শিক্ষকের নির্যাতনে কলেজ ছাত্রের আত্মহত্যা

শিক্ষকের নির্যাতনে কলেজ ছাত্রের আত্মহত্যা



ভোরের কাগজ > বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০১৪
শিক্ষকের নির্যাতনে কলেজ ছাত্রের আত্মহত্যা
মো. রহমত উল্লাহ
“রাজধানীর ভাটারা এলাকায় হোস্টেল সুপারের নির্যাতন সইতে না পেরে জাহিদুল ইসলাম (১৭) নামে ক্যামব্রিয়ান কলেজের এক ছাত্র আত্মহত্যা করেছে। শুক্রবার ভোরে ওই ছাত্রের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য তা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত দুই আবাসিক শিক্ষক ওমর ফারুক ও আশরাফ আলীকে আটক করেছে পুলিশ।” [যাযাদি রিপোর্ট, ১৮.১০.২০১৪]
‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি রহিত করা সংক্রান্ত নীতিমালা-২০১১’ শিরোনামে জারিকৃত আদেশের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে শারীরিক শাস্তি বলতে বোঝাবে যে কোনো ধরনের দৈহিক আঘাত করা। যেমন-
শিক্ষার্থীকে হাত-পা বা কোনো কিছু দিয়ে আঘাত বা বেত্রাঘাত, চক বা ডাস্টার জাতীয় বস্তু ছুড়ে মারা, আছাড় দেয়া ও চিমটি কাটা, কামড় দেয়া, চুল টানা বা চুল কেটে দেয়া, হাতের আঙুলের ফাঁকে পেন্সিল চাপা দিয়ে মোচড় দেয়া, ঘাড় ধাক্কা দেয়া, কান টানা বা ওঠা-বসা করানো, চেয়ার-টেবিল বা কোনো কিছুর নিচে মাথা দিয়ে দাঁড় করানো বা হাঁটু গেড়ে দাঁড় করে রাখা, রোদে দাঁড় করিয়ে বা শুইয়ে রাখা কিংবা সূর্যের দিকে মুখ করে দাঁড় করানো এবং ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে এমন কোনো কাজ করানো। আর মানসিক শাস্তি বলতে বোঝাবে- শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে এমন কোনো মন্তব্য করা যেমন- মা-বাবা, বংশ পরিচয়, গোত্র, বর্ণ ও ধর্ম সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করা, অশোভন অঙ্গভঙ্গি করা যা শিক্ষার্থীদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এই নীতিমালা সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক, নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ, উচ্চমাধ্যমিক কলেজ, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসাসহ (আলিম পর্যন্ত) অন্য সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য হবে। নীতিমালায় বলা হয়, কোনো শিক্ষক-শিক্ষিকা কিংবা শিক্ষা পেশায় নিয়োজিত কোনো ব্যক্তি অথবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী পাঠদানকালে কিংবা অন্য কোনো সময় ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে উল্লিখিত শাস্তিযোগ্য আচরণ না করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এসব অপরাধের সঙ্গে প্রতক্ষ্য বা পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে, তা ১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালার পরিপন্থী হবে এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। এসব অভিযোগের জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ১৯৮৫-এর আওতায় অসদাচরণের অভিযোগে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।
এতো কিছুর পরও বাস্তবে কিন্তু থেমে নেই শিক্ষার্থী নির্যাতন। তদুপরি যৌন হয়রানি/নির্যাতনের খবরও অনেক বেশি প্রকাশিত হচ্ছে ইদানীং। আমাদের দেশে শিক্ষার্থী নির্যাতিত হওয়ার কয়েকটি লক্ষণীয় কারণ হচ্ছে-
১. শিক্ষা গ্রহণে বা উপদেশ পালনে বাধ্য করার জন্য শাসন করার নামে শারীরিক ও মানসিক শাস্তি প্রদান থেকে শিক্ষার্থীদের সুরার উপযোগী সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা অতীতে ছিল না এবং বর্তমানে থাকলেও তার বাস্তবায়ন নেই অনেক ক্ষেত্রেই।
২. বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের অমানবিক শাস্তি প্রদানের কারণে মারাত্মক আহত/নিহত হওয়ার খবর পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু নিষ্পাপ শিশু শিক্ষার্থীদের এরূপ কঠিন শাস্তি প্রদানকারী শিক্ষকের কোনো দৃষ্টান্তমূলক সাজা প্রদান করা হয়নি বা সাজা প্রদানের খবর সেভাবে পত্রপত্রিকা-টেলিভিশনে প্রচার করা হয়নি।
৩. যেসব প্রতিষ্ঠান বা বিভাগ এসব শাস্তি রোধ করার দায়িত্বে নিয়োজিত, তারা সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছে না বা করতে পারছে না। কারণ বিচারের দাবিতে বাদীরা আদালতে আসে না বা আসতে পারে না। তদুপরি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসার মতো পর্যাপ্ত নিরপেক্ষতা নেই আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা বিধিতেও এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা আগে ছিল না এবং বর্তমানে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে থেকে থাকলেও বাস্তবে তা কার্যকর নেই।
৪. শিক্ষার্থীদের প্রতি অমানবিক আচরণকে সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারহরণ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে প্রকাশ্যে কোনো সরকারি ঘোষণা আগে ছিল না এবং বর্তমানে থাকলেও তার বাস্তবায়ন লক্ষণীয় নয়। এবং এই অপরাধ দমনে গণসচেতনতা সৃষ্টির জন্যও সরকারিভাবে জোরালো তৎপরতা নেই।
এসবের পাশাপাশি আরো একটি বড় কারণ হচ্ছে ‘শিশু মনোবিজ্ঞান’ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের, বিশেষ করে শিক্ষক, প্রশিক্ষক ও অভিভাবকদের তেমন কোনো শিক্ষা। তাই তারা মনে করেন শাস্তি প্রদানই শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণের ও নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার। তারা এটিও মনে করেন, শিক্ষা প্রদানের দায়িত্ব পাওয়া মানেই শাস্তি প্রদানের অধিকার পাওয়া। এই ভ্রান্ত ধারণার কারণেই শিক্ষার্থীদের ওপর নেমে আসে অধিকাংশ অমানবিক ও নিষ্ঠুর নির্যাতন। যার মাত্র দুচারটি ছাড়া সবাই থেকে যায় আমাদের জানার বাইরে।
প্রতিদিন হাজারো শিশু শিক্ষার্থী নিজ গৃহেও নির্যাতিত হয় তাদের পিতা, মাতা ও গৃহ শিক্ষকদের দ্বারা। প্রি-ক্যাডেট স্কুল, ক্যাডেট কলেজ ও কওমি মাদ্রাসাসহ যেসব আবাসিক/অনাবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধর্মীয় ও সামরিক ভাবধারায় পরিচালিত সেখানে নির্যাতনের মাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশি এবং ধরন বিচিত্র। শিক্ষার্থীরা শ্রেণীকক্ষে, শিক্ষক কক্ষে, প্রশিক্ষণ মাঠে, প্রশিক্ষক কক্ষে, আবাস কক্ষে; এক কথায় সর্বত্রই প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হয় শিক্ষক দ্বারা। শুধু লেখাপড়ার জন্যই নয়; চলতে-ফিরতে, উঠতে-বসতে, নাইতে-খাইতে, জাগতে-ঘুমাতে এমনকি হাসতে-কাঁদতেও নিয়মের সামান্য ব্যত্যয় ঘটলে ভাগ্যে জুটতে পারে কঠোর শাস্তি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে যা কিছু নিষেধ করা হয়েছে তা তো করা হয়ই; তারচেয়েও বেশি কিছু করা হয় কখনো কখনো কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে এমন কথাও শোনা যায়। এসব নির্যাতনের প্রতিবাদ তো দূরের কথা; জানাজানি হওয়ার মতো জোরে কান্নাকাটি করলেও বেড়ে যায় নির্যাতনের মাত্রা! তাই সামান্য সুযোগ পেলেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নামক এসব জেলখানা থেকে পালিয়ে যেতে চায় বা পালিয়ে যায় অনেক শিক্ষার্থী। বাড়িতে গিয়েও উল্টো ধমক খেতে হয় মা-বাবাসহ সবার। পড়া না পারলে, দুষ্টুমি করলে, কথা না শুনলে তো মারবেই। ফিরে যেতে বাধ্য হয় আবার সেই ভয়ার্ত আস্তানায়। যারা এতিম, তাদের তো আর পালানোর জায়গাও নেই, কষ্ট শোনার মানুষও নেই!
এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি থেকে সুরাহার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট সরকারি নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়ন। আর এই নির্দেশনা প্রণয়ন, পরিমার্জন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন; ঘরে, বাইরে, ক্লাসে, ক্যাম্পাসে, মাঠে, ছাত্রাবাসে সর্বত্রই নিরাপদ ও ভয়মুক্ত থাকে সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী। বিশেষায়িতের দোহাই দিয়ে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই থাকতে পারে না দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইনের বাইরে। মনে রাখতে হবে, এসব বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নকারীরাও ছাত্র। আমরা অনেকেই জানতে পারি না আমাদের শিশুদের কতো কঠিন আদর-যতœ করা হয় সেসব বিশেষায়িত আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে! মানবিক কারণেই তাদেরও আনতে হবে আইনের আওতায়। যেন নিষ্ঠুরতম শারীরিক ও মানসিক শাস্তিতে মারাত্মক আহত হয়ে (মা-বাবাকেও জানানো যায় না) পড়ে থাকার ভয়ে ঘুমে-জাগরণে তটস্থ থাকতে না হয় শিক্ষার্থীদের।
মো. রহমত উল্লাহ : অধ্যক্ষ ও লেখক।

