায় সেখানের পাখি। বসে গিয়ে আরেক পাশে। শুরু করে ধান খাওয়া। শিমুল যায় সেই পাশে। হাততালি দেয়। হিস... করে। পাখিরা যায় আগের পাশে। এভাবেই চলে তার কাজ। খুব রাগ ধরে। ইস, কবে যে কাটা হবে ধান। আর কত ছোটাছুটি। আর কত হাততালি।
পরদিন। আইলে দাঁড়ায় শিমুল। বাঁশি বাজায়। পুর র...। উড়ে যায় পাশের পাখিরা। বসে গিয়ে আরেক পাশে। সেই পাশে যায় শিমুল। বাঁশি বাজায় আবার। আগের পাশে যায় পাখি। এভাবেই চলে। শিমুলের পাখি তাড়ানো। আর পাখিদের ধান খাওয়া। কী করবে, ভাবে শিমুল।
পরদিন। গুলতি নিয়ে আসে শিমুল। চুপচাপ বসে থাকে আইলে। উড়ে আসে পাখির দল। খেতে শুরু করে ধান। শিমুল তাক করে গুলতি। ছোটছোট অনেক পাখি। লাগবে কোনটার গায়ে। জোরে টানে রাবার। ছুড়ে মারবেল। উড়ে যায় পাখির দল। ক্ষেতের ভিতর যায় শিমুল। দেখে ছটফট করছে চড়ুই। শিমুল হাতে নেয় সেটি। চড়ুই তার খুব প্রিয়। বাসা বাঁধে ঘরের চালায়। তাদের ঘরেও আছে বাসা। জানালায় বসে। উঠানে নামে। খাবার খায়। খেলা করে দুটি চড়ুই। মাতিয়ে রাখে বাড়ি। খুব ভাল লাগে শিমুলের। আহত চড়ুই নিয়ে যায় বাড়িতে। পানি দেয় মুখে। সেবা করে। সারিয়ে তুলে। উড়িয়ে দেয়। ভাবে, পাখিদের আঘাত করবে না আর।
পরদিন। শিমুল আসে পাখি তাড়াতে। তাকে দেখেই উড়ে যায় পাখি। যেন পাখিদের মনেপড়ে গতদিন। আবাক হয় সে। বিপদের কথা ভুলে না পাখিরা। তাইতো। হুম। একটা কাজ করা যাক তাহলে। দু’টি লাঠি আনে। একটি দড়ি আনে। একটি লাঠি গাড়ে ধানক্ষেতে। খাড়া করে। সেটিতে বাঁধে আরেকটি লাঠি। ভূমির সমান করে। লাঠিতে পরায় নিজের জামা। যেন দাঁড়িয়ে আছে শিমুল। দু’হাত ছড়িয়ে। এবার ফিরে আসে আইলে। বসে থাকে ঘাপটি মেরে। পাখিরা আসে। শিমুলের জামা দেখে। চলে যায়। নামে না ধানক্ষেতে। খায় না পাকা ধান। নিজেকে বিজয়ী ভাবে শিমুল। ভাবনাহীন ফিরে যায় বাড়িতে।<
https://www.dailyjanakantha.com/details/article/178397/%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%96%E0%A6%BF-%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A7%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8B
শরীরের ওজনের সমপরিমান মেধাবৃত্তি কতটা শোভনীয়?

শরীরের ওজনের সমপরিমান মেধাবৃত্তি কতটা শোভনীয়?
