পাবলিক টক শো-২ : বিষয় : জানমালের নিরাপত্তা

 ১২/১২/২০১৩
পাবলিক টক শো-২ : বিষয় : জানমালের নিরাপত্তা
 মো. রহমত উল্লাহ
ভোরের কাগজ : ১২/১২/২০১৩
ক: এই যে প্রত্যেক দিন আগুন দিয়া জ্বালাইয়া দিতাছে এতো এতো মানুষ, জ্বালাইয়া দিতাছে বাড়ি গাড়ি, তুইল্যা ফেলতাছে রেললাইন, কাইট্টা ফেলতাছে শত শত গাছপালা, এই গুলা কি কোনো মাইনষের কাম? এরা কিয়ের মুসলমান? কোনো মুসলমান কি পারে এইভাবে নিরীহ মাইনষের গায়ে পেট্রল দিয়া আগুন লাগাইয়া দিতে? কোন ইসলাম ধর্ম কায়েম করবো তারা?

খ: করবোডা কী? মিটিং মিছিল করতে গেলেই তো গুল্লি করে পুইলশে। মাইরা ফালায় পাখির মতন। তয় হেরা কি বইয়া থাকবো? যেয় যা পারে তাই করবো।
ক: অ, ভালা কথা। মাইনষের জানমাল জ্বালাইয়া দিবো। রাস্তা কাইট্টা ফালাইবো। অফিস পোড়াইয়া দিবো। মাইকিং কইরা বাড়িঘরে আগুন লাগাইয়া দিবো। হিন্দুগোর মন্দির ভাইঙ্গা চূইরা জ্বালাইয়া পুইড়া ছারখার কইরা ফালাইবো। বাসে পেট্রল বোমা মাইরা সব ভালা মানুষ জ্বালাইয়া ফালাইবো। লাইন তুইল্যা রেলগাড়ি ফালাইয়া দিবো। ফিরাইতে গেলে পুইলশের বন্দুক কাইড়া লইয়া যাইবো। পুইলশের মাথা ফাডায়া দিবো। পুলিশ মাইর খাইতে খাইতে মইরা যাইবো। হের পরেও কিছুই করতে পারবো না? রাবার বুলেট মারলেই পুইলশের দোষ? পাখির মতন মানুষ মাইরা ফালায়। রাবার বুলেট কি কোনো গুল্লি? এইগুলাইনরে আসল গুল্লি মারা দরকার। এইগুলাইনতো মানুষও না, পাখিও না। এইগুলা শকুন!
খ: এইসব তো সরকারের লোকেরাই করে। বিরোধী দলের দোষ দেয়। এই যে বিএনপির বড় বড় নেতা গুলাইন গ্রেপ্তার করছে, তারা কি গাড়িতে আগুন দিছিলো? যারা এইসব করে তারারে ধরে না কেন? হাতেনাতে ধইরা টিভিতে দেখাইতে পারে না? হেইডা করবো না। নিজেগোর লোক কি নিজেরা ধরবো? মানষ অহন আর অতো বেআক্কেল না। সবাই বোঝে।
ক: তারা কইয়া দিছে। তারা হরতাল অবরোধ ডাকলেই তো এইসব অয়। হরতাল ডাইক্যা মাইনষের বাড়িগাড়ি জ্বালাইয়া দেওয়া কি গণতন্ত্র? যার ইচ্ছা হরতাল করুক। যার ইচ্ছা কামকাইজ করুক। আরেকজনের কামকাইজে বাধা দেওয়া তো ঠিক না। চাকরি বাকরি কামকাইজ না করতে পারলে মাইনষে খাইবো কী? যারা হরতাল দেয় তারা তো খাওন দেয় না, যে মাইনষে ঘরে বইয়া বইয়া খাইবো। আর এই যে অবরোধ, এইডার অর্থ কী? জোর কইরা সবকিছু ঠেকাইয়া দিবা। এইডার নাম কি গণতন্ত্র? এইডা তো ডাইরেক সন্ত্রাসী কাম। এই অবরোধ যারা ডাহে তারারে আগে ধরার দরকার।
খ: আওমী লীগ কি কম হরতাল করছে? অবরোধ করে নাই? জ্বালাও পোড়াও করে নাই? যেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের লাগি আওমী লীগ এতো কিছু করলো হেইডা আবার বাদ দিলো কেন? জনগণ কি এই আইন বাতিল করতে ভোট দিছিলো? সারা জীবন ক্ষমতায় থাকার লাগি ভোট দিছিলো? মাইনষে কি কইছিলো তত্ত্বাবধায়ক বাতিল করো? এখন বোঝুক কেমন লাগে। ক্ষমতা ছাড়ে না কেন্ হাসিনায়? নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়া হেয় নাইম্মা গেলেই তো সব ঠা-া অইয়া যায়।
ক : ভালা কথা। কার কাছে দিবো ক্ষমতা? নিরপেক্ষ কেডা? ইমাম সাব? জি না। এইবার চিন্না ফালাইছি। যারা বক্তব্য মারে, তারা তো অনেক লেখাপড়া জানা লোক, তারা কি আসলে নিরপেক্ষ? এমন দশটা লোকের নাম কওতো, যাগোরে সবাই মানবো। তাইলে কিসের নিরপেক্ষ সরকার? নিরপেক্ষরা এতো ভালা অইলে নির্বাচন কইরা আবার খারাপ লোকদের হাতে ক্ষমতা দেওয়ার দরকার কী? নিরপেক্ষরাই চালাক। আর যারা রাজনীতি করে তারা সবাই জেল খাটুক আজীবন। তোমরা কি চাইতাছো খালেদারে বসায়া দিতো, আর রেজাকার দিয়া আওমী লীগ মাইরা সাফা করতা? আওমী লীগ হেইডা বোঝে না মনে করছো?
গ: আরে মিয়া, বাদ দেও এইসব রাজনীতি কথা। বোঝতাছি তো আমরা। মাইনষে কি কাম কাজে যাইবো না? ঘরে বইয়া থাকলে খাইবো কী? সরকারের তো অসুবিধা নাই। এক দলের নেতারা হরতাল অবরোধ দিয়া ঘরে বইয়া থাকবো। আরেক দলের নেতারা খালি বক্তব্য দিবো। আর আমরা মারামারি কইরা মরমু। এই দল না হয় ঐ দল ক্ষমতায় থাকবো। আমরা রাস্তার লোক রাস্তায়ই থাকুম। এতো কথা বুঝি না। মারামারি করে দুই দলের লোকেরা করুক। এই যে আগুনে পোড়া মানুষ গুলাইন হাসতাপালে মরতাছে, তারা কোন্ দলের? বাসে কইরা তারা কি মিছিলে গেছিলো? রেলগাড়িতে কি সব আওমী লীগের লোক যায়? মাইনষে শখ কইরা ঘরের বাইরে যায় এইরম হরতাল অবরোধে? তাগোরে মারতাছে কেন্? ক্ষমতার লোভে পাগল অইয়া গেছে সব! হেরা যা খুশি করুক। আমাগো নিরাপত্তা চাই। কাজকাম কইরা খাইতে চাই। এই যে বাড়াইছে, আর থামাইতে পারবো বইলা তো মনে অয় না! শুরুতে দমন করলে আইজ এই অবস্থা অইতো না। সরকার যদি মনে করে মাইনষে খালি বিরোধী দলের উপ্রেই ক্ষেপবো, হেইডা ঠিক না। এইডা তো কোন রাজনীতি না। সন্ত্রাস। যেই সরকার পাঁচ বছরেও সন্ত্রাস ঠেকাইতে পারে না, হেই সরকারের ক্ষমতায় থাকার দরকার কী? কী ভরসায় আবার তাগোরে ভোট দিবো মাইনষে?
অনেক অইছে। এখন মাগরিবের আজান দিছে। চলো নামাজ পড়তে যাই।
[উল্লিখিত বক্তব্যগুলো নরসিংদী জেলার সবুজ পাহাড় এলাকার বাসস্টপেজের টি-স্টলে প্রতিনিয়ত চলমান স্বাভাবিক বিতর্কের অংশ বিশেষ।]
মো. রহমত উল্লাহ্ : লেখক, শিক্ষক।
http://www.bhorerkagoj5.net/new/blog/2013/12/12/150170.php