প্রবন্ধ- আমাদের শিক্ষার মানোন্নয়নে কয়েকটি প্রস্তাব -প্রিয় ডট কম- ০৭ জুন ২০১৪

প্রবন্ধ- আমাদের শিক্ষার মানোন্নয়নে কয়েকটি প্রস্তাব -প্রিয় ডট কম- ০৭ জুন ২০১৪










আমাদের শিক্ষার মানোন্নয়নে কয়েকটি প্রস্তাব



Priyo.com Saturday, 7 June 2014 - 10:09pm


অবশেষে শিক্ষামন্ত্রনালয় শিক্ষার মানোন্নয়ন বিষয়ে আলোচনার জন্য বিশিষ্ট শিক্ষাবিদগনের মতামত গ্রহনের আয়োজন করতে যাচ্ছে জেনে ভালো লাগলো। এই ভালো উদ্যোগটি আরো আগে নিলে আরো ভালো হতো। পত্রিকায় সম্ভাব্য যাঁদের নাম দেখলাম তাতে আমাদের মতো নগন্যদের সেখানে গিয়ে মতামত দেওয়ার কোন সুযোগ থাকছে বলে মনে হচ্ছেনা। যদিও ড. মোহাম্মদ জাফর ইকবাল প্রশ্ন ফাঁসের প্রতিবাদের সাথে সাথে বার বার দাবি করেছিলেন, সকলের মতামত গ্রহনের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থা খোঁজে বের করার জন্য। যাহোক, যাঁদেরকে ডাকা হচ্ছে তাঁরা সফল মানুষ। আমরা আশাকরি এক্ষত্রেও তাঁরা সফল হবেন। প্রায়শই হওয়া প্রয়োজন এমন সভা এবং থাকা উচিৎ নিয়মিত সকলের মতামত আন্তরিক ভাবে বিবেচনার ব্যবস্থা।





একটি বেসরকারি স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে আমি শিক্ষা প্রসাশন ও ব্যাবস্থাপনার মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত একজন কর্মী। আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতার আলোকে দু'একটি বিষয়ের প্রতি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট গুনীজনদের সবিনয় দৃষ্টি আকর্শন করছি। বিষয় গুলু আপনারা আলোচনা ও বিবেচনা করবেন আশাকরি।

প্রশ্নফাঁসপ্রসংগেঅনেকেরআলোচনাওসমালোচনাথেকেমনেহচ্ছেতথ্যপ্রযুক্তিরউৎকর্ষসাধনইপ্রশ্নফাঁসেরজন্যদায়ী।হ্যা, আধুনিকতথ্যপ্রযুক্তিরমাধ্যমেফাঁসকৃতপ্রশ্নঅতিদ্রুতসারাদেশেছড়িয়েদেওয়াসহজহয়েছেতাসঠিক; কিন্তুএকারনেপ্রশ্নফাঁসহয়েছেবাহচ্ছেতাসঠিকনয়।প্রশ্নফাঁসেরজন্যদায়ীসংশ্লিষ্টব্যক্তিবাব্যক্তিবর্গ।নতুননতুনপদ্ধতিরকথাবলাহচ্ছে।প্রতিরোধমূলকপদ্ধতিঅবশ্যইপ্রয়োজন।তবেতারআগেপ্রয়োজনসেইপদ্ধতিপ্রয়োগেরজন্যসৎ, যোগ্যওদেশপ্রেমিকআদর্শমানুষএবংসেইসাথেপ্রয়োজনকঠোরশ্বাস্তিরবিধানওপ্রয়োগ।যদিতাকরানাহয়, তোবিফলেযাবেনতুননতুনপদ্ধতিরপিছনেরাষ্ট্রীয়অর্থব্যয়।আরলাভবানহবেঐসবপদ্ধতিআবিষ্কারওবাস্তবায়নেরসাথেসংশ্লিষ্টব্যক্তিবর্গ।এখানেওচলবেদলীয়করনএবংবানিজ্যিকিকরন।তাইমাননীয়শিক্ষামন্ত্রীমহদয়কেসর্বাগ্রেনিশ্চিতকরতেহবে, যুগেরউপযোগিআইনেরপ্রনয়নওবাস্তবায়ন।দলমতেরউর্ধ্বেউঠেনিশ্চিতকরতেহবে, সেইআইনভংগেরকঠোরতমশাস্তি।যেটিড. মোহাম্মদজাফরইকবালসহসকলেরইপ্রধানদাবি।