মো. রহমত উল্লাহ্ | মার্চ ১৭, ২০১৬ - ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ
মো. রহমত উল্লাহ্: অধ্যক্ষ, লেখক ও শিক্ষাবিদ।
দৈনিকশিক্ষাডটকমে গত ১৪ মার্চে প্রকাশিত একটি সংবাদের শিরোনাম এরকম ‘শরীরের ওজনের সমপরিমান টাকা বৃত্তি’। প্রতিবেদনে জানা যায়, দুই শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় ঝালকাঠি জেলায় সর্বোচ্চ ফল অর্জন করায় শরীরের ওজনের সমপরিমাণ টাকা বৃত্তি দিয়েছে বেসরকারি সংস্থা ডাব্লিউ ডাব্লিউ ফাউন্ডেশন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, নলছিটি উপজেলার মার্চেন্টস মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ২০১৩ সালে মাইনুল হাসান ও ২০১৪ সালে মো. মাসরুর হাসান তমাল ঝালকাঠি জেলায় প্রথম স্থান অর্জন করে।আয়োজক সংস্থা পাঁচ টাকার ধাতব মুদ্রা দিয়ে তাদের শরীরের ওজন নির্ণয় করে। এতে মাইনুল হাসান ৫৮ কেজি ওজনে ৩৬ হাজার ৫০০ টাকা এবং মাসরুর ইসলাম তমাল ৭৮ কেজি ওজনে ৪৯ হাজার টাকার চেক পান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ এম আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি ঝালকাঠির সন্তান। এ জেলায় এসএসসি পরীক্ষায় যে সবচেয়ে ভালো ফল করবে, তার শরীরের ওজন নির্ণয় করে সমপরিমাণে টাকা দেওয়া হবে।’
আমাদের সমাজের কিছু বিত্তবান ব্যক্তি যুগে যুগে আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করেছেন। কেউ শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা করেছেন। কেউ বই কিনে দিয়েছেন। কেউ সেচ্ছায় পাঠদান করছেন। এই যে আমাদের ঐতিহ্যবাহী বড় বড় স্কুল কলেজ মাদ্রাসা এগুলোর প্রতিষ্ঠাতা কোননা কোন বিত্তবান মানুষ। বিএল কলেজ, আনন্দমোহন কলেজ, এমসি কলেজ, এমনকি ঢাকা কলেজও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কোননা কোন ব্যক্তির সহায়তায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য সাবেক হওয়া সফল গভর্নর আতিউর রহমান সাহেবও পড়ালেখা করেছেন এলাকার মানুষের আর্থিক সহায়তায়। কিন্তু অতীতে এমন খবর কেউ শুনেছেন বলে আমার জানা নেই।
যে ব্যক্তি এই অভিনব কৌশলে বৃত্তির টাকার পরিমান নির্ধারণ করেছে, তিনি কীভাবে টাকার মালিক হয়েছেন, কতটুকু শিক্ষা লাভ করছেন, তার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম কী, তার এমন করার উদ্দেশ্য কী, তার অতীত কী ইত্যাদি আমার জানার সুযোগ হয়নি এখনো। যতটুকু ধারণা করছি তা হলো, তিনি প্রচার চেয়েছে। এখানে তিনি সফল। যদিও ধর্মীয় ভাবে বলা আছে, তোমরা এমন ভাবে অন্যকে সাহায্য সহযোগীতা করো যেন তোমার বাম হাতও তা জানতে না পারে।
এই বৃত্তিদাতার উদ্দেশ্য যদি মহৎ হতো তবে তিনি এই বৃত্তির টাকার পরিমাণ অন্য অনেকভাবেই নির্ধারণ করতে পারতেন। আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনকে ভিত্তি ধরে ২১ হাজার বা ৫২ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে পারতেন। আমাদের শিক্ষা আন্দোলনকে ভিত্তি ধরে ৬৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে পারতেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে ভিত্তি ধরে ৭১ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে পারতেন। হয়ত তিনি এ সকল চেতনার ধারক বাহক নন। তাই তিনি তা করেন নি। তিনি গরু ছাগল হাস মুরগির মত ওজন করে মানুষ কিনতে চেয়েছেন। কিনেছেন। জানান দিতে চেয়েছেন। দিয়েছেন। প্রচার পেতে চেয়েছেন। পেয়েছেন। মেধাবীদের বোকা বানাতে চেয়েছেন। পেরেছেন।