স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই

 ০৬/১২/২০১৩
স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই
03-rahmat-ullahমো. রহমত উল্লাহ
ভোরের কাগজ : ০৬/১২/২০১৩
এই যে ক্রমাগত আগুনে পুড়ে মরছে শত শত সাধারণ মানুষ! পুড়ছে গাড়ি, বাড়ি, উপাসনালয় আর অফিস-আদালত! লাইনচ্যুত হচ্ছে রেলগাড়ি! ভাঙচুর ও লুটতরাজ হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, দোকানপাট! কেটে ফেলা হচ্ছে রাস্তার পাশের অগণিত গাছপালা। বিনষ্ট হচ্ছে অর্থনৈতি অগ্রগতি! বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্রব্যমূল্য! ধ্বংস হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাজীবন! ধ্বংস হচ্ছে সকলের সুখশান্তি! বাড়ছে খুনের তালিকা! এসব করুণ চিত্র দেখানো হচ্ছে টেলিভিশনের পর্দায়! মানুষ হরানো মানুষের অহাজারিতে ভারী হচ্ছে বাংলার আকাশ বাতাস! এসবের দায়ভার বিরোধী জোটের ওপর আর কতোদিন চাপাতে পারে সরকার? আর কতোদিন, কতো প্রাণ, কতো ধন, কতো মান দিতে হবে সাধারণ মানুষের?