যেহারেবাড়ছেএ+ এরসংখ্যাতাতেআরক'দিনপরেইশুরুহবেএ+ (সর্বোচ্চমেধাবি) বেকারদেরমিছিল।তখনসামলানোরউপায়কী? তখনকোথায়গিয়েঠেকবেআমাদেরমর্যাদা? ভালোদেরভিড়েইতোহারিয়েযাচ্ছেভালোরা! তাছাড়া৩৩% নম্বরদিয়ে(দানকরে) পাশকরানোরকীপ্রয়োজনএতোএতোঅছাত্র? সরকারনিজেইতোকোনচাকরিতেআবেদনকরারসুযোগদেয়নাএদেরকে! তাহলেকেনোপ্রদানকরাহচ্ছেএইমূল্যহীনসরকারিসনদ? বর্তমানগ্রেডিংপদ্ধতিরত্রুটিবিচ্ছুতিদূরকরেএরমানোন্নয়নবিষয়েআমিআগেওপত্রিকায়বিস্তারিতলিখেছিলাম।যেখানেদেশেরসকলধরণেরওসকলস্তরেরশিক্ষামূল্যায়নমানএকইদন্ডেপ্রকাশকরারজন্যউপস্থাপনকরেছিলামজি.পি.এ.-১০পদ্ধতির (GPA-10 System) একটিপুর্নাংগনমুনা। [তথ্যসূত্র- দৈনিকইত্তেফাক-০৩আগস্ট২০১১]।তদুপরিআমাদেরপ্রতিষ্ঠানেরএকটিঅনুষ্ঠানশুরুরআগেউপস্থিতমাননীয়শিক্ষামন্ত্রীজনাবনুরুলইসলামনাহিদমহোদয়কেসরাসরিবলেছিলামএবিষয়টি।কোনকাজহয়নি।এখনআবারসংক্ষেপেবলছি, যদিআমারপ্রস্তাবিতসেইজি.পি.এ.-১০পদ্ধতিপ্রবর্তনেশিক্ষামন্ত্রনালয়েরচরমঅনিহাথাকে, তোবর্তমানপদ্ধতিতেআনতেহবেকমপক্ষেদু’টিসংশোধনি। (ক) যেহেতুপ্রথমথেকেই৯০% নম্বরেএ+ গ্রেডনির্ধারনকরাহয়নি; এবংযেহেতু৮০% নম্বরেইতোমধ্যেঅনেককেইএ+ গ্রেডপ্রদানকরাহয়েছে; সেহেতু৯০% নম্বরেএ++ বাগোল্ডেনএ+ নামেঅতিমেধাবিদেরকেপ্রদানকরতেহবেএকটিআলাদাগ্রেড। (খ) যেহেতু৩৩% নম্বরপেয়েপাশকরাছেলেমেয়েদেরকেসরকারনিজেইমূল্যায়নকরছেনা; সেহেতুআন্যান্যদেশেরমতো৪৫% বা৫০% নম্বরেনির্ধারনকরতেহবে (পাশ) ডিগ্রেড।

সাধারনশিক্ষাবোর্ডেরপরিক্ষাগুলুতেআগেরতুলনায়নকলকমলেওউন্মুক্তবিশ্ববিদ্যালয়এবংকারিগরিশিক্ষাবোর্ডেরপরিক্ষায়এখনোনকলেরআভিযোগআছে।বিশেষকরেবাংলাদেশউন্মুক্তবিশ্ববিদ্যালয়েরএসএসসিএবংএইসএসসিপরিক্ষায়কোনম্যাজিস্ট্রটথাকেনাবিধায়নকলেরমহোৎসবচলে।এইমহোৎসববন্ধকরাজরুরি।মনেরাখতেহবেএসকলশিক্ষার্থীদেরপরিক্ষারফলাফলএখনসাধারনশিক্ষাবোর্ডেরশিক্ষার্থীদেরফলাফলেরসমমানসম্পন্ন।তারাঅধিকযোগ্যহলে, শুধুদেশেইনয়, বিদেশেগিয়েওআয়করতেপারবেঅধিকবৈদেশিকমূদ্রা।তাইশুধুপিইসি, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসিপরিক্ষানিয়েব্যস্তথাকলেইচলবেনা; বরংউন্মুক্তবিশ্ববিদ্যালয়েরপরিক্ষা, কারিগরিশিক্ষাবোর্ডেরপরিক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয়েরউচ্চশিক্ষারপরিক্ষা, বিসিএসপরিক্ষাসহসকলছোটবড়চাকরিরবাছাইপরিক্ষাকরতেহবেদুর্নীতিওস্বজনপ্রীতিমুক্ত।বিশেষকরেশিক্ষকওশিক্ষপ্রতিষ্ঠানপ্রধানতথাশিক্ষাপ্রশাসকনিয়োগেবাছাইকরতেহবেসর্বাধিকসৎ, যোগ্য, দক্ষ, মেধাবি, নির্লোভ, নিরপেক্ষ, ন্যায়নীতিবান, দেশপ্রেমিকমানুষ।কেননাএকজনঅসৎওঅযোগ্যশিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানপ্রধানতথাশিক্ষাপ্রশাসকসারাজীবনতৈরিকরেহাজারহাজারঅসৎওঅযোগ্যনাগরিকএবংঘটায়প্রশ্নফাঁসওনকলেরমতোহাজারোঅপকর্ম।

শক্ত হাতে বন্ধ করতে হবে অপরিকল্পিত ভাবে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করার সুযোগ। একদিকে কাম্য শিক্ষার্থী না থাকায় স্বীকৃতি নবায়ন দেওয়া হচ্ছেনা হাজার হাজার স্কুল, কলেজ, মদ্রাসার; আবার অন্যদিকে এক বা একাধিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার পাশেই অনুমতি দেওয়া হচ্ছে আরো এক বা একাধিক স্কুল, কলেজ ও মদ্রাসা! শিক্ষার্থী সংগ্রহের জন্য বাড়ি বাড়ি ছুটছেন শিক্ষকগন! দিচ্ছেন বিভিন্ন অফার। এমনকি শিক্ষামন্ত্রনালয় কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত মডেল স্কুল ও কলেজ গুলুতেও চলছে ফ্রি ভর্তির অফার। অথচ প্রতিটি নতুন সরকার এসেই তৈরি করছে আরো নতুন নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান! দলীয় কমিটির মাধ্যমে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে চরম অযোগ্য দলীয় নেতা, কর্মী, ক্যাডার! এভাবে অযোগ্য শিক্ষক আর অপরিকল্পিত প্রতিষ্ঠান বাড়ালে কীভাবে বৃদ্ধি পাবে শিক্ষার মান? অবশ্যই বন্ধ করতে হবে এই আত্মঘাতি প্রকৃয়া। এবং সেইসাথে দলীয় কমিটির কবল থেকে মুক্ত করতে হবে শতকরা ৮০ ভাগেরও অধিক শিক্ষার্থীদের হাজার হাজার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

শিক্ষার মান বৃদ্ধির পূর্বশর্ত হচ্ছে যোগ্য শিক্ষক। সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম প্রবর্তনসহ শিক্ষাক্ষেত্রে যে হারে আধুকায়ন করা হয়েছে ও হচ্ছে, তাতে যোগ্য শিক্ষক ব্যতীত সঠিকভাবে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করা মোটেও সম্ভব নয়। তাই শিক্ষকদের আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধি করে সর্বাধিক যোগ্যদেরকে উৎসাহিত করতে হবে শিক্ষক হবার জন্য। পাশাপাশি বিদ্যমান শিক্ষকদের ক্লাস গ্রহন ঠিক রেখে বিদ্যালয়েই করতে হবে ধারাবাহিক প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা। ক্লাস বাদ দিয়ে প্রশিক্ষনে পাঠানো হলে, প্রশিক্ষন না এনে কেবল টাকা নিয়ে চলে আসেন এমন শিক্ষকের সংখ্যাই বেশি। কম্পিউটার চালু করতে জানেন না, নিজের নামটিও টাইপ করতে পারেন না, প্রশ্নপত্র তৈরি করতে পারেন না, এমন শিক্ষকের সংখ্যা এখনো শতকরা প্রায় ৮০ ভাগের অধিক। যা সরকারি প্রাথমিক ও বেসরকারি মাধ্যমিক স্তরে প্রায় শত ভাগ। আর্থিক সুবিধা প্রদনের আশ্বাস এবং শাস্তি প্রদানের ভয় দিয়ে, আমি খুব কাছে থেকে লক্ষ করেছি, অধিকাংশ শিক্ষকের নতুন পদ্ধতি শিখার ও গ্রহনের কোন আগ্রহই নেই! তাদের দিয়ে কীভাবে সম্ভব হবে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস? তাই অতিবয়সের, অযোগ্যতার, ও অনাগ্রহের কারনে যারা অর্জন করতে ব্যার্থ হবে কাংখিত মান, তাদেরকে গোল্ডেন হ্যান্ডশেক দিয়ে বিদায় করে দিতে হবে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে। এককথায় যেকোনমূল্যে সকল স্তরের শিক্ষায় নিশ্চিত করতে হবে শতভাগ যোগ্য শিক্ষক।