মেধাবীরা, তাদের অভিভাবকেরা, তাদের শিক্ষকেরা সবাই বোকা বনেছেন। তা না হলে তারা এইভাবে নিজেকে পাল্লায় তুলতে যেতেন না, তাদের বাবা মা তাদের যেতে দিতেন না, তাদের শিক্ষকেরা সেই অনুষ্ঠানে থাকতেন না। মানুষের গোশতের মূল্যইতো নির্ধারিত হলো। যার শরীরে গোশত বেশি সে টাকা পেলো বেশি, আর যার শরীরে গোশত কম সে টাকাও পেল কম। যে কম টাকা পেল সে হয়ত আপসোস করেছে। তার বাবামা হয়ত মনেমনে বলেছে, আহ আমাদের ছেলেটা যদি আরো মোটাতাজা হতো তাহলে আরো বেশি টাকা পেতাম। যেমন কোরবানির হাটে আপসোস করে দুর্বল গরু ছাগলের রাখাল। মেধাতো সমানই ছিল। টাকাতো সমান হলোনা। তাহলে মেধার মূল্যায়ন হলো কেমন করে? এখন একটু হিসেব করলেই জানাযাবে, মানুষের গোশত কত টাকা কেজি? জী, মাত্র ৬২৯ টাকা কেজি। যা গরু ছাগলের চেয়ে সামান্য বেশি আরসিং মাগুরের চেয়ে বেশ কিছুটা কম।এই দুই মেধাবীর কেউ যদি মেয়ে হতো তাহলে নিশ্চয়ই তাকেও অনুরূপ পাল্লায় তোলা হতো।
এই মেধাবীদের অভিভাবকদের কি এতই অভাব ছিলো টাকার। তারাও তো বলতে পারতো আমাদের সন্তানদের ওজন করতে দিবনা। আপনি নিজেকে ওজন করুন। আমরা পন্য না। কিন্তু আমরা মেধাবীরা, মেধাবীদের ভাই বোনেরা, বন্ধু বান্ধবেরা, অভিভাবকেরা, হিতাকাংখিরা, এমনকি শ্রদ্ধেয় শিক্ষকেরা কেউই তা পারলাম না। টাকার কাছেই কি হেরে গেলো আমাদের বিবেক বিবেচনা, জ্ঞান বুদ্ধি, মান সম্মান? এতই কি অধঃপতন হয়েছে আমাদের নৈতিক মূল্যবোধের? না, তা হতে পারেনা। তা হতে দেওয়া যায়না।
কেননা- “মানুষকে পাল্লায় মাপা ও সমপরিমান টাকা দেওয়া আইডিয়াটি দৃষ্টিকটু।”
“আমার মতে ওরা আজও শিক্ষিত হতে পারেনি। স্বশিক্ষিত মানুষ কখনও এমনটা করতে পারে না। দাতার অহংকার প্রকাশিত হয়েছে। এমনটা আদৌ গ্রহণ করার মত নয়।”
“ওজন দিয়ে মেধার মূল্যায়ন হয় না। এটা কোন বৃত্তি বলে আমার মনে হয়নি।”
প্রবন্ধ- শিক্ষার্থীদের টিসি বিষয়ক হয়রানি আর কতদিন -ইত্তেফাক- ০৭ ফেব্রুয়ারি২০১৬
বিভিন্ন কারণে প্রায় সারাবছর ধরেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করতে হয় স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের। বিশেষ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা বাবা -মায়ের বদলিযোগ্য চাকরির কারণে এবং আরো ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ইচ্ছায় বার বার বদল করে থাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই বদল যে কেবল শিক্ষা বর্ষের শুরুতেই হয় তা নয়। বছরের প্রথমার্ধে, মাঝামাঝিতে, শেষার্ধে তথা যেকোনো সময় হতে পারে।
এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে অধ্যয়নরত থাকাবস্থায় কোনো শিক্ষার্থী যদি বছরের মাঝামাঝি অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে একই শ্রেণিতে ভর্তি হতে চায় তো তার বর্তমান প্রতিষ্ঠান থেকে টিসি নেয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে। কেননা সে এই শেণিতে বর্তমানে পড়ছে এর প্রমাণ হচ্ছে টিসি। সেক্ষেত্রে বর্তমান প্রতিষ্ঠানে যে মাস পর্যন্ত বেতন-ফি পরিশোধ করে যায় তার পরের মাস থেকে নতুন প্রতিষ্ঠান বেতন-ফি চার্জ করা যুক্তিযুক্ত হলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। শিক্ষার্থীদের অতি তাগিদে যেহেতু নতুন প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে সেহেতু তাদের জিম্মি করে বছরের শুরু থেকে হিসাব করে সকল ফি আদায় করছে তার নতুন প্রতিষ্ঠান। তদুপরি এমনও হয় যে, তার ছেড়ে আসা প্রতিষ্ঠান চলতি বছরের শেষদিন পর্যন্ত বেতন-ফি আদায় না করে টিসি দিতে চায় না। ফলে একজন শিক্ষার্থী বদলির কারণে তার অভিভাবককে অনেক সময়ই গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ/তিনগুণ টাকা।