আর কতোভাবে জনগণকে বুঝাতে চায় এই সরকার যে বিরোধী জোটের লোকেরা খারাপ? আর কতো শুনতে হবে এসব কথা? বিরোধী জোটের নেতারা বার বার বলছেন- সরকারি এজেন্টরাই চালাচ্ছে এইসব হত্যাকা- ও ধ্বংসযজ্ঞ; সরকারের পেটোয়া বাহিনী পাখির মতো গুলি করে মারছে তাদের নিরপরাধ কর্মী-সমর্থকদের। সর্বশেষ বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াও প্রশ্ন করেছেন, যারা এসব অপকর্ম করছে তাদের ধরতে পারছে না কেনো সরকার? এখন সাধারণ মানুষেরও একই প্রশ্ন। অগ্নিদগ্ধরা তো সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকেই বলেছেন, এই অসুস্থ সরকার চাই না। শুধু তাদেরই নয়; সাধারণ নাগরিকের এমনকি মহাজোট সমর্থক অনেকেরই এখন মনে হয় একটাই কথাÑ হয় জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন, নয় এখনই পদত্যাগ করুন।
দুঃখ হয়, আওয়ামী লীগের মতো এতো বড় ও সমৃদ্ধ একটি দলের নেতৃত্বে পরিচালিত সরকারের এইরূপ ব্যর্থতার চিত্র দেখে! যে সব এলাকায় রেল লাইন তুলে ফেলা হচ্ছে বারবার, কেটে ফেলা হচ্ছে হাজার হাজার গাছপালা, পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে মানুষের বাড়িঘর, দোকানপাট, উপাসনালয়, হতাহত হচ্ছে নিরীহ মানুষ, ক্ষতি হচ্ছে সরকারি সম্পত্তির, সেই এলাকায় কি কোনো থানা পুলিশ নেই? সেই এলাকায় কি আওয়ামী লীগের এমপি, মন্ত্রী, নেতা, কর্মী, সমর্থক নেই? এতো দীর্ঘ রেললাইন তুলে ফেলা/কেটে ফেলা, এতো এতো গাছপালা কেটে ফেলা, তো দু’এক মিনিটের ব্যাপার নয়। কয়েক ঘণ্টার ব্যাপার। পুলিশসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যদি সজাগ থাকতেন তাহলে নিশ্চয়ই প্রতিরোধ করা যেতো এই দুচারটি দুষ্কৃতকারীকে। নিশ্চয়ই ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা যেতো আমাদের আরো কিছু জানমাল। নিজের আর্থিক ক্ষমতা, জনপ্রিয়তা/কর্মী-সমর্থকদের শক্তি বেশি থাকায় যারা নমিনেশন নিয়েছেন আওয়ামী লীগের এবং যারা নমিনেশন বঞ্চিত হয়ে প্রদর্শন করছেন পাল্টা শক্তি; তারা কি রুখে দাঁড়াতে পারতেন না এই দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে? কিছুটা হলেও রক্ষা করতে পারতেন না আমাদের জানমাল ও আমাদের দেশের সম্পদ? তারা কি দাঁড়াতে পারতেন না সাধারণ মানুষের পাশে? যখন মাইকে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে বার বার চালানো হচ্ছে লঙ্কাকা- তখন কেন কানে তালা দিয়ে থাকছেন সরকারি বাহিনী ও সরকারি দলের লোকেরা? সজাগ ও সক্রিয় থাকলে আর কিছু না পারুক তারা তো সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা ঘোষণা দিয়ে সত্যটা জানাতে পারতেন সবাইকে, ফোন করে ডেকে আনতে পারতো পুলিশকে।
এ যাবৎ সরকার ও সরকারি দল কি তাদের থানা পুলিশ ও নেতাকর্মীদের এলাকাভিত্তিক সুনির্দিষ্টভাবে ভাগ করে দিয়েছে এইসব অপকর্ম প্রতিরোধের কোনো দায় দায়িত্ব? কোনো নেতাকর্মীকে কি এনেছে কোনোরূপ জাবাবদিহির আওতায়? নিজেদের বাড়ির পাশের রেললাইনে বসে যদি শুধু আড্ডা দিতো দলীয় নেতাকর্মীরা তাহলেও তো দুষ্টরা ঘটাতে পারতো না এতোগুলো দুর্ঘটনা। সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করতে না পারলেও, লাল নিশান উড়িয়ে গতি রোধ করতে পারতো রেল গাড়ির। সুরক্ষা করতে পারতো অনেক জানমাল। সরকারকে নিতে হতো না এতো ব্যর্থতার দায়ভার। শুরুতে দমন করা হলে হয়তো এতো সাহস পেতো না দুষ্কৃতকারীরা। এতোটা বিস্তৃত হতো পারতো না এই ভয়াবহ সন্ত্রাস। এতোটা চাপে পড়তে হতো না সরকার ও সরকারি দলকে। বিশ্ব দরবারে এতোটা হেট হতো না আমাদের দেশের ও সরকারের ভাবমূর্তি।
যারা দুষ্কর্মী তারা তো অমানুষ। তারা যে কোনো দলের বা জোটেরই হোক সরকারের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে যে কোনো মূল্যে এইসব সন্ত্রাসীদের দমন করা। সাধারণ মানুষের জালমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করা। যে সরকার বছরের পর বছর দেশের সাধাণর মানুষের জানমালের এবং সরকারি সম্পত্তির নিরাপত্তা দিতে পারে না অথবা দিতে চায় না, সে সরকারের ওপর মানুষের আস্থা বজায় না থাকাই স্বাভাবিক। যারা আপনজন, মান-সম্মান, সহায়-সম্পদ হারায় তারা দোষীদের শাস্তি চায়। দোষাদোষী শুনতে চায় না। নিজেদের নিরাপত্তা চায়। শান্তিতে বেঁচে থাকতে চায়। অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর আর্থিক সহায্য চায় না। এই সাহায্য নেয়ার জন্য বাড়িয়ে দেয়া হতের ছবি টেলিভিশনের মাধ্যমে সবাইকে দেখিয়ে সম্মানহানি করা হোক তা চায় না। মানুষের বলা ও না বলা কথা হচ্ছে : আর বক্তৃতা শুনতে চাই না। কারো সহানভূতি পেতে চাই না। ভালো কর্ম করার স্বাধীনতা চাই। নিজেরটা খেয়ে পরে নিরাপদে বেঁচে থাকতে চাই। নিজের ঘরে নিরাপদে ঘুমিয়ে থাকতে চাই। অপমৃত্যুর আতঙ্কে জেগে থাকতে চাই না। যানবাহনে জ্বলে পুড়ে মরতে চাই না। কর্মক্ষেত্রে জীবন দিতে চাই না। অথচ তাই হচ্ছে বার বার। এভাবে হাতের তালুতে প্রাণ নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই না আর। এখন শুধু স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই।
দেশের এক বা একাধিক সম্প্রদায় বা গোষ্ঠী অথবা এলাকাবাসী যদি এমনটি অনুভব করে যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখই ক্ষমতায় থাকে তখই তাদের ওপর নির্যাতন বেড়ে যায় এবং আওয়ামী সরকার তা ঠেকাতে পারে না বা চায় না, তো তারা বারবার ভোট দেবে কেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে? তারা এবং তাদের বংশধরেরা কি বারবার সবকিছু হারিয়েও এই দলকেই সমর্থন করবে, নাকি নিজেদের ধর্র্ম-বর্ণ, মান-সম্মান, জান-মাল, ভিটা-মাটি রক্ষার জন্য প্রতিপক্ষের সঙ্গে আপোস করবে? দেশের সাধারণ মানুষ যদি এমনটি অনুমান করে যে, আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এই চলমান হানাহানি, খুনাখুনি, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাস দমন করতে পারবে না; বরং আরো বেড়ে যাবে তো তারা কেন আবার ভোট দেবে এই দলকে?
মো. রহমত উল্লাহ : শিক্ষক, লেখক।
http://www.bhorerkagoj5.net/new/blog/2013/12/06/149253.php