কর্মমুখি ও বিজ্ঞানমনষ্ক শিক্ষার পাশাপাশি প্রতিটি শিক্ষার্থীকে প্রদান করতে হবে দেশ ও জাতির কল্যানে আত্মনিয়োগের কঠিন শপথ। অথচ আমার জানামতে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি ভাবে নির্ধারিত কোন শপথ বাক্য নেই। ফলে দেশের লাখো প্রতিষ্ঠানে শপথ পাঠ না হওয়া বা যেমন ইচ্ছে শপথ হওয়াটাই স্বাভাবিক। [এমতাবস্থায় বিশেষ করে যেসকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সদা মারতে ও মরতে প্রস্তুত, তারা কী (সৃজণশীলশ) শপথ গ্রহণ করে তা গভীর ভাবে ভেবে দেখা প্রয়োজন।] সচেতন ও দায়ীত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ মনে করেন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘যেমন ইচ্ছে তেমন শপথ’ দেশ ও জাতির জন্য মোটেও কল্যাণকর নয়। এতে করে ভিন্ন ভিন্ন মন-মনসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠছে নতুন প্রজন্ম। ক্রমে বেড়েই চলছে আমাদের ও আমাদের উত্তরাধিকারদের বিভক্তি। আদর্শ হীন, দয়ীত্ব-কর্তব্যহীন, দেশপ্রেমহীন, মানবতাহীন, সচ্চরিত্রহীন হচ্ছে আমাদের অধিকাংশ সন্তান। তাই শিক্ষা জীবনের শুরু থেকেই সকলের জন্য থাকা চাই সুশিক্ষা অর্জনের শপথ। সঠিক ভাবে নিজেকে ও নিজের বিবেককে তৈরি করার শপথ। সৎ ও নীতিবান থাকার শপথ। দুর্নীতি মুক্ত থাকার শপথ। জাতীয়তা বোধ তৈরির শপথ। যেই মজবুত শপথ বুকে নিয়ে সহজেই সম্ভব দেশ, জাতি ও মানুষের সত্যিকার কল্যাণ। নিচের ক্লাসের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ শ্রেণী-পেশা-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্যই বাধ্যতামূলক থাকা চাই একটি সহজবুদ্ধ অর্থবহ নিরপেক্ষ শপথ। যা হবে আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের মতই জতীয় শপথ। লেখা থাকবে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পাঠ্য বইয়ের শুরুতে। বিভিন্ন দিবসে আমাদের জাতীয় সংগীতের আগে/পরে ছাত্র, শিক্ষক, চাকুরে, সাংসদ, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিসহ সর্বস্তরের মানুষ হাত তুলে বার বার গ্রহণ করবেন আমাদের নির্ধারিত জাতীয় শপথ। যাতে বার বার জাগ্রত হয় আমাদের বিবেক, শানিত হয় আমাদের চেতনা, উজ্জীবিত হয় দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধ। সঞ্জীবিত হয় প্রতিবাদ-প্রতিরোধের অসীম শক্তি। সেই শপথ টি হতে পারে এই রূপ: ‘আমি শপথ করছি যে, -সদা সত্য কথা বলবো ও সৎ পথে চলবো। ছোটদের স্নেহ ও বড়দের মান্য করবো। সুশিক্ষা অর্জনে আমরণ আন্তরিক থাকবো। প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্র ও স্বধর্মের সকল বিধি-বিধান মেনে চলবো। আমাদের জাতীয় চেতনা, একতা ও স্বাধীনতা সু্রক্ষায় সর্বদা সক্রিয় থাকবো। হে সর্বশক্তিমান, আমাকে শক্তি দিন, আমি যেন সুনাগরিক হয়ে- প্রতিষ্ঠান, মাতৃভূমি ও মানুষের কল্যাণে আত্ম নিয়োগ করতে পারি। আমিন।

-মো. রহমত উল্লাহ্
অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় কলেজ, ঢাকা
Email: rahamot21@gmail.com

- See more at: http://www.priyo.com/blog/2014/06/07/73585.html#sthash.z4jwM3yY.dpuf


আমাদের একটি জাতীয় শপথ থাকা জরুরি

আমাদের একটি জাতীয় শপথ থাকা জরুরি


আমাদের একটি জাতীয় শপথ থাকা জরুরি

https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEi4YXY6ox02p4UqADLhZ46cSX4w0iba2D2Vp9lr64-xoBNIhlrkyzayzY4GyBxDptgH11Ug9eeeX8gZV0SaX2J1G8-Gds9B3PPjwlQDj6bjpb1vfQ9pMgycunbTYcgx-fDabb5sw61x0CN_/s1600/DSC00115+%28FILEminimizer%29.JPGমো. রহমত উল্লাহ্
priyo.com >Sunday, 6 July 2014 - 12:39pm
http://www.priyo.com/blog/2014/07/06/83401.html

 আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি ভাবে নির্ধারিত কোন শপথ আছে কিনা তা জানার চেষ্টা করতে গিয়ে কথা বলেছি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষক গণের সাথে। ফোন করেছি বিভিন্ন দপ্তরে ও প্রতিষ্ঠানে। কেউই দিতে পারেননি নিশ্চিত তথ্য। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদশর্ক জানান- স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত কোন শপথ আছে এমনটি তাঁর জানা নেই। ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসার বলেন- আমার অফিসে এই মর্মে কোন সার্কুলার আদৌ আছে কি না আমি বলতে পারবো না।