শিক্ষা বোর্ডে রেজিস্ট্রেশন করার পর কোনো শিক্ষার্থীর প্রতিষ্ঠান বদল করার প্রয়োজন হলে আগে যে হারে ঘাটে ঘাটে ভোগান্তি ও বৈধ অবৈধ পথে অর্থ ব্যয় হতো এখন অনলাইন ব্যবস্থা চালু হবার ফলে তা কিছুটা কমেছে। যদিও এই ব্যবস্থাটি আরো বেশি গতিশীল হবার দাবি রাখে। তবে এইরূপ আবেদনকারী শিক্ষার্থীর নিকট থেকেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে পূর্বাপর উভয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই যুক্তিযুক্ত প্রাপ্যের অধিক টাকা আদায় করে থাকে। বোর্ডের ইস্যুকৃত টিসির আদেশে এই সংক্রান্ত নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন যে কোনো প্রতিষ্ঠান কোন মাস পর্যন্ত বেতন-ফি নিতে পারবে।
শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন ইস্যুতে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য হয় জানুয়ারি মাসে। নতুন বছরের শুরুতে বিভিন্ন কারণে অনেক বেশি শিক্ষার্থী বদল করে থাকে প্রতিষ্ঠান। সেক্ষেত্রে শুধু একটি টিসি পেপার সংগ্রহ করার জন্য পূর্ণ বছরের সেশন ও অন্যান্য চার্জ এবং জানুয়ারি মাসের বেতন দিয়ে তাদেরকে ভর্তি হতে হয় আগের প্রতিষ্ঠানে। তদুপরি টিসি ফি দিয়ে টিসি পেপারটি নিয়ে গিয়ে অনুরূপ বেতন-ফি আবার পরিশোধ করে পুনরায় ভর্তি হতে হয় কাঙ্ক্ষিত নতুন প্রতিষ্ঠানে। এসংক্রান্ত দুই-একটা বাস্তব উদাহরণ দিই, যা এই চলতি জানুয়ারি মাসেই আমি প্রত্যক্ষ করেছি এবং এই লেখাটির তাগিদ অনুভব করেছি। নাম প্রকাশ পেলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী আরো বেশি হয়রানির শিকার হতে পারে এমন ধারণা হচ্ছে বিধায় তাদের ও তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম গোপন রাখছি।
উদাহরণ-১। ঢাকা শহরের লালবাগ এলাকায় অবস্থিত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় একজন কোমলমতি শিক্ষার্থী অত্যন্ত ভালভাবে পাস করেছে। ২০১৬ সেশনে সে খুলনায় অবস্থিত অত্যন্ত ব্যয়বহুল একটি আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৭ম শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষাসমূহে অংশ নিয়ে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে। তাই ঢাকার লালবাগে অবস্থিত তার আগের প্রতিষ্ঠানটিতে সে ২০১৬ সেশনে ৭ম শ্রেণিতে আর ভর্তি হয়নি এবং হবে না; কিন্তু খুলনায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠান তাকে ভর্তির জন্য টিসি চাওয়ার কারণে বেকায়দায় পড়েছে সে। কারণ খুলনায় টিসি ছাড়া তাকে ভর্তি করবে না, আর ঢাকায় আবার ভর্তি না হলে তাকে টিসি দেয়া হবে না! ঢাকার প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য হচ্ছে- আমাদের এখানে ভর্তিই যদি না হয় তো আমরা টিসি দিব কীভাবে? অর্থাত্ তাদের নির্ধারিত অ্যাডমিশন ফিসহ আর্ট-ক্রাফট, বিএনসিসি, বেজ, বুকলিস্ট, ক্যালেন্ডার, ক্লাস টেস্ট, কম্পিউটার, ডেভেলপমেন্ট, ডায়রি, গার্সগাইড, আইডি কার্ড, লাইব্রেরি, মেডিক্যাল, প্রগ্রেস রিপোর্ট, পোস্টেজ, রিসিপ্ট বুক, রিপেয়ার, মেইনটেনেন্স, সাইন্স, স্কাউট, সোল্ডার স্টেপ, স্পোর্টস, সিলেবাস, টিউশন, ওয়েল ফেয়ার ইত্যাদি ফি বাবদ প্রায় দশ হাজার টাকা দিয়ে ভার্তি হয়ে তাদের শিক্ষার্থী হবার পরে তারা টিসি দিবে। এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, এই শিক্ষার্থী তো এখানে ক্লাস করবে না, পড়বে না, তাহলে তাকে এতসব মাসিক ও বার্ষিক ফি দিতে হবে কেন? তাছাড়া সে ভর্তি না হবার ফলে ঢাকার প্রতিষ্ঠানে যে আসনটি খালি হবে সেটিতো আর একবছর ফাঁকা থাকবে না। ওয়েটিং লিস্ট থেকে টেনে আরেক জনকে ভর্তি করা হবে এবং তার নিকট থেকেও উল্লিখিত বেতন-ফি আদায় করা হবে। একই আসনের বিপরীতে একই সেশনে দুইজন শিক্ষার্থীর