প্রবন্ধ- 'সরকারি ছুটির দিনেই নির্ধারণ করুন সকল পরীক্ষার তারিখ' -ভোরের কাগজ- ১৪ নভেম্বর ২০১৩



১৪/১১/২০১৩

সরকারি ছুটির দিনেই নির্ধারণ করুন সকল পরীক্ষার তারিখ
03-rahmat-ullahমো. রহমত উল্লাহ্
ভোরের কাগজ : ১৪/১১/২০১৩
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতে ভয়াবহ বিক্ষোভ, অবরোধ, হরতালসহ নানান কর্মসূচির কবলে দেশ ও জাতি। আমাদের দেশের হরতালের বর্তমান চিত্র সবারই জানা। বর্তমান হরতালের ভয়াবহতা স্মরণাতীত! যে হারে প্রাণহানি ঘটছে তাতে হরতাল যেনো এখন (হত + তাল)= ‘হত্যাল’ ছাড়া আর কিছুই না। এই ‘হত্যালে’ সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার আমাদের শিক্ষার্থীরা।
অতীতেও হরতাল হয়েছে। কিন্তু পাবলিক পরীক্ষার দিনগুলোতে এমন লাগাতার হরতাল হয়েছে বলে মনে পড়ে না। অনেক বছর পরে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সকল পাবলিক পরিক্ষা সঠিক সময়ে অনুষ্ঠিত ও স্বল্পতম সময়ে ফলাফল প্রকাশ। পাবলিক পরীক্ষার মতোই সারাদেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষাসমূহ একই রুটিনে অনুষ্ঠান ও ফলাফল প্রকাশ। এতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন পিছিয়ে পড়া থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পেতো। সঠিক বয়সে হয়তো প্রবেশ করতে পারতো কর্মজীবনে। লেখাপড়ার প্রতি আরো বৃদ্ধি পেতো আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থীদের মনোযোগ। যে কোনো দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে যা অত্যাবশ্যক। কিন্তু এই নিষ্ঠুর হরতালের কারণে তা হয়ে উঠছে না তেমনভাবে। বিশেষ করে পরীক্ষার্থীরা হরতালের যাঁতাকলে যেভাবে পিষ্ট হচ্ছে বারবার, তাদের মনের উপর যে বিরোপ প্রভাব পড়ছে, তাদের প্রস্তুতির উপর যেভাবে অযাচিত ছেদ পড়ছে, ফলাফলের ওপর যে খারাপ প্রভাব পড়ছে, তাতে আমাদের ও আমাদের রাজনীতির প্রতি তাদের সমর্থন ও শ্রদ্ধা না থাকাই স্বাভাবিক। এই অপ্রাপ্ত বয়স্করাতো কোনো রাজনৈক দলের কর্মী-সমর্থক নয়। তারা তো রাজনীতি করে না। তারা কী অপরাধ করেছে যে, আমাদের রাজনীতিকদের রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার বা থাকার এই নিষ্ঠুর লড়াইয়ের কারণে আজ অপূরণীয় ক্ষতির শিকার তাদের অপার সম্ভাবনাময় প্রারম্ভিক জীবন?
নির্বাচন কমিশনের তাগাদা অনুসারে আগামী ৭ ডিসেম্বরের আগেই শেষ করতে হবে সকল পরীক্ষা। দেশের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে চলছে জেএসসি ও জেডিসি পরিক্ষা। হরতালের করণে যেভাবে পিছাতে হচ্ছে বারবার, তাতে এই লাখ লাখ শিশুদের মাথা থেকে কতোদিনে যে নামানো সম্ভব হবে পরীক্ষা নামক এই ভারি বোঝা তা কেউই বলতে পারছে না এখন। আগামী ২০ নভেম্বর ২০১৩ তারিখ থেকে শুরু হবার কথা লাখ লাখ শিশুদের জীবনের প্রথম সরকারি পরীক্ষা পিইসি। তদুপরি সারা দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সকল শিক্ষার্থীর বার্ষিক পরীক্ষাও শেষ করতে হবে ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে। কিন্তু এতো ভয়াবহ হত্যালের মধ্যে কীভাবে সম্ভব হবে এই বিশাল কর্মযজ্ঞ? কীভাবে সম্ভব হবে আসন্ন ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে নতুন শিক্ষাবর্ষের ক্লাস? সঠিক সময়ে যদি শুরু এবং শেষ করা না যায় সকল পরিক্ষা তাহলে কীভাবে প্রমোশন পাবে উপরের ক্লাসে? কীভাবে হাতে পাবে বিনামূল্যের নতুন বই? অপরদিকে ফরম পূরণের কাজ চলছে এসএসসি পরিক্ষার্থীদের। তাদের পরীক্ষা যে কখন হবে তা আরো বেশি অনিশ্চয়তা। কেন তাদের এই নিস্পাপ জীবন থেকে হারিয়ে যাবে দু’একটি দিন/মাস? যদি তাই হয়, তো কেউ কি পারবে কোনদিন ফিরিয়ে দিতে তাদের সোনালি জীবনের এই ক্ষয়ে যাওয়া সময়? দেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময় লাখো কুঁড়ি নাগরিকদের জীবনের অংশ এভাবে কেড়ে নেয়ার কী অধিকার আছে আমাদের?