এমতাবস্থায় দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন বক্তব্যে ও ভাষায় শিক্ষার্থীদের শপথ বাক্য পাঠ অস্বাভাবিক নয়। হয়ত সে কারণেই বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ডায়রিতে বিভিন্ন রকম শপথ বাক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সাধু বা চলিত অথবা মিশ্র ভাষায় লিখিত বাক্য গুলো মোটামুটি নিম্নরূপ: “আমি অঙ্গীকার করিতেছি যে, মানুষের সেবায় সব সময় নিজেকে নিয়োজিত রাখিব। দেশের প্রতি অনুগত থাকিব। দেশের একতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখিবার জন্য সচেষ্ট থাকিব। হে আল্লাহ্, আমাকে শক্তি দিন, আমি যেন দেশের সেবা করিতে পারি এবং বাংলাদেশকে একটি আদর্শ ও শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসাবে গড়িয়া তুলিতে পারি। আমীন।” অথবা “আমি শপথ করছি যে, কলেজের সকল নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলব। নিষ্ঠা ও মনোযোগসহকারে লেখাপড়া করব। কলেজের সুখ্যাতি ও মান-উন্নয়নে সচেষ্ট থাকব। দেশ ও মানুষের সেবায় সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখব। স্বধর্মের সকল বিধি-বিধান মেনে চলব। হে আল্লাহ্, আমাকে শক্তি দিন। আমি যেন কলেজের ভাবমূর্তিকে উজ্জল করতে পারি। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের সেবা করতে পারি। আমীন।”
আবার অনেক প্রতিষ্ঠানের ডায়রিতে কোন শপথ বাক্য নেই। দেশের লাখো প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কোন ডায়রি নেই। অন্য কোথাও লিখিত কোন শপথ বাক্য নেই। শপথ বাক্য পাঠের কোন আয়োজন নেই। সুনির্দিষ্ট শপথ বাক্য পাঠের কোন বাধ্য-বাদকতা নেই। এমতাবস্থায় বিশেষ করে যেসকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সদা মারতে ও মরতে প্রস্তুত, তারা কী (সৃজণশীল?) শপথ গ্রহণ করে তা গভীর ভাবে ভেবে দেখা প্রয়োজন।
সচেতন ও দায়িত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ মনে করেন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান, যেমন ইচ্ছে তেমন শপথ দেশ ও জাতির জন্য মোটেও কল্যাণকর নয়। প্রথমত: এতে করে ভিন্ন ভিন্ন মন-মনসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠছে নতুন প্রজন্ম। ক্রমে বেড়েই চলছে আমাদের ও আমাদের উত্তরাধিকারদের বিভক্তি। আদর্শ হীন, দয়ীত্ব-কর্তব্যহীন, দেশপ্রেমহীন, মানবতাহীন, চরিত্রহীন হচ্ছে আমাদের অধিকাংশ সন্তান।
দ্বিতীয়ত: আমাদর সকল ক্লাসের পাঠ্য বই ও সাহিত্য চলতি ভাষায় রচিত। বি.সি.এস. পরিক্ষাসহ সকল পরিক্ষার প্রশ্ন ও উত্তর চলতি ভাষায়। আমাদের জাতীয় সঙ্গীত ও রণ সঙ্গীত চলতি ভাষায়। জাতীয় সংসদ সদস্যদের শপথ হয় চলতি ভাষায়। ছড়া, কথা, গান, কবিতা, বিতর্ক, বক্তৃতা সবই হয় চলতি ভাষায়। অথচ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের শপথ বাক্য হবে তাদের অপরিচিত দুর্বুদ্ধ সাধু ভাষায় তা মেটেও যৌক্তিক নয়। যার ভাব/বক্তব্য ও দায়িত্ব/কর্তব্য প্রাথমিক-মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী; এমন কি এস.এস.সি. পাস প্রাথমিক শিক্ষক গণের পক্ষেও অনুধাবন করা কঠিন। তৃতীয়ত: এই শপথ বাক্য গুলো মনে হয় সামরিক বাহিনীর জন্য অধিক উপযোগী।
জীবনের শুরুতে সকলের জন্য চাই- সুশিক্ষা অর্জনের শপথ। সঠিক ভাবে নিজেকে ও নিজের বিবেককে তৈরি করার শপথ। সৎ ও নীতিবান থাকার শপথ। দুর্নীতি মুক্ত থাকার শপথ। জাতীয়তা বোধ তৈরির শপথ। যেই মজবুত শপথ বুকে নিয়ে সহজেই সম্ভব দেশ, জাতি ও মানুষের সত্যিকার কল্যাণ।
শুধু মাত্র নিচের ক্লাসের অবুঝ শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের পাঠের জন্যই নয়, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ শ্রেণি-পেশা-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্যই বাধ্যতামূলক থাকা চাই একটি সহজবুদ্ধ অর্থবহ নিরপেক্ষ শপথ। যা হবে আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের মতই জতীয় শপথ। এই শপথ থাকতে পারে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পাঠ্য বইয়ের শুরুতে। সরকারি-বেসরকারিসহ সকল প্রতিষ্ঠানের প্রোসপেকটাস ও বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত ম্যাগাজিন, পত্র, পত্রিকায়। সকল প্রশিক্ষণ একাডেমিতে। আমাদের রাষ্ট্রীয় সংবিধানে। বিভিন্ন জাতীয়দিবসে আমাদের জাতীয় সংগীতের আগে/পরে ছাত্র, শিক্ষক, চাকুরে, সাংসদ, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, রষ্ট্রপতিসহ সর্বস্তরের মানুষ খুলা ডানহাত বাম বুকে(হৃদয়ে) অথবা ভূমির সমান্তরালে(ভূমিতে) রেখে বার বার গ্রহণ করতে পারেন আমাদের নির্ধারিত জাতীয় শপথ। নবীন বরণ, বিদায়, সমাবর্তনসহ বিভিন্ন ছোট-বড় অধিবেশন ও অনুষ্ঠানের শুরুতে ধর্মগ্রন্থ পাঠের পর পরই হতে পারে, ভালো হওয়ার ও ভালো করার সুদৃঢ় শপথ। যাতে বার বার জাগ্রত হয় আমাদের বিবেক, শানিত হয় আমাদের চেতনা, উজ্জীবিত হয় দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধ। সঞ্জীবিত হয় প্রতিবাদ-প্রতিরোধের অসীম শক্তি। সেই শপথটি হতে পারে এই রূপ:
[‘আমি শপথ করছি যে, -সদা সত্য কথা বলবো ও সৎ পথে চলবো। ছোটদের স্নেহ ও বড়দের মান্য করবো। সুশিক্ষা অর্জনে আমরণ আন্তরিক থাকবো। প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্র ও স্বধর্মের সকল বিধি-বিধান মেনে চলবো। ভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও সম্প্রদায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবো। আমাদের জাতীয় চেতনা, একতা ও স্বাধীনতা সুরক্ষায় সর্বদা সক্রিয় থাকবো। হে সর্বশক্তিমান, আমাকে শক্তি দিন, আমি যেন সুনাগরিক হয়ে- প্রতিষ্ঠান, মাতৃভূমি ও মানুষের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করতে পারি।’ -আমিন।]
[লেখক: শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক, গল্পকার, ছড়াকার, এবং তালিকাভুক্ত গীতিকার- বাংলাদেশ টেলিভিশন বাংলাদেশ বেতার।]
- See more at: http://www.priyo.com/blog/2014/07/06/83401.html#sthash.w3WA3sPK.dpuf


বর্তমান বাজেটেই দ্বিগুণ করা সম্ভব কলেজ শিক্ষকদের বেতন-ভাতা

বর্তমান বাজেটেই দ্বিগুণ করা সম্ভব কলেজ শিক্ষকদের বেতন-ভাতা



বর্তমান বাজেটেই দ্বিগুণ করা সম্ভব কলেজ শিক্ষকদের বেতন-ভাতা
মো. রহমত উল্লাহ
ভোরের কাগজ : ১৩/১০/২০১৪   http://www.bhorerkagoj.net/
প্রতিবারই এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পরপর একটি খবর প্রকাশিত হয়। ভালো কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবে না ভালো শিক্ষার্থীরা। যে হারে এ+ পাচ্ছে, এতো এ+ কলেজ পাবে কই? এ+ শিক্ষার্থীরাতো এ+ কলেজে ভর্তি হতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কেন কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবে না আমাদের ছেলেমেয়েরা? আমাদের কি কলেজ কম? কলেজে কি শিক্ষক কম? মোটেও না। বরং শিক্ষার্থীর তুলনায় অনেক বেশি কলেজ, অনেক বেশি শিক্ষক। কি, পাঠক, খটকা লাগছে?
তা তো লাগবেই। স্রোতের বিপরীতে কথা বলছি আমি। একটু লক্ষ করুন, কলেজে ভর্তির কতো কতো বিজ্ঞাপন আপনার আশপাশে। চাহিদা ও জোগান তত্ত্ব অনুসারে কলেজর সংখ্যা কম হলে তো মোটেও প্রয়োজন হতো না এতো এতো বিজ্ঞাপনের। শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি ছুটতে হতো না কলেজের শিক্ষকদের। শিক্ষার্থীর অভাবে স্বীকৃতি নবায়ন ঝুলে থাকতো না হাজার হাজার নতুন পুরাতন কলেজের।