নিকট থেকে টাকা আদায় করা কি বাণিজ্য নয়? সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কি এইরূপ অন্যায় বাণিজ্য করতে পারে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে? তাদের উত্তর হচ্ছে- এত কথা বলে লাভ নেই, এটিই এই প্রতিষ্ঠানের নিয়ম! অপরদিকে খুলনার সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য হচ্ছে- আমাদের এখানে ভর্তি করতে হলে টিসি লাগবে। সেখানে প্রশ্ন হচ্ছে- এই শিক্ষার্থী তো এখন কোথাও ভর্তি নেই, তো তাকে টিসি দিবে কে? কিংবা তাকে ভর্তি করতে টিসি লাগবে কেন? সে/তার অভিভাবক যদি লিখে দেয় যে, সে অন্য কোথাও ভর্তি নেই তাহলে কি চলবে না? কিংবা তার আগের প্রতিষ্ঠান যদি লিখে দেয় যে, “অন্য প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ব্যাপারে তাদের কোনো আপত্তি নেই” তাহলে কি তাকে ভর্তি করা যায় না? [যদিও বিনা টাকায় এমনটি তারা দিবে কি-না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই] সেখানে তাদের উত্তর হচ্ছে, এত কথা আমাকে বলে লাভ নেই, টিসি ছাড়া এখানে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় না, এটাই এই প্রতিষ্ঠানের নিয়ম! এখন না পারলে, পরে হলেও দিতে হবে।
[অথচ, শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষার রেজাল্ট কার্ডটির কোনো একটি কলামে যদি এমন লেখা থাকে যে, “সে এই প্রতিষ্ঠানের... শ্রেণিতে ভর্তির যোগ্য। তবে, তার অন্যত্র ভর্তির ব্যাপারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই এবং থাকবে না।” আর সেটির ভিত্তিতে যদি অন্য প্রতিষ্ঠান তাকে ভর্তি নিত; তাহলে তো আলাদা করে অনাপত্তিপত্র বা টিসির প্রয়োজন হতো না।]
উদাহরণ-২। ঢাকা শহরের মোহাম্মদপুরে অবস্থিত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে জেএসসি পাস করেছে একজন শিক্ষার্থী। সে ২০১৬ সেশনে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য ফার্মগেট এলাকার একটি প্রতিষ্ঠানে সিলেক্ট হয়েছে; কিন্তু তারা টিসি ব্যতীত তাকে ভর্তি করবে না। এদিকে যে প্রতিষ্ঠান থেকে সে জেএসসি পাস করেছে সেই প্রতিষ্ঠানেও ভর্তি না হলে তারা টিসি দিবে না। এখানে পড়ুক বা না পড়ুক- টিসি নিতে হলে নির্ধারিত সকল ফি দিয়ে এক মিনিটের জন্য হলেও ভর্তি হতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, জেএসসি/পিইসি/এসএসসি/এইচএসসি পাসের সরকারি সনদ থাকার পরেও তাকে ভর্তি করার জন্য টিসি লাগবে কেন? যে সনদ এখন অনলাইনে দেখা যায়, পাওয়া যায়, প্রিন্ট করা যায়- সেই সনদের কপি সত্যায়িত করা লাগবে কেন আগের প্রতিষ্ঠান প্রধানের? কেন বাড়তি টাকা দিয়ে আগের প্রতিষ্ঠান থেকে আনতে হবে প্রশংসাপত্র? সে খারাপ হলে তো তাকে পরীক্ষা দেয়ার পূর্বেই বহিষ্কার করে দিত আগের প্রতিষ্ঠান। কিংবা দিত না তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের সুযোগ। সরকারি সনদই যথেষ্ট নয় তার নতুন ভর্তির জন্য? উত্তর, এত কথা বলে লাভ নেই, এটাই নিয়ম!
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, আপনারাই বলুন, আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠান বদলের ক্ষেত্রে ও উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রচলিত এই নিয়মগুলো কি আসলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের ইচ্ছাকৃত ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত চরম অনিয়ম নয়? এই অনিয়ম রোধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কি কিছু করণীয় নেই?
লেখক :অধ্যক্ষ,
কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা।
E-mail: rahamot21@gmail.com