অনেকেই দাবি করছেন, পরীক্ষার দিনগুলোতে যেনো হরতাল দেয়া না হয়। তেমনটি হলে তো খুবই ভালো হতো। কিন্তু বাস্তবে তা হওয়াার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। কারণ এই দুই মাসে এমন দু’চারটি দিন পাওয়া যাবে না যে, ১ম শ্রেণি থেকে ¯œাতকোত্তর শ্রেণির কোনো না কোনো পরীক্ষা নেই। শুক্র-শনিবারে তো এমনিতেই সরকারি ছুটির দিন। সেদিন কি আর হরতাল দিয়ে দেশ ও দেশের মানুষের তেমন ক্ষতি করা সম্ভব যে সরকার কাবু হবে! বিরোধী জোটের নেতারা তো বলেই দিয়েছেন এখন আর পরীক্ষার কথা বিবেচনার সময়-সুযোগ নেই। হয়তো আগামী হরতাল সপ্তাহ বা হরতাল মাসের করণে সঠিক সময়ে শুরু এবং শেষ হবে না তাদের সকল পরীক্ষা। এভাবে চলতে থাকলে আরো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ। তৈরি হবে না বিশ্বমানের নাগরিক-কর্মী। স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে চরমভাবে ব্যহত হবে আমাদের কাক্সিক্ষত জাতীয় অগ্রগতি। শিক্ষা তথা পরীক্ষাসমূহকে যদি হরতালের আওতামুক্ত রাখা হয় তথাপি এখনকার এই ‘হত্যালে’ পরীক্ষা চালানো নিরাপদ নয়। তাই সরকারের প্রতি বিশেষ অনুরোধ, আমাদের এই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবনের এই পরীক্ষাকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করবেন না আপনাদের রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে। আপনারা পরীক্ষার তারিখ দিবেন, বিরোধী জোট হরতাল দিবে, আমরা দুশ্চিন্তায় পড়বো, আমাদের সন্তানরা চুপষে যাবে, পরীক্ষা পিছাবে, পরীক্ষার প্রিপারেশন হারিয়ে যাবে, আবার তারিখ হবে, আবার নতুন করে প্রিপারেশন নিবে, আবার হরতাল হবে, আবার পিছাবে, নিজের মাথার চুল ছিঁড়বে পরিক্ষার্থীরা, সবাই মন্দ বলবে বিরোধী জোটকে, আর খুশি হবেন আপনারা; এমন চিন্তা না করাই উত্তম। যেহেতু আপনারা বন্ধ করতে পারেননি পিকেটিং নামক সন্ত্রাস, টিভি পর্দায় বারবার দেখানো শত শত দুষ্কৃতকারীর দু’চারজনকে এরেস্ট করে পুনরায় দেখাতে পারেননি জাতির সামনে, আনতে পারেননি বিচারের আওতায়, নিশ্চিত করতে পারেননি প্রকৃত অপরাধীদের যথাযথ শাস্তি, দমন করতে পারছেন না ক্রমবর্ধমান হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ; সেহেতু হরতালকে পাশ কাটিয়ে শুত্রুবার ও শনিবারসহ সকল সরকারি ছুটির দিনেই নির্ধারণ করুন সকল পরীক্ষার তারিখ। সেইসাথে যুক্ত করুন বৃহস্পতিবার। অর্থাৎ সপ্তাহের তিনদিন রাখুন আমাদের সন্তানদের পরীক্ষার জন্য আর বাকি চারদিন রাখুন বিরোধী জোটের হরতালের জন্য। প্রয়োজনে একেক দিনে দু’টি করে পরীক্ষা নিয়ে নির্ধারিত সময়ে শেষ করুন শিক্ষাবর্ষ। কী কারণে এসব করতে হচ্ছে তা অবশ্যই বুঝবে জনগণ।
সরকারি আমলাদের বলুন, দেশের প্রায় ৪ কোটি সন্তানের স্বার্থে দয়া করে যেনো কাজ করেন কয়েকটি ছুটির দিনে। এরপরও যদি কেউ পরীক্ষার দিনে হরতাল বা তেমন কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মসুচি দিয়ে ধ্বংস করতে চান আমাদের এই নিষ্পাপ শিশু-কিশোরদের সম্ভাবনাময় বাড়ন্ত জীবন তো জনগণই তা প্রতিহত করবে। শেষ সময়ে এসে কোনোভাবেই ম্লান হতে দেওয়া যাবে না শিক্ষাক্ষেত্রে অর্জিত গত ৫ বছরের ঈর্ষণীয় সফলতা। আপনাদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার এবং থাকার হানাহনিতে কোনোভাবেই ধ্বংস হতে দেওয়া উচিত নয় আমাদের কোমলমতি সন্তানদের সম্ভাবনাময় জীবন। তাদের ভালোভাবে বেড়ে ওঠার উপরই নির্ভর করবে আমাদের ভালো থাকা। রাজনীতি যদি হয় দেশ ও জাতির সত্যিকার কল্যাণে তাহলে অবশ্যই সুরক্ষা করতে হবে এই অপার সম্ভাবনাময় শিশু-কিশোরদের শিক্ষাজীবন। যারা তা করবে, তারাই পাবে আজকের এই শিশু-কিশোরদের ভবিষ্যৎ সমর্থন।
মো. রহমত উল্লাহ্ : লেখক, অধ্যক্ষ।
http://www.bhorerkagoj5.net/new/blog/2013/11/14/147220.php

উপসম্পাদকীয়- সার্বিক সাক্ষরতার হার বাড়বে কিভাবে -নরসিংদীর কথা- ১০ সেপ্টেম্বর ২০০২


P_20180510_080157_1

(পরিমার্জিত ও পুনঃ প্রকাশিত- ২০১০)