তা হলে কি বলা যায়, কলেজ আছে; কিন্তু ভালো কলেজ নেই। এ+ সনদধারীদের জন্য এ+ কলেজের অভাব। ভালো কলেজ কোনটি? প্রচলিত ধারণায় বলা যায়, যে কলেজে বাছাই করা ভালো শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে ভালো রেজাল্ট করে সেটিই ভালো কলেজ। সেখানে কার কৃতিত্ব বেশি; সেই কলেজের শিক্ষকদের, নাকি বাছাই করা শিক্ষার্থীদের, নাকি লাগাতার কোচিংয়ের সেটি আলোচনা করতে গেলেই হয়তো রাগ করবেন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী এবং সেই ভালো কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক। অথচ সেইসব ভালো কলেজে আনুপাতিক হারে এ, বি, সি গ্রেডের কিছু শিক্ষার্থী ভর্তি করে দিলেই দেখা যেতে পারতো তারা কতোটা ভালো পড়ান। কিন্তু সরকার তা না করে, ভালো কলেজ ঘোষণা দিয়ে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে তাদের শিক্ষা বাণিজ্যের সুযোগ। তদুপরি তাদের নতুন নতুন সেকশন ও শাখা খোলার সুযোগ দিয়ে অন্যান্য কলেজে তৈরি করছে শিক্ষার্থী সংকট।

এমন অনেক সরকারি-বেসরকারি কলেজ আছে, যেখানে ১৫/২০ জন শিক্ষক, ৪০/৫০ জন শিক্ষার্থী। অনেক কলেজে এমন বিভাগ আছে, যেখানে ৫/৭ জন শিক্ষার্থী, ৮/১০ জন শিক্ষক। অধিকাংশ কলেজে এমন এমন অনেক বিষয় আছে যেখানে শিক্ষক আছেন ঠিকই, কিন্তু শিক্ষার্থী ২/১ জন আছে অথবা নেই। সেই কলেজগুলো কি সরকারের অনুমোদিত নয়? সেইসব কলেজের শিক্ষকদেরও তো সরকার কম/বেশি বেতন দিচ্ছে। তাদের রক্ষা করা কি সরকারের দায়িত্ব নয়? তাহলে কেন তৈরি করা হচ্ছে বা অনুমোদন দেয়া হচ্ছে আরো নতুন নতুন কলেজ?

সরকার বার বার বলছে শিক্ষকদের বেতন বাড়ানো উচিত এবং স্বতন্ত্র স্কেল দিয়ে তা বাড়ানো হবে। কিন্তু তা করা হচ্ছে না। এ কথা সত্য যে শিক্ষা খাতে কর্মরত লোকের সংখ্যা অন্যান্য বিভাগের চেয়ে বেশি। তাই এ খাতে নিয়োজিত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সামান্য বাড়াতে গেলেই অনেক টাকার প্রয়োজন। তবে এ কথাও তো সত্য যে, শিক্ষা খাতে টাকা ব্যয় করা হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বেশি দীর্ঘমেয়াদি ও লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করা। উন্নত বিশ্বের সব দেশেই শিক্ষকগণের বেতন-ভাতা সর্বাধিক। যারা এ খাতে বিনিয়োগ যতো বেশি বাড়িছেন তারা ততো বেশি উন্নতি লাভ করেছেন। তবে এই বিনিয়োগ হতে হয় সুপরিকল্পিত। অথচ একদিকে আমাদের রয়েছে অনটন, অপরদিকে রয়েছে অর্থের অপচয়। রয়েছে সঠিক পরিকল্পনার অভাব। যেমন আমাদের দেশে কলেজ পর্যায়ে শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যা বেশি। প্রয়োজনের তুলনায় এই অতিরিক্ত শিক্ষক না থাকলে বর্তমান বাজেটেই প্রায় দ্বিগুণ করা সম্ভব কলেজ শিক্ষকদের বেতন-ভাতা। একটু লক্ষ করা যাক কেমন করে তা সম্ভব। বর্তমানে প্রায় উপজেলাতেই উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের ৮/১০ করে সরকারি এমপিওভুক্ত সাধারণ কলেজ, কারিগরি কলেজ ও আলিয়া মাদ্রাসা রয়েছে। যাদের প্রায় প্রতিটিতেই (কোনো কোনো উপজেলার ১/২ বিশেষ প্রতিষ্ঠান ব্যতীত) রয়েছে মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিটিতে রয়েছে গড়ে ৫০ থেকে ৭০ জন শিক্ষার্থী এবং ১৫ থেকে ১৮ জন শিক্ষক। অর্থাৎ গড়ে প্রতি ৩/৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছেন ১ জন করে শিক্ষক। এই সব প্রতিষ্ঠানে এমনও বিষয় রয়েছে যে বিষয়ের শিক্ষক আছেন কিন্তু কোনো শিক্ষার্থী নেই। যেমন আইসিটি বিষয় সব বিভাগের শিক্ষার্থীর জন্য বাধ্যতামূলক করার ফলে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের সাচিবিক বিদ্যা বিষয়ের শিক্ষার্থী এখন শূন্যের কোটায়। এসব প্রতিষ্ঠানের মানবিক বিভাগের ১৫/২০ শিক্ষার্থী আইসিটি, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস, ইসলামিক স্টাডিজ, অর্থনীতি, পৌরনীতি, সমাজকর্ম, ভূগোল, কৃষি শিক্ষা, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে ভাগাভাগি হয়ে কোনো কোনো শিক্ষকের ভাগে একজনও পড়ে না বাস্তবে। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীর সংখ্যা তো সারা দেশেই কম। আর এই সব কলেজ-মাদ্রাসায় তো নেই বললেই চলে। শিক্ষার্থী সংকটের এই করুণ চিত্র যে কেবল মফস্বলের তা কিন্তু নয়; রাজধানী ঢাকাসহ প্রতিটি শহরের প্রতিটি থানায়ই রয়েছে এমন অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থী সংকট সম্পর্কে আমার এই বক্তব্যের প্রমাণ হচ্ছে, কাম্য শিক্ষার্থী না থাকার দায়ে এইরূপ হাজার হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি নবায়নের আবেদন বছরের পর বছর শিক্ষা বোর্ড অফিসে ঝুলে আছে। অথচ এইসব শিক্ষকদের বছরের পর বছর বেতন-ভাতা দিয়ে যাচ্ছে সরকার; তা যতো কমই হোক না কেন। তদুপরি প্রতিটি উপজেলায় হিড়িক পড়েছে ডিগ্রি, অনার্স ও মাস্টার্স কলেজ করার। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে বিষয় খোলা হচ্ছে নিজেদের বেকার স্বজনদের চাকরির কথা বিবেচনা করে। শিক্ষার্থী থাকুক চাই না থাকুক, নিজের বা দলের মানুষের চাকরি হলেই হলো। বেতন দেবে সরকার। প্রধানমন্ত্রী বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় করে দিবেন প্রতিটি জেলায়। একটা বিশ্ববিদ্যালয়েই তো লেখাপড়া করতে পারে ১০/১৫ হাজার শিক্ষার্থী। তার ওপর এতো এতো কলেজে উচ্চ শিক্ষা। সবাই উচ্চ শিক্ষা নিলে কারিগরি কলেজে পড়বে কারা? একটা জেলা বা উপজেলা থেকে কতোজন কোন বিষয়ে অনার্স দরকার, কতোজন ডাক্তার দরকার, কতোজন ইঞ্জিনিয়ার দরকার, কতোজন পিএইচডি দরকার, কতোজন আলেম দরকার, কতোজন মুফতি দরকার, কতোজন কৃষিবিদ দরকার, কতোজন পুষ্টিবিদ দরকার, কতোজন নার্স দরকার, কতোজন শিক্ষক দরকার, কতোজন কারিগর দরকার এবং এই চাহিদা মিটানোর জন্য কতোটি কোন ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দরকার তার কোনো হিসাব সরকারের কাছে আছে কিনা আমার জানা নেই। তবে এই হিসাব-নিকাশ করেই তৈরি করা বা অনুমোদন দেয়া দরকার নতুন নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। উন্নত বিশ্বে তাই হয়ে থাকে। অন্যথায় শিক্ষা খাতে অর্থ ব্যয় লাভজনক বিনিয়োগ না হয়ে হবে ক্ষতিজনক অপচয়।

