শিক্ষার্থীদের সহমর্মিতা অর্জন অত্যাবশ্যক
মো. রহমত উল্লাহ্
শিক্ষাবিদ ও শিশুসাহিত্যিক
দৈনিক ইত্তেফাক, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩
মূল্যবোধের উল্লেখযোগ্য উপাদান হচ্ছে সহমর্মিতা। এটি জীবন দক্ষতা সমূহের অন্যতম দক্ষতা। জীবনের সর্বক্ষেত্রে সহমর্মিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সহমর্মিতা মনের গভীরে অবস্থিত একটি নিঃস্বার্থ মহামূল্যবান অনুভূতি। সহমর্মিতার দ্বারাই ব্যক্তিক, পারিবারিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় হয়। আন্তঃ ব্যক্তিক সম্পর্ক মজবুত হয়। অন্যের দুঃখ-ব্যথায় সমব্যথী হওয়া, সমানুভূতি অনুভব করা ও প্রকাশ করাই সহমর্মিতা। লক্ষণীয়, বিষয়টি সহানুভূতি নয়, সমানুভূতি বা সমান অনুভূতি। সহমর্মিতা সহানুভূতির চেয়ে গভীরে অবস্থিত। অর্থাত্ সহানুভূতি (Szmpathy) আর সহমর্মিতা (Empathু) এক নয়। কোন কোন সহানুভূতিতে করুনা বা স্বার্থ মিশ্রিত থাকতে পারে। কিন্তু সহমর্মিতা সর্বদাই ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত। মনের মনিকোঠায় প্রজ্জ্বলিত সহমর্মিতা এক অনিঃশেষ ত্যাগী প্রদীপ। এই প্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত হলেই স্বার্থহীন সহানুভূতি প্রকাশ করা যায়, প্রতিদানহীন সহায়তার বা সহযোগিতার হাত প্রসারিত করা যায়। মুখে মুখে সমবেদনা প্রকাশ করা সহমর্মিতা নয়; সহমর্মিতা হচ্ছে অন্তর দিয়ে সমবেদনা অনুভব করা এবং সে মত আচরণ করা। সহমর্মিতার দ্বারাই সহপাঠীদের সাথে সংগঠিত হয় উত্তম আচরণ ও গভীর বন্ধুত্ব। সহমর্মিতার গভীরতাই ভালোবাসার গভীরতা।
সহকর্মীদের সহমর্মিতার ফলেই তৈরি হয় আন্তরিকতাপূর্ণ কর্মপরিবেশ। সহমর্মিতার মাত্রা অনুসারেই নির্ধারিত হয় অসুস্থ, বঞ্চিত, নিপীড়িত, নির্যাতিত ও বয?োবৃদ্ধদের সঙ্গে অন্যদের আচরণ। পারিবারিক সহমর্মিতার অভাবেই শিশুরা হয়ে ওঠে অবাধ্য, বড়রা হয়ে ওঠে অসহিষ্ণু, বয়োবৃত্তদের ঠিকানা হয় বৃদ্ধাশ্রম।
সহমর্মিতাপূর্ণ সমাজ হচ্ছে নিঃস্বার্থ সহযোগিতাপূর্ণ সমাজ। সহমর্মী নাগরিক কল্যাণ রাষ্ট্রের অন্যতম উপাদান। সহমর্মী সদস্য পরিবার ও প্রতিষ্ঠানের শান্তি এবং অগ্রগতির অন্যতম নিয়ামক। ব্যক্তি, পরিবার, প্রতিষ্ঠান, সমাজ ও রাষ্ট্রের বৃহত্তর কল্যাণার্থে শিক্ষার্থীদের সহমর্মী করে গড়ে তোলা অত্যাবশ্যক। এক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রম ব্যতীত পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা প্রায় সমান্তরাল। আমাদের দেশে সার্বিকভাবে পারিবারিক তথা অভিভাবকদের শিক্ষা তুলনামূলক কম থাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তথা শিক্ষকগণের ভূমিকাই সর্বাধিক কাম্য। যার জন্য সর্বাগ্রে শিক্ষকদের হতে হবে সহমর্মী। অন্যান্য যোগ্যতার পাশাপাশি অবশ্যই সকল ধরনের ও স্তরের শিক্ষকের থাকতে হবে সহমর্মী আচরণ দিয়ে শিক্ষার্থীদের সহমর্মী করে গড়ে তোলার যোগ্যতা এবং আন্তরিকতা। তদুপরি সহমর্মিতাপূর্ণ হতে হবে শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ। বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে শিক্ষায়।
সহমর্মিতা শিক্ষার ও চর্চার মাধ্যমেই ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীরা হয়ে উঠবে ভোগবাদীর পরিবর্তে অন্যের কল্যাণে নিবেদিত ত্যাগবাদী নাগরিক।