সার্বিক সাক্ষরতার হার  বাড়বে কিভাবে
 অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ্

‘মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ২০১৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ নিরক্ষর মুক্ত করা হবে’(ইত্তেফাক রিপোর্ট- ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১০)। এটি বাঙালি জাতির জন্য অব্যশ্যই একটি সুখবর! আমাদের সবাইকে নূন্যতম অক্ষর জ্ঞান দান করে, নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে সমগ্র জাতিকে মুক্ত করার নামে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ বা কর্মসূচী বাস্তবায়নের পিছনে এ যাবৎ ব্যয় হয়েছে সরকারি, বেসরকারি ও দাতা সংস্থাগুলোর বিপুল অর্থ, শ্রম এবং সময়। আজো আমরা মুক্ত নয় সেই অভিশাপ থেকে।
যদিও অনেকের মতে এসকল পদক্ষেপের কারণেই শিক্ষার হার বেড়ে হয়েছে ৬২.৬৬ শতাংশ (সূত্র- অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০০৯ এবং  প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়)। এসব কর্মসূচীর মাধ্যমে কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পেয়েছে শিক্ষা সচেতনতা। প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বর্তমানে ড্রপ আউটের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৩০ শতাংশের নিচে। সময়, শ্রম ও অর্থব্যয়ের তুলনায় এই অগ্রগতি মোটেও সন্তোষজনক নয়। সবচেয়ে বড় কথা, ব্যালট পেপারের মুড়িতে ভোটারদের টিপসহির পরিমাণ দেখে এই হিসাবের সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই হয়ত  নিন্দুকেরা বলে থাকেন, আমাদের নিরক্ষরতা জাতির জন্য অভিশাপ হলেও কারো কারো বিদেশি অর্থ পাওয়ার ও খাওয়ার জন্য হয়ত এটি বড় আশির্বাদ!

আসলে শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে বয়স্কদের অনাগ্রহ বা অলসতাই অশিক্ষার অন্যতম কারণ। অসচেতনতা ও অসচ্ছলতা তো আছেই। তদুপরি নেই কোন বাধ্যবাদকতা। নূন্যতম  লেখাপড়া না জানার দায়ে বড় কোন সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছেন বলে মনে করছেন না নিরক্ষরগণ। কেননা, তারা ব্যক্তিগত  জৈবিক ও বৈষয়িক সমস্যাকেই বড় করে দেখেন অশিক্ষার অন্ধকার চোখে। তাই তাদের প্রত্যেককে কোন না কোন ভাবে বাধ্য করতে হবে শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী করতে। বুঝিয়ে দিতে হবে, শিক্ষা গ্রহণ ব্যতীত অচল হয়ে যাবে তার জীবনযাপন। কেননা, কাউকে কোন কিছু শিক্ষা দেয়া যায় না, যদি সে শিক্ষা গ্রহণের জন্য এগিয়ে না আসে। একটি সরকারি পদক্ষেপই এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ: সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৮১-৮২ সালের এস.এস.সি. পরীক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ ৫০ নম্বর পুরস্কার দিয়ে পাঠিয়ে ছিলেন নিরক্ষরদেরকে অক্ষর জ্ঞান দেয়ার জন্য। পরীক্ষার্থীরা প্রথমে মনের আনন্দে এবং পরে বাধ্য হয়ে বার বার গিয়েছে নিরক্ষরদের বাড়ি বাড়ি। তখন আমি নিজেই শুনেছি নিরক্ষরদের মন্তব্য “আমি লেখা-পড়া শিখলে তুমি নম্বর পাইবা আমি কী পামু ?” এ প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছে কিশোর পরীক্ষার্থীরা। নম্বর পাওয়ার তাগিদে (দুই/এক রোজের পারিশ্রমিক দিয়ে বা অন্য কোন ভাবে) সামান্য লেখা পড়া জানে এমন লোকদেরকে হাজির  করেছে স্যারদের সামনে। মিথ্যে করে বলেছে- উনাকে আমি লেখা-পড়া শিখিয়েছি। নম্বর পেয়ে গেছে পরীক্ষায়। আসলে যে নিরক্ষর সে পায়নি বা নেয়নি অক্ষর জ্ঞান। চরম ভাবে ব্যর্থ হয়েছে অত্যন্ত মিতব্যয়ী একটি পদক্ষেপ। এছাড়াও সম্ভব হয়নি দাতাদের অর্থায়নে পরিচালিত ‘সবার জন্য শিক্ষা’ কর্মসূচি ও নিজেদের অর্থায়নে পরিচালিত ‘সার্বিক সাক্ষরতা আন্দোলন’ প্রকল্পের প্রকৃত সফলতা অর্জন। সেখানেও ছিল নিরক্ষরদের আগ্রহ তৈরির ব্যর্থতা। শিক্ষা লাভের জন্য বয়স্কদেরকে আমরা নিতে পারিনি সেই নাইট স্কুেল বা বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্রে। সকল শিশুকে নিতে পারিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। আমরা হয়ত মনে রাখিনি যে, শিখন একটি দ্বিমুখী প্রকৃয়া। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়ের আন্তরিকতার উপরই নির্ভর করে এর সফলতা।