অথচ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে একাধিক বিভাগ ও বিভাগের বিষয় না খুলে একেকটি উপজেলায়/থানায় প্রয়োজন বা চাহিদা অনুসারে বিশেষায়িত করে ছোট/বড় একটি সাইন্স কলেজ, একটি আর্টস কলেজ, একটি কারিগরি কলেজ ও দুএকটি কমার্স কলেজ থাকলে অর্ধেকেরও কম সংখ্যক ভালো শিক্ষক দিয়েই সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা সম্ভব বর্তমান সংখ্যক শিক্ষার্থীর লেখাপড়া। সেখানেই হতে পারে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উচ্চ শিক্ষা। সরকার সে দিকে যাওয়ার চেষ্টা তো করছেই না বরং অন্যান্য কলেজের পাশে তৈরি করছে আরো নতুন নতুন কলেজ এবং সেই সব কলেজগুলোকে বিশেষায়িত না করে খুলে দিচ্ছে সব বিভাগ। অথচ পরিকল্পিতভাবে বিশেষায়িত কলেজ করে এবং বিদ্যমান কলেজগুলোকে সময় ও অপশন (ঙঢ়ঃরড়হ) দিয়ে বিশেষায়িত করার সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে বর্তমান বাজেটেই দ্বিগুণ করা সম্ভব কলেজ শিক্ষকদের বেতন-ভাতা। বর্তমান উন্নয়ন বাজেটের টাকা দিয়েই দেয়া সম্ভব পর্যাপ্ত আধুনিক ভবন, আসবাবপত্র, ই-লাইব্রেরি, ডিজিটাল ক্লাসরুম ও সব অত্যাধুনিক শিক্ষা সামগ্রী। প্রতিটি কলেজই হতে পারে ভালো কলেজ। আরো বেশি নিশ্চিত হতে পারে মানসম্পন্ন শিক্ষা।

মো. রহমত উল্লাহ : শিক্ষক, লেখক।


প্রবন্ধ- 'ভালো কলেজ ও মন্দ কলেজ নিয়ে দুটি কথা' -যায়যায়দিন- ১৩ অক্টোবর ২০১৪

প্রবন্ধ- 'ভালো কলেজ ও মন্দ কলেজ নিয়ে দুটি কথা' -যায়যায়দিন- ১৩ অক্টোবর ২০১৪











যায়যায়দিন > ১৩ অক্টোবর ২০১৪

ভালো কলেজ মন্দ কলেজ নিয়ে দুটি কথা

[ভালো কলেজগুলোয় কি সরকারি কলেজের শিক্ষকদের চেয়ে অধিক যোগ্য শিক্ষক প্রশাসক কাজ করছেন? সুযোগ-সুবিধা কি সরকারি কলেজের চেয়ে বেশি? নিশ্চয়ই না তাহলে তাদের এত ভালো ফলাফলের আসল কারণ কী? অবশ্যই অনেক কারণ বিদ্যমান তবে প্রধানত দুটি প্রথম কারণ হলো_ তারা বাছাই করা ভালো শিক্ষার্থী নিয়ে কাজ করেন দ্বিতীয় কারণ হলো_ তারা অধিকাংশই কমিটির প্রভাব থেকে কম-বেশি মুক্ত]

মো. রহমত উল্লাহ্


বাংলাদেশ ব্যুরো অব এডুকেশন ইনফরমেশন অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিকস (বেনবেইস) থেকে পাওয়া ২০১২ সালের তথ্য আনুসারে আমাদের দেশে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের (একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির) কলেজ ১ হাজার ৯৩৬টি, প্রভাষক বা সহকারী অধ্যাপক ৩৩ হাজার ৮৪৩ জন এবং শিক্ষার্থী ৫ লাখ ৫০ হাজার ৫৭৯ জন। এই হিসাব অনুসারে দেখা যায়, গড়ে প্রতি একটি ইন্টারমিডিয়েট কলেজে শিক্ষক (প্রভাষক বা সহকারী অধ্যাপক) রয়েছেন প্রায় ১৮ জন এবং শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ২৮৫ জন। গড়ে প্রতি ১৬ জন শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছেন একজন শিক্ষক। লেখাপড়া ভালো হওয়ার জন্য এরূপ অনুপাত থাকা ভালো। কিন্তু বাস্তবে এই অনুপাতের আর্ধেকও কার্যকর নেই। কারণ, সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব।
বাছাই করা ভালো শিক্ষার্থীদের কৃতিত্বে ভালো কলেজ নামে খ্যাত শহরকেন্দ্রিক কিছু কলেজে রয়েছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। এখানে শিক্ষকের তুলনায় শিক্ষার্থীর সখ্যা আদর্শ অনুপাতের চেয়ে অনেক অনেক বেশি। তদুপরি তাদেরই অনুমতি দেয়া হচ্ছে একাধিক শিফট ও শাখা খুলে আরো বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করার। অপরদিকে, সারাদেশে বিদ্যমান হাজার হাজার কলেজে রয়েছে কাম্য শিক্ষার্থী তীব্র অভাব। ৫০ থেকে ১০০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে বছরের পর বছর চলে আসছে এমন দু-চারটি করে কলেজ পাওয়া যাবে প্রতিটি উপজেলায়ই। এমন কী রাজধানী ঢাকার প্রতিটি থানায়ই রয়েছে ৫-৭টি করে কলেজ, যেখানে কাম্য শিক্ষার্থী না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে করা হচ্ছে না কলেজের স্বীকৃতি নবায়ন। শিক্ষকের তুলনায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা আদর্শ অনুপাতের চেয়ে অনেক কম হলেও এসব কলেজের শিক্ষক, প্রশাসক, ভবন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় আনা হলে সবই যে মন্দ, তা কিন্তু নয়।
অন্যদিকে, ভালো কলেজ তৈরির নামে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে তৈরি করা হচ্ছে আরো নতুন নতুন কলেজ। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে মডেল কলেজ নামে ঢাকা শহরে তৈরি করা হয়েছিল ১২টি কলেজ। ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের পেটের ভেতরে তৈরি করা হয়েছে মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, যেখানে বরাবরই অধ্যক্ষ হিসেবে ডেপুটেশনে থাকছেন সামরিক কর্মকর্তা। মিরপুরের মণিপুর স্কুলের ২ নাম্বার শাখার পাশে স্থাপন করা হয়েছে রূপনগর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। শুরুতেই সেখানে অধ্যক্ষ ছিলেন সরকারি কলেজের অধ্যাপক। সরকারি কলেজের সমান বেতন-ভাতা ও সুবিধাদি দিয়ে এসব মডেল কলেজে নিয়োগ করা হয়েছে ভালো ভালো শিক্ষক। সরকারের বিপুল অর্থ ব্যয় করে নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল বিশাল দালান। দেয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় বিজ্ঞানসামগ্রী, খেলার সামগ্রী, কম্পিউটার ও আসবাবপত্র। এতকিছুর পরও কোনো একটি মডেল কলেজের নাম কেন নেই তথাকথিত ভালো কলেজের বর্তমান তালিকায়? কারণ, তাদের শুরুটা প্রচলিত ভালো কলেজের মতো ছিল না। শুরুতেই যদি তারা কেবল বাছাই করা ভালো শিক্ষার্থী ভর্তি করত (কম হোক), তাহলে ফলাফল অবশ্যই ভালো হতো। নাম যুক্ত হতো তথাকথিত ভালো কলেজের তালিকায়। ছড়িয়ে পড়ত নাম-সুনাম। ভালো কলেজ ভালো কলেজ বলে বলে ভর্তি হওয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ত সারাদেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থী-অভিভাবক। এরপর আর কে থামায়? বাছাই কর, ভর্তি কর, কোচিং কর আর টাকা আদায় কর। কিন্তু তারা বাছাই করা ছাত্রছাত্রী নিয়ে এবং ভালো ফলাফল দিয়ে স্থাপন করতে পারেনি বিশেষ কোনো মডেল। তাই দূরের মানুষ তো দূরের কথা, সংশ্লিষ্ট এলাকার সাধারণ মানুষই ভালোভাবে জানেন না এই ১২টি মডেল কলেজের নাম-ঠিকানা। ভালো অধ্যক্ষ, ভালো শিক্ষক, বড় দালান, ভালো চেয়ার-টেবিল, দামি কম্পিউটার আর ভালো এলাকা থাকলেই যে বর্তমানে প্রচলিত হুজুগে বিবেচনায় ভালো কলেজ হয় না, তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ হেেলা এই মডেল কলেজ এবং খোদ সরকারি কলেজগুলো।
এসব বাস্তব বিষয় বিবেচনা না করেই বিপুল সরকারি অর্থ ব্যয়ে স্থাপন করা হচ্ছে আরো নতুন নতুন কলেজ। তীব্র থেকে আরো তব্রতর করা হচ্ছে বিদ্যমান কলেজগুলোয় শিক্ষার্থী সঙ্কট। বিশেষ করে গ্রামপর্যায়ে শিক্ষার্থী সঙ্কট তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। তথাপি রাজনৈতিক নেতাদের অতি আগ্রহে কোনোরূপ হিসাব-নিকাশ না করেই বিদ্যমান সরকারি-বেসরকারি কলেজের আশপাশে দেদার তৈরি বা এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে আরো সাধারণ কলেজ, কারিগরি কলেজ, আলিয়া মাদ্রাসা, নার্সিং কলেজ, মেডিকেল টেকনোলজি কলেজ, ফ্যাশন ডিজাইন কলেজ, ইউরোপিয়ান কলেজ, আমেরিকান কলেজ, ব্রিটিশ কলেজ, অ্যারাবিয়ান কলেজ ইত্যাদি। নাম রাখা হচ্ছে নিজের বা নেতার নামে। নিয়োগ দেয়া হচ্ছে দলীয় লোকজন। পরিচালিত করা হচ্ছে রাজনৈতিক কর্মকা-কাম্য শিক্ষার্থী না থাকলেও পরিশোধ করতে হচ্ছে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা।
ভালো কলেজগুলোয় কি সরকারি কলেজের শিক্ষকদের চেয়ে অধিক যোগ্য শিক্ষক ও প্রশাসক কাজ করছেন? সুযোগ-সুবিধা কি সরকারি কলেজের চেয়ে বেশি? নিশ্চয়ই না। তাহলে তাদের এত ভালো ফলাফলের আসল কারণ কী? অবশ্যই অনেক কারণ বিদ্যমান। তবে প্রধানত দুটি। প্রথম কারণ হলো_ তারা বাছাই করা ভালো শিক্ষার্থী নিয়ে কাজ করেন। দ্বিতীয় কারণ হলো_ তারা অধিকাংশই কমিটির প্রভাব থেকে কম-বেশি মুক্ত।
আলোচিত ভালো কলেজগুলোর আশপাশে অবস্থিত কোচিং সেন্টার ও শিক্ষকদের প্রাইভেট বাণিজ্যকেন্দ্রগুলোর দিকে সামান্য নজর দিলে সহজেই বোঝা যায় সেসব কলেজে কেমন লেখাপড়া হয়। যাদের ছেলেমেয়ে সেসব কলেজে পড়ে, তারা কলেজের বেতন-ফি ও কোচিং-প্রাইভেট পড়ার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পান ভালো কলেজ কাকে বলে। আমাদের অনেকেরই ধারণা, সামরিক বাহিনীর অফিসার অধ্যক্ষ হলেই কলেজ ভালো হয়ে যায়। এই ধারণাটি যে সর্বাংশে সত্য নয়, তার প্রমাণ হচ্ছে নরসিংদী কাদির মোল্লা সিটি কলেজ। বাংলা বিষয়ের ছাত্র, শিক্ষক ও লেখক ডক্টর মশিউর রহমান সেখানকার অধ্যক্ষ। অত্যন্ত বিনয়ী ও কর্মঠ আমার সে বন্ধুটি। মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি কলেজের অধ্যক্ষ বন্ধুবর বেলায়েত হোসেনও সামরিক লোক নন। আসলে পরিচালনা কমিটির অশুভ প্রভাবমুক্ত না হলে সামরিক বা বেসামরিক কারোরই কিছু করার থাকে না।
শুধুমাত্র বাছাই করা ভালো শিক্ষার্থী ভর্তি করার সুযোগ দিয়ে এবং সেই সব ভালোদের ভালো ফলাফলের ভিত্তিতে সেরা কলেজ ঘোষণা দিয়ে সরকার নিজেই করে দিচ্ছে তাদের এই শিক্ষা বাণিজ্য করার অবাধ সুযোগ। অথচ এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে আনুপাতিক হারে এ, বি, সি, ডি_ সব গ্রেডের শিক্ষার্থী ভর্তি করা বাধ্যতামূলক করে দিলেই দেখা যেত ভালো সুতা দিয়ে ভালো কাপড় বোনা সেই সব কারিগরদের দক্ষতা কতটুকু। সেক্ষেত্রে মন্দ কলেজ নামে চিহ্নিত কলেজেও ভর্তি হতো কিছু ভালো শিক্ষার্থী। সেসব কলেজ থেকেও পাওয়া যেত কিছু ভালো ফলাফল। কিছুটা হলেও কমে আসত ভালো-মন্দের ব্যবধান। শহরমুখী হতো না সবাই। হ্রাস পেত ভালো কলেজ নামে পরিচিত কলেজে ভর্তির অসুস্থ প্রতিযোগিতা। হ্রাস পেত এই শিক্ষা বাণিজ্যের অবাধ সুযোগ। দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের মনে এতটা আঘাত হানত না তথাকথিত ভালো কলেজে ভর্তি হতে না পারার অযৌক্তিক কষ্ট।

মো. রহমত উল্লাহ্: অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা
ৎধযধসড়ঃ২১@মসধরষ.পড়স - See more at: http://www.jjdin.com/?view=details&archiev=yes&arch_date=13-10-2014&type=single&pub_no=979&cat_id=1&menu_id=19&news_type_id=1&index=1#sthash.yK93EzGX.dpuf