আলোচিত বাস্তবতার আলোকে দেখাযায় সার্বিক সাক্ষরতা অর্জন দ্র“ত ও নিশ্চিত করতে চাইলে অন্যান্য পদক্ষেপের পাশাপাশি নিম্নরূপ দু‘একটি আইন বা আদেশ জারি করা জর“রি। যেমন: বিয়ের  বর, কণে ও স্বাক্ষি হতে হলে; যে কোন দলিলের দাতা, গ্রহীতা ও স্বাক্ষি হতে হলে; কোন মামলার বাদি, বিবাদি বা স্বাক্ষি হিসাবে আদালতে জবানবন্দি দিতে গেলে; ব্যাংক বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে গেলে;  যে কোন নির্বাচনে প্রার্থী হতে ও ভোট দিতে চাইলে; যে কোন প্রতিষ্ঠানে যে কোন পদে চাকরি প্রার্থী হলে; নিজের বা অন্যের পেনশনের টাকা পেতে হলে;
কোনরূপ সরকারি সাহায্য গ্রহণ করতে চাইলে; বিদেশ যেতে চাইলে অবশ্যই সংশ্লিষ্টদের এমন শিক্ষা থাকতে হবে যাতে তারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পড়ে ও বুঝে নিজের ‘নাম স্বাক্ষর’ দিতে পারেন, টিপ সহির পাশাপাশি। শুনতে ও মানতে একটু কঠিন মনে হলেও সত্যিকারার্থে ২০১৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ নিরক্ষর মুক্ত করতে হলে এখই জারি করতে হবে উল্লিখিত আদেশ, যা কার্যকর করতে হবে ২০১৫ সালের শুর“তে। তবে শিশু, প্রতিবন্ধি ও অতি বৃদ্ধদেরকে মানবিক কারণেই রাখতে হবে এই আইনের বাইরে।

দেশ নিরক্ষর মুক্ত হয়ে গেলে এ খাতে আর বিদেশী ‘ভিক্ষা’ পাওয়া যাবেনা, ভাগ-বণ্টনও করা যাবে না; অতএব এমনি চলুক! যারা এই অশুভ মনোভাব পোষণ করে তারা অবশ্য আমার এই উচিত কথায় মনক্ষুন্ন হয়ে বিভিন্ন সমালোচনা করবে। বাস্তবতা হচ্ছে, আইনের বাধ্যবাদকতা দ্বারা নিরক্ষরদের শিখার আগ্রহ নিশ্চিত করা যাবে এতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ আমরা  উপদেশের চেয়ে কড়া নির্দেশই মান্য করি বেশি। তবে আমার বক্তব্যের অর্থ এই নয় যে, শুধু আইন করে দিলেই নিরক্ষরদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যাবে। বরং সরকারি পদক্ষেপের অংশ হিসেবেই হোক আর ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক ভাবেই হোক ধনী-দরিদ্র, ছোট-বড়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে দেশপ্রেমিক ছাত্র, শিক্ষক, ডাক্তার, চাকুরে, গৃহিনী, ইমাম, সমাজকর্মী, খেলোয়ার, সাংস্কৃতিক কর্মী, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ সকল শিক্ষিত ব্যক্তিকেই এগিয়ে আসতে হবে উদার মন নিয়ে। একজনকে নিতে হবে কমপক্ষে একজনের দায়িত্ব। কাজের লোক বলে, দরিদ্র বলে, ভিক্ষুক বলে নিরক্ষরদের প্রতি কোন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বা অবহেলা নয়; বরং শ্রদ্ধাভরে টেনে নিতে হবে কাছে। অত্যন্ত ধৈর্য ধরে দিতে হবে শিক্ষা। আবারও প্রমান করতে হবে-  ‘আমরাও পারি’। তবেই সম্পাদিত হবে পূণ্যকর্ম। তৈরি হবে সত্যিকার নিরক্ষরমুক্ত বাঙালি জাতি। বিশ্বদরবারে বৃদ্ধি পাবে আমাদের প্রকৃত গৌরব। //
[লেখক- অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা।]

অপার সম্ভাবনার স্কুল ব্যাংকিং




ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৯জানুয়ারি ২০১৩, ১৬মাঘ১৪১৯, ১৬রবিউলআওয়াল১৪৩৪
শিক্ষা
অপারসম্ভাবনার স্কুলব্যাংকিং
মো. রহমতউল্লাহ্
অগ্রগতির নিয়ামকসমূহের মধ্যেসঞ্চয়অত্যন্ত গুরুত্ববহ। যাদেরসঞ্চয়প্রবণতা যতবেশিতাদেরঅগ্রগতি ত্বরান্বিত হবারবাস্তবসম্ভাবনাও ততবেশি।ছোটবেলা থেকেএইবিশেষগুণটিকোনমানুষের মনেরমধ্যেপ্রোথিত হলেসারাজীবনই এরসুফললাভকরাযায়।

আমাদেরস্কুলের শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়প্রবণতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক২০১০সালেরনভেম্বর মাসেএকটিসার্কুলার জারিকরেযে, স্কুলের শিক্ষার্থীরা নিজনামেব্যাংকে একাউন্ট ওপেনকরতেপারবে।এইসার্কুলার বাস্তবায়নে এগিয়েআসেবিভিন্ন বেসরকারি সরকারিব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুসারে স্কুলব্যাংকিং বাস্টুডেন্ট ব্যাংকিং-এরআওতায়'ইয়ংস্টার' 'ফিউচারস্টার'... ইত্যাদি উদ্দীপনাসূচক নামেব্যাংকগুলো চালুকরেআকর্ষণীয় স্কিম।অত্যন্ত সহজশর্তেওপেনকরাশুরুহয়শিক্ষার্থীদের নিজেরনামেব্যাংকএকাউন্ট।
এইস্কিমের আওতায়যেকোনশিক্ষার্থী এককপিছবি, স্কুলের আইডিকার্ডনামমাত্র টাকাদিয়েযেকোনব্যাংকের যেকোনশাখায়ওপেনকরতেপারেসেভিংসব্যাংকএকাউন্ট বাসঞ্চয়ীহিসাব।যেকোনঅপ্রাপ্ত বয়সেরশিক্ষার্থী মাত্র/১০ টাকা জমাদিয়েশুরুকরতেপারেতারসঞ্চয়ীহিসাব।এইহিসাবেটাকাজমাকরানাকরারকোনবাধ্য-বাধকতা নেই। সপ্তাহের/মাসের/বছরের যে কোনএকবাএকাধিকদিনতারহিসাবেজমাকরতেপারেযেকোনপরিমাণটাকা।এইহিসাবপরিচালনার জন্যকোনরূপ চার্জনেয়নাব্যাংক। জমাকৃতটাকারউপরশিক্ষার্থীরা পেয়েথাকেসর্বাধিক হারেমুনাফাবাইন্টারেস্ট। তদুপরি, ব্যাংকভেদে শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে বানামমাত্র মূল্যেপেয়েথাকেজমাবই, চেকবই, ডেবিটকার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং ইত্যাদি সুবিধা। এইহিসাবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা স্বয়ংক্রীয়ভাবে পরিশোধ করতেপারেতাদেরস্কুল-কলেজের বেতন-ফি।এছাড়াওসংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার জন্যপ্রয়োজনে ব্যাংকথেকেসহজশর্তে নিতেপারেশিক্ষাঋণ। আজকেরএকটিছোট্টছেলেবামেয়েতারস্কুলের টিফিনের টাকা, ঈদ/পূজা, জন্মদিন বাঅন্যকোন শুভদিনে প্রাপ্ত উপহারের টাকারকিছুঅংশনিয়মিতসঞ্চয়করতেথাকলে১৫/২০/২৫ বছরেরশিক্ষাজীবনশেষেযেয়েমোটজমাকৃতটাকাএবংএরলাভসহহাতেপাবেএকটামোটাঅংকেরটাকা; যাদিয়েসেশুরুকরতেপারবেব্যক্তিগত জাতীয়উন্নয়নের জন্যআত্মকর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা। নির্বাহ করতেপারবেনিজেরবিয়েরবাসংসারের প্রাথমিক ব্যয়।কেননাছোটবেলা থেকেইব্যাংকে সঞ্চয়ীহিসাবপরিচালনার মাধ্যমে সেপ্র্যাকটিক্যালি শিখেযাবেসঞ্চয়আর্থিকব্যবস্থাপনার কৌশল; যাএকটিজাতিরউন্নয়নঅগ্রগতির জন্যঅত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বর্তমানে আমাদেরদেশে৪০টিরওবেশিব্যাংকে বিদ্যমান এইস্টুডেন্ট ব্যাংকিং স্কিম।এক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে সরকারিব্যাংকের চেয়েঅনেকদূর এগিয়েআছেপ্রাইভেট ব্যাংকগুলো। ফলেগ্রামের তুলনায়এগিয়েআছেশহরেরশিক্ষার্থীরা। আমাদেরদেশেরপ্রত্যন্ত অঞ্চলেযেহেতুএখনোবেসরকারি ব্যাংকগুলোর শাখাততটাবিস্তৃত নয়; সেহেতুবেসরকারি ব্যাংকের চেয়েবেশিভূমিকারাখতেহবেসরকারিব্যাংকগুলোকে। এগিয়েযেতেহবেনিকটবর্তী প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। বিস্তারিত বুঝিয়েদিতেহবেশিক্ষকগণকে। বিভিন্ন প্রণোদনার মাধ্যমে উত্সাহিত করতেহবেশিক্ষার্থীদেরকে। বাংলাদেশ ব্যাংকেও হতেহবেআরোসক্রিয়। শুধুএকটিসার্কুলার দিয়েবসেথাকলেইচলবেনা।ব্যবস্থা করতেহবেনিয়মিততদারকির। ব্যাংকগুলোকে আনতেহবেজবাবদিহিতার আওতায়।কেননাবড়বড়ব্যাংকগুলো বিশেষকরেসরকারিব্যাংকগুলোর শাখাপর্যায়ে স্কুলব্যাংকিং-এরমতকার্যক্রমগুলোকে পাশকাটানোর প্রবণতাই বেশি।স্কুলব্যাংকিং সফলকরারজন্যসবচেয়েদ্রুতকার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণকরতেপারেশিক্ষামন্ত্রণালয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিজারিকরাযেতেপারেস্কুলব্যাংকিং চালুকরারআদেশ।শিক্ষার্থীদের নামরেজিস্ট্রেশন করারফরমেজুড়েদিতেপারেতারনিজেরব্যাংকহিসাবের নম্বর(যদিথাকে) লিখারএকটিকলাম।স্কুলব্যাংকিং কার্যক্রমের জন্যশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আনাযেতেপারেপুরস্কার-তিরস্কারের আওতায়।শহরএবংউপশহরেঅবস্থিত এবংকিছুবাছাইকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের জন্যবাধ্যতামূলক করাযেতেপারেস্কুলব্যাংকিং। একবারজাগিয়েদিলেআমরাপারিএমনপ্রমাণআমরাবাংলাদেশের বাঙালিরা সারাবিশ্ববাসীকে দেখিয়েদিয়েছি১৯৫২এবং১৯৭১সালে।আমাদেরসচ্ছলতার জন্য, ভবিষ্যেক উজ্জ্বল করারজন্য, মজবুতআর্থিকভিত্তিনিশ্চিত করারজন্যস্কুলব্যাংকিং-এরমতকার্যক্রমের মাধ্যমে জাতিগতভাবে সঞ্চয়প্রবণতা বৃদ্ধিকরাঅত্যন্ত জরুরি।দেশজাতিরদীর্ঘমেয়াদিবৃহত্তর স্বার্থে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবংব্যক্তিবর্গ এখনইবিষয়েসক্রিয়হবেনআশাকরি।

লেখক: পি.এইচডি. গবেষক এবংঅধ্যক্ষ, কিশলয়বালিকাবিদ্যালয় কলেজ, ঢাকা n

Email- md.rahamotullah52¦gmail.com